বিএনপির লক্ষ্য একাত্তর মুছে সাত চল্লিশে ফিরে যাওয়া : শাহরিয়ার কবির
বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন সত্য। তবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেনি। বিএনপির লক্ষ্য হচ্ছে একাত্তর মুছে সাত চল্লিশে ফিরে যাওয়া। বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ইতিহাস বিভাগের আয়োজনে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস-২০২৪ উপলক্ষে সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।  শাহরিয়ার কবির বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন বলে বঙ্গবন্ধু সরকার তাকে বীর উত্তম উপাধি দিয়েছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ করলেই যে তিনি মুক্তিযোদ্ধা থাকবেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করবেন এমন তো কোনো কথা নেই। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারে খন্দকার মোশতাকও মন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপি দাবি করে তাদের অনেকে মুক্তিযোদ্ধা। হ্যাঁ মেজর হাফিজ থেকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ চ্যালেঞ্জ করেছিলেন সংবিধানের যদি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ঢোকানো হয়, তারা ক্ষমতায় গেলে সেটি বাতিল করে দেবেন। ১৭ এপ্রিল আমরা যেমন পালন করব, তেমন ১০ এপ্রিল জাতীয় প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবেও পালন করতে হবে। এতে করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধের অপশক্তিকে যদি আমরা নির্মূল করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের আগামীর অগ্রযাত্রাকে কেউ রুখতে পারবে না। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে বঙ্গবন্ধুর পাশে সবসময় ছায়ার মতো ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। কিন্তু ইতিহাসে বঙ্গমাতাকে সেভাবে তুলে ধরা হয় না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তার যে অবদান সেটা যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে। বর্তমানে রাজনীতিতে অনেক হাইব্রিড ঢুকে পড়েছে। হাইব্রিড কেউ নেতৃত্বে আসলে ইতিহাস বিকৃত হয়।  শিক্ষার্থীদের বলব সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের যেসব ফিল্ম- তথ্যচিত্র আছে তা দেখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে যেতে হবে। মেহেরপুরে মুজিবনগরে শিক্ষার্থীদের যেতে হবে ইতিহাস জানতে। মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকার গঠনে বঙ্গবন্ধু পূর্বেই নির্দেশনা ও গাইডলাইন দিয়ে গেছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সরকার গঠনের পথ তৈরি করে গেছিলেন। এদিকে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ শীর্ষক সেমিনারে ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুর্শিদা বিনতে রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ূন কবির চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশের প্রকৃত ইতিহাস নিজে জানতে হবে এবং অন্যদের জানাতে হবে। নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে হবে। সেই সঙ্গে প্রকৃত ইতিহাসের চর্চা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর অবদান সুনিপুণভাবে তুলে ধরতে হবে।  এ ছাড়া আলোচক হিসেবে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আমাদের মধ্যে বিভিন্নভাবে উপায়ে ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা চলেছে। এখনো গুপ্ত ঘাতকদের অংশ বিশেষরা এই বিতর্ক অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ত্বেই মুক্তিযুদ্ধ হয় এবং দেশ ঘাতক মুক্ত হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মোছা. খোদেজা খাতুন।  এসময় অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রানী, শিক্ষক সমিতির নেতারা, নীল দলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
১৭ এপ্রিল, ২০২৪

সরকারি টাকায় মডেল মসজিদ নির্মাণ সংবিধান পরিপন্থি : শাহরিয়ার কবির
