শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত
আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানিসহ যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও উৎসাহের মধ্য দিয়ে সারা দেশে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে গত বৃহস্পতিবার ঈদের জামাত শেষে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এরপর ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করেন। হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৭টায়। এতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, দুই সিটির মেয়রসহ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নামাজ আদায় করেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৭টায়। এতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ এহসানুল হক। এ ছাড়া সকাল ৮টা, ৯টা, ১০টা ও পৌনে ১১টায় বাকি চার জামাত হয়। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ জানান, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯টায়। চট্টগ্রামে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত হয় জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের ঈদগাহ ময়দানে। সিলেটের শাহি ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ সাধারণ মানুষ। রাজশাহীতে হজরত শাহ মখদুম (রহ.) দরগা মসজিদে নামাজ আদায় করেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ মুসল্লিরা। রংপুরে বৃষ্টির কারণে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত মডেল মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ময়মনসিংহে কেন্দ্রীয় আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে প্রধান জামাত হয়। বরিশালের বান্দরোডের হেমায়েতউদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রধান জামাতে নামাজ আদায় করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহসহ মুসল্লিরা। খুলনায় প্রধান জামাত হয়েছে নগরীর টাউন জামে মসজিদে।
০২ জুলাই, ২০২৩

পবিত্র ঈদুল আজহা পশুত্বের কোরবানিই মূল কথা
মুসলিম জাহানের জন্য খুশির বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আবার এলো পবিত্র ঈদুল আজহা। শান্তি, সম্প্রীতি আর আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে এ উৎসব। দিনটি সব ভেদাভেদ ভুলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে মিলিত হওয়ার দিন। সবাইকে ঈদ মোবারক! পবিত্র ঈদুল আজহায় মহান আল্লাহর উদ্দেশে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করা মুসলমানদের প্রাচীন ঐতিহ্য। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি প্রিয় বান্দা হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর সীমাহীন ভক্তি, সর্বোচ্চ ত্যাগের সদিচ্ছা এবং গভীরতম আত্মসমর্পণে পরম করুণাময় সন্তুষ্ট হন এবং তিনি ইবরাহিম (আ.)কে আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ পশু কোরবানি করতে নির্দেশ দান করেন। এ ঘটনার পর থেকে মুসলমানরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের প্রতীক হিসেবে পশু কোরবানি দিয়ে আসছেন। প্রতিবছর মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র হজের পরই কোরবানি দেওয়া হয়। পাঁচ দিন ধরে চলে হজের আনুষ্ঠানিকতা। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা লাখ লাখ মুসলমান আরাফাত ময়দানে সমবেত হন। এটি মুসলিম ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্তও বটে। পবিত্র ঈদুল আজহার উদ্দেশ্য স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকা। পশু কোরবানি করা হয় প্রতীকী অর্থে। আসলে কোরবানি দিতে হয় মানুষের সব রিপুকে—কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা। সৎপথে উপার্জিত অর্থের বিনিময়ে কেনা পশু কোরবানির মাধ্যমেই তা সম্পন্ন হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, কোরবানির এ মর্মবাণী আমাদের সবসময় স্মরণে থাকে না, বরং ত্যাগের সাধনার চেয়ে বড় হয়ে ওঠে ভোগবিলাস ও অপচয়। আধ্যাত্মিকতা ছাপিয়ে যায় বস্তুগত আনুষ্ঠানিকতা। কোরবানির মধ্যে যে উৎসর্গের মহিমা রয়েছে, তার চেয়ে বড় হয়ে ওঠে ভোজনের উৎসব। এ দেশের অনেকের কাছে ধর্মের মতো আধ্যাত্মিক একটি বিষয়ও পরিণত হয়েছে লোক দেখানো আচারে। প্রতিযোগিতা করে মাংস খাওয়া এবং মাসের পর মাস ডিপফ্রিজে জমিয়ে রাখা ইদানীং আমাদের কালচারে পরিণত হয়েছে। অথচ এ দেশে বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষ দুবেলা খেতে পায় না, অনেক শিশু অপুষ্টিজনিত রোগব্যাধির শিকার। অনেক মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তারা রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে, তীব্র শীতে কষ্ট পায়। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানহীন এ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুঃখ-দুর্দশার কথা চিন্তা করা এবং সাধ্যমতো তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ানো সামর্থ্যবানদের একান্ত কর্তব্য। সামর্থ্য অনুযায়ী, পশু কোরবানি দিয়ে দরিদ্র প্রতিবেশীদের মধ্যে এর মাংস বিতরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কোরবানি করা পশুর রক্ত বা মাংস কিছুই পৌঁছায় না, শুধু পৌঁছায় বান্দার তাকওয়া। কাজেই কোরবানি কোনো লোক দেখানো বা প্রতিযোগিতার বিষয় নয়। কোরবানির অর্থ ত্যাগ বা উৎসর্গ। আল্লাহতায়ালা প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গ করতে বলেছেন। আমরা তার আদেশ পালন করব অন্তরের তাগিদে, মানুষকে দেখানোর জন্য নয়। পবিত্র ঈদুল আজহায় সারা দেশে একই দিনে বিপুলসংখ্যক পশু কোরবানির কারণে পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা একটি সমস্যা হয়ে ওঠে। তাই সবার উচিত যেখানে-সেখানে পশু জবাই করার প্রবণতা ত্যাগ করা। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে এ সময় বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে। এ আনন্দময় উৎসবে কালবেলার পক্ষ থেকে আমাদের অগণিত পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, বিপণনকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীর প্রতি রইল ঈদের শুভেচ্ছা। পবিত্র ঈদুল আজহার আনন্দ অমলিন হোক।
২৮ জুন, ২০২৩

পবিত্র ঈদুল আজহা কাল
আগামীকাল বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, যথাযোগ্য মর্যাদা, বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ত্যাগের মহিমায় উদযাপিত হবে কোরবানির ঈদ। এদিন দেশের সব ধর্মপ্রাণ মুসলমান ঈদের নামাজ আদায় করবেন এবং মহান রবের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দেবেন। ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী কোরবানি ওয়াজিব। আল কোরআনের সুরা কাউসারে বলা হয়েছে, ‘অতএব তোমার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড় এবং কোরবানি কর।’ সুরা হজেও বলা হয়েছে, কোরবানির পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা। আগামীকাল সকালে মুসল্লিরা তাদের নিকটস্থ ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। নামাজের খুতবায় তুলে ধরা হবে কোরবানির গুরুত্ব ও তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে একসঙ্গে নামাজ আদায়ের পর ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করবেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে ঈদুল আজহার সব প্রস্তুতি শেষ। পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, কোরবানি সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়। আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করার মনোভাব জাগ্রত করে। এ সময় সমাজের দারিদ্র্যপীড়িত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে এবং তাদের পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবান ও সচ্ছল ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ঈদুল আজহা শান্তি, সহমর্মিতা, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয়। হজরত ইবরাহিম (আ.) মহান আল্লাহর উদ্দেশে প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি লাভে যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তা বিশ্ববাসীর কাছে চিরকাল অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, প্রতিবছর এ উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে সচ্ছল মুসলমানরা কোরবানির পশুর গোশত আত্মীয়স্বজন ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিলিয়ে সহমর্মিতা ও সাম্যের বন্ধন প্রতিষ্ঠা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, হাসিখুশি ও ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রতিটি মানুষের জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কোরবানির মহিমান্বিত শিক্ষাকে বুকে ধারণ করে মানবকল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, দেশ এখন চরম দুঃসময় অতিবাহিত করছে। স্বেচ্ছাচারী শাসনের কবলে জনগণ অধিকারহীন ও বাকরুদ্ধ। বর্তমান অবস্থা থেকে পরিবর্তন চায় তারা। ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার ছাড়াও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। এদিকে, ঢাকায় ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নজরদারি রাখবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
২৮ জুন, ২০২৩
X