আবারও ইসরায়েলে হামলা করতে পারে ইরান
ইসরায়েলে আবারও হামলার হুমকি দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। তিনি বলেছেন, দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের সব লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছতে পারে এবং যেকোনো পাল্টা হামলার জবাব তেহরান দেবে। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং তৎপরবর্তী পাল্টা হামলার আশঙ্কা নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন। সে বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, তেহরানের সংকল্পকে পরীক্ষা করার সাহস করবেন না। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তাদের (ইসরায়েলের) সব লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছতে পারে। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠান বা অবকাঠামোর ওপর যে কোনো হামলার জবাব দেব।  এ সময় ইসরায়েলে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার প্রভাব নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা শেষে তিনি বলেন, নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে ইরান। হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে ইসরায়েল হত্যা করে সংগ্রাম বন্ধ করতে চাইছে। কিন্তু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান প্রতিরোধ একজন ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে না। ভবিষ্যতে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধ আরও বেগবান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। গত ১ অক্টোবর রাতে প্রায় ১৮০টি ব্যালিস্টিক মিসাইল দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালায় তেহরান। আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলিদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলি হামলায় নিহত হওয়ার পর এ পদক্ষেপ নেয় তেহরান। এরপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ইতি টানতে চাইছে ইরান। দেশটি বলছে, যা হওয়ার হয়েছে; নতুন করে তারা আর ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়বে না। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি ২ অক্টোবর এক্স-এ এক পোস্টে বলেছিলেন, লেবাননে হিজবুল্লাহ এবং গাজায় আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় তেহরান ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সরকার প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত না নিলে আমাদের পদক্ষেপ এখানেই শেষ। যদি ইসরায়েল পাল্টা কিছু করে বসে তবে আমাদের প্রতিক্রিয়া আরও শক্তিশালী হবে। এদিকে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর যুগ্ম প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি তেহরানের বিরুদ্ধে আরও কোনো প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিলে ইসরায়েলের সব অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি ইসরায়েল তার অপরাধগুলো চালিয়ে যেতে চায় বা আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে কিছু করতে চায়, তাহলে আজকের রাতের অভিযানের চেয়ে আরও কয়েকগুণ শক্তিশালী হামলা হবে। তাদের সব অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে। ইরানের বিপ্লবী গার্ড কোর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কয়েক গুণ বেশি শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত বলে জানান তিনি। সর্বশেষ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির বক্তব্যে দেশটির যুদ্ধ এড়ানোর আগের মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছে। সে সঙ্গে তেহরানের যেকোনো হামলা ঠেকাতে এবং পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নেওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। 
৪৫ মিনিট আগে

আকাশপথ বন্ধ করে দিল ইরান
