গাজায় যুদ্ধবিরতি : ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা রাজি হলেও ইসরায়েলের তালবাহানা
দীর্ঘ সাত মাসের যুদ্ধের পর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুমোদনের পর তারা জানিয়েছে, বল এখন ইসরায়েলের কোর্টে। তবে ইসরায়েল বলছে, হামাস রাজি হলেও তাদের দাবি-দাওয়া এখনো পূরণ হয়নি। এমনকি দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে স্থল হামলা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়েছে নেতানিয়াহু সরকার। ফলে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা এত দূর আগালেও ইসরায়েলের তালবাহানায় গাজায় যুদ্ধবিরতি এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খবর রয়টার্সের। সোমবার (৬ মে) হামাসের একটি সূত্র জানায়, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা মিসর ও কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের নিশ্চিত করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে প্রতিরোধ সংগঠনটি জানায়, হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া কাতারি প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি এবং মিসরের গোয়েন্দাপ্রধান আব্বাস কামেলের সঙ্গে এক ফোনালাপে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা জানান। হামাসের এমন বার্তার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি ইসরায়েলের সব দাবি পূরণ করেনি। তবে চুক্তি আলোচনা অব্যাহত রাখার কথাও জানিয়েছে তেল আবিব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, হামাস যে প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে তা মিসরীয় প্রস্তাবের কাটছাঁট। তবে এতে এমন বিষয়ও রয়েছে যাতে ইসরায়েল রাজি হবে না। গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় ২৫০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে গাজায় বন্দি করে নিয়ে আসে হামাস। একই দিন হামাসকে নির্মূল এবং বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। গত নভেম্বরে সাত দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিনিময়ে ১১০ ইসরায়েলি বন্দিকে হামাস মুক্তি দিলেও এখনো তাদের হাতে শতাধিক বন্দি আছেন। অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। এ ছাড়া এ পর্যন্ত ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
০৭ মে, ২০২৪

গাজা যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-কাতারের নীলনকশা
গাজা থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে কোনোভাবেই উৎখাত করছে পারছে না ইসরায়েল। তবে এবার ভিন্ন এক জায়গা থেকে সংগঠনটিকে চেপে ধরতে চাইছে ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। কাতারভিত্তিক হামাসের রাজনৈতিক অফিস নিয়ে নতুন এক চক্রান্তের নীলনকশায় মেতে উঠেছে দেশটি। নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাতারকেও দলে ভিড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার (০৪ মে) ওয়াশিংটন পোস্টের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষপর্যায় থেকে এমন চাপ আসার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে কাতার। যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলে জোরপূর্বক দেশত্যাগে বাধ্য করা হতে পারে বলে কাতারের পক্ষ থেকে হামাসের নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তার বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতার কয়েক মাস ধরেই হামাসের শীর্ষ নেতাদের দেশটি থেকে বের করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে শুধু দেশ থেকে বহিষ্কারই নয় কাতারে হামাসের রাজনৈতিক অফিসও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। কাতার সরকারের এমন পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। বিগত বছরগুলোতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাতে কাতারকে মধ্যস্থতা করতে দেখা গেছে। তবে গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনে কাতার অনেকটা নিস্পৃহ ভূমিকা বজায় রেখেছে। গেল মাসে কাতার জানায়, তারা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই পরোক্ষ আলোচনায় মধ্যস্থতার ভূমিকা থেকে সরে আসতে পারে। রাজনীতিকরা নিজেদের ফায়দা লাভের আশায় কাতারের ভূমিকাকে খাটো করে দেখছে, এমন উদ্বেগ থেকেই নিজেদের অবস্থান পুনর্বিবেচনার কথা জানায় দোহা।