নিয়াজ মোর্শেদ এলিট
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫১ এএম
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৭ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

তথ্যপ্রযুক্তিকে শিল্প করে তুলতে হবে

নিয়াজ মোর্শেদ এলিট, নির্বাহী পরিচালক, নগদ লিমিটেড এবং তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা। ছবি : সংগৃহীত
নিয়াজ মোর্শেদ এলিট, নির্বাহী পরিচালক, নগদ লিমিটেড এবং তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা। ছবি : সংগৃহীত

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অন্যতম বড় অর্জন হলো গার্মেন্টস খাতকে একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্প হিসেবে গড়ে তোলা। রেমিট্যান্সের পর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে এখন এ পোশাক শিল্প। ওষুধ শিল্প, কৃষি খাতসহ অনেকেই অর্থনীতিতে ছোট-বড় অবদান রাখছে। কিন্তু আমাদের চোখ এখন আরেকটু ওপরের দিকে তুলতে হবে। আমাদের লক্ষ্য এখন ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতি গড়ে তোলা।

বাংলাদেশকে ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির একটি দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে গেলে পোশাক শিল্পের মতো আরেকটি বড় খাতকে দাঁড় করানোর কোনো বিকল্প নেই। আর এ জায়গায় এসে আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা আছে এদিক থেকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের; বিশেষ করে সফটওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট সেবা খাতের।

অনেকে এ আশাবাদ শুনে একটু ভ্রু কুঁচকাতে পারেন। বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট সেবা খাত তো এখনো দেশের চাহিদা মেটানোর মতোই হয়ে ওঠেনি। তাহলে এ খাত কী করে রপ্তানি অর্থনীতিতে অবদান রাখবে?

অবশ্যই সেটা সম্ভব। কারণ এ খাতে বাংলাদেশের একটি অসীম সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশ এখন তারুণ্য সমৃদ্ধ একটা দেশ। এ দেশের সিংহভাগ মানুষ তরুণ। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা এখন। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে বিশ্বজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তির বাজার। বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশে শ্রমমূল্য প্রথম বিশ্বের চেয়ে অনেক কম। ফলে এ খাতে আমরা যদি আমাদের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারি, তাহলে এটি হতে পারে অপার সম্ভাবনাময় একটি খাত।

এজন্য প্রথমেই আমাদের দরকার তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ। এরই মধ্যে সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়ে শহর থেকে শুরু করে একেবারে গ্রামাঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ তরুণদের গড়ে তোলা শুরু করেছে। যার ফলও পেতে শুরু করেছি আমরা। মার্কেট প্লেসে তথ্যপ্রযুক্তির অংশগুলোতে বাংলাদেশি তরুণদের অংশগ্রহণ ঈর্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গত বছরের শুরুর দিকে একবার বলছিলেন ফ্রিল্যান্সিং খাত থেকে বাংলাদেশ এখন বছরে ১০০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। এ খাতে সাড়ে ছয় লাখের বেশি ফ্রিল্যান্সার কাজ করে যাচ্ছেন।

আমাদের এ জায়গাটাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সরকার প্রতি বছর কয়েক হাজার তরুণকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তারা হাইটেক পার্কসহ নানা সুযোগ-সুবিধা গড়ে তুলছে। কিন্তু এখানে শুধু সরকারের দিকে চেয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমি মনে করি এ জায়গাটায় বেসিসের (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস) মতো ট্রেড বডির অনেক কিছু করার আছে।

বেসিস নিজেই তরুণ জনশক্তি ও নতুন তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। তাদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এ ছাড়া সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারের দুটি ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিসিপ ও অ্যাসেট নামে দুটি প্রকল্প আসছে। এ দুটি প্রকল্পই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করবে। বেসিসের সুযোগ আছে এখানে সরকারের সঙ্গী হিসেবে কাজ করার।

