এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবল চট্টগ্রাম নগরী
দীর্ঘ দাবদাহের পর চারদিকে ঘোর অন্ধকার হয়ে স্বস্তির বৃষ্টি এলেও হঠাৎ কালবৈশাখী ও বজ্রপাতের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের জনজীবন। সোমবার (৬ মে) বিকেল সাড়ে ৩টার পর প্রবল বেগে শুরু হয় বর্ষণ। সঙ্গে কালবৈশাখী। বজ্রপাত ও ঝোড়ো বাতাসে অন্ধকার নেমে আসে পুরো শহরে।
মুষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে মানুষের চলাচল। কোথাও কোথাও ভেঙে পড়ে গাছপালা। নগরের নিম্নাঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে জলজট। কর্মব্যস্ত দিন শেষে এমন বৃষ্টিতে নগরবাসী স্বস্তি পেলেও বিপাকে পড়েন পথচারী ও কর্মজীবী মানুষ। অনেকে বৃষ্টি থামার জন্য ঘণ্টাব্যাপী রাস্তার ধারে অপেক্ষা করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের ইপিজেড, সল্টগোলা, বন্দর, নিমতলা, বারিক বিল্ডিং, আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, জিইসি, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, নতুন ব্রিজ, চকবাজার, কাপাসগোলা, পাঁচলাইশ এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে হঠাৎ ভারী বৃষ্টিতে নগরের জাকির হোসেন রোডে ভেঙে পড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি, ট্রান্সফরমার ও গাছপালা। এতে এম ই এস কলেজ মোড় থেকে জিইসি মোড়ের যান চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছপালা সরাতে একযোগে কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
খুলশী বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা নুর উদ্দিন বলেন, ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া কারণে দুটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে সংযুক্ত ট্রান্সফরমার রাস্তায় ভেঙে পড়েছে। সংযোগ বন্ধ থাকায় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাস্থলে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন কাজ করছে।
এ ছাড়া নগরের সিআরবি এলাকায়ও ভেঙে পড়ে কয়েকটি গাছ। স্থানীয়রা জানান, এসব গাছের বছর ৫০ বছরের উপরে। গাছগুলো ভেঙে পড়ায় বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচলও।
জিইসি এলাকায় দেখা যায়, রাস্তার ধারের হকার ও পথচারীরা রাস্তার পাশের বিভিন্ন দোকান ও শপিংমলের সামনে কোনোমতে মাথা গুঁজেছেন।
চকবাজারের কাপাসগোলা এলাকায় কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী মো. মহীউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যে বৃষ্টি আর বাতাস। দোকানে এসে আশ্রয় নিলেও শরীরের ৮০ শতাংশই ভিজে গেছে। আধঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। বাসায় যেতে পারছি না। সকালে রোদ থাকায় ছাতাও আনিনি।’
নগরের ২ নম্বর গেটের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘জিইসি এসেছিলাম একটি কাজে। বাসার দিকে যাব ঠিক ওই মুহূর্তেই ঝুম বৃষ্টি। এখন দাঁড়িয়ে আছি বাস পাচ্ছি না।’
বারিক বিল্ডিং এলাকায় কথা হয় পটিয়ার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘খুলশীতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম দুপুরে। হঠাৎ এমন বৃষ্টি আসবে ভাবিনি। আর রাস্তায় পানি ওঠে গেছে। গাড়িও পাচ্ছি না।’
এদিকে, দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্য দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রামসহ দেশের সাত অঞ্চলে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুকের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্যত্র একই দিক থেকে অস্থায়ীভাবে ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
০৬ মে, ২০২৪