টাকা ছাড়া কোনো কাজই করেন না এ ভূমি কর্মকর্তা
কুষ্টিয়া ভেড়ামারার মোকাররমপুর ইউনিয়নের ভূমি অফিসের তহশিলদার শরিফুল ইসলামের ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ঠ ভুক্তভোগীরা। ইচ্ছেমতো সময় নিয়ে ও অতিরিক্ত টাকা ছাড়া তিনি কোনো কাজই করেন না বলে অভিযোগ করেছেন সেবা গ্রহীতারা। এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগপত্র দিয়েও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভূমি কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, দৌলতপুর উপজেলার বাসিন্দা তহশিলদার শরিফুল ইসলাম। দৌলতপুর ছাড়াও ভেড়ামারার বিলশুকা ও কুষ্টিয়ার মজমপুরে তার বাড়ি রয়েছে। তিনি ম্যানেজ করে চলেন তাই অভিযোগ উঠলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।  বৃহস্পতিবার (৯ মে) সরেজমিনে দেখা গেছে, সেবা নিতে আসা অধিকাংশ ব্যক্তি এর আগেও একাধিকবার এসেছেন। তহশিলদার শরিফুল ইসলাম সেদিনও তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন। সাংবাদিক দেখে কয়েকজনের কাজ করে দিলেও কালবেলাসহ উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি ছবি তুলে রাখেন। সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, আমি লিখতে পারি, লিখাতেও পারি। স্থানীয়রা জানান, শরিফুলের টার্গেট অসহায় ও দরিদ্র কৃষক। তার নিকট কেউ কাজের জন্য গেলে নানা অজুহাতে দিনের পর দিন ঘুরিয়ে বাড়িতে লোক দিয়ে কাজ করাবে বলে অতিরিক্ত টাকা নেয়। যা নেয় তার অর্ধেকেরও কম রশীদ করে। ৩০০ টাকার কমে একটি পর্চাও মেলে না। সে এখানে ৬ বছর ধরে আছে। কিছু বললেই বলে উপরে লোক আছে, কিচ্ছু হবে না। খেমিরদিয়ার থেকে আসা মালেকা খাতুন বলেন, গত তিন দিন থেকে এখানে ঘুরছি। এখনো কোনো কাজ হয়নি। আরেক ভুক্তভোগী সামিরুন বেগম বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কাজের জন্য টাকা দিয়েছি। এখনো আমার কোনো কাজ হয়নি। বাহাদুরপুরের কৃষক জমিন মণ্ডল বলেন, আমি তহশিলদারকে (শরিফুল) জমি খারিজের জন্য ১০ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছি। আর সে দাখিলা কেটেছে ৭ হাজার ৩০০ টাকার। বাদ বাকি টাকা তার পকেটে ভরেছে।  বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি থাকার কথা স্বীকার করলেও শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি কোনো অনিয়ম দুর্নীতি করি না। একটি ছেলে দিয়ে বাড়িতে কাজ করাই। তাকেও আমি বেতন দেই। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১১ মে, ২০২৪

ঘুষের টাকা কম পড়ায় সেবাগ্রহীতাকে বের করে দিলেন ভূমি অফিসার
ঘুষের টাকা কম পড়ায় সেবাগ্রহীতাকে অফিস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। এ ঘটনায় ঘুষসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে ওই ভূমি কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলমের বরাবর সোনামুখী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামের মৃত তাহের উদ্দীন মন্ডলের ছেলে মো. মানিক হোসেন ঘুষসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অসদাচরণের লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, বেশ কিছু দিন আগে ভুক্তভোগী মো. মানিক হোসেন তার একটি খারিজ বাতিলের জন্য আবেদন করতে গেলে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান তার কাছে নগদ ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ওই ভুক্তভোগী বাধ্য হয়ে তাকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দেয়। এ সময় ভূমি কর্মকর্তা ভুক্তিভুগীর কাছে বাকি ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় ভূমি কর্মকর্তা অফিস থেকে ভুক্তভোগীকে বের করে দেয় ও বলে, আমি আপনার প্রতিবেদন (খারিজ) টাকা ছাড়া পাস করে দেব না। আপনার যা ক্ষমতা আছে করেন। জানা যায়, উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান যোগদানের পর থেকে সেবা নিতে আসা লোকজনের কাছ থেকে নামজারি, দাখিলাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয় ও ভুক্তভোগীর মতো সাধারণ মানুষের সঙ্গে এরকম ঘুষ বাণিজ্য এবং খারাপ আচরণ করে। ভুক্তভোগী মো. মানিক হোসেন বলেন, আমি গত ১৭ জানুয়ারি একটি খারিজ বাতিলের জন্য সোনামুখী ইউনিয়ন চক্রপাড়া ভূমি অফিসে আবেদন করি। আবেদনের কিছু দিন পর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান আমার মুঠফোনে কল করে বলেন, খারিজ বাতিল করতে হলে আমাকে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি বাধ্য হয়ে ৫ হাজার টাকা দিই। তিনি বাকি টাকা দাবি করলে আমি তার কাছে মিনতি করি কাজটি করে দেওয়ার জন্য। পরে বাকি টাকা দিতে না পারায় আমাকে অফিস থেকে বের করে দেয় এবং বলেন যা ক্ষমতা আছে করেন। আমি নিরুপায় হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। অভিযুক্ত সোনামুখী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, মো. মানিক হোসেন খারিজ বাতিলের আবেদন করেছেন। আমি তার কাগজপত্র দেখে সঠিক প্রতিবেদন ভূমি কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা মিথ্যা। আমি কোনো টাকা-পয়সা নিইনি বা কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করিনি। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানা বলেন, সোনামুখী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে ঘুষসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে কারণে তাকে শোকজ করা হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাব সন্তোষজন না হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম বলেন, মো. মানিক হোসেনের কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগে সোনামুখী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদনের জন্য ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি এবং চাপ সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছে। অভিযোগ তদন্তের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।  অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
০৪ মে, ২০২৪

পাঁচ জেলার ভূমি জরিপ ৬১ জেলার টাকায়!
ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপের জন্য ২০২০ সালে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করে ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদপ্তর। এরপর সাড়ে তিন বছরেও শুরু হয়নি সেই কাজ। এ কারণে ‘ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য পাঠানো হয়। তবে সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই প্রকল্প গ্রহণ এবং হতাশাজনক অগ্রগতির কারণে গত ডিসেম্বরে প্রকল্পটি সমাপ্ত ঘোষণা করে সম্পূর্ণ নতুন প্রস্তাব পাঠাতে বলে পরিকল্পনা কমিশন। কিন্তু নতুন প্রকল্প গ্রহণের পরিবর্তে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার আবদার করে ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদপ্তর। পরবর্তী সময়ে সংশোধনী প্রস্তাব যাচাই-বাছাই শুরু করে পরিকল্পনা কমিশন। এতে দেখা যায়, মূল প্রকল্পে ৬১টি জেলায় জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও সংশোধিত প্রস্তাবের আওতায় জেলার সংখ্যা মাত্র পাঁচ। কিন্তু মূল প্রকল্পে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ ছিল, নতুন প্রস্তাবে চাওয়া হয়েছে প্রায় পুরোটাই। অর্থাৎ সংশোধিত প্রস্তাবে জরিপ কাজের পরিধি অনেক কমে গেলেও টাকার পরিমাণ না কমানোর ‘মামাবাড়ির আবদার’ করেছে ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদপ্তর। ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদপ্তরের সংশোধনী প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মূল প্রকল্পটি ১ হাজার ২১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছর মেয়াদে ২০২০ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। মূল প্রকল্পে ৬১ জেলার ৪৭০টি উপজেলায় ২ লাখ ৬০ হাজার ৩৬৯টি জিওডেটিক কন্ট্রোল পিলার স্থাপনসহ পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার ১৪টি উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত ছিল। সংশোধনী প্রস্তাবে পিলার স্থাপন বাদ দিয়ে নতুন করে ১৮টি উপজেলাসহ পাঁচটি জেলার ৩২ উপজেলা প্রকল্প এলাকা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। এতে ৫৬ জেলার ৪৩৮টি উপজেলা বাদ গেলেও ব্যয় কমানো হয়েছে মাত্র ১৭ কোটি ৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রায় একই টাকায় ৬১ জেলার পরিবর্তে পাঁচ জেলার জরিপ কাজ হবে। প্রকল্প এলাকার পরিধি কমলেও সে তুলনায় ব্যয় না কমায় প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদপ্তরের যুক্তি, প্রকল্প এলাকার পরিধি কমলেও কাজের পরিধি বেড়েছে। আগে ৬১ জেলায় ৪৭০টি উপজেলায় পিলার স্থাপন এবং ১৪টি উপজেলায় জরিপ কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পিলার স্থাপন বাদ দিয়ে আগের ১৪টি উপজেলাসহ নতুন করে ১৮টি যুক্ত করে পাঁচ জেলার ৩২টি উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল জরিপ কাজ করা হবে। অনুমোদিত প্রকল্প এবং সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয়ের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১৯৮টি খাতের ক্রয় প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধনী প্রস্তাবে এসব খাতের মধ্যে আসবাপত্র এবং কম্পিউটার সামগ্রী কিনতে আকশচুম্বি ব্যয় দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণেও দ্বিগুণ অর্থ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রচার ও বিজ্ঞাপন, আপ্যায়ন এবং বিদেশ প্রশিক্ষণের নামেও অত্যধিক ব্যয় ধরা হয়েছে। ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মূল ডিপিপিতে প্রচার ও বিজ্ঞাপন ব্যয় ১০ লাখ টাকা ধরা হলেও সংশোধনীতে ৮৪ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ এই এক খাতেই ৭৪ লাখ টাকা বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া মূল ডিপিপিতে চারজনের আপ্যায়ন ভাতা ছিল ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। কিন্তু সংশোধনী প্রস্তাবে একজনের আপ্যায়ন ভাতা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ আরডিপিপিতে তিনজন কমলেও ব্যয় কমেছে মাত্র ৩৬ হাজার টাকা। সংশোধনী প্রস্তাবে এরিয়াল ফটোগ্রাফিক ওয়ার্ক স্টেশন খাতে খরচ ধরা হয়েছে ৩৫ লাখ, যা আগে ছিল ৬ লাখ টাকা। কোর রাউটার প্রতিপিস ৭০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে, অথচ মূল ডিপিপিতে প্রতিটির দাম ধরা ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, কোর সুইচ প্রতিটি ২০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে, যা মূল ডিপিপিতে ছিল প্রতিটি ৬৭ হাজার টাকা। কোর ফায়ারওয়াল প্রতিটি ৯০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে, যা আগে ছিল সাড়ে ১২ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রতিটি জিপিএস সিস্টেমের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫ লাখ টাকা, অথচ মূল ডিপিপিতে প্রতিটির দাম ধরা ছিল ৫৫ লাখ টাকা, সংশোধনীতে প্রতিসেট টোটাল স্টেশন ও অন্যান্য যন্ত্রণাংশ খাতে খরচ ১৫ লাখ টাকা, আগে ছিল প্রতিসেট ৯ লাখ টাকা। মূল ডিপিপি যে ডিএলএসএস খাতে খরচ ধরা হয়েছিল ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, সেই একই খাতে সংশোধনী প্রস্তাবে ধরা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ওয়ার্ক স্টেশনের জন্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি একেকটি কম্পিউটারের দাম ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ লাখ টাকা, অথচ মূল ডিপিপিতে প্রতিটির দাম ধরা ছিল ১ লাখ ৬১ হাজার টাকা। প্রতিটি সাধারণ কম্পিউটারের দাম ধরা হয়েছে ১ লাখ ২০ টাকা, মুল ডিপিপিতে ছিল ৮০ হাজার টাকা। ল্যাপটপের দাম ধরা হয়েছে প্রতিটি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। মূল ডিপিপিতে না থাকলেও একেকটি ১ লাখ টাকা ধরে ৬টি মিনি ট্যাব কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল ডিপিপি যে সেক্রেটারিয়াল টেবিলের দাম ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা, সংশোধনীতে তার দাম ধরা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রতিটি হাফ সেক্রেটারিয়াল টেবিলের দাম ধরা হয়েছে ১ লাখ টাকা। ২০ হাজার টাকার প্রতিটি এক্সিকিউটিভ টেবিল ধরা হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। ১২ হাজার টাকার এক্সিকিউটিভ চেয়ার ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার টাকা। ২ হাজার টাকার সাধারণ টেবিলের দাম ২০ হাজার টাকা এবং ৮ হাজার টাকার সাধারণ চেয়ারের দাম ধরা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। মূল ডিপিপির ৩০ হাজার টাকার লকারের দাম নতুন প্রস্তাবে ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। একইভাবে ১০ হাজার টাকার প্রিন্টার টেবিলের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। জানা গেছে, ভূমি অধিদপ্তরের সংশোধনী প্রস্তাবের বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাবের বিষয়টি পরিকল্পনা কমিশনের পর্যবেক্ষণেও উঠে এসেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংশোধনী প্রস্তাবটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় এসব বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া নিজস্ব জনবলের পরিবর্তে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জরিপ কাজের যৌক্তিকতা এবং কাজ কমলেও বিভিন্ন অঙ্গের পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘আলোচ্য প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে অফিস ভাড়া, পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট, আসবাবপত্র, কম্পিউটার খাতগুলোর ব্যয় অত্যাধিক প্রতীয়মান হয়। এ সব অঙ্গগুলোর ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে হ্রাস করা যেতে পারে। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকা কমানো হলেও আসবাবপত্রের সংখ্যা ও ব্যয় বেড়েছে। এসব অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় আনুপাতিক হারে কমানো প্রয়োজন।’ জানতে চাওয়া হলে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. ছায়েদুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘ভূমি জরিপ প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করে সংশোধনী প্রস্তাব করেছে। এখনো এটি যাচাই-বাছাই পর্যায়ে রয়েছে।’ অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দাম যাচাই করার কাজ আমাদের নয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। তার পরও যাচাই-বাছাই করে কোনো প্রস্তাব অতিরিক্ত প্রতীয়মান হলে বা কোনো অসংগতি থাকলে সংশোধন করতে বলা হবে।’ প্রকল্পটির পরিচালক হিসেবে সম্প্রতি দায়িত্ব পেয়েছেন মোহম্মদ আশরাফুল ইসলাম। প্রকল্প এলাকা পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মূল ডিপিপির তুলনায় এলাকা কমলেও কাজের পরিধি কমেনি। বরং জরিপ কাজের পরিধি বেড়েছে। এ ছাড়া এখন সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার জানা মতে, বাজার দর অনুযায়ী ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব এখনো অনুমোদন হয়নি। আরও কয়েকটি মিটিং হবে। সেসব মিটিংয়ে অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে যাচাই-বাছাই করে যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা হবে।’
২৯ এপ্রিল, ২০২৪

২৩৮ জনের বড় নিয়োগ দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানটি তাদের রাজস্ব খাতভুক্ত শূন্য পদে ১৪তম গ্রেডে ২৩৮ জনকে নিয়োগ দেবে। আগ্রহীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন আগামী ৩০ মে পর্যন্ত। প্রতিষ্ঠানের নাম : ভূমি মন্ত্রণালয় পদ ও জনবল : একটি ও ২৩৮ জন প্রার্থীর ধরন : নারী-পুরুষ (উভয়) আবেদন শুরুর তারিখ : ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ আবেদনের শেষ তারিখ : ৩০ মে, ২০২৪ পদের নাম : সার্ভেয়ার যোগ্যতা : স্বীকৃত কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন সার্ভে ইনস্টিটিউট থেকে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং (সার্ভেয়িং) পাস। বেতন স্কেল : ১০,২০০–২৪,৬৮০ টাকা (গ্রেড–১৪) যেসব জেলার প্রার্থীর আবেদনের প্রয়োজন নেই : মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, টাঙ্গাইল, চাঁদপুর, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, কুষ্টিয়া ও পটুয়াখালী। তবে এতিম ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে সব জেলার প্রার্থী আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের বয়সসীমা : ১ মে ২০১৪ তারিখে সাধারণ প্রার্থী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি–নাতনিদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৮ থেকে ৩০ বছর। বীর মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৮ থেকে ৩২ বছর। যেভাবে আবেদন করবেন : আগ্রহীরা অনলাইনে আবেদন করতে ও বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তিটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ভূমি অফিসে চায়ের দাম ৫শ টাকা!
