গাজায় ৯ মাসে ৬৮০ সেনা হারিয়েছে ইসরায়েল
গাজায় ৯ মাসের বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। দেশটির এ হামলা চালাতে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। খোদ ইসরায়েল যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার এক সদস্য গাজায় অভিযানে ইসরায়েলের ফলপ্রসূতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে তেল আবিব।  গাজায় অভিযান নিয়ে ইসরায়েল ঘরে বাইরে এখন আলোচনা চলছে। বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের যোদ্ধাদের নিঃশেষ করার দাবি করলেও আবার সেসব এলাকায় ফিরে আসতে হচ্ছে। এমনকি এ যুদ্ধ চালাতে ব্যাপক দাম দিতে হচ্ছে তাদের। বিভিন্ন পদধারী অনেক সেনাও হারাতে হয়েছে দেশটিকে।    ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গত নয় মাসে হামাসসহ অন্যান্য প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলায় অন্তত ৬৮০ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। সোমবার (০৮ জুলাই) লেবাননভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আইডিএফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছে, সর্বশেষ গাজায় ইসরায়েলের এক কমান্ডার নিহত হয়েছেন। তিনি ইসরায়েলের কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পসের ৬০১তম ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন। গাজায় যুদ্ধকালে নিহত ফিলিস্তিনিদের হামলায় তিনি নিহত হন। তাকে নিয়ে নিহত সেনার সংখ্যা ৬৮০ জনে দাঁড়িয়েছে।  উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবীহিন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাস। দেশটির এ হামলার জবাবে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে এ যুদ্ধ শুরু হয়। ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর রূপ নেয় যুদ্ধ।এরপর থেকে গাজার ওপর বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এমনকি তাদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি হাসপাতাল,স্কুল, শরণার্থী শিবির , মসজিদসহ ধর্মীয় স্থাপনাও।  সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার ২০ লাখ বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। দেশটির হামলার কারণে ধ্বংসস্তূপে  পরিণত হয়েছে গাজা।  জাতিসংঘের তথ্যমতে, ইসরায়েলে হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন গাজার ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি আর ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তারা। এছাড়া ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক আদালতে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে  অভিযুক্ত হয়েছে দেশটি। 
০৮ জুলাই, ২০২৪

গোপনে ফিলিস্তিনের বিপুল জমি দখল করল ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিপুল জায়গা নিজেদের বলে অনুমোদন করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের এ অনুমোদনের ফলে গত দিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জায়গা হারাচ্ছে পশ্চিম তীর। ইসরায়েলি দখলদার বিরোধী ওয়াচডগের এক রিপোর্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েল পশ্চিম তীরের তিন হাজার ১৩৮ একর জমি নিজেদের বলে অনুমোদন দিয়েছে। ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পর এবারই সবচেয়ে বেশি ভূখণ্ড নিজেদেরে করে নিল ইসরায়েল। অসলো চুক্তিতে বলা হয়, ধীরে ধীরে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে সরে যাবে। কিন্তু বাস্তবে এ চুক্তিকে থোড়াই কেয়ার করছে ইসরায়েল। প্রায় প্রতিবছর ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে ইসরায়েলের দখল করা জমি নিজেদের বলে অনুমোদন করে আসছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।  ইসরায়েলি অধিকার সংস্থা ‘পিস নাউ’ নতুন ভূখণ্ড অনুমোদনের বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পশ্চিম তীরের বেসামরিক ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগ গত ২৫ জুন নতুন ভূখণ্ডের অনুমোদন দিয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত বিষয়টি প্রকাশ করা হয়নি।  ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে পিস নাও নামের এ সংস্থা। তারা নতুন করে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখলের নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ড স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়াকে আরও কঠিনতর করে তুলছে।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিগ্রহণ করা ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ইসরায়েল এ জমিগুলোকে নিজেদের বলে অনুমোদন করেছে। কোনো জমি একবার নিজেদের অনুমোদন করলে পরে সেসব জমির ফিলিস্তিনি মালিকানাকে অস্বীকার করে ইসরায়েল। 
০৪ জুলাই, ২০২৪

নতুন করে লেখা হচ্ছে গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি
ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির চুক্তি নতুন করা লেখা হচ্ছে। দুপক্ষের কেউ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হওয়ায় নতুন করে কিছু পরিবর্তন আসছে এ চুক্তিতে। শনিবার (২৯ জুন) টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে প্রস্তাবিত জিম্মি এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি নতুন করে প্রস্তাব করছে। ইসরায়েলে জিম্মিদের পরিবারের ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে এমন তথ্য জানা গেছে।  শনিবার সংবাদমাধ্যম এক্সিওজ যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনটি সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানিয়েছে। তারা বলছে,  চুক্তির ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হচ্ছে। এ অনুচ্ছেদে প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে।  চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, চুক্তির ১২তম অনুচ্ছেদও সংশোধন করা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে প্রথম ধাপ থেকে দ্বিতীয় ধাপে স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে।  একটি সূত্র জানিয়েছে, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার চুক্তিটি সফল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী এ পরিবর্তন অনুমোদন করলে চুক্তিটি কার্যকর হতে পারে। দুপক্ষের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন হলে গাজায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এ সময় হামাস গাজায় জিম্মি থাকা ইসরায়েলি নারী, বয়স্ক ও অসুস্থদের মুক্তি দেবে। এ ছাড়া এ সময়ে দ্বিতীয় ধাপে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা চলমান থাকবে। দ্বিতীয় ধাপে হামাস তাদের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেবে। তবে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করলে ইসরায়েল আবার গাজায় অভিযান শুরু করতে পারবে।  হামাসের দাবি, চুক্তির জন্য গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হতে হবে। সাময়িক কোনো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে চাইছে না গোষ্ঠীটি। অন্যদিকে ইসরায়েল সাময়িক যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে আসছে।  হামাসের শীর্ষ নেতা ওসামা হামদান অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের শর্ত মেনে নেওয়ার জন্য হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে।  গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা করে ইসরায়েল। দেশটির হামলার জবাবে গাজায় পাল্টা হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এরপর থেকে এ যুদ্ধ দীর্ঘ আট মাসের বেশি ধরে এ যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। এর আগে গত নভেম্বরে সাত দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল। এ সময়ে বিনিময়ে ১১০ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের হাতে এখনো শতাধিক জিম্মি রয়েছেন। 
৩০ জুন, ২০২৪

ইসরায়েল কি গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে?
