কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩, ০২:৩৮ এএম
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৩, ০৬:২৯ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কক্সবাজারে সংঘর্ষ

গুলি চালানোর সেই মিছিলে ছিলেন এমপি জাফর

গুলি চালানোর সেই মিছিলে ছিলেন এমপি জাফর

যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা ঘিরে গত ১৫ আগস্ট কক্সবাজারের চকরিয়ায় গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে দলটির নেতাকর্মীরা। পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়ি দুটি ভাঙচুরের সময় ৬০ থেকে ৭০ জন লোক নিয়ে উপস্থিত হন কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। এ সময় সংঘর্ষে ফোরকান নামে এক ব্যক্তি নিহত হন।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এমপি জাফর আলমের অনুসারীদের মিছিলের কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, এমপি জাফর আলমের সামনে-পেছনে অন্তত দুজনের হাতে ভারী অস্ত্র। জাফর আলমও মাথায় হেলমেট, সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরেছিলেন। অস্ত্র ছাড়াও জাফর আলমের সঙ্গে থাকা বেশিরভাগ লোকজনের হাতে লাঠিসোটা ছিল।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, জাফর আলমের সঙ্গে সশস্ত্র অবস্থায় কয়েকজনকে দেখে মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এ সময় একটি মিছিল নিয়ে জাফর আলম বায়তুশ শরফ সড়কের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন।

এ ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, জাফরকে মাঝখানে রেখে চকরিয়া শহরের মহাসড়কে মিছিলটি হয়। মিছিলের সামনে হেলমেট পরা হাফহাতা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এক ব্যক্তির হাতে ভারী অস্ত্র। এর পেছনে জাফর আলম, তার ব্যক্তিগত সহকারী আমিন চৌধুরী, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর ও চকরিয়া পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক জয়নাল হাজারীকেও দেখা যায়। জাফর আলম হেলমেট পরলেও আমিন চৌধুরী, আলমগীর ও জয়নাল হাজারীর মাথায় হেলমেট ছিল না। তাদের পাশে কালো পাঞ্জাবি ও হেলমেট পরা আরেকজনকে অস্ত্র হাতে দেখা যায়। মিছিল এগিয়ে যেতে যেতে একজনকে অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখা যায়। এ সময় স্লোগান দিতে দেখা যায়—চকরিয়ার মাটি জাফর ভাইয়ের ঘাঁটি, জাফর ভাইয়ের ভয় নেই, রাজপথ ছাড়ি নাই।

জাফর আলমের ঘনিষ্ঠ একজন জানান, এমপি জাফর আলম এই প্রথম অস্ত্রধারী নিয়ে রাস্তায় নামেননি। অতীতে বহুবার জামায়াত-বিএনপিকে প্রতিরোধে নিজেও অস্ত্র হাতে নেমেছেন। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে মাঠের শক্তির জানান দিয়ে মনোয়ননপ্রত্যাশী বা বিরোধীদের বার্তা দিতে চাচ্ছেন তিনি। মূলত জামায়াত-বিএনপির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিরোধীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করাই তার উদ্দেশ্য।

এদিকে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি খুঁজে খুঁজে ভিডিও ফুটেজ ডিলেট করে দিচ্ছেন জাফর আলমের অনুসারীরা। ফুটেজ ভুলেও প্রকাশ পেলে তাদের পরিণাম ভালো হবে না বলেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। এ প্রসঙ্গে জানতে সংসদ সদস্য জাফর আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

তবে এমপির একান্ত সহকারী আমিনুল ইসলাম বলেন, সরকারি নিষেধ থাকার পরও জামায়াত চকরিয়াকে পরিকল্পিতভাবে অশান্ত করতে চিরিঙ্গা লামারপাড়ায় গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে। জানাজা শেষে তারা চকরিয়ায় ব্যাপক ভাঙচুরসহ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে—এমন গোপন সংবাদ ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। সেই অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। এমপির নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চকরিয়া পৌর শহরে অবস্থান করে।

