এ জেড ভূঁইয়া আনাস
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ০২:৩৬ এএম
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৪, ০৭:২৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ

মোট ঋণের ১১.১১ শতাংশ খেলাপি
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ

ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমাতে নানা সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু আর্থিক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে না পারায় বরাবরের মতোই তা বাড়ছে। গত মার্চে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এটি ইতিহাসের সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি-মার্চ সময়ে দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। আর এক বছরে (মার্চ ২০২৩ থেকে মার্চ ২০২৪) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, সুশাসন ও খেলাপি ঋণই বর্তমান ব্যাংকিং খাতের বড় সমস্যা। ব্যাংক খাতে সুশাসন না থাকার কারণে দিন দিন খেলাপি বাড়ছে। এ সমস্যা মোকাবিলায় ঢালাওভাবে ছাড় না দিয়ে পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করেছে ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। এটি গত বছরের (মার্চ-২০২৩) একই সময়ের চেয়ে ৫০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা বেশি। গত বছরের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২১ কোটি টাকা।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, দেশের ব্যাংক খাতের প্রকৃত খেলাপি আরও অনেক বেশি। মূলত, আইএমএফের শর্ত পরিপালন করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অবলোপনসহ ঋণের নানা ক্যাটাগরি বাদ দিতে হচ্ছে। এজন্য দেশের প্রকৃত খেলাপি ধীরে ধীরে উঠে আসছে। শর্ত সঠিকভাবে পরিচালন করা হলে খেলাপি ৪ লাখ কোটিতে ঠেকতে পারে বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জুন প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। প্রান্তিকটিতে দেশের ইতিহাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে খেলাপি ঋণ। কিন্তু গত মার্চে ওই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে দেশের আর্থিক খাতের এই খারাপ সূচক। আর মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণও ধাপে ধাপে কমিয়ে আনতে হবে। ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। কিন্তু বর্তমানে বেসরকারি খাতের খেলাপি ঋণ ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর সরকারি ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ২৭ দশমিক ৪৯ শতাংশই খেলাপি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো গত মার্চ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে ৩ লাখ ১২ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ৮৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলো একই সময়ে ঋণ বিতরণ করেছে ১২ লাখ ২১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৮৮ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলো ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে ৬৬ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৩ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ২০ শতাংশ। এ ছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৪০ হাজার ৩২ কোটি টাকার ঋণ। যার মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। বিতরণ করা ঋণের এটি ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

আইএমএফের শর্ত মতে, পুনঃতপশিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি দেখাতে হবে। সেক্ষেত্রে আইএমএফের হিসাবে খেলাপি দাঁড়াবে ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থান না থাকায় খেলাপি বাড়ছে বলে মত অনেকের।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, খেলাপির যে চিত্র উঠে এসেছে, প্রকৃত চিত্র এটি না। প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ, আরও বড় হবে। অর্থঋণ আদালত ও সুপ্রিম কোর্টে যে মামলাগুলো বিচারাধীন, সেগুলোকে ক্ল্যাসিফায়েড ঋণে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। এটিই মোট খেলাপি ঋণের প্রধান অংশ। আরেকটি বিষয় হলো মন্দ ঋণ রাইট-অফ করা হয়েছে। সেটাও ক্ল্যাসিফায়েড ঋণে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। এগুলো সব যোগ করলে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে মোট প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার কথা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। কিন্তু এই সময়ে প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়েছে ৮৪ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ বর্তমানে সার্বিক প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মাইকেয়ার হেলথ হাসপাতালে মিনিমাল ইনভেসিভ সার্জারির অত্যাধুনিক মেশিন উদ্বোধন

আবারও কি ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে মেসি?

নেতানিয়াহুকে থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান এরদোয়ানের

ছবি আসল নাকি এআই দিয়ে তৈরি, মুহূর্তেই জানবেন যেভাবে 

ট্রাকচাপায় সড়কেই প্রাণ গেল বাবা-মেয়ের

মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমীর জামিন নামঞ্জুর

আইনগত ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সুপরিকল্পিত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে : প্রধান বিচারপতি

রাতে ঘুমানোর আগে পানি খাওয়া ভালো নাকি খারাপ? জেনে নিন

অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রির অভিযোগ

যে কারণে বিয়ের অনুষ্ঠানে নাচেন না রণবীর কাপুর

১০

নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নাহিদ, সম্পাদক মুদ্দাচ্ছির

১১

ঢাকায় ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে কত প্রাণহানি হতে পারে, জানাল রাজউক

১২

বিনা অনুমতিতে বিদেশে অবস্থান, চাকরিচ্যুত ইবির অধ্যাপক

১৩

গভীর রাতে বাড়িতে পুলিশ, প্রবাসী যুবকের মৃত্যু

১৪

ইতালিতে প্রবাসীদের পোস্টাল ভোট নিয়ে বিএনপির কর্মসূচি

১৫

ইয়ানসেনের ছয় উইকেটে বিপদে ভারত

১৬

ছাত্রশিবিরের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর ছাত্রদলে যোগদান

১৭

ঢাবির বিজয় একাত্তর হলে আগুন 

১৮

বৃহত্তর সুন্নি জোট থেকে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়া হবে : গিয়াসউদ্দিন তাহেরী

১৯

সাবেক মেয়র তাপসের ২১ ব্যাংক হিসাবে ১০ কোটি টাকা ফ্রিজ

২০
X