চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৪ এএম
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানি আজ

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। ছবি : সংগৃহীত।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। ছবি : সংগৃহীত।

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার সনাতন জাগরণ মঞ্চের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানি আজ মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর)। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে তার জামিন শুনানি হওয়ার কথা।

এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানিতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াবেন কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। একদিকে চিন্ময়ের আইনজীবী নিজেই মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, অন্যদিকে ভয়ে অনুসারী আইনজীবীরাও হাল ছেড়েছেন।

গত ২৬ নভেম্বর চিন্ময়ের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত। তাকে কারাগারে নেওয়ার সময় মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভরত হাজারখানেক অনুসারীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশের। পরে ত্রিমুখী সংঘর্ষে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবীকে। যিনি সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন সম্প্রতি।

আইনজীবী আলিফ খুন এবং আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের ওপর হামলা-গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করেন তার বাবা এবং ভাই। বাবার করা হত্যা মামলায় ৩১ জনকে আসামি করা হলেও ভাইয়ের করা মামলায় এজাহারনামীয় আসামি করা হয় ১১৬ জনকে। সেই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবী শুভাশিস শর্মাও ৩৩ নম্বর আসামি। এ ছাড়া তার অনুসারী আরও ৫০ জনের অধিক আইনজীবীকে আসামি করা হয়েছে।

মামলায় আসামি হওয়ায় এসব আইনজীবীর অনেকে এখন গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন। অনেকে তাদের ওপর হামলার আশঙ্কাও করছেন। যে কারণে আজকের জামিন শুনানিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ভুগছেন তার সমর্থকরা।

চট্টগ্রাম ইসকন প্রবর্তক মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস বলেন, চিন্ময় প্রভুর আইনজীবী মোবাইল বন্ধ করে রেখেছেন। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তার পক্ষে যে আইনজীবীরা দাঁড়ানোর কথা তাদের সবাইকে মামলার আসামি করা হয়েছে। তাই শুনানিতে তাদের যাওয়ার সম্ভাবনা নাই।

তিনি বলেন, সবাইকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়েছে। কোনো আইনজীবী পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল পিপি এবং এপিপির পদত্যাগের দাবিতে কী একটা অবস্থা হলো! তাদের অবস্থা এমন হলে সাধারণ আইনজীবীর অবস্থা কেমন হবে? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এদিকে মামলার আসামিদের মধ্যে কয়েকজন আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, মূলত টার্গেট করেই ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের বিরুদ্ধে খুনের শিকার সহকর্মী আলিফের ভাইকে দিয়ে ওই মামলা দায়ের ‘করানো হয়েছে। যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে আইনজীবীদেরও রাখা হয়েছে। যেন চিন্ময় কৃষ্ণের পক্ষে শুনানি করতে কেউ দাঁড়াতে না পারেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আইনজীবী বলেন, শুভাশিস চিন্ময় প্রভুর কনসার্ন লয়ার (আইনজীবী)। তাকেসহ আমরা যারা চিন্ময় প্রভুর সমর্থক—এমন অনেক আইনজীবীকে মামলার আসামি করা হয়েছে। আমাদের ভাই আলিফ হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ ফাঁসি হোক তা আমরাও চাই। কিন্তু হয়রানিমূলক এ মামলা দুঃখজনক।

তিনি বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়ানোর সাহস করছেন না এখন। ধর্মীয় গুরু না হোক, আইনিভাবে সাহায্য পাওয়ার অধিকার তো যে কোনো মানুষের নাগরিক অধিকার।

জানা গেছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর আসল নাম চন্দর কুমার ধর। তিনি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘে (ইসকন) যোগ দেওয়ার পর নতুন নাম নেন। চট্টগ্রাম পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে তার অনুসারীরা ‘চিন্ময় প্রভু’ বলে ডাকেন।

বাংলাদেশে ইসকনের মুখপাত্রের ভূমিকায় কাজ করেছেন তিনি। বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত তিনি।

গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে সমাবেশ হয় ‘সনাতন জাগরণ মঞ্চ’ ব্যানারে। ওই সমাবেশের অন্যতম উদ্যোক্তা ও মুখপাত্র ছিলেন চিন্ময়। এরপর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের’ ব্যানারে কর্মসূচি পালন শুরু করে। নতুন এই জোটের মুখপাত্র করা হয় চিন্ময়কে।

২৫ অক্টোবরের সেই সমাবেশের দিন চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট মোড়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপরে ইসকনের গেরুয়া রঙের আরেকটি পতাকা ওড়ানোর অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে ৩০ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়।

সেই মামলায় চিন্ময়সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০(খ), ১২৪(ক), ১৫৩(ক), ১০৯ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। মামলায় চিন্ময়ের পাশাপাশি চট্টগ্রামের হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক অজয় দত্তসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়।

গত ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে ফেরার পথে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন।

পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। তখন চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান আটকে দেন। তারা এ সময় প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হল গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

আদালত এলাকায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধাদানের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে। এ ছাড়া গত শনিবার আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের বাবা বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা, পাশাপাশি আলিফের ভাই খানে আলম বাদী হয়ে যানবাহন ভাঙচুর ও জনসাধারণের ওপর হামলার ঘটনায় ১১৬ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মামলা করেছেন নগরের কোতোয়ালি থানায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দাম কমলো ইন্টারনেটের

ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা কতটা উপযোগী, ভাবার অনুরোধ তারেক রহমানের

বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

শাহজালালে বোয়িং বিমানে লাগেজ ট্রলির আঘাত

আখতারকে রংপুর-৪ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

মধ্যরাতে বরখাস্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার

‘একসঙ্গে সমুদ্রে নেমে তো গোসল করতে পারব না’

জুলাই যোদ্ধার তালিকায় এক ব্যক্তির নাম ২ জায়গায়

১০

বিএনপির অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনায় মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ

১১

রাজধানীতে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে লায়ন্স ক্লাবের খাবার বিতরণ

১২

জামায়াত-গণঅধিকার পরিষদের মতবিনিময় / নির্বাচনী জোট গঠনে একমত

১৩

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, মাদ্রাসার সুপার কারাগারে

১৪

তারেক রহমান নেতৃত্ব না দিলে জুলাই আন্দোলন সফল হতো না : মুরাদ

১৫

চট্টগ্রাম নগরীতে ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেপ্তার

১৬

‘প্রেমে ব্যর্থ হলে বাথরুম পরিষ্কার করি’

১৭

মেয়ের জন্য চিপস আনতে গিয়ে প্রাণ হারান মোবারক

১৮

১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় সংকটে মার্কিন ডলার

১৯

তারেক রহমান জুলাই বিপ্লবের মূল নেতৃত্বে ছিলেন : অধ্যাপক মোর্শেদ

২০
X