কপ-২৮ জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে ২৮তম জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ (কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ)-এর ২৮তম আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৪ দিনব্যাপী এ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন। জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ এর প্রথম সপ্তাহের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো এ পর্যন্ত জলবায়ু ফান্ডের ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থায়ন পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছে, যা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এমনই ঘোষণা দিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরিবেশ মন্ত্রী এবং জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ এর প্রেসিডেন্ট ড. সুলতান আল জাবের। এই ঘোষণা প্রথমবারের মতো খাদ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার রূপান্তর, নবায়নযোগ্য শক্তি ও শক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ভারী শিল্প থেকে কার্বনমুক্তকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। দক্ষিণের দেশগুলোতে জলবায়ু সহায়তা বৃদ্ধির জন্য এবং ব্যক্তিগত অর্থায়নের গতি বৃদ্ধির জন্য আলটেরা নামক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটি IMF এর SDRs তহবিলে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পানির সমস্যা দূরীকরণের জন্য আরও ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এর ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক জলবায়ু সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের জন্য বাৎসরিক ৯ বিলিয়ন মার্কিং ডলার সহায়তা বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়াও গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (GCF) সমৃদ্ধ করতে আরও ৩.৫  বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ অর্থ যুক্ত করার ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে যুক্ত হয়েছে ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, খাদ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, আরবান ক্লাইমেট একশনের জন্য ৪৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ত্রাণ-পুনঃবাসন জন্য ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারের গতি বাড়ানোর  জন্য ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, মিথেন নির্গমন হ্রাসের জন্য ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের জন্য ৫৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছে। জলবায়ু জরুরি অবস্থার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ধনী দেশগুলো এখন পর্যন্ত লস এবং ড্যামেজ তহবিলে মোট ৭২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে প্রতিবছর উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে যে পরিমান অপূরণীয় অর্থনৈতিক এবং অনর্থনৈতিক ক্ষতি হয় তার মাত্র ০.২% বা এরও কম। জলবায়ু ন্যায়বিচার নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞদের মতে, লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড অবশ্যই অনুদান হতে হবে এটি কোনো ঋণ নয়। কারণ উন্নত দেশগুলোর সেচ্চাচারী দূষণের কারণে অনুন্নত দেশগুলোর ভুক্তভোগী হচ্ছে। তবে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের অর্থের প্রকৃতি ও সময় অস্পষ্ট থাকে বলে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর যাচ্ছে না। কপ-২৮ এর শেষ সপ্তাহের দিনগুলোতে বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন কমানোর জন্য একটি খসড়া চুক্তি তৈরি করা হয় যাকে বিশেষজ্ঞগণ ‘অতি অপর্যাপ্ত’ এবং ‘অসংলগ্ন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের ধারণা এটি কখনই বিশ্বকে বিপজ্জনক জলবায়ু পরিবর্তনের থেকে রক্ষা করতে পারবে না। ১০ দিনের আলোচনার পরে শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতিত্বে যে খসড়া চুক্তিপত্রটি পেশ করা হয়েছিল তা বেশিরভাগ জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তবে অন্যরা জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন হ্রাস করার বিষয়টি উল্লেখসহ খসড়াটির উপাদানগুলোকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিছু দেশ হতাশা প্রকাশ করছে কারণ খসড়াতে বলা হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানির সম্পূর্ণ ফেজ-আউটের প্রয়োজন নেই। কপ-২৮ প্রেসিডেন্সি সোমবার সন্ধ্যায় একটি খসড়া পাঠ্য প্রকাশ করেছে, যেখানে ‘জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এবং উৎপাদন উভয়ই হ্রাস করার কথা বলা হয়েছে এবং বিজ্ঞানের সাথে তাল মিলিয়ে একটি ন্যায্য, সুশৃঙ্খল এবং ন্যায়সঙ্গত উপায়ে ২০৫০ সালের আগেই বা তার কাছাকাছি সময়ে নেট শূন্য অর্জন করা যায়।’ খসড়াটি জীবাশ্ম জ্বালানির ‘ফেজ-আউট’ বা ‘ফেজ-ডাউন’ করার জন্য অত্যন্ত বিতর্কিত আহ্বান এড়িয়ে যাচ্ছে, যা দুবাইতে ১৯০টিরও বেশি দেশের বৈঠকের মধ্যে গভীর মতবিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং জাপানসহ দেশগুলোর একটি দল বলেছে যে তারা ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর জন্য ‘মৃত্যুর সার্টিফিকেট’ এর ‘সহস্বাক্ষরকারী’ হবে না এবং এটি মোকাবিলা করার জন্য কপ-২৮ শীর্ষ সম্মেলনে একটি শক্তিশালী চুক্তির দাবি করেছে। জীবাশ্ম জ্বালানি দিয়ে জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করা কখনই সম্ভব হবে না। তাই সুশীল সমাজগোষ্ঠী এবং বিজ্ঞানীরা জলবায়ু চুক্তির দ্বিতীয় খসড়া পত্রে জীবাশ্ম জ্বালানিকে ‘ফেজ-আউট’ করার আহ্বান জানিয়েছেন।   জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, তাপপ্রবাহসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে গেছে। এসব দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ও নেতৃত্বের প্রশংসায় তাকে ‘ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার’ পুরস্কার দেওয়া হয়। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ১ ডিসেম্বর দুবাইতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৮) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি রাষ্ট্রদূত ডেনিস ফ্রান্সিস এবং আইওএম মহাপরিচালক অ্যামি পোপের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।  জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিশ্বকে একটি নিরাপদ ও উন্নত স্থান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) কপ-২৮ এর রেসিলিয়েন্স হাবে আয়োজিত এক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন ও সহনশীলতা বিনির্মাণে বাংলাদেশের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ইনোভেশন ইন ডেভেলপিং ফাইন্যান্স ক্যাটাগরিতে ‘গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ)’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বাংলাদেশ। লোকাল লিড অ্যাডাপটেশন (এলএলএ) ক্যাটাগরিতে এ চ্যাম্পিয়নশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের বাস্তবায়ন করা স্থানীয় সরকার ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক) প্রকল্প যেটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), সুইডেন, ডেনমার্ক, জাতিসংঘের মূলধন উন্নয়ন তহবিল (ইউএনসিডিএফ) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশের ৯টি প্রধান জলবায়ু ও ঝুঁকিপূর্ণ জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ এই প্রকল্পের আওতায় উপকৃত হয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হওয়ার জন্য ৪ লাখেরও বেশি পরিবারের ক্ষমতায়ন করেছে। জিসিএ অ্যাওয়ার্ডস বিজয়ীদের জন্য কেবল তাদের অর্জনকেই স্বীকৃতি দেয় না বরং স্থানীয় পর্যায়ের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার সম্মিলিত প্রচেষ্টাকেও বিশ্বের কাছে তুলে ধরে। এই ধরনের পুরস্কারগুলো টেকসই ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে জলবায়ুকে সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে অনন্য ভূমিকা পালন করবে।   