গাজা থেকে সেনাসহ চার জিম্মির মরদেহ উদ্ধারের দাবি ইসরায়েলের
গাজা থেকে সেনাসহ চার জিম্মির মরদেহ উদ্ধারের দাবি করেছে ইসরায়েল। বুধবার (২৪ জুলাই) উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে প্রতিরক্ষা বাহিনী তাদের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে তাদের ইসরায়েলের ফেরত নেওয়া হয়েছে।  বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে তারা গাজা থেকে চার জিম্মির মরদেহ উদ্ধার করেছে। তাদের মধ্যে সার্জেন্ট পদমর্যাদার কিরিল ব্রডস্কি নামের এক সেনাও রয়েছে।  উদ্ধার হওয়া অন্য তিন জিম্মি হলেন মায়া গোরেন, ওরেন গোল্ডিন এবং টমার ইয়াকুভ আহিমাস। সামরিক অভিযান চালিয়ে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি।  টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবরের হামলায় তারা নিহত হন। এরপর তাদের মরদেহ নিয়ে যায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীরা। গোয়েন্দা তথ্য ও অনুসন্ধানের ভিত্তিতে আগেই তাদের মৃত্যুর ঘোষণা দিয়েছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর ব্রডস্কি গাজার দক্ষিণ ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল আসাফ হামামির ফরোয়ার্ড কমান্ড দলে আহিমাসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আক্রমণের মধ্যে কিবুতজ নিরিমকে রক্ষা করতে গিয়ে তারা তিনজনই নিহত হন এবং তাদের মরদেহ অপহরণ করা হয়। এর মধ্যে হামামির মৃতদেহ এখনো গাজায় রয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইসরায়েলের ৯৮ তম ডিভিশন এবং শিন বেতে সিকিউরিটি এজেন্সির সদস্যদের সঙ্গে সেনারা খান ইউনিসের একটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। জায়গাটিতে জিম্মিদের মরদেহ লুকিয়ে রেখেছিল হামাস। পরে সেখান থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।  গত ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েল থেকে ২৫১ জনকে জিম্মি করে হামাস। তাদের মধ্যে হামাসের কাছে এখনো ১১২ জন জিম্মি রয়েছেন। এর মধ্যে ৪০ জন নিহতের বিষয়ে নিশ্চিত করেছে আইডিএফ। 
২৫ জুলাই, ২০২৪

গাজা ধ্বংসে নামবেন বিয়ের প্রস্তাব পাওয়া সেই ইসরায়েলি নারী বন্দি
গাজার স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের থেকে মুক্তি পেয়েই এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন এক ইসরায়েলি বন্দি। জানান তাকে না কি বিয়ে করতে চেয়েছিলেন গাজার প্রধান প্রতিরোধ আন্দোলনের এক যোদ্ধা। এমনকি তাকে একটি আংটিও দিয়েছিলেন ওই যোদ্ধা। যদিও শান্তভাবে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন একই সঙ্গে বন্দি থাকা তার মা। তারপরই গেল বছরের নভেম্বরে মা ও মেয়েকে মুক্তি দেয় স্বাধীনতাকামীরা।  মুক্তি পেয়েই এবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে নিজের নাম লিখিয়েছেন সেই নারী বন্দি। বহুল আলোচিত সেই বন্দির নাম নোগা ওয়েইস। চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের অংশ হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন গাজার যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য। এমন তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। আইডিএফ-এর দেয়া এক ফেসবুক পোস্টে তারা জানায়, মঙ্গলবার তেলআবিব থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি।  দখলদার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর নোগা জানান, দীর্ঘ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পর তিনি মনে করেন সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়াটা তার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। এ জন্য তিনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীল মাশাকিট তাস বিভাগে যোগ দেয়ার জন্য মনস্থির করেন। এ পদে চাকরি করাটা তার স্বপ্ন ছিল বলেও জানান নোগা। তিনি মনে করেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার মাধ্যমে তিনি দেশের জন্য আরও বেশি অবদান রাখতে পারবেন এবং অন্যদের সাহায্য করতে পারবেন।  গেল বছরের ৭ অক্টোবর তাকে বন্দি করে হামাস যোদ্ধারা। দীর্ঘ ৫০ দিন জিম্মি থাকার পর গেল বছরের ২৫ নভেম্বর বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় মুক্তি পান ১৮ বছর বয়সী নোগা ও তার মা ৫৩ বছর বয়সী সিরি ওয়েইস। তারপরই গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে নোগা জানান, বন্দি থাকার ১৪ দিনের মাথায় এক যোদ্ধা তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। উপহারস্বরূপ তাকে একটি আংটিও দেন ওই যোদ্ধা। সে সময় ওই যোদ্ধা নোগাকে উদ্দেশ্য করে জানান, সবাই মুক্তি পাবে শুধু নোগা ছাড়া, সে তাকে বিয়ে করবে এবং গাজায় তার বাচ্চা লালন পালন করবে। 
