বিজ্ঞানী ময়না
এটা হবে আমার জীবনের সেরা আবিষ্কার। এর নাম দিলাম মগজ প্রক্ষালক এত কঠিন নাম! নিশ্চয়ই বিরাট কিছু। এটা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা কামাব। মাথায় পরে সবুজ বাটন চাপ দিলেই ঘটবে দারুণ ঘটনা। আজ খুশিতে দরজা খোলা রেখেই ঘুমাব। রাতে চোর এলো চুরি করতে। আড়াল থেকে দেখছে বিজ্ঞানী ময়না দেখি তো এটার কাজ কী। আমি ভালো মানুষ... ১০১০১০ আমি ভালো... ১০০০১০ আমি চুরি করি না... প্রক্ষালক মানে হলো যে ধুয়েমুছে সাফ করে। তোমার মগজ এখন পরিষ্কার। এটা জেনে আমিও শান্তি পেলাম। মগজ প্রক্ষালক বড়ই চমৎকার যন্ত্র। ছিলাম চোর, হয়ে গেলাম ভালো মানুষ। মাথাটা খুব হালকা লাগছে। কী শান্তি!
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ময়না দ্বীপের মানুষ
অপেক্ষা করছি আবার কবে আসবেন তিনি আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে। গত বছর এক সন্ধ্যা কাটিয়েছিলাম খুব ভালো। নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে প্রায় ২৫ জন ছিলাম। প্রত্যেকেই প্রায় তার জীবনের কথা বলেছিলেন সম্পাদকের অনুরোধে। লেখকের অনুরোধে। তিনি কিছু বলেননি। আয়োজন তার ছিল তো। তিনি বললে আমরা এক সমুদ্র-মানুষের কথা শুনতে পেতাম। হোসেন মিঞা কিংবা কুবের মাঝির। তাদের কি চেনেন না তিনি? তাদের সঙ্গে বেড়ে ওঠেননি? মিস করেছিলাম। এবার দেখা হলে শুনতে চাইব। কেন চাইব? সেই বঙ্গোপসাগরের দ্বীপাঞ্চল সন্দ্বীপে তার জন্ম। চারদিক সমুদ্রেঘেরা সন্দ্বীপ। ঝড়-ঝঞ্ঝা লেগেই আছে ওই সমুদ্রে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসের সেই ময়না দ্বীপ হাতিয়া, সন্দ্বীপের আশপাশেই হয়তো। তিনি আসলে ময়না দ্বীপেরই মানুষ, হোসেন মিঞাকে তিনি চিনতেন, কুবের মাঝিকেও। তাঁকে দেখে আমার মনে হয়েছিল তেমন। সমুদ্রের নিঃসীমতা, বিস্তার, সমুদ্রের উঁচু উঁচু ঢেউয়ের ভেতর থেকে উঠে এসেছেন তিনি। হ্যাঁ, সেদিনই দেখেছিলাম সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা আর টান কত গভীর এই চট্টগ্রামের মানুষের। মোহিত কামালের সঙ্গে যোগাযোগ হয় মার্কিন দেশ নিবাসী লেখক কুলদা রায়ের মাধ্যমে। কুলদা আমাকে বলেন বাংলাদেশের ঢাকা শহর থেকে উচ্চ গুণ ও মানসম্পন্ন একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়, আপনাকে একটি গল্প দিতে হবে। পত্রিকার নাম ‘শব্দঘর’। বছর পাঁচ ঢাকা শহরে যাইনি। মধ্যে তিন বছর গেল করোনা মহামারিতে। কিছু খবর আসে অন্তর্জালে, বাকিটা জানা ছিল না। গল্প দিয়েছিলাম। সেই পত্রিকা ডাকযোগে আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। তারপর সাম্মানিকও। পত্রিকা দেখে আমি বিস্মিত। এত ভালো আর একটি পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে ঢাকা থেকে। হ্যাঁ, তা সম্ভব। ঢাকার ‘কালি ও কলম’ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতাম। এখন আর তেমন যোগাযোগ নেই। একটি সম্পূর্ণ সাময়িক পত্রিকা ‘কালি ও কলম’। এবং অত্যন্ত উচ্চমানের। আর একটি সম্পূর্ণ সাহিত্যপত্র হলো ‘শব্দঘর’। এপারে, পশ্চিমবঙ্গে এমন উদার এবং উচ্চমানের সাহিত্য পত্রিকা নেই। তার সম্পাদক মোহিত কামাল। পেশায় চিকিৎসক, তা ছাড়া নিজে একজন সুলেখক। গল্প এবং উপন্যাস লেখেন। লেখেন এবং অন্য লেখকদের বিকশিত হতে সুযোগ দেন। ‘শব্দঘর’ পত্রিকায় অনেক তরুণ লেখকের লেখা প্রকাশিত হয়। ‘শব্দঘর’ বাংলাদেশ এবং ভারতের বাংলা ভাষার লেখকদের লেখা নিয়মিত প্রকাশ করেন। আমি এই পত্রিকায় লিখে আনন্দ পাই। সম্পাদনা কত ভালো হলে, সম্পাদক কত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হলে এমন এক পত্রিকা প্রকাশ করতে পারেন। সাময়িক পত্রে সব রকম লেখা থাকে। কিন্তু ‘শব্দঘর’ সাহিত্য নিয়েই ভাবিত। কত ভালো লেখা ছাপা যায় তার প্রয়াস ‘শব্দঘর’-এ অবিরত। এই পত্রিকায় গল্প ছাপা হয়, উপন্যাস ছাপা হয়, বিখ্যাত লেখকদের সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। সাম্প্রতিক সংখ্যায় নোবেল বিজয়ী পোলিশ লেখক ওলগা তোকার্জুগ এক অতি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার অনুবাদ করে ছেপেছে ‘শব্দঘর’। খুবই মূল্যবান তা। যে কোনো লেখকের তা পড়া উচিত। এ ছাড়া বিশ্বের সেরা লেখকদের গল্পের বাংলা অনুবাদ, বাঙালি লেখকদের গল্পের ইংরেজি অনুবাদ, এই বাংলা এবং বাংলাদেশ, উভয় দেশের লেখকদের গল্প তিনি প্রকাশ করছেন। বোঝা যায় মোহিত কামাল যে কাজটি করতে যাচ্ছেন, তা হলো অখণ্ড বাংলা সাহিত্যের একটি সাহিত্যপত্র। তা এদেশে হয়নি। বাংলাদেশে মোহিত কামাল তা করতে পেরেছেন। সম্পাদক মোহিত কামাল এবং লেখক মোহিত কামালের ভেতরে তফাৎ আছে নিশ্চয়। তিনি এই পত্রিকা নিজের লেখা প্রকাশের জন্য করেননি। কিন্তু পাঠক হিসেবে আমার দাবি তিনি এখানেও লিখুন আমাদের সঙ্গে। মোহিত কথাসাহিত্যিক। গল্প লিখেছেন, উপন্যাস লিখেছেন। লিখে চলেছেন। তার কথাসাহিত্যে বাংলাদেশের হৃদয় উদ্ভাসিত হয়। মানুষের সংগ্রাম, নিরুপায় মানুষের কষ্ট, অসহায়তা, বেদনা সব নিয়েই তার কথাসাহিত্য। আরব দেশে জীবন বদলাতে গিয়ে যে ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ এবং উপমহাদেশের মরুশ্রমিক তার চিহ্ন তার ‘মরুঝড়’ উপন্যাসে রয়েছে। এই উপন্যাস পরিযায়ী বাংলাদেশের মানুষের জীবন আলেখ্য। ব্যক্তিজীবনে মনোবিদ হওয়ার কারণে তিনি নর-নারীর সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে পারেন চমৎকার। ঈর্ষণীয় বলতে পারি। একজন কথাসাহিত্যিকের এই গুণ তার লেখাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। মোহিত কামালের ক্ষেত্রেও তা ঘটেছে। ‘শব্দঘর’ গল্প সংখ্যায় তার ‘আমি’ গল্পটি তার অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব সম্পর্কিত দার্শনিক প্রজ্ঞায় উজ্জ্বল। আর একটি সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘কার্তিকে বসন্ত’। বলা যায় মাঝের একটি ঋতু পার করে বসন্তে প্রবেশ করে হেমন্তকাল। সেই উপন্যাস প্রেমের আবার জীবনের প্রতি আর্তিও। আমি মোহিত কামাল মশায়ের যে লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম, সেই উপন্যাসের নাম, ‘না’। ২০০৯ সালে লেখা এই উপন্যাসের অনেকগুলো সংস্করণ হয়েছে বাংলাদেশে। এবং এই উপন্যাসের পরবর্তী আর এক পর্ব লিখেছেন তিনি, ‘হ্যাঁ’। আমি পরবর্তী পর্ব পড়িনি। কিন্তু ‘না’ পড়ে আপ্লুত হয়েছিলাম। ঢাকা শহর কেন এই কলকাতা শহরেও অনেক হোস্টেল আছে যেখানে চাকুরিরতা কিংবা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরতা মেয়েরা থাকেন। সম্পূর্ণ অনাত্মীয় ভরা এক শহরে এই মেয়েরা কীভাবে থাকেন, তা নিয়েই এই উপন্যাস। ‘না’ শব্দের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান জড়িয়ে থাকে। ‘না’ হলো প্রত্যাখ্যানের ভাষা। অস্বীকারের ভাষা। একজন মানুষকে উচ্চ শিরে থাকতে হলে ‘না’ উচ্চারণ করতে জানতে হবে। উপন্যাসটিতে মেয়েদের যে হোস্টেল তার মালিক মাঝেমধ্যে এসে ঘরগুলোতে অনুসন্ধান করে। বিদ্যুৎ ব্যবহার এমন সব বাসনপত্র বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়। বিদ্যুৎ খরচ বেশি হবে। মেয়েরা দুস্থই বলা যায়। সিমির বাবা ফোনে জানিয়েছেন, তিনি আবার বিয়ে করছেন। সিমির মা বেঁচে নেই। সিমি বাবাকে বিয়ে করতে না বলায় বাবা জানিয়েছেন, তার নতুন মা তার চেয়ে কম বয়সের এবং সুন্দরী। সিমি বিমর্ষ হয়ে থাকে। মেধাবী মেয়ে, টিউশনি করে হোস্টেল খরচ দেয়। রুবার সৎমা আছেন। এক বোন আছে আনিকা। সে বড় হচ্ছে। সৎমা তাকে পছন্দ করে না। রুবার সঙ্গে আফরিনের আলাপ হয় এক ঘটনার পর। মনে হয় রুবাকে অনুসরণ করেছিল আফরিন। রুবার বিপদে তার পাশে সে দাঁড়ায়। সেই সূত্রে মেয়েদের হোস্টেলে এসে সিমির সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। আসলে আফরিন মাদক চক্রে এমনি একা মেয়েদের সামিল করতেই যেন রুবার সূত্রে তাদের আশ্রয়ে এসেছিল। উপন্যাসটি অনাত্মীয় ভরা শহরে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাওয়া মেয়েদের সংগ্রামের কাহিনি। কাহিনি খুব আকর্ষণীয়। মোহিত যেহেতু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এই উপন্যাস রচনা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। উপন্যাসে বিশ্লেষণের অংশটি চমৎকার। তিনি কতক মুহূর্ত নির্মাণ করেছেন সুন্দর। রুবার সঙ্গে রুবার প্রেমিকের সম্পর্কের টানাপোড়েন, রুবার বোন আনিকার পরিবারের স্নেহবঞ্চিত হয়ে ঘরের বাইরে মন চলে যাওয়া, বয়স্ক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি, কিংবা রবিনের কিশোরী ছাত্রীর প্রেম নিবেদন সবই সুলিখিত। বয়সকে চিহ্নিত করেছেন লেখক। মেয়েদের হোস্টেল জীবন, অসহায়তা, সহমর্মিতা দেখিয়েছেন তিনি বিশ্বস্তভাবে। এসব মেয়ে পরিবারের সহায়তা পায়নি, পায় না, সস্তার মেস বাড়িতে মাথা গুঁজে থাকে। লোকাল বখাটে ছেলে, মাস্তানরা তাদের উত্যক্ত করতে চায়। রুবা এর ভেতর থেকেই চাকরি পায়। থাক কাহিনির ভেতরে যেতে চাই না। এই উপমহাদেশের এক প্রধান শহরে এসে মেয়েরা তাদের স্বপ্নকে লালন করতে গিয়ে কীভাবে ভুলের ফাঁদে পা দেয়, সেই কাহিনিই লিখেছেন লেখক। তিনি মেয়েদের মনের কথা লিখেছেন যেভাবে, তা কোনো নারী লেখকের পক্ষেই লেখা সম্ভব, অন্তত নারীবাদ তা বলে। কিন্তু লিখলেন তিনি। জীবনের নানা জটিলতার কথা লিখলেন। লিখলেন সুললিত গদ্যে। বড় পটে আঁকতে গিয়ে বিস্তার করেছেন হয়তো বেশি, কিন্তু তা হতে পারে। লেখক: কথাসাহিত্যিক, কলকাতা
২৬ জানুয়ারি, ২০২৪

সেশন ফি দিতে না পারায় বই পায়নি প্রতিবন্ধী ময়না
