কালবেলায় সংবাদ প্রকাশ, সেই কৃষকদের শসা কিনল ‘স্বপ্ন’
পবিত্র মাহে রমজান শেষ হয়েছে বেশকিছু দিন আগে। শেষ হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও নববর্ষের আমেজ। এসব উৎসব শেষে নেমেছে শসার ধস। দিনাজপুরের খানসামায় চলতি মৌসুমে শসার ফলন ভালো হলেও একদমই দাম নেই। এতে লোকসানে পড়েছেন কৃষকেরা। এ নিয়ে কালবেলায় 'রমজানের পর শসার কেজি আড়াই টাকা' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর দাম কমে যাওয়ায় বিভিন্ন গণমাধ্যম দিনাজপুরের শসা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে সেই কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দেশের সেরা রিটেইল চেইন সুপারশপ ‘স্বপ্ন’। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) খানসামায় উপজেলার শসা চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘স্বপ্ন’ সুপারশপের একটি প্রতিনিধি দল ন্যায্যমূল্য দিয়ে দুই টন শসা কিনে নিয়ে যান। এ বিষয়ে স্বপ্ন’র নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির কালবেলাকে বলেন, আমরা শসা চাষিদের দুর্ভোগের কথা জানতে পেরেছি বিভিন্ন গণমাধ্যমে। দিনাজপুরসহ বেশকিছু এলাকার কৃষকের দুর্ভোগের কথা জেনে শসা কিনেছি ন্যায্যমূল্যে। অন্যান্য ব্যবসায়ীকেও এগিয়ে আসার আহ্বান থাকবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভবান না করে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি সেতুবন্ধনের চেষ্টা করে আসছে স্বপ্ন। এই চেষ্টা সবসময় অব্যাহত থাকবে। স্বপ্ন’র হেড অব পার্চেজ সাজ্জাদুল হক কালবেলাকে বলেন, গণমাধ্যমে শসা চাষিদের সংকটের খবর দেখার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেই, শসা চাষিদের পাশে আমরা দাঁড়াব। দুঃসময়ে কষ্টে থাকা অনেক কৃষকের পাশে ‘স্বপ্ন’ এর আগেও দাঁড়িয়েছে। আশা করছি, সামনের দিনেও পাশে থাকবে। ‘স্বপ্ন’কে ধন্যবাদ জানিয়ে উপজেলার চাকিনীয়া গ্রামের কৃষক সাকিব ইসলাম কালবেলাকে বলেন, প্রায় এক বিঘা জমিতে শসা চাষ করেছিলাম এবার। শসার বীজ, সারসহ নানা কাজে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু ১০ রমজান অবধি কিছু শসা বিক্রি করার পর বাজারে শসার দাম কমে যায়। প্রতি কেজি ১০ টাকা, এরপর পর ৫ টাকা এবং শেষে ১ টাকা বিক্রি করতে হয়। তারপরেও শসা বিক্রি হয় না। অনেক শসা নষ্টও হয়ে যায় এতে অনেক লোকসান হচ্ছিল। এরপর এসিআই কোম্পানির ‘স্বপ্ন’ থেকে যোগাযোগ করে আমার ক্ষেতের সব শসা কিনে নিয়েছেন। এতে করে লোকসানের অনেক ঘাটতি পূরণ হয়েছে আমার। একই এলাকার কৃষক এনামুল হক কালবেলাকে বলেন, শসা লাগিয়েছিলাম লাভের আশায় কিন্তু সেই শসা বিক্রি করতে পারছিলাম না। পরে কোম্পানির লোক এসে আমাদের জমি থেকে ন্যায্যমূল্যে শসাগুলো নিয়ে যায়। এতে আমাদের খরচের টাকাগুলো তুলতে পারছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার কালবেলাকে বলেন, এ বছর উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে শসা চাষ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ জমির ফসল তোলা হয়েছে। চাহিদার বিপরীতে বাজারে শসার সরবরাহ কয়েক গুণ বেশি হওয়ায় বাজারের শসার দাম কমে গেছে। কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পাইকাররা জমি থেকে মাত্র ১ টাকা থেকে ২ টাকা কেজি দরে শসা কিনে খুচরা বাজারে তা ১০ টাকায় বিক্রি করছেন।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪

মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষে মোস্তাকিমের সাফল্য
