আসেছে পবিত্র মাহে রমজান মাস। রমজান মাস অত্যন্ত বরকতপূর্ণ একটি মাস। সারা বছরের সবচেয়ে উত্তম মাস হলো এটি।
এই মাসে মহান আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ অনুকম্পা ও নিয়ামত রয়েছে। তাই বছরজুড়েই রমজান মাস আগমনের প্রহর গুনেন প্রতিটি মুমিন-মুসলমান।
রমজান মাসে অধিক পরিমাণ আমলের মাধ্যমে বিপুল সওয়াব অর্জন ও নেকি লাভের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। হাদিস শরিফে আছে রমজান মাসে মহান আল্লাহ তা'আলা প্রতিটি নফল কাজের সওয়াব ৭০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন।
পবিত্র কোরআন শরিফ অবতীর্ণ হওয়ার এই মাসে মহান আল্লাহ প্রতিটি আমলের জন্য বাড়তি সওয়াব দান করেন। তাই এই মাসে অধিক পরিমাণ আমলের মাধ্যমে বিপুল সওয়াব অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
কালবেলার পাঠকদের জন্য থাকছে রমজান মাসে এমন কিছু আমলের কথা যেসব আমলের মাধ্যমে বিপুল সওয়াব অর্জন ও নেকি লাভের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।
পবিত্র মাহে রমজানে অন্যান্য মাসের চেয়ে এই মাসে ইবাদতের সওয়াব যেমন বেশি, তেমনি মহা পবিত্র এই মাসে দান-খয়রাতের সওয়াব ও অনেক বেশি। রমজানের অন্যতম আমল হিসেবে এই কারণে ধরা হয় দান-সদকাকে।
কোনো কোনো হাদিসে আছে এ মাসে দান করলে অন্য মাসের চেয়ে ৭০ অথবা তারও অধিক গুণ বেশি সওয়াব আল্লাহ দিবেন। দান-সদকা সওয়াব অর্জন ছাড়ও রিজিকে বরকত নিয়ে আসে।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, নামাজ কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে, যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে আল্লাহ তাদের কাজের প্রতিফল পরিপূর্ণ দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরও বেশি দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী।’ সুরা ফাতির : ২৯-৩০
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দানকারী আল্লাহর নিকটতম, বেহেশতের নিকটতম এবং মানুষের নিকটতম হয়ে থাকে। আর তারা দূরে থাকে জাহান্নাম থেকে।
অপরদিকে কৃপণ ব্যক্তি দূরে অবস্থান করে আল্লাহ থেকে, বেহেশত থেকে এবং মানুষের কাছ থেকে। আর তারা কাছাকাছি থাকে জাহান্নামের। অবশ্যই একজন জ্ঞানহীন দাতা একজন কৃপণ এবাদতকারীর তুলনায় আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। (সহিহ্ বোখারি : ১৮১৩)
তাই আমাদের সবার উচিত গরিব-দুঃখী, অভাবী, আত্মীয়স্বজন আপনজনদের বেশি দান-সদকা করা। বরকতময় মাহে রমজানে আল্লাহ সবাইকে বেশি বেশি করে দান সদকার তৌফিক দান করুন।
রহমতের মাস রমজান একই সঙ্গে নাজাতের ও ক্ষমার মাস। এ মাসে রোজাদারকে ইফতার করানো একটি বিশেষ আমল। রোজাদারকে ইফতার করানোকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সওয়াব বৃদ্ধি এবং গুনাহ মাফের আমল হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
হাদিসে পাকে এসেছে- হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে, ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে পাবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াবে কোনো কম করা হবে না।
সাহাবায়ে কেরাম এ কথা শুনে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, পানিমিশ্রিত এক কাপ দুধ বা একটি শুকনো খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দিয়েও যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও আল্লাহ তাকে সেই পরিমাণ সওয়াব দান করবেন।
আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে, আল্লাহতাআলা তাকে আমার হাউসে কাউসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না।
এই হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, অন্যকে ইফতার করানো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। কারণ ইফতার করানোর কারণে সারা দিন উপোস থেকে রোজা রাখার মাধ্যমে রোজাদার যে সওয়াব পাবে।
শুধু ইফতার করানোর কারণে ওই ব্যক্তির রোজাদারের সমান সওয়াব পাবে। এর চেয়ে ফজিলতপূর্ণ আমল ও সওয়াবের কাজ আর কী হতে পারে।
প্রতিটি মুসলমানের জন্যই মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। আল্লাহভীরু মুমিনদের প্রিয় অভ্যাস রাত জেগে ইবাদত করা যা রমজানে আরও বেড়ে যায়। তবে কর্মব্যস্ত লোকরা দিনের বেলায় পরিশ্রম করার কারণে রাত জাগতে পারেন না।
বিশেষত আমাদের দেশের কর্মজীবী সাধারণ মানুষ রমজানে রোজা পালন করার পর সারা দিনের কর্মব্যস্ততায় রাত জাগতে পারে না ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও। তাদের জন্য এমন আমলের আলোচনা করা হলো যা করলে সারা রাত না জেগেও আমল করার পূর্ণ সওয়াব পাবেন।
নবীজি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রাতে ১০০টি আয়াত তেলাওয়াত করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে সারা রাত ইবাদতের সমান সওয়াব দান করবেন। (সহিহুল জামে)।
কুরআনুল কারিমের যে কোনো সুরা বা স্থান থেকে ১০০টি আয়াত তেলাওয়াত করলেই সারা রাত জেগে আমল করার সওয়াব পাওয়া যাবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের এ সহজ আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
পবিত্র মাহে রমজানে প্রত্যেক মুসলমানের ইচ্ছে থাকে হাজার বছরের চেয়ে উত্তম এই মাসে আমল করে সওয়াব অর্জন করা। মহান আল্লাহ রমজানে প্রতিটি আমলের জন্য বাড়তি সওয়াব দান করেন। তাই এই মাসে অধিক পরিমাণ আমলের মাধ্যমে বিপুল সওয়াব অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
রমজানে সহজেই করা যায়, এমন কিছু আমল হলো-তাকওয়া অর্জন করা। তাকওয়া আল্লাহর ভয়ে বান্দাকে যাবতীয় পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং তার আদেশ মানতে বাধ্য করে।
ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা অনেক সওয়াবের কাজ। যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করার পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করবে, অতঃপর দুই রাকাআত নামাজ পড়বে, সে পরিপূর্ণ হজ ও ওমরাহ করার সওয়াব পাবে।
এ ছাড়াও কোরআন তেলওয়াত, মুখস্থ বা হিফজ করাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল। রমজান মাসে বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায় এবং গুনাহ মাফ হয়।
মন্তব্য করুন