ইসলামের আলো / ভালো কাজের নিয়তেও মেলে সওয়াব
মানুষ কখনো কখনো ভালো নিয়তের কারণে আমল না করেও সওয়াব পেয়ে থাকে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের আশা করল, অতঃপর তা করতে পারল না, তবুও তার জন্য সওয়াব লেখা হবে।’ (বোখারি : ৬৪৯১)। আপনি নিয়ত করলেন—আমি অমুককে কিছু টাকা সদকা দেব, আজ রাতের শেষাংশে তাহাজ্জুদ পড়ব কিংবা আজ এশার নামাজের পর দুই রাকাত সালাতুল হাজত বা নফল পড়ব। অথবা নিয়ত করলেন, আমি সদকায়ে জারিয়া করব, গরিব অসহায়দের বস্ত্র বিতরণ করব ইত্যাদি ইত্যাদি যত সওয়াবের কাজ আছে। আপনি জানেন, আপনার এই নেক কাজের নিয়ত করার নিমিত্তে আপনার আমলনামায় একটি করে নেকি লেখা হয়। নেক কাজটি এখনো করেননি, করবেন বলে ভেবেছেন—আপনার আমলনামায় উঠে গেল নেকি। এটা আমাদের কথা নয়, হাদিসের কথা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, আমার বান্দা যখন কোনো ভালো কাজের নিয়ত করে অথচ এখনো তা করেনি, তখন আমি তার জন্য একটি সওয়াব লিখি; আর যদি তা কাজে পরিণত করে তবে দশ থেকে সাতশগুণ পর্যন্ত সওয়াব লিখি। পক্ষান্তরে কেউ যদি গুনাহের কাজের ইচ্ছা করে, তার আমলনামায় কি পাপ লেখা হবে, যেভাবে ভালো কাজের নিয়ত করায় নেকি লেখা হয়? না, লেখা হবে না। কেউ যদি নিয়ত করল যে, সে অমুক পাপ কাজ করবে, কিংবা নিকৃষ্ট কোনো পাপের ইচ্ছাও করে তা আমলনামায় লেখা হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ওই গুনাহের কাজটা না করে। আরেক হাদিসে আছে, যদি কেউ মন্দ কাজের নিয়ত করে অথচ এখনো তা কাজে পরিণত করেনি তবে এর জন্য কিছুই লিখি না। আর তা কাজে পরিণত করলে একটি মাত্র পাপ লিখি। (মুসলিম : ২৩৩) এমনকি যদি এমন হয়, কোনো ব্যক্তি তাহাজ্জুদের নিয়ত করে ঘুমাল। কিন্তু গভীর ঘুমে চলে গেল তাহাজ্জুদের সময়। সে ব্যক্তি তাহাজ্জুদ না পড়েও তাহাজ্জুদ পড়ার সওয়াব পাবে। হাদিসে আছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শয়নকালে রাতের বেলায় তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার নিয়ত করে শুয়েছে, কিন্তু অতিরিক্ত ঘুমের চাপে ভোর হয়ে গেছে—সে তার নিয়ত অনুযায়ী সওয়াব পাবে। তার ঘুমই আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াব হিসেবে গণ্য হবে।’ (নাসায়ি : ৩/২৫৮)। আরেকটি হাদিসে তাবুক যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত সাহাবিদের উদ্দেশ্য করে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই মদিনায় এমন কিছু মানুষ রয়েছে, তাবুক পর্যন্ত প্রতিটি পথে-প্রান্তরে; প্রতিটি টিলা-টক্করে যারা তোমাদের সঙ্গেই ছিল। তারাও তোমাদের মতো জিহাদের সওয়াব লাভ করবে। কারণ পূর্ণ নিয়ত থাকা সত্ত্বেও অসুস্থতা বা অন্য কোনো ওজর তাদের এ অভিযানে অংশগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ (মুসলিম : ১৯১১)।  
১০ মে, ২০২৪

গরমে সওয়াব অর্জনের সুযোগ
মুমিনের জীবনে প্রতিটি মুহূর্ত ও অবস্থাই অর্জনের নানাবিধ সুযোগ নিয়ে হাজির হয়। মুমিনের জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি নেই। তীব্র গরমে সবাই যখন হাঁসফাঁস করছে, সে পরিস্থিতি কাজে লাগিয়েও মুমিন বান্দা অর্জন করতে পারেন পরকালীন সওয়াব। অফিস, দোকান কিংবা বাসা যেখানেই হোক, বাইরে থেকে কেউ এলেই তাকে এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করানোর মাধ্যমে অফুরন্ত সওয়াব লাভ করা যেতে পারে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, সাদ ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, (একদিন) আমি (নবীজিকে) বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন সদকা উত্তম? তিনি বলেন, পানি পান করানো। (নাসায়ি, হাদিস : ৩৬৬৫)। নবীজির এ সুন্নতটা আরবদের মধ্যে বেশি প্রচলিত, সেখানে কোনো দোকানপাট অথবা অফিস-আদালতে গেলেই এক বোতল ঠান্ডা পানি হাতে তুলে দেয়। অনেককে আবার তীব্র গরমের সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে পথচারীদের মধ্যে ঠান্ডা পানি বিতরণ করতে দেখা যায়। আর কেউ পানি চাইলে তা দেওয়ার সামর্থ্য থাকলে কোনোভাবেই নিষেধ না করা। নবীজি (সা.) কেউ পানি চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে বারণ করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আয়েশা (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এমন কী জিনিস আছে, যা সংগ্রহে বাধা দেওয়া হালাল নয়? তিনি বলেন, পানি, লবণ ও আগুন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই পানি সম্পর্কে তো আমরা জানি, কিন্তু লবণ ও আগুনের ব্যাপারে কেন বাধা দেওয়া যাবে না? তিনি বলেন, হে হুমায়রা! যে ব্যক্তি আগুন দান করল, সে যেন ওই আগুন দিয়ে রান্না করা যাবতীয় খাদ্যই দান করল। যে ব্যক্তি লবণ দান করল, ওই লবণে খাদ্য যতটা সুস্বাদু হলো তা সবই যেন সে দান করল। