জমি-ফ্ল্যাট হস্তান্তর ফি বাড়ছে
সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে হস্তান্তরের সেবা ফি বাড়ানো হচ্ছে। স্থানভেদে ৬৩ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ছে এ ফি। এরই মধ্যে ফি বাড়ানোর প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক এক মাস আগে জমি বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনে উৎসে কর কমানো হয়েছিল। কর কমানোর তিন মাসের ব্যবধানে জমি বা ফ্ল্যাট হস্তান্তর ফি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলো।
পাশাপাশি প্রথমবারের মতো দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ফিও নির্ধারণ করা হবে। আগে দেশে এ-সংক্রান্ত কোনো ফি ছিল না। সরকারের নন ট্যাক্স রেভিনিউ (এনটিআর) বৃদ্ধিসহ অর্থ সংকট কমানোর জন্য জমি এবং প্লট, ফ্লোর স্পেসে কর বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব মতামতের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এসব তথ্য জানান।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অধিশাখা-৭ থেকে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, শেরবাংলা নগর, আগারগাঁও প্রশাসনিক এলাকা, খিলগাঁও, রাজারবাগ, বাসাবো, ওহাব কলোনি পুনর্বাসন এলাকা, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, হাজারীবাগ শিল্প এলাকা, নবাবপুর বাণিজ্যিক এলাকা, চট্টগ্রাম শহরের আবাসিক বা বাণিজ্যিক বা শিল্প এলাকা, কক্সবাজার শহরের সমুদ্রসৈকত আবাসিক এলাকার জমি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে লিজ দেওয়া হয়েছে। লিজ দলিলের শর্ত অনুসারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ওই আবাসিক বা শিল্প বা প্রশাসনিক এলাকার প্লট, উপ-প্লট, খণ্ড, জমি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্টস, ফ্লোর স্পেস, দোকান প্রভৃতির হস্তান্তর অনুমতি, নামজারির অনুমতি, আবাসিক, শিল্প প্লট বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহারের সেবা প্রদান ফি আদায় সাপেক্ষে অনুমতি দিয়ে থাকে।
এতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ১২ জুলাই সেবা প্রদান ফি এনটিআর নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। এই ফি পুনর্নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে গত বছরের ৮ অক্টোবর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ২০ ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় বৈঠক হয়েছে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি। এই দুই সভায় বিগত বছরের মূল্যস্ফীতি, জমি, ফ্ল্যাটের বাজার দর এবং সরকারের বাজেট ব্যবস্থাপনা বিবেচনা করে কমিটির সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে হস্তান্তর অনুমতি, নামজারির অনুমতি, বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমতি ফি এনটিআর পুনর্নির্ধারণে সুপারিশ করে, যা গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন।
প্রস্তাব অনুসারে, ধানমন্ডি এলাকার প্লট বা জমির বাণিজ্যিক ফি ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। আর ধানমন্ডির আবাসিক এলাকায় বর্তমান ফি থেকে ১ লাখ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, শতকরা হারে বেড়েছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। ধানমন্ডি এলাকার ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট-ফ্লোর স্পেস-দোকান প্রতি বর্গফুট ১০০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৬০ টাকা। ওই এলাকার বাণিজ্যিক হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার টাকা, যা আগে ছিল ৪০০ টাকা, অর্থাৎ ১৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
এ ছাড়া তেজগাঁও শিল্প এলাকার শিল্প প্লট বা জমির ফি ধরা হয়েছে ৩ লাখ টাকা। আর বাণিজ্যিক প্লটের ক্ষেত্রে বর্তমান ফি থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে, যা বেড়েছে প্রায় ১০০ শতাংশ। অন্যদিকে বাণিজ্যিক প্লট ফি ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।
তেজগাঁও এলাকার ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট-ফ্লোর স্পেস-দোকান প্রতি বর্গফুট ৪০০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ হাজার টাকা। শতকরা হারে বেড়েছে ১৫০ শতাংশ। শিল্প প্লটের ফি হবে ৮০০ টাকা।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, খিলগাঁও পুনর্বাসন এলাকায় (১০০ ফুট রাস্তার পাশে) প্লট বা জমির আবাসিক ফি হবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ওই এলাকায় বর্তমান ফি থেকে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সেখানকার বর্তমান ফি ৮০ হাজার টাকা। বাণিজ্যিক এলাকার ফি ধরা হয়েছে ২ লাখ টাকা। একই এলাকার ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট-ফ্লোর স্পেস-দোকানে প্রতি বর্গফুটের ফি ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। বাণিজ্যিক হার করা হয়েছে ৫০০ টাকা।
এদিকে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় প্লট বা জমির বাণিজ্যিক ফি ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। এ এলাকায় বর্তমান ফি থেকে ১০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ফি ১০ লাখ টাকা। একই এলাকার ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট-ফ্লোর স্পেস-দোকানে প্রতি বর্গফুটের ফি হবে ১২০০ টাকা। আগে এই হার ছিল ৪০০ টাকা। শতকরা হারে মতিঝিল এলাকার ফি বেড়েছে ২০০ শতাংশ।
রাজধানী ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের আবাসিক এলাকার প্লট বা জমির আবাসিক ফি ধরা হয়েছে ২ লাখ টাকা। বর্তমান ফি ১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ফি বেড়েছে ১০০ শতাংশ। এ ছাড়া বাণিজ্যিক এলাকার ফি ধরা হয়েছে ৬ লাখ টাকা। একই এলাকার ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট-ফ্লোর স্পেস-দোকানের প্রতি বর্গফুটে ফি হবে ২০০ টাকা।
কক্সবাজার আবাসিক এলাকায় প্লট বা জমির ফি ১৫০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাণিজ্যিক এলাকার ফি ধরা হয়েছে ২ লাখ টাকা। একই এলাকার ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট-ফ্লোর স্পেস বা দোকানের প্রতি বর্গফুটের ফি হবে ৪০০ টাকা।
এদিকে গত বছরের ডিসেম্বরে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলার যেসব এলাকায় সরকারি বা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি, সেসব এলাকার জন্য জমির নিবন্ধনে উৎসে কর কাঠাপ্রতি ৩০ হাজার টাকা কমায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও ধামরাই উপজেলার সব মৌজায় কাঠাপ্রতি সর্বোচ্চ উৎসে কর এখন ৫০ হাজারের পরিবর্তে হবে ২০ হাজার টাকা। চট্টগ্রামের খুলশী, পাঁচলাইশ, পাহাড়তলী, হালিশহর ও কোতোয়ালি মৌজায় একই শ্রেণির জমির জন্য সর্বোচ্চ উৎসে কর প্রতি কাঠায় ৫০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে।
৩১ মার্চ, ২০২৪