জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের টাকা কোথায়, জিজ্ঞাসা আমিনুল হকের 
বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বৈশ্বিকভাবে জলবায়ু তহবিল হয়েছে। তার ব্যাপক এবং বিশাল একটা অর্থ বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছেও এসেছে। এই যে লক্ষ কোটি ডলার, এই টাকাটা কোথায়? এ টাকার হদিস কোথায়? জনগণ তা জানতে চায়। শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির অধীন তুরাগ থানাধীন ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড, বিমানবন্দর থানার সাংগঠনিক ওয়ার্ড, উত্তরা-পশ্চিম থানার ১ ও ৫১নং ওয়ার্ড, তাঁতীদল এবং শেরেবাংলা নগর থানার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের উদ্যোগে সাধারণ জনগণ ও পথচারীদের মাঝে বোতলজাত পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আমিনুল হক বলেন, সরকারের দুঃশাসনে বাংলাদেশের মানুষ আজ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। দেশের মানুষ ভালো নেই। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে আজকে যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, যারা দিন আনে দিন খায়, তারা খুব কষ্টে অসহায় জীবনযাপন করছে। তারা ঠিকমতো দু’বেলা পেটভরে ভাত খেতে পারে না। তিনি আরও বলেন, আজকে আমরা দেশে কী দেখতে পাচ্ছি, পেটের ক্ষুধায় মা তার সন্তানকে বিক্রি করে দিচ্ছে। কী নির্মম! আজকে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রতিটি জায়গাতেই মানুষের হাহাকার রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সরকারকে বারবার বলার পরও এই আওয়ামী সরকারের কিছুই হয় না। কারণ, তারা জনগণের সরকার না, জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। জনগণকে তাদের দরকার নেই। কিন্তু বিএনপি বিশ্বাস করে, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণের ক্ষমতার কাছে আওয়ামী সরকারের ক্ষমতা কিছুই না। বিএনপির এ নেতা বলেন, আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে রাজনীতিকরণ করে জনগণের ওপর চেপে বসেছে। আজকে দেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ ভালো নেই। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাজী মো. মোস্তফা জামান। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদুর রহমান সুমন, আমিনুল ইসলাম, তাঁতীদলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, আকতার হোসেন, মহানগর সদস্য হাজী ইউসুফ, আফাজ উদ্দীন আফাজ, এবিএমএ রাজ্জাক, শাহ আলম, অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন জসিম, আহসান হাবিব মোল্লা, বৃহত্তর উত্তরা থানা বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুস ছালাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
০৩ মে, ২০২৪

গোলটেবিল বৈঠক / জলবায়ু পরিবর্তন দেশের জন্য অস্তিত্বের সংকট
ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র (ডর্‌প), হেলভেটাস বাংলাদেশ ও কালবেলার যৌথ উদ্যোগে গত ৩০ মার্চ একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার বিষয় ছিল ‘জলবায়ু পরিবর্তনে পানি ও স্যানিটেশন’। আলোচকদের বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে এ ক্রোড়পত্র সুপারিশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ন্যায্যতাভিত্তিক বাজেট বৃদ্ধি ও অর্থবছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা। টেকসই, লাগসই প্রযুক্তি এবং নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। আর্থিক প্রণোদনা ও নীতিগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে পানি ও স্যানিটেশন খাতে বিনিয়োগের জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে উৎসাহিত করা। জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা এবং মুজিব জলবায়ু প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় পানি ও স্যানিটেশনের অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব আরোপ এবং সঠিকভাবে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা। উপকূলীয় ১৯টি জেলায় বিশেষ করে লবণাক্ত অঞ্চলগুলোতে অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিরাপদ পানির জন্য বাজেট বৃদ্ধি এবং এসডিজি ৬ এবং ১৩ বাস্তবায়নে স্থানীয় পরিকল্পনা অগ্রাধিকার দিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণ করা। প্রধান অতিথি সাবের হোসেন চৌধুরী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী চলতি অর্থবছরে ২৫টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জলবায়ু খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ নম্বর খাত হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য। ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে শুধু এই জায়গায়। এখন এই বরাদ্দগুলো কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা একটি বড় প্রশ্ন। কারণ আমরা আমাদের স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা জানি। আমাদের যে স্বাস্থ্য বাজেট রয়েছে, আমরা তা পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারি না। সুতরাং বাজেট বাড়ানোর থেকে যে বাজেট রয়েছে সেটা পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানোটাই বেশি জরুরি। আমাদের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ, আমরা বাজেটের হিসাব করি শুধু কত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলো এবং কত টাকা আমরা খরচ করলাম এটুকুর মধ্যে। কিন্তু সেই খরচ করে তার ফলাফলটা কী, সেই অ্যাসেসমেন্ট আমরা করি না। আমরা যে খরচ করলাম, সেই খরচ অনুযায়ী আমাদের টার্গেট পূরণ হচ্ছে কি না, সেটা আমরা দেখি না। সুতরাং আমাদের কোয়ানটিটিভ বাজেটে নয়, বরং কোয়ালিটিটিভ বাজেটে যেতে হবে। আমাদের ফলাফল মূল্যায়ন করতে হবে। ওয়াশ দিয়ে যদি আমরা সেই মূল্যায়নটা শুরু করতে পারি, তাহলে সেটা আমাদের অনেক কাজে আসবে। সর্বপ্রথম আমাদের নিজেদের প্রায়োরিটি নিজেদেরই আইডেন্টিফাই করতে হবে। যদি আমাদের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে শূন্যতা থাকে, তখন ডেভেলপমেন্ট পার্টনার বা কোম্পানিগুলো তাদের চিন্তাগুলো এখানে পুশ করবে। আমরা সেরকমটা চাই না। আমরা এডিবির বা বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প শুনতে চাই না। আমরা শুনতে চাই বাংলাদেশের প্রকল্প, যেখানে উন্নয়ন সহযোগীরা সহযোগিতা করছে। এটাই মূল বিষয় হওয়া উচিত। আমরা ২০২৬ সালের মধ্যে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিকের ব্যবহার ৯০% কমিয়ে ফেলার টার্গেট করেছি। আপনারা বেনিফিট কস্ট রেশিওর বিষয়টি দেখতে পারেন। আমি যদি ওয়াশের জন্য ইনভেস্ট না করি, তাহলে কী দাঁড়াবে এবং আমি ইনভেস্ট করার পরে কী দাঁড়াবে। আমরা এখন পর্যন্ত ওয়াশের ক্ষেত্রে কোনো বেনিফিট কস্ট রেশিও করিনি। আমাদের ৩৭ হাজার কোটি টাকা জলবায়ু বরাদ্দের ১০ হাজার কোটি টাকা যাচ্ছে অবকাঠামো উন্নয়নে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার পানির উৎসগুলোকে এই অবকাঠামোর মধ্যে আনা যায় কি না, সেটা চিন্তা করতে হবে। আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাজেট বরাদ্দ রেখেছি ২.৫ হাজার কোটি টাকা। সেখানেও যদি আমরা এই অবকাঠামোর মধ্য নিয়ে আসতে পারি তাহলেও আমাদের জন্য একটি বড় প্লাস পয়েন্ট। এ ছাড়া অপারেশন এবং মেইনটেন্যান্স একটি বড় সমস্যা। এই বিষয়টাও আপনারা আপনাদের প্রস্তাবনার মধ্যে আনতে পারেন। বিশেষ অতিথি ফেরদৌস আহমেদ সংসদ সদস্য এদেশে পানি নিয়ে সমস্যা হবে, সেটা খুবই বিস্ময়কর একটি ব্যাপার। তার পরও এই সমস্যা তৈরি হয়ে গেছে এবং এই সমস্যাটা আমরাই তৈরি করেছি। বাংলাদেশে কখনো আমরা ভাবতে পারিনি, আমরা ট্যাপ ওয়াটার খেতে পারব। ছোটবেলা থেকে পানি ফুটিয়ে খাওয়ার অভ্যাস ছিল আমাদের। এর ফলে কী পরিমাণ গ্যাস নষ্ট হয়েছে সেই হিসাবও আমরা রাখিনি। বছরের পর বছর মাকে দেখেছি একটা আলাদা পাতিলের মধ্যে পানি সিদ্ধ করতে। অথচ আমরা যখন গ্রামে যেতাম তখন গভীর নলকূপের পানি খেতে ফোটানোর প্রয়োজন হতো না। এই বিষয়টা আমার কাছে খুবই অবাক লাগত। