দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৭ মিনিটে বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করান। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। অবসরে যাওয়া সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীও অনুষ্ঠানে ছিলেন।
শপথ গ্রহণ শেষে সুপ্রিম কোর্টে ফিরে আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন নতুন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে এ মতবিনিময় সভা হয়। এরপর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধান বিচারপতি। সেখানে সংরক্ষিত শোক বইয়ে স্বাক্ষরও করেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথে থেকে যেন
দেশের সাধারণ মানুষের জন্য আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, সেই প্রতিজ্ঞাই করলাম। বঙ্গবন্ধু আমাদের সংবিধান দিয়েছেন। সেই সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সুপ্রিম কোর্টের সব বিচারকের।
প্রধান বিচারপতি দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতিরা এবং সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রাররা।
গত ১২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বিদায়ী প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর স্থলাভিষিক্ত হলেন। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থানার ছয়াশী (হাটনাইয়া) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আখলাকুল হোসাইন আহমেদ, মায়ের নাম বেগম হোসনে আরা হোসাইন। আখলাকুল হোসাইন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি গণপরিষদ সদস্য হিসেবে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তার অনুজ সাজ্জাদুল হাসান বর্তমানে নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য। প্রধান বিচারপতির স্ত্রী নাফিসা বানু বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ পরিচালনা পরিষদের একজন সদস্য (ফিন্যান্স) হিসেবে কর্মরত। তাদের সন্তান ব্যারিস্টার আহমেদ শাফকাত হাসান।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস (অনার্স), এমএসএস (অর্থনীতি) ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বারের সনদ পেয়ে জেলা বার-কমিটি যোগদান করেন। ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে এবং ২০০৫ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ২০০৯ সালের ৩০ জুন যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের ৬ জুন স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর একজন সদস্য হিসেবে ২০১২ সালের ২৫ মার্চ যোগদান করেন এবং ১৩ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়ে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি ‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র: একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ: একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য’ নামক দুটি গ্রন্থ রচনা করেছেন।