চামড়া শিল্প বাঁচাতে কোনো ছাড় নয়
পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগে গুরুত্বারোপ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে হলে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ শিল্পের মান বাঁচাতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। চামড়া শিল্প পরিবেশবান্ধব না হলে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। এ ছাড়া চামড়া শিল্প লাভজনক করতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনগার বা সিইটিপি নতুন করে তৈরি করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘ন্যাশনাল হাই-লেভেল ডায়লগ ফর গ্রিনিং দ্য ট্যানারি অ্যান্ড লেদার সেক্টর’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এতে আরও বক্তব্য দেন ইইউর রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির পরিচালক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, বিসিকের চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ড. ফাহমিদা খানম, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি ও যৌথ নদী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আইনুন নিশাত এবং ইইউর মিনিস্টার কাউন্সেলর ও হেড অব ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ড. মিশাল ক্রেজা প্রমুখ।
১৭ মে, ২০২৪

‘চামড়াশিল্পকে বাঁচাতে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ বাড়াতে হবে’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, চামড়াশিল্পকে বাঁচাতে হলে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। চামড়াশিল্পের মান রক্ষায় কোন ছাড় দেয়া হবে না। চামড়াশিল্প পরিবেশবান্ধব না হলে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। এ ছাড়াও চামড়াশিল্প লাভজনক করতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার বা সিইটিপি নতুন করে তৈরি করারও আহ্বান জানান তিনি। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘ন্যাশনাল হাই-লেভেল ডায়লগ ফর গ্রিনিং দ্য ট্যানারি অ্যান্ড লেদার সেক্টর’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরিবেশমন্ত্রী বলেন, নদী মারা গেলে এ ক্ষতি কোনও কিছু দিয়েই পূরণ হবার নয়। পানিতে বিওডি ৩০ এর মধ্যে থাকতে হয়, ধলেশ্বরীর পানিতে আছে চার গুণের বেশি। হেভি মেটাল ২ গুণের বেশি। এতে মানুষের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব ক্ষতির দায় কে নেবে? ব্লেম গেম করা যাবে না। সমস্যার অংশ না হয়ে সমাধান করতে হবে। যাত্রা নতুনভাবে করতে হবে। ভুল থেকে শিখতে হবে। বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই রোল মডেল, চামড়াশিল্পেও রোল মডেল হতে চাই। অর্থনীতিকে পরিবেশবান্ধব করা আমাদের অগ্রাধিকার। সরকার প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে। বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, বিসিকের চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ড ফাহমিদা খানম, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর এবং যৌথ নদী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আইনুন নিশাত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিনিস্টার কাউন্সেলর ও হেড অব ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ড. মিশাল ক্রেজা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এই সংলাপে ট্যানারি ও চামড়া খাতের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার, পরিবেশবিদ এবং সরকারি প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং খাতটিকে আরও পরিবেশবান্ধব করার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও সুপারিশ পেশ করেন।
১৬ মে, ২০২৪

‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেছেন, বিজ্ঞান শিক্ষা পুরো পৃথিবীর জন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। আমাদের শিক্ষার্থীদের স্মার্ট শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সকল প্রকার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। অন্যথায় টিকে থাকা অসম্ভব। মঙ্গলবার (১৪ মে) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্টিফিক সোসাইটি (সিইউএসএস) কর্তৃক আয়োজিত নবীন বরণ ও প্রবীণ বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মিলনায়তনে দুপুর ১২টার দিকে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু তাহের আরও বলেন, জ্ঞান সৃষ্টির লক্ষ্যে একজন শিক্ষার্থীর স্বাধীনতার প্রয়োজন আছে। কিন্তু রাত ২টায় একজন শিক্ষার্থী বাইরে ঘুরে বেড়ায় এটা কেমন স্বাধীনতা। একজন শিক্ষার্থীর বিভিন্ন স্কিল অর্জন করা প্রয়োজন, বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা করা প্রয়োজন। সবাইকে আহ্বান করব বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা করার জন্য।  তিনি আরও বলেন, দেশ আমাদের কী দিয়েছে সেটা বড় কথা নয় বরং দেশকে আমরা কী দিচ্ছি সেটাই ভাববার বিষয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যায়ের উপ উপাচার্য (একাডেমিক) বেনু কুমার দে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ জ্ঞান চর্চা, সৃষ্টি ও বিতরণ করা। তোমরা সৃজনশীল নাগরিক তোমরাই সৃজনশীলতা তৈরি করবে। আমরা ক্ষুদে পাইলট প্ল্যান তৈরি করব। তোমরা আমাদের ইনোভেশন হাবে তোমাদের সৃজনশীলতা জমা দিবে আমরা তা দিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করব। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্টিফিক সোসাইটির সভাপতি রওনাক রওশন ফিহা’র সভাপতিত্বে এবং এস এম মুশফিক হাসান ও ঐশ্বর্য চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. অহিদুল আলম, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ ও সংগঠনটির উপদেষ্টা প্রফেসর ড. লাইলা খালেদা এবং প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল-ফুরকানসহ সংগঠনের অ্যালামনাই সদস্যরা।
১৪ মে, ২০২৪

চামড়া কেনায় ঋণ দিতে সুপারিশ করবে শিল্প মন্ত্রণালয়
আসন্ন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে চামড়া ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার পথ খুলতে শিল্প মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠিয়ে সুপারিশ করবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি বলেন, চামড়া শিল্প খাতে সংরক্ষণ সুবিধা বাড়াতে হবে, যাতে চামড়া নষ্ট না হয়। তাই চামড়া ব্যবসায়ী বা পাইকাররা যাতে এ সময় পুঁজির সমস্যায় না পড়েন ও সহজ শর্তে ঋণ পান, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যাতে আগামী ৭ থেকে ৮ মাস যেন তারা ব্যবসা করতে পারে। গতকাল রোববার রাজধানীর শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ‘চামড়া শিল্প খাতের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্স’-এর সপ্তম সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় অন্যান্য বছরের মতো এবারও আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির চামড়ার মূল্য নির্ধারণ এবং চামড়া সঠিকভাবে ছাড়ানো, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের নিমিত্ত বিজ্ঞাপন বা টিভিসি আকারে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা, স্থানীয়ভাবে চামড়া সংগ্রহ এবং পর্যাপ্ত লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণের জন্য কৌশলগত স্থানে অস্থায়ী সংরক্ষণাগার নির্মাণ, কোরবানির পশুর চামড়ার পাচার রোধ, চামড়া সংগ্রহ ও পরিবহন কার্যক্রমে কোনো প্রকার চাঁদাবাজি, বিশৃঙ্খলা বা বাধার সৃষ্টি না হয় এবং চামড়া নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াসহ গণমাধ্যমে যেন কোনো গুজব না ছড়ায়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ছাড়া সিইটিপির পরিশোধন ক্ষমতার মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্যে কোরবানির পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে ঢাকার বাইরে থেকে যাতে পশুর চামড়া ঢাকার ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি চামড়া শিল্পনগরীতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে রেশনিং পদ্ধতিতে ইফ্লুয়েন্ট ডিসচার্জ করা, সারা দেশে পর্যাপ্ত লবণ সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ এতিমখানাগুলোতে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করতে বিসিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
১৩ মে, ২০২৪

হিটস্ট্রোকে মরছে গবাদিপশু-মুরগি, খামারিদের হাহাকার
