আজ আবু সাঈদের বাড়িতে যাচ্ছেন ড. ইউনূস
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বাড়িতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (১০ আগস্ট) সকালে হেলিকপ্টারযোগে পীরগঞ্জে সাঈদের গ্রামের বাড়িতে যাবেন তিনি। সকাল ১০টায় আবু সাইদের পরিবারের সঙ্গে দেখা ও তার কবর জিয়ারত করবেন ড. ইউনূস। রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বিমানবন্দরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আবু সাঈদের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, এই সময়ে আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে। যে আবু সাঈদের ছবি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মনে গেঁথে আছে। এটা কেউ ভুলতে পারবে না। কী অবিশ্বাস্য একটা সাহসী যুবক বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এবং তার পর থেকে আর কোনো যুবক, কোনো যুবতী হার মানেনি। সামনে এগিয়ে গেছে এবং বলেছে, যত গুলি মারো, মারতে পারো। আমরা আছি। গত ১৬ জুলাই দুপুর ২টার দিকে রংপুরের খামার মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে যান। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে। একপর্যায়ে পুলিশ প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় পুলিশের গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন। আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরের বাসিন্দা মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
১০ আগস্ট, ২০২৪

কোটা আন্দোলন ঘিরে গ্রেপ্তার প্রবাসীদের মুক্তির আহ্বান আহমাদুল্লাহর
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মিছিল-সমাবেশ করে গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেক প্রবাসী। এসব প্রবাসীর মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। শুক্রবার (৯ আগস্ট) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ আহ্বান জানিয়ে তিনি একটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে তিনি লিখেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি বৈষম্য-বিরোধী আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা ও সমর্থন প্রকাশের জন্য মিছিল-সমাবেশ করে গ্রেপ্তার হয়েছেন। সেসব দেশে যে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ, তা হয়ত তারা জানতেন না অথবা বিবেকের তাড়নায় ও আবেগের বশবর্তী হয়ে এ কাজ করে বিপদে পড়েছেন। আরও লিখেন, নতুন সরকারের উচিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের মুক্ত করার ব্যবস্থা করা; প্রয়োজনে দেশে ফিরিয়ে আনা। আশা করি, তারা প্রবাসী ভাইদের মুক্ত করতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
০৯ আগস্ট, ২০২৪

বিশ্বমিডিয়ায় আজকের কোটা আন্দোলন
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ বিক্ষোভ হয়েছে। দেশীয় গণমাধ্যম ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও স্থান পেয়েছে আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন খবর। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা, তুরস্কের টিআরটি ওয়াল্ডসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে আজকের বিক্ষোভের খবর প্রকাশিত হয়েছে।  ‘বাংলাদেশে ছাত্রদের আন্দোলন অব্যাহত, দেশব্যাপী অসহযোগের ডাক’ শীর্ষক শিরোনাম করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে গত মাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে ২০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। তাদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমেছে। সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে শনিবার বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় ছাত্রনেতারা দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।  আল জাজিরার সংবাদিক তানভীর চৌধুরী জানান, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গাজীপুর ও কুমিল্লায় সংঘর্ষ হয়েছে। ছাত্র আন্দোলন এখন গণআন্দোলনে রূপ নিয়েছে। এ আন্দোলনে বিভিন্ন শেণিপেশার সর্বস্তরের মানুষ যোগ দিয়েছে। তারা সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে।  অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারী নেতাদের গণভবনে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে তাদের কথা শুনতে চাই। আমি কোনো সংঘাত চাই না।  প্রধানমন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। জুলাইয়ে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা রোববার থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।  আন্দোলনের এক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ এএফপিকে বলেন, অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে ট্যাক্স এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধ না করা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মঘট এবং ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশি রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করা। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়াল্ডের শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।’ এতে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের ওপর মারাত্মক দমনপীড়ন চালানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রনেতারা দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।  সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে গত মাসে দেশজুড়ে বিক্ষোভ পালিত হয়। এ সময় ২০০ জনের বেশি নিহত হন। দেশজুড়ে সেনা মোতায়েনের পর শৃঙ্খলা ফিরলেও আন্দোলনকারী নেতারা তাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টির অংশ হিসেবে নতুন নতুন কর্মসূচি দিচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। তারা রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আরব নিউজের শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক।’ এতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর দমনপীড়ন চালানো হয়েছে। এর প্রতিবাদে শনিবার ছাত্রনেতারা দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছেন। গত মাসে দেশজুড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।  এতে ২০০ জনের বেশি নিহত হন।  দেশজুড়ে সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও শুক্রবার থেকে আবার আন্দোলন দানা বাধতে শুরু করে। সরকারকে চাপে ফেলতে নতুন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে আসছে আন্দোলনকারীরা।  ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক।’ এতে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের ওপর দমপীড়নের কারণে দেশজেুড়ে শিক্ষার্থীরা শনিবার অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।  এ ছাড়া সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল, পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে আন্দোলনের খবর প্রকাশিত হয়েছে।
০৩ আগস্ট, ২০২৪

কোটা আন্দোলন এবং একটি দামি রায়
পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, অতি সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের কর্তৃক সূচিত ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে এবং সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজ ছাত্রদের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে কোটা বাতিলসহ বৈষম্য নিরোধ ও সমতা আনয়নকল্পে একটি ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল এবং এটা শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে কোটা নিষ্পত্তি হয়েছে বলে মনে হয়। কিন্তু আরও দাবি উত্থাপিত হয়েছে। দীর্ঘ সংগ্রাম ও পরবর্তীকালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী ঐতিহাসিক মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। জাতির পিতার নির্দেশে প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রবর্তনের পূর্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন নীতি প্রণয়ন করা হয়। সংস্থাপন বিভাগ তারই পরিপ্রেক্ষিতে ইংরেজি ০৫/০৯/১৯৭২ তারিখে একটি সার্কুলার জারি করে। তাতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ এবং ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা রাখা হয়। পরে ১৭/০৩/১৯৯৭ ইং তারিখে আরেকটি সার্কুলার মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চাকরিতে সংরক্ষিত ৩০ শতাংশ কোটা তাদের পুত্র-কন্যাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য করা হয়। এভাবে প্রজাতন্ত্রের চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের কোটা, জেলা কোটা, আদিবাসী কোটা, অনগ্রসর এলাকার কোটা সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ কোট নির্ধারণ করা হয় এবং সেভাবে চলছিল। পরবর্তীকালে ১৬/০১/২০১১ তারিখে আরেক স্মারকবলে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত কোটা তাদের নাতি-নাতনিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে ২০১৮ সালে চাকরিতে কোটা বাতিলের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। সেই প্রেক্ষাপটে সরকার ০৪/১০/২০১৮ তারিখের স্মারকবলে প্রজাতন্ত্রের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার নিমিত্তে। ওই ০৪/১০/২০১৮ তারিখের স্মারকের আইনগত বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্ম নামে একটি অনিবন্ধনকৃত সংগঠন হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন নং-৬০৬৩/২০২১ইং দায়ের করে। উল্লেখ্য যে, এই রিট পিটিশনের আগেও একাধিক রিট পিটিশন হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে হতে নিষ্পত্তি হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের ব্যাপারে। সর্বশেষ রিট পিটিশন নং ২৩৫/২০২২ হাইকোর্ট বিভাগ ০৫/১২/২০২২ইং তারিখের রায়ের মাধ্যমে ৩০ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেন এবং আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়টি বহাল রাখেন। রিট পিটিশন নং-৬০৬৩/২০২১ শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ ০৫/০৬/২০২৪ তারিখের রায়ের মাধ্যমে কোটা বাতিল-সংক্রান্ত ০৪/১০/২০১৮ তারিখের স্মারক অবৈধ ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের কোটা বহাল রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন, রিট পিটিশন নং ২৩৫/২০১২-তে প্রদত্ত ০৫/১২/২০১২ইং তারিখের রায়ের নির্দেশনার আলোকে যা আপিল বিভাগ কর্তৃক বহাল রাখা হয়েছে। ১ জুলাই ২০২৪ইং তারিখে সারা দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র সমাবেশ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয় এবং কোটা বাতিলের জন্য ৪ জুলাই পর্যন্ত চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। পরে ২ জুলাই শাহবাগে এক ঘণ্টা অবরোধসহ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০ মিনিট