সূর্যগ্রহণ কিংবা চন্দ্রগ্রহণ ঘিরে পৃথিবীর অনেক দেশেই নানারকম ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভুল ধারণা কিংবা কুসংস্কারের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। গ্রহণ সম্পর্কে এমন কিছু কুসংস্কার যা অনেক দেশেই বেশ গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয়।
এবারের পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণকে ‘সুপার ব্লাড মুন’ নাম দেওয়া হয়েছে। আকারে সাধারণ সময়ের চাঁদের থেকে সাত শতাংশ এবং উজ্জ্বলতায় পনেরো শতাংশ বেশি হতে পারে এই সুপার ব্লাড মুন।
চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে অনেক কল্পকাহিনি ও কুসংস্কার আছে। চন্দ্রগ্রহণের কাহিনিগুলো মূলত দুটি অংশে বিভক্ত- বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এবং পৌরাণিক ও কুসংস্কারমূলক কাহিনি। বৈজ্ঞানিকভাবে চন্দ্রগ্রহণ হলো একটি জ্যোতির্বিদ্যাগত ঘটনা যেখানে চাঁদ পৃথিবীর ছায়ায় পড়ে, ফলে চাঁদ কিছু সময়ের জন্য অন্ধকার হয়ে যায় বা লালচে দেখায় (ব্লাড মুন)।
অন্যদিকে, হিন্দু পুরাণ অনুসারে সমুদ্রমন্থনের সময় রাহু নামক অসুর অমৃত পান করার পর দেবতা বিষ্ণু তাকে ধড় থেকে কেটে ফেললে তার দেহ চান্দ্রিক গ্রহে পরিণত হয়, যার ফলে রাহু চাঁদকে গ্রাস করে গ্রহণ ঘটায়। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে চন্দ্রগ্রহণকে শুভ বা অশুভ হিসেবে দেখা হয় এবং এই বিষয়ে নানা লোককথা প্রচলিত আছে।
এছাড়া আরও বেশ কিছু কুসংস্কার সমাজে প্রচলিত আছে চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে। যার কোনো সত্যতা বা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
প্রচলিত রীতি অনুসারে, চন্দ্রগ্রহণ চলাকালীন কাঁচা খাবার, ফল ও শাকসবজি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। কারণ এ সময় নাকি চাঁদ থেকে নির্গত রশ্মি খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট করে দিতে পারে। যার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
এমনকি ভুল ধারণা হিসেবে, গ্রহণের সময় মাংসজাতীয় খাবার খেতেও নিষেধ করা হয়। কারণ চন্দ্রগ্রহণের সময় নাকি খাবার হজম করতে বেশি সময় লাগে! এই তথ্যেরও কোনো যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ নেই।
চন্দ্রগ্রহণের আগে খাবার রান্না করে না রাখাই ভালো। এক্ষেত্রে নাকি চাঁদ থেকে নির্গত শক্তিশালী রশ্মি খাদ্য দূষিত বা ক্ষয় করতে পারে। এটিও ভুল ধারণা।
আবার অনেকের মতে, চন্দ্রগ্রহণ শেষ হওয়ার পর গোসল করে নেওয়া উচিত। যদিও এর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
গর্ভবতীকে এই সময় বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেন অনেকেই। একই সঙ্গে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়। যদিও এ বিষয়ে বিজ্ঞানের কোনো ব্যাখ্যা নেই। এমনকি চন্দ্রগ্রহণের প্রভাবে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হতে পারে বলেও কোনো প্রমাণ নেই।
চন্দ্রগ্রহণের সময় ছুরি, কাঁচি বা সূচের মতো ধারালো জিনিস ব্যবহার করার বিষয়টিও প্রচলিত আছে। এটিরও কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
অনেকেই চন্দ্রগ্রহণের সময় খাবারে হলুদের ব্যবহার বাধ্যতামূলক মনে করেন, যা মোটেও বিজ্ঞানসম্মত নয়। তবে বিজ্ঞানমতে, হলুদে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ আছে, যা শরীরের জন্য উপকারী। তবে এর সঙ্গে চন্দ্রগ্রহণের কোনো সম্পর্ক নেই।
এমনকি পৌরাণিক শাস্ত্র অনুসারে, খালি চোখে চন্দ্রগ্রহণ দেখতে নিষেধ করা হয়। তবে বিজ্ঞান বলছে, চন্দ্রগ্রহণ খালি চোখে দেখা নিরাপদ। চন্দ্রগ্রহণ দেখতে আপনার বিশেষ কোনো সতর্কতা অবলম্বন করার প্রয়োজন নেই। তবে সূর্যগ্রহণের সময় সতর্ক থাকতে হবে।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে দেখা যাবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। চন্দ্রগ্রহণটি আজ রাত থেকে শুরু হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর ভোর পর্যন্ত চলবে। এই চন্দ্রগ্রহণ মোট ৭ ঘণ্টা ২৭ মিনিট স্থায়ী হবে। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী, চাঁদের পেনুম্ব্রাল গ্রহণ শুরু হবে ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা ২৮ মিনিট ২৫ সেকেন্ড থেকে।
যখন সূর্য, পৃথিবী এবং চাঁদ একই সরলরেখায় আসে এবং পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপর পড়ে, তখন চন্দ্রগ্রহণ ঘটে। যার ফলে চাঁদকে পৃথিবী থেকে আংশিকভাবে বা সম্পূর্ণভাবে দেখা যায় না। সহজ ভাষায়, পৃথিবী যখন চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে অবস্থান করে এবং পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপর পতিত হয়, তখন এই মহাজাগতিক ঘটনাকে চন্দ্রগ্রহণ বলা হয়।
মন্তব্য করুন