১০ জুলাই, ২০২৪

দশম মাসে গড়াল গাজা যুদ্ধ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধ দশম মাসে গড়িয়েছে। ইতিমধ্যে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৮ হাজার ১৫৩ জনে পৌঁছেছে । আহত হয়েছে আরও এক লাখের বেশি মানুষ। দীর্ঘ এ যুদ্ধে মানবেতর জীবনযাপন করছেন উপত্যকার বাসিন্দা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ যুদ্ধ বন্ধে দাবি জানানো হলেও তা কানে করছে না ইসরায়েল। এত প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ সত্ত্বেও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে তারা। সোমবার (০৮ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে গাজার পশ্চিমাঞ্চলের একটি স্কুলে হামলা চালিয়েছে তারা। স্কুলটি বাস্তুচ্যুত লোকদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। এ সময় অন্তত চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যগাজার আল জাওয়াইদা এলাকায় একটি আবাসিক ভবনেও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।  জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে গাজার ৯০ শতাংশ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া সেখানবার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বিপর্যকর ক্ষুধার সম্মুখীন। এমনকি উপত্যকাটির বেশিরভাগ হাসপাতালও বন্ধ অবস্থায় রয়েছে।  ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার কারণে গাজার সবচেয়ে বড় আল আকসা হাসপাতালে রোগীদের ভয়াবহ চাপের সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতালটির সর্বত্র ইসরায়েলি হামলায় আহতদের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে আছে।  উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাস। দেশটির এ হামলার জবাবে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে এ যুদ্ধ শুরু হয়। ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর রূপ নেয় যুদ্ধ।এরপর থেকে গাজার ওপর বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এমনকি তাদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি হাসপাতাল,স্কুল, শরণার্থী শিবির , মসজিদসহ ধর্মীয় স্থাপনাও।  সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার ২০ লাখ বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। দেশটির হামলার কারণে ধ্বংস্তুপে  পরিণত হয়েছে গাজা।  জাতিসংঘের তথ্যমতে, ইসরায়েলে হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন গাজার ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি আর ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তারা। এছাড়া ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক আদালতে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে  অভিযুক্ত হয়েছে দেশটি। 
০৮ জুলাই, ২০২৪

গাজা ইস্যুতে ভারসাম্য রাখতে চায় যুক্তরাজ্য
টানা ৯ মাস ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। বর্বর এই আগ্রাসনে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক মানবিক সংকট। এ অবস্থায় গাজা নিয়ে যুক্তরাজ্য ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিতে চায় বলে ঘোষণা দিয়েছেন নতুন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। একই সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ব্যবহারের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধের বিষয়ে ব্রিটেন ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান চায় এবং সেখানে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ও