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, কাতার যদি মধ্যস্থতার ভূমিকা থেকে সরে আসে তাহলে হামাসের রাজনৈতিক অফিস দেশটিতে রাখার কোনো মানে নেই। বাইডেন প্রশাসনের আশা, হামাসের নেতাদের কাতার থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিতে রাজনৈতিক ফায়দা হতে পারে। তবে ওয়াশিংটন পোস্টকে বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে আলোচনা প্রক্রিয়া আরও জটিল হবে। কেননা দোহায় হামাসের অফিস থাকা না থাকায় কিছু যায় আসে না। কারণ গাজায় বসে যারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাদের কাছে হামাসের অফিস কোথায় থাকবে তা কোনো বিষয় নয়। ঠিক একই ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কাতারের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিক থিওরোস। তার বিশ্বাস, কাতার থেকে হামাসকে বের করে দেওয়া হোয়াইট হাউসের জন্য একটি দুঃস্বপ্ন হবে। এর ফলে ভবিষ্যত আলোচনার রাস্তাও বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে হামাসের চেয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অনাগ্রহ বেশি বলে দাবি করেছেন গ্রুপটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হুসাম বাদরান। তার ভাষায়, যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে আমাদেরই আগ্রহ বেশি।
০৫ মে, ২০২৪

গাজা নিয়ে ভয়ংকর রিপোর্ট ওয়াশিংটন পোস্টের
সাত মাসেরও বেশি সময় পার হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের। এই সময়ের মধ্যে শস্য ও খাদ্য উৎপাদনের পুরো সক্ষমতা হারিয়েছে গাজা। পাশাপাশি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়েছে উপত্যকার বিশুদ্ধ পানির জোগান। শুক্রবার (০৩ মে) ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  ইসরায়েলের লাগাতার বোমা হামলা এবং বুলডোজারের চাপায় ধূলিসাৎ হয়েছে গাজার অধিকাংশ কৃষিজমি এবং ফলের বাগান। তারপরও কিছু জমি হয়তো বেঁচে ছিল, কিন্তু বোমা হামলা থেকে বাঁচতে গাজাবাসী যখন দক্ষিণ দিকে ছুটেছে, তখন পেছনে ফেলে যাওয়া জমির ফসল এবং গবাদিপশু মারা পড়েছে পানির অভাব ও অনাহারে।  আশরাফ ওমর নামে উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ার এক বাসিন্দা সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান, জানুয়ারির শেষের দিকে ইসরায়েলি সেনারা তার ফসলের জমি বুলডোজার দিয়ে পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে। একইসঙ্গে তার একটি গ্রিনহাউস এবং সৌরশক্তির প্রকল্প ছিল, সেগুলোও ভেঙে ফেলেছে ইসরায়েলি সেনারা। সবকিছু গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে তারা একটি সামরিক বাফার জোন তৈরি করেছে।  তিনি জানান, পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এসব জমিতে তারা কমলা, লেবু, আলু, বেগুন, টমেটো এবং শসা চাষ করতেন। কিন্তু এখন সেসব শুধুই স্বপ্ন। আশরাফ ওমরের গল্প এখন গাজার প্রতিটি মানুষের।  গাজার কৃষি তথ্য, স্যাটেলাইট ইমেজ, উপত্যকার বিশেষজ্ঞ ও ফিলিস্তিনিদের সাক্ষাৎকার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইতোমধ্যেই গাজার দুর্বল কৃষি ব্যবস্থা একেবারে পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।  গাজার কৃষি খাত ধ্বংসের মাত্রা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, বেআইনিভাবে ঘনবসতিপূর্ণ বেসামরিক এলাকায় নিজেদের সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে হামাস এবং অন্য সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। এসব ঠেকাতে আইডিএফ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেসব সামরিক প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে এবং তা আন্তর্জাতিক আইন অনুসারেই করা হয়েছে।  যদিও যুদ্ধের আগেও গাজার বেশির ভাগ ফল ও সবজি আমদানিই করা হতো। কারণ ২০০৭ সালে হামাস ক্ষমতা দখলের পর গাজার ওপর শাস্তিমূলক অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল এবং মিশর। সে কারণে গাজার খাবার উৎপাদনের ক্ষমতা প্রায় দুই দশক ধরে সীমিত। এখনো একটি সীমান্ত ক্রসিং ছাড়া সব সীমান্তই নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। এর ফলে সীমিত বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ছাড়া গাজায় প্রায় সব ধরনের আমদানি ও রপ্তানি সীমাবদ্ধ। পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে গাজাবাসীর।  