নীলফামারীর ডিমলায় টেপাখড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন বই বিতরণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।  শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, সেশন ফি ও ফরম পূরণের নামে শ্রেণি অনুযায়ী প্রতি শিক্ষার্থীর কাছে থেকে বাধ্যতামূলক ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। যারা টাকা দিতে পারেনি তাদের বই দেওয়া হয়নি।  তবে প্রধান শিক্ষকের দাবি, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ও সেশন ফি বাবদ শ্রেণিভেদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। বইয়ের জন্য কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। কিন্তু বই দেওয়ার সময় সেশন ফি অথবা ফরম পূরণের টাকা জমা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই বলছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে টেপাখড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাত-আটজন অভিভাবক কালবেলাকে বলেন, বিনামূল্যের  পাঠ্যবই পেতে শিক্ষার্থীদের টাকা গুনতে হচ্ছে। প্রতি সেট বইয়ের জন্য শিক্ষকেরা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। জিঞ্জির পাড়া গ্রামের ফারিদা আকতারের (৩০) ছেলে ফাহিম সরকার টেপাখড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ফারিদা বলেন, তার ছেলে নতুন বই আনতে গেলে শিক্ষকেরা ৭০০ টাকা দাবি করে। পরে অনেক কষ্টে তিনি ৫০০ টাকা জোগাড় করে ছেলেকে দেন। কিন্তু ছেলে বই না নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে আসে। তখন বিদ্যালয়ে গিয়ে জানতে পারি, বই নিতে হলে পুরো ৭০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। ২০০ টাকা বাকি রাখায় ছেলেকে বই দেওয়া হয়নি। উপায় না দেখে প্রতিবেশীর নিকট তার চাষাবাদের শ্যালো মেশিনটি বিক্রি করে ছেলেকে টাকা দেন ফরিদা। শিক্ষার্থী ফাহিম কালবেলাকে বলেন, তার বাবা গত সাত মাস থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। মা সেশন ফি’র সম্পূর্ণ টাকা দিতে না পারায় আমাকে বই দেয়নি। পরে টাকা পরিশোধ করে নতুন বই নিয়েছি। একই এলাকায় দিনমজুর মাকে নিয়ে বসবাস করেন ওই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শারীরিক প্রতিবন্ধী ময়না আকতার। তার মা স্বামী পরিত্যক্তা ফরিদা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। ফরিদা জানায়, শিক্ষকরা তার মেয়েকে সেশন ফি’র টাকা ছাড়া এ বছরের নতুন বই দেয়নি। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ৫০০ টাকা নিয়ে তিন থেকে চার দিন স্কুলে গিয়েছি। কিন্তু পুরো টাকা দিতে না পারায় তার মেয়েকে ভর্তি ও নতুন বই দেয়নি। ফরিদা বলেন, শুনেছি সরকার বই বিনামূল্যে দিচ্ছে। তাহলে আমার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে কেন? আমি স্বামী পরিত্যক্তা দিনমজুর মানুষ। দিন আনি দিন খাই। অথচ আমার মেয়ে প্রতিবন্ধী। উপবৃত্তির টাকাও পায়নি। এত টাকা একসঙ্গে জোগাড় করা কি আমার পক্ষে সম্ভব! তাই মেয়েকে ভর্তি করাতে না পেরে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি গার্মেন্টসে কাজ খোঁজার জন্য। বিদ্যালয়ের মাঠে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, টাকা ছাড়া তাদের নতুন বই দেওয়া হয়নি। তাই তারা বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে এসে বিদ্যালয় থেকে নতুন বই সংগ্রহ করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আমির হামজা, মনিরসহ কয়েকজন অভিভাবক কালবেলাকে বলেন, সারা দেশের শিক্ষার্থীরা ১ জানুয়ারি নতুন বই পেয়ে আনন্দ করেছে। আর টেপাখড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকার বিনা মূল্যে বই দিচ্ছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক টাকা ছাড়া বই দিচ্ছেন না।  বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা বলেন, ভর্তি ও সেশন ফি বাবদ টাকা আদায়ের পর শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বই বিতরণ করা হয়। সেশন ফি না নিয়ে ভর্তি ও বই দিতে নিষেধ করেছেন প্রধান শিক্ষক। তার চিরকুট ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারব না।  এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেপাখড়িবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন কালবেলাকে বলেন, আমরা ভর্তি ও সেশন ফি বাবদ ষষ্ঠ, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ৫০০ টাকা এবং সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিকট ৭০০ টাকা নিয়েছি। নতুন বইয়ের জন্য কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। নির্ধারিত সেশন ফি’র পুরো টাকা ছাড়া বই না দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, শ্রেণি শিক্ষকরা ভর্তির দায়িত্বে আছেন। আমি বিষয়গুলো খোঁজ নিয়ে দেখব। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার সকল শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে বই দিচ্ছে। সরকারি বই বিতরণ নীতিমালা অনুযায়ী বিতরণের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো অর্থ নেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ নিয়ে থাকে, তাহলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১২ জানুয়ারি, ২০২৪

মৃত্যুর ১৭ মাস পর লাশ পাঠানো হলো ময়নাতদন্তে
মৃত্যুর ১৭ মাস পর ব্যবসায়ীর লাশ কবর থেকে তুলে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তে। গাজীপুর শ্রীপুরের ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন (৩০) এর লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ সময় শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগে জানা যায়, পূর্ব থেকেই প্রতিবেশী দেলোয়ারার সঙ্গে বিরোধ ছিল তোফাজ্জলদের। পূর্ব বিরোধেই অভিযুক্তরা ২০২২ সালের ৮ জুন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করতে তোফাজ্জলকে কুপিয়ে আহত করে। পরে ঘটনা ধামা চাপা দিতে ট্রেনে কাটার নাটক সাজায় তারা। ঘটনার ১৪ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।  নিহত তোফাজ্জলের বড় ভাই মোফাজ্জল হোসেন গাজীপুর জুডিশিয়াল আদালতে ভাই হত্যার বিচার দাবিতে সাতজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযুক্তরা হলো মো. রাকিব মিয়া (৩২), মো. মোখলেছ মিয়া (৩০), মো. হারুন (৩০), মোসা. দেলোয়ারা (৪০), মো. রুবেল মিয়া (২৮), মো. রাসেল (২৫) ও মো. কামরুল আহসান গোলাপ (৫০)। এই মামলার শুনানি শেষে আদালত লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (পিবিআই) রাফিকুল ইসলাম জামান বলেন, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন বলেন, দাফনের পর দীর্ঘ ১৭ মাস পরে আদালতের নির্দেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে নিহতের মরদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
০৩ নভেম্বর, ২০২৩
X