‘বাস মালিকদের বিশেষ সুবিধা দিতে রেলে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত’ 
আগামী ৪ মে থেকে ট্রেনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে রেয়াত সুবিধা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বাস মালিকদের বিশেষ সুবিধা দিতে রেলে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। ভাড়া না বাড়িয়ে প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম-দুর্নীতি, অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা বন্ধ করে, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, বেদখলকৃত জমি উদ্ধার করে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি নানামুখী লাভজনক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে রেলকে ধীরে ধীরে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব বলে দাবি করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনের মহাসচিব বলেন, রেলের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধ না করে ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে রেলের লোকসান কমানো সম্ভব নয়। এমন সিদ্ধান্ত আকাশ কুসুম কল্পনা বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এর আগেও কয়েক দফা ভাড়া বাড়িয়ে লোকসান লাঘব করতে ব্যর্থ হয়েছে। রেল বড় বড় প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত, যাত্রীসেবার দিকে তাদের কোনো মনোযোগ নেই বলেও অভিযোগ করেন তিনি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের অভিযোগ, রেল কর্তৃপক্ষ রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের নামে ভাড়া বৃদ্ধি করে দূরপাল্লার যাত্রাপথে রেলের ভাড়া বাসের ভাড়ার চেয়ে বেশি নির্ধারণ করে বাস মালিকদের বিশেষ সুবিধা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। রেলের রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বৃদ্ধির এমন গণবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে রেলপথকে অতীতের মতো নিরাপদ ও সাশ্রয়ী রাখারও দাবি জানায় সংগঠনটি। যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, রেলখাতকে লাভজনক করার ঘোষণা দিয়ে ২০১২ সালে সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ১১০ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ৭ শতাংশ রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। একইসঙ্গে ২০১২ সালের ভাড়া বৃদ্ধির সময় ট্রেনের ওই সময়ে বিদ্যমান সেকশনাল রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের পরেও রেল লাভবান হয়নি, উল্টো ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে রেলের লোকসান ছিল ১২২৬ কোটি টাকা। সমিতির দাবি, বর্তমানে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে যে হারে রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, এতে যাত্রীরা রেল বিমুখ হবে, রেলে টিকিটবিহীন যাত্রী যাতায়াতের সংখ্যা বাড়বে, রাজস্ব আয় কমবে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লুটপাটের সুযোগ আরও বাড়বে। রেলের আয়বর্ধক খাত যেমন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে পণ্যবাহী ট্রেন থেকে আয় বাড়ানো দিকে না ঝুঁকে রেলওয়ে সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিয়ে আয় বাড়ানোর যে আকাশকুসুম পরিকল্পনা করছে সেটি কার্যত ব্যর্থ বলে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সাধারণ মানুষকে রেলমুখী করে নামমাত্র মূল্যে টিকিট বিক্রি করে রেলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, ভারতের শিয়ালদহ রেলস্টেশন থেকে আজমীর জংশন পর্যন্ত এক হাজার ৬৪২ কিলোমিটার দূরত্বে একটি প্রথম শ্রেণির বার্থ সিটের ভাড়া মাত্র ৬৯০ রুপি, সেখানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ৩৪৬ কিলোমিটারের (প্রকৃত দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটারেরও কম) একটি নন এসি বার্থ সিটের ভাড়া ৮১০ টাকা। শিয়ালদহ থেকে বনগাঁও ৭৭ কিলোমিটার দূরত্বে লোকাল ট্রেনের ভাড়া মাত্র ২০ রুপি। আর বাংলাদেশে একটি টিকিট কাটতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহজডটকম’কে কমিশন দিতে হয় ২০ টাকা।
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

কিলোমিটারে ৩ পয়সা ভাড়া কমানোর সুপারিশ
আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে ধাপে ধাপে জ্বালানি তেলের দাম কমাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে দুদফা তেলের দাম কমানো হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে পরিবহন ভাড়া কমানোর দাবি উঠেছে সব পক্ষ থেকেই। এমন বাস্তবতায় জ্বালানি তেলের দাম ২ টাকা ২৫ পয়সা কমার প্রেক্ষিতে কিলোমিটার প্রতি বাস ভাড়া ৩ পয়সা কমানোর সুপারিশ করেছে বাস ভাড়া পুনঃনির্ধারণী কমিটি। সোমবার (১ এপ্রিল) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভাড়া কমানোর এ প্রস্তাব অনুমোদন করবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার কালবেলাকে বলেন, ভাড়া কমানোর সুপারিশ আমরা এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। প্রস্তাব অনুমোদন করে মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে নতুন ভাড়া কার্যকর হবে। বর্তমানে দেশের দূরপাল্লার রুটের জন্য সরকার নির্ধারিত বাস ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ১৫ পয়সা। এ ভাড়া কমিয়ে কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ১২ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাসের বর্তমান ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ৪৫ পয়সা। এটা কমিয়ে কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ৪২ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বর্তমানে মিনিবাসের নির্ধারিত ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ৩৫ পয়সা। এই হার কমিয়ে কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ৩২ পয়সা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে বাস ভাড়া কমিটি। এদিকে ঈদযাত্রায় দেশের বিভিন্ন রুটে বাসে যখন অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে, এমন সময়ে দফায় দফায় জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর হিস্যা অনুযায়ী বাস ভাড়া কমানোর পরিবর্তে প্রতিকিলোমিটারে মাত্র ৩ পয়সা বাসের ভাড়া কমিয়ে সরকার দেশের যাত্রীসাধারণের সঙ্গে তামাশা করছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রী অধিকার রক্ষায় সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় দেশের যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে এই অভিযোগ করা হয়। এতে বলা হয়, আসন্ন ঈদযাত্রায় দেশের বিভিন্ন রুটে যাতায়াতকারী অধিকাংশ বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। এমন সময়ে ২ দফা জ্বালানি তেলের দাম কমানো পর সরকার আজ বাসের ভাড়া প্রতিকিলোমিটারে মাত্র ৩ পয়সা কমানো ঘোষণা দিয়েছে। যা কোনোভাবেই কার্যকর যোগ্য নয়। ইতোপূর্বে সরকার ২০১১ সালে বাসের ভাড়া ২ পয়সা কমিয়েছিল। এর সুফল যাত্রী সাধারণ পায়নি। এরপর ২০১৬ সালে জ্বালানি তেলে মূল্য কমানোর কারণে বাসের ভাড়া ৩ পয়সা কমানোর সুফল থেকেও দেশের যাত্রীসাধারণ বঞ্চিত হয়েছে। ঠিক একই পন্থায় বাস মালিকদের বিশেষ সুবিধা দিতে এবারো বাস ভাড়া ৩ পয়সা কমানোর সুফল কোনো পরিবহনে মিলবে না। এতে জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর সুফল কেবলমাত্র বাস ও অন্যান্য পরিবহনের মালিকরা ভোগ করলেও দেশের জনগণ বঞ্চিত হবে। বিবৃতিতে অনতিবিলম্বে উল্লেখযোগ্য হারে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে দেশের সাধারণ নাগরিকদের সামর্থ্য বিবেচনায় গণপরিবহন ভাড়া উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনার দাবি জানায় সংগঠনটি।
০১ এপ্রিল, ২০২৪

মোটরসাইকেল-ইজিবাইক আমদানি বন্ধের দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির
সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অন্যতম দায়ী মোটরসাইকেল-ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জানুয়ারি মাসের প্রকাশিত দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের শুরুর মাস জানুয়ারি সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনায় ৫৩৪ নিহত ও ৪ হাজার ৪৬২ জন আহত হয়েছে। গত মাসে শুধু ৫২১ সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮৬ জন নিহত এবং ১ হাজার ৫৪ জন আহত হয়েছে। সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জানুয়ারি মাসে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) ১ হাজার ১৫৩ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৭২ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৭১ জন, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৫৮ জন, নারায়ণগঞ্জে খানপুর হাসপাতালে ৪২০ জনসহ মোট ৩ হাজার ৩৭৪ জন যাত্রী ও পথচারী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সেই হিসাবে হাসপাতালের তথ্যসহ আহত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৪২৮ জন। এ ছাড়া জানুয়ারি মাসে রেলপথে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত এবং ২১ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ৭টি দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত, ১৩ জন আহত এবং তিনজন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৫৭২টি দুর্ঘটনায় ৫৩৪ জন নিহত ও ৪ হাজার ৪৬২ জন আহত হয়েছেন। এই সময়ে ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭০ জন নিহত, ১৭৩ জন আহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩১.৪৭ শতাংশ, নিহতের ৩৪.৯০ শতাংশ ও আহতের ১৬.