০৪ মে, ২০২৪

গাজা সাংবাদিকদের মৃত্যুপুরী
ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর গত প্রায় ৭ মাসে গাজায় ১৪১ জন সাংবাদিক নিহত ও ৭০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া চলমান এই যুদ্ধে গ্রেপ্তার অন্তত ৫৩ জন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি আছেন। ৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। এই দিবসকে সামনে রেখে যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দাবি করে শুক্রবার একটি বিবৃতি জারি করে গাজার সরকারি মিডিয়া দপ্তর। সেই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে এসব তথ্য। তুরস্কের সরকারি বার্তা সংস্থা আনাদোলুর বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে মিডলইস্ট মনিটর। বিবৃতিতে সাংবাদিক হত্যা ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাগুলোকে ইসরায়েল সরকার ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘পরিকল্পিত পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করে গাজার মিডিয়া অফিস বলেছে, গাজায় সামরিক অভিযানের নামে শিশু ও নারীদের বিরুদ্ধে যে গণহত্যা চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী, সেই গণহত্যা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হত্যা করা হচ্ছে সাংবাদিকদের। সাংবাদিকদের ওপর হামলা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া দপ্তর। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় সর্বশেষ নিহত সাংবাদিকের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেছে গাজার মিডিয়া দপ্তর। নিহত ওই সাংবাদিকের নাম সালেম আবু তোয়োর। আল-কুদস টুডে নামের একটি স্থানীয় টেলিভিশনের প্রতিবেদক ছিলেন তিনি। গত ৭ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েল ভূখণ্ডে প্রবেশ করে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তাদের হামলায় নিহত হয় ১ হাজার ২০০ জন মানুষ। এ ছাড়া দুই শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস। জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তাদের আগ্রাসনে গাজায় এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছে ৮০ হাজারের মতো মানুষ।
০৪ মে, ২০২৪

ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করলেন এরদোয়ান
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতিবাদে দেশটির সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করেছে তুরস্ক। ছোট্ট এই উপত্যকায় ইসরায়েল নিরবচ্ছিন্ন ও পর্যাপ্ত ত্রাণসহায়তা প্রবেশের অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। শুক্রবার (৩ মে) তুর্কি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হলেও গাজায় ইসরায়েলের হামলার কট্টর সমালোচক মুসলিম দেশ তুরস্ক। গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বেশ শক্তভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিন ইসরায়েল ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তুলাধুনা করছেন তিনি। একই সঙ্গে ইসরায়েলকে নিঃশর্ত সমর্থনের জন্য পশ্চিমাদের নিন্দা করেছেন তিনি। গত বছর দুই দেশের মধ্যে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। এবার তেল আবিবের সঙ্গে বাণিজ্য থেকে সরে এলো আঙ্কারা। এক বিবৃতিতে তুরস্ক বলেছে, এই বাণিজ্য স্থগিতাদেশ সব ধরনের পণ্যের আওতায় পড়বে। ইসরায়েল সরকার গাজায় নিরবচ্ছিন্ন এবং পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত তুরস্ক কঠোরভাবে এই নতুন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করবে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ‘স্বৈরশাসকের’ মতো আচরণ করছেন বলে অভিযোগ করেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। এক এক্স বার্তা তিনি বলেন, এরদোয়ান তুর্কি জনগণ ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে উপেক্ষা করছেন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি ক্ষুণ্ন করছেন। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তুরস্কের সঙ্গে বাণিজ্যের বিকল্প খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন কাৎজ। স্থানীয় উৎপাদন এবং অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার কথা বলেছেন তিনি।
০৩ মে, ২০২৪

গাজা যুদ্ধ নিয়ে আরব শিক্ষার্থীরা চুপ কেন?