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, যতটা সম্ভব বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা এবং যতটা সম্ভব ভূগর্ভস্থ পানি নষ্ট না করা। আমি মনে করি এটি অল্প সময়ের কাজ নয়, বরং একটি দীর্ঘ সময়ের এবং অভ্যাসের কাজ। যারা নিরাপদ পানি এবং স্যানিটেশন বিষয়ে কাজ করছেন তাদের এই নিরলস কাজের ফলে আমরা আশা করি আমাদের সামনে একদিন সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে। ঢাকায় পানি ও স্যানিটেশনের সমস্যা বর্ষাকালে অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। বর্ষায় রাস্তায় পানি জমবে, পানি নিষ্কাশন না হয়ে আবদ্ধ থাকবে। অনেক জায়গায় খবর পাওয়া যাবে ওয়াশার পানির সঙ্গে পয়ঃনিষ্কাশনের পানি মিশে গিয়ে বাড়িতে ব্যবহারের পানির ট্যাঙ্কে মিশে যাচ্ছে। ফলে নিরাপদ ট্যাপ ওয়াটারের নিশ্চয়তাও আমরা পাব না। তুষার মোহন সাধু খাঁ প্রধান প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর আমরা আমাদের পানিসম্পদের খুব সামান্য অংশই খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করি। ভূ-গর্ভ থেকে যে পানি উত্তোলন করে আমরা ব্যবহার করি, তার ৮০ শতাংশই ব্যবহৃত হয় কৃষি এবং শিল্প খাতে। অথচ আমরা এই বিষয়টাকে উপেক্ষা করছি। আমরা শুধু বাসা-বাড়িতে ব্যবহারের এবং খাওয়ার পানি নিয়ে আলোচনা করি। আমি মনে করি, কৃষি এবং শিল্প খাতে যে পানি ব্যবহার করা হচ্ছে সেখানেও যাতে অপচয় না হয় সেই বিষয়টাকে নিশ্চিত করতে হবে। আর এর দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব কেমন হয়, সেটা আমরা সাতক্ষীরার শ্যামনগর, খুলনা, বাগেরহাটসহ অন্যান্য দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় দেখেছি। সমগ্র বাংলাদেশের প্রায় ১৯ শতাংশ জায়গা ওয়াটার স্ট্রেস এরিয়া। এই ওয়াটার স্ট্রেস এরিয়াগুলো নিয়ে আলাদা একটি প্রকল্প নেওয়া রয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য আলাদা, চা-বাগান এলাকার জন্য আলাদা এবং আর্সেনিক এলাকাগুলোতে আলাদাভাবে এই প্রকল্পের আওতায় কাজ করা হচ্ছে। এর বাইরেও যেসব এলাকা রয়েছে সেসব এলাকায় শুধু খাওয়ার পানির জন্য কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এসব প্রকল্পের আওতায় আমরা কাজ করছি। আমাদের কাজের লক্ষ্য প্রতিটি বাড়িতে নিরাপদ খাবার পানি নিশ্চিত করা। হাসিন জাহান কান্ট্রি ডিরেক্টর ওয়াটারএইড বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে পানির ওপর। আমরা জানি পানি একটি সীমিত সম্পদ। সুতরাং আমি মনে করি, পানিসম্পদ রক্ষা করা একটা বড় বিষয়। দুটি উপায়ে পানিসম্পদ রক্ষা করা যাবে। প্রথমত পানির অপচয় কমিয়ে। আর দ্বিতীয়ত পানির দূষণ কমিয়ে। এই দুটি বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের সবার প্রথমে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিকের উৎপাদন এবং বাজারে প্রবেশ বন্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ পানির উৎস নষ্ট করার জন্য সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক সবচেয়ে বেশি দায়ী। আমাদের কারখানাগুলো ঢালাওভাবে ইটিপি ব্যবহার করছে। এভাবে ঢালাওভাবে ইটিপি ব্যবহারের রাশ টেনে ধরা জরুরি। আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি। ডিজিটালি এই বিষয়গুলো মনিটরিং করা খুবই সহজ। কারখানাগুলোতে ইটিপির ব্যবহার যদি রিয়েল টাইম মনিটরিং করা হয়, তাহলে ডিজিটালি আমরা বিষয়টাকে সমাধান করতে পারি। মাহবুবুর রহমান প্রকল্প সমন্বয়ক আইসিডিডিআর,বি পানি দূষণ ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে হাইপারটেনশন, গর্ভাবস্থাজনিত জটিলতা, কলেরাসহ অন্যান্য রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২০ সালে প্রতি এক মিনিটে দুজন রোগী ভর্তি হয়েছিল আইসিডিডিআর,বি কলেরা হসপিটালে। অথচ একটা সময় আমাদের দেশে কলেরা অনেক কমে গিয়েছিল। পানি দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতসহ অন্যান্য ডিপার্টমেন্টকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুত করতে হবে। আমরা অনেকেই এখনো বুঝি না জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু কী, এর ক্ষতি কী এবং এর প্রভাব কীভাবে কমানো যাবে। আমরা জলবায়ু সম্পর্কিত অনেক পাইলট পলিসি এবং মিটিগেশন স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেছি। সেখান থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা থেকে কোন বিষয়গুলো ভালো কাজ করে সেগুলো স্কেলআপ করতে হবে এবং সর্বোপরি জনগণকে জলবায়ুর প্রভাব প্রশমনে কাজে লাগাতে হবে। সন্তোষ শর্মা সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক কালবেলা ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, অবস্থান ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে বাংলাদেশ অত্যন্ত দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর বিভিন্ন দুর্যোগে মানুষের সম্পদ ও পরিষেবার প্রচুর ক্ষতি হয়ে থাকে, যা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করার মাধ্যমে তাদের এক ভয়াবহ দুর্দশার মধ্যে ফেলে দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন রকম প্রভাবের কারণে তাদের এই দুর্দশার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধরা হয়ে থাকে, জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব যেসব দেশে ইতোমধ্যে পড়া শুরু হয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দুর্যোগের কারণে যেসব অবকাঠামোর ক্ষতি হয় এর মধ্যে পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামো বা সরবরাহ ব্যবস্থাগুলো অন্যতম। দেখা যায়, বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসে কোনো এলাকার টিউবওয়েলগুলো পানিতে তলিয়ে যায় কিংবা বন্যার পানিতে টিউবওয়েল বা পুকুরের পানি দূষিত হয়ে পড়ে, যার ফলে মানুষ অনিরাপদ পানি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। বেশিরভাগ ল্যাট্রিন দুর্বল ও নিচুভাবে তৈরি হওয়ায় এগুলো খুব সহজেই ভেঙে পড়ে। এতে জনসাধারণ খোলা জায়গায় পয়ঃনিষ্কাশন করতে বাধ্য হয়। ড. মাহফুজ কবির গবেষণা পরিচালক বিআইআইএসএস এসডিজি ৬ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে দুই বিলিয়নের বেশি মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। এবং তিন বিলিয়নের বেশি মানুষ সেফলি ম্যানেজ স্যানিটেশন থেকে বঞ্চিত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘটা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রেও পরিসংখ্যানটা প্রায় একই রকম। এসব ক্ষেত্রে নিরাপদ পানি এবং স্যানিটেশন প্রবেশগম্যতার এর ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি ঝুঁকির সম্মুখীন হন প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষ। এর পাশাপাশি রয়েছে সোলো একটিং ডিজাস্টার। লবণাক্ততা এবং খরার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এলাকায়ও মানুষ নিরাপদ পানি এবং স্যানিটেশন সুবিধা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। একইসাথে হাত ধোয়ার বিষয়টিও পানি ও পয় পরিচ্ছন্নতার সাথে খুবই গুরুত্ব রয়েছে। এই বিষয়ে শহর অঞ্চলের থেকে গ্রামাঞ্চলের মানুষ অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে প্রায় সাত কোটি ২০ লক্ষ মানুষ এই হাত ধোয়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যে সকল এলাকাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সে সকল জায়গায় নিরাপদ ব্যবস্থাকৃত পানির সুবিধা অনেকটা কম। আমাদের আগামী বছরের বাজেট আসন্ন। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ একটি সময়ের দাবি। এবং বরাদ্দের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত হওয়া দরকার যাতে এসডিজি বাস্তবায়ন সফল হয়। ড. তানভীর আহমেদ অধ্যাপক, বুয়েট আমরা যখন বাজেটের ব্যয় নির্ধারণ করি সেখানে বড় শহর অর্থাৎ ধনীদের বসবাসের স্থানেই বাজেটের অধিকাংশ বরাদ্দ চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ বাজেটের বেশিরভাগ অংশ ধনীদের পেছনে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। এর একটি কারণ হতে পারে বড় শহরগুলোর অবকাঠামো তৈরির খরচ গ্রামাঞ্চলের থেকে অনেক বেশি। পাশাপাশি আমাদের দেখতে হবে, শহরের অবকাঠামোগুলো প্রত্যন্ত এলাকার অবকাঠামোগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি জলবায়ু টেকসই হয়। আমার পরামর্শ থাকবে, আমরা যখন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জায়গায় ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন ডিজাইন করতে যাব, তখন যাতে এই অবকাঠামোটি জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো হিসেবে ডিজাইন করা হয়। আমরা সব সময় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখি অবকাঠামোর ওপর। আমরা দেখি জলবায়ু পরিবর্তন ওয়াটার স্যানিটাইজেশনের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে। কিন্তু এর বিপরীতমুখী দিকও রয়েছে। ওয়াটার স্যানিটাইজেশন জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে, সেটা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। মো. মাহমুদুল হাসান পানি, খাদ্য ও জলবায়ুবিষয়ক ডোমেইন কো-অর্ডিনেটর, হেলভেটাস বাংলাদেশ বাংলাদেশে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যার সব সমাধান এক রকম হবে না। দুটি হটস্পটে সমাধান দুই ধরনের হতে পারে। আমি যদি নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগরকে উদাহরণ হিসেবে ধরি—দুই জায়গাতেই নিরাপদ বা সুপেয় পানির এবং স্যানিটেশন সমস্যা রয়েছে। কিন্তু এই দুই জায়গার সমাধান ভিন্ন রকমের। গ্রামের দরিদ্র মানুষ টাকা দিয়ে পানি কিনে খাবে, এটা তাদের জন্য কঠিন। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় খাবার পানির সংকট প্রখর। পানি পাব কি না, সেটাই মানুষের দুশ্চিন্তা। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এখনো একটা পরিবারে দিনে এক কলসি খাবার পানি দিয়ে প্রয়োজন মেটাতে হয়। পরের দিন গিয়ে আরেক কলসি পানি পাবে সেই পরিবার। নিরাপদ পানি পাওয়া সবার অধিকার। সেই জায়গা থেকে আমাদের অবশ্যই একটি কাস্টমাইজড ওয়াটার ক্যালেন্ডার থাকা দরকার। একই সঙ্গে আমরা যারা জলবায়ু নিয়ে কাজ করছি আমাদের ক্লাইমেট রেজিলেন্স নিয়েও ভাবতে হবে। ড. মো. মুজিবুর রহমান অধ্যাপক, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আমরা সেফলি ম্যানেজ ওয়াটার অর্জন করেছি ৫৯ শতাংশ। ৩১-৩৯ শতাংশ পর্যন্ত অর্জন করেছি সেফলি ম্যানেজ সানিটেশন। কিন্তু আমরা যদি সেফলি ম্যানেজ ওয়াটার বা সেফলি ম্যানেজ স্যানিটেশনের ডেফিনেশন দেখি, তবে তার সঙ্গে আমাদের এই অর্জন কতটুকু যায়, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। আমাদের প্রগ্রেস আসলে কতটুকু সেটা সত্যিকার অর্থে যাচাই করতে হবে। তা না হলে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব না। সেফলি ম্যানেজ স্যানিটেশন হলো পানির সব ধরনের অপচয় বোধ করা। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তেমনটা করতে পারিনি। তাহলে আমাদের সেফলি ম্যানেজ স্যানিটেশনটা কোথায় দাঁড়াচ্ছে। অন্যদিকে সেফলি ম্যানেজ ওয়াটার অর্থাৎ পানি সব ধরনের কেমিক্যাল থেকে মুক্ত থাকতে হবে। অথচ আমাদের দেশের নদীগুলো পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নদীর থেকে হয়তো সব থেকে বেশি দূষণ হয়। আমরা পানির প্রাপ্তি বা বাজেট অ্যালোকেশনের বিষয়ে যে বৈষম্যের কথা বলছি সেখানে মূল বিষয়টি হলো পানির প্রাপ্যতা। জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে পানির প্রাপ্যতার সঙ্গে সম্পর্কিত তেমনি আমাদের ব্যবহার শৈলী ও ব্যাপকভাবে আমাদের এই পানির প্রাপ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এএইচএম নোমান সিইও, ডর্‌প জলবায়ু পরিবর্তনে পানি ও স্যানিটেশন শীর্ষক গোলটেবিলে আলোচনায় সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। ডরপ, হেলভেটাস ও কালবেলার যৌথ এ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মূল্যবান সময় দেওয়ায় তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। একই সঙ্গে বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদকেও স্বাগত জানাই। শত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রবন্ধ উপস্থাপক, সরকারি দপ্তর, অধিদপ্তরসহ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার যেসব কর্মকর্তা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আলোচনায় উপস্থিত হয়েছেন তাদেরও জানাই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। পার্থ হেফাজ সেখ ডিরেক্টর, প্রোগ্রামস অ্যান্ড পলিসি অ্যাডভোকেসি ওয়াটারএইড বাংলাদেশ ওয়াটার এইড বাংলাদেশ ১০-১২ বছর ধরে বাজেট নিয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশ জাতীয় বাজেটে ওয়াটার স্যানিটেশন এবং হাইজিনের জন্য কী পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করি। আমরা এখানে ডিস-ইনভেস্টমেন্ট বলব না, তবে গত ১০ বছরে এখানে ধারাবাহিকভাবে কম বিনিয়োগ দেখেছি। সরকারের ওয়াশ বাজেটের মাত্র ১-১.১ শতাংশ পৌঁছায় দুর্গম এলাকায়। আমরা সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথমবারের মতো ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস তৈরি করেছি। এখানে স্পষ্ট হয় বাংলাদেশের সব জনগণ মিলে এক বছরে কী পরিমাণ অর্থ ওয়াটার স্যানিটেশন এবং হাইজিনে খরচ করেছি। এই বিশ্লেষণে আমরা দেখেছি, একজন ধনী মানুষ তার মাসিক আয়ের যে পরিমাণ অংশ পানি, স্যানিটেশন এবং হাইজিনে ব্যয় করেন, একজন দরিদ্র মানুষ তার থেকে বেশি রেশিওতে ব্যয় করেন। উদাহরণস্বরূপ একজন ধনী মানুষ তার আয়ের ৪ শতাংশের মতো ব্যয় করেন এখানে। অন্যদিকে একজন দরিদ্র মানুষের ক্ষেত্রে এটা তার আয়ের ৭-৮ এমনকি ৯ শতাংশেও চলে যায়। মোস্তাফিজুর রহমান প্রোগ্রাম অফিসার, জলবায়ু ও পরিবেশ, সুইডিশ দূতাবাস আমরা এখানে বাজেটের কথা বলছি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশের পানি যে একটি রিসোর্স, সেটাকে আমরা এখনো স্বীকার করি না। আমরা যারা পানি ব্যবহার করি, সবাইকে এর মূল্য পরিশোধ করতে হবে। মূল্য পরিশোধ ছাড়া পানি পাওয়া যাবে না এই সেন্সটি তৈরি হওয়া দরকার। ওয়াশ ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ক্ষেত্রে আমাদের এক ধরনের ইনোভেশনের দরকার রয়েছে। সারফেস ওয়াটার এবং অন্যান্য উৎসে আমরা কী ধরনের টেকনোলজি ব্যবহার করছি সেগুলো আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে কতটা সঠিক সেখানেও কাজের সুযোগ রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, আমাদের অবকাঠামো তৈরি কিন্তু সবাই সেটা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে না। সেখানে প্রশিক্ষণের বিষয় রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা ও সামাজিক মূল্যবোধের বিষয়। এই দিকগুলো আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। ড. আব্দুল্লাহ আল মুয়ীদ চিফ অপারেটিং অফিসার সিডব্লিউআইএস-এফএসএম সাপোর্ট সেল, ডিপিএইচই আমরা খাওয়া এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহারের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উঠিয়ে ফেলছি। অনেক বেশি পরিমাণে পানি উঠিয়ে ফেলার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাচ্ছে। এখন মাটির যে গভীরে পানি পাওয়া যায় আর কয়েক বছর পর হয়তো এই গভীরতায় পানি পাওয়া যাবে না। এটাই বাস্তবতা। আমরা নদীর পানি ট্রিটমেন্ট করে খাওয়া এবং ব্যবহার উপযোগী করছি, কিন্তু বিপরীতে সেই লবণ উপাদান আবারও পার্শ্ববর্তী খাল বা নদীতেই ফেলছি। ফলে আদতে কোনো লাভ হচ্ছে না। আমি মনে করি বাজেট বাড়ানোই একমাত্র সল্যুশন নয়। আমরা স্যানিটেশনের জায়গায় একটি বিষয় মিস করে যাই। আমরা স্যানিটেশন টেকনোলজি চিন্তা করি ক্লাইমেট ফ্রেন্ডলি টেকনোলজি টয়লেটের দিকে রেখে। ফ্লাশ করা হোক বা পানি ব্যবহার করা হোক এখানে প্রচুর পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল পরিষদ ডিপিএইচই মিউনিসিপালিটিতে যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়, সমন্বিতভাবে সেখানে এক টন সলিড ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট করলে প্রায় সাড়ে সাতশ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইডের এমিশন রোধ করতে পারি আমরা। ড. মো. লিয়াকত আলী পরিচালক, জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি, ব্র্যাক আমরা যখন ওয়াটার স্যানিটেশনের প্রকল্পের কথা বলি বা আমাদের সফলতার কথা বলি, তখন শুধু পানির প্রজেক্টের কথা বলি। অথচ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আমাদের স্যানিটেশনের প্রজেক্ট নেই বললেই চলে। আমাদের চিন্তা করতে হবে ওয়াটার স্যানিটেশনের যে প্রজেক্টগুলো আসবে সেগুলো কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত তা প্রমাণ করা। এটা প্রমাণ করা না গেলে বৈশ্বিক তহবিলের অর্থ প্রাপ্তি সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। ওয়াটার স্যানিটেশন বিষয়টি অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে থাকবে। কিন্তু অবশ্যই আমাদের লিংক করতে হবে কীভাবে এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে যুক্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমনে প্রথম যেটা প্রয়োজন, তা হলো ওয়াটার স্যানিটেশন। আমাদের মাথায় রাখতে হবে, আমরা যারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করি তারা স্টেটিক চিন্তা করব না। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের হটস্পটগুলোতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। লবণাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, স্ট্রেস বৃদ্ধি পাচ্ছে, খরা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গ্রাউন্ড ওয়াটার শুকিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমাকে সব ফিউচার প্রজেকশনগুলো মাথায় নিয়ে তারপর চিন্তা করতে হবে। পানিতে যদি ভর্তুকি দিতে হয়, তবে সেটা ওই স্ট্রেস এলাকায় দিতে হবে যেখানে ঢাকা শহরের থেকে ২০০ গুণ বেশি দামে মানুষকে পানি কিনে খেতে হচ্ছে। মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান উপনির্বাহী পরিচালক, ডর্‌প পানি ও স্যানিটেশনকে জুলাই ২০১০ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। এসডিজি-৬ এর টার্গেট অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চল, বন্যা ও খরাপ্রবণ এলাকা এবং চর এলাকার মানুষ পানি ও স্যানিটেশন সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। লবণাক্ততা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের জীবনকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসডিজি অর্জনের জন্য সরকারের প্রচেষ্টার পাশাপাশি সবা স্টেকহোল্ডারদের সমন্বিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার ওপর যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলায় আমাদের আরও বেশি বাজেট বরাদ্দ, নীতিগত পরিবর্তন এবং কার্যকর প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রয়োজন। রাবেয়া বেগম নির্বাহী পরিচালক, এসডিএস আমরা শরীয়তপুরে দেখেছি, একজন মানুষ তার বয়সের মধ্যে ১২-১৪ বার বাড়ি থেকে ডিসপ্লেসড হচ্ছে। ডিসপ্লেসড হয়ে যে এরিয়াগুলোতে তারা যাচ্ছে, সেখানে ন্যূনতম কোনো সুযোগ-সুবিধা তারা পায় না। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে এই ওয়াটার স্যানিটেশন এবং হাইজিন কোনো ধরনের সুবিধাই সেখানে থাকে না। চর এরিয়ায় বসবাসের জন্য সেখানে যে ধরনের ফেসিলিটিস থাকার কথা সেগুলো সেখানে থাকে না। এমনকি সরকারের ফিল্ড ওয়ার্কাররাও সেখানে নিয়মিত যান না। চর এবং কোস্টাল এলাকার মানুষের জন্য সরকারের সেফটিনের জন্য যে প্রোগ্রামগুলো থাকে সেগুলো বাস্তবায়িত হয় না। যারা নদীভাঙনের কারণে ডিসপ্লেসড হয়ে অন্য এরিয়াতে চলে যান, তারা নতুন এলাকার সেফটিনের সাপোর্টগুলোও পান না। এর কারণ তারা নতুন এলাকার ভোটার নন। মো. সামছুদ্দোহা প্রধান নির্বাহী, সিপিআরডি আমাদের যে ডেভেলপমেন্ট স্ট্রেস রয়েছে সেটাও পানির ওপর বড় ধরনের ইম্প্যাক্ট তৈরি করছে। আমরা গ্রাউন্ড ওয়াটারকে অনেক বেশি ব্যবহার করছি। এর ফলে আমাদের গ্রাউন্ড ওয়াটারের লেভেল কমে যাচ্ছে। কৃষি চাহিদা বাড়ছে এবং এর ফলে আমাদের পানির উৎস এবং সহজলভ্যতা কমে যাচ্ছে। আমরা কারখানার দূষণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, যার ফলে পানির বিরাট উৎস নষ্ট হচ্ছে। আমরা শিল্প খাতে পানির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারিনি যে কারণে প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি পরিমাণ পানি ব্যবহৃত হচ্ছে। পানিকে শুধু এসডিজির টার্গেট হিসেবে না দেখে জলবায়ু পরিবর্তন এবং ডেভেলপমেন্ট স্ট্রেস পানির যে সংকট তৈরি করবে সেটাকে দেখা। আমরা শুধু এটাকে এসডিজির মধ্যে রেখে দিলে চলবে না। বরং জলবায়ু পরিবর্তনের পারসপেক্টিভকে বিশ্লেষণ করে আমাদের কিছু সলিড ইন্ডিকেটর প্রপোজ করতে হবে। ইন্ডিকেটরসগুলো কেমন হওয়া উচিত, তা আমরা ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যালায়েন্স এবং নেটওয়ার্ক অব নেটওয়ার্ক থেকে একটি ধারণা প্রণয়ন করব। অলোক মজুমদার কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর, বাংলাদেশ ওয়াশ অ্যালায়েন্স জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত অত্যন্ত ভয়াবহ এবং আমাদের সবারই উচিত এটা নিয়ে চিন্তা করা। এসডিজি ৬.১ এ দেখা যায়, আমরা এখন পর্যন্ত নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন অর্জন করতে পেরেছি মাত্র ৫৯ শতাংশ। ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর আমাদের অগ্রগতি মাত্র ১ শতাংশ। সেই হিসাবে নিরাপদ পানির লক্ষ্য অর্জন করতে আমাদের এখনো ৪১ বছর সময় লাগবে। অথচ ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের শতভাগ মানুষের কাছে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন পৌঁছানোর লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনে আমাদের দরকার গতানুগতিক বলয় থেকে বেরিয়ে এসে ভিন্নভাবে এগোনো। আর এখানে একটি বড় বিষয় হলো ফাইন্যান্সিং। মোহাম্মদ মনিরুল আলম ওয়াশ স্পেশালিস্ট ইউনিসেফ বাংলাদেশ আমাদের আলোচনায় বাজেটের কথা এসেছে। ২০১১-২০২৫ পর্যন্ত আমাদের একটি সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান রয়েছে। সেখানে একটি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানও রয়েছে। আর ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানে উল্লেখ রয়েছে বাজেটের বিষয়টি। এরপর আমরা মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৬-২০৪১ পর্যন্ত একটি প্ল্যান করছি। এটাকে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স প্ল্যান হিসেবে তৈরি করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। আমরা আইটি এবং বুয়েটের সঙ্গে যৌথভাবে এই প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতি বছর বাংলাদেশ যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা প্রশমনে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে সরকার। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বরাদ্দ থাকছে। কৃষি, শিল্পসহ দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্যও আমরা ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করছি। ওয়াটার স্যানিটেশনে কাজ করছে স্থানীয় সরকার। এসব কিছুর একটি সমন্বিত গভর্নেন্স দরকার। শামীম আরেফিন নির্বাহী পরিচালক, অ্যাওসেড, খুলনা পানির জন্য আমরা বাজেট বরাদ্দের বিষয় নিয়ে কথা বলছি। বিগত দিনেও বাজেট বরাদ্দের কথাই বলেছি। টাকার অঙ্কে বাজেট বরাদ্দ হচ্ছে, নতুন টেকনোলজি আবিষ্কার হচ্ছে; কিন্তু আমরা পেরে উঠছি না। প্রশ্ন হলো এত টাকা খরচ করার পরও সংকট কেন তৈরি হলো? আমাদের যে বিষয়গুলো মাথায় নিতে হবে তা হলো পানি ও প্রতিবেশকে সুরক্ষা করা প্রয়োজন। এর জন্য আমাদের ট্রান্স বাউন্ডারি ইস্যুতে আমাদের নদী কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে। উজানে মিঠাপানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় পানি সম্পর্কিত আইনগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। তৃতীয়ত, কৃষিজমি আর অধিগ্রহণ করা যাবে না। উন্নয়নের নামে অধিগ্রহণ কমাতে হবে। চতুর্থত, আমাদের সব সারফেস ওয়াটারকে সংরক্ষণ করতে হবে। এই জায়গাগুলোতে আমরা যদি নজর দিতে না পারি তাহলে দেশের পানিব্যবস্থা ভেঙে পড়বেই। আজহার আলী প্রামাণিক পিকেএসএফ দুর্যোগ, পরিবেশের যে ক্ষতি করে তার ফলে পানির মূল উৎস স্থায়ীভাবে নষ্ট বা দূষিত হয়ে যেতে পারে। ২০০৯ সালে আইলার জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে সমুদ্রের যে পানি ঢুকেছিল, তাতে বিরাট এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানিসহ সব পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। এই পানি এখন মানুষের ব্যবহার উপযোগী নয়। ওই এলাকার জনগোষ্ঠীকে এখন দূরবর্তী এলাকা থেকে পানি আনতে হচ্ছে। নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধিচর্চা মূলত জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার সঙ্গে জড়িত। রোগব্যাধির ঝুঁকি থেকে মুক্তজীবন আর টেকসই জীবিকার জন্য এগুলো খুবই জরুরি। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন মৌলিক চাহিদার মধ্যে পড়ে। তা ছাড়া নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যবিধিচর্চায় ঘাটতি হলে নানাবিধ রোগের বিস্তার ঘটে, অসুখ-বিসুখে মানুষের কষ্ট বাড়ে, চিকিৎসার জন্য খরচ বাড়ে আর উৎপাদন কাজে শ্রম সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। সার্বিক সহযোগিতায় :মো. আমির খসরু উপ-পরিচালক, ডর্‌প মো. আল জাবেদ সরকার মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার, ডর্‌প শ্রুতিলিখন : মুজাহিদুল ইসলাম আলোকচিত্রী : রনি বাউল
২৪ এপ্রিল, ২০২৪

যুদ্ধে নয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থ ব্যয়ের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
যুদ্ধে ব্যয় না করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থ খরচ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এতে করে বিশ্ব রক্ষা পাবে।  সোমবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলনে ন্যাপ এক্সপো-২০২৪ এবং বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (বিসিডিপি) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে সংঘটিত ১৯৭০ সালে মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ’৯১ সালে আরেকটি ঘূর্ণিঝড়ে দুই লাখ মানুষ মারা যায়। কিন্তু ২০২৩ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। এটি জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বাংলাদেশের সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে পার্বত্য ও শাল বনাঞ্চলের প্রায় এক লাখ ২৭ হাজার ৫৪৮ হেক্টর এলাকায় বৃক্ষরোপণসহ ৮৯ হাজার ৮৫৩ হেক্টর উপকূলীয় বন সৃজন করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০১০ (সংশোধিত) প্রণয়ন করেছি।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের জন্য কক্সবাজার জেলায় আমরা বিশ্বের বৃহত্তম ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’ নির্মাণ করেছি। এ প্রকল্পের আওতায় ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করে চার হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আমরা জলবায়ু উদ্বাস্তু, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভূমিহীন, গৃহহীন, সমাজের পিছিয়ে পড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষকে জমিসহ ঘর প্রদান করেছি এবং তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ৪২ লাখ মানুষকে পুনর্বাসন করেছি। ঢাকায় গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো ভাগ করে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে আমাদের অবদান শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশের কম হলেও এর নেতিবাচক প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিরূপ প্রভাব আমাদের সম্ভাব্য উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রতলের উচ্চতা, লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল যা দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১২-১৭ শতাংশ, এ শতাব্দীর শেষদিকে সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমিত রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে ‘Intended Nationally Determind Contribution (INDC) প্রণয়ন করে এবং ২০২১ সালে তা হালনাগাদ করে ইউএনএফসিসিসি তে জমা দেয়। এতে আমরা শর্তহীন ৬ দশমিক ৭৩ এবং শর্তযুক্ত ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করেছি যাতে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস পায়। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন এবং গ্রামাঞ্চলে ৪৫ লাখেরও বেশি উন্নত চুলা বিতরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০২৩ সালে মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান (এমসিপিপি) প্রণয়ন করেছি। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে বিপদাপন্নতা থেকে সহিষ্ণুতা এবং সহিষ্ণুতা থেকে সমৃদ্ধি পর্যায়ে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এমসিপিপি তে অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রমে স্থানীয় জনগণের স্বপ্রণোদিত অংশগ্রহণ, প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান ও সমাজের সকলের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।  তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) ২০২২-৫০ প্রণয়ন করেছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে এটি ইউএনএফসিসিসি তে দাখিল করা হয়েছে। এ পরিকল্পনায় আমরা ১১টি জলবায়ু ঝুঁকিযুক্ত এলাকাতে ৮টি খাতে ১১৩টি অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম চিহ্নিত করেছি।  ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৭ বছরে এনএপি গৃহীত কর্মপরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। এ জন্য সুনির্দিষ্ট তহবিল ও অতিরিক্ত আর্থিক সংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণে আমি ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই। তিনি বলেন, উন্নত দেশসমূহ ব্যাপক কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে অধিক ভূমিকা রেখে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে রক্ষা করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সম্ভাব্য ক্ষতি হ্রাসে অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে ইউএনএফসিসিসি-এর লাস অ্যান্ড ডেমেজ তহবিল হতে অর্থ প্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। 
২২ এপ্রিল, ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তন দেশের জন্য অস্তিত্বের সংকট
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির সংকট বাড়ছে। এতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দেশ। ভূগর্ভস্থ থেকে উত্তোলিত পানিতেও বাড়ছে লবণাক্ততার পরিমাণ। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ২৬ শতাংশ মানুষ পান করছে উচ্চ লবণাক্ত পানি। দেশের ৪১ শতাংশ মানুষ এখনো নিরাপদ পানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বাড়িতে নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধা পায় না ৬১ শতাংশ মানুষ। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, অপর্যাপ্ত বাজেট; সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনার ত্রুটি; সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা ও অসচেতনতার কারণে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের সুবিধা থেকে এখনো দূরে এই মানুষেরা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা কারণে উপকূলীয় এলাকায় কাজের অভাব দেখা দেওয়ায় শহরমুখী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের অধিকাংশেরই জায়গা হয়েছে রাজধানীর বস্তিগুলোতে। সেখানেও নিরাপদ খাবার ও পানি সংকটে ভুগছেন ঘরছাড়া মানুষ। এই সংকট সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। গতকাল শনিবার রাজধানীর নিউমার্কেটে কালবেলার কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তন পানি ও স্যানিটেশন শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ মত দেন তারা। কালবেলা ও বেসরকারি সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুওর (ডরপ) যৌথভাবে বৈঠকটির আয়োজন করে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে হিমালয়ে যেভাবে বরফ গলছে, তা আমাদের জন্য বড় সংকট। এখন যে বরফগুলো আছে, ২০৫০ সালের মধ্যে তার তিন ভাগের এক ভাগ গলে যাবে। এর ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অস্তিত্ব সংকটে আমাদের যে অবস্থান, তখন স্বাভাবিকভাবেই পানির বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। টেকসই উন্নয়নে পানির যে মুখ্য ভূমিকা আছে, তা আমাদের কারও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আমরা যদি নদীশাসনের কথা বলি, জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলি, সবকিছুর সঙ্গে পানি জড়িত। নদীর দখল ও দূষণ দুটোই জরুরি। দখলমুক্ত করতে পারলেও নদী দূষণমুক্ত করতে পারলে আমরা কাঙ্ক্ষিত সুবিধা পাব না। পরিবেশমন্ত্রী আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষয়ক্ষতিতে অভিযোজনের জন্য বাংলাদেশের বছরে ৯ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। সরকার এটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ব্যাপারে সবাইকে একত্রিত করার চেষ্টা চলছে। জলবায়ু অভিযোজনের জন্য আমরা পেয়েছি মাত্র ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ন্যাশনাল এডাপটেশন ফান্ডে স্বাস্থ্যের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স ডেভেলপমেন্ট নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশে যত পরিকল্পনা গ্রহণ, বিনিয়োগ হবে সবকিছু এক প্ল্যাটফর্মে বাস্তবায়িত হবে। এই প্ল্যাটফর্মে একাধিক ওয়ার্কিং গ্রুপ থাকবে। সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন, রিসার্চসহ সবাইকে একত্রিত করা হবে। কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে হলে আমাদের জীবাশ্ম-জ্বালানিতে বিনিয়োগ কমাতে হবে। সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৩ হাজার ইটিপি থাকলেও সেগুলো সব চালানো হয় না। একটি ইটিপি যদি এক দিন বন্ধ রাখেন ১ লাখ টাকা খরচ কম হবে। এভাবে তিন মাস বন্ধ রাখার পর ওই প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই জরিমানা দিয়ে অবৈধ কার্যক্রমকে হালাল করছে কারখানা মালিক, এটা তার জন্য খুবই লাভজনক। এখানে আমাদের পরিকল্পনার খুব ঘাটতি রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেময়েতপুরে প্রায় ১২শ কোটি টাকা ব্যয়ে ট্যানারি স্থানান্তর করা হয়েছে। ট্যানারি যখন হাজারীবাগ ছিল তখন বুড়িগঙ্গাকে ধ্বংস করা হলো। এখন ধলেশ্বরী নদী ধ্বংস হচ্ছে, এটি প্রত্যাশিত না। সীমিত যে পানি আছে আমরা তাও ধ্বংস করছি। নদীতে দূষণ এমন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মাছ তো দূরের কথা ব্যাকটেরিয়াও বাঁচতে পারবে না। যে দূষণ করবে সেই দূষণের জন্য দায়ী এটি আমরা আন্তর্জাতিকভাবে বললেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয় না। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন একটি সমস্যা। বাংলাদেশ তার অন্যতম ভুক্তভোগী। টেকসই উন্নয়নের জন্য অবকাঠামোর পাশাপাশি সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে পানি, নদী, পরিবেশ ও প্রতিবেশকে। যখনই আমাদের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে শূন্যতা থাকবে, তখন উন্নয়ন সহযোগী বা কোম্পানিগুলো তাদের চিন্তাগুলো এখানে পুশ করবে। সেটা কিন্তু আমরা চাইনা। আমরা এডিবি, বিশ্বব্যাংক প্রকল্প শুনতে চাই না। আমরা শুনতে চাই বাংলাদেশের প্রকল্প। যেখানে আমাদের উন্নয়ন সহযোগিরা সহযোগিতা করছে। চলতি অর্থবছরে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় ২৫টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৩৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। কালবেলার সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে পানি স্যানিটেশনের সমস্যা শুরু হয়ে যাবে। রাস্তায় পানি জমবে, সেই পানি নিষ্কাশন হবে না। পয়ঃনিষ্কাশনের পানির সঙ্গে ওয়াসার পানি মিশে বাসাবাড়িতে যাবে। এমন মানবেতর পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের দিন কাটাতে হবে। কিছুদিন আগে আমি প্লাস্টিক নিয়ে কথা বলেছি সংসদে। প্লাস্টিক ব্যবহারে আমরা জনজীবন বিপর্যস্ত করছি। আমরা আস্থার সঙ্গে খোলা পানি খেতে পারি না। কিন্তু দেশের বাইরে গেলে আমরা ট্যাপ ওয়াটার খাই। ওয়াসার পানির বিল প্রয়োজনে আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে হলেও সেই পানি আমরা খাবার পানি হিসেবে খেতে পারব না? জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের যে অভিঘাত, তার সঙ্গে পানি ও স্যানিটেশন সরাসরি সম্পৃক্ত। আমাদের যে পানিসম্পদ, তার একটি সামান্য অংশ আমরা সুপেয় পানি হিসেবে ব্যবহার করি। প্রায় ৮০ ভাগ ব্যবহৃত হয় সেচ ও ইন্ড্রাস্টিতে। সুপেয় পানি নিশ্চিতে সারা দেশে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ২৬টি ওয়াটার পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় অবহেলিত গরিব মানুষকে পানি সুবিধার আওতায় আনতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তালিকা নেওয়া হচ্ছে। ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় প্রভাব পানিতে। অপচয় ও দূষণ রোধ করে পানিসম্পদ রক্ষা করা জরুরি। প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিতভাবে ইটিপি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের পরিচালক গবেষণা মাহফুজ কবীর। তিনি বলেন, প্রান্তিক মানুষ নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যায় ভুগছে। লবণাক্ততা বেশি যে এলাকায় সেখানে সংকট আরও বেশি। দেশের অন্তত ৭ কোটি মানুষ এখনো নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। নগর এলাকায় ৯৬ শতাংশ মানুষ স্যানিটেশনের আওতায় রয়েছে। তবে প্রান্তিক পর্যায়ে ৫৯ শতাংশ মানুষ এ সুবিধা পাচ্ছে। আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন ওয়াটার এইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অ্যান্ড পলিসি অ্যাডভোকেসি পার্থ হেফাজ শাইখ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক শামসুদ্দোহা, সুইডেন দূতাবাসের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার (জলবায়ু ও পরিবেশ) মোস্তাফিজুর রহমান, ইউনিসেফ বাংলাদেশের ওয়াশ স্পেশালিস্ট মনিরুল আলম, আইসিডিডিআর’বি প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ওয়াশ অ্যালায়েন্সের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর অলোক মজুমদার, ফুড অ্যান্ড ক্লাইমেন্ট হেলভেটাস বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান, ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিডব্লিউআইএস-এফএসএম সাপোর্ট সেলের সিওও ড. আব্দুল্লাহ আল মুয়ীদ, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর আহমেদ, এওসেডের নির্বাহী পরিচালক শামীম আরেফীন, সিএএনএসএর চেয়ারপারসন রাবেয়া বেগম, ডরপের সিইও এএইচএম নোমান, উপনির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান ও ডরপের ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলাম।
