প্রতিরক্ষা বাহিনীর ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে সুসম্পর্ক নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আমরা চাই না প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর মধ্যে কোনো রকমের ভারসাম্য নষ্ট হোক। আমরা সেটি অ্যাফোর্ড (সামলে নেওয়া) করতে পারব না এই মুহূর্তে। আমরা চাই, আপনার সাথে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সুসম্পর্ক বজায় থাকুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র একটা ব্যালেন্সড অবস্থায় থাকতে হবে। আমরা নির্বাচন সামনে রেখে কোনো রকমের ঝুঁকির মধ্যে যেতে চাই না, যেতে পারব না; সেটা আমরা অ্যাফোর্ড করতে পারব না।’
পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসর একটি দেশ, এই সুযোগ নেওয়ার জন্য বসে থাকবে সতর্কবার্তা দিয়ে সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সুতরাং আমাদের একদম প্রতিবিপ্লবী হলেও চলবে না। আমাদের বাস্তবতার নিরিখে আমাদের পদক্ষেপটা নিতে হবে।’
বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাতে জুলাই সনদ নিয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাইউদ্দিন আহমদ।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে সালাউদ্দিন আরও বলেন, ‘মাননীয় উপদেষ্টা আমাদের কন্টিনিউয়াস সমর্থন আপনার প্রতি ছিল আছে। কিন্তু এটা কন্ডিশনাল (শর্তসাপেক্ষ)। আমাদের সমর্থন আরও অব্যাহত থাকবে, তবে এটা সীমাহীন নয়। আমরা চাই, আপনার নেতৃত্বে একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন, এটাই হচ্ছে কন্ডিশন (শর্ত)। আপনার প্রতি আমাদের সীমাহীন সমর্থন নয়, আমাদের সীমারেখা আছে। আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য এই সীমারেখার মধ্যে আপনাকে সমর্থন দিচ্ছি, আপনি দয়া করে এটা অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন।’
বৈঠকে নির্বাচন সামনে রেখে সরকারি কর্মকর্তাদের পদায়ন নিয়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আজকে সচিবালয়ে যে সমস্ত নিয়ম, বদলি-পদায়নের জন্য আপনি মন্ত্রিপরিষদের একটা “কেবিনেট কমিটি” করে দিয়েছেন, এটার কোনো চর্চা নাই। এটার কোনো ট্র্যাডিশন (প্রচলন) নেই। এটা কোনো নিয়ম নয়। তারা যা করছে পদোন্নতি বা নিয়োগ-বদলির মধ্যে, সেটা ওখানে একটা রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আপনি খোঁজ নেবেন। আমরা খুব অসন্তোষ প্রকাশ করছি।’
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পর সেটা সরকার প্রকাশ করলে মানুষ দেখবে, বুঝবে এবং তার ভিত্তিতে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোট দিয়ে তাদের রায় জানাবে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা বলেছি আমার দ্বিতীয় চেম্বার চাই, আপার হাউস (সংসদের উচ্চকক্ষ) চাই। ১০০ সদস্যের চাই। কিন্তু সেউ নিয়োগপ্রক্রিয়া, মনোনয়নপ্রক্রিয়া, নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে একটু নোট অব ডিসেন্ট আছে, দুই রকম প্রক্রিয়া আছে। এগুলোই সামান্য নোট অব ডিসেন্ট। এখন প্রতিটা প্রশ্ন যদি গণভোটে আসে, সেটা অসংখ্য প্রশ্নাবলির একটা বই হয়ে যাবে, আর ব্যালট থাকবে না।
এ সময় তিনি জাতীয় সনদ যেভাবে প্রণীত হয়েছে, সেভাবে স্বাক্ষর করার কথা বলেন এবং জুলাই সদন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকাশ করলে সে অনুযায়ী গণভোট হতে পারে বলে জানিয়েছেন।
গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিনে হওয়ার পক্ষে অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গণভোট আগে হবে না পরে হবে, এটা তো ঘটনা একই। এটা তাল ধপ করিয়া পড়িল, না পড়িয়া ধপ করিল౼কথা তো একই। এটা হ্যাঁ বলবে অথবা না বলবে। এখন যদি একই দিনে একটা ছোট্ট ব্যালটে গণভোট হয়, সেটা আমাদের জন্য সবচাইতে সুবিধাজনক এবং আলাদা ব্যয়বহুল হবে না। আলাদা ম্যানপাওয়ার অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে হবে না। আলাদা নির্বাচনী বাক্স হবে না।’
এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, যারা আগে গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য পারসু করছে, সেটা অবশ্য তাদের অধিকার আছে। কিন্তু এটা কতটা যৌক্তিক আপনারা সবাই একটু চিন্তা করে দেখবেন এবং আমরা মনে করি, সেটা নির্বাচন বিলম্বিত করার একটা প্রয়াসও হয়তোবা হতে পারে।’
মন্তব্য করুন