৪১ শতাংশ। এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে; সেখানে ১২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৭ জন নিহত ও ২৭০ জন আহত হয়েছেন, সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে; সেখানে ৩৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও ১২৫ জন আহত হয়েছেন। সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে জানুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হচ্ছে- ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ, দুর্বল প্রয়োগ, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনিয়ম দুর্নীতি ব্যাপক বৃদ্ধি; মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি ও এসব যানবাহন সড়ক মহাসড়কে অবাধে চলাচল; সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কে বাতি না থাকা ও রাতের বেলায় ফক লাইটের অবাধ ব্যবহার; সড়ক-মহাসড়কে নির্মাণ ক্রটি, ফিটনেস যানবাহন ও অদক্ষ চালকের হার ব্যাপক বৃদ্ধি; ফুটপাত বেদখল, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা; উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি এবং অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো। দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশগুলো হচ্ছে- রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চালু করা; স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা; দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান; রাতের বেলায় বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা; সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা; রাতের বেলায় চলাচলের জন্য জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোক সজ্জার ব্যবস্থা করা; ব্লাক স্পট নিরসন করা, সড়ক নিরাপত্তা অডিট করা, স্টার মানের সড়ক করিডোর গড়ে তোলা এবং দেশে সড়কে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর চলমান গতানুগতিক কার্যক্রম অডিট করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিত করা, প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতা সংস্কার করা।
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

এক মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮৬ জন নিহত
গত জানুয়ারি মাসে দেশে ৫২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮৬ জন নিহত ও এক হাজার ৫৪ জন আহতের তথ্য পাওয়া গেছে। রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একই সময়ে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল (পঙ্গু হাসপাতালে) এক হাজার ১৫৩ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৭২ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৭১ জন, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৫৮ জন, নারায়ণগঞ্জে খানপুর হাসপাতালে ৪২০ জনসহ মোট তিন হাজার ৩৭৪ জন যাত্রী ও পথচারী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। সেই হিসাবে হাসপাতালের তথ্যসহ আহত রোগীর সংখ্যা চার হাজার ৪২৮ জন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই মাসে রেলপথে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত, ২১ জন আহত হয়েছে। নৌপথে ৭টি দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত, ১৩ জন আহত এবং ৩ জন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৫৭২টি দুর্ঘটনায় ৫৩৪ জন নিহত এবং চার হাজার ৪৬২ জন আহত হয়েছে। এই সময়ে ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭০ জন নিহত, ১৭৩ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, নিহতের ৩৪ দশমিক ৯০ শতাংশ ও আহতের ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। ১২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৭ জন নিহত ও ২৭০ জন আহত হয়েছে এই বিভাগে। আর সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। ৩৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় এই বিভাগে ২৩ জন নিহত ও ১২৫ জন আহত হয়েছে। সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৩৩ জন চালক, ৭৪ জন পথচারী, ২৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৯ জন শিক্ষার্থী, ৬ জন শিক্ষক, ৭৫ জন নারী, ৫১ জন শিশু, ৩ জন সাংবাদিক, ১ জন চিকিৎসক, ১ জন আইনজীবী, ১ জন প্রকৌশলী, ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৩ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছে- ৩ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন করে সেনা ও বিমানবাহিনী সদস্য, ১ জন চিকিৎসক, ১ জন আইনজীবী, ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা, ১ জন প্রকৌশলী, ৯৬ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৬৯ জন পথচারী, ৪৭ জন নারী, ৩৮ জন শিশু, ২৯ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬ জন শিক্ষক ও ৯ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।  
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

সড়ক দুর্ঘটনা / সাত হাসপাতালেই ৫৩ হাজার রোগী