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবাসফেরত কৃষক মোস্তাকিম সরকার মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ করে এক অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন। জেলার আখাউড়া উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে তিনি দেশীয় পদ্ধতিতে কোনো প্রকার রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে বাণিজ্যিকভাবে মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ করছেন। একদিন পর পর জমি থেকে ৩০-৩৫ মণ শসা বিক্রি করছেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে এবং বাজার দর ভালো থাকলে ৩-৪ লাখ টাকা বিক্রি হবে। এতে খরচ বাদে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হবে। জানা গেছে, মোস্তাকিম সরকার জেলার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউপির ধাততুর পহেলা গ্রামের রফিকুল ইসলাম সরকারের ছেলে। ৪ বছর আগে তিনি সীমান্তবর্তী মোগড়া ইউপির ৩ বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ শুরু করেন। মোস্তাকিম জানান, অন্যান্য সবজির পাশাপাশি ৩ বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শসা আবাদ করতে জমি ইজারা, পরিচর্যা, সেচ, বীজসহ অন্যান্য খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। চারা রোপণের পর থেকে দেড় মাসের মধ্যে জমিতে শসার ভালো ফলন আসে। বর্তমানে একদিন পর পর ৩০-৩৫ মণ শসা বিক্রি হচ্ছে। বাজারে শসার ভালো চাহিদা থাকায় পাইকারি দরে এক মণ শসা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছি। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করা হয়েছে। আশা করছি, ফলন ও বাজার দর ভালো থাকলে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা বিক্রি হবে। এতে খরচ বাদে ২ লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হবে। সরজমিনে দেখা গেছে, বাঁশের খুঁটি, নাইলন সুতা আর জিআই তার দিয়ে চারদিকে মাঁচা তৈরি করা হয়েছে। ছোট বড় অসংখ্য শসা মাচায় ঝুলে আছে। যে দিকে তাকানো যায় শসা আর শসা। জানা যায়, মালচিং পদ্ধতিতে প্রথমে জমিতে পরিমিত জৈব সার দিয়ে সারি সারি বেড তৈরি করা হয়। পরে সারিবদ্ধ বেডগুলো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। বেডে নির্দিষ্ট দূরত্বে পলিথিন ফুটো করে সবজির বীজ বা চারা রোপণ করতে হয়। এ পদ্ধতিতে কৃষকের উৎপাদন খরচও তুলনামূলক অনেক কম হয়। মোস্তাকিম সরকার আরও জানান, এ মাটিতে সবজি চাষ নিয়ে শুরুতে খুবই চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতা, পরামর্শ ও নিজের সঠিকভাবে পরিচর্যায় উৎপাদনে তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি। সবজি চাষে খরচ কম কিন্তু লাভ বেশি। এ বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম গণমাধ্যমকে বলেন, ফলন বৃদ্ধিতে সব সময় স্থানীয় কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। মালচিং পদ্ধতিতে শসা আবাদ করে সত্যিই কৃষক মোস্তাকিম সরকার একজন আদর্শ কৃষককে পরিণত হয়েছেন।
২২ মার্চ, ২০২৪

লবণাক্ত জমিতেও বছরে ৫-৬ কোটি টাকার সবজি চাষ
বরগুনার তালতলী উপজেলার সওদাগরপাড়া গ্রামে কৃষিজমিতে লবণাক্ততার কারণে এক সময়ে শুধু বর্ষা মৌসুমে ধান উৎপাদনই হতো। বছরের বাকিটা সময় দিনমজুরি দিয়েই সংসার চালাতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু এখন সেখানে বছরব্যাপী নানা ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে। তাদের উৎপাদিত সবজির মূল্য পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার বেশি। এতে স্বাবলম্বী হয়েছেন দুই শতাধিক পরিবার, ফিরেছে সুদিন। স্থানীয় কৃষকরা জানান, শুধু বর্ষা মৌসুমে ধানচাষ করে তেমন লাভবান