সারাদেশের তীব্র তাপপ্রবাহে মানুষের জনজীবন একেবারেই নাকাল। এতে মানুষের জীবনযাত্রা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। হিটস্ট্রোকে মানুষ যেমন মারা যাচ্ছে তেমনি গত কয়েক দিনে ডেইরি ও পোল্ট্রি ফার্মে মারা গেছে অনেক গরু ও মুরগি। এদিকে টিনের চালে কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করেও ঠান্ডা করা যাচ্ছে না গরমের দাপট। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার করে গোসল করিয়ে ও পানি ছিটিয়েও বাঁচানো যাচ্ছে না ফার্মের প্রাণীগুলোকে। মারা যাচ্ছে অসংখ্য মুরগি। ফলে ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করছেন খামারিরা। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার ফালগুনকরা আপন রিসার্চ পোল্ট্রি ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের চালের ওপর কৃত্রিম ঝরনা দিয়ে পানি ছিটানো হচ্ছে। যাতে করে মোরগগুলো ফার্মের ভেতরে তীব্র গরম থেকে রক্ষা পায়। এ ছাড়া ফার্মে থাকা গরুকে আঁশজাতীয় খাবার কমিয়ে বেশি দেওয়া হচ্ছে তরলজাতীয় খাবার। পোল্ট্রি মালিকরা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে লোকসান গুনতে হবে লাখ লাখ টাকা।  অতিরিক্ত গরমের সময়ে খাবার সরবরাহ কমিয়ে পর্যাপ্ত পানি ও স্যালাইন খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন চৌদ্দগ্রাম প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নাহিদ হাসান। এদিকে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, গত ১০ দিনে প্রায় ১০ লাখ মুরগি হিটস্ট্রোকে মারা গেছে। যার ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ১ লাখ মুরগি। যার ৮০ শতাংশ ব্রয়লার, ১০-১৫ শতাংশ লেয়ার ও সোনালী। বাকি ৫ শতাংশ রয়েছে দেশি মুরগি। তবে সংস্থাটি চলমান পরিস্থিতিতে দেশের মুরগি ও ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, ভয়ানক এই পরিস্থিতিতে ডিম ও মুরগি উৎপাদন কমেছে ৪ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ‘‌কোরবানি সামনে রেখে গবাদিপশু মারা যাওয়ার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা খামারিদের জন্য খুব কঠিন। আধুনিক খামারিরা আগেভাগে প্রস্তুতি নিলেও প্রান্তিক খামারিদের অধিকাংশ জানেন না, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী করতে হবে।’
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

বলছি শোনো / শিক্ষকতা এক ধরনের শিল্প
বোর্ড, চক, চেয়ার-টেবিল, বই-খাতা—এ সবকিছুর বাইরে গিয়েও যে একজন শিক্ষার্থীকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষকতা কীভাবে ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখতে পারে, সেটা নিয়েই কথা বলেছেন লিটারেসি কনসালট্যান্ট ও শিক্ষক ব্রায়ান জনসন। অনুলিখন: সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি অনেক বছর শিক্ষকতার সঙ্গে থাকার পর অবশেষে ‘লিটারেসি কনসালট্যান্ট’ হিসেবে নিউইয়র্কের এক স্থানীয় ছোট্ট বিদ্যালয়ে পাঠানো হলো আমাকে। প্রথমদিন স্কুলে গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম আমি। যতটা না প্রযুক্তির অভাব দেখে অবাক হলাম, তারচেয়ে বেশি অবাক হলাম মানুষের অভাব দেখে। নিজের মনেই বিড়বিড় করলাম, শিক্ষার্থীরা সব কোথায়? আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্নটা মাথায় এলো আমার যে, স্কুলের শিক্ষকরাই বা কোথায়? একটু পরই পেছন থেকে ডাক এলো। আমার পরিচয় জেনে বলল, চলুন, আপনাকে প্রিন্সিপালের কাছে নিয়ে যাই। প্রিন্সিপালের কাছে? প্রিন্সিপালের অফিসে না? অনেক গলি-ঘুপচি পেরিয়ে প্রিন্সিপালের সামনে যাওয়ার পর বুঝলাম, শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়ের কোনো ফোন কল যেন ধরতে না হয় সেজন্য প্রিন্সিপাল নিজেই স্কুল থেকে দূরে ঘাঁটি গেড়েছেন। কয়েক সপ্তাহ ছিলাম আমি ওখানে। আর এ অল্প সময়েই বুঝে গিয়েছিলাম যে ,এর চেয়ে নীরসভাবে পড়ানো সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীরা শুধু যে পড়াশোনার দিক দিয়েই পিছিয়ে যাচ্ছিল তা নয়, পেছাচ্ছিল সামাজিক দিক দিয়েও। আর এটা শুধু ওই একটা স্কুলে নয়, আমাদের প্রায় প্রতিটি স্কুলেরই বাস্তব চিত্র। দেশে আর দেশের বাইরে কর্মসূত্রে বহু শিক্ষক ও নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। আর সেখান থেকে আমি এই পুরো শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে, শিক্ষার্থীদের সামাজিক-মানসিক উন্নয়নে তিনটি পদ্ধতির ব্যাপারে চিন্তা করেছি। যার প্রথমটি হলো, শিক্ষার্থীদের প্রতি ইতিবাচক থাকা। তাদের নিজেদের নিজস্বতাকে গ্রহণ করতে সাহায্য করা। ছোটবেলায় আমার প্রয়োজন ছিল এ ইতিবাচক মনোভাবের। আর সেটা আমি পেয়েছিলাম আমার থার্ড গ্রেডে, মিসেস ফিলকারের কাছ থেকে। আমার মতো তিনিও কৃষ্ণাঙ্গ ছিলেন। একবার মিসেস ফিলকার আমাদের সবাইকে নিজেদের ছবি আঁকতে বললেন। আমি আঁকলাম। উনি বললেন, ছবিটা তো সম্পূর্ণ হয়নি। আমি নিজের দুটি কান, দুটি চোখ, একটি নাক, একটি মুখ—সবকিছু হাত দিয়ে গুনলাম আবার। নাহ! সব তো ঠিকই দিয়েছি। মিসেস ফিলকার বললেন, কিন্তু তুমি তো তোমার গায়ের রং দাওনি। ছোট্ট আমি অনেক কান্না করেছিলাম সেদিন। এর আগ পর্যন্ত আমি শুধু আমার চারপাশে সাদা চামড়ার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করেছি, নিজের সত্তাটাকে আগলেই ধরিনি কখনো। বরং হীনমন্যতায় ভুগেছি। মিসেস ফিলকার আমাকে আমার কাছে নতুন করে তুলে ধরেছিলেন। আর এই যে ইতিবাচক মনোভাবটা, এটা দরকার আছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যেসব শিক্ষার্থীকে নিজের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সত্তাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে শেখানো হয়েছে, তাদের শিক্ষাগত উন্নয়নটাও ভালো হয়েছে। কত ভালো একটা ব্যাপার হবে তাই না; যদি প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী নিজেদের যে অংশগুলো নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে, সেগুলো ঝেড়ে ফেলে দিতে পারত? দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো শিক্ষার্থীদের জন্য, তাদের মতো করে ক্লাসরুম কালচার বা সংস্কৃতি গড়ে তোলা। একটা শ্রেণিকক্ষ কীভাবে পরিচালিত হবে, সেটা শিক্ষার্থীদেরই ঠিক করা উচিত। এমন একটা সময় এসেছিল যে, আমি গণিতের ক্লাস নিচ্ছি, অথচ শিক্ষার্থীরা প্রচণ্ড দৌড়াদৌড়ি করছে। যেন আমি গণিত নয়, জিম ক্লাসের শিক্ষক। ওদের আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা কী চাও। ক্লাসে ঠিক কী করতে চাও। ওরা কথা বলার জন্য, নিজের মতো গণিত নিয়ে কাটানোর জন্য বাড়তি সময় চাইল, আর সঙ্গে নাশতাও চেয়ে নিল। নাশতা আমি দিতে পারিনি ওদের, তবে সময় দিতে পেরেছি। খুব দ্রুতই আমার গণিতের ক্লাসটা ঠিক গণিত ক্লাসরুমেই পরিণত হলো! তৃতীয় ও সর্বশেষ পদ্ধতিটি হলো, শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণিকক্ষে ‘ফিজিক্যাল এনভারমেন্ট’ বা আক্ষরিক একটা আনন্দের জগৎ বানানো। সেখানে থাকতে পারে শিক্ষার্থীদের ছবি, তাদের পরিচিত মানুষ বা সংস্কৃতির ছবি। স্কুল মানেই বাঁধাধরা ক্লাস আর টেবিল চেয়ার নয়। আমি আমার ক্লাসটাকে আমার পছন্দের মতো করে বানিয়ে নিয়েছিলাম। যার মূল থিম ছিল—নাচ। সেখানে গান বাজত, শিক্ষার্থীরা গান শুনতে চাইতে পারত। ওরা নাচত। কারও কাজ শেষ হওয়া মানেই সে নাচতে চলে যেতে পারছে। যেন অ্যাসাইনমেন্টটাই আনন্দ করার একটা টিকিট। আমার মতে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হওয়া উচিত শিক্ষার্থীকে সামাজিক ও একাডেমিক—দুটি ব্যাপারেই গড়ে তোলা। আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষকতা শিল্পের এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ধরণ; যেটার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে, বিশেষ করে প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব রাখা সম্ভব।
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

শিল্প উৎপাদনের প্রবৃদ্ধিতে বড় বিপর্যয়