দেশের মাত্র ৭টি হাসপাতালেই ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছে ৫৩,২০৭ জন। যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে আয়োজিত ‘এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে সরকারি উদ্যোগে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চাই’- শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-বিআরটিএ প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ডাটা সংগ্রহ করলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টের সমপরিমাণ হতাহত ও দুর্ঘটনার তথ্য উঠে আসবে।  অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, বিআরটিএ সেকেন্ডারি সোর্স ব্যবহার করায় সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না। ফলে সরকার সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে সরকারি উদ্যোগে বিআরটিএ মাধ্যমে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চালুর বিকল্প নেই। একই সঙ্গে ছোট যানবাহন বন্ধ করে নিরাপদ সাশ্রয়ী ও স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।  যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ১৪ হাজার ৩৫৭ জন রোগী জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছে। একই সময়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৯,৮৭৯ জন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৯,২৯৩ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৪,৭৮৪ জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ৩,৫৬৩ জন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৬,৭৪৮ জন। ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ খানপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৪,৫৮৩ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হয়েছে। দেশের মাত্র এই ৭টি হাসপাতালে ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জরুরি বিভাগে ভর্তির তথ্য মিলেছে ৫৩,২০৭ জন।  যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে , সারা দেশে ৬৪টি জেলা সদর হাসপাতাল প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ জন, ০৮ বিভাগে ১০টি বিভাগীয় বড় হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন হারে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তি হচ্ছে, সারা দেশে ৮০০০ নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতালের চিত্রও অনুরূপ।  বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর ১৫ শতাংশ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। দেশে আহত আড়াই থেকে তিন লাখ রোগী চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় কত পরিমাণ মারা গেছে- তার চিত্র বিআরটিএ’র রিপোর্টে আসেনি। ফলে বিআরটিএ’র রিপোর্টে হতাহতের সংখ্যা ও দুর্ঘটনার সংখ্যাতে যে বিভ্রান্তি রয়েছে তা স্পষ্টত ফুটে উঠেছে। বক্তারা বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসরণ করে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই সড়ক দুর্ঘটনা কমে এসেছে। ২০১০ সালের তুলনায় মৃত্যুর হার কমেছে অন্তত ১০৮টি দেশে। প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা, বেলারুশ, ব্রুনাই দারুসসালাম, ডেনমার্ক, জাপান, লিথুয়ানিয়া, নরওয়ে, রাশিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভেনিজুয়েলার মতো ১০টি দেশে মৃত্যুর হার অর্ধেকের বেশি কমিয়ে এনেছে।  অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমাতে সড়কে সুশাসন প্রতিষ্ঠা  জরুরি। সড়ক দুর্ঘটনা পূর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক তৈরির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা তহবিলের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে।  তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকার মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত কিন্তু একক দায়িত্বপ্রাপ্ত নন, তাই সরকারি-বেসরকারি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা গেলে এর কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যেত।  তিনি আরও বলেন, আমাদের সড়কের অবকাঠামোগত বিস্তার ঘটছে, গাড়ি বাড়ছে, কিন্তু সড়ক নিরাপত্তা ইস্যুটি বরাবরই উপেক্ষিত থাকছে।  বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টের বরাত দিয়ে অনুষ্ঠানে বলা হয়, দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে প্রাণহানি ৩১ হাজার ৫৭৮ জন। আহত হচ্ছে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ।  সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশের সড়কে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে সড়ক পরিবহনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ’র চলমান গতানুগতিক কার্যক্রম অডিট করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিত করা, প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতা সংস্কার করা জরুরি বলে দাবি করেন।  অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আব্দুল হক, বিশিষ্ট সাংবাদিক হারুন অর রশিদ, সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্না, তাওহিদুল হক লিটন, এম মনিরুল হক প্রমুখ।  