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রেজাউল করিমের ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অভিযুক্তের দাবি, চা খাওয়ার জন্য তাকে এ টাকা দেওয়া হয়।  জানা গেছে, গত রোববার (২১ এপ্রিল) রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড়-কাশিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এক ব্যক্তি ১০ টাকা খাজনা দিতে যান। এ সময় ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা নেন সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্মকর্তা রেজাউল করিম। টাকা লেনদেনের এ ভিডিও নিমিষেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এর আগে ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ঐ কর্মকর্তার টাকা লেনদেনের আরও একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। এ বিষয়ে রেজাউল করিম বলেন, ১০ টাকা খাজনা বড় বিষয় নয়। তিনি আমাকে ৫শ টাকা চা খেতে দিয়েছেন। জমি মালিকদের মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর থাকে না, তাই তারা আমাকে টাকা দেয়। আমি ক্যাশ পেমেন্ট করে থাকি। ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ঐ ভূমি কর্মকর্তা ভদেশ্বরী মৌজার ১৩৪ নম্বর হোল্ডিং এর ৫২৫/১ খতিয়ানভুক্ত ২০ একর পরিত্যক্ত সম্পত্তির ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করে সরকারি স্বার্থের ক্ষতি সাধন করেছেন। বিষয়টি তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইন্দ্রজিৎ সাহা ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট ৪৯৫ নম্বর স্মারকে ভূমি কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিবুল হাসান বলেন, ভিডিও ভাইরালের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৩ এপ্রিল, ২০২৪

ভূমি কর্মকর্তাকে বেধড়ক পেটালেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা, অতঃপর...
যশোরের মনিরামপুরে ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে উপজেলা বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।  গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, মনিরামপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য হোগলাডাঙ্গা গ্রামের মাহাবুর রহমান (৪০) ও আসাদুজ্জামান আসাদ (৩৫)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মনিরামপুর থানার ওসি এবিএম মেহেদী মাসুদ।  এর আগে সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার হোগলাডাঙ্গা বাজারে সরকারি খাসজমির পাশে ব্যক্তিমালিকানা জমি পরিমাপ নিয়ে হরিদাসকাটি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনকে মারধর করা হয়। ঘটনার রাতে মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহার অনুযায়ী, হরিদাসকাটি ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন মোশাররফ হোসেন। সোমবার দুপুরে হোগলাডাঙ্গা বাজারে জনৈক শামিমের মুদি দোকানের সামনে সরকারি খাসজমি (হাটের জমি) সার্ভেয়ার দ্বারা পরিমাপ করার সময় মোশাররফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মাহাবুর, আসাদ ও আব্দুল জলিল সরকারি কাজে বাধা প্রদান করে। সরকারি কাজে বাধা দিতে নিষেধ করায় মোশাররফ হোসেনকে মারধর করা হয়।  সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী হাসান বলেন, হরিদাসকাটি ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনকে মারধরের ঘটনার ৩ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করা হয়েছে। মনিরামপুর থানার ওসি মেহেদী মাসুদ বলেন, নায়েব মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
২৩ এপ্রিল, ২০২৪

যশোরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বিরুদ্ধে ভূমি কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ
যশোরের মনিরামপুরে এক ভূমি কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে মাহাবুর রহমান নামে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মাহাবুর রহমান উপজেলার হোগলাডাঙ্গা গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে ও মনিরামপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য। সরকারি খাস জমির পাশে ব্যক্তিমালিকানা জমি পরিমাপ নিয়ে ওই ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়। সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার হোগলাডাঙ্গা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, হরিদাসকাটি ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গা বাজারে সরকারি খাসজমি আছে। সম্প্রতি বাজারের ইজারা হয়েছে। সরকারি জমির পাশে ব্যক্তিমালিকানা জমি রয়েছে। কয়েক দিন আগে আমি সরেজমিন ঘুরে এসি ল্যান্ডের কাছে জমির পরিমাণ উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছি।  