৩১ মার্চ, ২০২৪

৩৩৩ হটলাইনে পাওয়া অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় হটলাইন নম্বর ৩৩৩-৪ এ প্রাপ্ত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও সংস্থা সংশ্লিষ্ট অভিযোগসমূহ দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করতে হবে। এ লক্ষ্যে সিস্টেম উন্নতকরণ, নিয়মিত মনিটরিংসহ প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অভিযোগ নিষ্পত্তির পরে অভিযোগকারী সন্তুষ্ট কি না তা নিয়মিতভাবে মূল্যায়নের সুযোগ রাখতে হবে।   সোমবার (১১ মার্চ) বাংলাদেশ সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্মার্ট মন্ত্রণালয় বিনির্মাণ কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য পরিবেশমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরিবেশ দূষণ ও বনসংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর জন্য জাতীয় কল সেন্টার ৩৩৩-এ কল করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা (জিআরএস) সফটওয়্যার এ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের সঙ্গে কাস্টমাইজ করে ব্যবহার করা হবে। তিনি বলেন, মার্চ মাসের মধ্যেই ৩৩৩-৪ এ পরিবেশসংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করতে হবে। জনগণের সহজে ব্যবহারের জন্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট নতুন কাঠামোতে তৈরি করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী।  সভায় অন্যদের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ, মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) লুবনা ইয়াসমিন, যুগ্মসচিব (পরিবেশ) মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী, যুগ্মসচিব (বন) শাহানারা বেগম, বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক (প্রশাসন) আব্দুল আউয়াল সরকার-সহমন্ত্রণালয় ও আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
১১ মার্চ, ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে : পরিবেশমন্ত্রী 
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা, তাই এর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। এ লক্ষ্যে সবাইকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে শিল্পীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। বিভিন্ন প্রকার প্রদর্শনী মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে ভাবতে এবং এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অনুপ্রাণিত করবে।  শনিবার (৯ মার্চ) রাজধানীর আলোকির দ্য নেইবারহুড আর্ট স্পেস শালা গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।  পরিবেশমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে সরকার। দেশে ব্যাপকভাবে বনায়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জনগণের জন্য অভিযোজন ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সমাজের সব শ্রেণির মানুষকেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।  অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আলোকির দ্য নেইবারহুড আর্ট স্পেস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক রুক্সমিনি রিকভানা কিউ চৌধুরী, বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত নুরজাহান, শিল্পী, শিল্পকলা সমালোচক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা। প্রদর্শনীতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শিল্পী মনিকা জাহান বোস তিন চ্যানেল ভিডিও উপস্থাপনা, শাড়ির স্থাপনা শিল্প এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ পটুয়াখালীর কাটাখালী গ্রামের মহিলাদের অংশগ্রহণে পারফরম্যান্সের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ফুটিয়ে তুলেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় এলাকার বিরূপ প্রভাব বিষয়ে মন্ত্রীকে তারা অবহিত করেন। এ ছাড়াও পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ধোঁয়ায় তাদের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান।
০৯ মার্চ, ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ১৬ এনজিওর সঙ্গে পিকেএসএফের চুক্তি
বাংলাদেশের উপকূলীয় সাতটি জেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করার বিভিন্ন সেবা ও প্রযুক্তি সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করার জন্য গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের (জিসিএফ) অর্থায়নে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আরএইচএল নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বুধবার (৬ মার্চ) পিকেএসএফ ভবনে প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্বাচিত ১৬টি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়ন চুক্তি স্বাক্ষর এবং প্রকল্প ফোকাল পারসনদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নমিতা হালদার এনডিসি। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি ছাদেক আহমাদ এবং মহাব্যবস্থাপক (পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন) ড. এ.কে.এম. নুরুজ্জামান। প্রকল্পটির আওতায় উপকূলীয় সাতটি জেলার প্রায় সাড়ে তিন লাখ অধিবাসী সরাসরি উপকৃত হবে। পিকেএসএফের সহায়তায় উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী এবং কক্সবাজারে প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। পাঁচ কোটি মার্কিন ডলার তহবিল সংবলিত পাঁচ বৎসর মেয়াদি এ প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ঘাত-সহনশীল বসতবাড়ি নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ, বসতভিটা উঁচুকরণ; বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা স্থাপন, কাঁকড়া হ্যাচারি স্থাপন, জলবায়ু সহনশীল কাঁকড়া চাষ, মাচা পদ্ধতিতে ছাগল, ভেড়া পালন; বাড়ির আঙিনায় এবং কাঁকড়া ঘেরে বৃক্ষরোপণ, বনায়ন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
০৭ মার্চ, ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরব ফ্রেন্ডশিপের শিক্ষার্থীরা
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলন ও সেমিনারে দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার ফ্রেন্ডশিপ স্কুলের শিক্ষার্থীরা। আর এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশের দাবি আদায়ে বড় ভূমিকা রাখছে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম। জেলা প্রশাসক মিলানায়তনে আয়োজিত সেমিনারে এমন মন্তব্য করেছেন বক্তারা। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সেমিনারে জলবায়ু মোকাবিলায় ফ্রেন্ডশিপের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তারা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- সংস্থার শিক্ষা বিভাগ প্রধান ব্রি. জে. (অব.) ইলিয়াস ইফতেখার রসূল এবং স্বাগত বক্তব্য দেন সহকারী পরিচালক রেজা আহমেদ। চরাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক সম্পৃক্তিতে তরুণদের ভূমিকা নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ। তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফ্রেন্ডশিপ শিক্ষার্থীদের সরব হওয়া দেশের জন্য খুবই ইতিবাচক। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন-জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামছুল আলম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নবেজ উদ্দিন সরকার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ফ্রেন্ডশিপের কুড়িগ্রাম রিজিওনাল কোঅরডিনেটর আব্দুস সালাম, সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার নেয়ামাত উল্লাহ, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি, রাজু মোস্তাফিজ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফি খান,শফিকুল ইসলাম বেবু, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং জেলার বিভিন্ন সাংবাদিকবৃন্দ। বক্তারা বলেন, নিয়মিত লেখা-পড়ার পাশপাশি জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলা, প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাওয়ানো এবং সক্ষমতা বাড়ানোর কৌশল রপ্ত করছে ফ্রেন্ডশিপ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ২০২১ সাল থেকে ইউরোপের কয়েকটি দেশের মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মতবিনিময় করে আসছে তারা। ২০২৩ সালের জুনে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ‘ইউরোপিয়ান ইয়ুথ ইভেন্ট’ এবং ডিসেম্বরে দুবাইতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৮) অংশ নেয় ফ্রেন্ডশিপ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। ফ্রেন্ডশিপ কর্মকর্তারা আরও জানান, এগুলো সম্ভব হয়েছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা “মালালা ফান্ডের” সহায়তায় ২ বছর মেয়াদী ‘ডিজিটাল লিটারেসি, কানেকটিভিটি এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স- ডিসিসিপি’ প্রকল্পের মাধ্যমে।  অপরদিকে, কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক সম্পৃক্তিতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল আলম ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিনকে সম্মাননা প্রদান করেন সংস্থার শিক্ষা বিভাগ প্রধান ব্রি. জে. (অব.) ইলিয়াস ইফতেখার রসূল ।