দেশে চলমান ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে অব্যাহতভাবে কমছে দেশের আমদানি ব্যয়। এতে আশঙ্কাজনকভাবে কমছে শিল্পের উৎপাদন। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও কমে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশের সামগ্রিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নেমেছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি কমেছে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি, কমেছে প্রায় তিনগুণ। আর শিল্প খাতের উৎপাদনের প্রবৃদ্ধিতে দেখা দিয়েছে বড় বিপর্যয়। দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক। শিল্প উৎপাদন খাতের এমন বিপর্যয় এর আগে কখনো দেখা যায়নি। মূলত উৎপাদন খাতের বিপর্যয়ের কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এমন বেহাল দশা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বিবিএসের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসেবে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শিল্প খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি কমেছে উৎপাদন খাতে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে গিয়ে এই খাতে বড় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় প্রান্তিকে উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ। অথচ তিন মাস আগেও প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই সময়ে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ১৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থবছরের শুরুতে ডলার সংকটের কারণে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানি সংকট, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নসহ বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কা সামলাতে হয়েছে দেশের শিল্প খাতকে। এ কারণে শিল্পের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। পাশাপাশি বৈদেশিক এবং ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমে গেছে। এসব কারণেই জিডিপিতে খাতটির প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমার মূল কারণ হচ্ছে ডলার সংকটের কারণে আমাদের আমদানি ব্যয় কমাতে হয়েছে। এর ফলে একদিকে উৎপাদন কমে গেছে, অন্যদিকে রপ্তানি আদেশও কমে গেছে। অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, একদিকে আমদানি ব্যয় কমছে, অন্যদিকে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার মানেই হচ্ছে বিনিয়োগ কমে যাওয়া। আর বিনিয়োগ কমে গেলে উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান কমে যাবে। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, কয়েক বছর ধরে দেশে বিনিয়োগ আসার পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়েছে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ অনেক কমেছে। বিনিয়োগ কমায় শিল্পের উৎপাদনও কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে শিল্প উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধিতে। প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণত উৎপাদনের প্রধান উপকরণগুলোর মধ্যে অন্যতম ভূমিকায় থাকে গ্যাস-বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল এবং বিনিয়োগ। এই খাতগুলোর প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরে এই খাতগুলোর প্রবৃদ্ধি তলানিতে নামায় উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে শিল্প উৎপাদন সবচেয়ে বেশি ব্যাহত হয়েছে। এজন্য দায়ী মূলত জ্বালানি খাতের নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধি। বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শিল্প খাতের উৎপাদনের পাশাপাশি তলানিতে রয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের প্রবৃদ্ধি। যদিও প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ, যা তার প্রান্তিকে ছিল ঋণাত্মক ৪৬ শতাংশ। প্রান্তিকের হিসেবে উন্নতি হলেও অর্থবছরের হিসেবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে জ্বালানি খাতের প্রবৃদ্ধি। বিবিএসের হিসেবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হয়েছিল ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। সেখানে চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের তুলনা অনেক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
২৬ এপ্রিল, ২০২৪

এভিয়েশন শিল্পে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য