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ইশতেহারে নিরাপদ সড়ক ও স্মার্ট গণপরিবহনের অঙ্গীকার চায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের নির্বাচনী ইশতেহারে নিরাপদ সড়ক ও স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার অঙ্গীকার রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলয়াতনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি জানান।   লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্প উন্নত দেশের কাতারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে নিরাপদ সড়কের অঙ্গীকার করলেও নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে অগ্রগতি তেমন দৃশ্যমান নয়।   যাত্রী ও নাগরিক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে চালু হওয়া বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের আওতায় ঢাকা নগর পরিবহন নামে কয়েকটি রুটে বাস সার্ভিস চালু করা হলেও তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। সদরঘাট থেকে গাবতলীর আমিন বাজার পর্যন্ত ওয়াটার বাস সার্ভিস চালুর পর কার্যকর হয়নি। যাত্রীরা লক্কড়-ঝক্কড় বাস মালিকদের ইচ্ছের কাছে জিম্মি। এই পরিস্থিতিতে যাত্রী হয়রানি থেকে মুক্তি দিতে, ক্ষমতায় আসলে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।   বর্তমানে সারা দেশে বাস নেটওর্য়াক ভেঙে পড়েছে উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়- ইজিবাইক, অটোভ্যান, মোটরসাইকেল এখন দেশের প্রধান বাহন হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ব্যয়বহুল, সড়ক নিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ, যানজট তৈরীর প্রধান উৎস এসব ছোট ছোট যানবাহন স্মার্ট বাংলাদেশের সাথে বেমানান।   যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে প্রতিবছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪ হাজার ৯৫৪ জনের প্রাণহানি ঘটছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ আহত হচ্ছে। ৮০ হাজার মানুষ পঙ্গু হচ্ছে। এহেন ভয়াবহ মহামারির কবল থেকে দেশ ও জাতীকে উদ্ধার করে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরা সময়ের দাবি।   তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর কারণে বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম শহর সম্প্রসারণের অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ওয়ান সিটি টু টাউন আদলে এখানে প্রশাসনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অফিস আদালত সম্প্রসারণ এবং দেশের প্রধান শহর হিসেবে গড়ে তোলা গেলে ঢাকার ওপর চাপ কমানো সম্ভব। এসব বিষয়ে নির্বাচনী ইশতেহারে রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি তাওহিদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসন, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল প্রমুখ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

আগস্টে ৪৪১টি সড়ক দুর্ঘটনা নিহত ৪২৬
সদ্য শেষ হওয়া আগস্ট মাসে সারা দেশে ৪৪১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪২৬ জন নিহত এবং ৭৯৩ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে, ১২৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২৬ জন নিহত হয়েছে। বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- সংঘটিত হওয়া দুর্ঘটনার মধ্যে কেবল মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাই ঘটেছে ১৭১টি। এতে ১৬৮ জন নিহত এবং ১৪৯ জন আহত হয়েছে। মোট দুর্ঘটনার ৩৮.৭৭ শতাংশ, নিহতের ৩৯.৪৩ শতাংশ ও আহতের ১৮.৭৮ শতাংশ। আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৩৫টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৮.৩৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২.২০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৫.১১ শতাংশ বাস, ১৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৫.৯৮ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৪.৫৬ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৬.৭৭ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৬১.৪৫ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২১.৯৯ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১২.৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ২.৭২ শতাংশ বিবিধ কারণে এবং ০.৯০ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার ধরণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসে মোট দুর্ঘটনার ৩৮.৫৪ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২১.০৮ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩১.০৬ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৭.২৫ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.১৩ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরে এবং ০.৯০ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, আগস্ট মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ হলো - দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক অবাধ চলাচল; মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও  তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি; সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কে বাতি না থাকা; মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা; উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাদাঁবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন; অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো; রেলক্রসিংয়ে দায়িত্বরত ব্যক্তির গাফিলতি; ফিডার রোড এবং আঞ্চলিক রোড থেকে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে তা হলো - মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা; দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান; ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা; সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা; সড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং অঙ্কন ও স্থাপন করা; সড়ক পরিবহন আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা; ডিজিটাল পদ্ধতিতে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ করা; গণপরিবহন বিকশিত করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা।
