সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাজার বসিয়ে অবৈধ বিদ্যুতের ব্যবসা
অবৈধভাবে সংযোগ নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি সংলগ্ন ৩নং ফটকের দোকানগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। চাঁদা বাণিজ্যে অভিযুক্তরা হলেন- মফিজ, সাদ আলী উরফে চাঁদ ও রিয়াদ। তারা তিনজন উন্মুক্ত লাইব্রেরির কোণে অবস্থিত টিনের ঘরে থাকেন এবং এখান থেকেই এই চাঁদাবাজির কার্যক্রম পরিচালনা করেন । সরেজমিনে দেখা যায়, উদ্যানের ভিতরে অন্তত দেড়শ দোকান গড়ে উঠেছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন পানীয় এবং খাবারের দোকান রয়েছে সেখানে। টিএসসি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় ঘুরতে আসা নারীদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী বিক্রির দোকানও। দোকানে ওই তিন কেয়ারটেকারের পাশাপাশি শাহজাহান ও ইয়াসিন নামে আরও দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কয়েকটি দোকানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে চাঁদা তোলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি সংলগ্ন ৩নং ফটকে 'স্বাধীনতা যাদুঘর' লেখা পিলারে স্থাপিত বৈদ্যুতিক বাতির তার থেকে সংযোগ নিয়ে এই এলাকার সকল দোকানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরকার সকল ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ করে দেওয়ার পর সেই দোকানগুলো এখানে বসতে থাকে। তখন থেকেই অভিযুক্তরা এ কাজ করে আসছেন। এছাড়া, ফটকের পাশের ফুটপাতে অবস্থিত বিদ্যুৎ সংযোগের একটি বাক্স থেকে অবৈধভাবে দুটি লাল তারের মাধ্যমে উন্মুক্ত লাইব্রেরিতেও বিদ্যুতের সংযোগ ঘটানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উদ্যানের এই গেটে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শ দোকান বসে। এর মধ্যে প্রায় ৬৫টি দোকানে বাতি জ্বালাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এসব দোকানে পরিধিভেদে ১ থেকে ৫টি পর্যন্ত বাতি ব্যবহার করা হয়। প্রতি বাতি বাবদ বিল নেওয়া হয় দৈনিক ৩০ টাকা এবং দুই বাতির বিল একসঙ্গে ৫০টা টাকা। প্রতি দোকানে গড়ে দুটি করে বাতি ধরা হলে প্রতিদিন এর বিলের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৫০ টাকা, যা একমাসে পরিমাণ হয় ৯৭ হাজার টাকা। যদিও বাস্তবিক অর্থে এর পরিমাণ আরও বেশি। এর বাইরে উদ্যানের প্রবেশ মুখে অভিযুক্ত শাহজাহানের একটি বিশাল পানির পাইকারি দোকান রয়েছে, সেখানে কয়েকদিন আগ পর্যন্ত দুটি রেফ্রিজারেটরও ব্যবহার করা হতো বলে জানা গেছে। তা ছাড়াও, এখানে তার আরও চারটি দোকান (চটপটির ২টি, আইস্ক্রিমের ১টি ও চায়ের দোকান ১টি) রয়েছে। এ দোকানগুলোতে ৩-৫টি করে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো হয়। যার সবই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিদ্যুৎ লাইন থেকে অবৈধ সংযোগ নেওয়া বলে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে তার ভাষ্য, আমি কোন ফ্রিজ-ট্রিজ চালাই না। আর দোকানগুলোর বাতির তার পার্কের (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাইন থেকে নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিল কোথায় এবং কাকে দেওয়া হয় জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। উদ্যানের একাধিক দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া দোকানসমূহ থেকে মফিজ, সাদ আলী উরফে চাঁদ ও রিয়াদ চাঁদা তোলেন। সরেজমিনে দেখা যায়, সংযোগ দেওয়া প্রতিটি দোকান থেকেই বাতি জ্বালানোর বিল হিসেবে চাঁদা তুলছেন রিয়াদ। চাঁদা তোলা শেষ হলে উন্মুক্ত লাইব্রেরি সংলগ্ন তাদের থাকার ঘরের সামনে গিয়ে সাদ আলীর হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন তিনি। এ সংক্রান্ত কয়েকটি অডিও, ভিডিও ও ছবি কালবেলার হাতে রয়েছে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে উদ্যানের প্রবেশ গেটের একাধিক দোকানি কালবেলাকে বলেন, নতুন কেউ দোকান বসালেই তার সঙ্গে সাদ আলী নিজেই বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যোগাযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে অভিযুক্ত সাদ আলী কালবেলাকে বলেন, উদ্যানের লাইন থেকে সংযোগ নিয়ে আমরা কিছু দোকান চালাই। এখানকার দোকানগুলোও আসলে দুই নাম্বার, আমাদের লাইনও দুই নাম্বার। এভাবেই