আলোচনায় সৌদি নারী রোবট ‘সারা’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষের মতো দেখতে রোবট তৈরির যেন ধুম পড়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় মোহাম্মদ নামের পুরুষ হিউম্যানয়েড রোবট তৈরির পর এবার এ ধরনের প্রথম নারী রোবটও তৈরি করে ফেলল সৌদি আরব। ‘সারা’ নামে এ নারী হিউম্যানয়েড রোবটটি ইতোমধ্যে দেশটিতে বেশ সাড়া ফেলেছে। রোবটটি যৌনতা ও রাজনীতি ছাড়া আর যে কোনো বিষয়ে কথা বলতে পারবে। রিয়াদভিত্তিক কিউএসএস এআই অ্যান্ড রোবটসের প্রধান নির্বাহী এলি মেট্রি বলেন, ‘সারা জানে যে সে একজন মেয়ে, তার বয়স ২৫ বছর, তার উচ্চতা ১.৬২ সেন্টিমিটার, সে সৌদি পোশাক পরে। তার আচরণ ও ব্যবহার সুন্দর হওয়া উচিত। সৌদি আরবে তৈরি রোবট হওয়ায় তার রাজনীতি ও যৌনতা নিয়ে কথা বলা উচিত না।’ ঐতিহ্যবাহী সৌদি আবায়া পরিহিত সারা, সৌদি আরব তথা মধ্যপ্রাচ্যে ডিজাইন করা প্রথম হিউম্যানয়েড রোবট। সে আরবি এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় কথা বলতে পারে। মেট্রি জানান, সারা তার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভাষা শেখার মডেল ব্যবহার করে। এটি একটি এআই প্রোগ্রাম, যা টেক্সট, স্পিচ শনাক্ত এবং তৈরি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলোকে (এলএলএম) বিস্তৃত ডেটাসেটগুলোতে মেশিন লার্নিং কৌশল ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়। এই প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া চলাকালীন, মডেলগুলো ডেটার মধ্যে নিদর্শন, কাঠামো এবং সম্পর্কগুলো শেখে, তাদের মানুষের মতো পাঠ্য তৈরি করতে এবং বিভিন্ন ভাষার কার্য সম্পাদন করতে সক্ষম করে। মেট্রি বলেন, ‘আমরা অন্য কারও লাইব্রেরির ওপর নির্ভর করি না, এমনকি চ্যাটজিপিটিও নয়।’ সারা সৌদি আরবের আইনি ব্যবস্থা শরিয়া আইনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদিকে নানাভাবে আধুনিকীকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নারীদের কাপড়চোপড় ও গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে নিয়ম শিথিল করা। তবুও, রাজনৈতিক সক্রিয়তা কিংবা যৌনতা নিয়ে আলাপের জন্য সৌদি নারীদের এখনো শাস্তির বিধান আছে। মেট্রি জানান, বিভিন্ন প্রযুক্তি এক্সপোতে (টেক-এক্সপো) সারার উপস্থিতি মানুষের মধ্যে ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, সুপরিচিত হয়ে উঠেছে সে। তিনি আরও বলেন, রোবটিক্স এবং এআইতে সৌদি আরব কার্যকরভাবে অগ্রগতি লাভ করছে। তবে চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটির আরেক হিউম্যানয়েড রোবট ‘মুহাম্মদ’-এর একটি ঘটনা ভাইরাল হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রোবটটি হাত বাড়িয়ে আল আরাবিয়ার এক সাংবাদিকের নিতম্ব স্পর্শ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ব্যবহারকারীরা রোবটটির বিরুদ্ধে প্রতিবেদককে অশালীনভাবে স্পর্শ করার অভিযোগ আনেন। মেট্রি জানান, এ ঘটনার পর থেকে সারা বিশ্বের মিডিয়ার আলোচনার বস্তু হয়ে উঠেছে রোবট ‘মুহাম্মদ’। তবে তিনি এ নিয়ে চিন্তিত নন। তার মতে, রোবটটি ওই প্রতিবেদককে অশালীনভাবে স্পর্শ করেনি। তিনি বলেন, ‘মানুষ যখন কথা বলে, তখন সে হাত নাড়ায়, সে কোনো ম্যানিকুইন নয়।’ মেট্রির দৃষ্টিতে রোবটটি কথা বলার সময় তার হাত ও আঙুলগুলো সামান্য নাড়াচাড়া করে এবং প্রতিবেদক মুহাম্মদের খুব কাছে দাঁড়িয়ে থাকায় এটি তার জ্যাকেট স্পর্শ করে।
২৭ মার্চ, ২০২৪

আমরা রোবট দিয়ে দেশ চালাতে চাই!
