গরমে সওয়াব অর্জনের সুযোগ
মুমিনের জীবনে প্রতিটি মুহূর্ত ও অবস্থাই অর্জনের নানাবিধ সুযোগ নিয়ে হাজির হয়। মুমিনের জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি নেই। তীব্র গরমে সবাই যখন হাঁসফাঁস করছে, সে পরিস্থিতি কাজে লাগিয়েও মুমিন বান্দা অর্জন করতে পারেন পরকালীন সওয়াব। অফিস, দোকান কিংবা বাসা যেখানেই হোক, বাইরে থেকে কেউ এলেই তাকে এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করানোর মাধ্যমে অফুরন্ত সওয়াব লাভ করা যেতে পারে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, সাদ ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, (একদিন) আমি (নবীজিকে) বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন সদকা উত্তম? তিনি বলেন, পানি পান করানো। (নাসায়ি, হাদিস : ৩৬৬৫)। নবীজির এ সুন্নতটা আরবদের মধ্যে বেশি প্রচলিত, সেখানে কোনো দোকানপাট অথবা অফিস-আদালতে গেলেই এক বোতল ঠান্ডা পানি হাতে তুলে দেয়। অনেককে আবার তীব্র গরমের সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে পথচারীদের মধ্যে ঠান্ডা পানি বিতরণ করতে দেখা যায়। আর কেউ পানি চাইলে তা দেওয়ার সামর্থ্য থাকলে কোনোভাবেই নিষেধ না করা। নবীজি (সা.) কেউ পানি চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে বারণ করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আয়েশা (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এমন কী জিনিস আছে, যা সংগ্রহে বাধা দেওয়া হালাল নয়? তিনি বলেন, পানি, লবণ ও আগুন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই পানি সম্পর্কে তো আমরা জানি, কিন্তু লবণ ও আগুনের ব্যাপারে কেন বাধা দেওয়া যাবে না? তিনি বলেন, হে হুমায়রা! যে ব্যক্তি আগুন দান করল, সে যেন ওই আগুন দিয়ে রান্না করা যাবতীয় খাদ্যই দান করল। যে ব্যক্তি লবণ দান করল, ওই লবণে খাদ্য যতটা সুস্বাদু হলো তা সবই যেন সে দান করল। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করাল, যেখানে তা সহজলভ্য, সে যেন একটি গোলামকে দাসত্বমুক্ত করল এবং যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করাল, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করল। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৭৪)
তীব্র গরমে অনেক সময় অনেক মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময় অনেক বয়োবৃদ্ধরা তাদের জরুরি কাজ সেরে নেওয়ার জন্য বাইরে যেতে পারেন না, তখন তাদের সাহায্য করার মাধ্যমেও সদকার সওয়াব পাওয়া যেতে পারে। আবু জার (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎকাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথ থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবা করা; অনেক সময় দেখা যায়, অতিরিক্ত গরমে অনেক মানুষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন তাদের সেবা করে, তাদের নিরাপদে বাসা বা হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যেতে পারে। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমান তার কোনো (অসুস্থ) মুসলিম ভাইকে দেখতে গেলে সে (যতক্ষণ সেখানে থাকে ততক্ষণ) যেন জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৭)।
মানুষের পাপাচারই মানুষের ওপর বিপদাপদ ডেকে আনে, তাই প্রতিকূল পরিস্থিতিকে অনুকূল বানাতে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগবাগিচা দেবেন আর দেবেন নদীনালা।’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ১০-১২)। গরমে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও অস্থির হয়ে পড়ে। মানুষের উচিত আশপাশে থাকা পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, পানির পিপাসা এটাকে মুমূর্ষু করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ হতে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করাল), এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। (বোখারি, হাদিস : ৩৩২১)।
২৬ এপ্রিল, ২০২৪