সংসার চালাই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাঁদার টাকা লাইনম্যান খোকাকে দিতে হয়। তার দাবি খোকাই এসব দোকান নিয়ন্ত্রণ করে। অভিযুক্ত খোকা কালবেলাকে বলেন, আমি এসব কিছুতে নেই। এগুলো সব মিথ্যা অভিযোগ। যদিও কালবেলার হাতে খোকার দোকান প্রতি ১৫০ টাকা চাঁদা তোলার প্রমাণ রয়েছে। অবৈধ বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রসঙ্গে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) সাব এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. লোকমান হোসেন বলেন, এরকম ভোক্তা পর্যায়ের কিছু আমরা দেখিনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন এই দিকটা দেখে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী অফিসের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম আবু মুছা চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। এছাড়াও বিষয়টি আমাদের আওতাধীন নয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কেয়ারটেকার মো. খোকন বলেন, এই লাইনটা মূলত ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের নিয়ন্ত্রণে এটা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ফুটপাতের যে বাক্স থেকে সংযোগ নেওয়া হয়েছে সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন নয়। এটা ডিপিডিসির আওতাধীন। সার্বিক বিষয়ে বক্তব্য জানতে শাহবাগ থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি।
২১ মে, ২০২৪

অবৈধ সম্পদ অর্জনে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
৬২ লাখ ৯ হাজার ৩০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রাজশাহীতে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (২০ মে) দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং নকল স্ট্যাম্প দুদকে জমা দিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের নাম মেহেদী হাসান। নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত একজন কনস্টেবল। তার গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার চকবিজলী গ্রামে।  মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মেহেদী হাসান তার এসব অবৈধ সম্পদ বৈধ দেখাতে ৪৮টি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে জমি বন্ধক রেখে ১৮ লাখ ও ৩৩ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ দেখান। তবে দুদক অনুসন্ধান করে দেখেছে, জমি বন্ধক ও ঋণচুক্তির স্ট্যাম্পগুলো নকল। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেলে মেহেদী হাসানকে তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য বলা হয়। তখন মেহেদী হাসান ৪৮টি স্ট্যাম্পে লিখিত ও স্বাক্ষরিত চুক্তি সংবলিত রেকর্ডপত্র দাখিল করেন। এসব স্ট্যাম্পে আটজনের সঙ্গে জমি বন্ধক রাখা বাবদ ১৮ লাখ টাকা এবং আরও আটজনের কাছ থেকে ৩৩ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ দেখান। এই স্ট্যাম্পগুলো ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জয়পুরহাটের স্ট্যাম্প ভেন্ডার সাইদুল ইসলাম বিক্রি করেছেন বলে সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে। তবে দুদক জয়পুরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাচাই করে দেখেছে, ট্রেজারি শাখা থেকে এসব স্ট্যাম্পের মধ্যে ৪২টি ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ও ৬ সেপ্টেম্বর ভেন্ডার সানোয়ার হোসেন দেলু এবং ৬টি ২০১৭ মালের ২২ জুন শহীদুল ইসলাম নামের এক ভেন্ডারের কাছে সরবরাহ করা হয়। সানোয়ার হোসেন দেলুর বক্তব্য ও তার বিক্রয় রেজিস্টার যাচাই করে মেহেদী হাসানের দাখিল করা স্ট্যাম্পগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। মেহেদী হাসান অসৎ উদ্দেশ্যে তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীর সঙ্গে এ ধরনের নকল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র ও বন্ধকীসংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য দিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন জানান, মেহেদী হাসানের নামে মোট ৯১ লাখ ২৪ হাজার ২৫৪ টাকার অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। তার ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ৩০ হাজার ৮৭০ টাকা। ঋণ বাদে অর্জিত সম্পদের নিটমূল্য ৮১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৮৪ টাকা। এ ছাড়া মেহেদীর বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি ১৩ লাখ ৭৭ হাজার ৩২৩ টাকা পারিবারিক কাজে ব্যয় করেছেন। ঋণের কিস্তির সুদ পরিশোধ করেছেন ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৮৭ টাকা। ফলে তার মোট সম্পদ পাওয়া যায় ৯৬ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪ টাকার। আর তার গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬৪ টাকা। ফলে তিনি অসৎ উপায়ে আয়বহির্ভূত ৬২ লাখ ৯ হাজার ৩০ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন। অবৈধ এ সম্পদ অর্জন ও ভোগদখল করে তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। নকল স্ট্যাম্পে মিথ্যা বন্ধকীপত্র দাখিল করে এবং আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদের মালিকানা অর্জন করার অপরাধে কনস্টেবল মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলা করা হয়েছে। পরে আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য মামলার এজাহার রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান দুদকের এই সহকারী পরিচালক। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল মেহেদী হাসান বলেন, মামলার বিষয়ে আমি এখনো জানি না, সুতরাং আমি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
২০ মে, ২০২৪

যুক্তরাজ্য অবৈধ বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠাবে
যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের তালিকায় বাংলাদেশিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। দেশটিতে আশ্রয়ের আবেদনকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বড় রকমের দুঃসংবাদ দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। যুক্তরাজ্যে ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ চেয়ে অনেকেই আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে যাদের আবেদন ব্যর্থ হয়েছে, সেসব বাংলাদেশিকে ‘ফাস্ট-ট্র্যাক’ (দ্রুত) পদ্ধতিতে ফেরত পাঠাবে দেশটি। আর এ সংখ্যা হতে পারে ১০ হাজারেরও বেশি। গত এক বছরে শুধু স্থায়ীভাবে থাকার প্রয়াসে প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি ‘রাজনৈতিক আশ্রয়ের’ আবেদন জমা দিয়েছেন। দেশটির গণমাধ্যম টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। এমন অবস্থায় যুক্তরাজ্যের অবৈধ অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল টমলিনসন বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এই চুক্তির অধীনে কেবল ব্যর্থ আশ্রয় প্রার্থীরাই নয়, বিদেশি নাগরিকদের যারা অপরাধী এবং যেসব ব্যক্তি ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের পর বাড়তি সময় অতিবাহিত করেছেন তাদেরও ফেরত পাঠানোর কাজ সহজতর হবে। টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাসাইলাম আবেদন করে ব্যর্থ হওয়া আশ্রয় প্রার্থীদের ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তির অধীনে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। মূলত ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের পর দেশটির ভিসা ব্যবস্থার অপব্যবহারকারীদের মধ্যে বাংলাদেশিরা শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, অভিবাসীরা গত বছরের মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, কর্মী বা ভিজিটর ভিসায় যুক্তরাজ্যে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় দাবি করেছেন। মূলত যুক্তরাজ্যে প্রবেশের জন্য এসব ভিসা ব্যবহার করেছেন তারা। তবে দেশটিতে বাংলাদেশিদের প্রাথমিক আশ্রয় আবেদনের মাত্র ৫ শতাংশই সফল হয়েছে। অর্থাৎ ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হবে। টেলিগ্রাফ বলছে, চলতি সপ্তাহে লন্ডনে স্বরাষ্ট্রবিষয়ক প্রথম যৌথ ইউকে-বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপে উভয় পক্ষ রিটার্ন চুক্তিটিতে সম্মত হয়। সেখানে উভয় দেশ তাদের মধ্যকার অংশীদারত্বের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিষয়ে সহযোগিতা আরও জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার কথা জানায়। যুক্তরাজ্যের অবৈধ অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল টমলিনসন বলেছেন, অবৈধভাবে এখানে আসা বা থাকা বন্ধ করার জন্য অবৈধ অভিবাসীদের অপসারণের কাজ ত্বরান্বিত করা আমাদের পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের একটি মূল্যবান অংশীদার এবং আমরা তাদের সঙ্গে এই ইস্যুর পাশাপাশি অন্য বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সম্পর্ক জোরদার করছি। এ ধরনের চুক্তিগুলো অবৈধ অভিবাসনের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে বলে আমরা এরই মধ্যে স্পষ্ট প্রমাণ দেখতে পেয়েছি। বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর সমাধান প্রয়োজন এবং আমি সবার জন্য ন্যায্য ব্যবস্থা তৈরি করতে বাংলাদেশ ও অন্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ।
১৮ মে, ২০২৪

যুক্তরাজ্যে অবৈধ বাংলাদেশিদের জন্য দুঃসংবাদ
‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ চেয়ে অনেকেই যুক্তরাজ্যে আবেদন করেছিল। এদের মধ্যে যাদের আবেদন ব্যর্থ হয়েছে সেসব বাংলাদেশিকে ‘ফাস্ট-ট্রাক’(দ্রুত) পদ্ধতিতে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে দেশটি।  গত এক বছরে শুধু স্থায়ীভাবে থাকার প্রয়াসে প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি ‘রাজনৈতিক আশ্রয়ে’র আবেদন জমা দিয়েছে। দেশটির গণমাধ্যম টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানা গেছে।  প্রতিবদনে বলা হয়েছে, আশ্রয়ের আবেদন খারিজের পাশাপাশি যারা বিদেশি অপরাধী ও যাদের ভিসার বৈধ মেয়াদ অতিবাহিত হয়ে গেছে তাদেরকেও ফেরত পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো সহজ করতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি করেছে যুক্তরাজ্য। লন্ডনে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তিটি হয়। যুক্তরাজ্যের অবৈধ অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল টমলিনসন বলেছেন, লন্ডনে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্রবিষয়ক যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ প্রথম যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে চুক্তির ব্যাপারে দুই দেশ সম্মত হয়। ওয়ার্কিং গ্রুপে উভয় দেশ অংশীদারত্ব জোরদারে অঙ্গীকার করে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিষয়ে সহযোগিতা জোরালো করতে প্রতিশ্রুতি দেয়। ওয়ার্কিং গ্রুপ বিদ্যমান ভিসা রুটগুলোর মাধ্যমে বৈধ অভিবাসনের সুবিধা অব্যাহত রাখা, অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলা, তথ্য ভাগাভাগি জোরদার করা, গুরুতর সংগঠিত অপরাধ মোকাবিলায় নিজ নিজ পন্থা সম্পর্কে পরস্পরের সঙ্গে বোঝাপড়া বাড়ানোর ব্যাপারেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।
১৭ মে, ২০২৪

ফেনীর সোহেলের উপজেলা চেয়ারম্যান পদ অবৈধ
২০১৯ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া ফেনীর ছাগলনাইয়ার মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলের উপজেলা চেয়ারম্যান পদ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে যত বেতন-ভাতা ও সুবিধা গ্রহণ করেছেন, তা রায়ের কপি পাওয়ার ৩ মাসের মধ্যে ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ৫ বছর আগে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে গতকাল বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ওই সময়ের উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আব্দুল হালিমের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেন আদালত। অন্য প্রার্থী এ এস এম শহিদুল্লাহ মজুমদারের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়। আদালতে হালিম ও শহিদুল্লাহর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার এস এম কফিল উদ্দিন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাঈনুল হাসান বলেন, ২০১৯ সালেই হাইকোর্ট এসব বিষয়ে রুল জারি করেন। ছাগলনাইয়ার উপজেলা চেয়ারম্যানের গেজেট স্থগিত করেন। পরে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। আইনি জটিলতায় সোহেল চৌধুরী চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নিতে পারেননি। শপথ না নিয়েও তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেজন্য তিনি যে বেতন-ভাতা নিয়েছেন, তা ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৫ জুন অনুষ্ঠেয় ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়েও আব্দুল হালিম ও শহীদুল্লাহ নতুন করে আবেদন করেন। ২০১৯ সালে জারি করা রুল এবং নতুন আবেদনের ওপর শুনানি করে গতকাল আদালত রায় দেন। নতুন নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করায় আব্দুল হালিমের আগের প্রার্থিতার বিষয়টি এখন আর গ্রহণযোগ্য নয়। এ ছাড়া নতুন নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে করা আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে।
