বর্তমানে ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের সুপারস্টার, আর রাজনীতির ময়দানে শক্ত প্রতিপক্ষ অভিনেতা দেব। একসময় প্রযোজকের দরজায় দরজায় ঘুরে কাজ খুঁজেছেন, আর আজ তিনিই লাখো মানুষের প্রেরণা। তার এই ঝলমলে সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক অবিশ্বাস্য সংগ্রামের কাহিনি, যে গল্পে আছে পরিশ্রম, ব্যর্থতা আর অদম্য জেদের ইতিহাস। ভারতীয় এক গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে দেব খোলামেলা কথা বলেছেন তার জীবনের নানা অজানা অধ্যায়ের গল্প নিয়ে।
সেই সাক্ষাৎকারে জানতে চাওয়া হয়, দেবকে এখনো যুদ্ধ করতে হয়? জবাবে দেব বলেন, ‘নিজের বন্ধুদের সঙ্গেই যুদ্ধ করতে হয়, বিশেষত মানসিকভাবে। তা নিয়ে অবশ্য আমার কোনো অভিযোগ নেই। এখন এটাই তো প্রক্রিয়া হয়ে গিয়েছে। সিনেমা তৈরি করা সহজ; বরং প্রচার আর মুক্তি দেওয়া কঠিন।'
এই যুদ্ধে জেতার মনোবল কি ‘বড়মা’-এর কাছ থেকে পান? এই প্রশ্নের উত্তরে দেব বলেন, ‘আমি আগে তারাপীঠে যেতাম। ‘খোকাবাবু’ বা ওই সিনেমাগুলো তৈরির সময় তো শুভশ্রীও আমার সঙ্গে যেত।
একটা বড় দল ছিল আমাদের, প্রায়ই তারাপীঠে যেতাম। অনেকবার দক্ষিণেশ্বরেও গিয়েছি। দেখুন, কোথাও তো গিয়ে মাথা নিচু করতে হবে, মনের কথা বলতে হবে। কারণ আমার মনের কথা বলার লোক নেই। যদি কাউকে বলি, তার হয়তো আমার চেয়েও বেশি মন খারাপ হবে। ভাববে, দেবের মনে এই কষ্ট! মা-বাবাকেও বলতে পারি না। যখনই মনে হয় আর পারছি না, তখনই ছুটে যাই মায়ের কাছে। মা কালী আমায় টানেও। আমাদের বাড়িতেও পূজাপাঠের চল আছে। স্নান করে, পূজা না করে কেউ বের হই না।'
তা হলে সাফল্য এলে কী মনের কথা বলার মানুষ কমে যায়? দেব বলেন, 'কমে যায় না। কিন্তু মনে হয়, আমার আবেগটা বিক্রি করে মানুষ হয়তো নিজের গুরুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করবে। আর সেই ভয়টাই সারাক্ষণ কাজ করে। আমার সঙ্গে ঘটেছেও এমনটা। কে কোথায় আমাকে ব্যবহার করবে সেটা বোঝা খুব কঠিন।'
জীবনের এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আপনার কীসে সবচেয়ে বেশি ভয়? এ প্রশ্নের উত্তরে দেব বলেন, ‘এক দিন না এক দিন সব চলে যাবে। এই যে যশ-খ্যাতি, মানুষের ভালোবাসা—সবটা। এক দিন না এক দিন অন্য কেউ এসে আমার জায়গাটা নেবে। ভয় নয়, লড়াটা একই, সেই সময়টা যেন দেরিতে আসে আমার জীবনে। নিজেকে সেইভাবে ধরে রাখতে চাই।‘
এ বিষয়ে খানিকটা ব্যাখ্যা করে দেব বলেন, 'আসলে আমি এখন যে জায়গায় আছি, তার উপরে আর যাওয়ার জায়গা নেই। সেখানে থেকে পড়লে খুব জোরে লাগবে। তাই পূজার এক দিন কাটতে না কাটতেই ‘রঘু ডাকাত’-এর প্রচারে। আর পড়ব তো বটেই, আজ নয়তো কাল। তবে যে আসবে তাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে আমাকে ফেলার জন্য।'
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে ‘অগ্নিশপথ’ সিনেমার মাধ্যমে টলিউডে দেবের জার্নি শুরু হয়। যদিও এ সিনেমা বক্স অফিসে সফল হয়নি। তবে দেবের দ্বিতীয় সিনেমা ‘আই লাভ ইউ’ (২০০৭) তার ক্যারিয়ার বদলে দেয়। কিন্তু অনেকেরই হয়তো অজানা অভিনয়ে পা রাখার আগে ক্যাটারার বাবার সহকারী হিসেবে মুম্বাইয়ের সিনে-ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছেন দেব। কলেজে পড়ার সময় বাবাকে কাজে সাহায্য করতেন তিনি। লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের জগৎকে খুব কাছ থেকে দেখে শাহরুখ খান হওয়ার ইচ্ছা জাগে দেবের।
মন্তব্য করুন