জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাল সোমালিয়া
জিম্মি হওয়া ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত করতে চূড়ান্ত অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছে সোমালি পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের। সোমবার (১৮ মার্চ) এ অভিযানের তথ্য জানায় সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড অঞ্চলের পুলিশ। দেশটির স্বায়ত্তশাসিত পুন্টল্যান্ড অঞ্চল জলদস্যুদের অভয়ারণ্য হিসেবে মনে করা হয়।  রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শনিবার ভারতীয় নৌবাহিনী মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রুয়েন জলদস্যুদের কাছ থেকে উদ্ধার করে। ওই জাহাজটি গত ডিসেম্বরে জব্দ করেছিল দস্যুরা। এ সময় এমভি রুয়েন থেকে ১৭ জন ক্রু সদস্যকেও মুক্ত করা হয় এবং ৩৫ জন জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করা হয়।  পুন্টল্যান্ডের পুলিশ বাহিনী জানিয়েছে, এই অঞ্চলে অনেক জলদস্যু চক্রের ঘাঁটি রয়েছে। এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে রাখা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর অভিযানের একটি পরিকল্পনা তারা জানতে পেরেছে। এ কারণে তারা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এসব জলদস্যুদের বিরুদ্ধে তারা অভিযান পরিচালনা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তবে, আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর অভিযানে কোন কোন দেশ অংশ নেবে সেটি  সম্পর্কে কিছু জানায়নি পুন্টল্যান্ড পুলিশ।  প্রসঙ্গত, আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ বাংলাদেশি নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে। জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নোঙ্গর করলেও পরবর্তীতে একের পর এক অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে।  এর আগে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।
১৮ মার্চ, ২০২৪

সোমালি জলদস্যুদের গতিরোধ করল ভারতীয় নৌবাহিনী
সোমালিয়া উপকূলে ছিনতাইকৃত পণ্যবাহী একটি জাহাজের গতিরোধ করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। বর্তমানে এই জাহাজে থাকা সোমালি জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ এবং সেখানে কোনো জিম্মি থাকলে তাদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনীর সদস্যরা। শনিবার (১৬ মার্চ) দেশটির নৌবাহিনীর এক মুখপাত্রের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স। ভারতীয় নৌবাহিনীর গতিরোধ করা জাহাজটির নাম রুয়েন। মাল্টার পতাকাবাহী এই জাহাজটি একটি কার্গো জাহাজ। গত ১৪ ডিসেম্বর এই জাহাজটি ছিনতাই করেছিল সোমালি জলদস্যুরা। এরপর থেকে এই জাহাজ ব্যবহার করে সাগরে জলদস্যুতা করে আসছিল তারা। গত বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী জানায়, চলতি সপ্তাহে সোমালিয়া উপকূলে বাংলাদেশের পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজ ছিনতাই করতে রুয়েন নামের জাহাজটি ব্যবহার করে থাকতে পারেন সোমালি জলদস্যুরা। শনিবার ভারতীয় নৌবাহিনীর মুখপাত্র জানান, শুক্রবার (১৫ মার্চ) আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছিনতাইকৃত জাহাজটি থামাতে গেলে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজের দিকে গুলি ছুড়ে জলদস্যুরা। এরপর আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আত্মরক্ষা ও জলদস্যুতা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেয় ভারতীয় নৌবাহিনী। এ সময় জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ করে জাহাজ ও জিম্মি নাগরিকদের ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতীয় নৌসেনারা। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, গত ডিসেম্বর থেকে ছিনতাই, ছিনতাইচেষ্টা বা সন্দেহজনক প্রচেষ্টার অন্তত ১৭টি ঘটনা নথিভুক্ত করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। জলদস্যুতা মোকাবিলায় জানুয়ারি মাসে লোহিত সাগরের পূর্বে দিকে কমপক্ষে এক ডজন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে ভারত। এ সময়ের মধ্যে ২৫০টির বেশি জাহাজ তল্লাশি করেছে দেশটি।