দক্ষ জনবল ও সঠিক কাঠামো গড়ে তুলতে পারলে সফটওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট সেবা খাত খুব দ্রুত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। আর তারপরই আমাদের লক্ষ্য হবে বিশ্বের বাজারে যত বেশি সম্ভব আমাদের এ শিল্পকে পরিচিত করে তোলা এবং নিজেদের একটা বাজার তৈরি করা। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এখন অবধি যে কথা, তাতে ২০২৪ সালের পর তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আর কর অব্যাহতি সুযোগ থাকবে না। কিন্তু এটা খুব আত্মঘাতী একটা ব্যাপার হতে পারে। এ খাত থেকে করের এই ছাড় উঠে গেলে, যে বিপুল সম্ভাবনা আছে, তা আলোর মুখ দেখা সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে আমরা পোশাক বা ওষুধ শিল্পের কথা বলতে পারি। এসব খাতে সরকারের কাছ থেকে ৩০-৪০ বছর ধরে নীতিগত সুবিধা পেয়েছেন উদ্যোক্তারা। তারপর এসে তারা নিজেদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছেন। একটা খাতকে শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে গেলে এ বিনিয়োগটা করতেই হবে।

আমরা যে স্বল্পমূল্যে সফটওয়্যার ও বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য বিশ্ববাজারে দেওয়ার আশা করছি, তার মূলে কিন্তু আছে করের রেয়াত। এ ছাড়টা না থাকলে বিশ্ববাজারে আমাদের টিকে থাকা মুশকিল হবে। তাতে এ খাতে বৈশ্বিক উদ্যোক্তাদেরও টেনে আনা কষ্টসাধ্য হবে। এখনো বিশ্বের অনেক দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে করের অব্যাহতি আছে। আমাদের কর ছাড় উঠে গেলে বিশ্ববাজারে আমাদের অবস্থান ওইসব দেশের কাছে হাতছাড়া না হয়ে যায় আবার!

২০৪১ সালে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হতে চাই। আমি মনে করি, সেজন্য তথ্যপ্রযুক্তিকে শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। আর তা করতে গেলে ২০৪১ না হোক, অন্তত ২০৩১ সাল অবধি কর অব্যাহতি দেওয়া দরকার। বেসিসের সদস্য হিসেবে আমাদেরই কাজ এটি সরকারের কাছ থেকে বের করে নিয়ে আসা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন। এ বিষয়ে তার পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট সুস্পষ্ট। এখন আমাদের দিক থেকে দরকার শুধু ঠিক সময়ে তার কাছে ঠিক জিনিসটা উপস্থাপন করে বের করে আনা। আর সেটি হলেই আমরা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে পারব বিলিয়ন ডলার অর্থনীতির পথে।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, নগদ লিমিটেড এবং তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ২৬

মায়ামিতে বিশ্বজয়ী মেসির আরেক সতীর্থ!

কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত

ট্রাকের ধাক্কায় ২ নির্মাণশ্রমিক নিহত

ব্রাজিলে ভারী বৃষ্টিপাতে নিহত ৩৯

বনানীতে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

দুর্ঘটনার ২১ ঘণ্টা পার হলেও শেষ হয়নি উদ্ধার অভিযান

বায়ুদূষণে শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার খবর কী

স্টার্ক দেখালেন কেন তিনি সবচেয়ে দামি?

গুদামের চাবি নিয়ে লাপাত্তা খাদ্য কর্মকর্তা

১০

যুক্তরাষ্ট্রের ভণ্ডামির মুখোশ উন্মোচন হয়ে গেছে : ইরান

১১

দুপুরের মধ্যে ঝড়ের আভাস, ৭ অঞ্চলে সতর্কসংকেত

১২

ঢাকাসহ যে ৫ বিভাগে শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস

১৩

হাতের টানে ওঠে যাচ্ছে রাস্তার পিচ

১৪

দিনটি কেমন যাবে আপনার, জেনে নিন রাশিফলে

১৫

ব্রিটিশ অস্ত্রে সরাসরি রাশিয়ায় হামলার অনুমতি দিল যুক্তরাজ্য

১৬

ধর্ষণ মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার

১৭

জবি হলে আগুন, আতঙ্কে জ্ঞান হারালেন ছাত্রী

১৮

রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদী বাংলাদেশ-গাম্বিয়া

১৯

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২০
*/ ?>
X