প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে—বিএনপির এ জাতীয় পূর্বশর্তের কারণে সংলাপ সম্ভব নয় বলে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর দেওয়া চিঠির জবাবে গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগ এক চিঠিতে এ কথা উল্লেখ করে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত চিঠিটি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি চিফ অব মিশন মি. আর্টুরো হাইন্সের কাছে হস্তান্তর করেন।
চিঠিতে আওয়ামী লীগ উল্লেখ করেছে, বিএনপিসহ অন্যরা দেশে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে, যা অর্থবহ সংলাপের পরিপন্থি। এর সঙ্গে সামনের সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলো ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি, নির্বাচনী প্রচারসহ নির্বাচন ঘিরে কর্মকাণ্ড শুরু করবে। তদুপরি সব সংলাপের অনুকূলে থাকলেও অর্থপূর্ণ সংলাপ করার জন্য যথেষ্ট সময় নেই।
এর আগে গত ১৩ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিরাজমান সংকট দূর করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রস্তাব দিয়ে আওয়ামী লীগকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়ার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত ১৫ নভেম্বর সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে এই চিঠি হস্তান্তর করেন।
আওয়ামী লীগের চিঠিতে ডোনাল্ড লু, বাংলাদেশ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতি চিঠির জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগীদের বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু সহিংসতা-মুক্ত করতে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
চিঠিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখতে আমি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের দলের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করতে চাই। জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকারকে একটি পবিত্র অধিকার বলে মনে করে আওয়ামী লীগ। সেই অধিকার রক্ষায় নিরলস সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে আওয়ামী লীগের।
এতে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশনকে সত্যিকার অর্থে সংবিধান স্বীকৃত একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাঠামোগত, আর্থিক, মানবসম্পদ ও আইনি উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে ছবিযুক্ত ভোটার আইডি কার্ড, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য আইন প্রণয়ন উল্লেখযোগ্য।
চিঠিতে বলা হয়, আপনারা অবগত আছেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিঃশর্ত সংলাপের দরজা খোলা রেখেছিল। তবে এ ধরনের সংলাপ হয়নি। কারণ, এ ধরনের যে কোনো সংলাপের পূর্বশর্ত হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অবিচল ছিল এবং এখনো আছে।
বর্তমানে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী অব্যাহতভাবে জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে অবরোধ এবং অগ্নিসংযোগের মতো কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে।
আগুনসন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, অবরোধ কার্যকর করার উপায় হিসেবে তারা অগ্নিসংযোগকে বেছে নিয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধের সমর্থনে ১৫৪টি অগ্নিসংযোগ হয়েছে।
সম্পাদনা: রাসেল