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করাল, যেখানে তা সহজলভ্য, সে যেন একটি গোলামকে দাসত্বমুক্ত করল এবং যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করাল, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করল। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৭৪) তীব্র গরমে অনেক সময় অনেক মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময় অনেক বয়োবৃদ্ধরা তাদের জরুরি কাজ সেরে নেওয়ার জন্য বাইরে যেতে পারেন না, তখন তাদের সাহায্য করার মাধ্যমেও সদকার সওয়াব পাওয়া যেতে পারে। আবু জার (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎকাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথ থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবা করা; অনেক সময় দেখা যায়, অতিরিক্ত গরমে অনেক মানুষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন তাদের সেবা করে, তাদের নিরাপদে বাসা বা হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যেতে পারে। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমান তার কোনো (অসুস্থ) মুসলিম ভাইকে দেখতে গেলে সে (যতক্ষণ সেখানে থাকে ততক্ষণ) যেন জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৭)। মানুষের পাপাচারই মানুষের ওপর বিপদাপদ ডেকে আনে, তাই প্রতিকূল পরিস্থিতিকে অনুকূল বানাতে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগবাগিচা দেবেন আর দেবেন নদীনালা।’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ১০-১২)। গরমে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও অস্থির হয়ে পড়ে। মানুষের উচিত আশপাশে থাকা পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, পানির পিপাসা এটাকে মুমূর্ষু করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ হতে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করাল), এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। (বোখারি, হাদিস : ৩৩২১)।  
২৬ এপ্রিল, ২০২৪

রমজানে যেসব কাজে বেশি সওয়াব
আসেছে পবিত্র মাহে রমজান মাস। রমজান মাস অত্যন্ত বরকতপূর্ণ একটি মাস। সারা বছরের সবচেয়ে উত্তম মাস হলো এটি। এই মাসে মহান আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ অনুকম্পা ও নিয়ামত রয়েছে। তাই বছরজুড়েই রমজান মাস আগমনের প্রহর গুনেন প্রতিটি মুমিন-মুসলমান। রমজান মাসে অধিক পরিমাণ আমলের মাধ্যমে বিপুল সওয়াব অর্জন ও নেকি লাভের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। হাদিস শরিফে আছে রমজান মাসে মহান আল্লাহ তা'আলা প্রতিটি নফল কাজের সওয়াব ৭০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন।  রমজানে যেসব কাজে বেশি সওয়াব  পবিত্র কোরআন শরিফ অবতীর্ণ হওয়ার এই মাসে মহান আল্লাহ প্রতিটি আমলের জন্য বাড়তি সওয়াব দান করেন। তাই এই মাসে অধিক পরিমাণ আমলের মাধ্যমে বিপুল সওয়াব অর্জনের সুযোগ রয়েছে। কালবেলার পাঠকদের জন্য থাকছে রমজান মাসে এমন কিছু আমলের কথা যেসব আমলের মাধ্যমে বিপুল সওয়াব অর্জন ও নেকি লাভের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।  মাহে রমজানে দান-খয়রাতের ফজিলত  পবিত্র মাহে রমজানে অন্যান্য মাসের চেয়ে এই মাসে ইবাদতের সওয়াব যেমন বেশি, তেমনি মহা পবিত্র এই মাসে দান-খয়রাতের সওয়াব ও অনেক বেশি। রমজানের অন্যতম আমল হিসেবে এই কারণে ধরা হয় দান-সদকাকে। কোনো কোনো হাদিসে আছে এ মাসে দান করলে অন্য মাসের চেয়ে ৭০ অথবা তারও অধিক গুণ বেশি সওয়াব আল্লাহ দিবেন। দান-সদকা সওয়াব অর্জন ছাড়ও রিজিকে বরকত নিয়ে আসে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, নামাজ কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে, যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে আল্লাহ তাদের কাজের প্রতিফল পরিপূর্ণ দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরও বেশি দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী।’ সুরা ফাতির : ২৯-৩০ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দানকারী আল্লাহর নিকটতম, বেহেশতের নিকটতম এবং মানুষের নিকটতম হয়ে থাকে। আর তারা দূরে থাকে জাহান্নাম থেকে। অপরদিকে কৃপণ ব্যক্তি দূরে অবস্থান করে আল্লাহ থেকে, বেহেশত থেকে এবং মানুষের কাছ থেকে। আর তারা কাছাকাছি থাকে জাহান্নামের। অবশ্যই একজন জ্ঞানহীন দাতা একজন কৃপণ এবাদতকারীর তুলনায় আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। (সহিহ্ বোখারি : ১৮১৩) তাই আমাদের সবার উচিত গরিব-দুঃখী, অভাবী, আত্মীয়স্বজন আপনজনদের বেশি দান-সদকা করা। বরকতময় মাহে রমজানে আল্লাহ সবাইকে বেশি বেশি করে দান সদকার তৌফিক দান করুন। অন্যকে ইফতার করানোর সওয়াব   রহমতের মাস রমজান একই সঙ্গে নাজাতের ও ক্ষমার মাস। এ মাসে রোজাদারকে ইফতার করানো একটি বিশেষ আমল। রোজাদারকে ইফতার করানোকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সওয়াব বৃদ্ধি এবং গুনাহ মাফের আমল হিসেবে ঘোষণা করেছেন। হাদিসে পাকে এসেছে- হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে, ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে পাবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াবে কোনো কম করা হবে না। সাহাবায়ে কেরাম এ কথা শুনে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, পানিমিশ্রিত এক কাপ দুধ বা একটি শুকনো খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দিয়েও যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও আল্লাহ তাকে সেই পরিমাণ সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে, আল্লাহতাআলা তাকে আমার হাউসে কাউসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না। এই হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, অন্যকে ইফতার করানো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। কারণ ইফতার করানোর কারণে সারা দিন উপোস থেকে রোজা রাখার মাধ্যমে রোজাদার যে সওয়াব পাবে। শুধু ইফতার করানোর কারণে ওই ব্যক্তির রোজাদারের সমান সওয়াব পাবে। এর চেয়ে ফজিলতপূর্ণ আমল ও সওয়াবের কাজ আর কী হতে পারে।  রমজানে মিলবে যেভাবে পূর্ণরাত ইবাদতের সওয়াব   প্রতিটি মুসলমানের জন্যই মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। আল্লাহভীরু মুমিনদের প্রিয় অভ্যাস রাত জেগে ইবাদত করা যা রমজানে আরও বেড়ে যায়। তবে কর্মব্যস্ত লোকরা দিনের বেলায় পরিশ্রম করার কারণে রাত জাগতে পারেন না। বিশেষত আমাদের দেশের কর্মজীবী সাধারণ মানুষ রমজানে রোজা পালন করার পর সারা দিনের কর্মব্যস্ততায় রাত জাগতে পারে না ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও। তাদের জন্য এমন আমলের আলোচনা করা হলো যা করলে সারা রাত না জেগেও আমল করার পূর্ণ সওয়াব পাবেন। নবীজি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রাতে ১০০টি আয়াত তেলাওয়াত করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে সারা রাত ইবাদতের সমান সওয়াব দান করবেন। (সহিহুল জামে)।  কুরআনুল কারিমের যে কোনো সুরা বা স্থান থেকে ১০০টি আয়াত তেলাওয়াত করলেই সারা রাত জেগে আমল করার সওয়াব পাওয়া যাবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের এ সহজ আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।  রমজানে বেশি সওয়াবের আশায় যেসব সহজ আমল করা যেতে পারে  পবিত্র মাহে রমজানে প্রত্যেক মুসলমানের ইচ্ছে থাকে হাজার বছরের চেয়ে উত্তম এই মাসে আমল করে সওয়াব অর্জন করা। মহান আল্লাহ রমজানে প্রতিটি আমলের জন্য বাড়তি সওয়াব দান করেন। তাই এই মাসে অধিক পরিমাণ আমলের মাধ্যমে বিপুল সওয়াব অর্জনের সুযোগ রয়েছে। রমজানে সহজেই করা যায়, এমন কিছু আমল হলো-তাকওয়া অর্জন করা। তাকওয়া আল্লাহর ভয়ে বান্দাকে যাবতীয় পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং তার আদেশ মানতে বাধ্য করে। ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা অনেক সওয়াবের কাজ। যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করার পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করবে, অতঃপর দুই রাকাআত নামাজ পড়বে, সে পরিপূর্ণ হজ ও ওমরাহ করার সওয়াব পাবে। এ ছাড়াও কোরআন তেলওয়াত, মুখস্থ বা হিফজ করাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল। রমজান মাসে বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায় এবং গুনাহ মাফ হয়।
০২ মার্চ, ২০২৪

অল্প আমল, অফুরন্ত সওয়াব
আল্লাহর প্রিয় বান্দারা রাতের ইবাদতে বিশেষ মনোনিবেশ করে থাকেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় নবী (সা.)-কে উদ্দেশে বলেন, ‘রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবে প্রশংসিত স্থান—মাকামে মাহমুদে।’ (সুরা : বনি ইসরাইল : ৭৯)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই ইবাদতের জন্য রাতে ওঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল।’ (সুরা মুজজাম্মিল : ৬)। যুগ যুগ ধরে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদেরও প্রিয় অভ্যাস রাতের ইবাদত। আবু উমামাহ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা অবশ্যই রাতে ইবাদত করবে। কারণ এটা তোমাদের আগের নেককারদের অভ্যাস এবং এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় আর পাপের কাফফারাস্বরূপ। (তিরমিজি : ৩৬১৯)। আল্লাহতায়ালা বান্দার প্রতি অধিক দয়াবান। তাই তিনি নবী করিম (সা.)