এভাবে পরিচয় করিয়ে দিলে কেমন হয়: নাম-সোফিয়া, জন্ম-১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬। জন্মস্থান হংকং, সম্প্রদায়-হিউম্যানয়েড রোবট। শিক্ষাগত যোগ্যতা-সুপার হিউম্যানয়েড। নাগরিকত্ব-সৌদি আরব। হ্যাঁ, সৌদি আরব ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে সোফিয়াকে নাগরিকত্ব দিয়েছে। সৌদি আরবে নাগরিকত্ব বড়ই কঠিন, সেই সৌদি সোফিয়াকে নাগরিকত্ব দিয়ে নিজেদেরই ধন্য করেছে। হিউম্যানয়েড রোবট সোফিয়াকে দিয়ে শুরু করার কারণ সে ২০১৭ সালে ঢাকায় এসেছিল। তার সঙ্গে এসেছিলেন তাকে তৈরি করা (বায়োলজিক্যালি পিতা না হলেও তাকে তৈরি করেছেন) ডেভিড হাডসন। সোফিয়া যখন বাংলাদেশে এসেছিল তখন তার বয়স ছিল এক বছর। বলা যায় শিশুকালে। তখনই আলাপ-আলোচনায় প্রশ্নোত্তরে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। সেই সোফিয়া এখন রকেটের গতিতে নিজেকে আপডেট করছে, অর্থাৎ জ্ঞানে-চিন্তায়-সংবেদনশীলতায় সমৃদ্ধ হচ্ছে। সোফিয়ার মতোই তৈরি হয়েছে অ্যামেকা, আলেক্স-সির মতো বুদ্ধিমান রোবট। আরও হচ্ছে। প্রতিটি মানুষকে আলাদাভাবে চিনতে পারা, প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া থেকে শুরু করে রসবোধ, এমনকি দুঃখ-বেদনাও ঢুকে যাচ্ছে রোবটের শরীরে। রোবট এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে শপিং মল, মিউজিয়াম এমনকি ইউনিভার্সিটিতে যারা ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট হিসেবে পরিচিত। মানুষের যেমন ভুলভ্রান্তি থাকে, এই রোবটদের সেরকম ভুলভ্রান্তি নেই। নিখুঁত, নিরলস তাদের কাজ। রোবট ইঞ্জিনিয়াররা বলছেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই, অর্থাৎ আগামী ছয় বছরের মধ্যে মানুষের হেন কোনো গুণাবলি নেই যা রোবটের মধ্যে প্রবেশ করবে না। মানুষের দেহের যে কোনো ধরনের রোগবালাই রোবট মুহূর্তের মধ্যে চিহ্নিত করে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। সম্প্রতি বিল গেটস একটি নিবন্ধে জানিয়েছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে রোবট চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব এনে দেবে। যে কারণে মানুষের শরীরের কোষগুলো মরে যায় এবং বার্ধক্য দেখা দেয়, তা রোবট চিহ্নিত করে ফেলবে। অর্থাৎ ইন্টারনেটের পর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সহযোগিতায় আরও একটি প্রযুক্তি বিপ্লবের মুখে আছে বিশ্ব। বর্তমান রোবটগুলো এআই জেনারেটেড হওয়ায় প্রতিমুহূর্তে তার বুদ্ধিমত্তা-ইনফরমেশন স্তর অবিশ্বাস্য গতিতে আপডেট হচ্ছে। অর্থাৎ এমন একপর্যায়ে চলে যাচ্ছে যে, মানুষের চেয়ে রোবট সর্বার্থে নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠছে। এর বাণিজ্যিক উৎপাদনও শুরু হয়েছে। জার্মানি, তাইওয়ান, হংকং, জাপান, রাশিয়া, চীন, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে উন্নত দেশগুলো রোবট উৎপাদন শুরু করেছে। ভারতও পিছিয়ে পড়তে রাজি নয়। গত সপ্তাহে ভারতের কেরালা রাজ্যের রাজধানী থিরুভানাথপুরামের কেটিসিটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে প্রথমবারের মতো আইরিস বা ইরিস নামের এক রোবটকে স্কুল শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োজিত করা হয়েছে। কেটিসিটি গোটা ভারতের একটি মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভারতেরই দুটি শিক্ষাবিষয়ক ল্যাবের উদ্যোগে এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর রোবটটি তৈরি করা হয়। যদিও রোবটটি প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। কারণ সে অনেক শব্দ হলে সে তখন ভয়েস ডিটেক্ট করতে পারে না। চোখ না থাকায় মানুষকে চিহ্নিত করতে পারছে না। কিন্তু পারবে। শুরু তো করেছে! অচিরেই যে ভারত সুপার হিউম্যানয়েড রোবট তৈরিতে সক্ষম হবে, তা বলাই যায়। তার কারণ সময়মতো শুরু করেছে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংও ভারতের হাতে শুরু হয়নি। প্রথম সফটওয়্যার কনফারেন্সের আয়োজন করেছিল ন্যাটো ১৯৬৮ সালে। ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেলসিলভানিয়ায় প্রথম সফটওয়্যার ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ ভারত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। ভারত সময়ের বিষয়টি বুঝতে পেরেছে যে, প্রযুক্তির আপডেটে কোনোক্রমেই পিছিয়ে থাকা যাবে না। তাই দেশটি ন্যাশনাল রোবটিক মিশন প্রোগ্রামের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। বিশ্বের শিল্প রোবটের ঘাঁটি তৈরি করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে ভারত। ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট তৈরিতে অনেক এগিয়ে গেছে মহারাষ্ট্রের অটোফিনা রোবটিকস। আরও বেশ কিছু সময়োপযোগী উদ্যোগ রয়েছে, আমরা সে আলোচনায় না যাই। এ নিয়ে মাথায় একটা ভিন্ন চিন্তা ঢুকল। ইচ্ছা করলে স্যাটায়ার হিসেবে নিতে পারেন, আবার এর বাস্তবতাও ভেবে দেখতে পারেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানে আমরা কতটা এগিয়েছি, উন্নত প্রযুক্তির দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারব কি না, অথবা দ্বারস্থ হয়েই থাকতে হবে কি না, সে হিসাব পরে। কেমন হয় যদি অদূর ভবিষ্যতে আমরা প্রশাসনে কনসালট্যান্ট বা অ্যাডভাইজার যে কোনো নামে সুপার হিউম্যানয়েড রোবট বসিয়ে দিতে পারি? বাংলাদেশে রোবটের শাসন ছাড়া আর কোনো পথ আছে বলে মনে হয় না। রোবটের মামা-ভাগিনা বা স্ত্রী-শ্যালক নেই, তাই কারও প্রতি স্বজনপ্রীতি থাকবে না। রোবটের পেটে ক্ষুধা নেই, তাই সে ঘুষ খাবে না। রোবটের ভালো পোস্টিংয়ের লোভ নেই, তাই কোনো সরকারের পক্ষ নিয়ে অনিয়ম করবে না। রোবটের আরাম-আয়েশ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই, তাই সে মানিলন্ডারিং করে উন্নত দেশে বাড়ি বানাবে না; দেশের রাজস্ব আয়, বৈদেশিক ঋণের টাকা লুটপাট করবে না, অপব্যয় করবে না। সে নির্লিপ্ত থেকে পরামর্শ দেবে আর জাতি সেই পরামর্শ অনুসারে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এতে কিন্তু জনগণের আস্থাও ফিরবে। রোবটের পরামর্শ অনুসারে কাজ করলে, জনগণও আর সত্য-মিথ্যা নানা অভিযোগ তুলে সহিংস হয়ে উঠবে না। কারণ আস্থাই হলো সব। মানুষ আস্থা পেতে চায়, তা যেখান থেকেই আসুক। এই আস্থা সম্পর্কে রোবটের বাইরের একটি ঘটনা বলি। আরজ আলী মাতুব্বরের বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গি বরিশালের অনেক মানুষ পছন্দ করত না। কিন্তু তিনি পেশায় ছিলেন আমিন বা চেইনম্যান। হতদরিদ্র মানুষ। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতোই বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় বহু মানুষের জমি নিয়ে গোলমাল ফ্যাসাদ লেগেই থাকত। কেউ কারও সীমানার হিস্যা মানে না। তখন খোঁজ পড়ত আরজ আলী মাতুব্বরের। নির্লিপ্ত, নির্লোভ, পক্ষপাতহীন মাতুব্বর বহু বড় বড় জমি নিয়ে ভেজাল মিটিয়েছেন। কারণ তার ভূমির মাপ কেউ অস্বীকার করত না দক্ষতা ও পক্ষপাতহীন অবস্থানের কারণে। বহু রক্তারক্তি আরজ আলী মাতুব্বরের কারণে সেটলড হয়েছে। এর নাম আস্থা! রোবট মানুষ না। তাই ভবিষ্যতের মানুষ রোবটের ওপরই আস্থা রাখতে চলছে। এখন একটু সিরিয়াস কথা বলি। আমার কোনো প্রযুক্তিজ্ঞান নেই। কিন্তু সাধারণ কমনসেন্স থেকে বলি, যা বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে জেনেছি। শিল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটিকসে অনেক পিছিয়ে আছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট আর হিউম্যানয়েড রোবটের মধ্যে পার্থক্য আছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটকে অনেকটা দক্ষ স্বয়ংক্রিয় শিল্প শ্রমিক বলা যায়। অনেক ধরনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট আছে। দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে বটে, সেই তুলনায় এই প্রযুক্তি গুরুত্ব পায়নি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী। যদি এখনই প্রতিযোগিতার মানসিকতা নিয়ে দেশ না নামতে পারে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের তরুণ কর্মশক্তিও অকেজো হয়ে পড়বে। সেটা কৃষি থেকে গার্মেন্টস সব ক্ষেত্রে। এজন্য এখনই প্রয়োজন অসংখ্য সায়েন্স ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা। সেই মাত্রার উদ্যোগ কিন্তু মোটেই চোখে পড়ছে না। সরকার এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু অতি দুঃখজনক সত্য হলো, এর কোনোটাই আধুনিক বিশ্বে তাল মেলানোর মতো নয়। এটি আমার কথা না, খোদ কোনো কোনো প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মুখ থেকে শোনা। তাই আগামী বিশ্বে উন্নত দেশগুলোর পাশে দাঁড়াতে এখনই গা-ঝাড়া দিয়ে দাঁড়ানো প্রয়োজন। সুপার হিউম্যানয়েড রোবট না হোক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট আপডেট ও সৃষ্টিতে তো মনোযোগ দেওয়া যেতে পারে! লেখক: সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক
১২ মার্চ, ২০২৪

আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াড স্বর্ণপদক জেতা নাশীতাত যাইনাহ্ রহমান
বাংলাদেশ দলের পক্ষে ২৫তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক জিতেছেন রোবট ইন মুভি সিনিয়র গ্রুপে রোবো ইডিয়টস দলের নাশীতাত যাইনাহ্ রহমান। লিখেছেন—রীতা ভৌমিক ছেলেবেলায় মাইক্রোসফট পেইন্টে সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকতেন নাশীতাত যাইনাহ্ রহমান। গেম খেলতেন। কম্পিউটারে গেম খেলা ছিল ওর খুব পছন্দের। মাত্র ছয় বছর বয়সে তার মা বাংলাদেশ দলের দলনেতা ও আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল তাকে স্ক্র্যাচ প্রোগামিং সফটওয়্যারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। স্ক্র্যাচ প্রোগ্রাম দিয়ে নিজেই ছোট ছোট গেম বানানো শুরু করেন। পাশাপাশি লোগো দিয়ে খেলতে খুব মজা পেতেন। এভাবে খেলতে খেলতে একদিন আবিষ্কার করলেন, লোগো রোবটিকস কিট দিয়ে রোবট বানানো যায়। সেই কিট দিয়ে নিজে কয়েকটি রোবট বানিয়ে নিজেই বিস্মিত হলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন, রোবট নিয়ে আরও কাজ করবেন। নাশীতাত বলেন, এখান থেকে ২০১৭ সালে আমার রোবট বানানোর যাত্রা শুরু হলো। ২০১৮ সালে একটি আরডুইনো ওয়ার্কশপে অংশ নিই। ইন ডেপথ রোবটিকস নিয়ে কাজ শুরু করি। এখান থেকে আমি বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের কথা জানতে পারি। