জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় তরুণ সমাজকে যুক্ত করা জরুরি
জলবায়ু ও জলবায়ু পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন্তু এ বিষয়ে আমরা আসলে কতটুকু সচেতন? এ বিষয়ে তরুণ প্রজন্মই বা কতটুকু জানে? এ বিষয়ে সবারই কি কিছু করণীয় আছে? এ বিষয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আদৌ কি আমরা কোনো পরিকল্পনা করতে পেরেছি? বিশ্বনেতারা কি গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ আদৌ শূন্যে নামিয়ে আনতে পারবেন? সেক্ষেত্রে তরুণ সমাজের কি কোনো ভূমিকা আছে?- জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এ ধরনের নানা প্রশ্ন আমার মতো আশা করি অনেকের মনেই জন্ম নেয়।  প্রায় প্রতিদিনই আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। সাম্প্রতিক সময়ে (১ সেপ্টেম্বর, ২০২১) জাতিসংঘের আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুসারে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে গত ৫০ বছরে বিশ্বে পাঁচগুণ মৃত্যু বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বন্যা ও দাবদাহের ফলে বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে ২০ লাখ মানুষের। এ কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার কোটি ডলার। এছাড়া গত জানুয়ারিতে (২০২১) ১২ লাখ মানুষের ওপর চালানো জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কিত একটি সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনা মহামারির চেয়েও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি এখন তাৎপর্যপূর্ণ।  গ্লোবাল ক্লাইমেট ইনডেক্স অনুসারে ১৯৯৮-২০২১ সালে আবহাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের শিকার হওয়ার অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ৬৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫তম। অথচ করোনা মহামারির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের আলোচনা যেন অনেকটাই চাপা পড়ে গিয়েছিল। তাই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার প্রয়াসে আগামী দিনগুলো সত্যিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বৈশ্বিক উষ্ণতার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচানোর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে সময় হাতে আর খুব বেশি নেই।  মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের পরিণতিতে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন দ্রুতহারে সাগর-পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে এবং বরফ গলছে। সেই সাথে, জীবজন্তুর বিভিন্ন প্রজাতি তাদের আবাসস্থল বদলাচ্ছে। কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে বরফের আচ্ছাদন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে, পরিস্থিতি দিনকে দিন বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে (সূত্র: বিবিসি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯)। ফলে আরও অনেক আগেই (২০১৯ সালে) পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে জাতিসংঘ 'রেড-অ্যালার্ট’ জারি করেছিল।   সঙ্গত কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শপথ গ্রহণের পর প্যারিসের জলবায়ু চুক্তিতে প্রত্যাবর্তনের কথা এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতার কথাও গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেছিলেন।  আমরা জানি, ১ থেকে ১২ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো শহরে (স্কটল্যান্ড) জাতিসংঘ আয়োজিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ (কনফারেন্স অব দ্য পার্টি: জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ২৬তম সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের ওয়েবসাইটে মূলত চারটি অভীষ্ট অর্জনের কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে: ১. চলতি শতকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন নিটশূন্য (নির্গমন ও শোষণের পরিমাণ একই রাখা) করা ও প্রাক-শিল্পযুগের তুলনায় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। এর জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি, বিশেষ করে কয়লা ব্যবহার বন্ধ করে সবুজ শক্তিতে দ্রুত স্থানান্তর হওয়া, বন ধ্বংস হ্রাস করা, বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়েছে। ২. মানুষ ও প্রাকৃতিক আবাসস্থল রক্ষা। এই অভীষ্ট অর্জনের জন্য বাস্তুতন্ত্র রক্ষা ও পুনরুদ্ধার, বন্যা প্রতিরক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো ও ঝুঁকি হ্রাসের প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ৩. অর্থায়নের ব্যবস্থা করা। এর জন্য উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদান করার প্রতিশ্রুতি পালনের প্রয়োজন বলে বলা হয়েছে। ৪. একত্রে কাজ করা। প্যারিস রুল-বুক চূড়ান্তকরণ, সরকার, ব্যবসায়ী ও সুধীসমাজকে একত্রে কাজ করার মাধ্যমেই বর্ণিত অভীষ্ট অর্জন সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু করোনার কারণে বিশ্ব তোলপাড় হচ্ছে তাই নয়, তোলপাড় হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েও। কারণ, জলবায়ুর অতি সামান্য যে পরিবর্তন ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা গেছে, তার প্রাথমিক ক্ষতিকর প্রভাব পৃথিবীর মানুষকে সত্যি সত্যিই চমকে দিয়েছে। এ ধরনের একটি সময়ে কপ-২৬ আয়োজন সত্যিই খুব তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও এ ধরনের সম্মেলন নতুন কিছু নয়। কপ-২৬ মঞ্চে সব পক্ষকে কিছু ছাড় দিয়ে উল্লিখিত চারটি অভীষ্ট অর্জনে ইতিবাচক মনোভাবের পরিচয় দিতে হবে। তা না হলে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতি মূলত মানবজাতিকেই ভোগ করতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা প্রতিনিয়ত আবহাওয়ার আচরণ পাল্টাতে দেখছি। আবহাওয়াটা কেমন যেন অস্থির- ঘনঘন নিম্নচাপ হচ্ছে, আমরা মুখোমুখি হচ্ছি ঘূর্ণিঝড়ের, অতিবৃষ্টি আর বন্যার। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজ-কর্ম, জনজীবন, অর্থনীতি কম-বেশি সবকিছুই।  গত নভেম্বর, ২০২০ থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের একটি বিশেষ অবস্থা বা লা নিনা সক্রিয় হয়ে ওঠার কারণে সাগর থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু এবং মেঘ বাংলাদেশের দিকে বেশি এসেছে। ফলে বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস অনুসারে দেশে এ বছর বৃষ্টি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আগাম বন্যাও আমরা লক্ষ্য করেছি।   এছাড়া লা নিনার প্রভাবে এবারে শীতকালটাও আমরা ঠিকভাবে বুঝতে পারিনি। ব্যাপারটা কিছুটা আশ্চর্য মনে হলেও সত্যি যে, সাগর থেকে গরম বাতাস এসে আকাশ মেঘলা করে দিয়ে শীতকে কমিয়ে দিয়েছিল। পুঞ্জীভূত তাপের কারণে সাগরে লঘুচাপ ও নিম্নচাপ বেশি তৈরি হওয়ায় আবহাওয়াবিদরা এটাও অনুমান করেছিলেন যে, কালবৈশাখী ও বজ্রপাত আরও বাড়বে।   গত বছর বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বজ্রপাত ২০ শতাংশের বেশি হয়েছিল বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে। আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে পূর্বের বছরগুলোর চেয়ে গত বছর বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর হারও ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রসঙ্গত, মন্ত্রণালয় আরও অনেক আগেই বজ্রপাতকে ‘দুর্যোগ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।  বাংলাদেশের মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমন নানামুখী পরিবর্তন ঘটছে। এককথায় পৃথিবী পৃষ্ঠের গড় উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এক সংকটজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে সব মানুষ। অবশ্য বহু বছর ধরেই পৃথিবীর গড় উষ্ণতা কখনো বেড়েছে কিংবা কখনো কমেছে। এসব পরিবর্তন ঘটেছে খুব ধীরে। একেক ধরনের পরিবর্তন হওয়ার জন্য দশ থেকে হাজার লক্ষ বছর কেটে গেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেসব পরিবর্তন ঘটেছে সেসব খুবই দ্রুত হচ্ছে।  বাংলাদেশে এর সাথে যুক্ত হয়েছে আরও কিছু দিক- ভৌগোলিক অবস্থানগত অসুবিধা, সুশাসনের অভাব এবং প্রশাসনিক দক্ষতা ও নীতিমালা বাস্তবায়নে ঘাটতি, দুর্নীতি ও দুর্বলতাসমূহ। ফলে বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত সার্বিক বিপন্নতা ধীরে ধীরে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাটাই খুব বেশি। ফলে দারিদ্র্য এবং সামাজিক সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগের পরিমাণ বাড়বে আরও বেশি। এসব নিয়েও বিভিন্ন সময়ে কম-বেশি গবেষণা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এবং সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এ সম্পর্কিত গবেষণার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।  গড় উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রাথমিক অবস্থা বর্তমান প্রজন্ম যেমন প্রত্যক্ষ করছে; তেমনি ধারণা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক প্রজন্ম জলবায়ুর কারণে পৃথিবীর ব্যাপক পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করবে। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাই বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এ নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং সবাই এক জোট হয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমিয়ে ফেলার জন্য দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।  