ইসরায়েলি ড্রোন ভূপাতিত করে কঠিন বার্তা হিজবুল্লাহর
ইসরায়েলের ছোড়া পাঁচটি ড্রোন সম্প্রতি ভূপাতিত করেছে লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধা গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এসব ড্রোন ভূপাতিত করার মাধ্যমে ইসরায়েল সরকার এবং প্রতিরোধ যোদ্ধা ও তাদের সমর্থকদের কাছে হিজবুল্লাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমন একটি খবর প্রকাশ করেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা।   ইসরায়েলের আগ্রাসী ভূমিকার কারণে গত বছরের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরু হলে বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে ইসরায়েল ও লেবানন সীমান্ত। সেখানে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইরানপন্থি এই গোষ্ঠীটির দাবি, হামাসের প্রতি সমর্থনের অংশ হিসেবে তারা এসব হামলা করে আসছেন। একমাত্র গাজায় ইসরায়েল নির্বাচারে হামলা বন্ধ করলেই তারা এসব আক্রমণ বন্ধ করবেন। অন্যথায় পাল্টা হামলা চালাবে হামাস। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হানি আল-দালি আল মায়াদিন টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের মাত্রা বাড়িয়েছে হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলি সরকারের ওপর তাদের হামলার রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব রয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ইসরায়েলি বাহিনীর চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা। একই সঙ্গে ইসরায়েলের হামলার মুখে নিজেদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে সংগঠনটি। রাজনৈতিক এই বিশেষজ্ঞের মতে, বর্তমানে সীমান্তে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে বোঝা যায় যে হিজবুল্লাহর হাতে ড্রোনেরে মতো আকাশযান শনাক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা সহজে ইসরায়েলি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করতে পারছে।  এ ছাড়া আকাশে ইসরায়েল এত দিন যে শ্রেষ্ঠত্ব উপভোগ করে আসছিল এই অগ্রগতির কারণে তা কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে ইসরায়েলের আগ্রাসী ভূমিকার কারণে বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলের পাশ থেকে সরে গেছে সেটিও বেশ পরিষ্কার।  ইরানের দূতাবাসে হামলা চালিয়ে যার খেসারত দিতে হয়েছে ইসরায়েলকে। পাল্টা হামলা চালিয়ে ফের হুমকি দিয়ে রেখেছে নতুন করে হামলা চালালে দাঁতভাঙা জবাব দেবে ইরানও। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ধরনা দিয়েও খুব একটা লাভ হয়নি ইসরায়েলের। পশ্চিমারা ইসরায়েলের পাশে থাকবে বলেও শেষ পর্যন্ত দেখা যায়নি বিপদের দিনে।  উল্টো কূটনৈতিক শক্তি বাড়াতে দেখো গেছে ইরানকে। সম্প্রতি তিন দিনের পাকিস্তান সফর শেষে শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে করাচি ছেড়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। বুধবার করাচির জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কলম্বোর উদ্দেশে বিমানে চড়তে দেখা যায় রাইসিকে। যদিও মাত্র কয়েক মাস আগে পাল্টাপাল্টি হামলায় ইরান-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছিল। তবে কূটনীতির মাধ্যমে সম্পর্ক জোড়া লাগায় মুসলিম বিশ্বের শক্তিধর এই দুই দেশ। পাকিস্তানের নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ইব্রাহিম রাইসির এই সফর দুই দেশের সম্পর্ক আরও উন্নত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪

হামলা চালাতে যাওয়া সব ইসরায়েলি ড্রোন গুঁড়িয়ে দিল ইরান
ইরানে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দেশটির গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু ও সামরিক ঘাঁটির শহর ইস্ফাহানে এসব হামলা চালানো হয় বলে জানা গেছে। তবে ইরান দাবি করছে, ইস্ফাহানে ইসরায়েলের তিনটি ড্রোন পর্যবেক্ষণ করছিল যা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। দেশটির বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় থাকায় ড্রোনগুলো ধ্বংস করা হয়। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে।  ইরানের মহাকাশ সংস্থার একজন মুখপাত্রের বরাতে কাতারি সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানায়, ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ছোট ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।  গত শনিবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরই পাল্টা হামলার হুমকি দেয় নেহতানিয়াহু প্রশাসন। যদিও বৃহত্তর সংঘাত এড়াতে এমন আচরণ না করতে অনুরোধ করে পশ্চিমা দেশগুলো। শেষ পর্যন্ত সেই অনুরোধ রাখেনি তেলআবিব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন সিনেটরের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে ইরানের ভূখণ্ডে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর দেওয়া হয়। এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনও ইস্ফাহানে বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তেহরান, ইস্ফাহাস, সিরাজসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বিমান চলাচল স্থগিত করা হয়েছে। সক্রিয় করা হয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও। এখন পর্যন্ত চলমান এ হামলায় ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি পাল্টা এ হামলার দায়ও স্বীকার করেনি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইরানের ইস্ফাহান শহরটিকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শহরটিতে সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নের সাইট এবং ঘাঁটিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এ ছাড়া নিকটবর্তী নাতাঞ্জ শহরে ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ সাইটগুলোর অবস্থান রয়েছে। এদিকে শনিবার রাতে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলে ইরানের হামলার প্রতিশোধ নিতে নানান ছক কষছে পশ্চিমাদের ভরকেন্দ্র আমেরিকা। এরই মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে- ইসরায়েলের ওপর ইরানের হামলার পর তারা এখন ইরানের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের দিকে নজর দিচ্ছে। ইসরায়েল অবশ্য ইতোমধ্যেই তার মিত্রদের প্রতি তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে। মূলত ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ গত বছরের অক্টোবরে শেষ হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার জন্য। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছে এবং বিভিন্ন সময়ে নতুন নিষেধাজ্ঞাও যুক্ত করে।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪
X