অবরোধ করা হয়, ৩ জুলাই আবারও শাহবাগ মোড়ে ছাত্ররা অবরোধ করাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভ ও অবরোধ করে, ৪ জুলাই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায় স্থগিত না করায় ৫ ও ৬ জুলাই আবারও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ও বিভিন্ন সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়সহ কলেজে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা, ৭ জুলাই বাংলা ব্লকেড পালন, ৮ জুলাই ঢাকার ১১ স্থানে অবরোধসহ ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভসহ রেলপথ ও সড়কপথ অবরোধ করা হয়, ৯ জুলাই সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে সকাল-সন্ধ্যা, ১০ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের ০৫/০৬/২০২৪ তারিখের রায়ের ওপর আপিল বিভাগ পক্ষগণকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ প্রদান করেন এবং ৭ আগস্ট লিভ পিটিশন শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করেন। ওই স্থিতাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জুলাই পুলিশ বাধা দিলেও ছাত্ররা দেশের বিভিন্ন স্থানে আবারও অবরোধ কর্মসূচি পালন করে, ১২ জুলাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল, ১৩ জুলাই কোটা আন্দোলনকারী ছাত্ররা রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং ওইদিনই হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং-৬০৬৩/২০২১-তে প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়, ১৪ জুলাই রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি পেশ পূর্বক ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সারা দেশে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, ১৬ জুলাই সরকারপক্ষে আপিল বিভাগে লিভ পিটিশন দাখিল, ১৬ জুলাই সারা দেশে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ ও ছয়জন নিহতের ঘটনা ঘটে এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করাসহ ১৭ জুলাই আবারও আন্দোলনকারী ছাত্রদের বিক্ষোভসহ অবরোধ ও নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা এবং কফিন মিছিলের আয়োজন করা হয়। ১৮ জুলাই সারা দেশে সর্বাত্মক অবরোধ হয় এবং দেশব্যাপী সংঘর্ষ ও গুলি হলে ২৭ জন নিরীহ আন্দোলনকারী নিহত হলে সরকার আলোচনার প্রস্তাব দিলে ছাত্র আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে। ১৮ জুলাই বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল আইনমন্ত্রীর নির্দেশ (শব্দচয়ন ঠিক হয়নি) মোতাবেক সরকারের পক্ষে আপিল বিভাগের বিশেষ চেম্বার আদালতে ফুল কোর্টে লিভ পিটিশন শুনানির জন্য আবেদন করেন এবং চেম্বার আদালত ২১ জুলাই লিভ পিটিশন দুটি শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। সেই মোতাবেক ২১ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বিভাগ প্রধান বিচারপতির আদালত কক্ষে কানায় কানায় পূর্ণ তিলধারণের ঠাঁই নাই অবস্থায় আসন গ্রহণ করেন। কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী স্বপ্রণোদিত হয়ে আদালতে এ মামলায় বক্তব্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করায় প্রধান বিচারপতি তা মঞ্জুর করেন। মামলাটি শুনানির জন্য ডাকলে অ্যাটর্নি জেনারেল প্রায় দেড় ঘণ্টা তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। রিটকারীর পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। স্বপ্রণোদিত হয়ে সিনিয়র আইনজীবীরা যারা বক্তব্য দিয়েছেন, তারা সবাই অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য সমর্থন করেন যে, রিট পিটিশনটি আদৌ লক্ষণীয় নয়; এই মর্মে যেহেতু সরকারের পলিসি ম্যাটার রিট পিটিশনটির বিষয়বস্তু। শুনানির সময় দু-একবার জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবীরা একটু উচ্চৈঃস্বরে কথা বলেন, কিন্তু প্রধান বিচারপতি আদালতে তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ফুল কমান্ড ছিলেন। এভাবে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে শুনানির কার্যক্রম শেষ করে আবারও ১টা ১৫ মিনিটে এজলাস কক্ষে আসবেন বলে ঘোষণা করে প্রধান বিচারপতি অন্যান্য বিচারপতিসহ আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন। যখন কানায় কানায় পূর্ণ আদালত কক্ষে অবস্থারত আইনজীবী ও সাংবাদিকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন তখন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্য আসন গ্রহণ করেন। তখন দুপুর ১টা ২৯ মিনিট। প্রধান বিচারপতি তখন জানতে চান কোটা আন্দোলনকারী ছাত্রদের পক্ষে কেউ আছেন কি না। কেউ কোনো উত্তর না দেওয়ায় প্রধান বিচারপতি একটি প্রাণবন্ত বক্তব্য প্রদান করেন উপস্থিত সবার উদ্দেশে এরপর বাংলায় একটি সুলিখিত আদেশ প্রদানের মাধ্যমে সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার নিশ্চিতকল্পে প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে, ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা, ১ শতাংশ নৃগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য নির্ধারণ করে লিভ পিটিশনটির নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন। আদেশ সমাপ্তিতে প্রধান বিচারপতি আশা প্রকাশ করেন যে, ছাত্ররা আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে নিজ নিজ ক্লাসে ফিরে যাবেন এবং আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন। সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে কোটা সমস্যার নিষ্পত্তি হয়েছে বলে মনে হয়। কিন্তু এর মধ্যে বহু প্রাণ চলে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনার, তাই এ রায়টি অত্যন্ত দামি। এখানে উল্লেখ্য যে, কোটা আন্দোলনের প্রথম দিক থেকে সরকারের কতিপয় মন্ত্রী বিশেষ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী যিনি আওয়ামী লীগের তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত আছেন এবং পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ ওবায়দুল কাদের ও বিচক্ষণ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলে আসছিলেন, সরকার নীতিগতভাবে কোটা সংস্কারের পক্ষে এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে চায় এবং হয়তো তারা বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা করেছেন কিন্তু ফলপ্রসূ হয়নি। পরবর্তীকালে তারা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে বলেন। ছাত্রদের আন্দোলন অব্যাহতভাবে চলছিল সারা দেশে এবং হতাহতের ঘটনা প্রতিদিন ঘটছিল। আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় আঘাত করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হতাহতদের ঘটনা বাড়তে থাকে এবং সংকট উত্তরণে বেসামরিক প্রশাসনকে সাহায্য করার জন্য ১৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং অদ্যাবধি সেনাবাহিনী মাঠে থেকে পুলিশ ও বিজিবির সহায়তায় দেশব্যাপী শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজে লিপ্ত আছে। আমার মনে হয়, ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবির গুরুত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল ও সরকারি দল সময়মতো অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল। পরপর চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। কিন্তু এ সংকটকালে কোনো দলীয় নেতা কিংবা এমপিদের তৎপরতা চোখে পড়েনি। বরং শোনা যায় অনেকেই বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। আদালতের শুনানির পদক্ষেপ সরকার আরও আগেই নিতে পারত। না করে বরং সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে। আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তির অপেক্ষা না করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কোটা সংস্কার আগেই নিষ্পত্তি করা যেত, তাতে এত জানমালের ক্ষতি হতো না। ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারী ছাত্রদের বিরুদ্ধে নামানো ঠিক হয়নি। রাষ্ট্রপতিও উদ্যোগ নিতে পারতেন। সমস্যা সমাধানে কথাসাহিত্যিক ও লেখক ইমদাদুল হক মিলন লিখেছেন—‘জটিলতা নিরসনে আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ষা কি একান্ত জরুরি?’ তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রপতি অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে পারতেন। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর নামে সাধারণ শিক্ষার্থীর কোটা সংস্কার আন্দোলনে এ যাবৎ ছাত্র, সাধারণ নিরীহ মানুষ, সাংবাদিক, পুলিশসহ দৈনিক খেটে খাওয়া মানুষ দুই শতাধিক নিহত হয়েছেন (পত্রিকার সূত্রমতে)। ১৯৪৭ সাল থেকে (মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় বাদে) কোনো আন্দোলনে এত মানুষ নিহত হয়নি। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারবর্গকে পর্যাপ্ত সাহায্য এবং যারা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা প্রয়োজন। অবশ্য এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কিছু নিহতের পরিবারকে সাহায্য করেছেন, আহতদের দেখতে গিয়েছেন এবং যাবতীয় চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন ও অন্যদের করার অঙ্গীকার করেছেন। আন্দোলনকারী ছাত্রদের যাবতীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব, কোটা আন্দোলনের ছত্রছায়ায় যারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করেছে, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদেরও বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে। সামগ্রিক বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে সব হত্যাকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের বিষয়টি একটি শক্তিশালী কমপক্ষে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিশন গঠন করে তদন্ত করতে হবে। লেখক: সিনিয়র অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল। ইমেইল: [email protected]
০৩ আগস্ট, ২০২৪

কোটাবিরোধী আন্দোলন / কোটা আন্দোলন এখন অধিকার আদায়ের
দেশের জনগণ ভোটাধিকার ও আইনের শাসনের মতো মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। রোগের উপসর্গ খুঁজলে এখন চলবে না, রোগের চিকিৎসা করাতে হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট ঘটনা জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এটা এখন অধিকার আদায়ের আন্দোলন। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী রিজওয়ানা হাসান প্রমুখ। এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ২০০৯ সালে তরুণ সমাজের সমর্থনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছিল। এখন হাই স্কুলের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সবাই তাদের বিপক্ষে। কেন এমন ঘটল, কী ঘটল। কোটা আন্দোলন রোগের উপসর্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোগটা আরও গুরুতর। জটিল ও ভয়াবহ রোগটা হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের কাছের না হলে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। মানুষকে ভোটাধিকার, আইনের শাসনের মতো মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। এই অধিকারগুলো সমন্বিত। একটা বঞ্চিত হলে আরেকটা থেকেও বঞ্চিত হতে হয়। এসব অধিকার প্রতিষ্ঠা না হলে রোগের উপসর্গের চিকিৎসা হবে না, রোগ সারবে না। শান্তিপূর্ণভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধান করতে হবে। পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী রিজওয়ানা হাসান বলেন, সংকট নিরসনে আন্তরিক বা কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। একটা প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু যে ক্ষত জাতির হৃদয়ে হয়েছে, সেটা গভীর। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে যে ঘটনা, তা পুরো সমাজকেই প্রভাবিত করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেছে। এই আন্দোলনে সরকারের নৈতিক ও রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে ৬১ জন মারা গিয়েছিল। তার চারগুণ বেশি মানুষ মারা গেছে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট ঘটনা জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
০২ আগস্ট, ২০২৪

কোটা আন্দোলন ঘিরে রাষ্ট্রদ্রোহে লিপ্ত একটি মহল
স্বাধীনতাবিরোধী চক্র শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে রাষ্ট্রদ্রোহ কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে আয়োজিত দেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আমজাদ আলী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থী এবং তরুণ সমাজের কাঁধে ভর করে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল এবং স্বাধীনতাবিরোধী চক্র তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য প্রতিনিয়ত অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেশ ও রাষ্ট্রের প্রতি ভীতশ্রদ্ধ করে তোলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত করার ঘৃণিত চক্রান্তকে আমরা নিন্দা জানাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই এর যৌক্তিক সমাধানে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করেছে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে বলেও জানান তিনি। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি চারটি আহ্বান জানান। সেগুলো হলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা; শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা; হলগুলোতে বৈধ ও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিশ্চিত করা এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
০২ আগস্ট, ২০২৪

কোটা আন্দোলন ইস্যুতে যা বললেন জায়েদ খান 
সরকারি চাকরিতে কোটা সংসার চেয়ে আন্দোলনে নামে দেশের শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে সহিংসতায় রূপ নেয় এই আন্দোলন। যদিও এই মুহূর্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।  আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সহিংসতায় নিহত ও গণগ্রেপ্তার-হয়রানির ঘটনায় শিল্পীরাও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এবার কানাডা থেকে ভিডিও বার্তা দিলেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। তিনি  বলেন, ‘এই সম্পদ, এই সুন্দর সুন্দর স্থাপনা ধরে রাখা আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু এই কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা এসব স্থাপনা, এমনকি ময়লার গাড়িও ধ্বংস করেছে, আগুন সন্ত্রাস করেছে, সেটা কি কাম্য হতে পারে? এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম। দেশের প্রতিটি স্থাপনা প্রতিটি সুন্দর জিনিস আমাদের। আমরা সবাই এক। এই এক স্লোগান সামনে রেখেই আমরা ভবিষ্যতের জন্য কাজ করে যাচ্ছি যার যার জায়গা থেকে।’ জায়েদ খান আরও বলেন, ‘এ আন্দোলনে অনেক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে। অনেক মানুষ হাসপাতালে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সবার পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। আমি মর্মাহত। এদের মধ্যে কেউ আমার ভাই, আত্মীয়, প্রিয়জন। প্রতিটি মানুষই বাঙালি। আশা করি, এই শোক কাটিয়ে উঠবে হতাহতের পরিবার। সরকার তাদের পরিবারের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থা করবে। যারা এই মানুষগুলোকে মেরেছেন তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’ সবশেষে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশ সুন্দর হবে। আমরা সবাই মিলে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব। হানাহানি বন্ধ হবে, সন্ত্রাস-আগুন হামলা বন্ধ হবে। ছাত্রছাত্রীরা তাদের ক্লাসে ফিরে যাবে। যেকোনো দাবি যৌক্তিকভাবে সমাধান হবে। সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
০১ আগস্ট, ২০২৪

জাতিসংঘের বিফ্রিংয়ে আবারও কোটা আন্দোলন ইস্যু
