তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যত কথাই বলুক না কেন আগামী নির্বাচনেও বিএনপিকে আসতে হবে। আশা করব ২০১৮ সালের মতো গাধার জল ঘোলা করে খাওয়ার মতো করে নয়, এবার আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েই নির্বাচনে আসবে। বিএনপির এক দফার আন্দোলন কতটুকু হবে বা সেটি করতে গেলে আমাদের কী করতে হবে সেটিও আমাদের জানা আছে।
আজ বুধবার (২৮ জুন) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিভিন্ন সংস্থার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত উন্নয়ন সমন্বয় সভাশেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের ঈদের পর সর্বশক্তি দিয়ে সরকার পতনে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুখে দোতারার সুরের মতো করে এক দফার আন্দোলন আমরা সবসময় শুনতে পাচ্ছি। ওনারা কতটুকু আন্দোলন করতে পারবে সেটা আমরা জানি। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে মানুষ পোড়ানোর মহোৎসব আমরা দেখেছি। সেটি সামাল দিয়ে সরকার পাঁচ বছর টিকেছে। এরপর ২০১৮ সালে আবার নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনে গাধা জল ঘোলা করে খাওয়ার মতো করে বিএনপি নির্বাচনে এসেছিল। আওয়ামী লীগ সরকারকে ধাক্কা দিতে গেলে বিএনপিই ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাবে।
এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা মাঝেমধ্যে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেন। উনারা ২০১৩ সালেও এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা করেছিলেন। আবার ১৮ সালেও এক দফার আন্দোলন করেছিল। আসলে তাদের এক দফা আন্দোলন এখন দোতারার সুরের মতো শোনায়।
আইপি টিভির বিরুদ্ধে অভিযান প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন দ্রুততার সাথে এ ব্যাপারে অভিযান পরিচালনা করেছে। অন্যান্য জেলাতেও শুরু হয়েছে, সারা দেশেই এটি করা হবে। ইউটিউব চ্যানেল অবশ্যই যে কেউ চালাতে পারে, কিন্তু ইউটিউব চ্যানেলের নাম দিয়ে চাঁদাবাজি করা, একেবারে একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসা এবং সেখানে কোনো নিউজ করতে গেলে এত টাকা দিতে হবে, সেটি আবার চিঠি দিয়ে জানানো, রেট করে দেওয়া, এগুলো তো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, সরকারের যে সম্প্রচার এবং কেবল অপারেটিং নীতিমালা আছে সেই নীতিমালার লঙ্ঘন করে তো কেউ কিছু করতে পারে না। যারা নীতিমালা লঙ্ঘন করছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং আমরা চিঠি দিয়েছি সারা দেশেই এই অভিযান চলবে। কোনো কোনো জেলায় ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ঈদের পর অনেক জেলায় শুরু হবে।
দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল আজহার আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের নানাবিধ পদক্ষেপের কারণে এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হচ্ছে। ট্রেনে, বাসে এবং লঞ্চে যারা যাচ্ছেন সবাই ভালো অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। ঈদযাত্রা যাতে ভালো হয় সেজন্য সরকার এক দিন ছুটি বাড়িয়েছিল। এজন্য সড়ক পরিবহন, রেলপথ এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রামকে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয়। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। প্রায় এক কোটির কাছাকাছি মানুষের বসবাস এই শহরে এবং দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর এটি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংস্থা, বিশেষ করে সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা পরিষদ, রেলওয়ে, বন্দরসহ সবার সাথে আজকে আমরা একটি সমন্বয় সভা করেছি। আপনারা জানেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে লক্ষ হাজার কোটি টাকার মতো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং হচ্ছে। খুব শিগগির প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে সড়ক টানেল। সেটির সাথে নির্মিত আউটার রিং রোড এত নান্দনিক রাস্তা হয়েছে আকাশ থেকে ভিউটা যে এত চমৎকার - এভাবে চট্টগ্রাম শহরটাই বদলে গেছে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন চট্টগ্রাম শহরে মেট্রোরেল স্থাপনের জন্য ফিজিবিলিটির কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আমরা সব বিষয় নিয়ে আজকের সমন্বয় সভায় আলোচনা করেছি। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পসহ অন্য সব প্রকল্প নিয়ে আমরা আজকে আলোচনা করেছি। আন্তঃসংস্থার মধ্যে কিছু সমন্বয়ের অভাব সবসময় থাকে এটা স্বাভাবিক। সেই সমন্বয়টা যাতে হয় এবং একে অপরের চাহিদা যাতে মেটাতে পারে সেটি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করেছি।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দেশে কোনো গৃহহীন থাকবে না শেখ হাসিনার ঘোষণা - এই স্লোগানে যেহেতু আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, সুতরাং কেউ গৃহহীন থাকবে না, সবাইকে পুনর্বাসিত করা হবে।
মন্তব্য করুন