কোরিয়ান উপকথা অবলম্বনে / খাঁচার শালিক
সুমনের একটা শালিক পাখি আছে। পাখিটা সে কিছুদিন আগে ফাঁদ পেতে ধরেছে। সেটাকে একটা খাঁচায় ভরে রেখেছে। পাখিটা খাঁচার ভেতর ছটফট করে। বের হতে পারে না। সুমন ওটাকে প্রতিদিন দানা দেয়, চাল দেয়, পানি দেয়। পাখি ওটা খায়। তা দেখে সুমন খুব খুশি হয়। কিন্তু পাখিটা খাঁচায় একদমই থাকতে চায় না। সুমন সেটা জানে না। একদিন স্কুল থেকে সবাই ফিরছে। ফেরার পথে পিছিয়ে পড়ল সুমন। সামনে বনের রাস্তা। সুনসান। ভয় করে সুমনের। সুমন বলল, ‘ইশ। কেন যে সবার সঙ্গে থাকলাম না।’ সুমন ভয়ে ভয়ে হাঁটছে। কে যেন আসছে। ‘কে আসছে? লোকটাকে তো আগে দেখিনি।’ লম্বা জোব্বা পরা লোকটাকে দেখে ভয় পেল সুমন। লোকটার হাতে একটা ছোট্ট খাঁচা। কিন্তু খাঁচার ভেতর কিছু নেই। সুমনের সামনে এলো লোকটা। ওকে দেখে হাসল। সুমন ভয়ে নড়তেই পারছে না। ছেলেধরা নয় তো? লোকটা বলল, ‘তোমাকে খাঁচায় ভরে নিয়ে যাব। এরপর অনেক অনেক দানাপানি দেব। মাঝে মাঝে ফলও খেতে দেব।’ বলে কী লোকটা! এত ছোট খাঁচায় তাকে ঢোকাবেইবা কী করে? সুমনের মনের কথা বুঝতে পেরে লোকটা বলল, ‘এটা জাদুর খাঁচা। এখানে যে ঢুকবে সে পাখি হয়ে যাবে। তুমি একটা শালিক পাখি হবে।’ সুমন ঠিক করল দৌড়ে পালাবে। তার আগেই খপ করে ধরে ফেলল লোকটা। তারপর খাঁচার ভেতর সুমনের মাথা ধরতেই সুমন ভেতরে ঢুকে গেল। অবাক কাণ্ড। সুমন ছিল একটা কিশোর। হয়ে গেল শালিক পাখি। এরপর লোকটা সুমনকে খাঁচায় করে হেঁটে চলল অন্য গ্রামে। পথে অনেকেই দেখল। কেউ কিছু বলল না। কেন বলবে! সুমন তো একটা পাখি হয়ে গেছে। সুমনের মা-বাবা, বন্ধু, প্রতিবেশীরা খুঁজে হয়রান। কেউ তাকে দেখেনি। কোথায় আছে কেউ জানে না। জাদুকর লোকটা সুমনকে নিয়ে গেল তার বাড়িতে। বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখল খাঁচাটা। সুমন এদিক ডানা ঝাপটায়, ওদিক ডানা ঝাপটায়। ঠোঁট বাড়িয়ে চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুতেই খাঁচা খুলতে পারে না। তার অনেক কান্না পেল। কিন্তু পাখি হওয়ার কারণে তার কান্নাও কেউ শুনল না। অনেকে দেখল, খাঁচার ভেতর একটা পাখি চিঁ চিঁ করে ডাকছে শুধু। অনেক পাখিই তো এভাবে ডাকে। বিকেল হলে লোকটা সুমনকে দানাপানি দিল। সুমনের অনেক খিদে পেয়েছিল। কী আর করা। সে ওই দানাপানি খেল। এভাবে কেটে গেল কয়েক দিন। সুমনের খুব মন খারাপ। খাঁচায় এখন সে ছটফটও করে না। কারণ ছটফট করে তো ছাড়া পাবে না। একদিন লোকটা খাঁচাসহ গেল বাজারে। সুমন চিন্তা করল, ‘লোকটা আমাকে বেচে দেবে না তো!’ লোকটা খাঁচাটাকে একটা উঁচু ঢিবির ওপর রেখে কোথায় যেন গেল। সুমন বলল, ‘কেউ যদি আমার কথা বুঝত! কত সহজেই মুক্ত হতাম।’ কিন্তু সুমন তো এখন পাখি। যতই কথা বলুক, কেউ কিছু বুঝতেই পারবে না। এমন সময় ঝপাং শব্দ। খাঁচার ওপর বসল একটা দাঁড়কাক। ‘ওরে বাবা! এত বড় কাক!’ মজার ব্যাপার হলো, সুমন কাকটার কথা বুঝতে পারছে। কাক বলল, ‘তোমাকে তাহলে জাদুর খাঁচায় বন্দি করেছে পাজি লোকটা।’ ‘ঠিক বলেছ কাক ভাই! তুমি কি আমাকে মুক্ত করতে পারবে!’ ‘তা করব। তবে একটা কথা তোমাকে শুনতে হবে।’ ‘যা বলবে, তাতেই রাজি।’ এরপর কাক সুমনের কানে কানে একটা কথা বলল। সুমন তাতে রাজি হলো। কাকটা তার লম্বা ও শক্ত ঠোঁট দিয়ে খাঁচার হুক খুলে দিল। দরজাটা টেনে ধরতেই ফুরুৎ করে বেরিয়ে এলো সুমন। খাঁচা থেকে বের হতেই সুমন আবার কিশোর হয়ে গেল। ‘তোমাকে অনেক ধন্যবাদ কাক ভাই।’ এই বলে সুমন ছুট দিল বাড়িতে, মা-বাবার কাছে। যাওয়ার আগে মনে করে জাদুর খাঁচাটা পাশের নদীতে ফেলে দিতে ভুলল না সুমন। বাড়িতে সুমনকে পেয়ে সবাই তো খুব খুশি। সুমনও সবাইকে বলল সব ঘটনা। তারপর কাকের কথামতো সুমন গেল তার পোষা সেই শালিকের কাছে, যেটাকে সে খাঁচায় আটকে রেখেছিল। খাঁচার দরজা খুলে সুমন বলল, যাও শালিক, তুমি মুক্ত। খাঁচা থেকে বের হয়েই উড়ে গেল শালিক। এরপর থেকে সুমন প্রতিদিন তাদের উঠোনে দানা ছড়িয়ে রাখে। অনেক অনেক শালিক এসে সেই দানা খেয়ে উড়ে চলে যায়। সেখানে মাঝে মাঝে একটা কাকও আসে। সুমন পাখিদের সঙ্গে খেলে। সে আর কোনো পাখিকে খাঁচায় পুরে রাখে না।
২০ এপ্রিল, ২০২৪

কথা শুনে শালিক পাখিও
গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়ানো পাখিকে চাইলেই পোষ মানানো যায় না। তাইতো শখের বসে অনেকে খাঁচায় পাখি পালন করে থাকেন। বিভিন্ন সময় পাখিকে পোষ মানানোর মতো জটিল কাজটিও করে দেখিয়েছেন অনেকে। এমনকি এ প্রাণীটিকে কথাও শিখিয়েছেন কেউ কেউ। তেমনি গাং শালিক পাখিকে পোষ মানিয়ে তাক লাগিয়েছেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের এক ওষুধ ব্যবসায়ী। আনোয়ারুল হক (৪২) নামের ওই ওষুধ ব্যবসায়ী উলিপুর পৌরসভাধীন ৭নং ওয়ার্ডের রামদাস ধনিরাম এলাকার ডা. ওয়ালিউল্লার পুত্র। শালিক পাখির পোষ মানা দেখে চোখ আটকে যায় এলাকাবাসী ও পথচারীদের। আনোয়ারুল হক পৌরসভার তেঁতুলতলা এলাকায় ওষুধ ব্যাবসার পাশাপাশি খাবার হোটেলও পরিচালনা করেন। সরেজমিনে দেখা যায়, আনোয়ারুল হকের ওষুধের দোকানঘরে শালিক পাখিটি একটি খাঁচায় রয়েছে। সেখানে বসে খুনসুটি করছে। আনোয়ারুল হক দোকান ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই পাখিটি উড়ে এসে তার হাতে ও ঘাড়ে বসল। পাখি তার ভাষায় অনেক অভিযোগ দিল আনোয়ারুলকে। আনোয়ারুল তাকে অনেক আদর করে হাতের মধ্যে করে নিয়ে বসল তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। তাদের মধ্যে ভালোবাসা দেখে হতবাক এলাকাবাসী ও পথচারীরা। আনোয়ারুল হক জানান, একদিন তার স্ত্রীকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে এমএ পরীক্ষার জন্য রংপুর কারমাইকেল কলেজে নিয়ে যান। সেখানে উক্ত বিভাগের একাডেমিক ভবন থেকে এক মাস বয়সী শালিক পাখিটি উপরের সানসেট থেকে মাটিতে পড়ার উপক্রম হয়। তা দেখে বাচ্চাটির ওপর অনেক মায়া লেগে যায় আনোয়ারুলের। সেখান থেকে বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসেন। প্রায় এক বছর ধরে খাঁচায় বন্দি রেখে বাচ্চাটিকে বিভিন্নভাবে সেবা ও চিকিৎসার মাধ্যমে বড় করে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে পোষ মানান তিনি। পাখিটিকে ভালোবেসে প্রতিদিন নিজ হাতে খাবার খাওয়ান, গোসল করিয়ে দেন। এখন শালিক পাখিটি শতভাগ পোষ মানিয়েছেন বলে জানান তিনি। পোষ মানা পাখিটির নাম দেওয়া হয়েছে মিঠু। আনোয়ারুল হক পাখিটিকে মিঠু বলে ডাক দিলেই খাঁচা থেকে বেরিয়ে এসে হাতে ও ঘাড়ের ওপরে বসে পড়ে। সে এখন অনেক কথা বলতে শিখেছে। আনোয়ারুল জানান আমি শীষ দিলে সেও শীষ দেয়। আল্লাহ কথাটি বলতে শুরু করেছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ডাক শিখেছে। তিনি আরও বলেন, এখন শালিক পাখিটির বয়স মাত্র এক বছর। যেভাবে কথা বলতে শুরু করেছে কিছুদিনের মধ্যে সকল প্রকার কথা শেখাতে পারব বলে জানান তিনি। এদিকে প্রতিদিন পোষ মানা শালিক পাখিটিকে দেখতে এলাকার অনেক লোক আসেন। এমনকি পথচারীরাও দেখতে ভিড় করেন। শালিক পাখিটি প্রতিদিন বিভিন্ন তরকারির ঝোল দিয়ে ভাত, ডিম ভাজি, লুডুলস ও চানাচুর খেয়ে থাকেন। পোষ মানা শালিক পাখিটিকে দেখতে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে আব্দুর রশিদ (৪৫), নুরুল হুদা (৪৭), নুর আলম (৪২), আব্দুল মালেক (৫৬) ও এনামুল হক (৪৩) সহ আরও অনেকে বলেন, শালিক পাখির সঙ্গে আনোয়ারুল হকের মিতালি এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার লোক দেখতে আসেন। পাখিটির নাম দেওয়া হয়েছে মিঠু। মিঠু এখন অনেক ধরনের কথা বলতে চেষ্টা করেছে। অনেক ধরনের ডাকাডাকি করে যা দেখে আমাদের অনেক ভালো লাগে। উভয় উভয়ের প্রতি এত ভালোবাসা যা প্রশংসনীয়। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রেজয়ানুল হক জানান, শালিক পাখি একটি বন্যপ্রাণী। অন্যান্য প্রাণীর মতো সাধারণ মানুষের কাছে পোষ মানে। এ ছাড়া মানুষ যে কথাগুলো বলে তাদের অনুসরণ করে দু-একটা কথা মুখস্থ করে বলতে পারে। মানুষের মত সবগুলো কথা বলতে পারে না বলে জানান তিনি।
০৬ এপ্রিল, ২০২৪

খাঁচায় বন্দি শালিক ও ময়না উদ্ধার
হবিগঞ্জের মাধবপুরে শালিক ও ময়না পাখি উদ্ধার করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন করে পাখি দুটি খাঁচায় আটকে রাখা হয়েছিলে। খবর পেয়ে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পাখি প্রেমিক সোসাইটির সদস্যরা সেসব উদ্ধার করেন। সূত্র জানায়, উপজেলায় নোয়াপাড়ার সায়হাম কটন মিলস সংলগ্ন সুপারমার্কেটে পাখিগুলো আটকে রাখা হয়েছিল। সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ পাল কয়েক সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে পাখিগুলো উদ্ধারে যান। সেখানে স্থানীয়রা তাদের বাধা দেন। পরে স্থানীয় বন অফিসের জগদীশপুর বিটের বিট কর্মকর্তা এটিএম সিদ্দিকুর রহমানকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি লোকবল নিয়ে এসে পাখিগুলোকে উদ্ধার করেন। বিট কর্মকর্তা এটিএম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিপদাপন্ন বন্যপ্রাণী কিংবা বন্যপ্রাণী অপরাধের খবর পেলেই তাৎক্ষণিক উদ্ধার অভিযান করি। পাখি প্রেমিক সোসাইটির সদস্যরা সার্বক্ষণিক আমাদেরকে তথ্য ও সহযোগিতা করে থাকেন।
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
X