যদিও গত ১৮ জুন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন যে, ইসরায়েলে কোনো গৃহযুদ্ধ হবে না। তবে, তার বক্তব্য ভুল হতে পারে। নেতানিয়াহুর এই বিবৃতি ইসরায়েলে ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে দেওয়া। বিশেষ করে বেনি গ্যান্টজ এবং গ্যাদি এইজেনকটসহ কয়েকজন ওয়ার কেবিনেট মন্ত্রিসভার সদস্যের বহুল প্রত্যাশিত পদত্যাগের প্রেক্ষাপটে। তারা দুজনই ইসরায়েলি আর্মির সাবেক চিফ অব স্টাফ।  কিন্তু তাদের এই পদত্যাগ প্রয়োজন অনুসারে, নেতানিয়াহুকে একঘরে করে ফেলতে পারেনি। কারণ তার জনপ্রিয়তা প্রায় সম্পূর্ণভাবে ডান এবং কট্টর ডানপন্থিদের সমর্থনের উপর নির্ভর করে। কিন্তু এটি ইসরায়েলি সমাজে গভীর ও ক্রমবর্ধমান ফাটলকে আরও সুস্পষ্ট করে তুলেছে। এর ফলে, শেষ পর্যন্ত দেশটিকে রাজনৈতিক উত্থান থেকে একটি প্রকৃত গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। ইসরায়েলের বিভাজনকে পশ্চিমা গণতন্ত্রের বর্তমান রাজনৈতিক মেরুকরণের মতো একইভাবে দেখার সুযোগ নেই। গাজা যুদ্ধেরও অনেক আগে গল্পটির শুরু। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলের তিনটি দলের নেতারা কাহল লাভান বা, "ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট" নামে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করে।  কোয়ালিশনের দুজন প্রতিষ্ঠাতা, গ্যান্টজ এবং মোশে ইয়া’অ্যালনও সামরিক বাহিনীতে ছিলেন। তারা দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনী এবং দেশের বৃহত্তর সমাজে ব্যাপকভাবে সম্মানিত। নির্বাচনে তাদের আপেক্ষিক সাফল্য সত্ত্বেও  নেতানিয়াহুকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে তারা রাস্তায় নেমে এসেছেন। রাজধানীর তেল আভিভসহ ইসরায়েলের অন্যান্য শহরে বিক্ষোভকে ছড়িয়ে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটি হালকা কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। একটি অদ্ভুত জোট সরকারের পতনের পর নেতানিয়াহুর সব বিরোধী শক্তির দ্বারা এই আন্দোলন সংঘটিত হয়। দেশের ওপর চেপে বসা ডান এবং কট্টর ডানপন্থি শাসনের অবসানই ছিল যার একমাত্র লক্ষ্য। "ডান" এবং "কট্টর ডানপন্থি" এই টার্মগুলো এই ধারণাই দিতে পারে যে, ইসরায়েলের রাজনৈতিক সংঘাত মূলত আদর্শগত। যদিও ইসরায়েলের রাজনীতিতে মতাদর্শ একটি ভূমিকা পালন করে, কিন্তু নেতানিয়াহু এবং তার মিত্রদের প্রতি ক্ষোভ মূলত ইসরায়েলের রাজনীতিতে নতুন অধিকার প্রতিষ্ঠার ভাবনার দ্বারা ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত। এর দ্বারা দেশের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির পুনর্বিন্যাসের চেষ্টা করা হচ্ছে। সুতরাং, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এই ক্ষোভের শুরু এবং গাজা যুদ্ধ শুরুর আগে হাজার হাজার ইসরায়েলি অভূতপূর্ব গণবিক্ষোভ শুরু করে।  গ্যান্টজ এবং ইসরায়েলি সামরিক ও উদারপন্থি অভিজাতদের দ্বারা সমর্থিত ওই গণবিক্ষোভের  প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল- নেতানিয়াহুকে ক্ষমতার রাজনৈতিক ভারসাম্য পরিবর্তনে বাধা প্রদান, যা বিগত ৭৫ বছর ধরে ইসরায়েলি সমাজকে শাসন করেছে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে, সেই দাবি শাসকগোষ্ঠীর পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়। রাজনৈতিক বিভাজনের কারণ হিসেবে যে বিষয়টি গণমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে, তা হলো-  ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যেই নেতানিয়াহুর ইসরায়েলের বিচার ব্যবস্থাকে কোনঠাসা করা। তবে যে কারণে গৃহযুদ্ধের হুমকি সৃষ্টি করেছে সেটির শেকড় ছিল একেবারেই ভিন্ন এবং আরও গভীরে। সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধের গল্পটি ইসরায়েলি রাষ্ট্রের মতোই পুরোনো। এ নিয়ে নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো হয় ভিন্ন কারণ নির্দেশ করছে, নয়তো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি তার আরেকটি মিথ্যাচার।  গত ১৬ই জুন, নেতানিয়াহু বিদ্রোহী সামরিক জেনারেলদের কটাক্ষ করে বলেছিলেন যে, "আমাদের দেশে একটি সেনাবাহিনী আছে এবং আরেকটি দেশের কোনো সেনাবাহিনী নেই।" সত্যিকার অর্থে, ইসরায়েল সশস্ত্র সংঘাতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সশস্ত্র সংঘাতের মধ্যদিয়েই টিকে আছে। ইসরায়েল রাষ্ট্রের শুরু থেকেই দেশটির সামরিক বাহিনী বিশেষ মর্যাদা পেয়ে আসছে। এ কারণে, একটি অলিখিত চুক্তি রয়েছে যা সেনাবাহিনীর জেনারেলদেরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও বিশেষ আসন দিয়েছে। এরিয়েল শ্যারন, এহুদ বারাক এবং ইসরায়েলের প্রধান প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড বেন গুরিয়নসহ অন্যদের মতো সবাই তাদের সামরিক সংশ্লিষ্টতার কারণে ইসরায়েলের রাজনীতির শীর্ষে পৌঁছেছিলেন।  