বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
হাসান আজাদ
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৫ এএম
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

স্থলভাগের পিএসসি হালনাগাদ করছে পেট্রোবাংলা

লক্ষ্য বিনিয়োগ আকৃষ্ট
স্থলভাগের পিএসসি হালনাগাদ করছে পেট্রোবাংলা

স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদ্যমান উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) হালনাগাদ করছে পেট্রোবাংলা। চলতি মাসে পিএসসির হালনাগাদ খসড়া চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। ১৯৯৭ সালের পর স্থলভাগের পিএসসি আর হালনাগাদ করা হয়নি। সম্প্রতি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দেওয়ার পর বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ২৭ বছর পর স্থলভাগের পিএসসি হালনাগাদের উদ্যোগ নিয়েছে পেট্রোবাংলা। প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদ্যমান পিএসসি হালনাগাদ করা হচ্ছে। খসড়া চূড়ান্তকরণের কাজ প্রায় শেষ। শিগগির আমরা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ের পাঠাব। তিনি বলেন, অফশোর (সাগরে অনুসন্ধানের জন্য) পিএসসির মতো অনশোর (স্থলভাগ) পিএসসিও আর্কষণীয় করা হচ্ছে। যাতে করে আমাদের অনশোরেও আইওসিগুলো (আন্তর্জাতিক অয়েল কোম্পানি) বিনিয়োগে আগ্রহী হয়।

জানা গেছে, গত এক দশকে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত গ্যাসের উত্তোলন দিন দিন কমছে। দেশে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে এই সময় আমদানির ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। বড় বড় গ্যাসক্ষেত্রগুলোরও মজুত ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। এ অবস্থায় স্থালভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে স্থলভাগের পিএসসি হালনাগাদ করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি পরিত্যক্ত গ্যাসকূপগুলোকে ফের খনন ও সংস্কারের (ওয়ার্কওভার) মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে পেট্রোবাংলা। বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রের ৯৮টি কূপ সাময়িক বন্ধ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ৬৭টি ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে উৎপাদনে আনা সম্ভব। বাকিগুলোতেও কাজ করার সুযোগ আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গত মাসে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এজন্য পিএসসিও হালনাগাদ করে আকর্ষণীয় করা হয়েছে। কিন্তু সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তার চেয়ে কম সময়ের ভেতর স্থলভাগের অনুসন্ধান কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব।

ওই কর্মকর্তা জানান, পিএসসি হালনাগাদের পাশাপাশি আকর্ষণীয়ও করা হচ্ছে। গ্যাস পেলে উৎপাদিত গ্যাসের অংশীদারত্বে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। দ্বিমাত্রিক জরিপের ভিত্তিতে উচ্চ সম্ভাবনাময়, মাঝারি সম্ভাবনাময় ও ন্যূনতম সম্ভাবনাময় এই তিন ক্যাটাগরিতে ব্লকগুলোকে ভাগ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক দরপত্রে দেশীয় অনুসন্ধান কোম্পানিগুলোকে অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর টেকনিক্যাল, ফিন্যান্সিয়াল ও দক্ষ মানবসম্পদের ওপর ভিত্তি করে কাজ পাওয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে তিনটি রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি হলো বাপেক্স, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, স্থলভাগে মোট ২২টি ব্লক রয়েছে। এর মধ্যে ১১টিতে এখনো কোনো ধরনের অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো হয়নি। খালি থাকা ব্লকগুলো হচ্ছে ১, ২এ, ২বি, ৩এ, ৪এ, ৪বি, ৫, ৬এ, ২২এ, ২২বি এবং ২৩ নম্বর। এসব ব্লকে কাজ করতে যোগ্যতম বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ কোম্পানি গঠন করে দরপত্রে অংশ নিতে পারবে। এ ছাড়া এ খাতের কোনো কোম্পানিকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে কাজ করানোর সুযোগ রাখা হচ্ছে হালনাগাদ পিএসসিতে। স্থলভাগের গ্যাসের দামও বাড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