হামাসের হাতে আটক বন্দিদের মুক্তির জন্য তার দেশ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাবে। গত সপ্তাহে ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টির নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর ল্যামি জার্মানি সফরে গিয়েছেন। ১৪ বছরের কনজারভেটিভ সরকারের সমাপ্তি এবং কিয়ার স্টারমার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর এটিই তার প্রথম আন্তর্জাতিক সফর। বার্লিনে এক সাক্ষাৎকারে ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘বাইরের বিশ্বের সঙ্গে ফের সংযোগ স্থাপনের সময় এসেছে যুক্তরাজ্যের।
০৮ জুলাই, ২০২৪

মার্কিন ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন / গাজা যুদ্ধে জয়ী হতে যাচ্ছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীই
গত ৯ মাস ধরে বিমান এবং স্থল হামলা চালিয়েও গাজা যুদ্ধে হামাসকে পরাজিত করতে পারেনি ইসরায়েল। এমনকি সশস্ত্র গ্রুপটিকে পরাজিত করার ধারেকাছেও নেই ইসরায়েল। বরং যুদ্ধক্ষেত্রে জয়-পরাজয়ের মাপকাঠিতে যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ সে অনুযায়ী ৭ অক্টোবরের তুলনায় হামাস এখন আরও শক্তিশালী।  গত অক্টোবরে হামাসের ভয়াবহ আক্রমণের পর ইসরায়েল আনুমানিক ৪০ হাজার সৈন্য নিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় হামলা চালায়। ৩৭ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা, জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা এবং উপত্যকাটিতে কমপক্ষে ৭০ হাজার টন বোমা ফেলেছে তারা (যা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লন্ডন, ড্রেসডেন এবং হামবুর্গে ফেলা বোমার চেয়েও বেশি)। গাজার অর্ধেকের বেশি ভবন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে এবং সেখানে খাবার, পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহ সীমিত করার ফলে পুরো জনগোষ্ঠী এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।  যদিও অনেক পর্যবেক্ষক ইসরায়েলের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে, ইসরায়েলি নেতারা ধারাবাহিকভাবে দাবি করে আসছেন, হামাসকে পরাজিত করা এবং ইসরায়েলি বেসামরিক লোকজনের ওপর নতুন করে হামলার সক্ষমতা দুর্বল করাকে তারা ফিলিস্তিনিদের জীবনের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। অর্থাৎ, হামাসের শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য গাজার জনসংখ্যার ওপর শাস্তিকে অবশ্যই মেনে নিতে হবে।  তবে, ইসরায়েলের হামলার জন্য ধন্যবাদ, কারণ তাতে আসলে হামাসের শক্তি বাড়ছে। যেমনিভাবে ১৯৬৬ এবং ১৯৬৭ সালে ভিয়েত কং (ভিয়েতনামের সশস্ত্র সংগঠন) শক্তিশালী হয়ে উঠছিল। সেসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধকে নিজের অনুকূলে নিতে ভিয়েতনামের দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ অংশকে ধ্বংস করার জন্য বিশাল ‘অনুসন্ধান ও ধ্বংস’ অভিযানে অনর্থক বিপুল সংখ্যক সেনা পাঠিয়েছিল। হামাস এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। বরং তারা আরও সুদৃঢ় এবং ভয়ংকর গেরিলা বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। মাত্র কয়েকমাস আগে উত্তর গাজা থেকে তাদের ইসরায়েল নির্মূলের দাবি করলেও সেখানে তারা পুনরায় প্রাণঘাতী অভিযান শুরু করেছে।  ইসরায়েলের এই যুদ্ধের কেন্দ্রীয় যে ত্রুটি, সেটি কৌশলগত কিংবা সামরিক বাহিনীর ওপর আরোপিত সীমাবদ্ধতার ত্রুটি নয়, যেমনিভাবে ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতার ক্ষেত্রে সেনাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা কিংবা রাজনৈতিক ও নৈতিক সীমাবদ্ধতার সম্পর্ক ছিল সামান্যই। বরং হামাসের শক্তির উৎস সম্পর্কে স্থূল ধারণাই ব্যাপক ব্যর্থতার কারণ। সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হলো- ইসরায়েল গাজায় যে ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, সেটি শুধু তার শত্রুকেই শক্তিশালী করেছে।  