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধকর পরিস্থির মধ্যেই হঠাৎ নিজেদের সব বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। রোববার (৬ অক্টোবর) রাত ৯টা থেকে সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল ৬টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে বিমানবন্দরগুলো। দেশটির বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা মেহের নিউজ।   মেহের নিউজ জানিয়েছে, এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ ইরানি কর্তৃপক্ষ সব পাইলটকে পাঠিয়েছে। তবে জরুরি ফ্লাইট, ফেরি ফ্লাইট এবং সরকারি বিমানকে এর আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।  ইরানের আরেক রাষ্ট্রায়াত্ত্ব বার্তাসংস্থা ইরনা জানিয়েছে, ‘অপারেশনাল সীমাবদ্ধতার’ কারণে বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে, এর সঙ্গে ইসরায়েলের পাল্টা হামলার বিষয়টি থাকতে পারে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।  গেল মঙ্গলবার ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ১৮১টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়ে ইরান। এরপর থেকেই পাল্টা জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে তেল আবিব। তবে, কবে বা কখন হামলা চালানো হবে তা স্পষ্ট করেনি ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি। 
০৭ অক্টোবর, ২০২৪

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না ইরান
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তার দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না; তবে ইসরায়েল যদি ফিলিস্তিন ও লেবাননে সামরিক অভিযান বন্ধ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে ইরান আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে। দুই দিনের সরকারি সফরে কাতারে গেছেন পেজেশকিয়ান। সেখানে বুধবার কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠকের সময় এই ইস্যুতে ইরানের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি। খবর আলজাজিরার। বৈঠক শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমার এই সফরের প্রধান উদ্দেশ্য দুটি—প্রথমত, দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ ও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে কাতারের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করা এবং দ্বিতীয়ত মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে কাতারের আমিরের সঙ্গে মতবিনিময়। মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমি কাতারের আমিরের কাছে ইরানের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। আমি বলেছি যে, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে নিরীহ বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। তারা যদি এই তৎপরতা থেকে সরে না আসে, তাহলে ভবিষ্যতে তাদের আরও কঠোর প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে।’ প্রসঙ্গত, ইরান ও ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরবৈরী দেশ। এই বৈরিতা আরও বৃদ্ধি পায় ২০২৩ সালে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বাঁধার পর থেকে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাাশি ২৪২ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় হামাস ও তার মিত্রগোষ্ঠী প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা। এই হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের উদ্ধার করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ), যা এখনো চলছে। বুধবার যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের সংখ্যা হিসেবে ধরে এক বিবৃতিতে গাজার বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর গত প্রায় এক বছরের অভিযানে গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪১ হাজার ৬৮৯ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ৯৬ হাজার ৬২৫ জন। এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান শুরুর পর থেকে হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে ইরানের সমর্থনপুষ্ট সশস্ত্র ইসলামিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। জবাব দিতে শুরু করে ইসরায়েলও। উভয়পক্ষের সংঘাতে এ পর্যন্ত কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই হিজবুল্লাহর সদস্য এবং লেবাননের নাগরিক। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে হিজবুল্লার বিরুদ্ধে হামলার তীব্রতা বৃদ্ধি করে ইসরায়েল। দেশটির বিমান বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহসহ গোষ্ঠীটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডার। এক কথায়, গত দুই সপ্তাহে হিজবুল্লাহর শীর্ষ চেইন অব কমান্ড ভেঙে দিয়েছে ইসরায়েল। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে দক্ষিণ লেবাননে বিমান হামলা চালানোর পর মঙ্গলবার ভোর থেকে সেখানে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের স্থল বাহিনী। ওই দিন রাতেই ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে মোট ১৮১টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। এ অবস্থায় যে কোনো সময় ইরানে পাল্টা হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল।