নিঃসন্দেহে, জলবায়ু পরিবর্তন এক বৈশ্বিক সমস্যা। এ বিষয়ে স্থানীয়, জাতীয় পর্যায়ে কিংবা রাষ্ট্রীয়ভাবে যেমন অনেককিছুই হয়েছে, তেমনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবেও যেমন: প্যারিস চুক্তি, কিয়োটো প্রোটোকল ইত্যাদি। কিন্তু এতকিছুর পরও আমরা তরুণসমাজের সচেতনতা এক্ষেত্রে বৃদ্ধি করতে পারিনি, তাদের ভয়েস শোনার খুব-একটা তাগিদ আমরা অনুভব করিনি এবং সবচেয়ে  বড় কথা  এ সকল কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ তেমনভাবে আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। সাম্প্রতিক দু-একটি গবেষণার উদাহরণ দিলেই তা আরও সুস্পষ্ট হবে।   গত মার্চ (২০২১) মাসে গ্লোবাল ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিটে ‘যুব ও জলবায়ু পরিবর্তন: বাংলাদেশ প্রসঙ্গ’ শিরোনামে একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। জরিপটি পরিচালনা করেছিল বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) ও সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ (সিইউএস)। আমি নিজেও সেই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কার্যক্রমে সিইউএস’র পক্ষ থেকে যুক্ত ছিলাম। জরিপে দেশের প্রত্যেক বিভাগের ১৮-৩৫ বছর বয়সী ২ হাজার তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ করেছিল। জরিপের অন্যান্য ফলের পাশাপাশি জ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে যে ফলটি তুলে ধরা হয় সেটি আমাকে বিশেষভাবে অবাক করেছে। ফলে দেখা যায়- জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি শুনেছে ৯৭ ভাগ  তরুণ-তরুণী। তাদের মধ্যে ৫৩.৮৫ ভাগ এ সম্পর্কে ভালোভাবে বলতে পারে। এর মধ্যে আবার তৃণমূল পর্যায়ের (৫৯.৪৮ ভাগ ) অংশগ্রহণকারী এবং নারীদের (৫৬.০৯ ভাগ) হারই বেশি।  এছাড়া মাত্র ২৬.৮২ ভাগ তরুণ-তরুণী এ সম্পর্কিত সরকারি উদ্যোগ ও আইন সম্পর্কে জানে এবং ৪৮.৮৪ ভাগ তরুণ-তরুণী এ বিষয়ে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ গ্রহণে আগ্রহী ও তারা সহযোগিতা এবং পরামর্শ চায়।   “অন্যদিকে রাইজিং টু দি চ্যালেঞ্জ: ইউথ পারসপেকটিভস্ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এডুকেশন ইন বাংলাদেশ” শিরোনামে ইউনিসেফের সাম্প্রতিক (ফেব্রুয়ারি, ২০২১) আরেকটি গবেষণা ফল প্রকাশিত হয়। সেখানে তরুণদের জলবায়ু সম্পর্কে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অনুসন্ধান করা হয়।  দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশে পরিচালিত এই গবেষণায় বাংলাদেশের ১৫-২৪ বছর বয়সী ৫,৫৮৬ জন তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ করে। গবেষণার ফলে দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে বলতে বা ব্যাখ্যা করতে পারবে এমন তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ৫০ ভাগ। ৭৭ ভাগ তরুণ-তরুণী প্রায়ই বা মাঝেমাঝেই জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে বিদ্যালয় থেকে জানতে পারে, পুরুষের তুলনায় নারীদের হার এক্ষেত্রে বেশি (৮১ ভাগ)।  ৫৪ ভাগ জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ সম্পর্কে আরও জানতে কিংবা শিখতে চান। ৫ ভাগ তরুণ-তরুণীর জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে কোনো ধরনের শেখার আগ্রহ নেই। আর ৬৫ ভাগ বিশ্বাস করেন এ বিষয়ে সরকারেরই সবচেয়ে বেশি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।  ফলে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত নির্ভরযোগ্য এ সকল গবেষণা থেকে কয়েকটা বিষয় সুস্পষ্ট: এক. তরুণ-তরুণীদের মাঝে এ নিয়ে জানার আগ্রহ ও ঘাটতি আছে এবং তাদের এ সম্পর্কে জানাবার বা এ ধরনের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার মতো কার্যক্রম আলাদাভাবে নেই বললেই চলে; দুই. এ বিষয়ে নিজেদের করণীয় জানা না থাকার কারণে সরকারের দিকে মুখাপেক্ষী অনেকেই এবং সরকারি উদ্যোগ সম্পর্কেও বেশিরভাগ তরুণ-তরুণীই কিছু জানেন না। তবে নারীদের এ বিষয়ে শেখার আগ্রহ ও অগ্রগতি লক্ষ্য করার মতো এবং নিঃসন্দেহে সম্ভাবনাময়। এছাড়া সংখ্যায় অল্প হলেও একদল তরুণ-তরুণী জলবায়ু সম্পর্কে কিছুই জানে না, কিংবা তাদের এ সম্পর্কিত কোনো কার্যক্রমে একেবারেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।  পৃথিবীর জলবায়ু ক্রমেই পরিবর্তন হচ্ছে। জলবায়ু প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হলেও এর সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহ সত্যিই উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো। কারণ এই পরিবর্তনের ব্যাপকতা অনেক। আর এই পরিবর্তনের জন্য মানবজাতি প্রত্যক্ষভাবে দায়ী তার যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য প্রমাণ ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। ফলে ধর্ম, বর্ণ, বয়স নির্বিশেষে সব মানুষই যদি না জানে তার কারণে জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে এবং কীভাবে সেটা ক্রমেই বাড়ছে। তাহলে জানার ঘাটতি কিংবা না জানানোটুকুই সমস্যাকে ধীরে ধীরে আরও বাড়িয়ে তুলবে।  সাম্প্রতিক সময়ে হাউ টু অ্যাভয়েড আ ক্লাইমেট ডিজাস্টার (জলবায়ু বিপর্যয় যেভাবে এড়ানো যায়) নামে বিল গেটসের নতুন বই সম্পর্কে গেটস নোটস ওয়েবসাইটে তিনি লিখেছেন: “জলবায়ু বিজ্ঞানের কল্যাণে পরিস্থিতি মূল্যায়নের মাধ্যমে আমরা আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। এখন প্রয়োজন বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা যাতে ভূমিকা রাখতে হবে অন্যান্য বিভাগকেও- পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, প্রকৌশল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ফিন্যান্স এবং অন্যান্য বিভাগ। … আপনি ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব, উদ্যোক্তা অথবা একজন ভোটার- যে-ই হয়ে থাকেন না কেন, আপনার ব্যস্ত জীবনে ফুরসত যত কমই হোক না কেন, তারপরও জলবায়ু দুর্যোগ এড়াতে আপনারও কিছু না কিছু করার সুযোগ রয়েছে। আর কিছু বলার নেই। আসুন কাজ শুরু করা যাক।” নিঃসন্দেহে কথাগুলো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।  জলবায়ু ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলো তাই আমাদের সবাইকেই খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে। বিশেষভাবে জানতে হবে ও বুঝতে হবে তরুণ সমাজকে।  সাধারণভাবে জলবায়ু বলতে আমরা বুঝি, কোনো অঞ্চলে বিশ থেকে ত্রিশ বছরের আবহাওয়ার গড়কে। আবহাওয়ার মতো জলবায়ুরও অন্যতম উপাদান হলো তাপমাত্রা, বায়ুর চাপ, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি। দুটি ছোট অঞ্চলের জলবায়ু একেবারে একরকম না হলেও তাদের মধ্যে সামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা যায়। একই ধরনের জলবায়ুর এলাকাগুলোকে অভিন্ন শ্রেণির আওতায় আনা হয়। তাপ, চাপ, আর্দ্রতা ও বায়ুপ্রবাহের ওপর নির্ভর করে পৃথিবীকে কয়েকটি জলবায়ুতে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে আমরা জানি, বাংলাদেশ হলো মৌসুমি জলবায়ুর দেশ।  জলবায়ু পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে ও ঘটছে। এই লেখায় আগেই উল্লেখ করেছি যে, বর্তমান সময়ে মানবসৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ বাড়ছে (প্রধানত কার্বনডাই অক্সাইড এর ঘনত্ব বাড়ছে) যা জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আর তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হয়, সার্বিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে। খুব সাম্প্রতিক সময়ে এর সাথে আরও একটি নতুন তথ্য যুক্ত হয়েছে, সেটি হলো ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস উৎপাদনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পালন। বলা হয়ে থাকে, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর ক্ষেত্রে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের থেকেও মারাত্মক মিথেন (Methane)। বাংলাদেশ এই গ্যাস উৎপাদনে শীর্ষে অবস্থান করছে এমনটাই আমরা নির্ভরযোগ্য মিডিয়ার খবরে জেনেছি। প্যারিসভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষক সংস্থা কেরোস এসএএস স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত গবেষণার আওতায় এই তথ্যটি সাম্প্রতিক সময়ে (এপ্রিল, ২০২১) প্রকাশ করেছে। ফলে অন্যভাবে বলতে গেলে, এসব কারণে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা, বায়ুচাপ, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি সবকিছুই পরিবর্তিত হচ্ছে।  যদিও সারা বিশ্বের অধিকাংশ গ্রিন হাউস গ্যাসই উৎপাদন করছে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রসমূহ, বাংলাদেশের দায় সেখানে খুবই নগণ্য। অথচ বাংলাদেশ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের সর্বোচ্চ ক্ষতি ভোগের দেশ। ফলে নিজেদের ক্ষতিকর গ্যাস উৎপাদনের বিষয়ে বিশেষভাবে নজর না দিলে বর্তমান ভোগান্তির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন সংকট আরও গভীরতর হবে । তাই আমাদের সচেতন পদক্ষেপ নিতে হবে, সবদিক থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।    এটা সুস্পষ্ট যে, অদূর ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। যেটুকু সময় ও সুযোগ এখনো আমাদের হাতে আছে, তার সদ্ব্যবহার করা এজন্য একান্ত প্রয়োজন হবে। আপদকে ভয় পেলে হবে না, শক্তভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, মোকাবিলা করার জন্য বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করাটাও তাই খুব জরুরি হবে।  জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় যে সকল অর্থ আসছে এবং আসবে সে সবের স্বচ্ছ, জনস্বার্থমূলক ব্যবহার; উন্নত দেশসমূহের কাছ থেকে আর্থিক, প্রযুক্তিগত ও ব্যবসায়িক অভিযোজন সহায়তা গ্রহণ; পরিবেশ স্বার্থ বিবেচনায় দূষণকারীদের নয়, জনগণের সর্বোচ্চ অধিকার; ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় মানুষকে পূর্ণ পরিমাণের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও তাদের পুনর্বাসন; বাংলাদেশের নদী নেটওয়ার্ক পুনরুজ্জীবনে উন্নত বিশ্বকে নির্দিষ্ট আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান ইত্যাদি নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হবে। জাতিসংঘের উদ্যোগে বাংলাদেশে একটি অভিযোজন গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা তাৎপর্যপূর্ণ আরেকটি পদক্ষেপ হতে পারে। একইসাথে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন ও মোকাবিলায় জাতিসংঘের উদ্যোগ জোরদার করতে হবে ও তা অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশকে তার সকল অভ্যন্তরীণ নীতিমালার প্রকৃতিবান্ধব সংস্কার ও সেসবের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাটাও খুবই জরুরি হবে।  পরিশেষে, যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি তৈরিতে সহায়তা করেছিল, যার মাধ্যমে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করতে এবং “বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তরের উপরে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে” প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই সেই চুক্তি যে চুক্তিতে এক দিনে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রাষ্ট্র একসঙ্গে স্বাক্ষর করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল।  ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত ৪৬তম ধরিত্রী সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছিলেন, ‘আজ আমরা ভবিষ্যতের এক নতুন অঙ্গীকারনামায় সই করছি। প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের সব প্রজন্মের জীবন সুন্দরভাবে চালিত হবে, যা এখন ঝুঁকির মুখোমুখি।’ আমরা ইতোমধ্যে জানি যে, প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র আবার ফিরে এসেছে এবং এর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার জন্য নতুন প্রেসিডেন্ট বিশেষভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। যা সবার মনেই আবার নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে।  অন্যদিকে এটাও আশার কথা যে, বাংলাদেশ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) ও ভালনারেবল টোয়েন্টি (ভি২০) গ্রুপের চেয়ার হিসেবে বর্তমানে কাজ করছে। কপ-২৬ সামনে রেখে কোভিড-১৯-এর মধ্যেও বাংলাদেশ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : থিমেটিক অ্যামবাসাডর নিয়োগ (৯ আগস্ট ২০২০), গ্লোবাল সেন্টার অব অ্যাডাপটেশনের (জিসিএ) দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক অফিস স্থাপন (৮ সেপ্টেম্বর ২০২০), যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বানে জলবায়ুবিষয়ক ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ (২২-২৩ এপ্রিল ২০২১), ভি-২০ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফিন্যান্স প্রথম সামিট (৮ জুলাই ২০২১) সম্পন্নকরণ, ‘দ্য জুলাই মিনিস্ট্রিয়াল’-এ অংশগ্রহণ (২৫-২৬ জুলাই ২০২১) ইত্যাদি। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা মোকাবিলা ও সবুজ উন্নয়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ তৈরি করা হয়েছে। আসন্ন কপ-২৬-এর অভীষ্ট অর্জনে সিভিএফ ও ভি২০-এর প্রধান হিসেবে বাংলাদেশের এ সকল কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।  জাতিসংঘ আয়োজিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬-এ বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বিভিন্ন প্রেক্ষিত বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সার্বিক দৃষ্টিকোণ (যেমন, সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ব্যবস্থার সক্ষমতা ইত্যাদি ) থেকে তরুণ সমাজকে যুক্ত করাটা এখন সবচাইতে জরুরি হবে। কারণ, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যা পর্যালোচনা করে দেখা যায় সব দেশেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে। বাংলাদেশেও মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। আর এই তরুণরাই অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও ইতিহাস সৃষ্টি থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনন্য অবদান রেখে আসছে।   ফলে তাদের ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করার দিকটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সম্মেলনে আলোচিত হবে এবং সেই লক্ষ্যে প্রতিটি দেশ উপযুক্ত বাস্তবসম্মত কর্ম-পরিকল্পনা তৈরি করবেন- সেটাও আমি আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করব। তাহলেই প্রকৃতঅর্থে জাতিসংঘ মহাসচিবের বাণী সফলতার মুখ দেখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।  বিধান চন্দ্র পাল: সংস্কৃতিকর্মী ও গবেষক; সদস্য, নির্বাহী পরিষদ, নগর গবেষণা কেন্দ্র (সিইউএস, ঢাকা) এবং প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর, প্রভা আরোরা 
১১ মে, ২০২৪

বৃষ্টিতে পুরোপুরি নিভেছে সুন্দরবনের আগুন
৩ দিন ধরে জ্বলতে থাকা সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের আমরবুনিয়া এলাকার আগুন বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নিভে গেছে। কোথাও আগুন ও ধোঁয়ার উপস্থিতি নেই। তবে অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য আজ সকাল থেকে বনের মধ্যে আগুন ও ধোয়া অনুসন্ধান কাজ শুরু করেছে বনকর্মী ও স্থানীয়রা। অনুসন্ধান চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিমসহ বন বিভাগের কর্মকর্তা ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।  মঙ্গলবার (৭ মে) সন্ধ্যায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় জানায়, সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নিভে গেছে বলে জানিয়েছেন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে। তিনি জানান, আগুন সেসব স্থানে ছিল সেখানে সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। আজ সকাল থেকে বন বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন লাগার স্থান ড্রোনের মাধ্যমে আবার মনিটরিং করা শুরু করেন।  জানা গেছে, সকাল থেকে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ড্রোনের মাধ্যমে মনিটরিং করা হলেও বনভূমির কোথাও কোনো আগুনের আলামত পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি বনের ভেতরে হেঁটে একাধিক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেও কোথাও কোনো আগুনের আলামত পায়নি।  এদিকে, সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষিতে জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সভাপতি জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষিতে বনসম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ প্রণয়নের কাজ অচিরেই শুরু করা হবে।  এর আগে, গত শনিবার (৪ মে) বিকেলে খবর পেয়ে সুন্দরবনের আমরবুনিয়া এলাকার আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিমান বাহিনী ও স্থানীয় ৫ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক অংশ নেয়। সর্বশেষ সোমবার সন্ধ্যা থেকে দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে বনের আগুন সম্পূর্ণরুপে নিভেছে বলে দাবি করেছে বন বিভাগ। 
০৭ মে, ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের টাকা কোথায়, জিজ্ঞাসা আমিনুল হকের 
বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বৈশ্বিকভাবে জলবায়ু তহবিল হয়েছে। তার ব্যাপক এবং বিশাল একটা অর্থ বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছেও এসেছে। এই যে লক্ষ কোটি ডলার, এই টাকাটা কোথায়? এ টাকার হদিস কোথায়? জনগণ তা জানতে চায়। শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির অধীন তুরাগ থানাধীন ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড, বিমানবন্দর থানার সাংগঠনিক ওয়ার্ড, উত্তরা-পশ্চিম থানার ১ ও ৫১নং ওয়ার্ড, তাঁতীদল এবং শেরেবাংলা নগর থানার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের উদ্যোগে সাধারণ জনগণ ও পথচারীদের মাঝে বোতলজাত পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আমিনুল হক বলেন, সরকারের দুঃশাসনে বাংলাদেশের মানুষ আজ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। দেশের মানুষ ভালো নেই। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে আজকে যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, যারা দিন আনে দিন খায়, তারা খুব কষ্টে অসহায় জীবনযাপন করছে। তারা ঠিকমতো দু’বেলা পেটভরে ভাত খেতে পারে না। তিনি আরও বলেন, আজকে আমরা দেশে কী দেখতে পাচ্ছি, পেটের ক্ষুধায় মা তার সন্তানকে বিক্রি করে দিচ্ছে। কী নির্মম! আজকে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রতিটি জায়গাতেই মানুষের হাহাকার রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সরকারকে বারবার বলার পরও এই আওয়ামী সরকারের কিছুই হয় না। কারণ, তারা জনগণের সরকার না, জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। জনগণকে তাদের দরকার নেই। কিন্তু বিএনপি বিশ্বাস করে, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণের ক্ষমতার কাছে আওয়ামী সরকারের ক্ষমতা কিছুই না। বিএনপির এ নেতা বলেন, আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে রাজনীতিকরণ করে জনগণের ওপর চেপে বসেছে। আজকে দেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ ভালো নেই। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাজী মো. মোস্তফা জামান। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদুর রহমান সুমন, আমিনুল ইসলাম, তাঁতীদলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, আকতার হোসেন, মহানগর সদস্য হাজী ইউসুফ, আফাজ উদ্দীন আফাজ, এবিএমএ রাজ্জাক, শাহ আলম, অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন জসিম, আহসান হাবিব মোল্লা, বৃহত্তর উত্তরা থানা বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুস ছালাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