হামাস যোদ্ধাদের মৃতদেহ গণনায় ভুল কয়েক মাস ধরে সরকার এবং বিশ্লেষকরা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হাতে নিহত হামাস যোদ্ধাদের সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন, যেন এই পরিসংখ্যানই গ্রুপটির বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সাফল্য প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি ছিল। এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, যুদ্ধে অনেক হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছে।  ইসরায়েল বলছে, হামাসের আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ হাজার যোদ্ধার মধ্যে যুদ্ধে ১৪ হাজার নিহত হয়েছে। কিন্তু হামাস জোর দিয়েই বলেছে, তারা মাত্র ৬ থেকে ৮ হাজার যোদ্ধা হারিয়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র বলছে, হামাস যোদ্ধাদের নিহতের প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার।  তবে, এই সংখ্যার দিকে নজর দিলে সত্যিকার অর্থে হামাসের শক্তি মূল্যায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ে। ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও গাজার বৃহৎ অংশের নিয়ন্ত্রণ হামাসের হাতেই রয়েছে। বিশেষ করে সেসব এলাকায়, যেখানে উপত্যকার বেসামরিক লোকজন এখন কেন্দ্রীভূত। গোষ্ঠীটি এখনও গাজাবাসীদের কাছ থেকে অসাধারণ সমর্থন পেয়ে যাচ্ছে। তারা সশস্ত্র গ্রুপটিকে ইচ্ছামতো মানবিক সরবরাহ নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে এবং ইসরায়েলি বাহিনী দ্বারা পূর্বে অভিযান সম্পন্ন করা এলাকায় সহজেই ফিরে যাচ্ছে। ইসরায়েলের সাম্প্রতিক মূল্যায়ন অনুসারে, গাজার উত্তরাঞ্চলে হামাসের এখন অনেক বেশি যোদ্ধা রয়েছে। ওই এলাকাটি আইডিএফ কয়েকশ সেনার প্রাণহানির বিনিময়ে দখলে নিতে সক্ষম হয়েছিল। এরপর তারা দক্ষিণের রাফায় অভিযান চালায়। হামাস এখন গেরিলা যুদ্ধ চালাচ্ছে, যার মধ্যে অতর্কিত হামলা এবং ইম্প্রোভাইজড বোমা (প্রায়ই অবিস্ফোরিত অস্ত্র বা আইডিএফের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া অস্ত্র থেকে তৈরি) হামলার ফলে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সম্প্রতি বলেছেন, অন্তত ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ এই যুদ্ধ স্থায়ী হতে পারে।  গ্রুপটি ইসরায়েলে এখনো হামলা চালাতে পারে। হামাসের প্রায় ১৫ হাজার সচল যোদ্ধা রয়েছে, যা গত অক্টোবরের হামলায় অংশ নেওয়া যোদ্ধাদের সংখ্যার প্রায় ১০ গুণ। তদুপরি, ভূগর্ভস্থ টানেল নেটওয়ার্কের ৮০ শতাংশের বেশি এখনো ব্যবহারযোগ্য রয়েছে। এগুলো পরিকল্পনা গ্রহণ, অস্ত্র সংরক্ষণ, ইসরায়েলি নজরদারি এড়ানো, আটক এবং হামলার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। গাজায় হামাসের শীর্ষ নেতাদের বেশিরভাগই এখনো অক্ষত রয়েছেন। মোটকথা, শরৎকালে ইসরায়েলের দ্রুতগতির আক্রমণ হামাসের জন্য এমন একটি পথ তৈরি করে দিয়েছে, এর ফলে তারা ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাতে সক্ষম হবে।  হামাসের শক্তির উৎস হামাসের মতো একটি সশস্ত্র গ্রুপের শক্তি সাধারণ বস্তুগত কারণগুলো থেকে আসে না, যে সূত্র সাধারণত বিশ্লেষকরা রাষ্ট্রের শক্তি বিচারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন। রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে অর্থনীতির আকার, তার সামরিক বাহিনীর প্রযুক্তিগত পরিশীলতা, তারা কতটা বাহ্যিক সমর্থন পেয়ে থাকেন এবং শিক্ষাব্যবস্থার শক্তিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। সশস্ত্র গ্রুপগুলো স্থানীয়দের অনুগ্রহ লাভের আশায় প্রায়ই তাদের কাছে গিয়ে থাকে এবং এটি অবাক করা কোনো ব্যাপার নয়।  স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের মতো সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো স্থানীয় সমাজের একটি অংশ হয়ে ওঠে। ফলে, তারা নিজেদের বাহিনীতে আরও বেশি নিয়োগদান এবং সহজেই যুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন লোকদের সমর্থন লাভে সক্ষম হয়। স্থানীয়দের সমর্থন না পাওয়া সশস্ত্র সংগঠনগুলোর জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।  ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক দখলের পর, সুন্নি বিদ্রোহী যোদ্ধাদের সংখ্যা ২০০৪ সালের বসন্তে ৫,০০০ থেকে বেড়ে ২০০৪ এর শরৎকালে ২০ হাজারে উন্নীত হয় এবং ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৩০ হাজারে উন্নীত হয়। অর্থাৎ, আমেরিকা যত বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, বিদ্রোহ তত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। হৃদয় ও মন  এই গতিশীলতা হামাসকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে টিকে থাকার শক্তি জোগাতে সহায়তা করছে। ফলে, গ্রুপটির প্রকৃত শক্তি মূল্যায়ন করতে হলে বিশ্লেষকদের ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তাদের প্রতি সমর্থনের বিভিন্ন মাত্রাকে বিবেচনায় নিতে হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় হামাসের জনপ্রিয়তা, ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর তাদের হামলাকে ফিলিস্তিনিরা কতটা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করে এবং গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে কতজন ফিলিস্তিনি তাদের পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছে সেগুলোও অন্তর্ভুক্ত।  এই বিষয়গুলো একটি দীর্ঘমেয়াদি সশস্ত্র অভিযান পরিচালনার জন্য হামাসের শক্তির সর্বোত্তম পরিমাপের ক্ষেত্রে বস্তুগত বিষয়ের চেয়েও বেশি গুরুত্ব বহন করে। এজন্য জরিপে ফিলিস্তিনিদের মতামত গ্রহণের মাধ্যমে হামাসের প্রতি তাদের সমর্থনের পরিমাপ মূল্যায়নে সহায়তা করতে পারে। প্যালেস্টিনিয়ান সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ (পিএসআর) ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অতি সাম্প্রতিক ৫টি সমীক্ষার মধ্য দিয়ে একটি আকর্ষণীয় অনুসন্ধানী ফলাফল উপস্থাপন করেছে। এতে দেখা গেছে, ৭ অক্টোবরের আগের তুলনায় বর্তমানে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামাসের সমর্থন বেশি। হামাসের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থনও বেড়েছে, বিশেষ করে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায়। উদাহরণ হিসেবে, ২০২৩ সালের জুনে হামাস তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহর সমান জনপ্রিয়তা থাকলেও ২০২৪ সালের জুনে তাদের প্রতি সমর্থন দ্বিগুণ বেড়ে যায় (ফাতাহর ২০ শতাংশের বিপরীতে হামাসের ৪০ শতাংশ)। গাজায় বিমান থেকে ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ এবং স্থল আগ্রাসন কিংবা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার জন্য হামাসের প্রতি ফিলিস্তিনিদের সমর্থনকে কমিয়ে দেয়নি। ৭ অক্টোবরের পর হামাসের প্রতি ফিলিস্তিনিদের সমর্থন বেড়েছে যা, ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর। এটা ঠিক, ইসরায়েল গাজায় কয়েক হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। কিন্তু তাদের এই ক্ষয়ক্ষতি বর্তমান প্রজন্মের যোদ্ধাদের মধ্যে হামাসের প্রতি সমর্থনকে বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মকে আরও ভালোভাবে গ্রুপটিতে ভেড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। সেই নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা যুদ্ধের মাঠে না আসা পর্যন্ত, হামাসের বর্তমান যোদ্ধারা সম্ভবত যে কোনো ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত সক্ষম বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে। একইসঙ্গে, তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী গেরিলা যুদ্ধ চালাতে আগের চেয়ে বেশি আগ্রহী। বার্তার শক্তি  গাজায় ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের যে ভয়ংকর শাস্তি দিয়েছে তা নিশ্চিতভাবেই অনেক ফিলিস্তিনিকে ইহুদি রাষ্ট্রের প্রতি আরও শত্রু মনোভাবাপন্ন করে তুলবে। কিন্তু এর দ্বারা হামাস কীভাবে লাভবান হচ্ছে? সর্বোপরি, হামাসের আক্রমণই যুদ্ধের তাৎক্ষণিক কারণ এবং এর ফলে ইসরায়েল গাজার বিশাল অংশকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া এবং অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে। এর উত্তর-হামাসের পরিশীলিত প্রচার-প্রচারণার একটি বড় অংশের মধ্যে নিহিত। তারা নানা ঘটনার অনুকূল ব্যাখ্যা ও বয়ান তৈরির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন লাভে সক্ষম হয়েছে।  