রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ০৮:০৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আইসিডিডিআর,বির গবেষণা

সিসার বিষে নীল ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু

সিসার বিষে নীল ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু

দেশের ৩৬ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু সিসার ক্ষতিকর বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত। যার মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী অন্তত ২ কোটি শিশু সিসার ক্ষতিকর প্রভাবে বেড়ে উঠেছে দুর্বল মেধা নিয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সিসার কোনো গ্রহণযোগ্য মাত্রা নেই, যদিও বাংলাদেশের শিশুদের শরীরে সিসার গড় পরিমাণ ৬৮ মাইক্রোগ্রাম। এমনকি দেশে প্রতি বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪ জনের মৃত্যু হয়, তার পেছনেও সিসার পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে সিসা দূষণ প্রতিরোধ: অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

এ সময় জানানো হয়, সিসা বিষাক্ত ভারী ধাতু, যা নীরবে লাখ লাখ মানুষের বিশেষ করে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে চলেছে। রক্তের মধ্যে সিসার কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) শিশুদের রক্তে প্রতি লিটারে ৩৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি সিসার উপস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মনে করে।

ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে সিসা দূষণে আক্রান্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানে চতুর্থ। যেখানে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা নিয়ে জীবনধারণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাজধানী ঢাকার বস্তি এলাকায় দুই বছরের কম বয়সী ৮৭ শতাংশ শিশুর রক্তে প্রতি লিটারে সিসার মাত্রা ৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি ছিল, যা তাদের শারীরিক বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতার প্রধান কারণ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইসিডিডিআর,বির হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজ ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. সারাহ স্যালওয়ে। তিনি বলেন, ‘সিসা দূষণ বাংলাদেশের একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা, যা প্রায়ই আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। বিশেষ করে দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্পের আশপাশের শিশুরা এর সবচেয়ে বড় শিকার।’

সিসা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে বলে জানান স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবং আইসিডিডিআর,বির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক স্টিভ লুবি। তিনি বলেন, ‘এর ফলে বুদ্ধিমত্তা ও শেখার ক্ষমতা কমে যায়, যা পরবর্তী প্রজন্মের ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলে। আমরা নিঃশ্বাসে যে বাতাস নিই, যে খাবার খাই, দূষিত মাটি বা ধূলিকণা স্পর্শ করি এবং এমনকি গর্ভাবস্থায় মায়ের প্লাসেন্টা (গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে তৈরি হওয়া একটি বিশেষ অঙ্গ, যা মা ও ভ্রূণের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে) থেকেও সিসা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।’

আইসিডিডিআর,বির প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ডা. মো. মাহবুবুর রহমান গত ১০ বছরের সিসা-সম্পর্কিত গবেষণার ফল তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সিসা দূষণের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে সিসা ও ব্যাটারি-সম্পর্কিত শিল্পকারখানা, সিসাযুক্ত রং এবং প্রসাধনী ও রান্নার পাত্রের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। হলুদে ভেজাল (লেড ক্রোমেট দিয়ে পালিশ করা) প্রতিরোধে বেশ সফলতা এসেছে। স্ট্যানফোর্ড ও আইসিডিডিআর,বির একটি দল অন্তঃসত্ত্বা নারীদের রক্তে সিসা দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে হলুদকে চিহ্নিত করার পর বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আইন প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফলে ২০১৯ সালে যেখানে ৪৭ শতাংশ হলুদের নমুনায় সিসা পাওয়া যেত, তা কমে ২০২১ সালে শূন্যের কাছাকাছি চলে আসে।

আইসিডিডিআর,বির সহকারী গবেষক ডা. জেসমিন সুলতানা ২০২২-২৪ সালের মধ্যে ঢাকায় পরিচালিত গবেষণার প্রাথমিক ফল তুলে ধরেন। এই গবেষণায় ২ থেকে ৪ বছর বয়সী ৫০০ জন শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রতিটি শিশুর রক্তেই সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে (মধ্যমমাত্রা: ৬৭ মাইক্রোগ্রাম/লিটার) এবং ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে সিডিসির উদ্বেগজনক মাত্রা ৩৫ মাইক্রোগ্রাম/লিটার-এর চেয়ে বেশি সিসা ছিল। এই গবেষণায় চিহ্নিত সিসা-নির্ভর শিল্প স্থাপনার ১ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের রক্তে সিসার মাত্রা ছিল ৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে বসবাসকারী শিশুদের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি। অন্য উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘরের ভেতরে ধূমপান, দূষিত ধূলিকণা, সিসাযুক্ত প্রসাধন সামগ্রী ও রান্নার পাত্র।

আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘সিসার বিষক্রিয়া নীরবে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কেড়ে নিচ্ছে। এটি তাদের মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশ ব্যাহত করে ও দেহে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি করে। তাই আমাদের এখনই এই সিসা নিঃসরণকারী ক্ষতিকর উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে, যাতে প্রতিটি শিশু সুস্থ ও বুদ্ধিমান হয়ে বেড়ে উঠতে পারে।’

আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা সিসা-নির্ভর শিল্প স্থাপনা যেমন—সিসা-এসিড ব্যাটারি বানানো বা রিসাইক্লিং করার কারখানা বা স্থাপনা, অথবা যেসব কারখানা বা স্থাপনায় সিসা গলানো বা পোড়ানো হয়, এগুলোর বিরুদ্ধে দ্রত ব্যবস্থা নেওয়ার তাগাদা দেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জোটগতভাবে প্রার্থী তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ গণতন্ত্র মঞ্চের

উর্দুভাষীদের স্থায়ী পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি আমিনুল হকের

কামাল মজুমদারের ছেলে শাহেদ আটক

বিটিসিএলের নতুন ৫ সেবা নিয়ে ব্রেকিং দিলেন ফয়েজ আহমদ

‘মানবাধিকার কমিশনের নামে অমানবিকতার চর্চা এদেশের মানুষ চায় না’

আলভারেজ নৈপুন্যে অ্যাথলেটিকোর মাঠে বিধ্বস্ত রিয়াল

বিইউবিটিতে বিএপিএস ন্যাশনাল প্রোগ্রামিং ক্যাম্প সম্পন্ন

প্রিমিয়ার লিগে সিটির বড় জয়, চেলসি-লিভারপুলের হার

ময়লা ছিটিয়ে পরিষ্কার অভিযান, ভিডিও ভাইরাল

নেছারাবাদে স্বেচ্ছাসেবক দলের আয়োজনে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

১০

ভ্যাপসা গরমসহ ১২০ ঘণ্টার পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অফিস

১১

শিক্ষার মানোন্নয়নে ইউসিটিসির সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত

১২

সৌদির কাছে পরমাণু অস্ত্র বিক্রি করছে পাকিস্তান?

১৩

বরিশাল বিভাগে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত, হটস্পট বরগুনা

১৪

তিন উপজেলার ৪৬ পূজামণ্ডপে খালেদা জিয়ার অনুদান

১৫

ভারতের কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া বাংলাদেশের

১৬

মনিরামপুরে বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপন

১৭

নিজেদেরই এক অঙ্গরাজ্যে সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প

১৮

এস আলমের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই : ফখরুল 

১৯

কত পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে, জানাল ইসি

২০
X