গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়ানো পাখিকে চাইলেই পোষ মানানো যায় না। তাইতো শখের বসে অনেকে খাঁচায় পাখি পালন করে থাকেন। বিভিন্ন সময় পাখিকে পোষ মানানোর মতো জটিল কাজটিও করে দেখিয়েছেন অনেকে। এমনকি এ প্রাণীটিকে কথাও শিখিয়েছেন কেউ কেউ। তেমনি গাং শালিক পাখিকে পোষ মানিয়ে তাক লাগিয়েছেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের এক ওষুধ ব্যবসায়ী।
আনোয়ারুল হক (৪২) নামের ওই ওষুধ ব্যবসায়ী উলিপুর পৌরসভাধীন ৭নং ওয়ার্ডের রামদাস ধনিরাম এলাকার ডা. ওয়ালিউল্লার পুত্র। শালিক পাখির পোষ মানা দেখে চোখ আটকে যায় এলাকাবাসী ও পথচারীদের। আনোয়ারুল হক পৌরসভার তেঁতুলতলা এলাকায় ওষুধ ব্যাবসার পাশাপাশি খাবার হোটেলও পরিচালনা করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, আনোয়ারুল হকের ওষুধের দোকানঘরে শালিক পাখিটি একটি খাঁচায় রয়েছে। সেখানে বসে খুনসুটি করছে। আনোয়ারুল হক দোকান ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই পাখিটি উড়ে এসে তার হাতে ও ঘাড়ে বসল। পাখি তার ভাষায় অনেক অভিযোগ দিল আনোয়ারুলকে। আনোয়ারুল তাকে অনেক আদর করে হাতের মধ্যে করে নিয়ে বসল তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। তাদের মধ্যে ভালোবাসা দেখে হতবাক এলাকাবাসী ও পথচারীরা।
আনোয়ারুল হক জানান, একদিন তার স্ত্রীকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে এমএ পরীক্ষার জন্য রংপুর কারমাইকেল কলেজে নিয়ে যান। সেখানে উক্ত বিভাগের একাডেমিক ভবন থেকে এক মাস বয়সী শালিক পাখিটি উপরের সানসেট থেকে মাটিতে পড়ার উপক্রম হয়। তা দেখে বাচ্চাটির ওপর অনেক মায়া লেগে যায় আনোয়ারুলের। সেখান থেকে বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসেন। প্রায় এক বছর ধরে খাঁচায় বন্দি রেখে বাচ্চাটিকে বিভিন্নভাবে সেবা ও চিকিৎসার মাধ্যমে বড় করে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে পোষ মানান তিনি। পাখিটিকে ভালোবেসে প্রতিদিন নিজ হাতে খাবার খাওয়ান, গোসল করিয়ে দেন। এখন শালিক পাখিটি শতভাগ পোষ মানিয়েছেন বলে জানান তিনি।
পোষ মানা পাখিটির নাম দেওয়া হয়েছে মিঠু। আনোয়ারুল হক পাখিটিকে মিঠু বলে ডাক দিলেই খাঁচা থেকে বেরিয়ে এসে হাতে ও ঘাড়ের ওপরে বসে পড়ে। সে এখন অনেক কথা বলতে শিখেছে। আনোয়ারুল জানান আমি শীষ দিলে সেও শীষ দেয়। আল্লাহ কথাটি বলতে শুরু করেছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ডাক শিখেছে।
তিনি আরও বলেন, এখন শালিক পাখিটির বয়স মাত্র এক বছর। যেভাবে কথা বলতে শুরু করেছে কিছুদিনের মধ্যে সকল প্রকার কথা শেখাতে পারব বলে জানান তিনি।
এদিকে প্রতিদিন পোষ মানা শালিক পাখিটিকে দেখতে এলাকার অনেক লোক আসেন। এমনকি পথচারীরাও দেখতে ভিড় করেন। শালিক পাখিটি প্রতিদিন বিভিন্ন তরকারির ঝোল দিয়ে ভাত, ডিম ভাজি, লুডুলস ও চানাচুর খেয়ে থাকেন।
পোষ মানা শালিক পাখিটিকে দেখতে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে আব্দুর রশিদ (৪৫), নুরুল হুদা (৪৭), নুর আলম (৪২), আব্দুল মালেক (৫৬) ও এনামুল হক (৪৩) সহ আরও অনেকে বলেন, শালিক পাখির সঙ্গে আনোয়ারুল হকের মিতালি এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার লোক দেখতে আসেন। পাখিটির নাম দেওয়া হয়েছে মিঠু। মিঠু এখন অনেক ধরনের কথা বলতে চেষ্টা করেছে। অনেক ধরনের ডাকাডাকি করে যা দেখে আমাদের অনেক ভালো লাগে। উভয় উভয়ের প্রতি এত ভালোবাসা যা প্রশংসনীয়।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রেজয়ানুল হক জানান, শালিক পাখি একটি বন্যপ্রাণী। অন্যান্য প্রাণীর মতো সাধারণ মানুষের কাছে পোষ মানে। এ ছাড়া মানুষ যে কথাগুলো বলে তাদের অনুসরণ করে দু-একটা কথা মুখস্থ করে বলতে পারে। মানুষের মত সবগুলো কথা বলতে পারে না বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন