কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:০০ পিএম
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

দলগুলোর মতবিরোধের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত দিল অন্তর্বর্তী সরকার

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত

জুলাই সনদে সংবিধান বিষয়ক ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। কিছু প্রস্তাবে সামান্য ভিন্নমত আছে। তবে প্রস্তাবগুলোর ক্ষেত্রে মতভিন্নতা খুব গভীর নয় বলে মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার।

কেউ সংস্কার সংবিধানে করতে চেয়েছেন, কেউ আইনের মাধ্যমে করতে চেয়েছেন। কিন্তু সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা, নীতি ও লক্ষ্য নিয়ে কারও মধ্যে মতভেদ নেই―এসব বিবেচনায় রেখে এবং রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক স্বাক্ষরিত জুলাই সনদকে মূল দলিল হিসেবে ধরে নিয়েছে সরকার।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ অনুমোদন করেছে। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর শেষে গেজেট জারি করা হয়েছে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই আদেশে সরকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিধান গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সনদের সংবিধান বিষয়ক সংস্কার প্রস্তাবের ওপর গণভোট অনুষ্ঠান এবং পরবর্তী সময়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত।

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা সব বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করা হবে। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের মতো গণভোটও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংস্কারের লক্ষ্য কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হবে না। নির্বাচন আরও উৎসবমুখর ও সাশ্রয়ী হবে। গণভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে উপযুক্ত সময়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এসব দাবি ছিল বিএনপির। আর জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ইসলামী দলের দাবি ছিল, সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট দিতে হবে। এই দাবিতে তারা লাগার কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অবস্থান শিথিল। তারা বলেছে, গণভোট সংসদ নির্বাচনের দিন বা আগে অনুষ্ঠান নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই।

জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের ব্যালটে চারটি প্রশ্ন নির্ধারণ করেছে সরকার। সেগুলো হলো―

‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?’

১. নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।

২. আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।

৩. সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।

৪. জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।

গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটি মাত্র প্রশ্নে আপনি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে নাগরিকদের মতামত জানাতে হবে।

গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ সূচক হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। এই প্রতিনিধিরা একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিষদ তার প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ থেকে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত।

তবে এর আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশে বলা হয়েছিল, প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ থেকে ২৭০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করার বাধ্যবাধকতা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এই সময়ের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংবিধানে যুক্ত হবে। তবে চূড়ান্ত প্রস্তাবে সেই বাধ্যবাধকতা থাকছে না।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) রয়েছে। বাছাই প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ধাপে ঐকমত্য কমিশন ‘র‍্যাংকড চয়েস’ পদ্ধতির কথা বলেছে। তবে বিএনপি এই পর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বাছাইয়ের দায়িত্ব সংসদকে দেওয়ার পক্ষে। যদিও অন্যান্য দল ‘র‍্যাংকড চয়েস’ পদ্ধতির পক্ষে। অবশেষে বিষয়টিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গণভোটে দিয়েছে।

এ ছাড়া উচ্চকক্ষে ভোটের অনুপাতে দলগুলোর প্রতিনিধি পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি ছাড়া প্রায় সব দলেরই ঐকমত্য ছিল। সে ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না দিয়ে প্রস্তাবটি গণভোটে দেওয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা অনুসারে সংবিধানে জুলাই জাতীয় সনদ অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটিও আজকে অনুমোদিত আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মাত্র ১ মিনিট দেরির কারণে মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি প্রার্থী!

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের আসনে প্রার্থী হলেন তার স্ত্রী

ঢাকা-১২ / স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিলেন বিএনপির নীরব

সবাইকে সঙ্গে নিয়েই গড়ব নতুন শরীয়তপুর : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি ও মাদকের কোনো স্থান নেই : এম এ কাইয়ুম

কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতার মনোনয়নপত্র জমা

এনসিপি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিলেন শরীফুজ্জামান

অবশেষে কমলো সোনার দাম, মঙ্গলবার থেকে কার্যকর

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের আহ্বান আসলাম চৌধুরীর

দেশে একটি ব্যতিক্রমধর্মী নির্বাচন আয়োজিত হচ্ছে : ডা. তাহের

১০

সাতক্ষীরায় ছাত্রদলের ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মশালা

১১

গোপালগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন সেলিমুজ্জামান

১২

চবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইব্রাহিম, সেক্রেটারি পারভেজ

১৩

পাঁচ মিনিট দেরি, মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন প্রার্থী

১৪

জনগণ নির্বাচিত করলে নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও মানবিক সমাজ গড়ে তুলব : কবীর ভূঁইয়া

১৫

নায়ক সোহেল রানার ‘রহস্যজনক’ পোস্ট ভাইরাল

১৬

জামায়াত নেতা বহিষ্কার

১৭

কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় নারীর ২ পা বিচ্ছিন্ন

১৮

প্রেমিকার লাথিতে প্রেমিকের মৃত্যু

১৯

নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সামান্তা শারমিনের নতুন বার্তা

২০
X