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে রোবট অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে স্বর্ণপদক পাই। এর আয়োজনে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক। সে বছরই ফিলিপাইনে আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে পুরস্কৃত হই। এরপর ছয় বছর আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে অংশ নিই। তিনবার গোল্ড মেডেল, তিনবার রৌপ্যপদক পেয়েছি। এ পর্যায়ে আমি আসতে পেরেছি এটা শুধু আমার একার চেষ্টায় নয়, আমার পরিবারের সদস্যদেরও অনেক সহযোগিতা রয়েছে। বিশেষ করে আমার মায়ের কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। তিনি আমাকে সবসময় উৎসাহিত করেছেন, এখনো করছেন। আমার কোনো ইচ্ছেকেই তিনি কখনো বাধা দেননি। এজন্য পরিবারের সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। অনেকে ধরেই নিয়েছেন, মেয়েরা রোবটিকসে কাজ করতে পারবে না। ছেলেরাই শুধু এখানে কাজ করতে পারে। এটা আসলে মেয়েদের সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করা। জেন্ডার এখানে কোনো বিষয় নয়। এখানে সেরাটা দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতা, মেধা এবং পরিশ্রমই মূল বিষয়। গত ছয় বছরে আমি জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গেমে অংশ নিয়ে অনেক নারীর অংশগ্রহণ দেখেছি। দুই জায়গাতেই মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, যা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। গত বছর আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে আটজন মেয়ে অংশ নিয়েছিলেন, এ বছর চারজন মেয়ে জুনিয়র-সিনিয়র গ্রুপে স্বর্ণপদক জিতেছে। বাংলাদেশের নারীরা কোনোভাবেই এখানে পিছিয়ে নেই। নাশীতাত যাইনাহ্ রহমান বলেন, গ্রামের মেয়েদের যদি প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, তারাও কিন্তু স্টেম ফিল্ডে চমৎকার সাফল্য অর্জন করতে পারবেন। যেমন গত বছর বাংলাদেশ টিমে একজন মেয়ে শিক্ষার্থী পাবনার ভাঙ্গুরা গ্রাম থেকে এসেছেন। তার নাম পুষ্পা। তার এলাকায় প্রযুক্তির কলাকৌশল খুব সীমিত ছিল। বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কশিপের সহযোগিতায় তার বিদ্যালয়ে একটি রোবোটিকস ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছিল। এখানে তাদের পরবর্তী সময়ে লং-টার্ম গ্রুমিং করা হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছিলেন। পরে আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে রৌপ্যপদক অর্জন করেছেন। সুযোগ পেলে, সেই সুযোগটাকে কাজে লাগালে নিজের পরিশ্রম, মেধা, অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সেরাটা দেওয়া সম্ভব। এর প্রমাণ মেলে পাবনার ভাঙ্গুরার পুষ্পার এগিয়ে যাওয়া দেখে। নাশীতাত এক ভাই এক বোনের মধ্যে ছোট। মাস্টারমাইন্ড স্কুলে এ-লেভেলে পড়ছেন। পাশাপাশি মণিপুরী নৃত্যও শিখছেন।
১১ মার্চ, ২০২৪

পঞ্চম কিবো রোবট প্রোগ্রামিং চ্যালেঞ্জে নিবন্ধন শুরু
জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির উদ্যোগে আয়োজিত হতে যাচ্ছে ‘পঞ্চম কিবো রোবট প্রোগ্রামিং চ্যালেঞ্জ-২০২৪’। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে। আগ্রহীরা স্টেমএক্স৩৬৫-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে স্টিমএক্স৩৬৫ এবং জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি। এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবে রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)। নাসার মহাকাশ বিজ্ঞানী ও অলাভজনক সংস্থা স্টেমএক্স৩৬৫-এর প্রতিষ্ঠাতা মিজানুল হক চৌধুরী বলেন, কিবো রোবট প্রোগ্রামিং চ্যালেঞ্জ মূলত একটি শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতা। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) সহযোগিতায় এ প্রতিযোগিতার করে থাকে জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি। এই চ্যালেঞ্জে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের (আইএসএস) সমস্যা সমাধানের জন্য ফ্রি-ফ্লাইং রোবট (অ্যাস্ট্রোবি এবং ইন-বল) নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। ২০২১ সাল থেকে বাংলাদেশ এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে এবং প্রতিবারই সফলতা পাচ্ছে। সংস্থাটির আউটরিচ কর্মকর্তা কাজী হাসীব বলেন, আমাদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি স্টেম বিষয়টি সবার মাঝে তুলে ধরতে। পঞ্চম কিবো রোবট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার নিবন্ধন কার্যক্রম গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে। চলবে ১ মার্চ পর্যন্ত। জুনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম জমা দিতে হবে। নির্বাচিতদের নিয়ে জুলাই পর্যন্ত হবে প্রিলিমিনারি রাউন্ড। অক্টোবরে চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। স্টেম৩৬৫-এর ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজে জানা যাবে প্রতিযোগিতার আরও বিস্তারিত।
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

রোবট দিয়ে মহাকাশে প্রথম অস্ত্রোপচার