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তহবিল জোগানের বিকল্প নেই : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় শক্তিশালী বৈশ্বিক অংশীদারত্ব, সমষ্টিগত পদক্ষেপ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পর্যাপ্ত তহবিল জোগানের বিকল্প নেই।  তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তহবিলের জোগান ক্রমেই কমে আসছে। কিন্তু বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন ও সহনশীলতা অর্জনে এ দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত তহবিল নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। জার্মানির মিউনিখে স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় বার্ষিক আন্তুর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠক হিসেবে আয়োজিত ‘কারণ ও প্রভাব : জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দ্বিমুখী লড়াই’- শীর্ষক ফোরামে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান।  কার্বন নিঃসরণে নগণ্যতম (বৈশ্বিক নিঃসরণের ০.৪৮%) দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বোচ্চ হুমকির মুখে থাকা দেশগুলোর অন্যতম উল্লেখ করে পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, একইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে একটি অনন্য উদাহরণ হিসেবেও চিহ্নিত। মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান এ ক্ষেত্রে একটি শীর্ষ পরিকল্পনা। ফোরামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক উদ্যোগের কথা জানান এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধি, দেশের উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি, উত্তরাঞ্চলে খরা, দক্ষিণাঞ্চলে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সারা দেশে বন্যার প্রকোপ মোকাবিলায় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড, বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনাসহ বাংলাদেশের নীতি এবং কর্মসূচি তুলে ধরেন। ফোরামে নরওয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী অ্যান বিথ টিভিনেরিম, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশমন্ত্রী মরিয়ম বিনতে মোহাম্মদ সাইদ আলমেইরি প্রমুখ প্যানেলিস্টরা বিশ্বব্যাপী সমন্বিত প্রচেষ্টার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। 
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বিশেষ সাক্ষাৎকার / ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে
সাবের হোসেন চৌধুরী বর্তমান সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। এর আগে তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং একাদশ জাতীয় সংসদে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদ, সরকার, রাজনৈতিক দল এবং ক্রীড়া প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। লন্ডন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে রাজনীতি এবং অর্থনীতির ওপর যৌথ সম্মাননাপ্রাপ্ত স্নাতক। ২০১৪ সালে তিনি ২৮তম আন্তঃসংসদীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষা, কপ-২৮, উন্নয়ন পরিকল্পনাসহ নানা বিষয় নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কালবেলা: কপ-২৮ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কী? সাবের হোসেন চৌধুরী: সম্প্রতি বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ শেষ হয়েছে। প্রত্যেকটা জলবায়ু সম্মেলনের পর সবার আগ্রহ থাকে এটা জানার জন্য যে, বাংলাদেশ এ সম্মেলন থেকে কী পেয়েছে। কিন্তু শুধু বাংলাদেশ কী পেয়েছে সেটা দিয়ে কপ সম্মেলন বিচার-বিশ্লেষণ করা যাবে না। জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বৈশ্বিকভাবে এবং এর সমাধানটিও বৈশ্বিকভাবেই হতে হবে। একটি একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কী পেয়েছে তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো সারা পৃথিবী কী পেয়েছে। কারণ পৃথিবী যদি জলবায়ু সম্মেলন থেকে ভালো কিছু পায় তাহলে সেই ভালোর অংশীদার বাংলাদেশও হবে। কপ সম্মেলনে আমরা যে দরকষাকষি করি, যে আলোচনা করি বা কথা বলি তা একক দেশ হিসেবে নয়। জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক প্রক্রিয়ার মধ্যে বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে। সেই গ্রুপগুলোর মধ্যে আমরা এলডিসি গ্রুপে অবস্থান করছি। এলডিসি হচ্ছে জি-৭৭ এবং চীনের সমন্বয়ে একটি বৃহৎ গ্রুপ। যে কোনো সম্মেলনের আগে আমাদের প্রথম কাজ, বাংলাদেশের চাহিদা এবং অগ্রাধিকারগুলো যেন এলডিসি গ্রুপের প্রায়োরিটির মধ্যে চলে আসে সেটা নিশ্চিত করা। গত পরিবেশ সম্মেলনে আমরা এ কাজটি করতে পেরেছি। আমাদের একটি প্রস্তাব ছিল লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড গঠন। এ ফান্ড গঠনের প্রস্তাব সর্বপ্রথম বাংলাদেশই করে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন। এরপর রাজনৈতিকভাবে এ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয় এবং আমরা এক বছরের মধ্যে সেই তহবিল থেকে অর্থ পাওয়া শুরু করি। লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড থেকে এখন পর্যন্ত আমরা ৭০০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছি। যদিও এ অর্থ চাহিদার তুলনায় খুবই কম, তারপরও যে প্রক্রিয়াটি শুরু হলো সেটাই একটি বড় স্বীকৃতি। প্রধানমন্ত্রীর আরও একটি প্রস্তাব ছিল, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এ প্রস্তাবটিও এখন জলবায়ু সম্মেলনের একটি অন্যতম দাবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্টে বলা হয়েছিল বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি বা তার নিচে রাখতে হবে। সেখানে আমরা প্রস্তাব করেছিলাম ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে। আমাদের প্রস্তাবটিই গৃহীত হয়। আমাদের সবচেয়ে বড় চাহিদা হলো অ্যাডাপটেশন ফান্ড। আমাদের প্রতিবছর ৮ থেকে ৯ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হচ্ছে শুধু অ্যাডাপটেশনের জন্য। সরকার তার সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। গত অর্থবছরে আমাদের জাতীয় বাজেট থেকে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছিল অ্যাডাপটেশনের জন্য। অর্থাৎ ২৫টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়। এরপরও আমরা সম্পূর্ণ চাহিদা মেটাতে পারছি না। সুতরাং আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যে ক্ষতির স্বীকার হচ্ছি, সেই ক্ষতিপূরণ কীভাবে আসবে সেটি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। কপ সম্মেলনে দুটি বিষয় থাকে। প্রথম বিষয়টি হলো, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরবর্তী বিষয়টি হলো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সবসময়ই আমরা এক ধরনের ঘাটতি লক্ষ করেছি। উন্নত দেশগুলো যে অঙ্গীকার করে তারা সেই অঙ্গীকার রক্ষা করে না। অনেক আগেই তারা বলেছিল, জলবায়ু তহবিলে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেবে। সেই ১০০ বিলিয়ন ডলারের ৫০ বিলিয়ন ডলার যাবে অ্যাডাপটেশন ফান্ড এবং ৫০ বিলিয়ন ডলার হবে মিটিগেশন ফান্ডে। কিন্তু তহবিলের প্রায় সম্পূর্ণটাই অবাস্তবায়িত রয়েছে। বলা হয়েছিল অ্যাডাপটেশনের অর্থ অনুদান হিসেবে আসবে কিন্তু সেটাও হয়নি। অ্যাডাপটেশনের অর্থ আসছে ঋণ হিসেবে। এসবের বাইরেও আরও অনেক বিষয় রয়েছে। সবকিছু মিলে আমরা কপ-২৮-এ একটি নতুন পথের কথা বলছি। এবারের জলবায়ু সম্মেলন অর্থাৎ কপ-২৮-এ প্রথমবারের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির বিষয়টি এসেছে। আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাব। এ ছাড়া আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ সিদ্ধান্তগুলো আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারব সেটাই আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ। কালবেলা: জলবায়ু তহবিলের কী অবস্থা? সাবের হোসেন চৌধুরী: অনেক দেশ এবং অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজস্ব জলবায়ু তহবিল নিয়ে এগিয়ে আসছে। যেমন এডিবি, বিশ্বব্যাংক, ব্রিটেন সরকারের তহবিল, ফ্রান্সের তহবিল। এসব তহবিলকে একটি একক প্ল্যাটফর্মে আনা যায় কি না, তার জন্য চিন্তা করা হচ্ছে। ছোট ছোট জলবায়ু তহবিলগুলো একত্রিত হলে এ তহবিলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আমাদের টার্গেট হচ্ছে আগামী পাঁচ বছরে এ ধরনের একটি উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিবছর যদি আমরা ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আনতে পারি, তাহলে আমাদের এখনকার অ্যাডাপটেশনের ঘাটতি পূরণ করতে পারব। আমি আশা করব বর্তমান সরকার এ বিষয়টাকে অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করবে। কালবেলা: বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ পরিস্থিতি জলবায়ু ফান্ডের অর্থ দিয়ে মোকাবিলা করা সম্ভব কি? সাবের হোসেন চৌধুরী: আমরা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব দেখছি তা বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির ফলাফল মাত্র। ১.