অনিবার্য বাস্তবতা  দীর্ঘ ৯ মাসের ভয়ানক যুদ্ধের পর, সময় এসেছে কঠিন বাস্তবতা স্বীকার করে নেওয়ার। সামরিক পন্থাই হামাসকে পরাজিত করার একমাত্র সমাধান নয়। গ্রুপটির বর্তমান যোদ্ধার সংখ্যা যোগফলের চেয়ে অনেক বেশি। হামাস একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন, যা শিগগিরই বিলুপ্ত হবে না। ইসরায়েলের বর্তমান কৌশল অনুযায়ী, ভারী সামরিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে অভিযানের মাধ্যমে হয়তো কিছু হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করতে পারে, কিন্তু এই কৌশল কেবল হামাস এবং স্থানীয়দের মধ্যে বন্ধনকেই শক্তিশালী করছে। হামাস না পরাজিত, না তারা পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে। তাদের উদ্দেশ্য এবং আবেদন ৭ অক্টোবরের আগের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। গাজা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিষয়ে একটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার (ইসরায়েলি) অনুপস্থিতিতে সশস্ত্র গ্রুপটি উপত্যকার ক্ষমতায় ফিরে আসবে এবং তা হবে বিপুল সংখ্যায়।  কিন্তু ইসরায়েলি নেতারা ৭ অক্টোবরের আগে গাজায় একটি কার্যকর রাজনৈতিক পরিকল্পনার বিষয়ে যেমনটা আগ্রহী ছিলেন, এখন আর তেমন আগ্রহী নন বলেই মনে হচ্ছে। ফলে, গাজায় যে ট্র্যাজেডি অব্যাহত রয়েছে তারও কোনো শেষ নেই। যুদ্ধ চলতেই থাকবে, আরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা যাবে এবং ইসরায়েলের জন্য হুমকি কেবল বাড়বেই।  মূল : রবার্ট এ প্যাপ, অনুবাদ : মোহসিন কবির  আমেরিকান ম্যাগাজিন ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স’ অবলম্বনে অনূদিত (সংক্ষেপিত) 
২৫ জুন, ২০২৪

গাজা যুদ্ধে সাড়ে ৮ হাজার ইসরায়েলি সেনা পঙ্গু
কোনো ধরনের অর্জন ছাড়াই পার হয়েছে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ৯ মাস। উল্টো এই সময়ের মধ্যে তেল আবিবের জন্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ এবং সেনাদের রক্ষণাবেক্ষণে সংকটের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি ইসরায়েলের চ্যানেল সেভেন জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৬৬৩ জন আহতসহ সেনাবাহিনীতে পঙ্গু সদস্যের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭০ হাজার। ইসরায়েলের যুদ্ধ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরও প্রায় ২০ হাজার নতুন আহত সেনা সদস্যকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেল সেভেনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রতি মাসে এক হাজারেরও বেশি নতুন আহত পুরুষ ও নারী সেনাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। আহতদের মধ্যে ৯৫ শতাংশই পুরুষ। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশই রিজার্ভ সেনা। ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞদের মতে, আহতদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ সেনা, যারা ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ হাসপাতালে ভর্তি হবে, তারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, বিষণ্নতা, আঘাত-পরবর্তী মানসিক চাপসহ বিভিন্ন মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। ফিলিস্তিনের গাজায় লাগাতার ইসরায়েলি অপরাধের জবাবে গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস গাজা উপত্যকা থেকে ‘আল-আকসা তুফান’ নামে অভিযান শুরু করে। অভিযানের সময় ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে ঢুকে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাস। একই সঙ্গে আরও ২০০ জনের বেশি মানুষকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে ফিলিস্তিনি এই স্বাধীনতাকামী সংগঠনের সদস্যরা। এই পরাজয়ের গ্লানি মেটাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু পশ্চিমা দেশের সমর্থন ও সহায়তা নিয়ে নিরীহ গাজাবাসীর ওপর নির্মমভাবে বোমা বর্ষণ শুরু করে ইসরায়েল। দেশটির হামলায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৩৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও ৮৬ হাজার।
২২ জুন, ২০২৪

গাজা যুদ্ধে কত ইসরায়েলি সেনা পঙ্গু?