০৩ মে, ২০২৪

আবারও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল ঢাকা আহছানিয়া মিশন
আবারও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন। ওপেক ফান্ড এনুয়াল অ্যাওয়ার্ড ফর ডেভেলপমেন্ট-২০২৩ পুরস্কার পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। রোববার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের মিলনায়তনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উক্ত অ্যাওয়ার্ডটি মিশনপ্রধান কাজী রফিকুল আলমের হাতে হস্তান্তর করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক মো. সাজেদুল কাইয়ূম দুলাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. গোলাম রহমান, ড. আবু তৈয়ব আবু আহমেদ, ড. কাজী শরীফুল আলম ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক এএফএম গোলাম শরফুদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মিশনের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক কাজী আলী রেজা। আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম বলেন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের মুকুটে আরও একটি পালক যুক্ত হলো। আমরা আন্তর্জাতিকভাবে আরও একবার স্বীকৃত হলাম। আর এ স্বীকৃতি এলো আমাদের মেধা, পরিশ্রম ও কাজের বিনিময়ে। আমরা মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডগুলো সম্পাদন করেছি। এখনো করে যাচ্ছি। যার প্রাপ্তি হলো এ পুরস্কার।  তিনি বলেন, আজকে যে পুরস্কারের জন্য আমাদের এ আয়োজন, এ পুরস্কারটিও ছিল আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাবে প্রভাবিত এলাকায় ভিন্নভাবে কৃষির বহুমুখীকরণ। যেন ওই সকল এলাকায় আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলা করেও মানুষ কৃষিকাজ চালিয়ে যেতে পারে। প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলমের পক্ষে ওপেক কর্তৃপক্ষ থেকে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন মিশনের নির্বাহী পরিচালক মো. সাজেদুল কাইয়ূম দুলাল।
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

গোলটেবিল বৈঠক / জলবায়ু পরিবর্তন দেশের জন্য অস্তিত্বের সংকট
ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র (ডর্‌প), হেলভেটাস বাংলাদেশ ও কালবেলার যৌথ উদ্যোগে গত ৩০ মার্চ একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার বিষয় ছিল ‘জলবায়ু পরিবর্তনে পানি ও স্যানিটেশন’। আলোচকদের বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে এ ক্রোড়পত্র সুপারিশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ন্যায্যতাভিত্তিক বাজেট বৃদ্ধি ও অর্থবছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা। টেকসই, লাগসই প্রযুক্তি এবং নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। আর্থিক প্রণোদনা ও নীতিগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে পানি ও স্যানিটেশন খাতে বিনিয়োগের জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে উৎসাহিত করা। জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা এবং মুজিব জলবায়ু প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় পানি ও স্যানিটেশনের অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব আরোপ এবং সঠিকভাবে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা। উপকূলীয় ১৯টি জেলায় বিশেষ করে লবণাক্ত অঞ্চলগুলোতে অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিরাপদ পানির জন্য বাজেট বৃদ্ধি এবং এসডিজি ৬ এবং ১৩ বাস্তবায়নে স্থানীয় পরিকল্পনা অগ্রাধিকার দিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণ করা। প্রধান অতিথি সাবের হোসেন চৌধুরী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী চলতি অর্থবছরে ২৫টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জলবায়ু খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ নম্বর খাত হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য। ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে শুধু এই জায়গায়। এখন এই বরাদ্দগুলো কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা একটি বড় প্রশ্ন। কারণ আমরা আমাদের স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা জানি। আমাদের যে স্বাস্থ্য বাজেট রয়েছে, আমরা তা পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারি না। সুতরাং বাজেট বাড়ানোর থেকে যে বাজেট রয়েছে সেটা পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানোটাই বেশি জরুরি। আমাদের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ, আমরা বাজেটের হিসাব করি শুধু কত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলো এবং কত টাকা আমরা খরচ করলাম এটুকুর মধ্যে। কিন্তু সেই খরচ করে তার ফলাফলটা কী, সেই অ্যাসেসমেন্ট আমরা করি না। আমরা যে খরচ করলাম, সেই খরচ অনুযায়ী আমাদের টার্গেট পূরণ হচ্ছে কি না, সেটা আমরা দেখি না। সুতরাং আমাদের কোয়ানটিটিভ বাজেটে নয়, বরং কোয়ালিটিটিভ বাজেটে যেতে হবে। আমাদের ফলাফল মূল্যায়ন করতে হবে। ওয়াশ দিয়ে যদি আমরা সেই মূল্যায়নটা শুরু করতে পারি, তাহলে সেটা আমাদের অনেক কাজে আসবে। সর্বপ্রথম আমাদের নিজেদের প্রায়োরিটি নিজেদেরই আইডেন্টিফাই করতে হবে। যদি আমাদের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে শূন্যতা থাকে, তখন ডেভেলপমেন্ট পার্টনার বা কোম্পানিগুলো তাদের চিন্তাগুলো এখানে পুশ করবে। আমরা সেরকমটা চাই না। আমরা এডিবির বা বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প শুনতে চাই না। আমরা শুনতে চাই বাংলাদেশের প্রকল্প, যেখানে উন্নয়ন সহযোগীরা সহযোগিতা করছে। এটাই মূল বিষয় হওয়া উচিত। আমরা ২০২৬ সালের মধ্যে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিকের ব্যবহার ৯০% কমিয়ে ফেলার টার্গেট করেছি। আপনারা বেনিফিট কস্ট রেশিওর বিষয়টি দেখতে পারেন। আমি যদি ওয়াশের জন্য ইনভেস্ট না করি, তাহলে কী দাঁড়াবে এবং আমি ইনভেস্ট করার পরে কী দাঁড়াবে। আমরা এখন পর্যন্ত ওয়াশের ক্ষেত্রে কোনো বেনিফিট কস্ট রেশিও করিনি। আমাদের ৩৭ হাজার কোটি টাকা জলবায়ু বরাদ্দের ১০ হাজার কোটি টাকা যাচ্ছে অবকাঠামো উন্নয়নে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার পানির উৎসগুলোকে এই অবকাঠামোর মধ্যে আনা যায় কি না, সেটা চিন্তা করতে হবে। আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাজেট বরাদ্দ রেখেছি ২.৫ হাজার কোটি টাকা। সেখানেও যদি আমরা এই অবকাঠামোর মধ্য নিয়ে আসতে পারি তাহলেও আমাদের জন্য একটি বড় প্লাস পয়েন্ট। এ ছাড়া অপারেশন এবং মেইনটেন্যান্স একটি বড় সমস্যা। এই বিষয়টাও আপনারা আপনাদের প্রস্তাবনার মধ্যে আনতে পারেন। বিশেষ অতিথি ফেরদৌস আহমেদ সংসদ সদস্য এদেশে পানি নিয়ে সমস্যা হবে, সেটা খুবই বিস্ময়কর একটি ব্যাপার। তার পরও এই সমস্যা তৈরি হয়ে গেছে এবং এই সমস্যাটা আমরাই তৈরি করেছি। বাংলাদেশে কখনো আমরা ভাবতে পারিনি, আমরা ট্যাপ ওয়াটার খেতে পারব। ছোটবেলা থেকে পানি ফুটিয়ে খাওয়ার অভ্যাস ছিল আমাদের। এর ফলে কী পরিমাণ গ্যাস নষ্ট হয়েছে সেই হিসাবও আমরা রাখিনি। বছরের পর বছর মাকে দেখেছি একটা আলাদা পাতিলের মধ্যে পানি সিদ্ধ করতে। অথচ আমরা যখন গ্রামে যেতাম তখন গভীর নলকূপের পানি খেতে ফোটানোর প্রয়োজন হতো না। এই বিষয়টা আমার কাছে খুবই অবাক লাগত। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, যতটা সম্ভব বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা এবং যতটা সম্ভব ভূগর্ভস্থ পানি নষ্ট না করা। আমি মনে করি এটি অল্প সময়ের কাজ নয়, বরং একটি দীর্ঘ সময়ের এবং অভ্যাসের কাজ। যারা নিরাপদ পানি এবং স্যানিটেশন বিষয়ে কাজ করছেন তাদের এই নিরলস কাজের ফলে আমরা আশা করি আমাদের সামনে একদিন সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে। ঢাকায় পানি ও স্যানিটেশনের সমস্যা বর্ষাকালে অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। বর্ষায় রাস্তায় পানি জমবে, পানি নিষ্কাশন না হয়ে আবদ্ধ থাকবে। অনেক জায়গায় খবর পাওয়া যাবে ওয়াশার পানির সঙ্গে পয়ঃনিষ্কাশনের পানি মিশে গিয়ে বাড়িতে ব্যবহারের পানির ট্যাঙ্কে মিশে যাচ্ছে। ফলে নিরাপদ ট্যাপ ওয়াটারের নিশ্চয়তাও আমরা পাব না। তুষার মোহন সাধু খাঁ প্রধান প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর আমরা আমাদের পানিসম্পদের খুব সামান্য অংশই খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করি। ভূ-গর্ভ থেকে যে পানি উত্তোলন করে আমরা ব্যবহার করি, তার ৮০ শতাংশই ব্যবহৃত হয় কৃষি এবং শিল্প খাতে। অথচ আমরা এই বিষয়টাকে উপেক্ষা করছি। আমরা শুধু বাসা-বাড়িতে ব্যবহারের এবং খাওয়ার পানি নিয়ে আলোচনা করি। আমি মনে করি, কৃষি এবং শিল্প খাতে যে পানি ব্যবহার করা হচ্ছে সেখানেও যাতে অপচয় না হয় সেই বিষয়টাকে নিশ্চিত করতে হবে। আর এর দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব কেমন হয়, সেটা আমরা সাতক্ষীরার শ্যামনগর, খুলনা, বাগেরহাটসহ অন্যান্য দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় দেখেছি। সমগ্র বাংলাদেশের প্রায় ১৯ শতাংশ জায়গা ওয়াটার স্ট্রেস এরিয়া। এই ওয়াটার স্ট্রেস এরিয়াগুলো নিয়ে আলাদা একটি প্রকল্প নেওয়া রয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য আলাদা, চা-বাগান এলাকার জন্য আলাদা এবং আর্সেনিক এলাকাগুলোতে আলাদাভাবে এই প্রকল্পের আওতায় কাজ করা হচ্ছে। এর বাইরেও যেসব এলাকা রয়েছে সেসব এলাকায় শুধু খাওয়ার পানির জন্য কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এসব প্রকল্পের আওতায় আমরা কাজ করছি। আমাদের কাজের লক্ষ্য প্রতিটি বাড়িতে নিরাপদ খাবার পানি নিশ্চিত করা। হাসিন জাহান কান্ট্রি ডিরেক্টর ওয়াটারএইড বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে পানির ওপর। আমরা জানি পানি একটি সীমিত সম্পদ। সুতরাং আমি মনে করি, পানিসম্পদ রক্ষা করা একটা বড় বিষয়। দুটি উপায়ে পানিসম্পদ রক্ষা করা যাবে। প্রথমত পানির অপচয় কমিয়ে। আর দ্বিতীয়ত পানির দূষণ কমিয়ে। এই দুটি বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের সবার প্রথমে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিকের উৎপাদন এবং বাজারে প্রবেশ বন্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ পানির উৎস নষ্ট করার জন্য সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক সবচেয়ে বেশি দায়ী। আমাদের কারখানাগুলো ঢালাওভাবে ইটিপি ব্যবহার করছে। এভাবে ঢালাওভাবে ইটিপি ব্যবহারের রাশ টেনে ধরা জরুরি। আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি। ডিজিটালি এই বিষয়গুলো মনিটরিং করা খুবই সহজ। কারখানাগুলোতে ইটিপির ব্যবহার যদি রিয়েল টাইম মনিটরিং করা হয়, তাহলে ডিজিটালি আমরা বিষয়টাকে সমাধান করতে পারি। মাহবুবুর রহমান প্রকল্প সমন্বয়ক আইসিডিডিআর,বি পানি দূষণ ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে হাইপারটেনশন, গর্ভাবস্থাজনিত জটিলতা, কলেরাসহ অন্যান্য রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২০ সালে প্রতি এক মিনিটে দুজন রোগী ভর্তি হয়েছিল আইসিডিডিআর,বি কলেরা হসপিটালে। অথচ একটা সময় আমাদের দেশে কলেরা অনেক কমে গিয়েছিল। পানি দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতসহ অন্যান্য ডিপার্টমেন্টকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুত করতে হবে। আমরা অনেকেই এখনো বুঝি না জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু কী, এর ক্ষতি কী এবং এর প্রভাব কীভাবে কমানো যাবে। আমরা জলবায়ু সম্পর্কিত অনেক পাইলট পলিসি এবং মিটিগেশন স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেছি। সেখান থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা থেকে কোন বিষয়গুলো ভালো কাজ করে সেগুলো স্কেলআপ করতে হবে এবং সর্বোপরি জনগণকে জলবায়ুর প্রভাব প্রশমনে কাজে লাগাতে হবে। সন্তোষ শর্মা সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক কালবেলা ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, অবস্থান ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে বাংলাদেশ অত্যন্ত দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর বিভিন্ন দুর্যোগে মানুষের সম্পদ ও পরিষেবার প্রচুর ক্ষতি হয়ে থাকে, যা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করার মাধ্যমে তাদের এক ভয়াবহ দুর্দশার মধ্যে ফেলে দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন রকম প্রভাবের কারণে তাদের এই দুর্দশার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধরা হয়ে থাকে, জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব যেসব দেশে ইতোমধ্যে পড়া শুরু হয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দুর্যোগের কারণে যেসব অবকাঠামোর ক্ষতি হয় এর মধ্যে পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামো বা সরবরাহ ব্যবস্থাগুলো অন্যতম। দেখা যায়, বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসে কোনো এলাকার টিউবওয়েলগুলো পানিতে তলিয়ে যায় কিংবা বন্যার পানিতে টিউবওয়েল বা পুকুরের পানি দূষিত হয়ে পড়ে, যার ফলে মানুষ অনিরাপদ পানি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। বেশিরভাগ ল্যাট্রিন দুর্বল ও নিচুভাবে তৈরি হওয়ায় এগুলো খুব সহজেই ভেঙে পড়ে। এতে জনসাধারণ খোলা জায়গায় পয়ঃনিষ্কাশন করতে বাধ্য হয়। ড. মাহফুজ কবির গবেষণা পরিচালক বিআইআইএসএস এসডিজি ৬ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে দুই বিলিয়নের বেশি মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। এবং তিন বিলিয়নের বেশি মানুষ সেফলি ম্যানেজ স্যানিটেশন থেকে বঞ্চিত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘটা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রেও পরিসংখ্যানটা প্রায় একই রকম। এসব ক্ষেত্রে নিরাপদ পানি এবং স্যানিটেশন প্রবেশগম্যতার এর ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি ঝুঁকির সম্মুখীন হন প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষ। এর পাশাপাশি রয়েছে সোলো একটিং ডিজাস্টার। লবণাক্ততা এবং খরার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এলাকায়ও মানুষ নিরাপদ পানি এবং স্যানিটেশন সুবিধা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। একইসাথে হাত ধোয়ার বিষয়টিও পানি ও পয় পরিচ্ছন্নতার সাথে খুবই গুরুত্ব রয়েছে। এই বিষয়ে শহর অঞ্চলের থেকে গ্রামাঞ্চলের মানুষ অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে প্রায় সাত কোটি ২০ লক্ষ মানুষ এই হাত ধোয়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যে সকল এলাকাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সে সকল জায়গায় নিরাপদ ব্যবস্থাকৃত পানির সুবিধা অনেকটা কম। আমাদের আগামী বছরের বাজেট আসন্ন। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ একটি সময়ের দাবি। এবং বরাদ্দের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত হওয়া দরকার যাতে এসডিজি বাস্তবায়ন সফল হয়। ড. তানভীর আহমেদ অধ্যাপক, বুয়েট আমরা যখন বাজেটের ব্যয় নির্ধারণ করি সেখানে বড় শহর অর্থাৎ ধনীদের বসবাসের স্থানেই বাজেটের অধিকাংশ বরাদ্দ চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ বাজেটের বেশিরভাগ অংশ ধনীদের পেছনে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। এর একটি কারণ হতে পারে বড় শহরগুলোর অবকাঠামো তৈরির খরচ গ্রামাঞ্চলের থেকে অনেক বেশি। পাশাপাশি আমাদের দেখতে হবে, শহরের অবকাঠামোগুলো প্রত্যন্ত এলাকার অবকাঠামোগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি জলবায়ু টেকসই হয়। আমার পরামর্শ থাকবে, আমরা যখন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জায়গায় ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন ডিজাইন করতে যাব, তখন যাতে এই অবকাঠামোটি জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো হিসেবে ডিজাইন করা হয়। আমরা সব সময় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখি অবকাঠামোর ওপর। আমরা দেখি জলবায়ু পরিবর্তন ওয়াটার স্যানিটাইজেশনের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে। কিন্তু এর বিপরীতমুখী দিকও রয়েছে। ওয়াটার স্যানিটাইজেশন জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে, সেটা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। মো. মাহমুদুল হাসান পানি, খাদ্য ও জলবায়ুবিষয়ক ডোমেইন কো-অর্ডিনেটর, হেলভেটাস বাংলাদেশ বাংলাদেশে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যার সব সমাধান এক রকম হবে না। দুটি হটস্পটে সমাধান দুই ধরনের হতে পারে। আমি যদি নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগরকে উদাহরণ হিসেবে ধরি—দুই জায়গাতেই নিরাপদ বা সুপেয় পানির এবং স্যানিটেশন সমস্যা রয়েছে। কিন্তু এই দুই জায়গার সমাধান ভিন্ন রকমের। গ্রামের দরিদ্র মানুষ টাকা দিয়ে পানি কিনে খাবে, এটা তাদের জন্য কঠিন। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় খাবার পানির সংকট প্রখর। পানি পাব কি না, সেটাই মানুষের দুশ্চিন্তা। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এখনো একটা পরিবারে দিনে এক কলসি খাবার পানি দিয়ে প্রয়োজন মেটাতে হয়। পরের দিন গিয়ে আরেক কলসি পানি পাবে সেই পরিবার। নিরাপদ পানি পাওয়া সবার অধিকার। সেই জায়গা থেকে আমাদের অবশ্যই একটি কাস্টমাইজড ওয়াটার ক্যালেন্ডার থাকা দরকার। একই সঙ্গে আমরা যারা জলবায়ু নিয়ে কাজ করছি আমাদের ক্লাইমেট রেজিলেন্স নিয়েও ভাবতে হবে। ড. মো. মুজিবুর রহমান অধ্যাপক, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আমরা সেফলি ম্যানেজ ওয়াটার অর্জন করেছি ৫৯ শতাংশ। ৩১-৩৯ শতাংশ পর্যন্ত অর্জন করেছি সেফলি ম্যানেজ সানিটেশন। কিন্তু আমরা যদি সেফলি ম্যানেজ ওয়াটার বা সেফলি ম্যানেজ স্যানিটেশনের ডেফিনেশন দেখি, তবে তার সঙ্গে আমাদের এই অর্জন কতটুকু যায়, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। আমাদের প্রগ্রেস আসলে কতটুকু সেটা সত্যিকার অর্থে যাচাই করতে হবে। তা না হলে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব না। সেফলি ম্যানেজ স্যানিটেশন হলো পানির সব ধরনের অপচয় বোধ করা। