ইসলামে খোদাভীতি বা তাকওয়া আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। ইসলামে মূল স্তম্ভ পাঁচটি। এর মধ্যে তৃতীয় স্তম্ভ হলো সাওম বা রোজা। আগামীকাল ১২ মার্চ, (মঙ্গলবার) থেকে রোজা শুরু হচ্ছে। রোজার সাথে তাকওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এককথায় রোজাদার ব্যক্তির মধ্যেই আল্লাহভীতি বিদ্যমান। এ কারণেই রোজাদারকে আল্লাহতায়ালা অধিক মর্যাদা দিয়েছেন। মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজ হাতে রোজার প্রতিদান দিব।
রমজান মাসের এমন অনেক মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য কোনো মাসে নেই। পবিত্র কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন স্থানে রোজা পালনের উচ্চ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা রয়েছে। মহান আল্লাহ এ মাসে রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসেই পবিত্র কোরআনুল কারিম নাজিল করা হয়েছে (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)।
এ মাসের ইবাদত বন্দেগির ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে সুসংবাদ দিতেন। রজব ও শাবান মাসজুড়ে রমজানের ইবাদত-বন্দেগির জন্য নিজেকে তৈরি করতেন, দোয়া পড়তেন এবং সাহাবীদের দোয়া করতে বলতেন। রমজান মাসে রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হয়। এ মাসের জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ রাখা হয় এবং শয়তানকে বন্দি করে রাখা হয়।
রমজানের রাত ও দিনে মুসলমানের দোয়া অনবরত আল্লাহর দরবারে কবুল করা হয়। কোরআনের ঘোষণায় এ মাসে রয়েছে বরকতময় লাইলাতুল কদর। এ মাসের প্রতি রাতেই ফেরেশতাগণ মানুষকে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহ্বান করতে থাকে। পবিত্র রমজান মাসেই আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের প্রথম সমর অভিযান, বদরের যুদ্ধে বিজয় দান করেছিলেন। রমজান মাসে উমরা আদায় করলে, নবী করিম (সাঃ) এর সঙ্গে হজ পালনের সওয়াব পাওয়া যায়। সুতরাং যদি কেউ পবিত্র রমজান মাসের রোজা অস্বীকার করে, তাহলে সে ইসলাম ধর্মকে অস্বীকারকারী হিসেবে পরিগণিত হবে।
মহান সৃষ্টিকর্তা জ্বিন এবং ইনসানকে (মানুষ) সৃষ্টি করেছেন শুধু তার ইবাদত করার জন্য। রোজাদারের রমজানের রোজা একজন ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে। আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার যত ইবাদত আছে তার মধ্যে সহজ এবং অন্যতম ইবাদত হচ্ছে রোজা।
আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ পাওয়ার আর যত ইবাদত আছে, ঐ ইবাদতগুলো নিখুঁতভাবে পালন করে আল্লাহকে রাজি-খুশি করা অনেকটা কঠিন কাজ। কিন্তু মহান আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে তার আনুগত্যে আছি, এটা একজন রোজাদার রোজা রেখে সহজেই প্রমাণ দিতে পারেন। একজন রোজাদার এই মার্চ-এপ্রিল মাসের খরতাপ, গরমের মধ্যে তৃষ্ণায় কাতর হয়ে জাহান্নামের ভয়ে জান্নাতের আশায় রোজা পালন করেন শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্য।
একজন রোজাদার রোজা রেখে তৃষ্ণায় কাতর হয়ে এত কষ্টের মধ্যে ইচ্ছা করলে ঘরের মধ্যে গোপনে একাকী তার তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারেন। কিন্তু একমাত্র আল্লাহর হুকুম পালনের জন্যই তাকওয়ার কারণে অধিক কষ্ট স্বীকার করে তিনি রোজা রাখেন। আর এই কারণেই আল্লাহ তায়ালার বুঝতে বাকি থাকে না যে, বান্দা আমাকে বিশ্বাস করে রোজা রাখছে। আল্লাহ তায়ালা রোজাদারদের ওপর খুশি হয়ে কঠিন হাশরের ময়দানে নিজ হাতে হাউসে কাওসারের পানি পান করিয়ে চিরতরে পিপাসা নিবারণ ও জান্নাত দিয়ে পুরস্কৃত করবেন।
আমরা মুসলমান, যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করি পরকালে কঠিন শাস্তির ভয়ে ও বেহেশতে অসীম সুখ, অনাবিল আনন্দ পাওয়ার সহজ ইবাদত পবিত্র রমজানের রোজা। রমজানে রোজা পালনের মধ্য দিয়ে সকলের জন্য বয়ে আসুক জান্নাতের বার্তা।
আলহাজ এম. এ. কাদের: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মন্তব্য করুন