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, সারাদেশে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে মডেল মসজিদ নির্মাণ সংবিধানের পরিপন্থি। একমাত্র আমরাই এটি নিয়ে প্রতিবাদ করেছি। বাংলাদেশের কোনো সংগঠনের সাহস হয়নি এ প্রসঙ্গ তোলার। বুধবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি হলরুমে মহান স্বাধীনতার মাস মার্চে ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ৫৬০টি মডেল মসজিদ বানাচ্ছে সরকার, কাদের টাকা দিয়ে? আমাদের জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে এগুলো বানানো হচ্ছে। সংবিধানের ৭ এর ‘ক’ ধারায় পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে- রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে না। আপনি যদি এতগুলো মডেল মসজিদ বানান, কেন আপনি ৫৬টি মন্দির-প্যাগোডা ও গির্জা বানাবেন না। আর তাই যদি করতে হয় তাহলে সব অর্থ সেখানে আপনি ব্যয় করুন। তিনি বলেন, দুর্নীতির বাইরে কোন দেশ আছে এই উপমহাদেশে, একটি দেশের নাম বলুন? ভারত দুর্নীতির বাইরে? পাকিস্তান দুর্নীতির বাইরে? কিন্তু যেভাবে আমাদের সমাজ রাজনীতির মৌলবাদীকরণ সাম্প্রদায়িকীকরণ হচ্ছে, এটাকে প্রতিহত করতে না পারলে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ থাকবে না, পাকিস্তান হয়ে যাবে। অর্থাৎ একটি ব্যর্থ, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হয়ে যাবে। আমাদের উদ্বেগটা হচ্ছে সেই জায়গায়। তিনি আরও বলেন, আপনারা স্বাস্থ্য, পরিবেশ নিয়ে কথা বললেন। অনেক বিষয় উঠে এসেছে। কিন্তু ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ফোকাস করছে সংবিধানের মূল জায়গাটিতে। ৭২-এর সংবিধানের মূল চেতনায় আমাদের ফিরে যেতে হবে। কিন্তু এ দায়িত্ব নির্মূল কমিটির একার দায়িত্ব নয়, এর সঙ্গে যত সমমনা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, পেশাজীবী সংগঠন এবং ব্যক্তি আছে, এদের সবাইকে নিয়ে আন্দোলনটা করতে হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, যে দল সরকারে আছে সেই দলই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে দিয়েছিল। এখন এই সরকারে অনেক মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী লোক ঢুকে পড়েছে। শুধু রাজনৈতিকভাবেই নয়, প্রশাসনে, বিচার বিভাগে, পুলিশে সব জায়গায় কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা জেঁকে বসেছে। তাদের মুখোশ উন্মোচন না করে তারা এই সরকারকে প্রভাবিত করছে। এটি কিন্তু বাস্তব সত্য, যার জন্য মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা সেই দিকে দেশ এগোচ্ছে না। তিনি বলেন, এখন দল ভারী করার জন্য জামায়াত-বিএনপি-শিবির এদের নিলে দলের যে বৈশিষ্ট্য সেটি আর থাকবে না। যারা এসব দল থেকে আওয়ামী লীগে ঢোকার চেষ্টা করছে তাদের একটাই উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগের লোকদের যদি জামায়াতি আদর্শে, ভাবধারায় পরিণত করা যায়। সেই দিকে তারা এগোচ্ছে কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আওয়ামী নেতারা সেদিকে খেয়াল করছে না। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো আফজাল, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. মফিজুল ইসলাম মান্টুসহ অনেকে।
০৭ মার্চ, ২০২৪

নতুন যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম ধর্মান্ধদের পছন্দ নয় : শাহরিয়ার কবির
নতুন পাঠ্যক্রম খুবই যুগোপযোগী, কিন্তু ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের তা পছন্দ নয় বলে মন্তব্য করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। রোববার (২৮ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন তিনি। শাহরিয়ার কবির বলেন, নতুন পাঠ্যক্রম খুবই যুগোপযোগী, কিন্তু ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের তা পছন্দ নয়। পাঠ্যবইয়ের ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশে অরাজকতা তৈরি করে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, মৌলবাদীদের দাবি মেনে কোনো রচনা বা বিষয় প্রত্যাহার বা পরিবর্তন করা যাবে না। এ সময় অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, নতুন শিক্ষা কারিকুলাম ও মূল্যায়ন পদ্ধতি যুগোপযোগী হলেও অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলে ধর্ম ব্যবসায়ীরা মাঠে নেমেছে। মৌলবাদীরা ভ্রান্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ভ্রান্ত তথ্য ছড়াচ্ছে। নতুন পাঠ্যক্রম নিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ীরা মাঠে নেমেছে। নতুন ইস্যু তৈরির জন্য পাঠ্যক্রমকে আক্রমণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, পৃষ্ঠপোষকরা যা চেয়েছে, আসিফ মাহতাব তাই করেছে। আসিফ মাহতাব কীভাবে চাকরি পেল কর্তৃপক্ষের সেটি তদন্ত করা উচিত। তার আচরণ অশিক্ষকসুলভ। তাকে শাস্তির আওতায় না আনলে এ ধরনের প্রবণতা বাড়তে পারে।  
২৮ জানুয়ারি, ২০২৪
X