১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে যদি আমরা এ ধরনের সংকটে পড়ি তাহলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে আমরা কী ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়ব, তা চিন্তা করাও কঠিন। বর্তমানে সারা বিশ্ব যেভাবে তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর কথা বলছে, সেই অনুযায়ী চললে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২০৫০ সাল নাগাদ ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। আমাদের প্রস্তাবিত ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিও সুখকর নয়। এখানেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হব আমরা। আর তাপমাত্রার বৃদ্ধি যদি এর থেকেও বেশি হয়ে যায় তাহলে সবকিছুই লস অ্যান্ড ড্যামেজের মধ্যে চলে যাবে। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিভিন্ন এলাকায় অস্বাভাবিক বন্যা হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বের অনেক দেশেই দেখা যাচ্ছে এবং আরও দেখা যাবে। আমরা উন্নত বিশ্বের দেশগুলোকে এ কথাটাই বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে শুধু আমরা নয়, তারাও ভুক্তভোগী হবে। এজন্য পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সর্বপ্রথম তাপমাত্রা কমানোর বিষয়টিতে নজর দিতে হবে। কালবেলা: কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংকটের পেছনে আমাদের নিজেদের তো দায় রয়েছে... সাবের হোসেন চৌধুরী: অনেক ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদেরও অনেক কিছু করার রয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের কোনো সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিকভাবে আমরা যে কথাগুলো বলি, যে কাজগুলোর জন্য আমরা উন্নত বিশ্বকে দায়ী করি, সেই একই কাজ বাংলাদেশে আমরা করতে পারি না। আমরা যদি সেই একই কাজ করি তাহলে সেটা দুঃখজনক হবে। আন্তর্জাতিকভাবে আমরা বলি, যে দূষণ করছে তাকেই দূষণের দায়িত্ব নিতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে বলা সেই কথাটি আমাদের বাংলাদেশেও নিশ্চিত করতে হবে। শুধু দক্ষিণাঞ্চলে চিংড়ি চাষের বিষয়টি নয়, বরং আরও অনেক পরিবেশ দূষণের বিষয় রয়েছে। সাভারে আমাদের চামড়া শিল্প রয়েছে, যেটা আমরা হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তর করেছি। তারপরও সমস্যার সমাধান হয়নি। সুতরাং নিজের দেশে পরিবেশ সুরক্ষায় আমাদের অনেক বেশি যত্নশীল ও আরও সচেতন হতে হবে। আগামী ৫০ বছর বাংলাদেশের চেহারা কী হবে সেটা অনেকটা নির্ভর করছে আমরা উন্নয়নের মধ্যে টেকসই ধারাটা কীভাবে বজায় রাখব তার ওপর। শুধু উন্নয়ন করলে হবে না, সেটা টেকসই উন্নয়ন হতে হবে। উন্নয়ন করতে গেলে প্রথমে পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হতে হবে, জীববৈচিত্র্য এবং বন রক্ষা করতে হবে। উন্নয়নের নামে বনভূমি ধ্বংস করা যাবে না। একটি সংরক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে রেললাইন বা রাস্তা নির্মাণ করা যাবে না। কালবেলা: আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তর রয়েছে। তারা কি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে? সাবের হোসেন চৌধুরী: আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের মতো করে চেষ্টা করে। সেখানে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। আমরা সেখানে নতুন অর্গানোগ্রাম নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে বদ্ধপরিকর। তারপরও কখনো কখনো দেখা যায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই আইন ভঙ্গ করে। আমরা যদি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেই আইন সম্পর্কে সচেতন করতে না পারি, তাহলে সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে আমরা পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের দায়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারব না। আমি চামড়া শিল্পের কথা বললাম যেটা সরকারি সংস্থা বিসিকের অধীনে। সরকারি সংস্থাগুলোকে আগে আইন মেনে চলতে হবে। সুন্দরবন এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চলও কোনো না কোনো সরকারি সংস্থার অধীনে। কালবেলা: বৈশ্বিক পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে বাংলাদেশ যে সংকটজনক অবস্থার মুখে দাঁড়িয়েছে, তার থেকে উত্তরণের কোনো কার্যকর পরিকল্পনা রয়েছে কি? সাবের হোসেন চৌধুরী: আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে এবং এখন আমাদের কাজ হলো সেই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা। আমরা যখন পরিকল্পনা করি তখন তা হয় খুবই আকর্ষণীয়, প্রেজেন্টেশনগুলোও ভালো হয়। যেমন আমাদের মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান রয়েছে, যেটা অসাধারণ একটি উদ্যোগ। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে চাই। ভালনারেবিলিটি থেকে রেজিলিয়ন্স, রেজিলিয়ন্স থেকে আমরা সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা যদি এ ধরনের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আমরা অনেক সমস্যা অ্যাড্রেস করতে পারব। দ্বিতীয়ত, আমাদের যেসব পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে এক ধরনের সমন্বয় থাকতে হবে। আমাদের এনবিসি রয়েছে, ন্যাপ রয়েছে, আমাদের ডেল্টা প্ল্যান রয়েছে। এসব প্ল্যানের মধ্যে অনেক ইন্টারভেনশনের কথা রয়েছে। শুধু ন্যাপের মধ্যে ১১৩টি ইন্টারভেনশন রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাজাতে হবে যে কোনটা আমরা আগে করব। এ সমন্বয়টাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা যে অর্থ ব্যয় করি সেটা শুধু কত টাকা বরাদ্দ হলো আর কত টাকা ব্যয় করলাম তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। টাকা ব্যয় করে আমরা কী ধরনের ফল পেলাম সেটা যাচাই করতে হবে। আমরা যখন কাজ করি তখন মান নিয়ে চিন্তা করি না। পরিকল্পনা গ্রহণ করার সময় আমাদের পরিষ্কার করতে হবে যে, এতটুকু ফলাফল নিশ্চিত করা চাই। অর্থাৎ পরিকল্পনার মধ্যে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও ফলাফল যাচাই করলেই শুধু লক্ষ্যটি কার্যকর হয়। কালবেলা: আপনারা টানা চতুর্থবারের মতো সরকারের দায়িত্বে এসেছেন। এবার আপনারা কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেবেন? সাবের হোসেন চৌধুরী: নির্বাচনে আমাদের যে ম্যানুফেস্টো ছিল সেটাই আমাদের অঙ্গীকার। সংবিধানের ১৮-এর ক ধারায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয়ে বলা হয়েছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। এ ধারাটি রয়েছে সরকার পরিচালনার মূলনীতিগুলোর মধ্যে। অর্থাৎ বাংলাদেশে আমরা যেই নীতি গ্রহণ করি না কেন, যে ধরনের বরাদ্দ দিই না কেন, সবকিছুকেই এই ১৮-ক এর চশমা দিয়ে দেখতে হবে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য কিছু মৌলিক অধিকারের কথা বলে গিয়েছিলেন। সেগুলো আমাদের সংবিধানে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। এ মৌলিক অধিকারগুলোকে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আমি উন্নয়ন বলতে শুধু মেগা প্রজেক্টকে বুঝি না। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল ও সমৃদ্ধ করতে মেগা প্রজেক্টের প্রয়োজন রয়েছে। তবে আমাদের সেই ধরনের উদ্যোগের কথা চিন্তা করতে হবে, যা সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমাদের সেই ধরনের প্রকল্প নিয়ে ভাবতে হবে, যা সাধারণ মানুষের জীবনকে আরেকটু গ্রহণযোগ্য করে তোলে। সাধারণ মানুষের চাহিদার দিকে আমাদের যত্ন দিতে হবে। মেগা প্রজেক্টের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়েও দৃষ্টি দিতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি, মাদক এগুলোকে নির্মূল করতে হবে। নির্মূল করতে না পারলেও যথাসম্ভব কমাতে হবে। আমাদের কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিবছর চাকরির বাজারে নতুন করে ২০ লাখ যুবক প্রবেশ করছে। তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী করতে যা যা করা দরকার তার সবই করতে হবে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলি। সেখানে আমরা মূলত আধুনিক প্রযুক্তিকে পুঁজি করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করতে চাই। আমরা চাই প্রতিটি মানুষ যেন এই এগিয়ে যাওয়ার সুফল ভোগ করে। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
২২ জানুয়ারি, ২০২৪
X