মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঐতিহাসিক বেতিয়ারা শহীদ দিবস আজ
ঐতিহাসিক বেতিয়ারা শহীদ দিবস আজ শনিবার (১১ নভেম্বর)। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী বেতিয়ারা নামক স্থানে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর ৯ জন বীরযোদ্ধা পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন।  শহীদরা হলেন, নিজাম উদ্দিন আজাদ (ছাত্র নেতা), সিরাজুম মনির জাহাঙ্গীর, জহিরুল হক ভূঁইয়া (দুদু মিয়া), মোহাম্মদ সফি উল্যাহ, আওলাদ হেসেন, আবদুল কাইউম, বশিরুল ইসলাম (বশির মাস্টার), শহীদ উল্যাহ সাউদ ও কাদের মিয়া। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের এই ইতিহাসকে সমুজ্জ্বল করে রাখতে প্রতি বছর এ দিনটিকে বেতিয়ারা শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আজ দিবসটি পালনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, পতাকা উত্তোলন, শহীদবেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনাসভা ও শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। বেতিয়ারা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি রক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক জিয়উল হক জিবুসহ স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে প্রিয় মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খানসহ যৌথ গেরিলা বাহিনীর ৭৮ জন সদস্য ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার উদ্দেশে এসব গেরিলা যোদ্ধারা ভারতের বাইকোয়া বেইজ ক্যাম্প থেকে ১০ নভেম্বর রাত ৮টায় চৌদ্দগ্রাম সীমান্তবর্তী ভৈরব নগর সাব ক্যাম্পে (চৌত্তাখোলা ক্যাম্পের শাখা) পৌঁছেন। এ বাহিনীর পরিকল্পনা ছিল দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক, শ্রমিক নেতা রুহুল আমিন কায়সারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নোয়াখালীর সেনবাগ ও কাজীরহাট এলাকা নিয়ে একটি মুক্তাঞ্চল গড়ে তোলা।  ভৈরব নগর সাব ক্যাম্পের দুজন মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বিএসসি ও সামসুল আলম ওই রাতেই গেরিলা বাহিনীর ওই দলটির বাংলাদেশে প্রবেশের নকশা প্রণয়ন করেন। প্রণীত নকশা অনুযায়ী সাব ক্যাম্পের ৩৮ জন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে বেতিয়ারা চৌধুরী বাড়ির দু’পাশে অ্যাম্বুশ পাতেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক শত্রুমুক্ত কিনা পরীক্ষা করার জন্য স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের ও আবদুল মান্নানকে ওই সড়কে পঠানো হয়। সিগনালের দায়িত্বে থাকা কাদের ও মান্নান মহাসড়ক শত্রুমুক্ত বলে রাত ১২টায় মূল বাহিনীকে জানায়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে যৌথ গেরিলা বাহিনীর ৩৮ জনের এ দলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অতিক্রমের জন্য এগিয়ে আসে। এ সময় সড়কের অপর (পশ্চিম) পাশে গাছের আড়ালে অ্যাম্বুশ পেতে লুকিয়ে থাকা হানাদার বাহিনী অতর্কিতে ব্রাশ ফায়ার শুরু করে। এতে ৯ গেরিলা যোদ্ধা ঘটনাস্থলেই শহীদ হন এবং বেশ ক’জন আহত হন। এক সপ্তাহ পর স্থানীয় লোকজন ধান ক্ষেত থেকে শহীদদের গলিত লাশ উদ্ধার করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্বে একটি গর্ত খুঁড়ে মাটি চাপা দেয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াইয়ে ২৮ নভেম্বর চৌদ্দগ্রামের এ জগন্নাথ দীঘি অঞ্চল শত্রুমুক্ত হয়। পরদিন ২৯ নভেম্বর স্থানীয় নেতারা এবং মুক্তিযোদ্ধাগণ গর্ত থেকে লাশগুলো উত্তোলন করে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক মাওলানা আব্দুল আলীর (মরহুম) মাধ্যমে জানাজা দিয়ে মহাসড়কের পশ্চিম পার্শ্বে দ্বিতীয়বার দাফন করেন এবং শহীদদের গণকবরের উপর স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা উত্তোলন করে পার্শ্বেই নির্মাণ করেন স্মৃতিস্তম্ভ। মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি রক্ষা পরিষদের সভাপতি জিয়াউল হক জিবু জানান, মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হলে ৯ শহীদের গণকবর ও স্মৃতিস্তম্ভ মহাসড়কের মধ্যে পড়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ফোরলেন প্রকল্পের ঠিকাদার ২০১৫ সনের জুনে গণকবরটি মহাসড়কের পূর্ব পাশে সড়ক ও জনপথের ৪০ শতক জায়গায় স্থানান্তর করে।
১১ নভেম্বর, ২০২৩
X