কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় ঘরে ঘরে জ্বর দেখা দিয়েছে। জ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগের মধ্যে বমি, পেটব্যথা, ডায়রিয়া, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, সর্দি-কাশি ও নাক দিয়ে পানি পড়ার মতো নানা উপসর্গ রয়েছে। এ নিয়ে তারা ডেঙ্গু ও করোনা আতঙ্কে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, এ সময়টায় মৌসুমি জ্বরের প্রকোপ চলছে। ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্তের পাশাপাশি ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসের সংক্রমণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে রোগী ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে ডেঙ্গু ও করোনা আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে বাড়ির পাশের ফার্মেসি বা পল্লি চিকিৎসকের কাছ থেকে ভুল চিকিৎসা না নিয়ে রোগের শুরুতেই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। তবে জ্বর বা যে কোনো উপসর্গ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন চিকিৎসকরা।
সোমবার (১৪ জুলাই) সরেজমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ও চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে জ্বরসহ ডেঙ্গু ও করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যাই বেশি। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক রোগীরা অসুস্থতাজনিত কারণে বেশি দুর্বল হয়ে পড়ছে। এসব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ রোগীকেই চিকিৎসাপত্র ও রোগপ্রতিরোধমূলক পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে ছয় বছরের শিশু মুনতাহাকে নিয়ে এসেছেন তার মা সোনিয়া আক্তার রুবি। মুনতাহা কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছে। জ্বরের সঙ্গে তার শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা ও বমির উপসর্গ রয়েছে। অসুস্থতার শুরুতে তাকে পল্লি চিকিৎসক থেকে ওষুধ নিয়ে খাওয়ানো হয়। কোনো আরোগ্য না দেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে তাকে।
সোনিয়া আক্তার রুবি বলেন, ওষুধ খাওয়ালে জ্বর ছাড়ে, তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার জ্বর ফেরত আসে। কখনো কখনো তীব্র জ্বর আসে, তখন প্যারাসিটামল সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হয়। কয়েকদিনের অসুস্থতায় আমার মেয়ে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে, তাই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
চার বছরের শিশু আয়ান ইসলামকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে নিয়ে এসেছেন তার মা ইয়াসমিন আক্তার। তিনি বলেন, তার ছেলে জ্বর ও ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতায় ভুগছে। সর্দি-কাশিও রয়েছে। বাড়ির পাশের ফার্মেসি থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আন্তঃবিভাগে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন আঁখি নামে এক নারী। তিনি উপজেলার পূর্ব পুমকারা এলাকার বাসিন্দা। তিনি তীব্র জ্বর, শরীর ব্যথা ও মাথাব্যথায় ভুগছেন। দুদিন চিকিৎসা নিয়ে এখন তিনি কিছুটা আরোগ্য অনুভব করছেন। তবে নতুন করে তার কাশির উপসর্গ দেখা দিয়েছে। কাশির জন্যও তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন চিকিৎসক।
জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন সুমন মিয়া (২৭)। তিনি উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের হরিমঙ্গল এলাকার বাসিন্দা। দুদিন ধরে জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, কাশি ও পেট ব্যথাজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন তিনি। ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে খেয়েও কোনো উপকার না পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসাপত্র নিয়েছেন। তিনি বলেন, যখন শরীরে জ্বর উঠতে শুরু করে তখন থেকেই মাথাব্যথাও শুরু হয়। কাশতে কাশতে বুকেও ব্যথা হচ্ছে। হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়েছেন।
উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের লাড়ুচৌ এলাকা থেকে তীব্র জ্বর ও মাথাব্যথা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে এসেছেন নবীর হোসেন (৩২)। এক দিন আগে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। এক দিনের জ্বরেই তিনি শারীরিকভাবে বেশি দুর্বল হয়ে পড়েন। নবীর হোসেন বলেন, শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসে। জ্বরের সঙ্গে তীব্র মাথাব্যথা। নাক দিয়ে পানি পড়ছে। ফার্মেসি থেকে নাপা নিয়ে খেয়েছিলাম। ওষুধ খেলে কিছু সময়ের জন্য জ্বর কমলেও আবার জ্বর ফেরত আসে। শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই হাসপাতালে এসেছি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শেখ হাসিবুর রেজা কালবেলাকে বলেন, সারা দেশে ডেঙ্গু ও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। মানুষকে সচেতন করে তুলতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ সময়টায় মৌসুমি জ্বরের প্রকোপ চলছে। মানুষের অসুস্থতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এ সময়ের জ্বরকে সাধারণ জ্বর ভেবে অবহেলা করাও চলবে না। যেহেতু ডেঙ্গু ও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই অবশ্যই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে অথবা কোনো রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
ডা. রেজা আরও বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে কাজ করছে।
মন্তব্য করুন