বাংলাদেশের এভিয়েশন শিল্পের কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষিত কর্মী তৈরি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নীতকরণে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশকে এভিয়েশন হাবে রূপান্তরের জন্য সহযোগীর ভূমিকায় থাকতে চায় দেশটি।  বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের সঙ্গে স্বাক্ষাত করে এই আগ্রহের কথা জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক। বুধবার (২৪ এপ্রিল) মন্ত্রীর বাসভবনে এই স্বাক্ষাত অনুষ্ঠান হয়।  সারাহ কুক বলেন, বাংলাদেশের এভিয়েশন শিল্পের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘদিনের অংশীদারিত্ব রয়েছে। যুক্তরাজ্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নসহ এভিয়েশন শিল্পের নানা খাতে এর আগে একত্রে কাজ করেছে। এভিয়েশন শিল্পের কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষিত কর্মী তৈরি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা অধিকতর উন্নতকরণসহ আরও সম্ভাব্য নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিস্তৃত পরিসরে সহযোগিতা করতেও আগ্রহী আমরা।  জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে সফলভাবে এভিয়েশন হাবে রূপান্তরের জন্য বন্ধু রাষ্ট্র যুক্তরাজ্যের সহযোগিতার আগ্রহকে আমরা স্বাগত জানাই। এভিশন শিল্পের উন্নয়নে আমাদের দুই দেশের একত্রে কাজ করাটা হবে আনন্দের। এভিয়েশন শিল্পে কোন কোন ক্ষেত্রে দুই দেশের একত্রে কাজ করার সুযোগ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ফারুক খান আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে একটি অন্যতম প্রধান এভিয়েশন হাবে রূপান্তরের জন্য সরকার কাজ করছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণসহ দেশের সব বিমানবন্দরে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আরও অধিকতর উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।  মন্ত্রী জানান, সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক হাবে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ চলছে। এই বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ শেষ হলে বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ, অর্থনীতি এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গেম চেঞ্জারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে।
২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সিনেমা থেকে আয় বাড়াতে সৌদির নতুন উদ্যোগ
ইসলাম ধর্মের কট্টর অনুসারী সৌদি আরব সিনেমা শিল্প সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। দেশটির সরকারের সাম্প্রতিক নীতির পরিবর্তন এ ইঙ্গিত দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার সিনেমা নিয়ে নতুন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে হঠাৎ রাজস্ব আয় কমবে বলে মনে হলেও সিনেমা শিল্পকে উৎসাহিত করবে।  এর ফলে কমবে টিকিটের দাম। আরও মানুষ সিনেমা দেখতে হলমুখী হবে। নতুন নতুন সিনেমাও বাজারে আসবে। বাড়বে থিয়েটার। শেষমেশ সৌদি সরকার সিনেমাকে বড় শিল্পে রূপ দিতে সমর্থ হবে। সৌদি গ্যাজেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি সরকার সিনেমা হল পরিচালনার লাইসেন্স নবায়ন ফি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে সিনেমা টিকিটের দাম প্রত্যাশিতভাবে ব্যাপকহারে কমবে। সৌদি আরবের সংস্কৃতিমন্ত্রী প্রিন্স বদর বিন আবদুল্লাহ ফিল্ম কমিশনের পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি প্রস্তাবটি ইতিমধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন।  নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থায়ী, অস্থায়ী ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যের সিনেমার অনুমোদন ফি কমানো হবে। এগুলো তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে। প্রত্যেক ক্যাটাগরিতেই বড় আকারে ফি কমানো হয়েছে। এখন থেকে শহরগুলোর স্থায়ী ‘এ’ ক্যাটাগরির সিনেমা হলের ফি ২৫ হাজার সৌদি রিয়াল দিতে হবে। আগে ছিল ২ লাখ ১০ হাজার সৌদি রিয়াল। তেমনি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ১ লাখ ২৬ হাজার থেকে কমিয়ে ১৫ হাজার সৌদি রিয়াল করা হয়েছে। আর ‘সি’ ক্যাটাগরিতে নতুন ফি ৫ হাজার রিয়াল। আগে ছিল ৮৪ হাজার রিয়াল। অস্থায়ী সিনেমা হলের ক্ষেত্রে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ১ লাখ ৫ হাজার থেকে কমিয়ে ১৫ হাজার, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ৬৩ হাজার থেকে কমিয়ে ১০ হাজার এবং ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ফি ৪২ হাজার থেকে কমিয়ে ৫ হাজার রিয়াল করা হয়েছে।  