মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত হামাস।
হামাস শুক্রবার জানায়, তাদের হাতে আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে এবং প্রায় দু’বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধে তারা অবিলম্বে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত।
এএফপি জানায়, গত সোমবার হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সঙ্গে নিয়ে এই ২০ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। নেতানিয়াহু এতে সতর্ক সমর্থন দিয়েছেন।
নিচে হোয়াইট হাউস প্রকাশিত পরিকল্পনার মূল দফাগুলো দেওয়া হলো—
১. গাজাকে সম্পূর্ণরূপে চরমপন্থা ও সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যাতে এর প্রতিবেশীদের জন্য কোনো হুমকি না থাকে। ২. দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তিতে থাকা গাজার মানুষের কল্যাণে পুনর্গঠন করা হবে। ৩. উভয়পক্ষ সম্মত হলে যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হবে। ইসরায়েলি বাহিনী সীমারেখায় সরে যাবে এবং জিম্মি মুক্তির প্রস্তুতি নেবে। পূর্ণ প্রত্যাহারের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধরেখা অপরিবর্তিত থাকবে। ৪. ইসরায়েল এই চুক্তি প্রকাশ্যে গ্রহণ করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত সকল জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ৫. জিম্মি মুক্তির পর ইসরায়েল ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীসহ ১,৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে। প্রত্যেক ইসরায়েলি জিম্মির দেহাবশেষের বিনিময়ে ১৫ জন গাজাবাসীর দেহাবশেষ ফেরত দেওয়া হবে। ৬. অস্ত্র জমা দেওয়া হামাস সদস্যদের সাধারণ ক্ষমা দেওয়া হবে। যারা গাজা ছাড়তে চায়, তাদের নিরাপদে অন্য দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা হবে। ৭. চুক্তি স্বাক্ষরের পর গাজায় পুরোদমে মানবিক সহায়তা পৌঁছাবে। পানি, বিদ্যুৎ, হাসপাতাল, বেকারি ও অবকাঠামোর পুনর্গঠন হবে। ৮. জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ত্রাণ বিতরণে উভয়পক্ষ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। রাফা ক্রসিং খোলা থাকবে। ৯. গাজা অস্থায়ীভাবে একটি অরাজনৈতিক টেকনোক্র্যাট কমিটি পরিচালনা করবে। এ কমিটির ওপর নজরদারি করবে নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘বোর্ড অব পিস’, যার চেয়ারম্যান থাকবেন ট্রাম্প। গাজার পুনর্গঠনের অর্থায়ন ও কাঠামো তারা দেখবে। ১০. গাজা পুনর্গঠনে ‘ট্রাম্প অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা হবে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে কর্মসংস্থান ও আধুনিক অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। ১১. অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক ও প্রবেশাধিকারের ভিত্তিতে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। ১২. কাউকে গাজা ছাড়তে বাধ্য করা হবে না। যারা যেতে বা ফিরতে চায়, তারা স্বাধীনভাবে তা করতে পারবে। ১৩. হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠী প্রশাসনে ভূমিকা রাখবে না। সব সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হবে এবং নিরস্ত্রীকরণের প্রক্রিয়া চলবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অধীনে। ১৪. আঞ্চলিক অংশীদাররা নিশ্চিত করবে যে হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠী তাদের বাধ্যবাধকতা পালন করছে এবং গাজার প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি নয়। ১৫. যুক্তরাষ্ট্র আরব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে মিলে একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠন করবে। এটি গাজায় মোতায়েন হয়ে ফিলিস্তিনি পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেবে এবং সীমান্ত সুরক্ষায় কাজ করবে। ১৬. ইসরায়েল গাজা দখল বা সংযুক্ত করবে না। আইএসএফ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনারা গাজা ছাড়বে। ১৭. হামাস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে নির্ধারিত ত্রাণ কার্যক্রমসহ সব পদক্ষেপ আইএসএফ-এর তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হবে। ১৮. সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ চালু হবে। ১৯. গাজা পুনর্গঠন ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার কার্যক্রম সফলভাবে এগোলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বাস্তব পথ তৈরি হবে। ২০. যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থানের রাজনৈতিক দিগন্ত নির্ধারণে সংলাপ শুরু করবে।
মন্তব্য করুন