তিনি বলেন, হামলাকারীদের অভিযোগ, আমি ব্যক্তিমালিকানা জমি সরকারি জমি দেখিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছি। এই অভিযোগে দুপুরে হোগলাডাঙ্গা বাজারে স্থানীয় মাহাবুর ও আসাদসহ তিন থেকে চারজন আমাকে কিলঘুষি মেরেছে। একপর্যায়ে তারা আমার মোটরসাইকেলে থাকা হেলমেট নিয়ে মাথায় আঘাত করে আমাকে রক্তাক্ত জখম করে। ঘটনাস্থলে তাদের সঙ্গে আরও ২০/২৫ জন ছিলেন। বর্তমান আমি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী হাসান বলেন, খবর পেয়ে আহত নায়েবকে উদ্ধার করে মনিরামপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। মনিরামপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অরবিন্দু হাজরা বলেন, মাহাবুর রহমান উপজেলা কমিটির সদস্য। হরিদাসকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর কবীর লিটন বলেন, জমি মাপামাপি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের বাইরে দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। সরকারি একজন কর্মকর্তাকে মারধর করাটা অন্যায় হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাহাবুর রহমান বলেন, জমির পরিমাপ নিয়ে জল্লিল গাজীদের সঙ্গে জটিলতা সৃষ্টি হয়। সেখান এলাকার গণমান্য ব্যক্তি হিসেবে গিয়েছিলাম। আমি নায়েবকে মারধর করিনি, বরং ঠেকানোর চেষ্টা করেছি। সম্প্রতি আমি দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছি। এই জন্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসা করে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তন্ময় বিশ্বাস বলেন, নায়েব হাসপাতালে ভর্তি আছেন। মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৩ এপ্রিল, ২০২৪

ভূমি ব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি দূর করুন
(গতকালের পর) এবার বলি যৌথ খতিয়ানের আরেকটি সমস্যার কথা, যাতে খতিয়ানের সঙ্গে বাস্তবতার চিত্র ভিন্ন হওয়ায় ভোগান্তির কারণ সৃষ্টি করে ভূমি ব্যবহারকারী মালিকদের মধ্যে। ধরা যাক, কোনো একটা যৌথ খতিয়ানে মালিকরা ক, খ, গ, ঘ, ঙ এবং তাদের অংশ যথাক্রমে ০.৬৯৫০, ০.০২২৫, ০.০২২৫, ০.১৩০০, ০.১৩০০। এই খতিয়ানে তিনটি প্লটে জমির পরিমাণ ৭৫ শতক, ৫ শতক ও ২৮ শতক এবং মোট জমি ১০৮ শতক। কাজেই তারা তাদের অংশ অনুযায়ী প্রাপ্য হলেন ক=৭৫ শতক, খ= ২.৫ শতক, গ=২.৫ শতক, ঘ=১৪ শতক এবং ঙ=১৪ শতক। বাস্তবে প্রথম প্লটের ৭৫ শতক ক-এর দখলে। দ্বিতীয় প্লটের ৫ শতক খ ও গ-এর দখলে। আর তৃতীয় প্লটের ২৮ শতক ঘ ও ঙ-এর দখলে। তারা মৌখিক বণ্টনমতে এভাবেই শান্তিপূর্ণ ভোগদখল করছিল। কিন্তু গন্ডগোল বাধায় প্রচলিত বিধান। বলাবাহুল্য, এ বিধান প্রচলিত ছিল আমি যখন এসিল্যান্ড ছিলাম তখনো। অর্থাৎ এ মালিকদের প্রত্যেকের আইনগত হিস্যা প্রতিটি প্লটে (মানে তিনটি প্লটেই), শুধু ভোগকৃত একটি প্লটে নয়। কিন্তু এ বিধান বা প্রচলনটি মালিকদের স্বার্থের পরিপন্থি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কীভাবে? বাস্তব অসুবিধার কথাটা বলি এখন—ওই বিধান অনুযায়ী মালিক ঘ কিংবা ঙ তার হিস্যামতে তিনটি প্লট হতে পাবে (৭৫×০.১৩০০+৫×০.১৩০০+২৮×০.১৩০০)= ৯.৭৫+০.৬৫+ ৩.৬৪=১৪.০৪ অর্থাৎ ১৪ শতক। তার মানে খতিয়ান দৃষ্টি তাদের স্বত্ব বিদ্যমান তিনটি প্লটেই থাকে। কিন্তু বাস্তবে ভোগদখল করে মাত্র একটি প্লটে। সুতরাং বাস্তবটাই তার জন্য সুবিধাজনক। আর এই সুবিধার কারণে মালিক ঘ কিংবা ঙ নিজ প্রয়োজনে যদি জমি বিক্রি করতে চায়, তবে শুধু দখলকৃত একটি প্লট থেকে তার প্রাপ্য ১৪ শতক জমি বিক্রি করতে পারবে না। ওই একটিমাত্র প্লটের দাগ নম্বর দিয়ে ১৪ শতকের দলিল করে দিলেও নতুন মালিক নামজারি করার সময় আইনত নামজারি পাবেন ওই প্লট থেকে মাত্র ৩.৬৪ শতক জমির। ফলে তিনি ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ভূমি অফিসে এখন এটাই প্রচলিত প্র্যাকটিস। কিন্তু নামজারির সময় যখন শুনানি হয়, তখন বাস্তব দখলের বিষয়টি যদি সহ-অংশীদাররা স্বীকার করে মেনে নেয়, তবে সব প্লটের পরিবর্তে প্রাপ্য অংশের দখলমতে এক বা একাধিক প্লটে রেখে দিয়েই এসিল্যান্ড নামজারির চূড়ান্ত আদেশ দিতে পারে। এ বাস্তব দখলের বিষয়টি Quasi judicial matter হিসেবে শুনানিতে বিবেচনায় নিয়ে এসিল্যান্ড তা করার ক্ষমতা রাখে। অথচ সেই প্র্যাকটিস কেউ করে না। কাজেই এ সমস্যা দূর করার জন্য বাস্তব দখলকে বিবেচনায় নিয়ে যৌথ খতিয়ানের স্বত্ব বিক্রির দলিল সম্পাদন ও নামজারি চূড়ান্ত করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করা দরকার। আরেকটি শেষ পর্যবেক্ষণের কথা বলি। সেটা হলো, অর্পিত সম্পত্তি