১৬ মার্চ, ২০২৪

কেন এত ভয়ংকর সোমালিয়ার জলদস্যুরা
সোমালিয়া উপকূলে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছে বাংলাদেশি জাহাজ। জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক জিম্মি রয়েছেন। কেবল বাংলাদেশি জাহাজ নয়, এ  উপকূলে প্রায়ই ছিনতাইয়ের মুখে পড়ে বিভিন্ন জাহাজ। ফলে প্রশ্ন উঠেছে কোনো এতো এতো দুর্ধর্ষ সোমালিয়ার  জলদস্যুরা।  যেভাবে সৃষ্টি জলদস্যুতার সোমালিয়া উপকূলে  অবৈধভাবে মাছ ধরার প্রবণতা থেকে মূলত এ জলদস্যুতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এ উপকূলের পানিতে বিষাক্ত বর্জ্য নিঃসরণ করায় পরিবেশ স্থানীয়দের জন্য বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল। এর প্রতিবাদে সেখানকার জেলেরা বিভিন্ন সশস্ত্র দলে বিভক্ত হয়ে বিদেশি জাহাজ অঞ্চলটিতে প্রবেশ বন্ধের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে তারা বিকল্প আয় হিসেবে বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ ছিনতাই করে মুক্তিপণ আদায় শুরু করে।  ওয়ার্ডিরনিউজ কর্তৃক পরিচালিত ২০০৯ সালের এক জিরিপে দেখা যায়, উপকূলের ৭০ শতাংশ জাতি তাদের জলসীমায় বিদেশি জাহাজের প্রবেশ বন্ধে জলদস্যুতাকে সমর্থন করেন। জলদস্যুদের বিশ্বাস, তারা ন্যায় বিচারের মাধ্যমে দেশের সামুদ্রিক সম্পদ বর্হিদেশের কাছ থেকে রক্ষা করছে। এছাড়া নিজেদের মাছ ধরার অঞ্চলও রক্ষা করছে তারা।  কীভাবে এত শক্তিশালী সোমালিয়ার দস্যুরা  সোমালিয়ায় দস্যুদের পাশাপাশি সোচ্চার রয়েছে গ্যাং বাহিনী। দেশটির উত্তরাঞ্চলের গ্যালমাদাগ প্রশাসন দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে জলদস্যুদের ব্যবহার করে থাকে। এমনকি সেখানকার সেনাবাহিনী, যৌথ সরকারের মন্ত্রী, নেতা ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা এ লুটের টাকার ভাগ পেয়ে থাকেন।  জলদস্যুদের আদায় করা মুক্তিপণের অর্থ দিয়ে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সোমালিয়ায় ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে। অর্থনীতিবীদরা বলছেন, জলদস্যুতা এখন সোমালিয়ার অর্থণীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।  বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, সোমালিয়ায় উপযুক্ত কোস্টগার্ড বাহিনী নেই। অন্যদিকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। ফলে সেখানকার সামরিক বাহিনী ও স্থানীয় জেলেরা একসঙ্গে হয়ে জলসীমা রক্ষায় বিভিন্ন সময় পাহারা দিয়ে থাকে। জলদস্যুতা সমর্থিত নেটওয়ার্কে এ ধরনের খবর বেশি পাওয়া যায়। আর্থিকভাবে লাভবানসহ বিভিন্ন কারণেও অনেকে সেখানে জলদস্যুতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে থাকেন।  জাতিসংষের মহাসচিব বান কি মুন বলেন, সোমলিয়ার সাবেক ও বর্তমান উত্তর-পূর্ব সোমালিয়ার স্বায়ত্তশাসিত পান্টল্যান্ড অঞ্চলের উভয় প্রশাসনই জলদস্যুতা সাথে জড়িত। আন্তর্জাতিক জোট তাদের প্রতিরোধের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানেও আক্রমণ করে থাকে। ফলে ২০১০ সালের প্রথম ছয় মাসে জলদস্যুদের দ্বারা আটক জাহাজের সংখ্যা ৮৬ থেকে কমে ৩৩ এ নেমে আসে। এ ছাড়াও জোটের পদক্ষেপের ফলে তার এ অঞ্চল ত্যাগ করে সোমালি বেসিন ও ভারত মহাসাগরের দিকে ঝুঁকে পড়ে।  তিনি আরও জানান, ২০১১ সালের শেষের দিকে জলদস্যুরা এডেন অঞ্চল থেকে মাত্র চারটি জাহাজ সোমালিয়া উপকূলে নিতে সক্ষম হয়। তবে এ সময়ে তারা অন্তত ৫২টি জাহাজে হামলা চালায়। তবে সেখানে সফল হতে পারেনি এ দস্যুদল। এছাড়া ২০১৩ সালের ১৮ অক্টোবর জলদস্যুরা একটি বড় জাহাজ ছিনতাই করে এবং ৫২ জনকে বন্দি হিসেবে আটক রাখে। জলদস্যুদের কৌশল সোমলালিয়ার জলদস্যুরা ২০১৫ সালের পর থেকে সংঘবদ্ধ হয়ে বৃহৎ পরিসরে হামলা শুরু করে। সমুদ্রবিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতার কারণে তারা ক্ষিপ্রগতিতে আক্রমণ শুরু করে। এছাড়া এ উপকূলের দস্যুরা আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত। যা তাদের এ পথের যাত্রার পালকে বাড়তি হাওয়া দিয়েছে।  