-এর মাধ্যমে আমাদের এমন কিছু আমল বলে দিয়েছেন, যার মাধ্যমে আমরা সহজেই রাতের ইবাদতের সওয়াব অর্জন করতে পারি। ফজর ও এশা জামাতে পড়া: এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করলে সারা রাত জেগে নফল ইবাদতের সওয়াব লাভ হয়। হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে তার জন্য অর্ধরাত (নফল) নামাজ আদায়ের সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে তার জন্য সারা রাত (নফল) নামাজ আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে। (তিরমিজি : ২২১) রাতে ১০০ আয়াত পাঠ: পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে দিবসের শুরু ও শেষ করার অফুরন্ত পুরস্কার রয়েছে। রাতে ঘুমের আগে অন্তত ১০০ আয়াত তেলাওয়াতের চেষ্টা করা। এতে রাত জেগে ইবাদতের সওয়াব মেলে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতের বেলায় ১০০ আয়াত পড়ে, তার আমলনামায় পুরো রাত ইবাদত করার সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে। (ইবনে খুজাইমাহ : ১১৪২) উত্তম চরিত্র: সুন্দর স্বভাব ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হলে রাতে ইবাদতকারীর মর্যাদা অর্জিত হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি শরিয়তের অনুযায়ী আমলকারী হয়, পাশাপাশি সুন্দর স্বভাব ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয়, এ কারণে সে ওই ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করে, যে রাত জেগে নফল নামাজে অনেক বেশি পরিমাণ কোরআন পাঠ করে এবং অনেক বেশি রোজা রাখে। (মুসনাদে আহমাদ : ৬৬৪৮)। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মুমিন তার সুন্দর চরিত্র দ্বারা রোজাদার ও রাতভর ইবাদতকারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে। (আবু দাউদ : ৪৭৯৮) বিধবা নারীকে সাহায্য করা: সমাজের অসহায় বিধবা নারী ও অভাবীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড় করতে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো অথবা রাতে নফল নামাজে দণ্ডায়মান ও দিনে নফল রোজা পালনকারীর মতো। (বোখারি : ৫৩৫৩) জুমার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া: জুমা মুসলমানদের বিশেষ পবিত্র দিন। এ দিনের রয়েছে অনেক ফজিলত। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জুমার জন্য বিশেষ আন্তরিকতার সঙ্গে প্রস্তুতি গ্রহণ। হজরত আউস ইবনে আউস আস-সাকাফি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুমার দিন উত্তমরূপে গোসল করবে এবং সকাল-সকাল জুমা আদায়ের জন্য যাবে, জুমার জন্য বাহনে চড়ে নয় বরং হেঁটে মসজিদে যাবে এবং কোনোরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের কাছে বসে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনবে, সে (মসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি কদমের বিনিময়ে এক বছর রোজা পালন ও রাতভর সালাত আদায়ের সমান সওয়াব পাবে। (আবু দাউদ : ৩৪৫) কিয়ামুল লাইলের নিয়তে ঘুমানো: রাতে ঘুমের সময় তাহাজ্জুদে ওঠার জন্য পূর্ণ নিয়ত ও প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও যদি ঘুম না ভাঙে তবু কেবল নিয়তের কারণে আল্লাহ দান করবেন রাতভর ইবাদতের সওয়াব। হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার নিয়তে বিছানায় আসে, কিন্তু তার চক্ষুদ্বয় নিদ্রা প্রবল হয়ে যাওয়ায় ভোর পর্যন্ত সে ঘুমিয়ে থাকে, তার জন্য তার নিয়ত অনুসারে সওয়াব লেখা হবে আর আল্লাহর পক্ষ থেকে তার নিদ্রা তার জন্য সদকাস্বরূপ হয়ে যাবে। (নাসায়ি : ১৭৮৭)। আল্লাহতায়ালা সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন।
২৬ জানুয়ারি, ২০২৪

শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ালে মিলবে সওয়াব
দেশজুড়ে পৌষের শেষে মাঘ মাসের ‘বাঘ পালানো’ শীত হাড়ে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। হাড় কাঁপানো শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত দেশের সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে হিমেল বাতাসের সঙ্গে চলছে কুয়াশার দাপট। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। অনেক জায়গায় দেখা মিলছে না সূর্যের। ঘন কুয়াশায় দুর্ঘটনারও শিকার হয়েছেন কাজের সন্ধানে ছুটে চলা মানুষ। শীতের তীব্রতায় কাঁপছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে লোকজন শুকনো খড়, কাঠ, ঘাস ও শুকনো ময়লা-আবর্জনার স্তূপে আগুন জ্বালিয়ে শরীরে তাপ পোহাচ্ছেন। শীতের প্রবাহ টের পাচ্ছে রাজধানীবাসীও। শহরাঞ্চলে উষ্ণ কাপড়ের সমাহার থাকলেও কনকনে শীতে শীতবস্ত্রহীন অসহায় লোকজন, ফুটপাতে রাতযাপন করা লোকজন এবং পথশিশুরা তরতর করে কাঁপতে শুরু করে। খেটেখাওয়া মানুষের কাছে শীত নিবারণের জন্য ভালোমানের পোশাক বা কম্বল এসবের দাম সাধ্যের বাইরে। এমন হাড়কাঁপানো শীতে অসহায়, দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের দুঃখ-দুর্দশার এসব চিত্রই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে। অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানহীন এসব দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের নিজস্ব সক্ষমতা দিয়ে হিমশীতল ও হাড় কাঁপানো শীতের সীমাহীন কষ্ট লাঘব করা সম্ভব হয়ে ওঠে না অনেক সময়। এমন সময় মানবিক দায়বোধ থেকে চলে আসে কিছু দায়িত্বের প্রসঙ্গ। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ধনীদের কর্তব্য। এটা যেমন মানবিক বিষয়, তেমনি ধর্মীয় বিষয়। ইসলামে শীতকালেও রয়েছে হুকুকুল্লাহ ও হুকুকুল ইবাদ তথা বিশেষ কিছু ইবাদত এবং সামাজিক-মানবিক দায়িত্ব। এসব বিষয় পালন করলে মিলবে অফুরন্ত সওয়াব। পৃথিবীতে দুই শ্রেণির মানুষের বসবাস—ধনী ও দরিদ্র। কোরআনের দাবি হলো, প্রথম শ্রেণির মানুষরা দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষকে সাধ্যানুযায়ী খেদমত করবে, প্রয়োজন পূরণ করবে। দরিদ্রদের জীবন আনন্দ ও সুখময় করতে সাহায্য করবে। নিজেরা আল্লাহর পক্ষ থেকে যে অগণিত নেয়ামতে ধন্য হয়েছে, তার কিছু অংশ অভাবী ও নিঃস্বদের দান করবে। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহর ভালোবাসায় মিসকিন, এতিম ও বন্দিদের খাবার দান করে।’ (সুরা দাহর : ৮)। মানুষের অন্যতম মৌলিক প্রয়োজন হলো পরিধেয় কাপড়। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে কাপড় অপরিহার্য বিষয়। প্রয়োজনের প্রশ্নে শীত মৌসুমে পরিধেয় বস্ত্র ও বাসস্থানের সংস্কার উপযোগী বস্ত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শীতে কাতর লোকরা কাপড়ের অভাব অনুভব করে সর্বাধিক। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন। খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ (আবু দাউদ: ১৬৮২)। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত—রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে যতক্ষণ ওই কাপড়ের টুকরো তার কাছে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত দানকারী আল্লাহর হেফাজতে থাকবে।’ (তিরমিজি: ২৪৮৪)। প্রকৃতিতে ঋতুর পালাবদল মহান আল্লাহর হুকুমেই ঘটে। তিনি এতে রেখেছেন মানুষের জন্য প্রভূত কল্যাণ। শীতের এ প্রবাহও আল্লাহর হুকুমে হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জাহান্নাম আল্লাহর কাছে অভিযোগ করে বলে, আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলেছে। তখন আল্লাহ তাকে দুবার শ্বাস ফেলার অবকাশ দেন। শীতে একটি, গরমে একটি। এর ফলেই তোমরা প্রচণ্ড গরম ও তীব্র ঠান্ডা অনুভব করো।’ (বুখারি : ৪৩৭; মুসলিম : ৬১৭)। তাই শীতের পরিবেশেও একজন মুমিনের কিছু নির্দেশনা রয়েছে। পবিত্র কোরআনেও শীতের আলোচনা এসেছে। সুরা কুরাইশে বলা হয়েছে, ‘কুরাইশ সম্প্রদায় যেহেতু অভ্যস্ত; যেহেতু তারা শীত ও গ্রীষ্মকালের ভ্রমণে অভ্যস্ত।’ (সুরা কুরাইশ : ১-২)। মক্কার কুরাইশ সম্প্রদায় শীতকালে ইয়েমেনের আদন বন্দরে ও গ্রীষ্মকালে ফিলিস্তিনের গাজায় ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী বাণিজ্যনগরীতে ভ্রমণ করত। শীতে আরবের লোকেরা যেভাবে পার্থিব ব্যবসার উন্নতি করত, তেমনি আমরা চাইলেই পরকালীন ব্যবসায় অর্থাৎ পুণ্য-সম্পদে সমৃদ্ধ করতে পারি। বসন্তকালে যেভাবে গাছগাছালি ও প্রকৃতি পত্রপল্লবে সমৃদ্ধ থাকে, পশুপাখি যত ইচ্ছা খেয়ে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে, ঠিক তেমনি মুমিন শীতকালের দীর্ঘ রাতকে ইবাদতে কাটিয়ে এবং দিনকে রোজায় কাটিয়ে লাভ করতে পারে প্রভূত আত্মিক উন্নতি। শীতকালকে ‘ইবাদতের বসন্তকাল’ বলা হয়। আবু সাইদ খুদরি (রা.) নবীজি (সা.) থেকে বর্ণনা করে বলেন, ‘শীতকাল মুমিনের বসন্ত।’ (মুসনাদে আহমদ : ১১৬৫৬)। অন্য হাদিসে এসেছে, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘ইবাদতকারীদের জন্য শীতকাল হলো গনিমতস্বরূপ।’ (হিলইয়াতুল আউলিয়া : ১/৫১)। অর্থাৎ শীত এমন গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ), যা কোনো রক্তপাত বা চেষ্টা মেহনত কিংবা কষ্ট ছাড়াই অর্জন হয়েছে। সবাই কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এ গনিমত স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাভ করে। কোনো প্রচেষ্টা বা পরিশ্রম ছাড়া তা ভোগ করে। সওয়াব বা পুণ্য অর্জনের বিচারে শীতকালকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দিতে হয়। শীতের রাতে আমলের বিশেষ মর্যাদার কথা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি শীতকালে গনিমতের কথা জানাব না? তা হচ্ছে—শীতকালে দিনে রোজা রাখা এবং রাতে নামাজ আদায় করা।’ (তিরমিজি : ৭৯৫)। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘শীতকালকে স্বাগতম। কেননা তা বরকত বয়ে আনে। শীতের রাত দীর্ঘ হয়, যা কিয়ামুল লাইলের (রাতের নামাজ) সহায়ক এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা সহজ।’ (শুয়াবুল ইমান, বাইহাকি : ৩৯৪০) শীতকাল আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের ইবাদতের এক বিশেষ মৌসুম। সালফে সালেহিন তথা পূর্ববর্তী সৎকর্মশীল ব্যক্তিরা শীতকালকে গনিমত হিসেবে গ্রহণ করতেন। শীতকাল এলে হজরত ইয়াহইয়া ইবনে মুয়াজ (রহ.) বলতেন, শীতের রাত দীর্ঘ। ঘুমিয়ে তাকে খাটো কোরো না এবং ইসলাম পবিত্র-পরিচ্ছন্ন, গুনাহর দ্বারা তাকে কলুষিত কোরো না। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত মুয়াজ (রা.) মৃত্যুকালে কেঁদে কেঁদে বলেন, গ্রীষ্মকালের দুপুরের শীতল পানি আর শীতকালের রাতের নামাজের জন্য আমি কাঁদছি। অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে তিনি রোজা রাখতেন এবং শীতকালে রাত জেগে নামাজ আদায় করতেন। ইমাম মালেক (রহ.) উল্লেখ করেন, সাফওয়ান ইবনে সুলাইম (রহ.) শীতকালে ঘরের ছাদে উঠে তাহাজ্জুদ পড়তেন আর গ্রীষ্মকালে ঘরের ভেতরে পড়তেন। পূর্ববর্তী অনেক বুজুর্গানে দ্বীন সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, তারা শীতকালে গ্রীষ্মকালীন পোশাক ও গ্রীষ্মকালে শীতকালীন পোশাক পরে রাতে তাহাজ্জুদ পড়তেন। (লাতায়িফুল মায়ারিফ : শীত অধ্যায়) সাহাবা ও তাবেইনদের মধ্যে শীতের আগমনের ফলে ইবাদতের ব্যাপক উদ্দীপনা সৃষ্টি হতো। ইবাদতের নবোদ্যম নিয়ে শীতকে তারা স্বাগত জানাতেন এবং এটাকে অমূল্য গনিমত মনে করে লুফে নিতেন। তারা একে অন্যকে ইবাদতের প্রতি উৎসাহ দিতেন। হজরত উবাইদ ইবনে উমাইর (রা.) বলেন, ‘কোরআন তেলাওয়াতের জন্য তোমাদের রাত দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। সুতরাং কোরআন পড়তে থাকো। রোজা রাখার জন্য তোমাদের দিনকে ছোট করা হয়েছে। সুতরাং দিনের বেলা রোজা রাখো। শীতের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা (সওয়াবের ক্ষেত্রে) গ্রীষ্মের দিনে রোজা রাখার সমান।’ (লাতায়িফুল মায়ারিফ পৃষ্ঠা : ৩২৭)। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘শীতকালকে মোবারকবাদ। এতে বরকতের ঝরনাধারা নাজিল হয়। রাত দীর্ঘ হয় কিয়ামুল্লাইলের জন্য। আর দিন ছোট হয় রোজা রাখার জন্য।’ (লাতায়িফুল মায়ারিফ, পৃষ্ঠা : ৩২৭) শীতে যেন বান্দার অজুতে কষ্ট না হয়, সেজন্য চামড়ার মোজায় মাসেহের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শীতে চামড়ার মোজা পরিধান করা এবং অজুর সময় পা না ধুয়ে মোজার ওপর মাসেহ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিশেষ ছাড়। বান্দা হিসেবে মালিকের এ ছাড় গ্রহণ করা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর সাধারণ বিধানের পাশাপাশি ছাড়ের বিধানগুলোর ওপর আমল করা তিনি পছন্দ করেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ৫৮৩২)। চামড়ার মোজায় মাসেহ করা শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। পূর্ণ অজু অবস্থায় মোজা পরিধান করার পর অজু নষ্ট হওয়ার সময় থেকে নিয়ে বাড়িতে অবস্থানকালে (ইকামত) এক দিন এক রাত আর সফর অবস্থায় তিন দিন তিন রাত মাসেহ করার বিধান আছে। অজুতে পা ধোয়ার পরিবর্তে তিন আঙুল ভিজিয়ে, উভয় মোজার ওপর টাখনু পর্যন্ত টান দেওয়া। যদিও বছরজুড়েই এ আমল করা যায়। তবে শীতে এর সুযোগ বেশি। হজরত আলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) মোজার ওপর মাসেহের মেয়াদ মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত এবং মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত নির্ধারণ করেছেন।’ (মুসলিম : ২৭৬) অতএব, আসুন শীতের এই হিমেল পরিবেশে বিশেষ ইবাদতের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে অর্জন করি সৃষ্টির পক্ষ থেকে দোয়া এবং স্রষ্টার পক্ষ থেকে সওয়াব। শীতের উষ্ণতায় যদি সঞ্চয় করে নিতে পারি পরকালের সম্পদ, ক্ষতি কী? লেখক: মুহাদ্দিস ও ইসলামী চিন্তাবিদ
১৯ জানুয়ারি, ২০২৪

আল-আকসায় নামাজের সওয়াব
পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে মসজিদুল আকসা ও ফিলিস্তিন ভূমির বর্ণনা এসেছে, যা এই পবিত্র ভূমির বিশেষ মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত করে। মসজিদুল আকসা পৃথিবীর দ্বিতীয় নির্মিত মসজিদ। এর নির্মাতা প্রথম মানব আদম (আ.)। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু জর গিফারি (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! সর্বপ্রথম কোন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে? তিনি বললেন, মসজিদুল হারাম (কাবাঘর)। আমি বললাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, মসজিদুল আকসা। আমি বললাম, এ দুইয়ের নির্মাণের মাঝখানে কত পার্থক্য? তিনি বললেন, ৪০ বছর। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৪২৫)। মসজিদুল হারামের মতো মসজিদুল আকসাও একাধিকবার পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়। আদম (আ.)-এর পর খ্রিষ্টপূর্ব দুই হাজার বছর আগে ইবরাহিম (আ.) এর পুনর্নির্মাণ করেন। তার বংশধরদের ভেতর ইসহাক ও ইয়াকুব (আ.) পবিত্র এ মসজিদের পরিচর্যা করেন। অতঃপর খ্রিষ্টপূর্ব এক হাজার বছর আগে সোলায়মান (আ.) মসজিদুল আকসা পুনর্নির্মাণ করেন। পুরো পৃথিবী মহান আল্লাহর সৃষ্টি, পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় মুসলমান পালন করতে পারেন ইবাদত ও প্রার্থনা। তবে বিশেষভাবে তিনটি শহরকে সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ বলে ঘোষণা করা হয়েছে ইসলামে। হাদিসের আলোকে জানা যায়, তিনটি শহর বিশেষভাবে সম্মানিত—মক্কা, মদিনা ও ফিলিস্তিন বা বায়তুল মুকাদ্দাস। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইবাদতের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করতে চাইলে, তিনটি মসজিদেই ভ্রমণ করা যাবে—মসজিদুল হারাম, আমার এ মসজিদ (মসজিদে নববী) ও মসজিদুল আকসা।’ (মুসলিম, হাদিস: ৮২৭)। এ হাদিস থেকে তিন শহরের মর্যাদা ও গুরুত্ব বোঝা যায়। গুরুত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে মসজিদুল আকসার অবস্থান তৃতীয়। মসজিদুল আকসা অসংখ্য নবী-রাসুলের স্মৃতিধন্য পুণ্যভূমি এবং মুসলমানদের প্রথম কিবলা। ইসলামের প্রাথমিক যুগে হিজরতের প্রায় ১৭ মাস পর্যন্ত মুসলমানরা মসজিদুল আকসার দিকে ফিরে নামাজ আদায় করতেন। এ মসজিদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেরাজের স্মৃতি। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, ফিলিস্তিন ভূমিতে অবস্থিত এ মসজিদে নামাজ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য মসজিদের তুলনায় মক্কা, মদিনা ও আকসা—এ তিন মসজিদে নামাজের সওয়াব বেশি। আবু দারদা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মসজিদে হারামে (কাবাঘর) এক রাকাত নামাজ এক লাখ নামাজের সমান। আমার মসজিদে (মসজিদে নববি) এক রাকাত নামাজ এক হাজার নামাজের সমান এবং বায়তুল মাকদিসে এক নামাজ পাঁচশ নামাজের সমান।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৪/১১)। তা ছাড়া মুকাদ্দাসে যারা নামাজ আদায় করবেন তাদের জন্য এ মসজিদের নির্মাতা হজরত সোলায়মান (আ.) বিশেষ দোয়া করে গেছেন। বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি এ মসজিদে নামাজের উদ্দেশ্যে আগমন করবে, আপনি তাকে সেদিনের মতো নিষ্পাপ করে দিন, যেদিন সে দুনিয়ায় এসেছিল (ইবনে মাজাহ: ১৪৭৯)। অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা মসজিদুল আকসায় যাও, সেখানে গিয়ে সালাত আদায় করো। কেননা তাতে এক ওয়াক্ত সালাত আদায় করা অন্যান্য মসজিদে এক হাজার সালাত আদায়ের সওয়াব পাওয়া যায়। আর যে ব্যক্তি মসজিদুল আকসায় যাওয়ার শক্তি-সামর্থ্য রাখে না, সে যেন তাতে দীপ জ্বালানোর জন্য তেল হাদিয়া হিসেবে প্রেরণ করে। কেননা যে বায়তুল মাকদিসের জন্য হাদিয়া প্রেরণ করে, সে তাতে নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির মতো সওয়াব লাভ করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৫৭)। এসব কারণে যুগ যুগ ধরে ধর্মপ্রাণ মুসলমান বছরে একবার এই তিন মসজিদ ভ্রমণ করে আসছেন। পবিত্র হজ পালন উপলক্ষে সাধারণত এসব ভ্রমণ হয়ে থাকে। তবে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠা কেন্দ্র করে প্রায় শতাব্দীকাল চলমান যুদ্ধের কারণে শেষোক্ত মসজিদ ভ্রমণ জটিলতর হয়ে আছে। মাওলানা মিজানুর রহমান, ইমাম ও খতিব
১০ নভেম্বর, ২০২৩

ক্ষমায় কী সওয়াব মেলে