কিন্তু নেতানিয়াহু ক্ষমতায় এসে এর সবকিছুই  পরিবর্তন করেছেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি সামরিক বাহিনীকে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আটকে ফেলা এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন করতে ইসরায়েলের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে পুনর্গঠন করতে শুরু করেন। আর এসব করতে গিয়ে তিনি মূলত, ১৯৪৮ সালে শুরু হওয়া ইসরায়েলের রাজনৈতিক ভারসাম্যের মূল স্তম্ভকে লঙ্ঘন করেন। ফিলিস্তিনি জনগণকে জাতিগতভাবে নির্মূলের  কাজটি শেষ করার আগেই, সদ্য জন্ম নেয়া ইসরায়েলে নাকবার সময় দেশটিতে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের ২৬ মে, বেন গুরিয়ন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গঠনের বিষয়ে একটি আদেশ জারি করেন। সে সময় ইরগুন এবং লেহি (স্টার্ন গ্যাং) সহ কিছু ইহুদিবাদী মিলিশিয়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা সংরক্ষণে একটি ডিক্রির জন্য লড়াই করেছিলেন।  সেখান থেকেই মূলত, কথিত "অ্যালটালেনা অ্যাফেয়ার" (১৯৪৮ সালে সংঘটিত সহিংস সংঘর্ষ) এর সূচনা। আইডিএফ'র ওপর আধিপত্য বিস্তারকারী হ্যাগানা (প্রধান ইহুদবাদী প্যারা মিলিটারি ফোর্স) ইরগুনের (আরেকটি প্যারা মিলিটারি ফোর্স) উদ্দেশ্যে অ্যালটালেনা কার্গো জাহাজে করে আনা একটি অস্ত্রের চালান আটকানোর চেষ্টা করেছিল।  তখন ইরগুনের প্রধান মেনাচেম বিগিনের (যিনি ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হন) নেতৃত্বে ভয়ানক সংঘর্ষ হয়। এর ফলে ইরগুনের অনেক সদস্য নিহত ও গণগ্রেপ্তারের শিকার হয় এবং জাহাজে গোলাবর্ষণ হয়।  আজকাল ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলোতে অ্যালটালেনা অ্যাফেয়ারের কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়। কারণ, গাজা যুদ্ধ ইতোমধ্যে ইসরায়েলি সমাজকে নানা ভাগে বিভক্ত করছে।  এই বিভাজন সামরিক বাহিনীকে সেই ছোট্ট গৃহযুদ্ধের পরে অর্জিত ঐতিহাসিক ভারসাম্য রক্ষা থেকে সরে আসত বাধ্য করছে। অ্যালটালেনা অ্যাফেয়ার এমন একটি ঘটনা, যা ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের মাত্র কয়েকদিন পরেই একটি রাষ্ট্র হিসাবে তার ভবিষ্যৎ শেষ করে দিতে পারত। গাজা নিয়ে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ এই সংঘাত প্রকৃতপক্ষে, শুধু গাজা, হামাস কিংবা হিজবুল্লাহকে ঘিরে নয়, বরং ইসরায়েলের নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েও। ফলে, ৭ই অক্টোবরের জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে বলির পাঁঠা বানানো এবং গাজায় সামরিক অভিযানের ব্যর্থতার দায় চাপিয়ে দেওয়া হলে, আইডিএফকে হয় কোণঠাসা হয়ে থাকতে হবে, নয়তো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সংঘর্ষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি পরেরটি বেছে নেওয়া হয়, তবে গৃহযুদ্ধের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। মোহসিন কবির, মিডল ইস্ট মনিটর অবলম্বনে অনুদিত
২৬ জুন, ২০২৪

ঔপনিবেশিক ইসরায়েল যেভাবে গাজাকে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে
গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজার বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্য করে ইসরাইল আনুমানিক ৭০ হাজার টন বোমা নিক্ষেপ করেছে। ধ্বংসাত্মক হামলায় ১৫ হাজার শিশুসহ প্রায় ৩৭ হাজার ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে। এ ছাড়া ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে নিখোঁজ আরও প্রায় ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে নিহতের এই সংখ্যাগুলোর কোনো পাত্তাই থাকবে না। কারণ, সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) সতর্ক করে বলেছে যে, মধ্য জুলাই নাগাদ গাজায় ১ মিলিয়নের বেশি (মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি) মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যেতে পারে।  এমন ভয়াবহ বিশ্লেষণের ফলে এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর সর্বশেষ হামলা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সত্যিকার অর্থে কোনো হস্তক্ষেপই করছে না। ফলে, বোমা হামলার প্রত্যক্ষ ফলাফলের চেয়েও ইসরাইলের জোরপূর্বক অনাহারে অনেক বেশি মানুষ মারা যাবে। এটা পরিষ্কার হওয়া জরুরি যে, এই দুর্ভিক্ষ পুরোপুরি মানবসৃষ্ট। ফলে, এজন্য কারা দায়ী সেটা চিহ্নিত করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং চারিদিকে এ ব্যাপারে ব্যাপক সমালোচনাও হচ্ছে। গাজায় অর্থপূর্ণ যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ পশ্চিমা মিত্ররা ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি তেল আবিবকে উপত্যকার  ফিলিস্তিনি জনগণকে অনাহারে মেরে ফেলার সবুজ সংকেতও দিয়েছে। যুদ্ধ কিংবা সংঘাতের সময় ক্ষেত্র বিশেষ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, কিন্তু কোনো জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক অনাহারে রাখার বিষয়টি ভিন্ন।  