০৪ অক্টোবর, ২০২৪

যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ইরান
লেবানন-ইসরায়েল যুদ্ধে ইরান শেষ পর্যন্ত অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে মারাত্মক সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে তেহরান। লেবাননে চলমান পরিস্থিতিতে ইরান অংশ নিলে মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধ যে ছড়িয়ে পড়বে, তা নিয়ে নিশ্চিত বিশ্লেষকরা; কিন্তু সেই যুদ্ধের ধকল ইরান সামলাতে পারবে কি না, তা নিয়েও শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। হিজবুল্লাহকে শায়েস্তা করতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে আকাশপথে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের হামলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ২০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। বাঙ্কার বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন খোদ হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। তার সঙ্গে নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহর আরও ২০ ঊর্ধ্বতন নেতা। এসব হামলায় হিজবুল্লাহর মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে বলে মনে করছেন অনেকে। এ অবস্থায় নতুন নেতার নাম এখনো ঘোষণা করেনি সংগঠনটি। হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর বিভক্ত হয়ে পড়েছে আরব বিশ্ব। আরব বিশ্বের অনেক দেশে এসব ঘটনায় বিক্ষোভ হলেও নাসরুল্লাহ ও হিজবুল্লাহ প্রশ্নে বেশিরভাগ দেশই নিশ্চুপ। এদিক থেকে লেবাননে জড়িয়ে পড়লে ইরান মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ থেকে কতটা সমর্থন পাবে, তা নিয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরাকসহ শিয়াপ্রধান দেশগুলোর সরকারও শেষ পর্যন্ত ইরানকে সমর্থন করে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। অন্যদিকে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু ও ইরানের মাটিতে খোদ হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যু নতুন করে দেশটির গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড নিয়ে সন্দেহের দেখা দিয়েছে। ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে, তা মুখে কেউ স্বীকার না করলেও তা নিয়ে জনগণের মাঝে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ সঙ্গিন। এ অবস্থায় তেহরান যুদ্ধের ভার বহন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে দেশটির জনগণের মাঝেই প্রশ্ন উঠেছে। ইরানের কী করা উচিত তা নিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী সোমবার যেভাবে ইরানকে হুমকি দিয়েছেন, সেরকমটা ঘটলে এ যুদ্ধে তেহরানের জড়িয়ে পড়াটা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র আগাম জানিয়ে দিয়েছে, লেবানন-ইসরায়েল যুদ্ধে ইরানের হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না তারা। ইসরায়েলে হামলা চালালে ইরানকে ‘গুরুতর পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এমন হুঁশিয়ারি দেন। মঙ্গলবার এক এক্স-বার্তায় অস্টিন লেখেন, ‘আমি আজ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে নিরাপত্তা উন্নয়ন এবং ইসরায়েলি অভিযান নিয়ে কথা বলেছি। আমি স্পষ্ট করে দিয়েছি, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে। লেবানিজ হিজবুল্লাহ যাতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সম্প্রদায়ের ওপর ৭ অক্টোবরের মতো আক্রমণ পরিচালনা করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সীমান্তে হিজবুল্লাহর আক্রমণের জন্য তাদের অবকাঠামো ভেঙে ফেলার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আমরা সম্মত হয়েছি। আমি নিশ্চিত করেছিলাম যে, সীমান্তের উভয় দিকে বেসামরিক নাগরিকরা যাতে নিরাপদে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য একটি কূটনৈতিক প্রস্তাব প্রয়োজন। স্পষ্ট করে দিচ্ছি যে, ইরান ও ইরান সমর্থিত সন্ত্রাসী সংগঠনের অব্যাহত হুমকির মুখে মার্কিন কর্মীদের, অংশীদারদের এবং মিত্রদের রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভালো অবস্থানে রয়েছে। ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে ইরানকে গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