দেশের স্থলভাগে প্রথম পিএসসি করা হয় ১৯৯১ সালে। এর অধীনে শেভরন বিবিয়ানা, জালালাবাদ এবং মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের কাজ পায়। পরে ১৯৯৭ সালে সংশোধিত পিএসসির অধীনে কুমিল্লার বাঙ্গুরায় তাল্লো কাজ পায়। তবে কানাডিয়ান কোম্পানিকে টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রের কাজ দেওয়া হয় পিএসসি ছাড়াই।

বর্তমানে দেশের ২২টি গ্যাসক্ষেত্রের ১১৩টি কূপ দিয়ে দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। গতকাল পেট্রোবাংলার গ্যাস উৎপাদনের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এদিন এসব কূপ থেকে ১ হাজার ৭১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হয়েছে। এর সঙ্গে আমদানি করা ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি যোগ করে জাতীয় গ্রিডে মোট ২ হাজার ৭১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে।

স্থানীয়ভাবে সবচেয়ে বেশি গ্যাস উত্তোলন করা হয় সিলেটের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে। মার্কিন কোম্পানি শেভরনের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই গ্যাসক্ষেত্রের ২৬টি কূপ দিয়ে দৈনিক ৭৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া শেভরনের নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্য দুটি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে জালালাবাদ ফিল্ডের সাতটি কূপ দিয়ে দৈনিক ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের পাঁচটি কূপ দিয়ে দৈনিক সাড়ে ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এককভাবে শেভরন সবচেয়ে বেশি গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ করছে। অন্য বহুজাতিক কোম্পানি তাল্লো বাঙ্গুরা গ্যাসক্ষেত্রের পাঁচটি কূপ দিয়ে দৈনিক ২১ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ করছে।

দেশীয় কোম্পানি বাপেক্স আটটি গ্যাসক্ষেত্রের ১৫টি কূপ দিয়ে ১১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ করছে। এই গ্যাসক্ষেত্রগুলো হচ্ছে সালদা, ফেঞ্চুগঞ্জ, শাহবাজপুর, সেমুতাং, শ্রীকাইল, বেগমগঞ্জ ও রূপগঞ্জ।

সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি (এসজিএফএল) সিলেট, কৈলাশটিলা-১, কৈলাশটিলা-২, রশিদপুর ও বিয়ানীবাজার এই পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রের ১১টি কূপ দিয়ে দৈনিক ১১৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ করছে।

বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি (বিজিএফসিএল) পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রের ৪৪টি কূপ দিয়ে দৈনিক ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ করছে। গ্যাসক্ষেত্রগুলো হচ্ছে তিতাস, হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ, নরসিংদী এবং ম্যাগনামা। এর মধ্যে তিতাস গ্যাসক্ষেত্রটি সবচেয়ে পুরোনো।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রথমবারের মতো স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য সার্টিফিকেট কোর্স 

বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়ে 

‘চলচ্চিত্র শিল্পে সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’- শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চার উপজেলায় যুবলীগের কমিটি গঠন

এক কোটি গরিব মানুষকে ব্যাংকের মালিক বানিয়েছি : ড. ইউনূস

পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে পালাল মাদক কারবারি

হজযাত্রীদের গায়ে ডিজিটাল ট্যাগ বসাবে সৌদি সরকার

শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

বিধবার সম্পত্তি দখলচেষ্টার অভিযোগ দেবরের বিরুদ্ধে

১০

কালবৈশাখী ঝড়ে বাড়িঘর লন্ডভন্ড

১১

নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না : রাশেদা সুলতানা

১২

লেখক পূরবী বসুর অবস্থা ‘সংকটাপন্ন’

১৩

গুচ্ছের ‘খ’ ইউনিটের পরীক্ষা কাল, প্রতি আসনে লড়বেন ১৫ জন

১৪

অপরিচিত তরুণ খুঁজছে চীনের নারীরা

১৫

স্বস্তিকাকে তুলাধুনা করল নেটিজেনরা

১৬

কেন বৃষ্টি চান না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষকরা

১৭

চাকরির সুযোগ দিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১৮

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায় সৌদির ৮০ কোম্পানি

১৯

নরসিংদীতে তীব্র দাবদাহে শ্রমিকের মৃত্যু

২০
*/ ?>
X