এ ছাড়াও বাংলাদেশ গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড, অ্যাডাপ্টেশন ফান্ড, স্পেশাল ক্লাইমেট চেঞ্জ ফান্ড ইত্যাদি বেশকিছু ফান্ডের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। এসব ফান্ড পেলে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উদ্বাস্তু সমস্যাটিকে রোধ করতে বিভিন্ন গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে পারবে এবং বিভিন্ন মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে। জলবায়ু উদ্বাস্তুদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন নিশ্চিত ও ত্বরান্বিত করতে পারবে। যে সমস্ত মানুষ তাদের আবাসস্থল ছেড়ে অনত্র যেতে বাধ্য হচ্ছে তাদের পর্যাপ্ত সহায়তা নিশ্চিত এবং তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূর্ণ করতে পারবে।  . লেখক : অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বিভাগীয় প্রধান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। যুগ্ম-সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। চেয়ারম্যান, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।  
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ২৮-এর প্রথম সপ্তাহের লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের অর্জন
জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন-কপ২৮ এর প্রথম সপ্তাহের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো এই পর্যন্ত জলবায়ু ফান্ডের ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থায়ন পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, যা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এমনি ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরিবেশমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন-কপ২৮ এর প্রেসিডেন্ট ড. সুলতান আল জাবের। এই ঘোষণা প্রথমবারের মতো খাদ্য ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার রূপান্তর, নবায়নযোগ্য শক্তি ও শক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ভারী শিল্প হতে কার্বনমুক্তকরণের জন্য ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। দক্ষিণের দেশগুলোতে জলবায়ু সহায়তা বৃদ্ধির জন্য এবং ব্যক্তিগত অর্থায়নের গতি বৃদ্ধির জন্য আলটেরা নামক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটি IMF এর SDRs তহবিলে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পানির সমস্যা দূরীকরণের জন্য আরও ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক জলবায়ুসংশ্লিষ্ট প্রকল্পের জন্য বাৎসরিক ৯ বিলিয়ন মার্কিং ডলার সহায়তা বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (GCF) সমৃদ্ধ করতে আরও ৩.৫  বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ অর্থ যুক্ত করার ঘোষণা করা হয়েছে; স্বাস্থ্য খাতে যুক্ত হয়েছে ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; খাদ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; আরবান ক্লাইমেট একশনের জন্য ৪৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ত্রাণ-পুনর্বাসন জন্য ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আশ্বাস পাওয়া গেছে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারের গতি বাড়ানোর  জন্য ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; মিথেন নির্গমন হ্রাসের জন্য ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের জন্য ৫৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছে। জলবায়ু জরুরি অবস্থার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ধনী দেশগুলো এখন পর্যন্ত লস এবং ড্যামেজ তহবিলে মোট ৭২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে প্রতিবছর উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে যে পরিমান অপূরণীয় অর্থনৈতিক এবং অনর্থনৈতিক ক্ষতি হয় তার  মাত্র ০.২% বা এরও কম। জলবায়ু নীতি ও গবেষণা নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা হলো- দ্যা লস অ্যান্ড ড্যামেজ কোলাবোরেশন। সম্প্রতি তাদের একটি রিপোর্টে দেখা যায় যে, একটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাৎসরিক গড়ে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ বা আরও বেশি লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলের দরকার। যেখানে জলবায়ু জনিত ক্ষতির পরিমাণ বছরে ১০০ থেকে ৫৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রাথমিকভাবে কপ২৮ এর প্রথমদিকে কয়েকটি দেশ প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের প্রতিশ্রুতি করলেও পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকটি দেশ এতে যুক্ত হচ্ছে।  ইতোমধ্যে কপ২৮ আয়োজনকারী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত এককভাবে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; ইতালি এবং ফ্রান্স পৃথকভাবে ১০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; যুক্তরাজ্য ৫০.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; সবচেয়ে দূষণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট ১৭.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; জাপান ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; জার্মানি এককভাবে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং জার্মানিসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ২৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; ডেনমার্ক ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; আয়ারল্যান্ড ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের সঙ্গে ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; নরওয়ে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; কানাডা সর্বনিম্ন ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং স্লোভেনিয়া ১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রায় ২০০০ জলবায়ু গ্রুপের জোট ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক রাজনৈতিক কৌশলের প্রধান হারজিৎ সিং বলেছেন, লস এন্ড ড্যামেজ তহবিল গঠনে ৩০ বছর লেগেছে, প্রাথমিক প্রতিশ্রুতিতে ৭০০ মিলিয়ন ডলার বিশাল প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য, যেখানে বার্ষিক শত শত বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ধনী দেশগুলোর বরাবরই উন্নয়নশীল দেশগুলোর দুর্দশার প্রতি উদাসীন বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যারা ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে বড় দূষণকারী।    জলবায়ু ন্যায়বিচার নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞদের মতে, লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড অবশ্যই অনুদান হতে হবে এটি কোনো ঋণ নয়। কারণ উন্নত দেশগুলোর স্বেচ্ছাচারী দূষণের কারণে অনুন্নত দেশগুলোর ভুক্তভোগী হচ্ছে। তবে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের অর্থের প্রকৃতি ও সময় অস্পষ্ট থাকে বলে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর যাচ্ছে না।  অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার : বিভাগীয় প্রধান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, যুগ্ম-সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং চেয়ারম্যান, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