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তেমনটা করতে পারিনি। তাহলে আমাদের সেফলি ম্যানেজ স্যানিটেশনটা কোথায় দাঁড়াচ্ছে। অন্যদিকে সেফলি ম্যানেজ ওয়াটার অর্থাৎ পানি সব ধরনের কেমিক্যাল থেকে মুক্ত থাকতে হবে। অথচ আমাদের দেশের নদীগুলো পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নদীর থেকে হয়তো সব থেকে বেশি দূষণ হয়। আমরা পানির প্রাপ্তি বা বাজেট অ্যালোকেশনের বিষয়ে যে বৈষম্যের কথা বলছি সেখানে মূল বিষয়টি হলো পানির প্রাপ্যতা। জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে পানির প্রাপ্যতার সঙ্গে সম্পর্কিত তেমনি আমাদের ব্যবহার শৈলী ও ব্যাপকভাবে আমাদের এই পানির প্রাপ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এএইচএম নোমান সিইও, ডর্‌প জলবায়ু পরিবর্তনে পানি ও স্যানিটেশন শীর্ষক গোলটেবিলে আলোচনায় সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। ডরপ, হেলভেটাস ও কালবেলার যৌথ এ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মূল্যবান সময় দেওয়ায় তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। একই সঙ্গে বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদকেও স্বাগত জানাই। শত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রবন্ধ উপস্থাপক, সরকারি দপ্তর, অধিদপ্তরসহ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার যেসব কর্মকর্তা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আলোচনায় উপস্থিত হয়েছেন তাদেরও জানাই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। পার্থ হেফাজ সেখ ডিরেক্টর, প্রোগ্রামস অ্যান্ড পলিসি অ্যাডভোকেসি ওয়াটারএইড বাংলাদেশ ওয়াটার এইড বাংলাদেশ ১০-১২ বছর ধরে বাজেট নিয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশ জাতীয় বাজেটে ওয়াটার স্যানিটেশন এবং হাইজিনের জন্য কী পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করি। আমরা এখানে ডিস-ইনভেস্টমেন্ট বলব না, তবে গত ১০ বছরে এখানে ধারাবাহিকভাবে কম বিনিয়োগ দেখেছি। সরকারের ওয়াশ বাজেটের মাত্র ১-১.১ শতাংশ পৌঁছায় দুর্গম এলাকায়। আমরা সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথমবারের মতো ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস তৈরি করেছি। এখানে স্পষ্ট হয় বাংলাদেশের সব জনগণ মিলে এক বছরে কী পরিমাণ অর্থ ওয়াটার স্যানিটেশন এবং হাইজিনে খরচ করেছি। এই বিশ্লেষণে আমরা দেখেছি, একজন ধনী মানুষ তার মাসিক আয়ের যে পরিমাণ অংশ পানি, স্যানিটেশন এবং হাইজিনে ব্যয় করেন, একজন দরিদ্র মানুষ তার থেকে বেশি রেশিওতে ব্যয় করেন। উদাহরণস্বরূপ একজন ধনী মানুষ তার আয়ের ৪ শতাংশের মতো ব্যয় করেন এখানে। অন্যদিকে একজন দরিদ্র মানুষের ক্ষেত্রে এটা তার আয়ের ৭-৮ এমনকি ৯ শতাংশেও চলে যায়। মোস্তাফিজুর রহমান প্রোগ্রাম অফিসার, জলবায়ু ও পরিবেশ, সুইডিশ দূতাবাস আমরা এখানে বাজেটের কথা বলছি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশের পানি যে একটি রিসোর্স, সেটাকে আমরা এখনো স্বীকার করি না। আমরা যারা পানি ব্যবহার করি, সবাইকে এর মূল্য পরিশোধ করতে হবে। মূল্য পরিশোধ ছাড়া পানি পাওয়া যাবে না এই সেন্সটি তৈরি হওয়া দরকার। ওয়াশ ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ক্ষেত্রে আমাদের এক ধরনের ইনোভেশনের দরকার রয়েছে। সারফেস ওয়াটার এবং অন্যান্য উৎসে আমরা কী ধরনের টেকনোলজি ব্যবহার করছি সেগুলো আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে কতটা সঠিক সেখানেও কাজের সুযোগ রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, আমাদের অবকাঠামো তৈরি কিন্তু সবাই সেটা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে না। সেখানে প্রশিক্ষণের বিষয় রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা ও সামাজিক মূল্যবোধের বিষয়। এই দিকগুলো আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। ড. আব্দুল্লাহ আল মুয়ীদ চিফ অপারেটিং অফিসার সিডব্লিউআইএস-এফএসএম সাপোর্ট সেল, ডিপিএইচই আমরা খাওয়া এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহারের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উঠিয়ে ফেলছি। অনেক বেশি পরিমাণে পানি উঠিয়ে ফেলার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাচ্ছে। এখন মাটির যে গভীরে পানি পাওয়া যায় আর কয়েক বছর পর হয়তো এই গভীরতায় পানি পাওয়া যাবে না। এটাই বাস্তবতা। আমরা নদীর পানি ট্রিটমেন্ট করে খাওয়া এবং ব্যবহার উপযোগী করছি, কিন্তু বিপরীতে সেই লবণ উপাদান আবারও পার্শ্ববর্তী খাল বা নদীতেই ফেলছি। ফলে আদতে কোনো লাভ হচ্ছে না। আমি মনে করি বাজেট বাড়ানোই একমাত্র সল্যুশন নয়। আমরা স্যানিটেশনের জায়গায় একটি বিষয় মিস করে যাই। আমরা স্যানিটেশন টেকনোলজি চিন্তা করি ক্লাইমেট ফ্রেন্ডলি টেকনোলজি টয়লেটের দিকে রেখে। ফ্লাশ করা হোক বা পানি ব্যবহার করা হোক এখানে প্রচুর পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল পরিষদ ডিপিএইচই মিউনিসিপালিটিতে যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়, সমন্বিতভাবে সেখানে এক টন সলিড ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট করলে প্রায় সাড়ে সাতশ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইডের এমিশন রোধ করতে পারি আমরা। ড. মো. লিয়াকত আলী পরিচালক, জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি, ব্র্যাক আমরা যখন ওয়াটার স্যানিটেশনের প্রকল্পের কথা বলি বা আমাদের সফলতার কথা বলি, তখন শুধু পানির প্রজেক্টের কথা বলি। অথচ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আমাদের স্যানিটেশনের প্রজেক্ট নেই বললেই চলে। আমাদের চিন্তা করতে হবে ওয়াটার স্যানিটেশনের যে প্রজেক্টগুলো আসবে সেগুলো কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত তা প্রমাণ করা। এটা প্রমাণ করা না গেলে বৈশ্বিক তহবিলের অর্থ প্রাপ্তি সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। ওয়াটার স্যানিটেশন বিষয়টি অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে থাকবে। কিন্তু অবশ্যই আমাদের লিংক করতে হবে কীভাবে এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে যুক্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমনে প্রথম যেটা প্রয়োজন, তা হলো ওয়াটার স্যানিটেশন। আমাদের মাথায় রাখতে হবে, আমরা যারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করি তারা স্টেটিক চিন্তা করব না। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের হটস্পটগুলোতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। লবণাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, স্ট্রেস বৃদ্ধি পাচ্ছে, খরা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গ্রাউন্ড ওয়াটার শুকিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমাকে সব ফিউচার প্রজেকশনগুলো মাথায় নিয়ে তারপর চিন্তা করতে হবে। পানিতে যদি ভর্তুকি দিতে হয়, তবে সেটা ওই স্ট্রেস এলাকায় দিতে হবে যেখানে ঢাকা শহরের থেকে ২০০ গুণ বেশি দামে মানুষকে পানি কিনে খেতে হচ্ছে। মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান উপনির্বাহী পরিচালক, ডর্‌প পানি ও স্যানিটেশনকে জুলাই ২০১০ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। এসডিজি-৬ এর টার্গেট অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চল, বন্যা ও খরাপ্রবণ এলাকা এবং চর এলাকার মানুষ পানি ও স্যানিটেশন সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। লবণাক্ততা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের জীবনকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসডিজি অর্জনের জন্য সরকারের প্রচেষ্টার পাশাপাশি সবা স্টেকহোল্ডারদের সমন্বিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার ওপর যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলায় আমাদের আরও বেশি বাজেট বরাদ্দ, নীতিগত পরিবর্তন এবং কার্যকর প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রয়োজন। রাবেয়া বেগম নির্বাহী পরিচালক, এসডিএস আমরা শরীয়তপুরে দেখেছি, একজন মানুষ তার বয়সের মধ্যে ১২-১৪ বার বাড়ি থেকে ডিসপ্লেসড হচ্ছে। ডিসপ্লেসড হয়ে যে এরিয়াগুলোতে তারা যাচ্ছে, সেখানে ন্যূনতম কোনো সুযোগ-সুবিধা তারা পায় না। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে এই ওয়াটার স্যানিটেশন এবং হাইজিন কোনো ধরনের সুবিধাই সেখানে থাকে না। চর এরিয়ায় বসবাসের জন্য সেখানে যে ধরনের ফেসিলিটিস থাকার কথা সেগুলো সেখানে থাকে না। এমনকি সরকারের ফিল্ড ওয়ার্কাররাও সেখানে নিয়মিত যান না। চর এবং কোস্টাল এলাকার মানুষের জন্য সরকারের সেফটিনের জন্য যে প্রোগ্রামগুলো থাকে সেগুলো বাস্তবায়িত হয় না। যারা নদীভাঙনের কারণে ডিসপ্লেসড হয়ে অন্য এরিয়াতে চলে যান, তারা নতুন এলাকার সেফটিনের সাপোর্টগুলোও পান না। এর কারণ তারা নতুন এলাকার ভোটার নন। মো. সামছুদ্দোহা প্রধান নির্বাহী, সিপিআরডি আমাদের যে ডেভেলপমেন্ট স্ট্রেস রয়েছে সেটাও পানির ওপর বড় ধরনের ইম্প্যাক্ট তৈরি করছে। আমরা গ্রাউন্ড ওয়াটারকে অনেক বেশি ব্যবহার করছি। এর ফলে আমাদের গ্রাউন্ড ওয়াটারের লেভেল কমে যাচ্ছে। কৃষি চাহিদা বাড়ছে এবং এর ফলে আমাদের পানির উৎস এবং সহজলভ্যতা কমে যাচ্ছে। আমরা কারখানার দূষণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, যার ফলে পানির বিরাট উৎস নষ্ট হচ্ছে। আমরা শিল্প খাতে পানির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারিনি যে কারণে প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি পরিমাণ পানি ব্যবহৃত হচ্ছে। পানিকে শুধু এসডিজির টার্গেট হিসেবে না দেখে জলবায়ু পরিবর্তন এবং ডেভেলপমেন্ট স্ট্রেস পানির যে সংকট তৈরি করবে সেটাকে দেখা। আমরা শুধু এটাকে এসডিজির মধ্যে রেখে দিলে চলবে না। বরং জলবায়ু পরিবর্তনের পারসপেক্টিভকে বিশ্লেষণ করে আমাদের কিছু সলিড ইন্ডিকেটর প্রপোজ করতে হবে। ইন্ডিকেটরসগুলো কেমন হওয়া উচিত, তা আমরা ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যালায়েন্স এবং নেটওয়ার্ক অব নেটওয়ার্ক থেকে একটি ধারণা প্রণয়ন করব। অলোক মজুমদার কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর, বাংলাদেশ ওয়াশ অ্যালায়েন্স জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত অত্যন্ত ভয়াবহ এবং আমাদের সবারই উচিত এটা নিয়ে চিন্তা করা। এসডিজি ৬.১ এ দেখা যায়, আমরা এখন পর্যন্ত নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন অর্জন করতে পেরেছি মাত্র ৫৯ শতাংশ। ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর আমাদের অগ্রগতি মাত্র ১ শতাংশ। সেই হিসাবে নিরাপদ পানির লক্ষ্য অর্জন করতে আমাদের এখনো ৪১ বছর সময় লাগবে। অথচ ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের শতভাগ মানুষের কাছে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন পৌঁছানোর লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনে আমাদের দরকার গতানুগতিক বলয় থেকে বেরিয়ে এসে ভিন্নভাবে এগোনো। আর এখানে একটি বড় বিষয় হলো ফাইন্যান্সিং। মোহাম্মদ মনিরুল আলম ওয়াশ স্পেশালিস্ট ইউনিসেফ বাংলাদেশ আমাদের আলোচনায় বাজেটের কথা এসেছে। ২০১১-২০২৫ পর্যন্ত আমাদের একটি সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান রয়েছে। সেখানে একটি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানও রয়েছে। আর ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানে উল্লেখ রয়েছে বাজেটের বিষয়টি। এরপর আমরা মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৬-২০৪১ পর্যন্ত একটি প্ল্যান করছি। এটাকে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স প্ল্যান হিসেবে তৈরি করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। আমরা আইটি এবং বুয়েটের সঙ্গে যৌথভাবে এই প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতি বছর বাংলাদেশ যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা প্রশমনে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে সরকার। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বরাদ্দ থাকছে। কৃষি, শিল্পসহ দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্যও আমরা ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করছি। ওয়াটার স্যানিটেশনে কাজ করছে স্থানীয় সরকার। এসব কিছুর একটি সমন্বিত গভর্নেন্স দরকার। শামীম আরেফিন নির্বাহী পরিচালক, অ্যাওসেড, খুলনা পানির জন্য আমরা বাজেট বরাদ্দের বিষয় নিয়ে কথা বলছি। বিগত দিনেও বাজেট বরাদ্দের কথাই বলেছি। টাকার অঙ্কে বাজেট বরাদ্দ হচ্ছে, নতুন টেকনোলজি আবিষ্কার হচ্ছে; কিন্তু আমরা পেরে উঠছি না। প্রশ্ন হলো এত টাকা খরচ করার পরও সংকট কেন তৈরি হলো? আমাদের যে বিষয়গুলো মাথায় নিতে হবে তা হলো পানি ও প্রতিবেশকে সুরক্ষা করা প্রয়োজন। এর জন্য আমাদের ট্রান্স বাউন্ডারি ইস্যুতে আমাদের নদী কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে। উজানে মিঠাপানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় পানি সম্পর্কিত আইনগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। তৃতীয়ত, কৃষিজমি আর অধিগ্রহণ করা যাবে না। উন্নয়নের নামে অধিগ্রহণ কমাতে হবে। চতুর্থত, আমাদের সব সারফেস ওয়াটারকে সংরক্ষণ করতে হবে। এই জায়গাগুলোতে আমরা যদি নজর দিতে না পারি তাহলে দেশের পানিব্যবস্থা ভেঙে পড়বেই। আজহার আলী প্রামাণিক পিকেএসএফ দুর্যোগ, পরিবেশের যে ক্ষতি করে তার ফলে পানির মূল উৎস স্থায়ীভাবে নষ্ট বা দূষিত হয়ে যেতে পারে। ২০০৯ সালে আইলার জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে সমুদ্রের যে পানি ঢুকেছিল, তাতে বিরাট এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানিসহ সব পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। এই পানি এখন মানুষের ব্যবহার উপযোগী নয়। ওই এলাকার জনগোষ্ঠীকে এখন দূরবর্তী এলাকা থেকে পানি আনতে হচ্ছে। নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধিচর্চা মূলত জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার সঙ্গে জড়িত। রোগব্যাধির ঝুঁকি থেকে মুক্তজীবন আর টেকসই জীবিকার জন্য এগুলো খুবই জরুরি। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন মৌলিক চাহিদার মধ্যে পড়ে। তা ছাড়া নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যবিধিচর্চায় ঘাটতি হলে নানাবিধ রোগের বিস্তার ঘটে, অসুখ-বিসুখে মানুষের কষ্ট বাড়ে, চিকিৎসার জন্য খরচ বাড়ে আর উৎপাদন কাজে শ্রম সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। সার্বিক সহযোগিতায় :মো. আমির খসরু উপ-পরিচালক, ডর্‌প মো. আল জাবেদ সরকার মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার, ডর্‌প শ্রুতিলিখন : মুজাহিদুল ইসলাম আলোকচিত্রী : রনি বাউল
২৪ এপ্রিল, ২০২৪

জানতেন কি? / জলবায়ু ও দারিদ্র্য
n আজ থেকেই যদি গ্রিনহাউস দূষণ পুরোপুরি কমিয়ে আনা হয়, তারপরও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ মানুষের আয় ১৯ শতাংশ কমবে। নেচার জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। n বিশ্বব্যাপী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৭৫ ভাগের জীবিকা সরাসরি নির্ভর করছে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর। জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব তাদের ওপর আগে পড়বে। ক্রমান্বয়ে সবাইকেই এর মূল্য দিতে হবে। n বিশ্বের ৭৪টি দরিদ্র দেশ মাত্র ১০ ভাগ গ্রিনহাউস দূষণ ঘটাচ্ছে। তবে জলবায়ুর পরিবর্তনে এ দেশগুলোকেই চরম মূল্য দিতে হবে। n বিশ্বের ক্ষুধার্ত জনগোষ্ঠীর ৮০ ভাগই বাস করছে এমন সব এলাকায় যেগুলো ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও চরম আবহাওয়ার শিকার হয়। n ২০২২ সালে সুপেয় পানির সংকটে ছিল ১৭০ কোটি মানুষ। ২০২৫ সাল, অর্থাৎ আগামী বছরেই সংখ্যাটা ৫০০ কোটিতে দাঁড়াবে।
২৩ এপ্রিল, ২০২৪

যুদ্ধে নয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থ ব্যয়ের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
যুদ্ধে ব্যয় না করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থ খরচ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এতে করে বিশ্ব রক্ষা পাবে।  সোমবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলনে ন্যাপ এক্সপো-২০২৪ এবং বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (বিসিডিপি) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে সংঘটিত ১৯৭০ সালে মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ’৯১ সালে আরেকটি ঘূর্ণিঝড়ে দুই লাখ মানুষ মারা যায়। কিন্তু ২০২৩ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। এটি জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বাংলাদেশের সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে পার্বত্য ও শাল বনাঞ্চলের প্রায় এক লাখ ২৭ হাজার ৫৪৮ হেক্টর এলাকায় বৃক্ষরোপণসহ ৮৯ হাজার ৮৫৩ হেক্টর উপকূলীয় বন সৃজন করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০১০ (সংশোধিত) প্রণয়ন করেছি।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের জন্য কক্সবাজার জেলায় আমরা বিশ্বের বৃহত্তম ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’ নির্মাণ করেছি। এ প্রকল্পের আওতায় ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করে চার হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আমরা জলবায়ু উদ্বাস্তু, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভূমিহীন, গৃহহীন, সমাজের পিছিয়ে পড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষকে জমিসহ ঘর প্রদান করেছি এবং তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ৪২ লাখ মানুষকে পুনর্বাসন করেছি। ঢাকায় গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো ভাগ করে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে আমাদের অবদান শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশের কম হলেও এর নেতিবাচক প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিরূপ প্রভাব আমাদের সম্ভাব্য উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রতলের উচ্চতা, লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল যা দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১২-১৭ শতাংশ, এ শতাব্দীর শেষদিকে সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমিত রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে ‘Intended Nationally Determind Contribution (INDC) প্রণয়ন করে এবং ২০২১ সালে তা হালনাগাদ করে ইউএনএফসিসিসি তে জমা দেয়। এতে আমরা শর্তহীন ৬ দশমিক ৭৩ এবং শর্তযুক্ত ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করেছি যাতে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস পায়। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন এবং গ্রামাঞ্চলে ৪৫ লাখেরও বেশি উন্নত চুলা বিতরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০২৩ সালে মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান (এমসিপিপি) প্রণয়ন করেছি। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে বিপদাপন্নতা থেকে সহিষ্ণুতা এবং সহিষ্ণুতা থেকে সমৃদ্ধি পর্যায়ে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এমসিপিপি তে অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রমে স্থানীয় জনগণের স্বপ্রণোদিত অংশগ্রহণ, প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান ও সমাজের সকলের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।  তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) ২০২২-৫০ প্রণয়ন করেছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে এটি ইউএনএফসিসিসি তে দাখিল করা হয়েছে। এ পরিকল্পনায় আমরা ১১টি জলবায়ু ঝুঁকিযুক্ত এলাকাতে ৮টি খাতে ১১৩টি অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম চিহ্নিত করেছি।  ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৭ বছরে এনএপি গৃহীত কর্মপরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। এ জন্য সুনির্দিষ্ট তহবিল ও অতিরিক্ত আর্থিক সংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণে আমি ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই। তিনি বলেন, উন্নত দেশসমূহ ব্যাপক কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে অধিক ভূমিকা রেখে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে রক্ষা করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সম্ভাব্য ক্ষতি হ্রাসে অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে ইউএনএফসিসিসি-এর লাস অ্যান্ড ডেমেজ তহবিল হতে অর্থ প্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। 
২২ এপ্রিল, ২০২৪

জলবায়ু অভিযোজনে সাফল্য বিশ্বকে জানাতে শুরু হচ্ছে ন্যাপ এক্সপো
জাতিসংঘ জলবায়ু অভিযোজনে সফলতা বিশ্বকে জানাতে আগামীকাল সোমবার থেকে ৪ দিনের ন্যাশনাল এডাপটেশন প্লান (ন্যাপ) এক্সপো ২০২৪ শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।  রোববার (২১ এপ্রিল) ন্যাপ এক্সপো ২০২৪ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। পরিবেশমন্ত্রী জানান, ন্যাপ এক্সপো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে সাফল্যের ফল স্বরূপ আগামী ২২ থেকে ২৫ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি)-এ ন্যাপ এক্সপো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইউএনএফসিসিসি’র এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি সাইমন স্টিয়েল ন্যাপ এক্সপো ২০২৪-এ উপস্থিত থাকবেন। তিনি জানান, ন্যাপ এক্সপো ২০২৪-এ অংশগ্রহণের জন্য ১০৪টি দেশের ৩৮৩ জন ইউএনএফসিসিসিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে। এ ছাড়া, দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, জলবায়ু বিশেষজ্ঞবৃন্দ, এনজিওর প্রতিনিধিবৃন্দ, স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীসহ ৫৫০ জন অংশগ্রহণ করবেন। এ সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের অভিযোজন কার্যক্রম সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় থেকে সবাই পারস্পরিকভাবে উপকৃত হতে পারবে। সাবের চৌধুরী বলেন, ন্যাপ এক্সপো একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম যেখানে বিভিন্ন দেশ, সংস্থা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা ন্যাপ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করে। এই এক্সপো উন্নয়নশীল দেশগুলোর ন্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত গ্যাপ এবং চাহিদা চিহ্নিতকরণের জন্য প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করবে। ন্যাপ এক্সপো ২০২৪-এ বাংলাদেশ বিভিন্ন সেশন আয়োজন করবে। মন্ত্রী আরও জানান, এ সম্মেলনে মোট ২৩টি স্টল থাকবে যেখানে বিভিন্ন দেশের অভিযোজনমূলক কর্মকাণ্ড প্রদর্শিত হবে। এ ছাড়াও, ৪ দিনে ৩৪টি সেশনে বিশেষজ্ঞগণ ট্রান্সফরমেশনাল এডাপটেশন, ফিনান্সিয়াল মেকানিজম, এডাপটেশন একটিভিটি মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন টুলস, জেন্ডার রেস্পন্সিভ এডাপটেশন প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করবেন। বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দকৃত ১৩টি স্টলে জলবায়ু অভিযোজনের বিষয়সমূহ প্রদর্শন করা হবে।এ এক্সপোতে দেশের জলবায়ু অভিযোজন প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দেশি-বিদেশি সংস্থা অংশগ্রহণ করবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।
২১ এপ্রিল, ২০২৪

‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তরুণদের সম্পৃক্ত করবে সরকার’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, সরকার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায়সঙ্গত সমাধান প্রচারে তরুণদের বিশেষ করে নারীদের সম্পৃক্ত করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের শক্তিশালী এজেন্ট হিসেবে তরুণদের সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়ে জলবায়ু ন্যায়বিচারের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা নিতে এবং নেতাদের জবাবদিহি করতে আহ্বান জানান তিনি। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকায় ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) ক্যাম্পাসে ‘জলবায়ু ন্যায়বিচারের উন্নয়ন: আদালত ও যুবকের ভূমিকা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে পরিবেশমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রয়াত প্রখ্যাত জলবায়ু বিজ্ঞানী ও জলবায়ু বিচারের আইনজীবী অধ্যাপক ড. সালিমুল হকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়। তিনি বলেন, অর্থপূর্ণ পরিবর্তনের জন্য এবং সবার জন্য একটি ন্যায্য ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে তরুণদের আবেগকে কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশের তরুণদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে তাদের মতামত প্রকাশ করা এবং সরাসরি অভিজ্ঞতা অর্জন করা উচিত। একটি সমৃদ্ধ এবং স্থিতিস্থাপক ভবিষ্যতের জন্য তরুণদের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য বলে মনে করেন তিনি। তরুণ প্রজন্মকে বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি তরুণদের ইনপুট শোনার পাশাপাশি ভুল এড়ানোর গুরুত্বের ওপর জোর দেন। লক্ষ্য হলো তাদের প্রক্রিয়ার অংশীদার করা এবং তাদের জলবায়ু কর্মের নিরীক্ষণ করা। অনুষ্ঠানে মামলার মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায়বিচারের প্রচারের বিষয়ে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ল’ এর অধ্যাপক ড. সিজার রদ্রিগেজ-গারভিটো। অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, প্রফেসর ড. তানভীর হাসান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য জলবায়ু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত, বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আইসিসিএডির পরিচালক সাদিক হক এবং প্রয়াত অধ্যাপক ড. সালিমুল হকের ছেলে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, নীতিনির্ধারক এবং জলবায়ু কর্মীরা।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় গবেষণা বাড়ানো হবে : কৃষিমন্ত্রী
কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় গবেষণা আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ।  তিনি বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিখাত। এ ক্ষতি মোকাবিলায় বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনসহিষ্ণু ফসলের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে। আমাদের কৃষিবিজ্ঞানীদের হাত ধরে ইতোমধ্যে অনেক সাফল্য এসেছে। ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় গবেষণা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকালে রাজধানীতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘জলবায়ু কর্মকান্ড ও খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তর’ শীর্ষক দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।  মন্ত্রী বলেন, আমাদের বিজ্ঞানীরা ও গবেষণা সংস্থাগুলো ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনসহনশীল কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইমেরিটাস অধ্যাপক এম এ সাত্তার মণ্ডলের সভাপতিত্বে ও সাবেক কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির সিনিয়র এসোসিয়েট ডিন জর্জ স্মিথ, ডিরেক্টর অব ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম করিম মেয়ারদিয়া, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর সায়েন্সের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শেইলা কাকা ওচুগবোজু, ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের সিইও আরিফ হোসেন বক্তব্য রাখেন।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪
X