কোটা আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আবারও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতিসংঘ। স্থানীয় সময় সোমবার (২৯ জুলাই) জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বাংলাদেশ ইস্যুতে জাতিসংঘ খোঁজ রাখছে বলে জানান। তিনি বলেন, মহাসচিব বর্তমান ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত তরুণদের গণগ্রেপ্তার এবং রাজনৈতিক বিরোধিতার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিবেদনে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ উঠে আসছে।   সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মহাসচিব বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি সোমবার ছাত্র বিক্ষোভ পুনরায় শুরু হওয়ার খবর জেনেছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে শান্ত ও সংযমের জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। মহাসচিব বর্তমান ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত তরুণদের গণগ্রেপ্তার এবং রাজনৈতিক বিরোধিতার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। ডুজারিক বলেন, মহাসচিব মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার, যথাযথ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের ওপর জোর দেন। নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক অত্যধিক শক্তি প্রয়োগ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রতিবেদনে যে তথ্য এসেছে তাতে তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি সহিংসতার সমস্ত কর্মকাণ্ডের অবিলম্বে স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষভাবে তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। আমরা রাজধানী ঢাকা এবং নিউইয়র্কে প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষের কাছে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছি।  শান্তিরক্ষা মিশনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখার জন্য বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করি। দেশটি শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষ সেনা প্রদানকারী দেশ। কিন্তু বিক্ষোভ দমনে জাতিসংঘের চিহ্ন সংবলিত যান ব্যবহারের বিষয়ে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট। শান্তি মিশন ছাড়া তা ব্যবহার করা যাবে না। বাংলাদেশও এমনটি আর করবে না বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে করা প্রশ্নে সাধারণ ছাত্রদের গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের প্রসঙ্গ উঠে আসে। জবাবে এসব মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।  এর আগে ২৪ জুলাই জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের কার্যালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতার সব ঘটনার স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তদন্ত করা উচিত। এবারও তিনি ওই দাবির বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেন।  তখন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশে যা ঘটছে, আমরা যা দেখেছি—গণগ্রেপ্তার, হত্যাকাণ্ড সেসব ব্যাপারে আমরা আমাদের উদ্বেগ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছি।’ তিনি বলেন, মানুষের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে পারার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর কর্তৃপক্ষের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন একটি অধিকার, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে নিহিত রয়েছে। অপরদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। তিনি কোটাবিরোধীদের বিক্ষোভ দমনে কী কী ঘটেছে তা জানতে চেয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফলকার টুর্ক বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকারি নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থী ও তরুণরা। এ আন্দোলনে ১৭০ জনের বেশি নিহত এবং ১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এ বিক্ষোভ দমনে কী করা হয়েছে তা যেন সরকার দ্রুত বিস্তারিত প্রকাশ করে। তিনি দাবি করেন, সর্বশেষ খবর অনুযায়ী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকে এখনো নিখোঁজ। বহু গ্রেপ্তার হয়েছেন। এমনকি আহত ব্যক্তিদের কাউকে কাউকে চিকিৎসা নিতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া হামলার শিকার হওয়া সাধারণ মানুষদের রক্ষায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাও জানতে চান তিনি। ফলকার আরও বলেন, দীর্ঘ সময়ের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ রাখা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ অন্যান্য মানবাধিকার রক্ষায় এ ধরনের পদক্ষেপ বিষয়ে সরকারকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক রীতিনীতি ও মানদণ্ড মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।
৩০ জুলাই, ২০২৪

ডিএমপিতে ২৪৩ মামলা কোটা আন্দোলন সহিংসতায়, গ্রেপ্তার ২৮২২
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঘিরে সরকারি স্থাপনায় সহিংসতা, ভাঙচুর ও নাশকতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে ২৪৩টি। এসব মামলায় এ পর্যন্ত ২৮২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সোমবার (২৯ জুলাই) ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এডিসি কে এন রায় নিয়তি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কে এন রায় জানান, সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্য ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে পুলিশ। সহিংসতা, ভাঙচুর ও নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।  এ ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৪৩টি। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ডিএমপি গ্রেপ্তার করেছে ২৮২২ জনকে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
২৯ জুলাই, ২০২৪
X