প্যালেস্টাইনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে ক্ষোভে উত্তাল বিশ্ব। তার সঙ্গে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্ত হয়েছে আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। গত ২০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে প্রতিদিনই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এ বিক্ষোভ ক্রমেই সংগঠিত রূপ পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের এমন আন্দোলন ১৯৬০ এবং ১৯৭০ সালে আলজেরিয়া ও ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ই কেবল দেখা গিয়েছিল। এবার শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের শুরুটা হয়েছে প্রথমে অমেরিকার নিউইয়র্ক সিটির কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন মুভমেন্ট’ ওই বিক্ষোভের আয়োজক। গত ১৭ এপ্রিল সংগঠনটির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়টির আঙিনায় তাবু গেড়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। তাদের ওই কর্মসূচি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। ফলে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান। পুলিশি বাধায় ক্ষুব্ধ হয়ে অন্য শিক্ষার্থী এবং ফ্যাকাল্টি সদস্যরাও অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ কারণে, ওই কর্মসূচি অনেকটা অ্যামেরিকান ‘হাইড পার্কে’ রূপ নেয়। নিজেদের মধ্যে কখনো লেকচার দেওয়ার পাশাপাশি মাঝে মধ্যে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ভাষণও চলতো। আন্দোলনকারীরা নানা স্লোগানের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের দাবকেহ গান পরিবেশন, নৃত্য, পাঠদান, বিতর্ক এবং পড়াশোনাও করতো। হাতেগোনা কিছু শিক্ষার্থীর শুরু করা এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানালে আমেরিকার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও তা ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে তা রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও চিন্তাশীল সম্পন্ন বিশ্বের নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এর প্রভাব পড়ে। একই সময়ে শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়ার তালিকাও লম্বা হতে থাকে এবং তা যুদ্ধ বিরতিকে ছাপিয়ে যায়। যেসব সামরিক কোম্পানি ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করে তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব চুক্তি বাতিলের দাবি তোলা হয়। সেই সঙ্গে শান্তি ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মূলনীতি অনুসারে ইজরায়েলি সামরিক শিল্প ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার বিষয়টিও দাবিতে যুক্ত করা হয়। চলমান যুদ্ধ নিয়ে নিরবতা ও অপরাধীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখার মাঝেই শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বজুড়ে  শিক্ষার্থীরা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গাজা সলিডারিটি এনক্যাম্পমেন্টকে’ বীরোচিত কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করছে।  তারা তাদের সরকারের ওপর গাজা এবং ওয়েস্ট ব্যাংকের নিরীহ ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর দখলদার ইসরায়েলি সেনাদের যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চাপ সৃষ্টি করছে। যদিও ইসরায়েলের সমালোচনা ও তার অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার আন্দোলনকে নস্যাৎ এবং শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ করতে প্রথাগত অস্ত্র হিসেবে এ আন্দোলনকে ‘অ্যান্টি-সেমিটিজম’ তথা ইহুদি বিদ্বেষী তকমাও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাদের এ অস্ত্র এখন আর কোনো কাজে আসছে না। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা যখন নিশ্চিত করেছে যে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে। তারা ঘোষণা দিয়েছে, তাদের এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ। ফলে, এটি সেই নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন, যা আমেরিকার ইতিহাসে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। ১৯৫০ সাল থেকেই আফ্রিকা থেকে ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়া থেকে আরব অঞ্চলের আরব বসন্ত; এসব  ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার্থী আন্দোলন স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য বিপ্লবের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এর একটি অংশ মার্কসবাদেও দখল করে আছে। শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। মার্কসবাদীরা যাকে ‘মোটর শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশার ইতিহাস’ হিসেবে গণ্য করে থাকে। শ্রমিক ইউনিয়নগুলোতে রাজনীতিকরণ এবং দুর্নীতির মতো দুর্বলতার কারণে ছাত্র আন্দোলন সমাজ পরিবর্তনে সক্ষম ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কারণ, এতে রয়েছে যুবকদের প্রাণশক্তি, যারা বিভিন্ন দল ও সুবিধাভোগীদের থেকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা পাচ্ছে এবং এই যৌবন তাদেরক ভবিষ্যৎ নির্মাণের কারিগরে পরিণত করছে। অথচ, কোনো এক অজানা কারণে, আমরা আরব দেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তেমন কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছি না। অন্তত তাদের দেশের বাইরেও তাদের কণ্ঠ শোনা যায় না। আমার সবচেয়ে কাছের দেশ মরক্কোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্যাতন ও নিপীড়নের ভয়ে সবাই নিশ্চুপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কর্মীরাও ফিলিস্তিনের সমর্থনে জোড়ালো আওয়াজ তুলতে ভয় পাচ্ছেন। অন্যদিকে, যারা গাজায় যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে চান, তাদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দেওয়া এবং ছাত্র আন্দোলন দমন-পীড়নে নানা কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। গত মাসে, জেরুজালেমবিষয়ক ‘ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মরোক্কান স্টুডেন্টসের’ ষষ্ঠ ফোরামে শিক্ষার্থীরা যাতে অংশ নিত না পারে, সেজন্য মরক্কোর আবদেল মালেক এসাদি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রসিডেন্ট ক্যাম্পাসে পুলিশ তলব করেন। ‘আল আকসা ফ্লাড : বিজয় ও স্বাধীনতাই জাতির সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক’ শীর্ষক স্লোগানে ওই ফোরাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ফোরাম শুরুর আগেই তিনদিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসিডেন্ট সব ধরনের ক্লাস ও সুবিধা বন্ধ ঘোষণা করেন। এ ছাড়া, মরক্কোর ৩০ টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়, অসংখ্য কলেজ ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যাপক, শিক্ষক কিংবা ছাত্র, সবার মাঝেই ভয় এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। একটি প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রগতিশীল অধ্যাপক যিনি ন্যায়ের পক্ষে বিশেষ করে ফিলিস্তিনের ব্যাপারে তার অবস্থানের জন্য সুপরিচিত। তিনি আমাকে জানান, ভয়ের কারণে মরক্কোর  বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া থেকে বিরত থাকছে সবাই। তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন, সেটি রাবাতের একটি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রমাণ হিসেবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার আলোচনার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। ওই অধ্যাপক প্রসিডেন্টকে গাজা যুদ্ধ নিয়ে একটি শিক্ষা বিষয়ক অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তাব দেন। কিন্তু এমন আয়োজনে রাষ্ট্রের ‘সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ’ অনুমতি নাও দিতে পারে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসিডেন্ট তার আশঙ্কার কথা জানান। বিশেষ করে মরক্কোর সঙ্গে জায়নবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কন্নোয়নের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানের বাতিঘর এবং সমাজের নেতৃত্ব তৈরির কারখানা। মরক্কো হলো সেই দেশ, যার ইতিহাসের  প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী এমনকি সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন বছরগুলোতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্ররাই সামাজিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু গত দুই দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রসিডেন্টরা কর্মী বনে গেছেন। তারা এখন কেবল তাদের ব্যক্তি স্বার্থ, পদ-পদবী এবং সামাজিক মান মর্যাদার প্রতিই বেশি মনোযোগী। তারা কর্তৃপক্ষের ইশারার অপেক্ষায় থাকেন, যাতে তাদের বিরাগভাজন হতে না হয়। তবে, কর্তৃপক্ষকে ক্ষুব্ধ এবং অসন্তুষ্ট করতে পারে এমন কণ্ঠস্বর দমনে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করেন না। এভাবেই তারা তাদের পদ-পদবী রক্ষার মূল্য দেন এবং সব  আশাকে জলাঞ্জলি দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠেন। অন্যদিকে, মরক্কোর জনগণের যেকোনো লড়াই ও সংগ্রামে  দেশটির ছাত্র সমাজ অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে।  নাগরিক আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান এবং রাজনৈতিক দল পরিচালনাসহ মরক্কোর ইতিহাসজুড়ে রয়েছে ছাত্রদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা এবং তাদের আত্মত্যাগের কাহিনি। যার মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রে পরিবর্তন এবং উন্নয়ন সূচিত হয়েছে। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে মরক্কোতে যে আন্দোলন হয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই। ওই আন্দোলন হাজার হাজার তরুণ ও যুবককে আকৃষ্ট করেছিল এবং শিক্ষার সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু বর্তমানে পদ্ধতিগত নিপীড়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর দমিয়ে রাখা হচ্ছে। গাজায় যুদ্ধাপরাধ যখন অনেক দূর অঞ্চলেও প্রতিবাদের ঢেউ তুলেছে, তখন আমরা আরব অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জেগে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছি। কারণ, এটি একটি গভীর নৈতিক বিষয়। গাজা ট্রাজেডি বন্ধে প্রতিনিয়ত যেসব কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হচ্ছে এবং দাবি তোলা হচ্ছে তাতে যদি বিশ্ব কর্ণপাত না করে, তাহলে ভবিষ্যতে মানবজাতির সহাবস্থানের ক্ষেত্রে এ সঙ্কট ভয়ংকর রূপ ধারণ এবং মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।  মিডল ইস্ট মনিটর অবলম্বনে অনূদিত