রোবট দিয়ে মহাকাশে প্রথম অস্ত্রোপচার করেছেন বিজ্ঞানীরা। শূন্য অভিকর্ষে এই প্রথম কোনো অস্ত্রোপচার করা হয়েছে; তাও আবার রোবট দিয়ে। পৃথিবীতে থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অস্ত্রোপচারে ওই রোবট পরিচালনা করা হয়। এটিকে প্রযুক্তির উৎকর্ষতার মাইলফলক আখ্যায়িত করা হয়েছে। গত শনিবার এ অপারেশন চালানো হয়। খবর সিএনএনের। রোবটের ডেভেলপাররা সিএনএনকে জানিয়েছেন, ওই রোবটটি স্পেসমিরা বা মিনিয়েচারাইজড ইন ভিভো অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে পরিচিত। এটি মূলত ছোট আকারের একটি সার্জিক্যাল রোবট। পৃথিবীর মাটি থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ওপরে মহাশূন্যে অবস্থিত ঘূর্ণায়মান একটি গবেষণাগারে অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন করে মিরা। যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কার লিনকন থেকে একদল গবেষক এ অস্ত্রোপচারে নির্দেশনা দেন। এতে মিরা এক ধরনের সিমুলেটেড টিস্যুর ওপর কয়েক দফায় ডেমো অপারেশন করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভবিষ্যতে যদি কখনো মহাশূন্য ভ্রমণের সময় কোনো নভোচারীর জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নির্দেশনা বা অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে এটি একটি বিশাল মাইলফলক। এমনকি পৃথিবীর দূরের কোনো প্রান্তে যেখানে এখনো চিকিৎসাসেবা পৌঁছায়নি সেখানেও জরুরি অস্ত্রোপচার বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে এ ঘটনা একটি দারুণ সুযোগ সৃষ্টির পথ খুলে দিয়েছে। স্পেসমিরার সহপ্রতিষ্ঠাতা ও এর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ভার্চুয়াল ইনসিশনের প্রধান কর্মকর্তা শেন ফ্যারিটর বলেন, মাত্র ৯০০ গ্রামের এ রোবটটিকে মাইক্রোওয়েভ সাইজের নকশায় এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা শূন্য অভিকর্ষে চলার উপযোগী। এর সঙ্গে এমন যন্ত্র দেওয়া হয়েছে, যা দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। এর এমন দুটি বাহু রয়েছে, যেগুলো মানুষের হাতের মতো করে ব্যবহার করা যায়। এ রোবটের ডান হাতটি মূলত কাটাছেঁড়ার যন্ত্র ধরে রাখে এবং বাঁ হাতটি সংশ্লিষ্ট বস্তু বা অঙ্গকে ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়। এ রোবটের উন্নয়নে ২০ বছর ধরে কাজ করছেন শেন ফ্যারিটর। তিনি বলেন, ‘মিরা দূরবর্তী স্থানে থাকা সার্জনদের জন্য অতিরিক্ত হাত ও চোখ হিসেবে কাজ করে এবং মহাশূন্যে ছোট পরিসরে দ্রুত অস্ত্রোপচারের সুযোগ দেয়।’ এর আগে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটে করে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ কেনভিরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে যাত্রা করে শুরু করে স্পেসমিরা। একদিন পর ১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছায় সেটি। মূলত রাবার ব্যান্ড দিয়ে তৈরি এক ধরনের বিশেষ টিস্যুর ওপর সার্জনদের নির্দেশনা অনুযায়ী ডেমো অপারেশন করে মিরা। এ ক্ষেত্রে মিরা এক হাতে ওই সিমুলেটেড টিস্যু ধরে ছিল এবং অপর হাত দিয়ে সেটিতে অস্ত্রোপচার করেছিল। ফ্যারিটর বলেছেন, রোবট দিয়ে দূর থেকে পরীক্ষা চালিয়েছেন মূলত ছয়জন সার্জন। তারা ওই যন্ত্র দিয়ে কয়েক দফায় পরীক্ষা করেছেন, সেক্ষেত্রে রোবটটি সঠিকভাবে সম্পাদন করেছে। আপাতদৃষ্টিতে এটি সফল হয়েছে। এই অপারেশনের অন্যতম আরেক কোলোরেক্টাল সার্জন মাইকেল জবস্ট বলেন, রোবট দিয়ে এ অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল—সেটিকে নিয়ন্ত্রণের সময় সংকেত দেওয়ার পর যন্ত্রটি কতক্ষণ দেরিতে সাড়া দেয়, তা দেখা। এ ক্ষেত্রে ব্যবধান মাত্রা দশমিক ৮৫ সেকেন্ড। তিনি বলেন, একজন মানুষের ক্ষেত্রে যদি রক্তপাত হয় তবে অবিলম্বে তা বন্ধ করা আমার কাজ। তবে রক্তপাত হওয়া ও তারপর তা বন্ধের সিদ্ধান্তের মধ্যে যদি ৮০০ থেকে ৮৫০ মিলি সেকেন্ডের ব্যবধান থাকে তবে তা আসলে একজন রোগীর জন্য আশঙ্কাজনক হয়ে দাঁড়াবে। এটা সমাধান করতে হবে। তিনি আরও বলেন, একজন রোগীর ক্ষেত্রে মাত্র ৫ সেকেন্ড দেরিই মহাবিপর্যয় ডেকে আনতে পারে এবং এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ বা আধ সেকেন্ডই তার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এ বিলম্ব আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাই হোক, রোবটটি আগামী বসন্তে পৃথিবীতে ফিরে আসবে। ফ্যারিটর বলেন, নাসা আরও সামনে এগোতে চায় এবং চিকিৎসাসেবায় আরও দীর্ঘমেয়াদি স্পেসফ্লাইট পাঠাবে। নেব্রাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্রামীণ এলাকা বা সামরিক যুদ্ধক্ষেত্রের মতো পৃথিবীতে অস্ত্রোপচারের বিকল্প পদ্ধতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে মিরা থেকে পাওয়া ফলাফল কাজে আসবে।
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

নতুন যুগে বাংলাদেশ / হার্টে রিং পরাল রোবট