১৭ মে, ২০২৪

বিটিআরসির অভিযান / ৯৭৭ অবৈধ স্মার্ট টিভি বক্স জব্দ, আটক ৪
রাজধানীর মিরপুর ও এলিফ্যান্ট রোডে অভিযান চালিয়ে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ৩১ লাখ টাকা মূল্যের ৯৭৭টি অবৈধ স্মার্ট টিভি বক্স ও সেট টপবক্স জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। বুধবার (১৫ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিটিআরসির এনফোর্সমেন্ট অ্যান্ড ইন্সপেকশন ডিরেক্টরেটের একটি টিম র‌্যাব-৪ এর সদস্যদের সহযোগিতায় রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী প্লাজা মার্কেট এবং এলিফ্যান্ট রোডে অবৈধ স্মার্ট টিভি বক্স ও সেটটপ বক্স বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে। এ সময় মিরপুরের শাহ আলী প্লাজা মার্কেটের তিনটি দোকান থেকে ৪৪০টি অনুমোদনবিহীন সেট টপ বক্স ও স্মার্ট টিভি বক্স জব্দ করে। এ সময় এসব পণ্য  বিক্রির সঙ্গে জড়িত ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। জব্দ সরঞ্জামগুলোর মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের অল আইটি কালেকশন নামক একটি দোকান থেকে ৫৩৭টি অনুমোদনবিহীন সেটটপ বক্স ও স্মার্ট টিভি জব্দসহ ১ জনকে আটক করা হয়েছে। জব্দ সরঞ্জামের আনুমানিক মূল্য ১৬ লাখ টাকা। আটকদের বিরুদ্ধে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
১৬ মে, ২০২৪

কনডেম সেলে বন্দি রাখা অবৈধ ঘোষণায় হাইকোর্টকে আসক-এর সাধুবাদ 
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। এ ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) উচ্চ আদালতের এই মানবিক সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ মে) আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে এ সাধুবাদ জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিন কয়েদি। ওই রিট শুনানি করে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল রুল জারি করেন হাইকোর্ট। গতকাল ১৩ মে (সোমবার) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির আপিল, রিভিউ, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার ধাপগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না। একই সঙ্গে বর্তমানে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে সারা দেশে যত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে তাদের দুই বছরের মধ্যে ক্রমান্বয়ে সাধারণ সেলে রাখার কথা বলা হয়েছে রায়ে। তবে বিশেষ কারণে (স্বাস্থ্যগত কারণ, সংক্রামক রোগ) কোনো ব্যক্তিকে নির্জন কক্ষে রাখতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির উপস্থিতিতে শুনানি হতে হবে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুসারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুসারে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি হাইকোর্টে আপিল করার সুযোগ পান। হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারেন। আপিল বিভাগের রায়েও মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করার সুযোগ আছে। এ ছাড়া সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। ক্ষমার এই আবেদন রাষ্ট্রপতি যদি নামঞ্জুর করেন অথবা দণ্ডিত যদি আবেদন না করেন তাহলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারে সরকার। অথচ বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশের পরপরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কনডেম সেলে বন্দি রাখা হচ্ছে। যা অত্যন্ত অমানবিক। মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে না রাখার রায়ের মাধ্যমে আসামিদের প্রতি মানবিক আচরণ করা হবে বলে মনে করে- আসক। 
১৪ মে, ২০২৪

মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্তের আগে ফাঁসির আসামিকে কনডেম সেলে নেওয়া অবৈধ : হাইকোর্ট