ট্রাইব্যুনাল বা আপিল ট্রাইব্যুনাল হতে রায় পেলেও হিন্দু মালিকদের অনুকূলে ওই রায়ের ভিত্তিতে নামজারি করে দিতে মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তারা এখনো খুব গড়িমসি করে। এসিল্যান্ডরা জেলা প্রশাসকের লিখিত অনুমতি ছাড়া আবেদনই গ্রহণ করতে চায় না। এ সমস্যাটির দিকেও ভূমি মন্ত্রণালয় তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া দরকার। সুতরাং ওপরের আলোচনা থেকে জনস্বার্থে নিম্নবর্ণিত সুপারিশমালা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে: (১) অনলাইনে খাজনা নেওয়ার জন্য সব ভূমিমালিকের নাম আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্ট খুলে ‘কমপ্রিহেনসিভ ডাটাবেজ’ তৈরি দ্রুত সম্পন্ন করা দরকার। এতে আগে পরিশোধিত খাজনার তথ্য সম্পৃক্ত করে হালনাগাদ শুদ্ধ হিসাব সঠিকভাবে রাখা দরকার। (২) যৌথ খতিয়ানের কোনো মালিক যেন শুধু তার অংশের জমির জন্য আংশিক খাজনা প্রদান করতে পারে, সেই সুযোগ থাকা দরকার। (৩) প্রবাসী শ্রমিকরা যদি বিদেশ থেকে তাদের নিজের জমির খাজনা অনলাইনে দিতে চায়, তবে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা দরকার। (৪) অনলাইনে নামজারি করার সময় যৌথ খতিয়ানের কোনো মালিক নিঃস্বত্ববান হলে কিংবা মালিকানায় অংশ হ্রাস বা বৃদ্ধি পেলে তার প্রতিফলন আগের খতিয়ানে কার্যকর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ডরা যেন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। (৫) নামজারির সময় প্রতিটি প্লটের শ্রেণি সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হওয়া দরকার। (৬) দলিল রেজিস্ট্রি বা নামজারির সময় জমির খাজনা কোন সাল পর্যন্ত পরিশোধিত, তার তথ্যও সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা দরকার এবং খাজনা আদায়ের সময় সঠিক হিসাব ভূমিমালিককে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার। (৭) যৌথ মালিকানার খতিয়ানগুলোকে প্রচলিত বিধানের পরিবর্তে বাস্তব দখলের ভিত্তিতে রেকর্ড সংশোধন করে শুদ্ধ করার একটা উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এজন্য একটা পরিপত্র জারি করে নির্দেশনা দেওয়া দরকার। আর যতদূর সম্ভব খারিজ খতিয়ান সৃজন করে তা হালনাগাদ করার একটা ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এতে ইউনিক ডাটাবেজ তৈরি হবে এবং গণমুখী ব্যবস্থাপনায় ভূমি মালিকরা উপকৃত হবেন। এ ছাড়া খাজনার টাকা হিসাব করতেও সুবিধা হবে। (৮) যারা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত আছে, তাদের আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ পরিচালনায় দক্ষ করতে হবে এবং ভূমির ডাটাবেজ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষ করে তুলতে হবে। (৯) অর্পিত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা হিন্দুদের জন্য সহজ ও সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং ট্রাইব্যুনালের রায় কার্যকর করে নামজারি দ্রুত করার জন্য যাতে এসিল্যান্ড ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেজন্য নির্দেশনা প্রদান করা দরকার। (১০) জরিপের সময় কোনো ভূমিমালিকের নামের বানান কিংবা সারবত্তাহীন করণিক ভুল সংশোধনের ক্ষমতা এসিল্যান্ডকে প্রদান করে কোনো নির্দেশনা প্রদান করা না হয়ে থাকলে, তা অবিলম্বে পরিপত্র জারি করা দরকার। লেখক: প্রাক্তন সিনিয়র সচিব, কবি ও গবেষক
২০ এপ্রিল, ২০২৪

ভূমি ব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি দূর করুন
গত ২৩ মার্চ ‘দৈনিক কালবেলা’য় আমার লেখা ‘ভূমি ব্যবস্থাপনায় হয়রানি এবং কিছু সুপারিশ’ প্রকাশিত হয়েছিল। আবার কিছুদিন আগে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া যৎসামান্য জমির খাজনা দিতে গিয়ে অবগত হলাম জনসাধারণের আরও কিছু ভোগান্তির বিষয়। বলাবাহুল্য, ১৯৮২ সালে উপজেলা ভূমি অফিসের দায়িত্ব ছিল উপজেলা রাজস্ব কর্মকর্তার (ইউআরও) কাছে। পরে এ দায়িত্ব এসি(ল্যান্ড)দের ওপর ন্যস্ত করা হয় ১৯৮৮ সালের মধ্যভাগে। আর আমার ব্যাচ (বিসিএস ’৮৪) দিয়েই ভূমি প্রশাসনে এ সংস্কারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আমি খুবই মন খারাপ করেছিলাম ম্যাজিস্ট্রেসি বাদ দিয়ে আগের ইউআরও অফিসে আমাকে পদায়ন করায়। কিন্তু সরকারি আদেশ মানতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে যোগদান করেই আমি আবেদন করেছিলাম ভূমি প্রশাসন থেকে প্রত্যাহার করার জন্য। নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসিল্যান্ড, আরডিসি এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পদে ৯ বছর ভূমি প্রশাসনে কাজ করতে হয়েছিল। এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা দিয়ে পরে বিসিএস (প্রশাসন) একাডেমি এবং এলএটিসিতে কয়েক বছর প্রশিক্ষণ অধিবেশন পরিচালনা করেছি। তবে আমাদের সময়ের এবং এখনকার প্রজন্মের কর্মকর্তাদের মন-মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গিতেও অনেক পরিবর্তন লক্ষ করেছি। সে প্রসঙ্গ না হয় আজ থাক। এখনকার অভিজ্ঞতাটা সোজা কথায় বলি, খারাপ লেগেছে কিছু বিষয়। কিছু বিষয় আছে, যা প্রায়োগিক ত্রুটির কারণেই জনস্বার্থের পরিপন্থি হয়ে দাঁড়িয়েছে— প্রথমত, জমির খাজনা অনলাইনে পরিশোধ করার জন্য আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। খুব ভালো কথা। কিন্তু এই সেবা যারা দিচ্ছেন এবং যারা নিচ্ছেন তারা কতটুকু প্রস্তুত? দ্বিতীয়ত, এতে কিছু নিয়মকানুন কতটা গণমুখী করে প্রয়োগ হয়? তৃতীয়ত, যৌথ খতিয়ানে জমির মালিকদের ক্ষেত্রে ভূমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে নতুন কিছু ভোগান্তির বিষয় অবহিত হয়েছি। এখন জমির খাজনা দিতে হয় অনলাইনে। এজন্য যিনি খাজনা দেবেন তার নামে এনআইডি দিয়ে একটা অ্যাকাউন্ট চালু করতে হয় অনলাইনে। এতে অবশ্য প্রথমবার কোনো একটি সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের কাছ থেকে অনুমোদন লাগবে অনলাইনেই। এটা ঠিক আছে। বলা হচ্ছে যে, যেই নামের এনআইডি দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে, সেই নামে বাংলাদেশের যত জায়গায় যত জমি আছে, তার সবটাই এ অ্যাকাউন্টে ভেসে উঠবে। ফলে একজন ভূমিমালিক তার সব জমির খাজনা একত্রে পরিশোধ করতে পারবেন। এ উদ্যোগটা নিঃসন্দেহে চমৎকার। প্রকৃত বাস্তবতা হলো, এখনো একজন মালিকের সব জমি অনলাইনে একত্রে দেখতে পাওয়া যায় না। কারণ ভূমি মন্ত্রণালয় হতে এ ডাটাবেজ তৈরির কাজটি এখনো সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এজন্য হয়তো আরও সময় লাগবে। তবে প্রত্যেক ভূমিমালিক নিজের সব জমির তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় তা এন্ট্রি করে নিতে পারেন। তাই এ প্রক্রিয়ায় শুরুর দিকে একটু সমস্যা হলেও পরবর্তী সময়ে তা ঠিক হয়ে যাবে। সুতরাং এই অনলাইনে খাজনা প্রদানের ব্যবস্থাটি একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং এজন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে। এ ব্যবস্থার আরও একটা সুফল হলো, সব ভূমিমালিকের নামে থাকা জমিগুলোর একটা ‘কমপ্রিহেনসিভ ডাটাবেজ’ তৈরি হয়ে যাবে। তখন একটা ‘ইউনিক’ ভূমি প্রশাসনও কার্যকর করা যাবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যারা সেবা দিচ্ছেন, তারা এখনো এ প্রক্রিয়াতে পুরোপুরি দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। যারা বয়সে প্রবীণ ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, তাদের কেউ কেউ এখনো পর্যন্ত কম্পিউটার বা ল্যাপটপ চালাতেই জানেন না। তবে তরুণ বয়সের কর্মচারীরা ওই প্রবীণদের অজ্ঞতা সাধারণ জনগণকে বুঝতেই দেয় না। এজন্য এ চ্যালেঞ্জের দিকটা অপ্রকাশিত থেকে যায়। আবার যারা সেবা নিচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই ‘আইটিতে অশিক্ষিত’। তা ছাড়া জায়গা-জমির কাগজপত্র বোঝেন না, এমন অনেক শিক্ষিত মানুষও আছেন। কাজেই সেবাগ্রহণকারী অনেকেই বাধ্য হন অন্য কারও সাহায্য নিতে এবং এতে কিছুটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকারও হন (ক্ষেত্রবিশেষে তৃতীয় একটা পেশাজীবী শ্রেণি তৈরি হচ্ছে এদের সাহায্য করতে)। যাহোক, এ পরিবেশের সঙ্গেও মানুষ হয়তো একসময় নিজেকে প্রস্তুত করে নেবে। এবার বলি দ্বিতীয় বিষয়ে ভিন্ন কিছু অভিজ্ঞতার কথা। বিদ্যমান নিয়মকানুন কিছু অসুবিধা সৃষ্টি করছে, তা বলি— (১) আগে যৌথ খতিয়ানের কোনো মালিক তার নিজের অংশের জমির খাজনা আংশিক হিসেবে দিতে পারতেন। কিন্তু এখন অনলাইনে আংশিক খাজনা দেওয়ার সুযোগ নেই বলা হচ্ছে। মালিকদের যে কোনো একজনের একটি এনআইডি দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে পুরো খতিয়ানের খাজনা দিতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারীরা উৎসাহ দিচ্ছে। যিনি আংশিক খাজনা দিতে চান, তাকে তার অংশের জমি খারিজ খতিয়ান করে তারপর আলাদা করে খাজনা দিতে পারবেন মর্মে বলা হচ্ছে। তবে এই খারিজ খতিয়ান করা তো সময়সাপেক্ষ। (২) অনলাইনে মিউটেশন পদ্ধতি চালুর পর অন্য আরেকটি সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মিউটেশন করার সময় মালিকের নাম কিংবা জমির পরিমাণ লাল কালিতে কেটে নতুন নাম ও জমির পরিমাণ সংশোধন করে লিখে মিউটেশন চূড়ান্ত করা হতো। এতে কোনো সমস্যা হতো না। আর এখন যৌথ খতিয়ানের কোনো মালিকের পুরো অংশ নতুন কেউ কিনলে অনলাইনে মিউটেশন করার সময় তার নামে নতুন একটা খতিয়ান চালু করে দেওয়া