এ ছাড়া চলচ্চিত্র প্রদর্শন, স্ক্রিন পরিচালনাসহ অন্যান্য কমিশনও কমানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সৌদি আরবের চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ফিল্ম কমিশন।  কমিশনের কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে— সিনেমা খাতের অবকাঠামো উন্নত করা, বিনিয়োগের প্রচার করা এবং স্থানীয় মানুষদের অভিনয় শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট করা। যাতে সিনেমা জগতে সৌদির দক্ষ কলাকৌশলী গড়ে উঠে। সংশ্লিষ্টরা সৌদি গ্যাজেটকে জানান, সৌদি জনগণের কাছে সিনেমা সহজলভ্য করতে বৃহত্তর প্রচেষ্টা চলছে। এটি এরই অংশ। তারা মনে করছেন, ফি কমানোর সিদ্ধান্ত চলচ্চিত্র খাতের সমৃদ্ধি আরও উৎসাহিত করবে। এ সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করে যে, ফিল্ম কমিশন সৌদি আরবে বক্স অফিস বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিচ্ছে। পাশাপাশি এ সেক্টরে কোম্পানিগুলোর অর্থনৈতিক অবদান এবং চলচ্চিত্রে সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল বৈচিত্র্যকে সমর্থন করে। চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য দেশটির সরকারের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য পুরোদমে মাঠে কাজ করছে।  আরও বলা হচ্ছে, সিনেমা হল বৃদ্ধিসহ সিনেমা কেন্দ্রীক অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি হবে। এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তুলবে। পাশাপাশি তা সিনেমা সেক্টরে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে।  সে সঙ্গে জনসাধারণের জন্য সিনেমা দেখার সুযোগ বাড়বে। এর মাধ্যমে এই অঞ্চলের চলচ্চিত্র শিল্পে একটি নেতৃস্থানীয় কেন্দ্র হিসেবে সৌদি আরবের অবস্থানকে সুসংহত করবে। এটিই সৌদি আরব সুকৌশলে চাচ্ছে।
২৩ এপ্রিল, ২০২৪

তথ্যপ্রযুক্তিকে শিল্প করে তুলতে হবে
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অন্যতম বড় অর্জন হলো গার্মেন্টস খাতকে একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্প হিসেবে গড়ে তোলা। রেমিট্যান্সের পর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে এখন এ পোশাক শিল্প। ওষুধ শিল্প, কৃষি খাতসহ অনেকেই অর্থনীতিতে ছোট-বড় অবদান রাখছে। কিন্তু আমাদের চোখ এখন আরেকটু ওপরের দিকে তুলতে হবে। আমাদের লক্ষ্য এখন ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতি গড়ে তোলা। বাংলাদেশকে ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির একটি দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে গেলে পোশাক শিল্পের মতো আরেকটি বড় খাতকে দাঁড় করানোর কোনো বিকল্প নেই। আর এ জায়গায় এসে আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা আছে এদিক থেকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের; বিশেষ করে সফটওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট সেবা খাতের। অনেকে এ আশাবাদ শুনে একটু ভ্রু কুঁচকাতে পারেন। বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট সেবা খাত তো এখনো দেশের চাহিদা মেটানোর মতোই হয়ে ওঠেনি। তাহলে এ খাত কী করে রপ্তানি অর্থনীতিতে অবদান রাখবে? অবশ্যই সেটা সম্ভব। কারণ এ খাতে বাংলাদেশের একটি অসীম সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশ এখন তারুণ্য সমৃদ্ধ একটা দেশ। এ দেশের সিংহভাগ মানুষ তরুণ। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা এখন। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে বিশ্বজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তির বাজার। বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশে শ্রমমূল্য প্রথম বিশ্বের চেয়ে অনেক কম। ফলে এ খাতে আমরা যদি আমাদের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারি, তাহলে এটি হতে পারে অপার সম্ভাবনাময় একটি খাত। এজন্য প্রথমেই আমাদের দরকার তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ। এরই মধ্যে সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়ে শহর থেকে শুরু করে একেবারে গ্রামাঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ তরুণদের গড়ে তোলা শুরু করেছে। যার ফলও পেতে শুরু করেছি আমরা। মার্কেট প্লেসে তথ্যপ্রযুক্তির অংশগুলোতে বাংলাদেশি তরুণদের অংশগ্রহণ ঈর্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গত বছরের শুরুর দিকে একবার বলছিলেন ফ্রিল্যান্সিং খাত থেকে বাংলাদেশ এখন বছরে ১০০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। এ খাতে সাড়ে ছয় লাখের বেশি ফ্রিল্যান্সার কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের এ জায়গাটাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সরকার প্রতি বছর কয়েক হাজার তরুণকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তারা হাইটেক পার্কসহ নানা সুযোগ-সুবিধা গড়ে তুলছে। কিন্তু এখানে শুধু সরকারের দিকে চেয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমি মনে করি এ জায়গাটায় বেসিসের (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস) মতো ট্রেড বডির অনেক কিছু করার আছে। বেসিস নিজেই তরুণ জনশক্তি ও নতুন তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। তাদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এ ছাড়া সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারের দুটি ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিসিপ ও অ্যাসেট নামে দুটি প্রকল্প আসছে। এ দুটি প্রকল্পই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করবে। বেসিসের সুযোগ আছে এখানে সরকারের সঙ্গী হিসেবে কাজ করার। দক্ষ জনবল ও সঠিক কাঠামো গড়ে তুলতে পারলে সফটওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট সেবা খাত খুব দ্রুত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। আর তারপরই আমাদের লক্ষ্য হবে বিশ্বের বাজারে যত বেশি সম্ভব আমাদের এ শিল্পকে পরিচিত করে তোলা এবং নিজেদের একটা বাজার তৈরি করা। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন অবধি যে কথা, তাতে ২০২৪ সালের পর তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আর কর অব্যাহতি সুযোগ থাকবে না। কিন্তু এটা খুব আত্মঘাতী একটা ব্যাপার হতে পারে। এ খাত থেকে করের এই ছাড় উঠে গেলে, যে বিপুল সম্ভাবনা আছে, তা আলোর মুখ দেখা সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে আমরা পোশাক বা ওষুধ শিল্পের কথা বলতে পারি। এসব খাতে সরকারের কাছ থেকে ৩০-৪০ বছর ধরে নীতিগত সুবিধা পেয়েছেন উদ্যোক্তারা। তারপর এসে তারা নিজেদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছেন। একটা খাতকে শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে গেলে এ বিনিয়োগটা করতেই হবে। আমরা যে স্বল্পমূল্যে সফটওয়্যার ও বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য বিশ্ববাজারে দেওয়ার আশা করছি, তার মূলে কিন্তু আছে করের রেয়াত। এ ছাড়টা না থাকলে বিশ্ববাজারে আমাদের টিকে থাকা মুশকিল হবে। তাতে এ খাতে বৈশ্বিক উদ্যোক্তাদেরও টেনে আনা কষ্টসাধ্য হবে। এখনো বিশ্বের অনেক দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে করের অব্যাহতি আছে। আমাদের কর ছাড় উঠে গেলে বিশ্ববাজারে আমাদের অবস্থান ওইসব দেশের কাছে হাতছাড়া না হয়ে যায় আবার! ২০৪১ সালে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হতে চাই। আমি মনে করি, সেজন্য তথ্যপ্রযুক্তিকে শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। আর তা করতে গেলে ২০৪১ না হোক, অন্তত ২০৩১ সাল অবধি কর অব্যাহতি দেওয়া দরকার। বেসিসের সদস্য হিসেবে আমাদেরই কাজ এটি সরকারের কাছ থেকে বের করে নিয়ে আসা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন। এ বিষয়ে তার পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট সুস্পষ্ট। এখন আমাদের দিক থেকে দরকার শুধু ঠিক সময়ে তার কাছে ঠিক জিনিসটা উপস্থাপন করে বের করে আনা। আর সেটি হলেই আমরা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে পারব বিলিয়ন ডলার অর্থনীতির পথে। লেখক: নির্বাহী পরিচালক, নগদ লিমিটেড এবং তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা
২৩ এপ্রিল, ২০২৪
X