মূলত, আধিপত্য বিস্তার লাভের উদ্দেশ্যে কোনো জনপদের লোকজনকে বিতাড়িত করার জন্য ঔপনিবেশিক শক্তি এই কৌশল রুটিনমাফিক কাজে লাগিয়ে থাকে। গাজায় বর্তমানে বেসামরিক লোকজনকে অনাহারে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার পেছনে অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন কারণ যুক্ত রয়েছে। যার সবগুলোই ইসরাইলের দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের জীবন ও জীবিকার ওপর আধিপত্য বিস্তারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা ঢুকতে বাধাদানের পাশাপাশি কি কি জিনিস ঢুকতে দেওয়া হবে কিংবা হবে না সেজন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরির মাধ্যমে ধাপে ধাপে বাঁধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। ইসরাইল অব্যাহতভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে যাতে উপত্যকাটিতে দুর্ভিক্ষ ত্বরান্বিত হয়।  আমরা মনে করি, বেসামরিক স্থাপনায় হামলার সঙ্গে ফিলিস্তিনের জনগণের কাছে খাদ্য সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ধ্বংস করা ইসরাইলি বাহিনীর ইচ্ছেকৃত কৌশল এবং এর স্বপক্ষে ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে। পানি স্যানিটেশন স্টেশন, ফুড প্রসেসিং ফ্যাক্টরি, ত্রাণ গুদাম, বেকারি এবং আটা-ময়দার মিলসহ সবকিছুই ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলার নিয়মিত লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। অবকাঠামোর পাশাপাশি যারা জীবন রক্ষায় নিয়োজিত কর্মীদের চিহ্নিত করে হামলা করা হচ্ছে।  অতএব, মানবসৃষ্ট এই দুর্ভিক্ষকে বিচ্ছিন্নভাবে বিশ্লেষণের সুযোগ নেই। বরং অবশ্যই এটিকে কয়েক দশকের ঔপনিবেশিক চর্চার প্রেক্ষাপট থেকে দেখতে হবে। যার মূল লক্ষ্য ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূখণ্ডে অবস্থান এবং ঐতিহাসিক উপস্থিতিকে নির্মূলের চেষ্টা।  প্রকৃতপক্ষে, ২০০৭ সালে গাজার বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের পর থেকেই ইসরাইল এমন এক নীতি গ্রহণ করেছে যার মধ্যদিয়ে সেখানে জোরপূর্বক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করা হয়েছে। কয়েক স্তরের এসব নীতির মধ্যে রয়েছে- কোনো খাদ্য গাজায় ঢুকবে কিংবা কোনগুলো ঢুকবে না এমন নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যের ওপর নজরদারি করা। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, অবরোধ যুদ্ধ অবৈধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইসরাইলের এই অবরোধ আরোপের অর্থই হলো- দখলদার রাষ্ট্র কর্তৃক গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিদিনের ক্যালোরির চাহিদার ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এ কারণে, গাজাবাসীর কাছে মাংস, দুধ, ফলমূল এবং শাকসবজিও বিলাসী পণ্য হয়ে ওঠে।  অক্সফাম প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান গণহত্যার কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দ্রুত বাড়ছে। এর ফলে উত্তর গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের গড়ে দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণের মাত্রা ২৪৫-এ নেমে এসেছে। তবুও ইসরাইল যদি আজকেই সীমান্ত ক্রসিংগুলো খুলে দেয় তাহলে যারা খাবারের জন্য গাজার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে তাদের হাতে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই খাবার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। কারণ, যেসব ক্রসিং দিয়ে মানবিক ত্রাণ সহায়তা গাজায় প্রবেশ করে সেগুলোর কোনটি মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কিন্তু দখলদার বাহিনী উদ্দেশ্যমূলক ক্রসিংগুলো বন্ধ করে রেখেছে।   ফলত ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করেছে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। গ্যালান্ট হলেন সেই ব্যক্তি যিনি, গেলো বছর অক্টোবরে গাজাকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দেওয়ার সময় ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখার ইসরাইলি উদ্দেশ্যের কথা খুব পরিষ্কার করেই বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সেখানে বিদ্যুৎ, খাবার, জ্বালানি কিছুই থাকবে না, সবকিছুই বন্ধ। আমরা মনুষ্য জানোয়ারের সঙ্গে লড়াই করছি এবং আমরা সে অনুযায়ীই কাজ করছি।’    আজ অবধি, এর বিরুদ্ধে পশ্চিমা কোনো সরকারই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, বরং উল্টো তারা এসব অপরাধে সহায়তা এবং প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একদিকে গাজায় অপর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ, অন্যদিকে তাদের সুরক্ষিত ইসরাইলি মিত্রদের সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য বজায় রাখার মধ্যদিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রাণ সংহারের সঙ্গে জড়িত। একইসঙ্গে, এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে, ব্রিটেনের আগামীর প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টার্মারসহ আন্তর্জাতিক মিত্ররা গাজায় ইসরাইলের পানি সরবরাহ বন্ধের বিষয়ে দ্রুতই সাড়া দিয়ে বলেছেন যে, এটি করার অধিকার তার রয়েছে।  এই হলো ইসরাইলি রাষ্ট্র যে কিনা একটি দুর্ভিক্ষের উৎপাদন করতে পারে এবং এ যাবৎকালে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক শিশুকে অনাহারের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এজন্য সে দায়মুক্তি লাভের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে যাচ্ছে। পশ্চিমাদের সৌজন্যে দীর্ঘ প্রায় আট মাসের বেশি সময় ধরে একটি বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর বোমাবর্ষণ সহ্য করার পর তাদেরকে জোরপূর্বক অনাহারের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর যে ক্ষত/দাগ তৈরি করেছে তা কখনোই মেরামতযোগ্য নয়। তাই, অতি দ্রুত আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ আবশ্যক। মিডল ইস্ট মনিটর অবলম্বনে অনূদিত। অনুবাদ : মোহসিন কবির।