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি রাখা অবৈধ ও  বেআইনি ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া আগামী দুই বছরের মধ্যে জেল কর্তৃপক্ষকে ডেথ সেলে যারা বন্দি আছেন, তাদেরকে ক্রমান্বয়ে অন্য ব্যবস্থাপনা করে মৃত্যু সেল থেকে সরিয়ে সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে বসবাসের সুযোগ করে দিতে বলা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে শুধু বিশেষ বিবেচনায় কোন বন্দিকে আলাদা করে নির্জন কক্ষে রাখা যাবে।  এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি করে সোমবার (১৩ মে) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম রাজু। রায়েরে পর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, এটা একটা ঐতিহাসিক রায়। রায়ের বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার পূর্বে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামি বলা যাবে না এবং তাকে কারাগারের নির্জন ডেথ সেলে বন্দি রাখা যাবে না। মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত বলতে, এখানে যত বিচারিক ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া আছে সেগুলো শেষ হওয়াকে বোঝানো হয়েছে। বিচার বিভাগীয় পদক্ষেপে যেমন- হাইকোর্ট বিভাগ, আপিল বিভাগ এবং রিভিউয়ের শুনানি শেষেও যদি কারও মৃত্যুতদণ্ড বহাল থাকে তাহলে প্রশাসনিক পদক্ষেপ হিসেবে সে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ পান। রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন খারিজের পরই একজন মানুষের মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হয়েছে বলা যাবে এবং শুধু তখনই একজন বন্দিকে নির্জন কক্ষে (ডেথ সেলে) বন্দি রাখা যাবে। তার আগে ডেথ সেলে বন্দি রাখা যাবে না। তিনি আরও বলেন, বিশেষ বিবেচনায় যদি কোনো বন্দির বিশেষ কোনো অসিুবিধা থাকে, এটা হতে পারে ফিজ্যিক্যাল অসুবিধা, সংক্রামক কোনো রোগ থাকলে অথবা অন্য কোনো সেক্সচ্যুয়াল রোগ থেকে থাকে, তাহলে তাকে আলাদা করে রাখা যাবে। এক্ষেত্রে এ ব্যক্তিকে নির্জন কক্ষে রাখার ব্যাপারে আলাদা করে শুনানি নিতে হবে। শুনানি নেওয়ার পর তাকে নির্জন সেলে রাখা যাবে। শিশির মনির বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার শুনানিতে আদালতে বলেছেন, নতুন জেল কোড তৈরি করতে যাচ্ছে, নতুন প্রিজন অ্যাক্ট হচ্ছে। হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, এই রায়ে যেসব পর্যবেক্ষণ দেওয়া হচ্ছে সেগুলো যেন নতুন আইনে প্রতিফলিত হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে শিশির মনির আরও বলেন, আমাদের দেশে হাইকোর্ট বিভাগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জামিনের দরখাস্তের শুনানি হয় না। অন্যান্য আসামিদের জামিন শুনানি হয়। তারা জামিন পেয়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত একবার হলেই তাদের জামিনের আর শুনানি হয় না। এ ক্ষেত্রে হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত যাদের আপিল বিচারাধীন থাকে, তাদের জামিন আবেদনও যেন অন্যান্য আসামিদের মতো শুনানি করা হয় এবং জামিনও যেন মঞ্জুর করা হয়।  হাইকোর্ট জেল কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, মৃত্যু সেলে যারা বন্দি থাকেন, তাদের ব্যাপারে কোনো সাংবাদিক বা কোনো গবেষক বা অন্য কেউ তথ্য অধিকার আইনে দরখাস্ত দিয়ে জানতে চাইলে, তাদেরকে যেন বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়। এ ছাড়াও সুপ্রিমকোর্ট এবং হাইকোর্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন, কতজনের মৃত্যুদণ্ড কমছে, কতজনের বহাল থাকছে- এসব ব্যাপারে কোনো ব্যক্তি তথ্য অধিকার আইনে বা সাংবাদিকরা তথ্য চাইলে তা যেন দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের এসব তথ্য পরিসংখ্যানসহ সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে এবং বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশও করতে বলা হয়েছে।  মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে দণ্ডিত বা দণ্ডিতদের কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা কারাগারের কনডেম সেলের তিন কয়েদি। তারা হলেন- সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও খাগড়াছড়ির শাহ আলম। ওই রিট শুনানি করে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল রুল জারি করেন হাইকোর্ট।  মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে দণ্ডিতদের কনডেম সেলে রাখা কেন আইনত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্তদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা সংক্রান্ত কারাবিধির ৯৮০বিধিটি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। সেইসঙ্গে কনডেম সেলে রাখা বন্দিদের কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, সে বিষয়ে প্রতিবেদন চান আদালত।  রিটে বলা হয়, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুসারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) নিতে হয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুসারে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি হাইকোর্টে আপিল করতে পারেন। হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করার সুযোগ আছে দণ্ডিত ব্যক্তির। সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করার সুযোগ আছে।  এ ছাড়া সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। ক্ষমার এ আবেদন রাষ্ট্রপতি যদি নামঞ্জুর করেন, তাহলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে সরকার আইনগত বৈধতা পায়। অথচ বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশের পরপরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কনডেম সেলে বন্দি রাখা হচ্ছে। হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের আগে দণ্ডিত ব্যক্তিকে কনডেম সেলে রাখা তার মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর এ রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়। রুল শুনানিতে আদালত এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও এস এম শাহজাহানের বিশেষজ্ঞ মত নেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানি করেন। আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন মোহাম্মদ শিশির মনির। রুলের ওপর শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়। সে অনুযায়ী হাইকোর্ট আজ রায় ঘোষণা করেন। 
১৩ মে, ২০২৪

অবৈধ সম্পদ অর্জন, কারাগারে সাবেক এমপি
অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।  রোববার (১২ মে) ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের  আবেদন করেন গিয়াস উদ্দিন। আদালত তার আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।  আদালতের আদেশের সত্যতা নিশ্চিত করে দুদকের প্রসিকিউশন শাখার সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আজ তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। তবে আদালত তার আবেদ নামঞ্জুর করেছেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০২০ সালের ২ নভেম্বর গিয়াস উদ্দিনকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেয় দুদক। একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন গিয়াস উদ্দিন। তখন অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র ও দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাই করে তার নামে ১৫ কোটি ৭ লাখ ১৫ হাজার ৭৭৯ টাকার স্থাবর এবং ৫ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ৩১৮ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২০ কোটি ৯৫ লাখ ৮৬ হাজার ৯৭ টাকার সম্পদের তথ্য মেলে।  ২০০৮-০৯ করবর্ষ থেকে ২০২১-২২ করবর্ষে পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে গিয়াস উদ্দিনের ১৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯০ হাজার ৪৩ টাকা ব্যয়ের তথ্য পায় দুদক। এসব ব্যয়ের বিপরীতে বিভিন্ন সময়ে সঞ্চয় হিসাবে ৬ কোটি ৮১ লাখ ২২ হাজার ৮৫৬ টাকা, গৃহ সম্পত্তি থেকে আয়ের ২ কোটি ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫০ টাকা, পিতার কাছ থেকে হেবা মূল্যে প্রাপ্ত ১১ শতাংশ জমিসহ ৭ কোটি টাকার দালান, ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকার মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ মোট ১৭ কোটি ৬৮ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩৭ টাকার বৈধ ও  গ্রহণযোগ্য উৎস পায় দুদক।  তবে গিয়াস উদ্দিনের আয়কর নথি অনুযায়ী, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে কাসসাফ শপিং সেন্টার-১ নির্মাণ ব্যয় প্রদর্শনকালে ২০২১-২২ করবর্ষে মার্কেটের ৮০২ বর্গমিটার নির্মাণে ১ কোটি ৪১ লাখ ৮৬ হাজার ৯৩১ টাকা বিনিয়োগের কোনো বৈধ উৎস পায়নি দুদক। যা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে। তাই ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদক উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধ মামলা করেন।