০২ মে, ২০২৪

ইসরায়েলিদের বাঁচাতে ফিলিস্তিনিদের কাছে দুই দেশের আকুতি
গাজা যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপ সামলাতে বেশ হিমশিম খাচ্ছে ক্ষমতাসীন নেতানিয়াহু সরকার। বিশেষ করে গাজায় বন্দি ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্তির জন্য প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে ইসরায়েলি সরকারকে। এমন পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুকে খানিক স্বস্তি দিতে হামাসের প্রতি ইসরায়েলি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।  কাতারি সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে জানা যায়, সোমবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জানান, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে হামাসের কাছে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যেখানে ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতির সঙ্গে কিছু ইসরায়েলি বন্দির মুক্তির বিনিময়ে অন্তত এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। এদিন সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক সভায় বক্তৃতাকালে ক্যামেরন এই প্রস্তাবকে ‘উদার’ বলে মন্তব্য করেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রত্যেক ইসরায়েলি বন্দি মুক্তি না পাচ্ছে ততক্ষণ যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জানান, হামাস এ প্রস্তাব গ্রহণ করবে বলে তিনি আশাবাদী। হামাসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তাদের খুব দ্রুতই সিদ্ধান্তে আসতে হবে। তিনি আশা করেন, হামাস সঠিক সিদ্ধান্তই গ্রহণ করবে। গত কয়েক মাস ধরে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করার জন্য কাজ করছে মিসর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের এ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব এমন এক সময়ে দেওয়া হলো যখন গাজায় চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে খলিল আল হাইয়্যার নেতৃত্বে হামাসের একটি প্রতিনিধি দল মিসর সফর করছে। স্বাধীনতাকামী দলটি বরাবরই বলে আসছে যুদ্ধবন্দিদের মুক্তির জন্য স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। তাদের আশঙ্কা ইসরায়েল তার সব বন্দির মুক্তির পর গাজার ওপর আরও নির্মমভাবে হামলা শুরু করবে। এদিকে কট্টরপন্থি ইসরায়েলি মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে জানান, ইসরায়েলি বন্দিদের বিনিময়ে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করা হলে তার সরকারের পতন ঘটবে।
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের পদত্যাগ
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বর্বর হামলা ও নৃশংসতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি পালন করছে তার বিরোধীতা করে পদত্যাগ করেছেন ওয়াশিংটনের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আরবি ভাষার মুখপাত্র হালা রাহারিত। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিঙ্কডিনে এক পোস্টে পদত্যাগের কথা নিশ্চিত করেন তিনি।  পোস্টে হালা রাহারিত জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মানজনক পদে ১৮ বছর চাকরি করার পর ২০২৪ সালের এপ্রিলে আমি পদত্যাগ করেছি। গাজা ইস্যুতে মার্কিন সরকারের নীতিই এর কারণ।  মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, হালা রাহারিত দুবাই আঞ্চলিক মিডিয়া হাবের ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন এবং ১৮ বছর আগে একজন রাজনৈতিক ও মানবাধিকারবিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে স্টেট ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন। পদত্যাগের বিষয়ে হালা রাহারিত বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, স্টেট ডিপার্টমন্ট কর্মকর্তাদের সরকারের নীতির সঙ্গে মতানৈক্য থাকলে তারা তা প্রকাশ করতে পারে। ওয়াশিংটনের গাজা নীতির বিরোধিতা করে পদত্যাগ করা পররাষ্ট্র গপ্তরের তৃতীয় কর্মকর্তা হালা রাহারিত। প্রায় এক মাস আগে, পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার ব্যুরোর অ্যানেল শেলাইন পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) কর্মকর্তা জোশ পল গত অক্টোবরে পদত্যাগ করেন। এর আগে গাজায় ইসরায়েলের অভিযান শুরুর পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা জশ পল জো বাইডেনের ধ্বংসাত্মক ও অন্যায্য অস্ত্র নীতির বিরোধিতা করে পদত্যাগ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ বিভাগের পরিচালক ছিলেন। একই বিষয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে পদত্যাগ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা তারিক হাবাশ। তিনি ছিলেন একজন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভুত আমেরিকান।   উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তেল আবিব। ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। এছাড়াও সেখানে তীব্র মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।  এর মধ্যে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতি সরাসরি এবং নির্লজ্জ সমর্থনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর কাছে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে ওয়াশিংটন।  