কোনো ধরনের অর্জন ছাড়াই পার হয়েছে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ৯ মাস। উল্টো এই সময়ের মধ্যে তেল আবিবের জন্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ এবং সেনাদের রক্ষণাবেক্ষণে সংকটের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি ইসরায়েলের চ্যানেল সেভেন জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৬৬৩ জন আহতসহ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে পঙ্গু সদস্যের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭০ হাজার। চ্যানেলটি আরও জানায়, পঙ্গু সদস্যদের মধ্যে শতকরা ৩৫ ভাগ সেনা ৭ অক্টোবরের পর মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং শতকরা ২১ ভাগ সেনা শারীরিকভাবে মারাত্মক আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। ইসরায়েল সরকারের যুদ্ধ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরও প্রায় ২০ হাজার নতুন আহত সেনা সদস্যকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেল সেভেন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রতি মাসে এক হাজারেরও বেশি নতুন আহত পুরুষ ও নারী সেনা সদস্যকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। আহতদের মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগই পুরুষ। তাদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগই রিজার্ভ সেনা। ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞদের মতে, আহতদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ সেনা, যারা ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ হাসপাতালে ভর্তি হবে, তারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, বিষণ্ণতা, আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপসহ বিভিন্ন মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। ফিলিস্তিনের গাজায় লাগাতার ইসরায়েলি অপরাধের জবাবে গেল বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস গাজা উপত্যকা থেকে ‘আল-আকসা তুফান’ নামে অভিযান শুরু করে। অভিযানের সময় ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে ঢুকে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাস। একই সঙ্গে আরও ২০০ জনের বেশি মানুষকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে ফিলিস্তিনি এই স্বাধীনতাকামী সংগঠনের সদস্যরা।  এই পরাজয়ের গ্লানি মেটাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু পশ্চিমা দেশের সমর্থন ও সহায়তা নিয়ে নিরীহ গাজাবাসীর ওপর নির্মমভাবে বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েল। দেশটির হামলায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৩৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও ৮৬ হাজার।
২১ জুন, ২০২৪

গাজা নিয়ে গবেষণার প্রস্তাব দেওয়ায় অধ্যাপককে বরখাস্ত
গাজা গণহত্যার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করার প্রস্তাব দেয়ায় এক মার্কিন অধ্যাপককে বরখাস্ত করার ঘটনা ঘটেছে। ওই অধ্যাপক আমেরিকার শিকাগো অঙ্গরাজ্যের ডি পল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করতেন। তিনি ছাত্রদেরকে একটি ঐচ্ছিক অ্যাসাইনমেন্ট করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সে এসাইনমেন্টের বিষয় ছিল, গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার প্রভাব। বরখাস্ত হওয়া ওই অধ্যাপকের নাম অ্যান ডি'অ্যাকুইনো। তাকে জুন মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিভাগে পড়াতে নিষেধ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, অ্যান ডি'অ্যাকুইনো গত মাসে একটি ঐচ্ছিক অ্যাসাইনমেন্ট উপস্থাপন করেছিলেন যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের মানবস্বাস্থ্য এবং জীববিজ্ঞানের ওপর গাজার গণহত্যার প্রভাব নিয়ে মূল্যায়ন করতে বলেছিলেন।  নিজের বরখাস্ত হওয়াকে একাডেমিক স্বাধীনতার লঙ্ঘন এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে যেকোনো আলোচনাকে ইহুদিবিরোধী মিথ্যা দাবিতে পরিণত করার প্রচেষ্টা বলে আখ্যায়িত করেছেন ডি'অ্যাকুইনো। এই ঘটনার পর এই অধ্যাপকের সমর্থনে প্রায় ৫০ শিক্ষার্থী ডি পল বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে জড়ো হন। তারা ফিলিস্তিনি পতাকা নাড়ছিলেন এবং তাদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, 'একাডেমিক স্বাধীনতা লঙ্ঘন করা যাবে না।' শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনের প্রশাসনিক কার্যালয়ে ডি'অ্যাকুইনোর প্রত্যাবর্তনের দাবি নিয়ে এঁকোটি পিটিশন দাখিল করে, যে পিটিশনে প্রায় দের হাজার শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর ছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখনও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।  গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। দেশটির হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন  ৮৫ হাজারেরও বেশি মানুষ।
২১ জুন, ২০২৪

গাজা ইউক্রেন ও আফ্রিকা ইস্যু গুরুত্ব পাবে