জলবায়ু সম্মেলন : জরুরিভিত্তিতে প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিলের বকেয়া পরিশোধের দাবি
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী দেশগুলো প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। আজ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর নাগরিক সমাজ ধনী দেশগুলোকে বিগত বছরগুলোর সেই বকেয়া পরিশোধের দাবি জানান। পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখার জন্য সব দেশকে বাস্তবসম্মত জাতীয় লক্ষ্য নির্ধারণের দাবিও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।  দুবাইয়ের কপ ২৮ জলবায়ু সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘LDC’s & MVC Peoples’ Expectations and CoP 28’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন মো. জিয়াউল হক মুক্তা (সিএসআরএল), মো. শামসুদ্দোহা (সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট), শামীম আরফিন (এওএসইডি), অ্যাটলে সোলবার্গ (প্ল্যাটফর্ম অন ডিজাস্টার ডিসপ্লেসমেন্ট-পিডিডি), মিসেস সামাহ হাদিদ (নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল-এনআরসি), এবং মিস লিডি ন্যাকপিল (এশিয়া প্যাসিফিক মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এপিএমডিডি)সহ আরও অনেকে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইক্যুইটিবিডি’র আমিনুল হক।  আমিনুল হক প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, এই চুক্তিতে কার্বন উদগীরণ কমানোর মনিটরিং এবং রিপোর্টিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে পর্যায়ক্রমে শূন্য নির্গমন লক্ষ্য অর্জনের পিছনে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলে উল্লেখ করায় তিনি কপ ২৮ প্রেসিডেন্সির সমালোচনা করেন।  তিনি আয়োজকদের পক্ষ থেকে কয়েকটি সুনর্দিষ্ট  দাবি তুলে ধরেন, সেগুলো হলো: (১) উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক তথ্য ও বিশ্লেষণ অনুসরণ করতে হবে এবং ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে, (২) তাদের অবশ্যই ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের ক্রমবর্ধিত বকেয়া পরিশোধ করতে হবে, (৩) ডিসকোর্স অব নিউ অ্যান্ড কালেক্টিভ ফাইন্যান্সকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে এবং ঋণবহির্ভূত পদ্ধতি দিয়ে তৈরি করতে হবে, (৪) ন্যাপ বা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনাকে হতে হবে গ্লোবাল গোল অন এডাপটেশনের অংশ।   মো. শামসুদ্দোহা প্রশমনের বর্তমান প্রক্রিয়াটিকে আত্মঘাতী বলে অভিহিত করেন এবং তিনি বাধ্যতামূলক সময়সীমাসহ দীর্ঘমেয়াদি প্রশমন কৌশল প্রণয়নের গুরুত্বের ওপর জোর দেন, যা কম কার্বন নির্গমনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই দায়বদ্ধতার আওতায় নিয়ে আসবে এবং যাতে ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য নির্গমন নিশ্চিত করার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থাকবে। তিনি সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক ফলের ভিত্তিতে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যের সামঞ্জস্যপূর্ণ জাতীয় পরিকল্পনা নিশ্চিত করার দাবি জানান।     লিডি ন্যাকপিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পাবলিক ফাইন্যান্স সংকটের আবর্তে আছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা এবং এগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী ধনী দেশগুলোকে অবশ্যই বেসরকারি খাতের ওপর তাদের অত্যধিক নির্ভরতা বন্ধ করতে হবে। এই নির্ভরতা ধারাবাহিকভাবে খুব কমই কাজে লাগছে এবং প্রায়ই বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। আমাদের জরুরিভিত্তিতে সরকারি অর্থায়নের ওপর নজর দিতে হবে যা ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্য এবং সবার মঙ্গলকে অগ্রাধিকার দিবে। তিনি বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় কার্যকর কোনো পরিবর্তন ছাড়া ‘বিলিয়ন থেকে ট্রিলিয়ন’ মন্ত্র সম্পূর্ণ অবাস্তব।  অ্যাটল সোলবার্গ বাস্তচ্যুতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন, কারণ এটি বিশ্বজুড়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য বিরাট সমস্যা তৈরি করছে। তিনি বলেন, আমরা এমন কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানাই যা দেশগুলোকে স্থানীয়ভাবে এবং জাতীয়ভাবে বাস্তুচ্যুতদের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে জলবায়ুজনিত বাস্তুচ্যুতির সমস্যা মোকাবিলায় সক্ষম হবে। শামীম আরফিন বলেন, অর্থের যথেষ্ট জোগান আছে, শুধু সেই অর্থকে দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যয় করতে বিশ্বনেতাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। সামাহ হাদিদ মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা, এবং এসব অঞ্চলে সম্পদ ও অর্থায়নের অভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি জলবায়ু প্রভাব মোকাবিলায় দুর্বল দেশগুলোকে অভিযোজনে সক্ষম করতে এবং জলবায়ু সহিষ্ণু করে তুলতে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।  জিয়াউল হক মুক্তা গত ০৩ ডিসেম্বর জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বিষয়ে কপ প্রেসিডেন্সির বিবৃতির জোরালো বিরোধিতা করার আহ্বান জানান কপে অংশ নেওয়া সব রাষ্ট্রপক্ষকে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্সির এই বিবৃতি জলবায়ু বিজ্ঞান এবং টঘঋঈঈঈ গঠনের মৌলিক প্রেক্ষাপটের সাথে সাংঘর্ষিক।  
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

দুবাই জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ জনস্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বারোপ
জলবায়ু নিয়ে শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৮ এর চতুর্থ দিনে জনস্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে স্থূলতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও অপুষ্টিজনিত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার, গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে।  ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা (এমইএনএ) অঞ্চলে প্রমাণভিত্তিক প্রতিরোধ, চিকিৎসা এবং স্থূলতার ব্যবস্থাপনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবী এবং আইনজীবীদের একটি জোট গঠন করা হয়েছে। সম্মিলিত পদক্ষেপের জরুরি প্রয়োজনের ওপর জোর দিয়ে, এমইএনএ সংস্থাগুলো এই অঞ্চলের স্থূলতার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য ২০২৪ সালের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ ওবেসিটি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফেডারেশন ভবিষ্যদ্বাণী করে যে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় চার শিশুর মধ্যে একজন (৬৪ মিলিয়ন শিশু) এবং তিনজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন (২১২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক) ২০৩৫ সাল নাগাদ স্থূলতার সাথে বসবাস করবে। এমইএনএ জোট ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে অতিবিলম্বে সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানানো হবে।  পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতার ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি, ২০২০ সালে আনুমানিক ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০৩৫ সালের মধ্যে দ্বিগুণ থেকে ১৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দ্বারা অনুমোদিত স্থূলতা নীতি এবং সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয় এই জোট। কপ-২৮-এ এমইএনএ জোটটি বিশ্ব নেতাকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য অর্থায়নের একটি বৃহত্তর অংশ বরাদ্দ করার আহ্বান জানায়।  সম্মেলনে ১১৫টিরও বেশি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষমতা তিনগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে - যদিও চীন এবং ভারত এখনও এই ব্যাপারে কোনো মতামত প্রকাশ করেনি। অস্ট্রেলিয়া ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী শক্তির ক্ষমতা তিনগুণ করার প্রতিশ্রুতিকে সমর্থন করেছে। কিন্তু জলবায়ুমন্ত্রী ক্রিস বোয়েন কপ-২৮ এর গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বলেন, কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে চাপ প্রয়োগ করবে কি না তা জানাতে অস্বীকার করেন। অস্ট্রেলিয়া আশাবাদী যে বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি হবে, কিন্তু দেশটিকে এখনও একটি আন্তর্জাতিক পিছিয়ে পড়া হিসেবে দেখা হয়। অস্ট্রেলিয়া কপ-৩১ আয়োজনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তবে কখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা জানা যায়নি।  চীন ও ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেল ও গ্যাস উৎপাদনের জন্য ২০১৫ সালের পর থেকে বিশ্বব্যাপী গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনে সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ করছে। অথচ তারা প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছিল। ক্লাইমেট ট্রেস প্রকল্পের তথ্য অনুসারে, ১০০ টিরও বেশি দেশ গ্রিন হাউস গ্যাস কমানোর প্রতিশ্রুতিতে স্বাক্ষর করা সত্ত্বেও কার্বন-ডাই অক্সাইডের চেয়ে ৮০ গুণ বেশি শক্তিশালী গ্রিন হাউস গ্যাস মিথেনের নির্গমন বেড়েছে। প্যারিস চুক্তির অধীনে বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও দেশগুলো এবং এদের অন্তর্ভুক্ত সংস্থাগুলো তাদের নির্গমনের সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ১.৫ ডিগ্রি সে. এর ওপরে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমাবদ্ধ করার লক্ষ্য অর্জনের জন্য ১৯০টিরও বেশি দেশ কপ-২৮ আলোচনা করছেন।  এ ছাড়াও বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উচ্চ তাপমাত্রার সবচেয়ে খারাপ প্রভাব থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো মিথেনের নিঃসরণ হ্রাস করা। গবেষণার অনুসারে, মিথেন এবং অন্যান্য স্বল্পস্থায়ী দূষণকারীর হ্রাস বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি ০.৩ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত কমাতে পারে। নতুন তথ্য দেখা যায়, ২০২১ এবং ২০২২ সালের মধ্যে মিথেন নির্গমন বৃদ্ধির একটি বড় অংশের জন্য দায়ী চীনের কয়লা খনি। চীন প্রথমবারের মতো তার জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনায় মিথেন অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি নতুন প্রতিশ্রুতি স্বাক্ষর করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মিথেন কমানোর উপায় নির্ধারণে সহযোগিতা করছে। কপ-২৮ এ ৫০টিরও বেশি তেল ও গ্যাস কোম্পানি একটি ‘ডিকার্বনাইজেশন এক্সিলারেটর’-এ সাইন আপ করেছে যার মাধ্যমে তারা তাদের কার্যকলাপের ফলে জলবায়ুর ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ে সেটি কমিয়ে দেবে, যদিও তারা তাদের উৎপাদন কমানোর প্রতিশ্রুতি দেয়নি।   এইদিকে, কপ-২৮ এর সভাপতি সুলতান আল জাবের এক বক্তব্যে, দাবি করেছেন যে কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই যা ইঙ্গিত করে যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করলেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সে. এ সীমাবদ্ধ করা যাবে। কয়লা, তেল এবং গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করলে বিশ্ব গুহায় বসবাসকারী মানব সভ্যতায় ফিরে যাবে।  সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরাসহ সব শ্রেণির প্রতিনিধি বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন এবং নিজ দেশসহ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।  অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার : বিভাগীয় প্রধান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, যুগ্ম-সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং চেয়ারম্যান, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) 
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, দুবাই থেকে / দুবাই জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ এর তৃতীয় দিন
বর্তমান প্রজন্মের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম জলবায়ু পরিবর্তন। এটি আমাদের মানব অস্তিত্বের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মূলত বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা এবং লবণাক্ততা প্রভৃতি। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস’ (কপ-২৮)-এর এবারের আসর গত ৩০ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের এক্সপো সিটিতে উদ্বোধন করা হয়।  জাতিসংঘের কপ-২৮ জলবায়ু সম্মেলনের তৃতীয় দিনে বিভিন্ন দেশের নেতাদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। তৃতীয় দিনের আলোচনায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে- এর মধ্যে নতুন লস এবং ড্যামেজ তহবিল, কার্বন নির্গমন, মিথেন গ্যাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানি অন্যতম বিষয়।  সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট সমাধানে ‘আলটেরা তহবিল’ নামের ৩ হাজার কোটি ডলারের তহবিল গঠনের ঘোষণা দেন। কপ-২৮ সম্মেলনের সভাপতি সুলতান আল জাবের এ নতুন তহবিল বোর্ডের প্রধান হবেন। তারা আশা করছেন নতুন তহবিলটি ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ২৫ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগে সক্ষম হবে এবং একটি ন্যায্য জলবায়ু অর্থায়ন ব্যবস্থা তৈরি করতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সামনের দিকে অগ্রসরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। একই সাথে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য আরও বেশি তহবিল পাওয়ার সুযোগ তৈরিতে জোর দেবে আলটেরা নামের তহবিলটি।    যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ুবিষয়ক দূত জন কেরি নেট শূন্য লক্ষ্য পূরণের জন্য ২২টি দেশ একযোগে ২০৫০ সালের মধ্যে পারমাণবিক শক্তি তিনগুণ করার আহ্বান জানিয়েছে। এক বক্তব্যে কেরি বলেন, পারমাণবিক শক্তি অন্যান্য শক্তির উত্সের জন্য একটি সুস্পষ্ট বিকল্প হতে চলেছে। বিজ্ঞান এবং তথ্য-প্রমাণের বাস্তবতা বলছে পারমাণবিক শক্তি ছাড়া ২০৫০ নেটশূন্য অর্জন করা সম্ভব হবে না। এগুলো বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা, এর সঙ্গে কোনো রাজনীতি জড়িত নয়। অন্যদিকে, বিল ম্যাককিবেনের আন্তর্জাতিক ফসিল ফুয়েলবিরোধী মুভমেন্ট ৩৫০ ডট ওআরজির একজন জাপান প্রচারক মাসায়োশি আইওদা বলেছেন, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ডিকার্বনাইজেশনকে ত্বরান্বিত করার জন্য বিপজ্জনক পারমাণবিক শক্তির জন্য কোনো স্থান নেই। এটি একটি বিপজ্জনক বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। ২০০০-এর দশক থেকে পারমাণবিক শিল্পের লবিস্টদের নেতৃত্বে একটি ‘পারমাণবিক নবজাগরণের’ প্রচেষ্টা চলছিল- যা কখনই সফল হয়নি। এটি কেবল ব্যয়বহুলই নয় বরং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, অগণতান্ত্রিক এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। জলবায়ু সংকটের জন্য আমাদের কাছে ইতোমধ্যেই সস্তা, নিরাপদ, গণতান্ত্রিক এবং দ্রুত সমাধান রয়েছে এবং সেগুলো হলো নবায়নযোগ্য শক্তি এবং অধিক দক্ষতা সম্পন্ন শক্তি।  জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার বিষয় উল্লেখ করে বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী এবং জলবায়ু কূটনীতির একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব মিয়া মটলি বলেন, ‘Loss and damage alone, however, is only a part of the equation. Because for every dollar that we spend before disaster, we can save $7 in damage and indeed loss of lives’. বাস্তবতা হলো, আমরা যদি পথ পরিবর্তন না করি তাহলে আমরা আরও অনেক বেশি প্রাণ হারানো এবং অনেক বেশি ক্ষতি দেখতে পাব। এ ছাড়াও তিনি মিথেনের নিঃসরণ দ্রুত হ্রাস করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোকে এককভাবে তুলে ধরেন, কারণ এটি কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকারক এবং তাপ কমাতে মিথেনের পরিমাণ কমাতে হবে বলে মন্তব্য করেন।   সম্মেলনে কলম্বিয়া জীবাশ্ম জ্বালানি অপসারণ চুক্তিতে যোগদান করেছে বলে ঘোষণা করেছে। এই চুক্তিতে যোগদানকারী ১০তম দেশ হলেও এই বছরের শুরুতে যোগদানকারী তিমুর-লেস্তেকে অনুসরণ করে জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী শুধু দ্বিতীয় সদস্য হলো কলম্বিয়া। দেশটিতে কয়লা, গ্যাস এবং তেলের উল্লেখযোগ্য মজুত রয়েছে। কলম্বিয়ার পরিবেশ মন্ত্রী সুজানা মুহাম্মাদ বলেছেন, কলম্বিয়া বিশ্বাস করে আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার পরিকল্পনা দরকার।  কপ-২৮ সম্মেলনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় খবর হলো বিশ্বের বৃহত্তম কয়লা জ্বালানি চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সমস্ত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাওয়ারিং পাস্ট কয়লা জোটে যোগদান করেছে৷ কয়লা হলো সবচেয়ে নোংরা জীবাশ্ম জ্বালানি এবং এটি থেকে মোট দূষক নির্গমনের প্রায় ৪০% নির্গত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কয়লা পোড়ানোর পাওয়ার স্টেশন রয়েছে। কয়লা শেষ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্ধারিত সময়সীমা হলো ২০৩৫ সাল। পাঁচ বছর পূর্বে অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে ১.৫ ডিগ্রি সে.-এর নিচে রাখার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।  ক্লাইমেট অ্যানালিটিক্সের বিল হেয়ার বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া এখনও কয়লা-নির্ভর দেশ এবং এখনও কয়লা রপ্তানির জন্য নতুন খনি অনুমোদন করছে। কয়লা উৎপাদন সম্প্রসারণ করা বৈশ্বিক বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় এবং আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা যা বলছে তার সম্পূর্ণ বিপরীত কাজ।   এ ছাড়াও জাপানের কিকো নেটওয়ার্ক এনজিও থেকে ইভান গ্যাচ বলেছেন, পিপিসিএ তালিকায় জাপানকে না দেখাটা হতাশাজনক, তবে হয়তো অবাক হওয়ার কিছু নেই। জাপানে ১৭০টিরও বেশি কয়লা ইউনিট রয়েছে এবং এগুলো শেষ করার জন্য কোনো সঠিক পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ নেই। জাপান জীবাশ্ম জ্বালানির আয়ু বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যতদিন তারা এটি থেকে লাভ করতে পারে।  সম্মেলন আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে যেখানে প্রতিটি দেশের আলোচকরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে  সাধারণ কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন এবং করবেন। যে কোনো চূড়ান্ত চুক্তি অবশ্যই উপস্থিত প্রতিটি দেশের দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। সর্বসম্মত সম্মতির প্রয়োজনীয়তার অর্থ হলো চূড়ান্ত নথির প্রতিটি শব্দ যাচাই করা হবে। অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার : বিভাগীয় প্রধান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, যুগ্ম-সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং চেয়ারম্যান, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। মোবাইল নম্বর : ০১৭১২-০১৭-৭২৫, ইমেইল : [email protected])  
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, দুবাই থেকে / জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ ও বাংলাদেশ
জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সংকট। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যেমন: বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদীভাঙন এবং জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা প্রভৃতির কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এ জলবায়ু পরিবর্তন দেশের কৃষি, অবকাঠামো ও জীবনযাত্রার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস’ (কপ-২৮) এর এবারের আসর গত ৩০ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশ থেকে এবার ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। এ ছাড়াও এবারের জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থিত হয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক ও পরিবেশবিদগণ, ব্যবসায়িক ও আর্থিক নেতা, তরুণ আইনজীবী, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জলবায়ু কর্মীদের প্রতিনিধি, আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ। কপ-২৮ সম্মেলন এ বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্মেলন। এবারের এই সম্মেলনে বরাবরের মতো এই করভেনশনে স্বাক্ষর করা ১৯৮টি দেশের শীর্ষ নেতারা একত্র হয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবগুলোকে মোকাবিলা করতে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেওয়ার উদ্দেশ্যে কথা বলবেন। জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই কনভেনশনের অংশ হিসেবে বরাবরই এই সম্মেলনে মিলিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল, সম্মেলনে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক আলোচনায়, বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত বিপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পক্ষে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অগ্রভাগে থাকা বাংলাদেশ, স্বল্পোন্নত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বিপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সাথে একসাথে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এই বছরের জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে। জলবায়ু সম্মেলনের আগে ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, এ বছর বাংলাদেশের আলোচ্যসূচিতে থাকা পাঁচটি মূল বিষয় তুলে ধরেন। মন্ত্রী বলেন, কপ-২৮ সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় স্বল্পোন্নত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বিপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পক্ষে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। চলতি বছরের সম্মেলনে বাংলাদেশ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বৈশ্বিক স্টক : বাংলাদেশের এজেন্ডার প্রথম ইস্যুটি ‘প্রথম বৈশ্বিক স্টকটেক’ সম্পর্কিত যা এ বছরের জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বৈশ্বিক