ভূমি ও কৃষি সংস্কারে আশু, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে করণীয়সমূহ চিহ্নিত করে সরকারের কাছে তুলে ধরার জন্য একটি পৃথক সংস্কার কমিশন এবং গুরুত্ব বিবেচনায় ভূমি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য সার্বক্ষণিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য একজন উপদেষ্টা নিয়োগের দাবি করেছে ভূমি, মানবাধিকার ও পরিবেশ নিয়ে কর্মরত ১১টি সংগঠন।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর ) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘মৌলিক ভূমি ও কৃষি ব্যবস্থাপনা সংস্কারের জন্য অবিলম্বে আলাদা কমিশন নিয়োগের দাবি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ দাবি তোলেন। মূল বক্তব্য পাঠ করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।
শামসুল হুদা বলেন, জিডিপিতে অবদানের ক্ষেত্রে সেবা ও শিল্প খাতের পর কৃষি (ফসল, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও বন) তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাত হলেও বিপুল জনগোষ্ঠীর জীবন, জীবিকা ও কর্মসংস্থানের প্রশ্নে কৃষির গুরুত্ব সর্বাধিক। দেশে কৃষি শ্রমশক্তির ৫৮ শতাংশই নারী এবং মোট নারী শ্রমশক্তির সিংহভাগই (৭৪ শতাংশ ) কৃষিতে নিয়োজিত থাকার পরও নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে ভূমি ও কৃষিতে তাদের অভিগম্যতা ও অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে কখনোই গুরুত্ব পায়নি। দেশের আদিবাসীরা তাদের ভূমি অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তার অধিকার সুরক্ষিত নয়।
তিনি বলেন, প্রকৃত কৃষকরা কষ্টার্জিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ফসল নষ্ট হয়।
এএলআরডি, নিজেরা করি, ব্লাস্ট, বেলা, বারসিক, কাপেং ফাউন্ডেশন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, ইনসিডিন-বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কৃষি ও ভূমিকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়ে সংস্কারের জন্য ১০ দফা দাবি জানান।
দাবিগুলো হলো :
১. ভূমি ও কৃষির জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিতে একটি সংস্কার কমিশন গঠন
২. অন্তর্বর্তী সরকারে ভূমি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য সার্বক্ষণিক উপদেষ্টা নিয়োগ
৩. ভূমি ও বনে আদিবাসীদের প্রথাগত অধিকার ও নিজস্ব চাষাবাদের স্বীকৃতি এবং জুমচাষী ও অন্যান্য আদিবাসী কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান
৪. সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশনকে কার্যকর করা
৫. আদিবাসীদের বেহাত হওয়া জমি পুনরুদ্ধারে অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৭ ধারার কার্যকর বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রদান, ভূমিহীন ব্যক্তিদের খাসজমি বন্দোবস্ত ও দখলীস্বত্বের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সহজ শর্তে কৃষি ঋণসহ কৃষি উপকরণ সহায়তা ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদানের নিয়মিত কার্যক্রম গ্রহণ
৬. ভূমিহীন-প্রান্তিক নারী কৃষককে খাসজমি বন্দোবস্তসহ কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি, আলাদা কৃষিকার্ড, কৃষি পরিষেবা ও ঋণে নিঃশর্ত অভিগম্যতা নিশ্চিত করা
৭. কৃষিতে যুব ও তরুণদের উৎসাহিত করতে বিশেষ কর্মসূচি, প্রণোদনা ও তৎপরতা বাড়ানো
৮. ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসসহ ভূমি ব্যবস্থাপনা কাঠামোর সকল অফিস ও কার্যক্রমে বিদ্যমান দুর্নীতি, হয়রানী ও ভোগান্তি দূর করার জন্য মনিটরিং ও জবাবদিহিতা জোরদার করা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ও দায়িত্বে অবহেলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা
৯. সংখ্যালঘুদের ভূমি-নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তার সুরক্ষা দিতে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা এবং একটি স্থায়ী সংখ্যালঘু কমিশন প্রতিষ্ঠা করা এবং
১০. জনমত ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কৃষিজমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন অবিলম্বে চূড়ান্ত কর।
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বারসিকের পরিচালক ও গবেষক পাভেল পার্থ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, ব্লাস্টের পরিচালক অ্যাডভোকেট বরকত আলী, কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি উজ্জ্বল আজিম, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের আইনজীবী নাহিদ শামস, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক নিরালা মার্ডি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির আইনজীবী ব্যারিস্টার রুমানা শারমিন।
মন্তব্য করুন