২২ জুন, ২০২৪

ইসরায়েলি গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ / হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে কি ইসরায়েল হেরে যাচ্ছে?
আমার জীবনের ২৫টি বছর কেটেছে ইসরাইলে এবং এখানে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমি এমন কথা কখনোই উচ্চারণ করিনি- ইসরায়েল কি যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে? এমনকি ইসরাইলে যাওয়ার পূর্বে ‘ইওম কিপুর যুদ্ধে’র সময় মিশর ও সিরিয়ার সেনারা যখন আমাদের সীমান্তের ভেতরে ঢুকে পড়েছিল এবং সেসময় রাশিয়া সিনাই, মিশর এবং প্রধান সীমান্ত কিবুতযে স্থলবাহিনী পাঠানোর হুমকি দিয়েছিল তখনও আমি ততটা ভীত ছিলাম না। বরং এই বলে দেশ রক্ষায় এগিয়ে গিয়েছিলাম যে, একদিন নিশ্চয়ই আমরা বিজয়ের সূর্যোদয় দেখবো। আমি কি কখনো পরাজয়ের গন্ধ পেয়েছি? কিন্তু এখনকার দিনগুলো একেবারেই ভিন্ন। আমি শাবাতের (ইহুদিদের সাপ্তাহিক বিশেষ দিন) আলো ঝলমলে সকালে সিনাগগে (ইহুদি উপাসনালয়) গিয়েছিলাম, তখন আমার মোবাইল ফোনে ভাইব্রেশন দেওয়া ছিল। হঠাৎ গাজায় বিস্ফোরণে আইডিএফ’র (ইসরায়েলি সেনাবাহিনী) ৮ সেনা নিহত হওয়ার একটি বার্তা আসে ফোনে। ক্ষয়ক্ষতি এত ব্যাপক ছিল যে, নিহত সেনাদের মৃতদেহ এবং অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা জানি, একজন ইসরাইলি সেনার মৃত্যুর বেদনা আমাদের কাছে কত গভীর, যেন পরিবারের একজন সদস্যকে হারালাম। অহংকারই আমাদের ডোবাচ্ছে গত ৭ অক্টোবর যারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, সেই হামাসকে নির্মূল অভিযানে গিয়ে আট তরুণ ও সাহসী ইসরায়েলি সেনার মৃত্যু হয়। তারা গাজায় হামাস কর্তৃক লুকিয়ে রাখা ১২০ জিম্মিকে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু আজকে যে সেনাদের দেহ ছিন্ন ভিন্ন হলো আপনি কি ভবিষ্যতে তাদের ব্যাপারে আর কখনও কিছু শুনতে পাবেন? কিংবা ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে লেবাননের হিজবুল্লাহর শত শত রকেট হামলার ফলে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ড অথবা আইডিএফ সেনাদের বীরত্বপূর্ণ অভিযানের মাধ্যমে জিম্মি অ্যালমগ মেইর জ্যান, আন্দ্রে কোজলভ শ্লোমি জিভ এবং নোয়া আরগামানিকে উদ্ধারের বিষয়ে? আমরা অনেকেই কয়েক দশক ধরে ইসরাইলের জনসংযোগের বিষয়ে সমালোচনা করে আসছি। সরকারের পাবলিক রিলেশন শাখার (হাসবারা) পরিকাঠামোর অংশ হিসেবে আমি সব সময়ই আর্থিক সংকটের ব্যাপারে বলেছি। আমাদের যেহেতু আয়রন ডোম এবং যুদ্ধ বিমানের জন্য অর্থের প্রয়োজন, তাই বিষয়টিকে কখনোই গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এক্ষেত্রে আমার ধারণা ছিল ভুল। অথচ সেই একই কারণে আজ আমাদের কার্যকর তথ্য যোগাযোগের অভাবে ইসরাইলকে হলোকাস্ট স্টাইলে ৭ অক্টোবরের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হতে হচ্ছে, এটি অহংকারেরই ফল। ইসরাইলের নিচের সারির গোয়েন্দা কর্মকর্তারা হামলার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু মধ্যম সারির কর্মকর্তারা একেবারে তাদের চোখের সামনে থাকা ব্যাপারটি বিশ্বাস করতে ব্যর্থ হন। তারা বলেছিলেন যে, ইসরাইলের ঘরবাড়িতে সুসংগঠিত হামলার সক্ষমতা হামাসের নেই। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিষয়টি কখনোই প্রধানমন্ত্রীর টেবিলেও উপস্থাপন করেননি। সম্প্রতি একটি পিআর এজেন্সির মালিক আমার এক ভালো বন্ধু ইসরাইলের যে স্থানে হিজুবুল্লাহ রকেট হামলা চালিয়েছে সেখানকার মানচিত্রের ভিডিও আপলোড বন্ধ করতে বলে। সে জানায়, এতে আমাদের দুর্বলতা প্রকাশ পাবে এবং ইসরাইলিদের মাঝে অস্বস্তি তৈরি করবে। আমি তাকে এই বলে দ্রুত উত্তর দিলাম যে, মানচিত্রগুলি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ব্যবহারের জন্য ছিল, অভ্যন্তরীণ নয় এবং আমরা যুদ্ধাপরাধী নই। একইসঙ্গে এগুলো ইসরায়েলি পেশাদারদের পিআরদের মধ্যে উদ্বেগ এবং হতাশার উদ্রেক করে থাকলে তাদের পিএসটিডি (পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার) এর সহায়তা নেওয়ার পাশাপাশি ইনফরমেশন ক্যাম্পেইন থেকে প্রত্যাহারের পরামর্শ দেই। ইসরাইলের কি পেশাগত তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ। তবে, সেটি খুব সীমিত। আইডিএফ মুখপাত্রের কার্যালয় যথেষ্ট চেষ্টা করেছে, কিন্তু কয়েক বছরের সংকটের কারণে পিআর অভিজ্ঞতার অভাবও রয়েছে। পেশাদাররা ভালো করেই জানেন