মজুত হলো দেশ এবং অংশীদারদের জন্য একটি প্রক্রিয়া যেখানে তারা প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তির লক্ষ্য পূরণের দিকে সম্মিলিতভাবে কোথায় অগ্রগতি করছে এবং কোথায় নেই তা দেখার জন্য। বাংলাদেশ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কার্যক্রমের অগ্রগতির মূল্যায়ন, ভবিষ্যতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং বৈশ্বিক মজুদ থেকে কংক্রিট মাইলফলকসহ স্পষ্ট পদক্ষেপ চায়। লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল: লস অ্যান্ড ড্যামেজ শব্দটি বোঝায় যে দেশগুলো, বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো জলবায়ু সংকটের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে- তারা যে ক্ষতি এবং ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। জাতিসংঘ এটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছে: ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে উদ্ভূত ক্ষতি ও ক্ষতির মধ্যে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে তবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, সমুদ্রের অ্যাসিডিফিকেশন, হিমবাহ পশ্চাদপসরণ এবং সম্পর্কিত প্রভাব, লবণাক্ততা, ভূমি ও বন অবক্ষয়, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং মরুকরণের মতো ধীরগতির ঘটনাগুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।’ অভিযোজনে বৈশ্বিক লক্ষ্য: গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন প্যারিস চুক্তির ৭.১ অনুচ্ছেদের অধীনে একটি সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি যার লক্ষ্য ‘বিশ্বের অভিযোজিত ক্ষমতা বৃদ্ধি, স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি হ্রাস করা’। জিজিএ-র উদ্দেশ্য হলো একটি ঐক্যবদ্ধ কাঠামো হিসেবে কাজ করা যা প্রশমনের মতো একই মাত্রায় অভিযোজনের জন্য রাজনৈতিক পদক্ষেপ এবং অর্থ পরিচালনা করতে পারে। এ বছরের জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ ‘বৈশ্বিক অভিযোজন লক্ষ্য’-এর কাঠামো তৈরি ও প্রণয়নে সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা অন্যান্য দেশগুলোর পাশাপাশি, বাংলাদেশ সদস্য দেশগুলোকে তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি)-তে বর্ণিত ২০৩০ সালের প্রশমন লক্ষ্যগুলো ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্য করতে এবং এলডিসি দেশগুলোতে তহবিল বাড়ানোর জন্য জোর দেবে। জলবায়ু অর্থায়নে ১০০ বিলিয়ন ডলার: ঢাকার আলোচ্যসূচির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জলবায়ু অর্থায়ন। জাতিসংঘের মতে, জলবায়ু অর্থায়ন বলতে স্থানীয়, জাতীয় বা আন্তঃদেশীয় অর্থায়নকে বোঝায়-সরকারি, বেসরকারি এবং অর্থায়নের বিকল্প উৎস থেকে নেওয়া-যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করবে এমন প্রশমন এবং অভিযোজন পদক্ষেপকে সমর্থন করতে চায়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীর মতে, বাংলাদেশ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলির সাথে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলির জন্য উন্নত দেশগুলির কাছ থেকে জলবায়ু অর্থায়নে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে। এ ছাড়াও জলবায়ু অর্থায়নের সংজ্ঞা চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে। অভিযোজন তহবিল দ্বিগুণ করা: এই বছরের জলবায়ু সম্মেলনের অন্যতম প্রধান অ্যাজেন্ডা হল অভিযোজন তহবিল দ্বিগুণ করা। অভিযোজন তহবিল উন্নয়নশীল দেশগুলির দুর্বল সম্প্রদায়গুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করে এমন প্রকল্প এবং কর্মসূচিকে অর্থায়ন করে। দেশের চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং অগ্রাধিকারের ওপর ভিত্তি করে উদ্যোগ নেওয়া হয়। মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের মতে, চলতি বছরের সম্মেলনে অভিযোজন তহবিল দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয়তার প্রতিধ্বনি করবে বাংলাদেশ। ২০২৫ সালের পর জলবায়ু অর্থায়নের সুবিধার্থে ‘নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফাইড গোল অন ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ শীর্ষক আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনেও ঢাকা কাজ করবে। দেশটি এই বছর জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (২০২৩-২০৫০) চালু করার লক্ষ্য নিয়েছে। পরিবেশমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে দেশের বিশিষ্ট জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মতামত নিয়ে ইতিমধ্যে একটি অবস্থানপত্র তৈরি করা হয়েছে। কপ-২৮ এর প্রথম দিনই লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলের বিষয়ে একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে। সম্মেলনের উদ্বোধনী দিন ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর উদ্ধার ও ত্রাণের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে লস অ্যান্ড ড্যামেজের তহবিল আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মত হয় এবং গৃহীত হয়। প্রথমে বিশ্বব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি তহবিল গঠন করা হবে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অর্থ বিতরণ করতে সক্ষম হবে এবং ধনী শিল্পোন্নত দেশ, উদীয়মান অর্থনীতি এবং জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশ যেমন চীন, উপসাগরীয় দেশ এবং কপ-২৮ আয়োজক দেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত দ্বারা অর্থায়ন করা হবে।  এর মধ্যে আরব আমিরাত থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার, জার্মানি থেকে আরও ১০০ মিলিয়ন ডলার, ব্রিটেন থেকে কমপক্ষে ৫১ মিলিয়ন ডলার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৭.৫ মিলিয়ন ডলার এবং জাপান থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সম্মেলনের প্রথম দিনের সভাপতি সুলতান আল জাবের এর বক্তব্যে, জীবাশ্ম-জ্বালানি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পর্কিত ভাষা অন্তর্ভুক্ত করার ধারণা সম্পর্কে দৃঢ় মতামত ছিল এবং সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেছেন। আল জাবের উল্লেখ করেছেন যে অনেক জাতীয় তেল কোম্পানি ২০৫০ সালের জন্য নেট-শূন্য লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে। জাবের বলেন, আমি কৃতজ্ঞ যে তারা এই খেলা পরিবর্তনকারী যাত্রায় যোগ দিতে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু, আমাকে অবশ্যই বলতে হবে, এটি যথেষ্ট নয়, এবং আমি জানি যে তারা আরও বেশি কিছু করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্প বিশ্বব্যাপী উত্তাপের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত সীমার মধ্যে রেখে জ্বালানোর চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণে তেল, গ্যাস এবং কয়লা উৎপাদন করার পরিকল্পনা করেছে। এবং সবচেয়ে বড় নেট-জিরো বস্টিং পরিকল্পনা সহ সংস্থাটি হল সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় তেল জায়ান্ট অ্যাডনক, যার সিইও হলেন আল জাবের নিজেই। কপ-২৮ জলবায়ু সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, মানবতার ইতিহাসে ২০২৩ সালই হতে চলেছে এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে উষ্ণ বছর। ২০২৩ সাল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর হতে চলার রেকর্ড ‘বিশ্ব নেতাদের মেরুদণ্ডে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া উচিত। বিশ্ব নেতাদের জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে কাজ করার জন্য মিনতি করে গুতেরেস বলেন, আমরা জলবায়ু ভেঙে পড়ার বাস্তব চিত্র চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস, যিনি অসুস্থতার কারণে কপ২৮ সফর বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন: কপ-২৮-এ অংশগ্রহণকারীরা এমন কৌশলবিদ হতে পারে যারা নির্দিষ্ট দেশ বা ব্যবসায়ের স্বার্থান্বেষী স্বার্থের পরিবর্তে সাধারণ ভাল এবং তাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যতের দিকে মনোনিবেশ করে। তারা যেন রাজনীতির আভিজাত্য প্রদর্শন করে, লজ্জার নয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে, বিশ্ব নেতারা খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরের বিষয়ে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন, এটি প্রথম কপ রেজোলিউশন। টেকসই কৃষি, রেজিলিয়েন্ট ফুড সিস্টেম এবং ক্লাইমেট অ্যাকশান বিষয়ে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে ১৩৪ দেশ। দেশ গুলো তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (NDC) এবং ২০২৫ সালে কপ৩০ দ্বারা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় খাদ্য ও জমির ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই রেজোলিউশন বাংলাদেশ ও সাক্ষর করেছে বিশ্বব্যাপী, খাদ্য ব্যবস্থা সমস্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী, যার সিংহভাগই আসে শিল্পোন্নত কৃষি, বিশেষ করে পশুসম্পদ এবং সার থেকে। জলবায়ু সংকট ইতিমধ্যেই কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করছে, কারণ চরম আবহাওয়ার ঘটনা যেমন বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহ এবং দাবানল - এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং মরুকরণের মতো ধীর গতির প্রভাব - বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জ্বালানির উচ্চ মূল্য এবং খাদ্যের ঘাটতি। জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনা সমর্থিত গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট মোবিলিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এশিয়া ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার হিসেবে ভূষিত করেছেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় মন্ত্রী এবং কপ-২৮ উচ্চ পর্যায়ের সেগমেন্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. হাছান মাহমুদ, এমপি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন। কপ-২৮ সম্মেলন একটি নতুন গবেষণাপত্রের ফলাফল উঠে এসেছে, যেখানে বলা হয়েছে, জীবাশ্ম-জ্বালানি ব্যবহারের ফলে জলবায়ু জরুরি অবস্থার তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে বলে জানান দেওয়া হয়। অ্যাডভান্সেস ইন অ্যাটমোস্ফিয়ারিক সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত। গবেষণায় এটি উল্লেখ করেছে যে এশিয়ার বৃহৎ অংশ এবং আমেরিকা মহাদেশের বেশিরভাগ অংশ একটি ব্যতিক্রমী উষ্ণ শীত অনুভব করতে পারে এবং এটি ৯৫% সম্ভাবনা দেয় যে ২০২৩-২০২৪ শীতের জন্য বিশ্বব্যাপী গড় পৃষ্ঠের তাপমাত্রা একটি নতুন ঐতিহাসিক রেকর্ড স্থাপন করবে। জার্মান ওয়াচের তথ্যমতে, বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত যেটি আমাদের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগজনক তথ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিগত বছরগুলো থেকে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেমন ক্রমাগত তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অনিয়মিত বৃষ্টি, বন্যার প্রকোপ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, সাইক্লোনের মাত্রা ও তীব্রতা বৃদ্ধি, অকাল খরা ইত্যাদি। তবে উপকূলীয় অঞ্চলের একটি প্রধান সমস্যা হলো মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা। জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের বিরূপ আচরণের প্রভাবে এই লবণাক্ততা দিন দিন অনেক বেড়ে যাচ্ছে এবং ফলে সেখানে সুপেয় পানির অভাব, খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি, মানুষের বাস্তুচ্যুতি, কাজের অভাব ইত্যাদি আরও প্রকট হচ্ছে। একই সঙ্গে ঘন ঘন সাইক্লোন ও বন্যার জন্য আমরা বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হচ্ছি, যা পরবর্তী সময়ে মারাত্মক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন জ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ জলবায়ু ব্যবস্থাপনায় প্রতি বছর প্রায় ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বার্ষিক বাজেট থেকে খরচ করছে। অথচ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে বছরে মাত্র এক বিলিয়ন ডলারের মতো সহযোগিতা আসছে। সেক্ষেত্রে, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কয়েকগুণ বেশি অর্থের প্রয়োজন, যে পরিমাণ অর্থ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে পাওয়ার জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যে উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছে তা অর্জন করার জন্য আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কাজ করতে হবে। (যোগাযোগ: অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, বিভাগীয় প্রধান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, যুগ্ম-সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং চেয়ারম্যান, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। মোবাইল নম্বর : ০১৭১২০১৭৭২৫, ইমেইল : [email protected])  
০১ ডিসেম্বর, ২০২৩

ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হলো জলবায়ু সম্মেলন
দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভূমি মালিকানা ও জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুদিনব্যাপী জলবায়ু সম্মেলন। বুধবার (১১ অক্টোবর) এ জলবায়ু সম্মেলনের পর্দা নামে। সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর অ্যামেরিকা ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রায় ৮টি দেশের ১৪ জন প্রতিনিধিসহ জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায় থেকে দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ সম্মেলনে উপস্থিত তৃণমূল ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, নাগরিক সংস্থা, শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অংশগ্রহণকারী ২১টি দেশের (অনলাইনসহ) নাগরিকদের উপস্থিতিতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার দাবি তুলে ধরেছেন। গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ যাদের জমির মালিকানার অধিকার দুর্বল বা একেবারেই নেই তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাবের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই এ সম্মেলনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন আলোচনায় ভূমির অধিকারের গুরুত্বের ওপর বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বোঝাপড়া এবং বিশ্লেষণ নিয়ে আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে সবার দাবিসংবলিত সুপারিশগুলো নিয়ে দেশীয় এবং বিশ্বনেতার প্রতি একটি যৌথ ঘোষণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এশিয়ান এনজিও কোয়ালিশন ফর অ্যাগ্রেরিয়ান রিফর্ম অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট (এএনজিওসি) এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) যৌথভাবে গত ১০-১১ অক্টোবর এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সমস্যার মূলে যাই না, রোগের উপসর্গ দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আমাদের সমস্যার মূলে, কারণ, কার্যকারণ ও কারণের পেছনের কারণ খুঁজে তা বিশ্লেষণ করতে হবে যে আমরা কীভাবে আমাদের সমস্যার সমাধান করব।