ইতালির দক্ষিণাঞ্চলের পুগলিয়ায় গ্রুপ অব সেভেন (জি৭) জোটের দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলন। গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় বোরগো এগনাজিয়ার একটি রিসোর্টে এ সম্মেলন শুরু হয়। এবারের সম্মেলনে আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে প্রাধান্য পাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের গাজা ইস্যু, ইউক্রেনকে সহায়তা, আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরের জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু। খবর আলজাজিরার। সম্মেলনের আয়োজক ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি গতকাল যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্র এবং সরকারপ্রধানদের পাশাপাশি ইউরোপীয় কাউন্সিল ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রধানদের স্বাগত জানান। এ ছাড়া এবারের সম্মেলনে সাইডলাইন বৈঠকের জন্য আরও ১০টি দেশের রাষ্ট্রনেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইতালি। তাদের মধ্যে রয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ, আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেলমাদজিদ তেবোউন, জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। আমন্ত্রিত দেশের তালিকায় সৌদি আরব ও মিশরের নাম থাকলেও দেশ দুটির রাষ্ট্রপ্রধান সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন না বলে জানা গেছে। আলোচনায় থাকছে যেসব বিষয়: এবারের শীর্ষ সম্মেলনে আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরীয় নিরাপত্তা ইস্যু বেশ প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা, মেলোনি তার ‘ম্যাটেই প্ল্যান’ নামক ‘ফ্ল্যাগশিপ’ বৈদেশিক নীতির পরিকল্পনা প্রসারিত করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এ প্রকল্পের লক্ষ্য আফ্রিকার প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে ইতালিকে একটি প্রধান শক্তির কেন্দ্র হিসেবে স্থাপন করা এবং এর মধ্যদিয়ে ইউরোপে অভিবাসন রোধ করা। ইউক্রেনের জন্য সমর্থনও এবারের আলোচ্যসূচির শীর্ষে রয়েছে। সম্মেলনের প্রথম দিনে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর জন্য রাখা দুটি সেশনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনের সবচেয়ে প্রত্যাশিত ফল হলো ইউক্রেনের জন্য ৫০ বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ চুক্তি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর পশ্চিমা দেশগুলোতে রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ থেকে এ চুক্তি হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে এবারের সম্মেলন থেকে যে কোনো চুক্তি ঘোষণার একটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ রয়েছে বলে আলজাজিরাকে জানিয়েছে ইতালির একটি সূত্র। সূত্রটি আরও জানায়, এ ধরনের চুক্তি কিয়েভের সঙ্গে ঐক্যের একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে, যখন ইউক্রেনীয় সেনারা পিছিয়ে আছে আর মস্কো দেশটির পূর্ব ও উত্তরে আধিপত্য বিস্তার করছে। এ ছাড়া জরুরিভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের নভেম্বরের নির্বাচনে হোয়াইট হাউসে ‘সম্ভাব্য পরিবর্তনও’ আলোচ্য সূচিতে যোগ করা হয়েছে। সম্মেলনে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আরেকটি সেশন হবে। যেখানে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
১৪ জুন, ২০২৪

গাজা থেকে চার জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের দাবি ইসরায়েলের
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে চার জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের দাবি করেছে ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গাজার নুসেরাত এলাকা থেকে চার জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (০৮ জুন) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্ধার হওয়া ওই ব্যক্তিদের গত ৭ অক্টোবর একটি গানের অনুষ্ঠান থেকে হামাসের যোদ্ধারা গাজায় ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তারা হলেন নোয়া আরগামনি (২৫), আন্দ্রে কোজলোভ (২৭), সলমি ঝিভ (৪০) এবং আলমোগ মের জান। এরমধ্যে নোয়া আরগামনির জন্মস্থান চীনে। এ ছাড়া আন্দ্রে কোজলোভ রাশিয়া থেকে ইসরায়েলের এসেছিলেন। ইসরায়েল জানিয়েছে, দিনের বেলা চালানো এক জটিল অপারেশনের মাধ্যমে ওই জিম্মিদের উদ্ধার করা হয়েছে। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ এ অভিযান চালিয়েছে। গাজার নুসেরাত এলাকার দুটি আলাদা জায়গা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।  গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জিম্মিদের উদ্ধারে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।  গাজার যোদ্ধারা নোয়াকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল। এতে তখন তাকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, আমাকে হত্যা করবেন না।  গাজা থেকে তাকে উদ্ধারের পর নতুন একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। এতে নোয়াকে তার বাবার জড়িয়ে ধরতে দেখা গেছে।  উদ্ধার হওয়া আন্দ্রে কোজলোভ নামের আরেক ব্যক্তি রাশিয়ান নাগরিক রয়েছেন। তিনি ২০২২ সালে ইসরায়েলে আসেন। গত ৭ অক্টোবর যখন হামাস অভিযান চালায় তখন তিনি নোভা গান উৎসবে নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। 
০৮ জুন, ২০২৪
X