দেশে প্রথমবারের মতো হৃদরোগ চিকিৎসায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি (রোবট দিয়ে হার্টের রিং পরানো) হয়েছে। গত রোববার এই পদ্ধতিতে নিখুঁতভাবে রিং পরানো হয় দেশের একমাত্র বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। হৃদরোগে আক্রান্ত দুই রোগীর প্রধান ধমনিতে বিনামূল্যে এই রোবটিক রিং পরানো হয়। এর মধ্য দিয়ে রোবট দিয়ে হার্টে রিং পরানোর যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন প্রতিষ্ঠানের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার ও তার বিশেষায়িত টিম। এই চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্বোধন করেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল হাসান মিলন ও কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. সালাউদ্দিন উল্লুবি। রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি যুগান্তকারী ও সর্বাধুনিক হৃদরোগ চিকিৎসা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া চিকিৎসা আস্তে আস্তে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার আশা করছেন চিকিৎসকরা। ফলে কমবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা। যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিশ্বে ১৬০টি দেশে রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টি সেন্টার রয়েছে। সারা বিশ্বে বর্তমানে এটাই হার্টের রিং পরানোর সর্বাধুনিক এবং সর্বশেষ প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা রোগীর চেয়ে দূরে থেকে নিখুঁতভাবে হার্টের ধমনিতে রিং পরান। এর দুটি অংশ রয়েছে। একটি হলো রোবটের একটি হাত, যা ক্যাথল্যাবে থাকে ও অপরটি থাকে কন্ট্রোল সেকশন। যেখান থেকে মূল কার্ডিওলজিস্ট রিং পরানোর পুরো কার্যক্রম দূরে থেকেও সম্পন্ন করতে পারেন। অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কালবেলাকে বলেন, রোবট দিয়ে হার্টের রিং পরানোর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এর একটি হলো রোগীর সুবিধা আরেকটি হলো কার্ডিওলজিস্ট, যিনি রিং পরান তার জন্য, তৃতীয়টি হলো দেশের। তার মতে, হার্টের রিং পরানোর জটিল প্রক্রিয়াটি রোবটের মাধ্যমে খুব সূক্ষ্ম ও নিখুঁতভাবে করা যায়। অনেক সময় রিং নিখুঁতভাবে পজিশন করতে এক মিলিমিটার সামনে অথবা পেছনে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। হাত দিয়ে এই কাজ নিখুঁতভাবে করা কঠিন। সরাসরি এনজিওপ্লাস্টির তুলনায় রোবটের মাধ্যমে তা করতে অনেক কম সময় লাগে। ফলে অল্প সময়ে বেশি রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব। তাছাড়া হার্টের ভেতরে ক্যাথেটার, ওয়্যার (তার), বেলুন, রিং যত কম সময় রাখা যায় রোগীর জন্য তা ততই ভালো। এতে রোগীর জটিলতা কম হয়। রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি পদ্ধতি ব্যবহারে চিকিৎসকদেরও সুবিধা রয়েছে। যেসব চিকিৎসক অনেক এনজিওপ্লাস্টি করেন একটা সময় এসে তারা সমস্যায় পড়েন। প্রথমত, রেডিয়েশনের কারণে অনেক চিকিৎসক ব্রেন ক্যান্সার ও চোখে ক্যাটারাক্টসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার ঝুঁকিতে পড়েন। এ ছাড়া অপারেশন থিয়েটার বা ক্যাথলেবে কাজ করার সময় চিকিৎসকরা রেডিয়েশন থেকে বাঁচতে ১২ থেকে ১৫ পাউন্ড ওজনের একটি বিশেষ জামা দীর্ঘসময় ধরে পরিধান করে থাকেন। এতে ঘাড়ের নার্ভের চাপ পড়ে। তখন ঘাড় ও হাতে ব্যথার কারণে চিকিৎসক খুব বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে এনজিওপ্লাস্টি করতে পারেন না। এ কারণে বর্তমানে অনেক সিনিয়র ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসাসেবা দিতে পারছেন না। রোবোটিক এনজিও প্লাস্টির মাধ্যমে রেডিয়েশন এবং ভারী বিশেষ জামা পরিধান ছাড়াই ক্যাথল্যাবের কন্ট্রোলরুমে, তার অফিসে কিংবা সুযোগ-সুবিধা থাকলে বাসায় বসে বা দেশের বাইরে থেকেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে হার্টের রিং পরাতে পারবেন। চিকিৎসকরা বলছেন, এই পদ্ধতি চালু হলে রোগীকে আর দেশের বাইরে যেতে হবে না। রোবটিক চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর অসংখ্য রোগী ভারত, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে যান। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পরিপূর্ণভাবে এই পদ্ধতি চালু করা হলে কম খরচে রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব। এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি বিপুল অঙ্কের অর্থ দেশেই থাকবে। জানা গেছে, ডা. প্রদীপ ভারতের হায়দ্রাবাদের অ্যাপোলো হসপিটাল এবং চীনের সাংহাই থেকে রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাছাড়া তিনি ভারতের প্রখ্যাত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. পিসি রাথের কাছ থেকেও এই বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি চালুর মাধ্যমে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল সর্বাধুনিক ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। বর্তমান মেশিনটি এক মাসের জন্য ফ্রান্স থেকে আনা হয়েছে দেশের অবকাঠামোর সঙ্গে সহায়ক কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য। এরপর সেটি ফ্রান্সকে ফেরত দেওয়া হবে। তবে এই পদ্ধতি দেশের অবকাঠামোর সঙ্গে সহায়ক হলে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই রোবটিক সিস্টেমটি কিনতে সরকারকে অনুরোধ করবে। পৃথিবীজুড়ে এই পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। অধ্যাপক তেজেশ প্যাটেল ১৯১৮ সালে ভারতে প্রথম এটা চালু করেন। তিনি যখন প্রথম রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি করেন তখন প্রায় বত্রিশ কিলোমিটার দূরে থেকে রোগীর হার্টের রিং পরানো হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন দেশ এই পদ্ধতি চালু করে। গবেষণা ও নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে এই পদ্ধতির মান দিন দিন বাড়ছে। উল্লেখ্য, ডা. প্রদীপ এর আগেও দেশে প্রথমবারের মতো সরকারি হাসপাতালে ট্রান্স ক্যাথেটার এউটিক ভালভ রিপ্লেসমেন্ট বা টিএভিআর পদ্ধতিতে বুক না কেটে হার্টের ভালভ প্রতিস্থাপন করেন। ২০২০ সালে তার নেতৃত্বে প্রথম জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে সফলভাবে এই অপারেশন হয়। তিনি দেশে সর্বোচ্চসংখ্যক রোগীর টিএভিআর পদ্ধতিতে এউটিক ভালভ প্রতিস্থাপন করেছেন।
২৪ জানুয়ারি, ২০২৪

আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে দেশের ৩ স্বর্ণপদক
২৫তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে তিন স্বর্ণসহ ১৫টি পদক জিতেছে বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে ছয়টি রৌপ্য, চারটি ব্রোঞ্জ ও দুটি টেকনিক্যাল পদক। রোবটিকসের আন্তর্জাতিক এ উৎসবে ২৬ দেশের প্রায় দেড় হাজার প্রতিযোগী অংশ নেন। বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৬ সদস্যের দল। গত ১৬ থেকে ১৯ জানুয়ারি গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। ২০ জানুয়ারি সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ দলের পক্ষে স্বর্ণপদক পেয়েছেন ‘রোবট ইন মুভি জুনিয়র’ গ্রুপে রোবোস্পারকার্স দলের জাইমা যাহিন ওয়ারা, ‘রোবট ইন মুভি সিনিয়র’ গ্রুপে রোবো ইডিয়টস দলের নাশীতাত যাইনাহ্ রহমান, প্রপা হালদার ও মার্জিয়া আফিফা পৃথিবী এবং ‘ক্রিয়েটিভ আইডিয়া সিনিয়র’ গ্রুপে জিরোথ দলের সদস্য মিসবাহ উদ্দিন ইনান। প্রতিযোগিতায় রৌপ্যপদক অর্জন করেন ‘ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি জুনিয়র’ গ্রুপে টিম পাই দলের মাহরুজ মোহাম্মদ আয়মান, ‘ফিজিক্যাল কম্পিউটিং জুনিয়র’ গ্রুপে রোবোস্পারকার্স দলের জাইমা যাহিন ওয়ারা, টিম পাই দলের সদস্য মাহরুজ মোহাম্মদ, ‘রোবট ইন মুভি সিনিয়র’ গ্রুপে জিরোথ দলের মিসবাহ উদ্দিন ইনান ও সাদিয়া আক্তার স্বর্ণা, অ্যাফিসিয়েনাদোস দলের মাইশা সোবহান, সামিয়া মেহনাজ ও মাশকুর মালিক মোস্তফা এবং ‘এআই অটোনমাস ড্রাইভিং সিনিয়র’ গ্রুপে এক্সফ্যানাটিক দলের মাহির তাজওয়ার চৌধুরী। বাংলাদেশের পক্ষে ব্রোঞ্জ জেতেন ‘ক্রিয়েটিভ আইডিয়া জুনিয়র’ গ্রুপে রোবোস্পারকার্স দলের সদস্য জাইমা যাহিন ওয়ারা, ‘ফিজিক্যাল কম্পিউটিং সিনিয়র’ গ্রুপে জিরোথ দলের সদস্য মিসবাহ উদ্দিন ইনান, এক্সফ্যানাটিক দলের সদস্য মাহির তাজওয়ার চৌধুরী ও ফাতিন আল হাবীব নাফিস এবং ‘রোবট ইন মুভি সিনিয়র’ গ্রুপে টেক অটোক্র্যাটস দলের আন নাফিউ, নামিয়া রউজাত নুবালা ও রুবাইয়্যাত এইচ রহমান। এ ছাড়া টেকনিক্যাল পদক পান ‘ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি সিনিয়র’ গ্রুপে অটোমেশন৭১ দলের সদস্য সাদিয়া আক্তার স্বর্ণা এবং রোবো সোলো দলের সদস্য ফাতিন আল হাবীব নাফিস। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বিজয়ীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশে রোবট অলিম্পিয়াড আয়োজিত হয়। আইসিটি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুপ্রেরণায় আয়োজন করে আইসিটি অধিদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক।
২২ জানুয়ারি, ২০২৪

আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের ৩ স্বর্ণপদক
২৫তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে তিনটি স্বর্ণপদকসহ মোট ১৫টি পদক অর্জন করেছে বাংলাদেশ দল। স্বর্ণপদক ছাড়াও ছয়টি রৌপ্যপদক, চারটি ব্রোঞ্জপদক এবং দুটি টেকনিক্যাল পদক রয়েছে। রোবটিক্সের আন্তর্জাতিক এই উৎসবে ২৬ দেশের প্রায় দেড় হাজার প্রতিযোগীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বাংলাদেশের ১৬ সদস্যের দল।   গত ১৬ থেকে ১৯ জানুয়ারি গ্রিসের এথেন্সে ২৫তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। ২০ জানুয়ারি অলিম্পিয়াডের সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেওয়া হয়।  বাংলাদেশ দলের পক্ষে ২৫তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক অর্জন করেছে ‘রোবট ইন মুভি জুনিয়র’ গ্রুপে রোবোস্পারকার্স দলের জাইমা যাহিন ওয়ারা; ‘রোবট ইন মুভি সিনিয়র’ গ্রুপে রোবো ইডিয়টস দলের নাশীতাত যাইনাহ্ রহমান, প্রপা হালদার এবং মার্জিয়া আফিফা পৃথিবী এবং ‘ক্রিয়েটিভ আইডিয়া সিনিয়র’ গ্রুপে জিরোথ দলের সদস্য মিসবাহ উদ্দিন ইনান। পাশাপাশি এই প্রতিযোগিতায় রৌপ্যপদক অর্জন করেছে ‘ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি জুনিয়র’ গ্রুপে টিম পাই দলের মাহরুজ মোহাম্মদ আয়মান, ‘ফিজিক্যাল কম্পিউটিং জুনিয়র’ গ্রুপে রোবোস্পারকার্স দলের জাইমা যাহিন ওয়ারা, টিম পাই দলের সদস্য মাহরুজ মোহাম্মদ, ‘রোবট ইন মুভি সিনিয়র’ গ্রুপে জিরোথ দলের মিসবাহ উদ্দিন ইনান ও সাদিয়া আক্তার স্বর্ণা, অ্যাফিসিয়েনাদোস দলের মাইশা সোবহান, সামিয়া মেহনাজ ও মাশকুর মালিক মোস্তফা; ‘এআই অটোনমাস ড্রাইভিং সিনিয়র’ গ্রুপে এক্সফ্যানাটিক দলের মাহির তাজওয়ার চৌধুরী। বাংলাদেশ দলের পক্ষে ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেছেন ‘ক্রিয়েটিভ আইডিয়া জুনিয়র’ গ্রুপে রোবোস্পারকার্স দলের সদস্য জাইমা যাহিন ওয়ারা, ‘ফিজিক্যাল কম্পিউটিং সিনিয়র’ গ্রুপে জিরোথ দলের সদস্য মিসবাহ উদ্দিন ইনান, এক্সফ্যানাটিক দলের সদস্য মাহির তাজওয়ার চৌধুরী ও ফাতিন আল হাবীব নাফিস, ‘রোবট ইন মুভি সিনিয়র’ গ্রুপে টেক অটোক্র্যাটস দলের আন নাফিউ, নামিয়া রউজাত নুবালা ও রুবাইয়্যাত এইচ রহমান। এছাড়াও বাংলাদেশ দলের পক্ষে টেকনিক্যাল পদক অর্জন করেছে ‘ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি সিনিয়র’ গ্রুপে অটোমেশন ৭১ দলের সদস্য সাদিয়া আক্তার স্বর্ণা, রোবো সোলো দলের সদস্য ফাতিন আল হাবীব নাফিস। বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের পৃষ্ঠপোষক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বিজয়ীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।  উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশে রোবট অলিম্পিয়াড আয়োজিত হচ্ছে। আইসিটি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় ও অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে আইসিটি অধিদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক। 
২১ জানুয়ারি, ২০২৪

নিঃসঙ্গতায় সঙ্গ দেবে খুবি শিক্ষার্থীর রোবট
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) দুই শিক্ষার্থী তৈরি করেছেন ‘জি’ (Zee) নামের একটি রোবট। সম্পূর্ণ ভয়েস নিয়ন্ত্রিত রোবটটি বয়স্ক মানুষের নিঃসঙ্গতায় সঙ্গ দেবে। পাশাপাশি শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষাদান এবং ধর্মীয় শিক্ষায় ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছেন উদ্ভাবকরা। ওই দুই শিক্ষার্থী হলেন ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইন্জিনিয়ারিং (ইসিই) ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী চিরঞ্জিত বিশ্বাস রহিত ও সামিয়া ইন্তেসার। একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামীম আহসানের তত্ত্বাবধানে চতুর্থ বর্ষের গবেষণা প্রজেক্ট হিসেবে প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে রোবটটি তৈরি করেন তারা। রোবটের বিষয়ে উদ্ভাবকরা বলেন, সেন্টার প্রসেসর হিসেবে আমরা জেটসন ন্যানো ব্যবহার করেছি। মূলত আমাদের প্রজেক্টটি ছিল বয়স্ক ব্যক্তিদের নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হতে পারবে এমন একটি রোবট তৈরি করা। রোবটটি সম্পূর্ণ ভয়েস নিয়ন্ত্রিত। রোবটটি ব্যবহারকারীর কথা শুনতে পারে এবং প্রত্যুত্তর করতে পারে। এ ছাড়া মানুষের নির্দেশনা অনুযায়ী চলাচল করতে পারে, কথা বলতে পারে, গান শুনাতে পারে, যে কোনো বিখ্যাত ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য জানাতে পারে। এ ছাড়া এটি শিশুদের শিক্ষা দানের সহায়ক এবং ধর্মীয় শিক্ষার জন্য ব্যবহার করা যাবে। প্রয়োজন অনুযায়ী এটি আপডেট করা যাবে। গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ড. মো. শামীম আহসান বলেন, বর্তমান বিশ্বে সব দিক বিবেচনা করলে রোবট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রোবট নিয়ে কাজ করাও ব্যয়বহুল, যা অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্টসাধ্য। তবুও আমরা চেষ্টা করেছি অল্প খরচে ভালো একটা প্রজেক্ট তৈরি করতে। এ রোবটটি যেমন বয়স্কদের নিঃসঙ্গতা কাটাতে ব্যবহার করা যাবে তেমন বাচ্চাদের শিক্ষায়ও ব্যবহার করা যাবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আছেন যারা সুযোগ পেলে অনেক ভালো কিছু করবে কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে তারা পিছিয়ে যাচ্ছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আরও সুযোগ করে দেওয়া হয় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি এসব সেক্টর এগিয়ে যাবে। রহিত ও সামিয়া তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, শ্রদ্ধেয় শামীম স্যারের নির্দেশনায় দীর্ঘ ৯ মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে রোবটটি তৈরি করতে পেরেছি। রোবট নিয়ে কাজ করা সব সময় কৌতূহলপূর্ণ। আশা করছি, সামনে আরও ভালো কিছু করতে পারব।
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩

বিচিত্র / বিশ্বের প্রথম এআই রোবট সিইও মিকা
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মানুষ এটিকে কর্মপ্রবাহ পরিকল্পনা-পরিচালনা, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, কোড-প্রবন্ধ লেখা এবং কনটেন্ট তৈরিতে ব্যবহার করছে। এআইর ব্যবহারে এবার ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে পোল্যান্ডের এক প্রতিষ্ঠান। নিজেদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইও পদে নিয়োগ দিয়েছে মিকা নামে এক হিউম্যানয়েড এআই রোবটকে। দ্য নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদন বলছে যুগান্তকারী এ পদক্ষেপ নেওয়া পোল্যান্ডের ওই কোম্পানির নাম ডিকটেডর, তারা অ্যালকোহল ও বেভারেজ উৎপাদন করে। আর মিকাকে তৈরিতে ডিকটেডরকে সাহায্য করেছে হংকংয়ের কোম্পানি হ্যানসন রোবটিকস। ২০১৬ সালে হিউম্যানয়েড রোবট সোফিয়াকেও তৈরি করেছিল হ্যানসন। সম্প্রতি মিকার একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছে ডিকটেডর। এতে মিকা বলছে, আমি উন্নত এআই এবং মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমার নেওয়া সিদ্ধান্ত কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থের ওপর নির্ভর করে না। বরং নির্ভুল গণনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের নীতি অনুযায়ী উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারি।
২২ নভেম্বর, ২০২৩
X