সোমলিয়ার জলদস্যুরা সাধারণত আক্রমণের জন্য ভোর বা রাতের দিকের সময়কে বেছে নিয়ে থাকে। তারা বড় জাহাজের কাছে পৌঁছাতে ছোট ছোট মটরবোট ব্যবহার করে। যা একদিকে দ্রুতগতির আর অন্যদিকে বড় জাহাজের রাডারে ধরা পড়ার সম্ভাবনাও অনেক কম।  অতীতের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সোমালিয়ার এ গোষ্ঠীগুলো সাধারণত জাহাজের পেছনের দিকে আক্রমণ চালায়। তারা জাহাজের পিছনে এসে এক মাথায় হুক লাগানো বিশেষ রশির সাহায্যে দ্রুত জাহাজে উঠে পড়ে এবং জাহাজের নাবিকেরা বুঝে ওঠার আগেই দখলে নিয়ে নেয়। এমনকি এ কাজ তারা এতটা অল্প সময়ের মধ্যে করে যে ক্রুরা এলার্ম বাজানোর মতো সময়ও পান না। এছাড়া তারা গভীর সমুদ্রে আক্রমণ করতে মাদারশিপ থেকে অভিযান পরিচালনা করে। মুক্তিপণ আদায়ের কৌশল  জিম্মিদের কাছ থেকে জলদস্যুরা মূলত ইউএস ডলারের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করে থাকে। মুক্তিপণের এ অর্থ তারা মূলত বস্তায় ভরে হেলিকপ্টার থেকে অথবা নৌকার মাধ্যমে ওয়াটার প্রুফ ব্যাগের করে গ্রহণ করে। এমনকি প্যারাসুটের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে থাকে দস্যুরা।  জলদস্যুদের অস্ত্র বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুসারে, জলদস্যুদের রয়েছে আলাদা অস্ত্রশস্ত্র। এর মধ্যে অন্যতম হলো একে৪৭, একেএম, টাইপ৫৬, টিটি৩৩, পিকে, আরপিজি৭ ইত্যাদি। এছাড়া আরজিবি৫ ও এফ১ এর মতো শক্তিশালী হাতবোমারও ব্যবহার করে থাকে জলদস্যুরা। 
৩০ নভেম্বর, ০০০১

সোমালিয়া উপকূলে ১৫ ভারতীয়সহ কার্গো জাহাজ ছিনতাই
আফ্রিকার সোমালিয়া উপকূলের কাছ থেকে ১৫ ভারতীয় ক্রু সদস্যসহ একটি জাহাজ ছিনতাই করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পণ্যবাহী এ জাহাজটি ছিনতাইয়ের শিকার হয়। লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী এ জাহাজের নাম ‘এমভি লিলা নরফোক’। এ ঘটনায় কড়া নজর রাখছে ভারতীয় নৌবাহিনী। খবর এনডিটিভির। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সোমালিয়ার উপকূলের কাছে ‘এমভি লিলা নরফোক’ নামে একটি পণ্যবাহী জাহাজ ছিনতাই করা হয় এবং ভারতীয় নৌবাহিনী এ ঘটনাটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে গতকাল শুক্রবার সামরিক কর্মকর্তারা জানান। এ ছাড়া ঘটনাস্থলের দিকে একটি যুদ্ধজাহাজও পাঠিয়েছে ভারত। ছিনতাই হওয়া জাহাজটিতে ১৫ জন ভারতীয় রয়েছেন এবং এর ক্রুদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। সামরিক কর্মকর্তাদের মতে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সোমালিয়া উপকূলে জাহাজটি ছিনতাই করার তথ্য পাওয়া যায়। ভারতীয় নৌবাহিনীর বিমানও জাহাজটির ওপর নজরদারি করছে। এর পাশাপাশি পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ আইএনএস চেন্নাই ছিনতাই হওয়া জাহাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এনডিটিভি বলছে, কার্গো জাহাজটি ইউনাইটেড কিংডম মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস পোর্টালে একটি বার্তা পাঠিয়ে বলেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাঁচ থেকে ছয়জন অজ্ঞাত সশস্ত্র ব্যক্তি জাহাজে উঠেছে। এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক কিছু হামলার পর ভারতীয় নৌবাহিনী আরব সাগরে নজরদারি বাড়িয়েছে। মূলত লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর এবং মধ্য ও উত্তর আরব সাগর বরাবর যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক চ্যানেল রয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে হামলা ব্যাপকহারে বেড়েছে।
০৬ জানুয়ারি, ২০২৪
X