০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

জুলাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৭৬ জন নিহত
বিদায়ী জুলাই মাসে সারা দেশে ৫০৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৭৬ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনা আহত হয়েছেন ১ হাজার ৫৫ জন। নৌ-পথে ১৬টি দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও আহত ১৫ এবং ৩৮ জন নিখোঁজ রয়েছে। একই সময় রেলপথে ৪৭টি দুর্ঘটনায় ৪৮ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছে।   সড়ক, নৌ ও রেল-পথে সর্বমোট ৫৬৮ দুর্ঘটনায় ৬৪৪ জন নিহত এবং ১০৭৫ জন আহত হয়েছে। শনিবার (৫ আগস্ট) দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর পাঠানো দুর্ঘটনা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।  প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। ১৫৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭৩ জন নিহত ও ২৭১ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম ছিল বরিশাল বিভাগে; ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ও ১৩৮ জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে ১৮০ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৯৫ জন নিহত ও ১২২ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৫.৬৪ শতাংশ, নিহতদের মধ্যে ৩৮.৬১ শতাংশ ও আহতের ২৪.১৫ শতাংশ। এ মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। সেখানে ১৫৭ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭৩ জন নিহত ও ২৭১ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। সেখানে ২৩ সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ও ১৩৮ জন আহত হয়েছে। আরও পড়ুন : চিকিৎসা নিতে ঢাকায় এসে গাড়িচাপায় নিহত নাজমা বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথের দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
০৫ আগস্ট, ২০২৩

৫ বছরে সড়কে প্রাণহানি সাড়ে ৩৯ হাজার : যাত্রী কল্যাণ সমিতি
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ তরুণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে নিরাপদ সড়কের অঙ্গীকার করে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কারণে বিগত ৫ বছরে দেশের সড়ক মহাসড়কে ২৮ হাজার ২৯৯ সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ গেছে ৩৯ হাজার ৫২২ জনের। আহতের সংখ্যা ৫৮ হাজার ৭৯১। এর মধ্যে হতাহত হয়েছে ৩ হাজার ৯৪১ জন শিক্ষার্থী। শুক্রবার (২৮ জুলাই) নিরাপদ সড়কের দাবিতে তরুণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ৫ বছর পূতি উপলক্ষে  গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব তথ্য তুলে ধরেন।  বিবৃতিতে বলা হয়, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারীদের সব দাবি-দাওয়া যৌক্তিক বলে মেনে নিলেও এর কোনোটি বিগত ৫ বছরে বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে সড়কে প্রতিদিন অসংখ্য তাজা প্রাণ ঝড়ছে। সড়কের বিশৃঙ্খলায় যানজট, জনজটে আটকে পড়ে মানুষের হাজারো কর্ম ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনার গলদে ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন ও ছোট ছোট যানবাহন বিশেষ করে মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে। এরই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বাড়লেও সরকার নানা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমছে বলে জাহির করে জনগণের সঙ্গে তামাশা করছে।  শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি করে নতুন ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পাস করা হলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের নানা বাধা ও পুরোনো পদ্ধতিতে এই আইন প্রয়োগে এই সেক্টরে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না।   মোজাম্মেল বলেন, তরুণ শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন আমাদের নীতিনির্ধারকদের চোখ খুলে দিয়েছে বলে যারা জানিয়েছিলেন, ধীরে ধীরে তারা আবারও ঘুমিয়ে পড়েছেন। ফলে সড়কে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বেপরোয়াভাবে বেড়েছে। সঠিক নেতৃত্ব ও গবেষণার অভাবে সরকার সড়ক নিরাপত্তা ও সড়কের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বারবার ব্যর্থ হচ্ছে বলে দাবি করে অনতিবিলম্বে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নামে দায়েরকৃত সব ধরনের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। 
২৮ জুলাই, ২০২৩
X