নিহত ফোরকান আওয়ামী লীগের সমর্থক দাবি করে আমিনুল বলেন, জামায়াত পরিকল্পিতভাবে জল ঘোলা করার জন্য মিথ্যাচার করেছে। আমরাই নিহতের জানাজাসহ সব ধরনের কার্যক্রম করেছি। তার পরিবারকেও নগদ ১ লাখ টাকা সাহায্য করেছেন এমপি জাফর আলম। অথচ জামায়াতের কোনো ভূমিকা ছিল না।

অস্ত্রধারীদের সঙ্গে তার ও সংসদ সদস্যের ছবি প্রসঙ্গে চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, তার নেতৃত্বে গায়েবানা জানাজার দিন মহাসড়কে শান্তি মিছিল করা হয়। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন সংসদ সদস্য। তবে যে ছবিটির কথা বলা হচ্ছে, সে ছবি আর শান্তি মিছিলের ছবি এক নয়। অস্ত্রধারীদের বিষয়টি তিনি জানেন না।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, অস্ত্র হাতে বেলাল উদ্দীন পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। তবে বেলালের দাবি, হেলমেট পরা সশস্ত্র সেই ব্যক্তি তিনি নন। এমনকি ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম দাবি করেছেন, ‘আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কেউ সংঘর্ষে ছিলেন না। জামায়াত-বিএনপি এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।

চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা তাদের চিনতে পারিনি। তবে তাদের চিহ্নিত করতে চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত সময়ে চিহ্নিত করতে পারব। কারা গুলি করছে, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমপি জাফর আলমের নেতৃত্বে মিছিলের ভিডিও দেখেছি। ওই মিছিল থেকে গুলি হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

১৫ আগস্ট সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ফোরকানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনায় ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এসব ঘটনায় তিনটি মামলা হয়। বিশেষ ক্ষমতা আইন ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দুটি মামলা করেন চকরিয়া থানার এসআই মোহাম্মদ আল ফোরকান। অন্যদিকে হত্যা মামলা করেন নিহত ফোরকানুরের স্ত্রী নুরুচ্ছফা বেগম।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভোলায় নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল / এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা

যৌথবাহিনীর অভিযানে অনলাইন জুয়া চক্রের ২ সদস্য আটক

জেলেরা হেলমেট পরে মাছ ধরেন যেখানে

বিমানবাহিনীর আন্তঃঘাঁটি স্কোয়াশ প্রতিযোগিতা সমাপ্ত

স্পেনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

কারাগারে সন্তান জন্ম দিলেন হত্যা মামলার আসামি

সিলেটের সাদাপাথর লুটের ঘটনায় সিআইডির অনুসন্ধান শুরু

হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন ৬ সেপ্টেম্বর

ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জালালের বিরুদ্ধে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ

ডাকসু নির্বাচন / ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার দায়ে বাদ জুলিয়াস সিজার

১০

ধর্ষণসহ হত্যায় ফুফাতো ভাইয়ের যাবজ্জীবন

১১

কাজী নজরুলের কবিতা দেশের মুক্তিকামী মানুষকে সাহস যুগিয়েছে : তারেক রহমান

১২

‘রোহিতকে সরানোর জন্যই ব্রঙ্কো টেস্ট এনেছে বিসিসিআই’

১৩

অভিনেত্রী হিমুর আত্মহত্যা, প্রেমিক রাফির বিচার শুরু

১৪

ভারতে প্রয়াত ক্রিকেটারদের স্ত্রীরা পাবে অনুদান

১৫

রাজধানীতে একক ব্যবস্থায় বাস চলবে : প্রেস উইং

১৬

ভিনিকে বিক্রি করে দিতে বললেন রিয়াল কিংবদন্তি

১৭

নতুন বিচারপতিদের মধ্যে সংখ্যালঘু নেই, ঐক্য পরিষদের ক্ষোভ

১৮

বিসিবির হাতে বিপিএলের স্পট ফিক্সিং তদন্ত প্রতিবেদন

১৯

ফেসবুকের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন মাওলানা মামুনুল হক

২০
X