০২ অক্টোবর, ২০২৪

যে কোনো মুহূর্তে ইসরায়েলে হামলা চালাতে পারে ইরান
যে কোনো মুহূর্তে ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে ইরান। সম্ভাব্য এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য ইরান প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দাবি করেছেন হোয়াইট হাউসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। একইসঙ্গে ইরান থেকে সরাসরি হামলা হলে ভয়াবহ পরিণতির ব্যাপারেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ওই কর্মকর্তা।  হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ব্যালিস্টিক মিসাইল দিয়ে ইসরায়েলে হামলার সম্ভাব্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান। ওই হামলা রুখতে আমরা সক্রিয়ভাবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা প্রচেষ্টায় সহায়তা করে যাচ্ছি।  মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো জানিয়েছে, ইসরায়েলে তেহরানের সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে মন্তব্যের জন্য জাতিসংঘের ইরানি মিশনের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো জবাব দেননি। এ বিষয়ে মুখ খুলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের দূতাবাসও।  ঘটনাবহুল সপ্তাহ কাটানোর পর গেল শুক্রবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয় লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। এ নিয়ে লেবানন, ইরান, সিরিয়া ও ইয়েমেনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ওই হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই লেবাননে সীমিত পরিসরে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, ইসরায়েলের একাধিক গুপ্তহত্যার পর ইরান জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল। কিন্তু এতদিন চুপ থাকলেও ইরানের এই জবাব এখন যে কোনো মুহূর্তে শুরু হতে পারে। এক্সিওস জানিয়েছে, সোমবার লেবাননে ইসরায়েল স্থল হামলা চালানোর ঘোষণা দেওয়ার পরই ইরানের সম্ভাব্য হামলার সম্ভাবনা বেড়েছে। এদিকে ইসরায়েলে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস সম্প্রতি এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আসন্ন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইঙ্গিত রয়েছে।  
০১ অক্টোবর, ২০২৪

ইসরায়েলের হামলা / লেবাননের যোদ্ধাদের প্রধান নিহত, এখন কী করবে ইরান
ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানপন্থি লেবাননের প্রভাবশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণে হিজবুল্লাহকে মোকাবিলার ঘোষণা দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এরপর রাতভর নাসরুল্লাহকে হত্যার উদ্দেশ্যে বৈরুতসহ প্রায় ১৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে গোষ্ঠীর প্রধানসহ কয়েকজন কমান্ডার নিহত হন। এ ঘটনার পর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। গতকাল খবরটি প্রকাশের পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের জন্য তেহরান মূলত যাদের অস্ত্র, অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, তার মধ্যে অন্যতম হিজবুল্লাহ। এখন তাদের এক মিত্রবাহিনী প্রধানের মৃত্যুতে ইরানও জবাব দেওয়ার হুংকার দিয়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে ইরান কি সত্যি প্রতিশোধ নেবে নাকি সংযম দেখাবে? মার্কিন সংবাদমাধ্যমে সিএনএনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, গত সোমবার থেকে লেবাননে ব্যাপক মাত্রায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলার পর এখন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে ইরান। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে, এখন কীভাবে জবাব দেবে তেহরান। এর আগে বুধবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, হিজবুল্লাহর নেতাদের মৃত্যু নিঃসন্দেহে বড় ক্ষতি। তবে গোষ্ঠীটি এখনো নিজেদের রক্ষা করার সক্ষমতা রাখে। এরপর শুক্রবারের হামলার পর লেবাননের ইরানি দূতাবাস জানায়, কোনো সন্দেহ নেই যে এটি (হামলা) নিন্দনীয় অপরাধ, এটি খেলার নিয়ম বদলে দেবে এবং অপরাধীরা অবশ্যই শাস্তি পাবে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক কুইন্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পারসি বলেন, এ সংঘাতে না জড়ানোর ইরানি যুক্তি সম্ভবত আর টিকবে না। হিজবুল্লাহ নিজেদের রক্ষা করার সক্ষমতা রাখে, এর প্রধানের মৃত্যুর পর, সেই যুক্তি ভেঙে পড়েছে। এখন যদি ইরান