হয় বটে। কিন্তু মূল যৌথ খতিয়ানে ওই বিক্রেতার নাম ও জমির পরিমাণ বাদ দেওয়ার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। এ কারণে খাজনা দিতে গেলে তখন আবার হিসাব-নিকাশে সমস্যাও দেখা দেয় কিংবা পূর্ব খতিয়ানে নাম বাদ না দেওয়ায় পূর্ব মালিকও খাজনা দিয়ে দিতে পারে (আমি নিজে ভুক্তভোগী)। ফলে ল্যান্ড-লিটিগেশন বৃদ্ধি পাচ্ছে। (৩) গত বছর জমির সাব-কবলা দলিল করার সময় খাজনা সম্পূর্ণ পরিশোধ করেই দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়েছিল। তারপর যথারীতি নামজারি করা হয়েছে। এখন আমার পুরো খাজনার টাকা পরিশোধ করার পর যখন প্রিন্ট কপি পাই, তখন দেখা গেল ওই জমির তিন বছরের বকেয়াসহ খাজনার টাকা নেওয়া হয়েছে। একটু অবাক হলাম। তারপর বুঝলাম যে, গত বছর দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় যেই খাজনা পরিশোধ করা হয়েছিল, তা অনলাইন অ্যাকাউন্টে এখনো এন্ট্রি হয়নি। কাজেই ওই মুহূর্তে আর এ বিষয়ে কিছু করার ছিল না। (৪) খাজনা পরিশোধের প্রিন্ট কপি পাওয়ার পর দেখতে পেলাম, যেই মালিক তার সম্পূর্ণ অংশ জমি বিক্রি করে নিঃস্বত্ববান হয়ে গেছে, তার নামও পূর্বের যৌথ খতিয়ানে রয়ে গেছে। আবার জমির প্লটগুলোর শ্রেণি ভুল লেখা হয়েছে। যেমন নাল স্থলে ডোবা কিংবা বাড়ি স্থলে ডোবা বা ডোবা স্থলে নাল লেখা হয়েছে। এটা হয়তো নতুন নামজারির সময় ভুলে লেখা হয়েছে। সেজন্যই বলেছি যে, সেবাপ্রদানকারীরা কতটুকু প্রস্তুত? (৫) আরেকটি বিষয় হলো, যারা প্রবাসী শ্রমিক এবং প্রচুর অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে পাঠায়, তারা বিদেশ থেকে কীভাবে নিজের জমির খাজনা দেবে, সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে অনলাইনে খাজনা পরিশোধের পদ্ধতি ডিজাইন করা হয়েছে কি না? তা জানি না। (আগামীকাল শেষ পর্ব) লেখক: প্রাক্তন সিনিয়র সচিব, কবি ও গবেষক
১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ভূমি অফিসের সেই সহকারী বরখাস্ত
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী আব্দুল কাদিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। জেলা প্রশাসক বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ভূমি অফিসের অফিস সহায়ককে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একজন সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে গুনে গুনে টাকা নিচ্ছেন। ভিডিও প্রকাশের পর কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। ব্যাখ্যা পাওয়ার পর পর্যালোচনা করে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি বিধায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত জাহানকে এক সদস্যের তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অফিস সহকারী আব্দুল কাদির দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য, দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না মাইজখাপন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী। সেই কারণে প্রতিনিয়ত ভূমি অফিসে হয়রানির শিকার হতে হয় সেবাগ্রহীতাদের। সরকারি ফি ছাড়া অতিরিক্ত টাকা না দিলে কাজ তো দূরের কথা সেবা নিতে আসা লোকজনের সঙ্গে কোনো কথাই বলেন না তারা। সম্প্রতি ভূমি অফিসের অফিস সহকারী আব্দুল কাদির মিয়ার নিজ দপ্তরে বসে সেবাগ্রহীতাদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ (ঘুষ) গ্রহণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি তার দপ্তরে বসে প্রকাশ্যে সেবা নিতে আসা ভোলা মিয়ার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা গুনে নিচ্ছেন। ভোলা মিয়া বলছেন, সকল খারিজ সমান নয়। গরিব মানুষ কাজটা করে দেন। প্রতি উত্তরে আব্দুল কাদির বলছেন, কথা ছিল ৬ হাজার টাকা দেবেন। কম দিতে পারবেন না। প্রয়োজনে পরে হলেও দিতে হবে। একটা কাজ করে কিছু টাকা পাওয়া না গেলে চলে না। এরপর টাকাগুলো গুনে পকেটে নেন আব্দুল কাদির। চলে যাওয়ার সময় ভোলা মিয়া আবারও বলেন, আপনি আরও এক হাজার টাকার আবদার করেছেন। একটা বিহিত (ব্যবস্থা) হবে। আপনি কাজটা করে রাখুন। ঘুষ নেওয়ার ভিডিও প্রকাশের পর অভিযুক্ত আব্দুল কাদিরের কাছে তিন কার্য দিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। একই সঙ্গে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সরেজমিনে জানা যায়, আব্দুল কাদিরের শুধু গ্রামে নয় ঢাকাতেও বাড়ি রয়েছে। গ্রামের এই সুসজ্জিত বাড়িটিতে নিরাপত্তারও কোনো কমতি রাখেননি। ১৯৯৭ সালে পল্লীবিদ্যুতের চাকরি ছেড়ে ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক চাকরিতে যোগদান করেন আব্দুল কাদির। এরপর থেকে ফুলে ফেঁপে বাড়তে থাকে অর্থ সম্পদ।
০১ এপ্রিল, ২০২৪
X