যে, কীভাবে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আমাদের একটি পিআর ফার্ম রয়েছে এবং অসাধারণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ইউএস, কানাডা এবং ইউরোপের বিভিন্ন সিটিতে আমাদের অভিজ্ঞ কয়েক ডজন পেশাদার কর্মী নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। ইসরাইলের পেশাদার জনসংযোগ কর্মকর্তা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কেউ হয়তো উত্তর দেবেন, তাহলে যুদ্ধের জন্য জেরুজালেমে ইসরাইল/হামাস/হিজবুল্লাহ’র মিডিয়া সেন্টার কোথায়? ইসরাইল উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ইরান যদি হাজার হাজার মিসাইল নিয়ে এই যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে, আমরা কি তাহলে দেশের কেন্দ্রস্থল থেকে জনগণকে সরাতে পারবো? এই যুদ্ধে জয়ী হতে হলে আমাদের প্রয়োজন ইংরেজিতে পারদর্শী জনবল, যারা বিশ্ববাসীর সামনে সবকিছু উপস্থাপন করতে পারবে। গত কয়েক মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ইংরেজিতে খুবই দক্ষ দুজন কূটনৈতিক এইলন লেভি এবং নোয়া তিসবিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কেবল ইসরাইলেই নয়, জেরুজালেমেও আমরা ইহুদি বিদ্বেষ প্রশমনে মিডিয়ার বয়ান নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য নিন্দার শিকার হচ্ছি। ফলে, একটি প্রাণঘাতি ক্যান্সারের মতো ইহুদি বিদ্বেষ এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের প্রতিটি শহর ও সড়কে ছড়িয়ে পড়ছে। ‘Is Israel losing the war against Hamas in Gaza?’ অবলম্বনে অনুদিত। অনুবাদ : মোহসিন কবির
২১ জুন, ২০২৪

জাতিসংঘের প্রতিবেদন / ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে গাজায়
ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান হামলায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো হামলায় যুদ্ধাপরাধ করেছে হামাসসহ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনগুলোও। জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্ষদের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। খবর আলজাজিরার। গত বুধবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্ষদের অধিবেশনে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় সংঘটিত ঘটনা নিয়ে ওই প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা হয়। এ-সংক্রান্ত তদন্তে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দায়ী। অধিবেশনে পর্ষদের চেয়ারপারসন নাভি পিল্লাই বলেন, ইসরায়েল জোর করে গাজার প্রায় পুরো জনগোষ্ঠীকে ছোট আবদ্ধ এলাকায় ঠেলে দিয়েছে, যা অনিরাপদ এবং বসবাসের অযোগ্য। তিনি আরও বলেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসক্ষমতার অস্ত্রের উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার দৃশ্যত বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর ইচ্ছাকৃত ও সরাসরি হামলাই ছিল।’ গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সময় হামাসসহ অন্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর যোদ্ধারাও যুদ্ধাপরাধ করেছে বলে জানান নাভি পিল্লাই। এদিকে গাজায় আবারও শরণার্থীদের তাঁবুতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। নিরাপদ ঘোষিত আল-মাওয়াসি এলাকায় চালানো এ হামলায় কমপক্ষে সাতজন নিহত হয়েছেন। রাতে যখন এ হামলা চালানো হয়, তখন এসব তাঁবুতে ঘুমিয়ে ছিল শিশুরা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭১ জন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৩৭ হাজার ৩৯৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাড়ে ৮৫ হাজারের বেশি। লেবাননে ‘সর্বাত্মক হামলার’ প্রস্তুতি : লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ইসরায়েল। এ-সংক্রান্ত পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলের বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি বন্দরনগরী হাইফার ড্রোনে ধারণ করা একটি ভিডিও প্রচার করে। এর পর গত মঙ্গলবার দিনের শেষদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ও সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটছে। তবে এ সংঘাত এখন সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইসরায়েল ও লেবানন সীমান্তের উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আমোস হোচস্টেইনকে ইসরায়েল ও লেবাননে পাঠান। হিজবুল্লাহর প্রচার করা ভিডিওটি দিনের বেলায় ধারণ করা হয়েছিল। ৯ মিনিটের এই ভিডিওতে সামরিক-বেসামরিক স্থাপনাগুলোর অবস্থান দেখানো হয়। এর মধ্যে আছে অস্ত্র উৎপাদন কারখানা ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে শপিংমল ও আবাসিক এলাকার চিত্র। এ ভিডিও প্রচারের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাৎজ। তিনি বলেন, ‘আমরা লেবানন ও হিজবুল্লাহর বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিবর্তনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। একটি সর্বাত্মক যুদ্ধে হিজবুল্লাহ ধ্বংস হয়ে যাবে আর লেবানন ব্যাপক হামলার মুখে পড়বে।’ এর পর এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে স্থল অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন সামরিক বাহিনীর নর্দান কমান্ডের প্রধান অরি গর্ডিন।