মানুষ ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। কখনো ভুল হয়ে গেলে ক্ষমা চাওয়া ও কেউ ভুল করলে তাকে ক্ষমা করা দুটোই প্রশংসনীয় বৈশিষ্ট্য। ক্ষমার নীতি অবলম্বন করলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হয় শান্তি-শৃঙ্খলা। তাই পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ক্ষমার নীতি অবলম্বনের নির্দেশ দিয়ে রাসুল (সা.)-কে বলেছেন, ‘হে রাসুল! আপনি ক্ষমার নীতি অবলম্বন করুন, সৎকাজের নির্দেশ দিন এবং অজ্ঞদের এড়িয়ে চলুন।’ (সুরা আরাফ : ১৯৯)। এ ছাড়া সুরা আলে ইমরানের ১৩৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাগ সংবরণ করতে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমার নীতি অবলম্বন করতে বলেছেন। কেননা ক্ষমাকারীকে আল্লাহতায়ালা ভালোবাসেন। আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর ৬৩ বছর জীবনীর দিকে তাকালে দেখা যায়, কাফের, মুশরিক, মুনাফিকদের দ্বারা রাসুল (সা.) শতকষ্ট পেয়েও তিনি তাদের অপরাধের কথা ভুলে গিয়ে মাফ করে দিয়েছেন। ফলে খুব সহজেই ইসলামের বিজয় সুনিশ্চিত হয়েছে। মক্কার জীবনে ১৩ বছর কাফির-মুশরিকরা বহু কষ্ট দেয় তাকে। সাহাবায়ে কেরামের ওপর অমানুষিক নির্যাতন-নিপীড়ন চালায়। অবশেষে তাকে নিজ মাতৃভূমি থেকে বহিষ্কার করে দেয়। তখন তিনি বারবার কাবার পানে ফিরে তাকাচ্ছিলেন। আর বলছিলেন, এই মাটিতে আমি জন্ম নিয়েছি। এই মাটিতে আমি খেলাধুলা করেছি। এই মাটিতে আমার বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি। কাবার রবের কসম! যদি তারা আমাকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য না করত, তাহলে কখনো আমি দেশান্তরিত হতাম না। এতদসত্ত্বেও ১০ বছর পর যখন বিজয়ী বেশে মক্কায় প্রবেশ করেন তখন সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বলেন, আজ কারও ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি। অন্যকে ক্ষমা এবং অন্যের ভুলের প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শন করে সদাচরণ করা ছিল রাসুলের (সা.) সুন্নত ও আদর্শ। হজরত আনাস (রা.) বলেন, আমি রাসুলের সঙ্গে হাঁটছিলাম। তার গায়ে জড়ানো ছিল ইয়েমেনি মোটা চাদর। এক বেদুইন কোত্থেকে এসে বলা-কওয়া নেই, হুট করে চাদরে সজোরে মারল টান। চাদরের ঘষায় রাসুলের (সা.) কাঁধে নগদে দাগ বসে গেল। লোকটি কর্কশকণ্ঠে বলল—আল্লাহর যে মাল তোমার কাছে আছে তা থেকে আমাকে কিছু দিতে বলেন। রাসুল (সা.) লোকটির দিকে ফিরে তাকালেন এবং মুচকি হাসলেন। এরপর তাকে কিছু সম্পদ দেওয়ার আদেশ করলেন। (বুখারি : ৩১৪৯)। রাসুলের ক্ষমাশীল আচরণের প্রশংসা রাব্বুল আলামিন চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন পবিত্র কোরআনে। বলেছেন, ‘রবের দয়ায় আপনি তাদের প্রতি বিনম্র থেকেছেন। আপনি যদি কঠোর মনের হতেন, তাহলে এরা সবাই আপনার থেকে দূরে সরে যেত। সুতরাং তাদের ক্ষমা করুন, তাদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করুন।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৫৯) একই আদর্শ দেখা মেলে অন্যান্য নবী-রাসুলের জীবনেও। হজরত নুহ (আ.) তার কওমের লোকদের থেকে ৯৫০ বছর ধরে কষ্টের স্বীকার হয়েছিলেন। এত কষ্টের পরও কোনো দিন প্রতিশোধ নেননি। সব ক্রোধ কষ্ট হজম করেছেন। দুর্ব্যবহারের বিনিময় উপহার দিয়েছেন সদ্ব্যবহার। সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন সাদামনে। হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে নমরুদ আগুনে ফেলেছে। ক্ষুধার্ত সিংহের সামনে নিক্ষেপ করেছে। আরও কতশত জ্বালা-যন্ত্রণা দিয়েছে! কিন্তু তিনি কোনো প্রতিশোধ নেননি। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর উম্মত তার কথা উপেক্ষা করে নিজেদের মতো চলেছে। তিনি সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। হজরত মুসা আলাইহিস সালামের উম্মত পুরোটা জীবন বহু কষ্ট দিয়েছে তাকে। বিভিন্ন বিষয়ে তাকে মানসিক চাপে পড়তে হয়েছে উম্মতের কারণে। কিন্তু তিনি সর্বদা ক্ষমাশীলতার আচরণ করেছেন। আমরা যদি নবীদের জীবনীতে চোখ রাখি তাহলে দেখতে পাব অন্যায় আচরণের দরুন কোনো নবী প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। সব নবী-রাসুল ক্ষমাশীলতার আচরণ করেছেন। তাই তো ক্ষমা করার সব নবীর সুন্নত। কাউকে ক্ষমা করে দিলে একে তো সব নবীর সুন্নত পালন হয়, দ্বিতীয়ত ক্ষমাশীল বান্দা রাব্বুল আলামিনের ভালোবাসার পাত্র হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে সম্পদ ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে; আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৩৪) আমরা তো মানুষ। আর মানুষ মাত্রই ভুল। মানবজীবনে সবসময় অঘটন আর ঝুট-ঝামেলা লেগেই থাকে। ঝামেলায় জড়িয়ে, জেনে না জেনে, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় হোক—একজন আরেকজনের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি। অনেক সময় তো রক্তের আত্মীয়দের দ্বারাও কষ্ট পেয়ে থাকি। এ অবস্থায় আমাদের জন্য করণীয় হচ্ছে, অন্যায়কারীর অপরাধকে ক্ষমা করে দেওয়া। আর নিজে ভুল বা অপরাধ করে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে তা স্বীকার করা এবং ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। ক্ষমা চাইলে সম্মান কমে না বরং বাড়ে। ক্ষমাচর্চায় পরকালেও লাভ হয় সম্মান ও সমৃদ্ধি। নিজামুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
X