প্রাণ ফিরে পেল কোলাহলমুক্ত কুয়াকাটা সৈকত
কদিন আগেও পদচারণায় মুখরিত থাকত কুয়াকাটার দর্শনীয় স্পটগুলো। পবিত্র মাহে রমজানের শুরুর পর থেকেই পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। ১৮ কিলোমিটার সৈকত এখন কোলাহলমুক্ত। কোনো টু শব্দটিও নেই। নীরবে নিশ্চুপ হয়ে প্রকৃতি তার আপন ডালা মেলেছে। জনমানবহীন হওয়ায় প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলছে কুয়াকাটা সৈকত। এখানে প্রাণ প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে স্বকীয়তা।  সরেজমিনে দেখা যায়, সৈকতের পানি নীল বর্ণ ধারণ করেছে। বালিয়াড়িতেও পড়ে থাকতে দেখা যায়নি কোনো প্লাস্টিক বর্জ্য।  যতদূর চোখ যায় চিকচিক করছে বালুর স্তূপ। নতুন পাতা ছেড়েছে গাছগাছালি ও লতাগুল্ম। আপন মনে বয়ে চলছে সমুদ্রের ঢেউ। সৈকতের বিভিন্ন জায়গায় শিল্পীর তুলির যেন আঁচড় পড়েছে। সাগরের বুকে ঢেউ আছড়ে পড়ছে আর শো শো শব্দ করে বালিয়াটিতে মিশছে। মাঝে মাঝে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। সবমিলিয়ে দারুণ অনুভূতি। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে , যখন পর্যটকের আনাগোনা থাকে তখন সমুদ্রসৈকতের পরিবেশ থাকে নোংরা। এখানে সেখানে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র পড়ে থাকে। সমুদ্রের তীরে কোনো পাখি আসে না। এখন জনমানবহীন হওয়ায় পাখি উড়তে দেখা যায়। কাকড়া হাটে। সমুদ্রের পানির সুন্দর রং হয়। সব মিলিয়ে ভালো লাগে। সৈকতের বর্তমান সৌন্দর্যকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। পাশাপাশি তাদের দাবি, জীববৈচিত্র্যকে তার আপন মহিমায় চলতে দেওয়া উচিত। এ জন্য মানুষের চলাচল সীমিত করে পরিবেশবান্ধব সৈকত গড়ে তোলা জরুরি মনে করছেন। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি মো. চান মিয়া বলেন, আজ থেকে ২০ বছর আগে আমরা জিরো পয়েন্ট থেকে ৫ কিলোমিটার গাছ-গাছালির মধ্যে দিয়ে হেঁটে সমুদ্র পাড়ে গেছি। কি সুন্দর ছিল আগের পরিবেশ। এখন গাছপালাও নাই আর সমুদ্র সুন্দরও লাগে না।  হাঁটাও যায় না সমুদ্র পাড়ে। কেননা, আগের চাইতে সমুদ্রের পাড় নোংরা হয়ে গেছে। পানি ঘোলাটে থাকে। নির্দিষ্ট একটা জায়গা থাকা দরকার যেখানে কোনো পর্যটকের আনাগোনা থাকবে না। তাহলে সমুদ্র তার নিজস্ব সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পারবে। এনিমেল লাভারস অব পটুয়াখালীর সদস্য বাইজিদ মুন্সি বলেন, প্রকৃতি সুযোগ পেলেই তার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। তার রূপের ডানা মেলে মানুষের মনকেই প্রশান্তি দেয় তা প্রমাণ করল পর্যটকদের আনাগোনা কম থাকায়। পরিবেশকর্মী ও সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান মিরাজ বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে কুয়াকাটায় ব্যাপক সংখ্যক পর্যটকের আনাগোনা বাড়ছে । ফলে কুয়াকাটায় যে পরিমাণে পর্যটকের ধারণ ক্ষমতা আছে তার চেয়েও বেশি সমাগম হয়। যার ফলে ব্যালেন্স হারাচ্ছে সৈকত। প্রকৃতি তার আপন ভুবনে বেড়ে উঠতে দেওয়া উচিত বলে মনে করছি। মানুষ প্রকৃতির কাছে গেলেই প্রশান্তি পায়। তাই মানবহীন সৈকতটি তার আসল সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলছে। এমন সৌন্দর্য থাকুক সব সময়। সেক্ষেত্রে নিরাপদে প্রকৃতিকে বাড়তে সাহায্য করতে হবে। পটুয়াখালী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, ২ সপ্তাহ আগেও পর্যটকদের পদভারে সৈকত, রাস্তাঘাট টইটম্বুর ছিল। রমজান শুরুর পর থেকেই সৈকত শুন্য। এই শূন্য সৈকতই প্রকৃতি  এখন সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলছে। প্রকৃতি পাল্টাতে শুরু করেছে। ১৮ কিলোমিটার সৈকত এখন নিশ্চুপ। তাই এই স্বপ্ল সময়ে প্রকৃতি ডানা মেলে বসেছে। প্রকৃতি ও পর্যটক এদের নিয়ে বাঁচিয়ে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২৪ মার্চ, ২০২৪
X