২১ জুন, ২০২৪

লেবাননে সর্বাত্মক হামলার জন্য প্রস্তুত ইসরায়েল
শত চেষ্টা করেও আরেকটি নতুন যুদ্ধ বুঝি ঠেকানো গেল না। সীমান্তের ওপারে প্রতিবেশী দেশে হামলার জন্য মুখিয়ে রয়েছে ইসরায়েল। যদিও এই হামলা ঠেকাতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইসরায়েল হামলা চালাতে অনেকটাই মরিয়া। তাই শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে। এমনটা ঘটলে মধ্যপ্রাচ্য আরও বড় সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। গাজায় আট মাস ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তবে এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারছে না তারা। এরই মধ্যে নতুন আরেকটি যুদ্ধ শুরু করতে চায় ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেসের নর্দার্ন কমান্ড মেজর জেনারেল ওরি গরদিন ও হেড অব দ্য অপারেশনস ডিরেক্টরেটের মেজর জেনারেল ওদেদ বাসিউক মঙ্গলবার এই যুদ্ধ পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে লেবানন থেকে প্রায়ই ইসরায়েলের দিকে রকেট বা মিসাইল ছুটে আসছে। কিছু দিন আগে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর একজন শীর্ষ নেতা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়। এরপর ২০০টির বেশি রকেট ছোড়ে লেবানন। এ ঘটনার কয়েকদিনের মাথায় লেবাননে যুদ্ধ পরিকল্পনা অনুমোদন করল ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। সেনাসদস্যদের প্রস্তুত রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। গত বছরের শেষভাগ থেকে ইসরায়েলে হামলার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। মঙ্গলবার তারা প্রায় ১০ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করে। ওই ভিডিওতে ইসরায়েলে হাইফা ও অন্যান্য শহরের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। লেবাননের গ্রুপটির দাবি, ড্রোন থেকে ইসরায়েলের সামরিক ও বেসামরিক অবস্থানের এই ভিডিও করা হয়েছে। ওই ভিডিও প্রকাশের পর ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মনে আতঙ্ক ঢুকে গেছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আমরা লেবানন ও সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে খেলার নিয়ম পরিবর্তন করার খুব কাছে রয়েছি। পুরো মাত্রার একটি যুদ্ধের মাধ্যমে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীকে ধ্বংস করা হবে। আর লেবাননকে চরম শিক্ষা দেওয়া হবে। প্রায় প্রতিদিন ছোটখাটো সংঘাতের ঘটনা ঘটছে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে। এতে ইসরায়েলে ১০ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১৫ জন সেনা ও রিভার্জ ফোর্সের সদস্য নিহত হয়েছে। আর সীমান্তের ওপারে থাকা লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী, তাদের ৩৪৩ জন সদস্য নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য সশস্ত্র গ্রুপের কয়েক ডজন সদস্য ও বেসামরিক নাগরিকও নিহত হয়েছে লেবাননে। যুদ্ধে না জড়াতে মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশের ‘হাতে-পায়ে’ ধরছে যুক্তরাষ্ট্র : আরেকটি যুদ্ধের সামনে দাঁড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্য। সম্ভাব্য এই যুদ্ধ ঠেকাতে না পারলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে জ্বলবে আগুন। তাই যুদ্ধ থামাতে তড়িঘড়ি মাঠে নেমে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নিজের পরম মিত্র ইসরায়েলকে থামাতে যারপরনাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু লেবাননে হামলার সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ইসরায়েল। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলে নিজের শীর্ষ একজন উপদেষ্টাকে পাঠিয়েছেন বাইডেন। বাইডেনের এই বিশেষ দূত আমোস হোচস্টেইন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে বৈঠক করেন। ইসরায়েল-লেবাননের মধ্যে শত্রুতার ‘ব্লু লাইন’ যেন অতিক্রম না হয় সে চেষ্টাই চালাবেন হোচস্টেইন। তার ইসরায়েল সফরের আগে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। নেতানিয়াহুর সঙ্গে ওই বৈঠকে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হানেগবি, স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী রন ডারমার, চিফ অব স্টাফ জাচি ব্রাভারমেন, মিলিটারি সেক্রেটারি রোমান গফম্যান ও রাজনৈতিক উপদেষ্টা ওফির ফালক উপস্থিত ছিলেন। হোচস্টেইনের সঙ্গে ছিলেন মার্কিন উপ-রাষ্ট্রদূত স্টেফানি হ্যালেট। তবে ওই বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তার বিস্তারিত জানায়নি ইসরায়েল সরকার। তবে গ্যালান্টের সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠক করেছেন হোচস্টেইন। ইসরায়েল সফর শেষে লেবানন উড়ে যান বাইডেনের এই বিশেষ দূত। তিনি লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী ও ইসরায়েলের মধ্যে ‘জরুরি’ ভিত্তিতে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানান। বৈরুত সফরে গিয়ে হোচস্টেইন বলেন, ইসরায়েল ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত দীর্ঘ সময় ধরে চলছে।