১২ মে, ২০২৪

অবৈধ টিভি চ্যানেল ও লাইসেন্সবিহীন বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধে কার্যক্রম শুরু
অবৈধভাবে দেশি-বিদেশি টিভি চ্যানেল প্রদর্শন ও লাইসেন্সবিহীন বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধে কার্যক্রম শুরু করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সভাপতিত্বে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সংক্রান্ত ১০টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। এ সিদ্ধান্তগুলো হলো- কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬-এর অধীনে অনুমোদিত সেবা প্রদানকারীরাই সরকার অনুমোদিত দেশি-বিদেশি চ্যানেলসমূহ গ্রাহকের নিকট বিতরণ করতে পারবে; ক্লিনফিড ছাড়া বিদেশি চ্যানেল কিংবা অননুমোদিত কোনো চ্যানেল ডাউনলিংক, সম্প্রচার, সঞ্চালন বা বিতরণ করা যাবে না; সেট-টপ বক্স অবৈধভাবে আমদানি ও বাজারজাত করা যাবে না; টিভি চ্যানেল স্ট্রিমিং এর অ্যাপসসমূহ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে প্রচারণা করা কিংবা এ ধরনের অ্যাপস সেট-টপ-বক্সে ইনস্টল করে বিক্রি করা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। এর বিরুদ্ধে বিটিআরসিকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; বাংলাদেশের নিরাপত্তার স্বার্থে, সরকারের রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির স্বার্থে, বিদেশে অর্থ পাচার রোধে এবং দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে যে কোনো অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রচলিত আইন ও বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে; কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬ এর ৩ (১) ধারা অনুযায়ী, কোনো ডিস্ট্রিবিউটর বা সেবাপ্রদানকারী নির্ধারিত আবেদনপত্রের ভিত্তিতে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত চ্যানেল ব্যতিত অন্য কোনো চ্যানেল বাংলাদেশে ডাউনলিংক, বিপণন, সঞ্চালন বা সম্প্রচার করতে পারবে না। এ ছাড়া, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় হতে বিদেশি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান ক্লিনফিড সম্প্রচারের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেছে বিধায় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ক্লিনফিড ব্যতিত বিদেশি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান সম্প্রচার বা সঞ্চালন করতে পারবে না; কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬ এর ৩(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো ডিস্ট্রিবিউটর বা সেবাপ্রদানকারী সরকার অনুমোদিত চ্যানেল ব্যতিত নিজস্ব কোনো অনুষ্ঠান যথা : ভিডিও, ভিসিডি, ডিভিডি এর মাধ্যমে অথবা অন্যকোনো উপায়ে কোনো চ্যানেল বাংলাদেশে বিপণন, সঞ্চালন ও সম্প্রচার করতে পারবে না। আইন অমান্য করে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেশি বা বিদেশি টিভি চ্যানেলের ফিড বা নিজস্ব কোনো চ্যানেল সম্প্রচার বা সঞ্চালন করতে পারবে না; কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬ এর ৪(১) ধারা অনুযায়ী, লাইসেন্সপ্রাপ্ত না হয়ে কোনো ব্যক্তি, ডিস্ট্রিবিউটর বা সেবাপ্রদানকারী হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। তাই লাইসেন্সধারী ডিস্ট্রিবিউটর বা সেবাপ্রদানকারীরা ব্যতিত অন্যকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান টিভি চ্যানেল বা অনুষ্ঠান সঞ্চালন বা সম্প্রচার করতে পারবে না; অনুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটররা এই সিদ্ধান্তসমূহ তাদের বিদেশি টিভি চ্যানেল সম্প্রচারকারীদের লিখিতভাবে অবহিত করবে এবং আইন ও নীতিমালা বহির্ভূত, অবৈধ বা অননুমোদিতভাবে সম্প্রচার কাজে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে গত বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের চিঠি দিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
০৬ মে, ২০২৪
X