প্রতিক্রিয়া না দেখায়, তাহলে ওই অঞ্চলের অন্য মিত্রদের (হুতি, হামাস) সঙ্গেও ইরানের বিশ্বাসযোগ্যতা ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। এদিকে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যদিও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ও প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক বক্তব্যে সুস্পষ্ট যে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে নয়, বহির্বিশ্বের সঙ্গে সুসস্পর্ক গড়তে বেশি আগ্রহী। এখন যদি তেহরান হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাতে সরাসরি হস্তক্ষেপ না করে, সেক্ষেত্রে এই অঞ্চলের অন্য মিত্র মিলিশিয়াদের কাছে বার্তা যেতে পারে যে সংকটের সময় ইসলামি প্রজাতন্ত্র তাদের নিজেদের স্বার্থ এবং টিকে থাকার দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। বিষয়টি নিয়ে তেহরান বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে আলজাজিরার এক বিশ্লেষণে ইস্তাম্বুল জাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইসলাম অ্যান্ড গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সামি আল-আরিয়ান বলেন, এতে (নাসরুল্লাহ নিহত) আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ার শঙ্কা অনেক বেশি এবং এটি সব পর্যায়ে ঘটতে পারে। নিঃসন্দেহে এ আঞ্চলিক যুদ্ধের অংশ হবে ইরান। আমি সন্দেহ করছি একটা সূচনা হবে। আমার ধারণা, লেবানন, ইয়েমেন, ইরাকসহ অন্যান্য স্থান থেকে প্রতিশোধমূলক হামলা হবে। এখন ইসরায়েল কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তার ওপর নির্ভর করছে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ কোন দিকে যেতে পারে। এর আগে শনিবার এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ জানায়, ‘হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহ সংগঠনটির মহান ও অমর শহীদ কমরেডদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন; যাদের তিনি ৩০ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’ এর আগে এক এক্স বার্তায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছিল। এতে বলা হয়, ‘নাসরুল্লাহ আর বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ পরিচালনা করতে পারবেন না।’ খামেনির বার্তা: খামেনি বলেছেন, ‘আঞ্চলিক সব প্রতিরোধী শক্তি’ হিজবুল্লাহর পাশে রয়েছে। লেবাননের শিয়া ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান নাসরুল্লাহ ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন এমন খবর জানার পর তিনি এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, হিজবুল্লাহর উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি করার জন্য ইসরায়েল খুবই নগণ্য। এ অঞ্চলের ভাগ্য নির্ধারণ করবে প্রতিরোধী শক্তিগুলো। এ শক্তির শীর্ষে রয়েছে বিজয়ী হিজবুল্লাহ। নিজেদের সবকিছু নিয়ে লেবানন ও হিজবুল্লাহর পাশে গর্বের সঙ্গে দাঁড়ানো সব মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক। হিজবুল্লাহর প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি: এক টেলিগ্রাম বার্তায় সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবং গাজা ও ফিলিস্তিনিদের সমর্থন, লেবাননের জনগণের সুরক্ষায় লড়াই অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র বলেন, আমাদের যুদ্ধ লেবাননের মানুষের বিরুদ্ধে নয়, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে। বিশ্ব প্রতিক্রিয়া: নাসরুল্লাহকে হত্যা-পরবর্তী সময়কে মধ্যপ্রাচ্যের বিপজ্জনক মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় এ অঞ্চলে বড় ধরনের যুদ্ধের শঙ্কা বেড়ে গেছে। ফ্রান্স সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলিরা একে তাদের বিরাট বিজয় হিসেবে দেখছেন। আর হামাস, হুতিসহ অন্য মিলিশিয়ারা অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে নিয়েছে। হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে গাজার স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এখন কূটনীতিকরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। তবে ইসরায়েল বর্তমানে হিজবুল্লাহকে নিশ্চিহ্ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গোষ্ঠীটির অন্য কমান্ডারদের হত্যার মিশনে নেমেছে। এদিকে, ইরান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন লেবানন ও ইসরায়েলের আকাশপথ ব্যবহার না করার জন্য এয়ারলাইন্সগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। আর নাসরুল্লাহ হত্যার ঘটনায় ইসরায়েল সব সীমা অতিক্রম করেছে বলে মন্তব্য করেছে ইরাক। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ ঘটনায় তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে। নাসরুল্লাহর পরিচয়: নাসরুল্লাহর জন্ম ১৯৬০ সালে। বেড়ে উঠেছেন বৈরুতের পূর্বাঞ্চলীয় উপকণ্ঠের বুর্জ হামুদ এলাকায়। বাবা আবদুল করিম ছিলেন একজন সাধারণ সবজি বিক্রেতা। তার ৯ সন্তানের মধ্যে নাসরুল্লাহ ছিলেন সবার বড়। ১৯৭৫ সালে লেবানন গৃহযুদ্ধের মুখে পড়লে নাসরুল্লাহ শিয়া মুভমেন্ট ‘আমালে’ যোগ দেন। পরে ১৯৮২ সালে আরও কয়েকজনের সঙ্গে দলটি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। ১৯৮৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার কথা জানায় হিজবুল্লাহ। তাতে যোগ দেন নাসরুল্লাহ। সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে ইসলামের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। আর ইসরায়েলকে প্রকাশ্য ধ্বংসের ডাক দিয়ে আসছে তারা। ১৯৯২ সালে হিজবুল্লাহর প্রধান হন নাসরুল্লাহ। এর আগে ইসরায়েলের এক হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন তার পূর্বসূরি আব্বাস আল–মুসাবি। হিজবুল্লাহপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর মুসাবি হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া ছিল হাসান নাসরুল্লাহর প্রথম কাজ। নাসরুল্লাহ তখন লেবাননের দক্ষিণে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গেও তার যোদ্ধাদের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন। একপর্যায়ে ২০০০ সালে সেখান থেকে পিছু হটে দেশে ফিরে যান ইসরায়েলি সেনারা। নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধাদের পাশাপাশি ইরাক ও ইয়েমেনের মিলিশিয়াদের প্রশিক্ষণগত সহায়তা দিয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহারের লক্ষ্যে ইরানের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেটের এক সমৃদ্ধ ভান্ডার রয়েছে হিজবুল্লাহর। দখলকৃত লেবাননি ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনাদের তাড়াতে প্রথমে একটি মিলিশিয়া দল হিসেবে গড়ে উঠেছিল হিজবুল্লাহ। পরে এ দলকেই লেবাননের সেনাবাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এক বাহিনীতে রূপ দেন নাসরুল্লাহ। সর্বশেষ হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল উত্তেজনা বেড়ে যায় গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে। ওই দিন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের রকেট হামলার জের ধরে গাজায় নজিরবিহীন তাণ্ডব শুরু করে দেশটি। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে মাঝেমধ্যেই ইসরায়েলের অভ্যন্তর ও দখলকৃত গোলান মালভূমি এলাকায় রকেট হামলা চালাচ্ছে হিজবুল্লাহ।
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

লেবাননের যোদ্ধাদের প্রধান নিহত, এখন কী করবে ইরান
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) হিজবুল্লাহর সদর দপ্তর লক্ষ্য করে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হামলা চালানো হয়। এরপর যত সময় গড়াচ্ছে ততই তার নিহত বা আহত হওয়ার বিষয়টি জোরালো হচ্ছে। ৩২ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীটিকে আজকের সুসংহত অবস্থানে এনেছেন হাসান নাসরুল্লাহ। মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব ব্যাপক। ফিলিস্তিন ভূখণ্ড গ্রাস করার ইসরায়েলের খায়েশ পূরণে অন্যতম বাধা হাসান নাসরুল্লাহ ও তার বাহিনী। যদি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মাথাব্যথার অন্যতম কারণ নাসরুল্লাহ আহত বা নিহত হন তবে সেটি এ যাবৎকালে ইসরায়েলের বড় বিজয় হবে। বিমান হামলার বেশ কয়েক ঘণ্টা পার হলেও কোনো পক্ষ হাসান নাসরুল্লাহর ব্যাপারে স্পষ্ট বিবৃতি দেয়নি। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী শুক্রবার সন্ধ্যায় লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। তারা হিজবুল্লাহর সদর দপ্তরে সফল আঘাত করেছে। মুহুর্মুহু গোলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা কম্পাউন্ড। একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা টাইমস অব ইসরায়েলকে নিশ্চিত করেছেন যে, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে লক্ষ্য করেই হামলা করা হয়েছে। তিনি সেই সময়ে কমান্ড সেন্টারে ছিলেন। এমনটি তারা বিশ্বাস করেন। কারণ, নাসরুল্লাহকে হত্যার সিদ্ধান্তের পর গত সপ্তাহ থেকে তার গতিবিধি নির্ভুলভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হামলাটি হয়।  