৩০ নভেম্বর, ০০০১

গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের পদত্যাগ
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বর্বর হামলা ও নৃশংসতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি পালন করছে তার বিরোধিতা করে পদত্যাগ করেছেন ওয়াশিংটনের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আরবি ভাষার মুখপাত্র হালা রাহারিত। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিঙ্কডিনে এক পোস্টে পদত্যাগের কথা নিশ্চিত করেন তিনি।  পোস্টে হালা রাহারিত জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মানজনক পদে ১৮ বছর চাকরি করার পর ২০২৪ সালের এপ্রিলে আমি পদত্যাগ করেছি। গাজা ইস্যুতে মার্কিন সরকারের নীতিই এর কারণ।  মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, হালা রাহারিত দুবাই আঞ্চলিক মিডিয়া হাবের ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন এবং ১৮ বছর আগে একজন রাজনৈতিক ও মানবাধিকারবিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে স্টেট ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন। পদত্যাগের বিষয়ে হালা রাহারিত বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, স্টেট ডিপার্টমন্ট কর্মকর্তাদের সরকারের নীতির সঙ্গে মতানৈক্য থাকলে তারা তা প্রকাশ করতে পারে। ওয়াশিংটনের গাজা নীতির বিরোধিতা করে পদত্যাগ করা পররাষ্ট্র গপ্তরের তৃতীয় কর্মকর্তা হালা রাহারিত। প্রায় এক মাস আগে, পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার ব্যুরোর অ্যানেল শেলাইন পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) কর্মকর্তা জোশ পল গত অক্টোবরে পদত্যাগ করেন। এর আগে গাজায় ইসরায়েলের অভিযান শুরুর পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা জশ পল জো বাইডেনের ধ্বংসাত্মক ও অন্যায্য অস্ত্রনীতির বিরোধিতা করে পদত্যাগ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ বিভাগের পরিচালক ছিলেন। একই বিষয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে পদত্যাগ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা তারিক হাবাশ। তিনি ছিলেন একজন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত আমেরিকান।   উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তেল আবিব। ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। এ ছাড়াও সেখানে তীব্র মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।  এর মধ্যে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতি সরাসরি এবং নির্লজ্জ সমর্থনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর কাছে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে ওয়াশিংটন।    
২৭ এপ্রিল, ২০২৪

২০০ দিনে গড়াল গাজা যুদ্ধ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ২০০তম দিনে গড়িয়েছে। ইতিমধ্যে ইসরায়েলি হামলায় ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। এত প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ সত্ত্বেও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জোরালো হলেও তা বন্ধের কোনো দৃশ্যমান কোনো লক্ষণ নেই। আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা কমার কোনো লক্ষণ নেই। ছোট্ট এই উপত্যকার উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে দিনরাত বোমা ও স্থল হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। অন্যদিকে গাজা সিটিতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। যদিও এই শহরে অভিযান সম্পন্ন করার দাবি করে আসছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় ২৫০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে গাজায় বন্দি করে নিয়ে আসে হামাস। একই দিন হামাসকে নির্মূল এবং বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। গত নভেম্বরে সাতদিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিনিময়ে ১১০ ইসরায়েলি বন্দিকে হামাস মুক্তি দিলেও এখনো তাদের হাতে শতাধিক বন্দি আছেন। অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। এ ছাড়া এ পর্যন্ত ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। বর্তমানে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা চলছে। এতে মধ্যস্থতা করছে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। রমজানের আগে এই চুক্তি আলোচনায় অগ্রগতি হলেও এখন দুপক্ষের মতবিরোধের কারণে তা স্থবির হয়ে পড়ে আছে।
২৩ এপ্রিল, ২০২৪
X