২০ জুন, ২০২৪

আরেক দেশে সর্বাত্মক হামলার জন্য প্রস্তুত ইসরায়েল
শত চেষ্টা করেও আরেকটি নতুন যুদ্ধ বুঝি ঠেকানো গেল না। সীমান্তের ওপারে প্রতিবেশী দেশে হামলার জন্য মুখিয়ে রয়েছে ইসরায়েল। যদিও এই হামলা ঠেকাতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইসরায়েল হামলা চালাতে অনেকটাই মরিয়া। তাই শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে। এমনটা ঘটলে মধ্যপ্রাচ্য আরও বড় সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। গাজায় আট মাস ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তবে এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারছে না তারা। এরই মধ্যে নতুন আরেকটি যুদ্ধ শুরু করতে চায় ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেসের নর্দার্ন কমান্ড মেজর জেনারেল ওরি গরদিন ও হেড অব দ্য অপারেশন্স ডিরেক্টরেটের মেজর জেনারেল ওদেদ বাসিউক মঙ্গলবার এ যুদ্ধ পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে লেবানন থেকে প্রায়ই ইসরায়েলের দিকে রকেট বা মিসাইল ছুটে আসছে। কিছু দিন আগে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর একজন শীর্ষ নেতা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়। এরপর দুইশোটির বেশি রকেট ছোড়ে লেবানন। এ ঘটনার কয়েক দিনের মাথায় লেবাননে যুদ্ধ পরিকল্পনা অনুমোদন করল ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। সেনা সদস্যদের প্রস্তুত রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। গেল বছরের শেষভাগ থেকে ইসরায়েলে হামলার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। মঙ্গলবার তারা প্রায় ১০ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করে। ওই ভিডিওতে ইসরায়েলে হাইফা ও অন্যান্য শহরের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। লেবাননের গ্রুপটির দাবি, ড্রোন থেকে ইসরায়েলের সামরিক ও বেসামরিক অবস্থানের এই ভিডিও করা হয়েছে। ওই ভিডিও প্রকাশের পর ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মনে আতঙ্ক ঢুকে গেছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আমরা লেবানন ও সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে খেলার নিয়ম পরিবর্তন করার খুব কাছে রয়েছি। পুরো মাত্রার একটি যুদ্ধের মাধ্যমে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীকে ধ্বংস করা হবে। আর লেবাননকে চরম শিক্ষা দেওয়া হবে। প্রায় প্রতিদিন ছোটখাটো সংঘাতের ঘটনা ঘটছে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে। এতে ইসরায়েলে ১০ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১৫ জন সেনা ও রিভার্জ ফোর্সের সদস্য নিহত হয়েছে। আর সীমান্তের ওপারে থাকা লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী, তাদের ৩৪৩ জন সদস্য নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য সশস্ত্র গ্রুপের কয়েক ডজন সদস্য ও বেসামরিক নাগরিকও নিহত হয়েছে লেবাননে।
১৯ জুন, ২০২৪

ফিলিস্তিনের যোদ্ধাদের পরিকল্পনা জানত ইসরায়েল
তাহলে কী ছক করেই গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল? নতুন একটি নথি প্রকাশ্যে আসার পর এমন প্রশ্নই এখন ঘুরে ফিরছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে অপহরণ করবে, এমন বিষয় কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই জানত ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম কান নিউজ এক প্রতিবেদনে এমন পিলে চমকানো খবর প্রকাশ করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গাজা ডিভিশন ‘ডিটেইলড এন্ড টু এন্ড রেইড ট্রেনিং’ শিরোনামে ওই নথি তৈরি করেছিল। হামলার প্রায় দুই সপ্তাহ আগে অর্থাৎ গেল বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর ওই নথি বিতরণ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের এলিট ইউনিট সিরিজ মহড়া চালিয়েছে। এই মহড়ায় সামরিক পোস্টে হামলা চালানো, সেনা সদস্য ও বেসামরিক ব্যক্তিদের অপহরণ এবং জিম্মিদের গাজায় কোথায় রাখা হবে- এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। কান নিউজের বরাত দিয়ে জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ওই নথির ব্যাপারে অবগত ছিল। ৭ অক্টোবরের ওই হামলা রুখতে ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনার মধ্যে এই নথির কথা সামনে এলো। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের পরিকল্পনা পুরোটাই জানা ছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর। কিন্তু ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের নিয়ে বিদ্যমান ধারণা এবং সিনিয়র কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে আগে থেকে সতর্ক করা হলেও সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
১৯ জুন, ২০২৪
X