না হওয়ায় দশ বছর আগে শাহাদাত মাতুব্বর নামে এক কৃষক সবজি চাষ করে সফলতা পান। তার সাফল্য দেখে ধীরে ধীরে গ্রামের অন্যান্য কৃষক পরিবারও সবজি চাষের পথে হাঁটেন। এখন বছরজুড়ে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন তারা। এখন এই গ্রামে প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে চলে সবজি চাষ। তারা আরও জানান, তাদের উৎপাদিত সবজি উপজেলার চাহিদা পূরণ করে বরিশাল, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর কারণে এখন গ্রাম ঘুরে পাইকাররা ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে চালান করেন বড় বড় বাজারে।   সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সবুজে সবুজে ভরে উঠছে মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে সারি সারি লাউ, শিম, মরিচ, করলা, মুলা, বেগুন, কুমড়া, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শসা, গোলআলু, মিষ্টি আলুসহ বিভিন্ন শাকসবজিতে ভরে উঠেছে ক্ষেত।‌ মাঠে মাঠে এসব ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কাক ডাকা ভোরে কৃষকেরা কোদাল, নিড়ানি, বালতি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। আবার নারী শ্রমিকরা সবজি তুলছেন আর পুরুষ শ্রমিকরা প্যাকেটজাত করে গাড়িতে তুলছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে এ কর্মযজ্ঞ। সওদাগর পাড়া গ্রামের কৃষক সোলাইমান বলেন, এক সময় এই গ্রামের নারীরা কাজ করত না। তখন শুধু ধান চাষ হতো। সে সময় প্রায় ঘরেই ছিল অভাব-অনটন। এখন এই গ্রামে বছরজুড়ে সবজি চাষ করার কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও মাঠে কাজ করে। এতে অভাব ঘুচে গেছে এ গ্রামের চাষিদের। সওদাগর পাড়া গ্রামের কৃষক ছগির মিয়া বলেন, আগে এই জমিতে ধান চাষ করতাম লবণাক্ততার কারণে তেমন লাভবান না হওয়ায় এখন সবজি চাষ করছি। এ মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে সীম ও মরিচ চাষ করেছি। তাতে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বিক্রি করে পেয়েছি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সবজি চাষি টুটুল মিয়া বলেন, এই মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছি। তাতে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪ লাখ টাকার বিক্রি করেছি। সার, কীটনাশক ও বীজের দাম আগে থেকে অনেক বেশি। এতে করে আমাদের আবাদের খরচ বেড়ে গেছে। তবে বাজারদর ও ফলন ভালো হওয়ায় খরচ বাদ দিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। সওদাগর পাড়া আদর্শ কৃষি সমিতির সভাপতি মো. শাহদাত মাতুব্বর বলেন, এই গ্রাম থেকে প্রতিদিন ৮০০-১০০০ মণ সবজি বরিশাল, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর কারণে পাইকাররা ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে চালান করেন বড় বড় বাজারে। গত বছর এ গ্রাম থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকার সবজি বিক্রি হয়েছে। এ বছর বাজারদর ও ফলন ভালো হওয়ায় ৬ কোটি টাকার বেশি বিক্রি হবে। তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগ যদি আমাদের সবজিগুলো বিদেশে রপ্তানি করার সুযোগ করে দিত তাহলে আমরা আরও বেশি লাভবান হতাম। তালতলী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. রাসেল বলেন, এ বছর তালতলীতে ৮০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। সবজি চাষে প্রদর্শনী ও প্রণোদনার মাধ্যমে সহযোগিতা করা হচ্ছে। সবজি থেকে এ বছর কৃষকরা ভালো মুনাফা অর্জন করবে। ফসল উৎপাদনে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
X