একাধিক হিব্রু মিডিয়ার প্রতিবেদনে নাসরুল্লাহর ভাগ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, হামলায় ভূগর্ভস্থ সদর দপ্তরও অক্ষত নেই। এ রকম একটি বড় হামলার পর তিনি সেখান থেকে জীবিত বেরিয়ে আসবেন; তা কল্পনা করা খুব কঠিন। রয়টার্স খুব চেষ্টা করেও নাসরুল্লাহ বা তার সঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। তাদের টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়া গেছে। গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকেও নাসরুল্লাহর জীবিত থাকা নিয়ে অফিশিয়াল বিবৃতি আসেনি। তবে ইরানের সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজ নাসরুল্লাহ জীবিত ও অক্ষত আছেন বলে দাবি করেছে। একই সময় ইরানের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেনি। ইরান নাসরুল্লাহর অবস্থান যাচাই করে দেখছে বলে ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ওই খবরে নাসরুল্লাহর যে ছবি ব্যবহার করছে, তা শোকের আবহ দিচ্ছে।  এদিকে নাসরুল্লাহর মৃত্যুর সংবাদ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি নিহতের খবরে সিরিয়ার ইদলিবে মিষ্টি বিতরণ করেছেন স্থানীয় মানুষ। এক ভিডিওতে তাদের উল্লাস করতে দেখা যায়।  শুক্রবারের হামলায় নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছে কি না জানতে চাইলে ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমি মনে করি, এ ব্যাপারে এখন কথা বলা খুব তাড়াতাড়ি বলে গণ্য হবে। আমরা সফল হলে কখনো কখনো তারা (ইসরায়েলের শত্রু) সত্য গোপন করে।’
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কোনো শত্রুই ইরান আক্রমণের সাহস করে না, বললেন খামেনি
ইরান প্রতি বুধবার পবিত্র প্রতিরক্ষা সপ্তাহ পালন করে। এ উপলক্ষে তেহরানে এক অনুষ্ঠানে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, দৃঢ় প্রতিরোধ শক্তি আর স্থিতিশীলতার কারণে শত্রুরা ইরান আক্রমণের সাহস করে না। খামেনি বলেন, ইসলামি বিপ্লব এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্রের কণ্ঠস্বর খুবই স্পষ্ট, যা বিশ্বের ভ্রান্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে। তিনি এ সময় আরও জানান, শত্রুরা ইরানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার এবং পারমাণবিক ইস্যুকে বাহানা হিসেবে ব্যবহার করছে। আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা লেবানন ও ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে ইরানের ওপর আরোপিত যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি জানান, লেবানন ও ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য মিথ্যা। খামেনি বলেন, আমেরিকানরা ইসরাইলি অপরাধ সম্পর্কে অবগত এবং তারাও এতে জড়িত। বর্তমান মার্কিন সরকার আসন্ন নির্বাচনের জন্য ইসরাইলি সরকারকে সমর্থন করছে। তারা যেভাবে নির্বাচনে জয় চায়, তেমনি বিজয় দেখতে চায় ইসরাইলের। অথচ আমেরিকান মুসলমানদের ভোট পেতে তারা এমন ভান করছে, যেন তারা এতে জড়িত নয়। 
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

লেবাননে হামলার মধ্যেই অত্যাধুনিক মিসাইল উন্মোচন করল ইরান
লেবাননে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের লক্ষ্যবস্তুতে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে বাড়ছে লাশের মিছিল। নিজের মিত্রের ডেরায় এমন হামলার মধ্যেই এবার নতুন মিসাইল উন্মোচন করল ইরান। অত্যাধুনিক এই মিসাইল ইসরায়েলে আঘাত হানতে সক্ষম। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে ওই মিসাইল উন্মোচন করে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী। তেহরানে শনিবার এক সামরিক প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই প্রথমবারের মতো নিজেদের নতুন ব্যালিস্টিক মিসাইল জিহাদের উন্মোচন করে ইরান। নতুন মিসাইলটি তৈরি করেছে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অ্যারোস্পেস ফোর্স। নতুন এই মিসাইলটি তরল জ্বালানিচালিত। ১ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম এই মিসাইলের রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। জিহাদের ডুয়েল-মিসাইল লঞ্চার রয়েছে, যা ইরানের অন্য তরল জ্বালানিচালিত মিসাইলের চেয়ে আলাদা। ইরানি সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, জিহাদ মূলত কিয়াম মিসাইলের উন্নততর ভার্সন। এর আগে কিয়ামের রেঞ্জ ৮০০ কিলোমিটার থেকে ১ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছিল। পাশাপাশি এর ওয়ারহেড গাইডেড করা হয়েছিল। ২০১০ সালে কিয়াম মিসাইল প্রকাশ্যে আনে ইরান। জিহাদ মিসাইলের ওয়ারহেডের ওজন প্রায় ৬০০ কেজি। এই মিসাইলটি শব্দের চেয়ে ৮ গুণ বেশি গতিতে ছুটতে সক্ষম। উন্নত এই মিসাইলের ভিন্ন ভিন্ন লঞ্চ প্লাটফর্ম রয়েছে, এর ফলে একসঙ্গে দুটি মিসাইল ছোড়া যায়। তরল জ্বালানিচালিত মিসাইলের প্রস্তুতির জন্য একটু বেশি সময় প্রয়োজন হয়। কিন্তু একযোগে দুটি মিসাইল লঞ্চ করার সুযোগ থাকায় অপারেশনাল ইফিশিয়েন্সি বেড়েছে। নিজেদের ব্যালিস্টিক মিসাইল কর্মসূচিতে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ উন্নতি করেছে ইরান। তবে তাদের এসব মিসাইল কতটা অত্যাধুনিক তা স্বাধীনভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গেল এপ্রিলে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রথমবারের মতো ইরানের মাটি থেকে প্রায় ৩৫০টি মিসাইল ছোড়া হয়েছিল। সেগুলোর প্রায় ৯৯ শতাংশই ভূপাতিত করেছে ইসরায়েল ও মিত্ররা। নিজেদের অস্ত্র ভান্ডারে নতুন নতুন মিসাইল যোগ করায়, এ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইলের পেছনে ইরান বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করায়, তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের। সমরাস্ত্রে ইরান যতই শক্তিশালী হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য ততটাই অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার শঙ্কায় রয়েছে। এমতাবস্থায় ইরানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। ইরানের মিসাইল কর্মসূচি লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তারা। এতে মিসাইল উৎপাদন, যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তি হস্তগত হওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে ইরানের জন্য। রাশিয়াকে ইরান মিসাইল সরবরাহ করেছে এমন অভিযোগে সম্প্রতি তেহরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। যদিও তাতে দমানো যাচ্ছে না ইরানকে।
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী ইরান : রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি, জ্বালানি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে চায় ইরান। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার ঢাকার তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে ইরানের রাষ্ট্রদূত মনসুর চাভুশি এ আগ্রহ প্রকাশ করেন।  এ সময় উভয় পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিনিময় করেন। রাষ্ট্রদূত অন্তর্বর্তী সরকারকে ইরান সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতার কথা জানান। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি, জ্বালানি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ইরানের আগ্রহকে স্বাগত জানান এবং বৈশ্বিক ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য ইরানকে ধন্যবাদ জানান। এদিকে, বাংলাদেশে পুলিশ ও নির্বাচনী সংস্কার এবং বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে জাতিসংঘ। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ আশ্বাস দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুয়েন লুইস। বৈঠকে গুয়েন লুইস বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশের পুলিশ ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার এবং বন্যা পুনর্বাসন ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় পুনর্গঠনের যে পরিকল্পনা নিয়েছে তাতেও সহায়তা করবে। গুয়েন লুইস অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কার উদ্যোগের প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং তিনি ড. ইউনূসকে বিপ্লব-পরবর্তী প্রশাসনের প্রধান হিসেবে ‘অসাধারণ ভূমিকা নেওয়ার জন্য’ ধন্যবাদ জানান। বৈঠকে তারা সংস্কার, দুর্নীতি, বন্যা, রোহিঙ্গা সংকট এবং জুলাই-আগস্ট মাসে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে তদন্ত নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, এখন সমগ্র জাতির জন্য সর্বাধিক ঐক্যের মুহূর্ত এবং তার সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে প্রত্যেকের জন্য একটি নজির স্থাপন করা। এখন অর্থনীতি সংস্কার এবং প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সঠিক পথে নিয়ে আসার লক্ষ্যে দেশের জন্য একটি দুর্দান্ত সুযোগ।
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
X