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব দেখতে পাচ্ছি তা আসলে রোগের উপসর্গ, আমরা যে সমস্যা ও কারণের মূলের কথা বলছি তার অন্যতম হচ্ছে ভূমি সমস্যা, ভূমি মালিকানা ও ভূমিতে প্রবেশাধিকার না থাকা। ভূমি অধিকার মানবাধিকার। তাই আমরা সেই মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে ভূমি অধিকার ও জলবায়ু পরিবর্তনকে একই কাতারে নিয়ে এসে আলোচনা করতে চাই।’ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভূমি অধিকার ও ভূমিতে মালিকানা না থাকলে দরিদ্র মানুষের জীবনে টেকশই উন্নয়ন আসে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষ যে ক্ষতির সম্মুখীন হয় তার মধ্যে ভূমিসংক্রান্ত সমস্যা ও সংকট সেই ক্ষতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।’  সম্মেলনে যেসব সুপারিশ তুলে ধরা হয় তা হলো- দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর জোরালো করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ও সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।  ১. ভূমি সুশাসন, ভূমি সংস্কার এবং ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকারকে জলবায়ু সহনশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে নিশ্চিত করতে হবে। ভূমির সুরক্ষিত মেয়াদ গ্রামীণ দরিদ্রদের মধ্যে জমি টেকসইভাবে ব্যবহার করার সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। ২. আদিবাসীদের ভূমি ও সংস্কৃতির অধিকারকে স্বীকৃতি এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের বন, চারণভূমি এবং মৎস্যসম্পদসহ জমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে প্রথাগত সুশাসন ও ব্যবস্থাপনাকে সমর্থন করতে হবে। আদিবাসীদের নিজস্ব বলয়ে তাদের ঐতিহ্যগত অধিকার রক্ষায় সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের আইন প্রণয়ন করতে হবে। ৩.নারীর ভূমি অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে এমন লিঙ্গ বৈষম্যমূলক আইন, নীতিমালা এবং রীতিগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারে নারীদের পূর্ণ অংশগ্রহণের বাধাসমূহ নিরসন করতে হবে। ৪. ভূমিভিত্তিক জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং প্রশমনের জন্য সকল অংশীজনদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে যারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, নীতি ও পদ্ধতি নির্বাচন, মূল্যায়ন, বাস্তবায়ন এবং পর্যবেক্ষণে তাদের পূর্ণ সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যারা বৃহত্তর ঝুঁকি এবং হুমকির সম্মুখীন হয় তাদের অধিকার এবং বেঁচে থাকাকে প্রভাবিত করে এমন সমস্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ৫. জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার/প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকারকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত সকল ব্যক্তির অধিকার বজায়, রক্ষা এবং প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ৬. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আন্তর্জাতিক সীমানায় বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের অধিকারকে মর্যাদা, সুরক্ষা এবং প্রয়োগ করার জন্য নতুন আদর্শ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। শরণার্থীদের অবস্থা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সনদ তৈরি করতে হবে যেখানে আন্তর্জাতিক সীমানায় বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের মানবাধিকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত ও প্রয়োগ করা হয়েছে। এই বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের গুরুত্ব দিতে বিশ্বসম্প্রদায় অঙ্গীকারবদ্ধ। ৭. যেহেতু সরকার এবং বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলো জলবায়ু তহবিল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাই এই তহবিলগুলোকে অবশ্যই স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছাতে হবে। সহনশীলতা তৈরি করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার জন্য অবশ্যই সম্প্রদায় চিহ্নিত অগ্রাধিকারগুলো সঙ্গে সারিবদ্ধ হতে হবে।  
১২ অক্টোবর, ২০২৩

‘জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব দেখতে পাচ্ছি তা আসলে রোগের উপসর্গ’
বর্তমানে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব দেখতে পাচ্ছি তা আসলে রোগের উপসর্গ। ভূমি অধিকার হলো মানবাধিকার। তাই আমরা সেই মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে ভূমি অধিকার ও জলবায়ু পরিবর্তনকে একই কাতারে নিয়ে এসে আলোচনা করতে চাই। বলে জানান পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভূমি মালিকানা ও জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে আজ বুধবার শেষ হলো দুই দিনব্যাপী জলবায়ু সম্মেলন। দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর অ্যামেরিকা ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রায় ৮টি দেশের ১৪ জন প্রতিনিধিসহ জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায় থেকে দেশীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এই সম্মেলনে। এ সম্মেলনে উপস্থিত তৃণমূল ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, নাগরিক সংস্থা, শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অংশগ্রহণকারী ২১টি দেশের (অনলাইনসহ) নাগরিকদের উপস্থিতিতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার দাবি তুলে ধরেছেন। গ্রামীণ দরিদ্র মানুষেরা যাদের জমির মালিকানার অধিকার দুর্বল বা একেবারেই নেই তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাবের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই, এই সম্মেলনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন আলোচনায় ভূমির অধিকারের গুরুত্বের ওপর বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বোঝাপড়া এবং বিশ্লেষণ, সেই সঙ্গে সবার দাবিসম্বলিত সুপারিশগুলো নিয়ে দেশীয় এবং বিশ্বনেতার প্রতি একটি যৌথ ঘোষণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এশিয়ান এনজিও কোয়ালিশন ফর অ্যাগ্রেরিয়ান রিফর্ম অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট (এএনজিওসি) এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে সংসদ সদস্য ও  পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা সমস্যার মূলে যাই না, রোগের উপসর্গ দেখে সিদ্ধান্ত নেই, আমাদের সমস্যার মূলে, কারণ, কার্যকারণ ও কারণের পেছনের কারণ খুঁজে তা বিশ্লেষণ করতে হবে যে, আমরা কীভাবে আমাদের সমস্যার সমাধান করব। বর্তমানে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব দেখতে পাচ্ছি তা আসলে রোগের উপসর্গ, আমরা যে সমস্যা ও কারণের মূলের কথা বলছি তার অন্যতম হচ্ছে ভূমি সমস্যা, ভূমি মালিকানা ও ভূমিতে প্রবেশাধিকার না থাকা। ভূমি অধিকার মানবাধিকার। তাই আমরা সেই মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে ভূমি অধিকার ও জলবায়ু পরিবর্তনকে একই কাতারে নিয়ে এসে আলোচনা করতে চাই। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভূমি অধিকার ও ভূমিতে মালিকানা না থাকলে দরিদ্র মানুষের জীবনে টেকসই উন্নয়ন আসে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষ যে ক্ষতির সম্মুখীন হয় তার মধ্যে ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা ও সংকট সেই ক্ষতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। কয়েকটি সুপারিশমালা তুলে ধরেন বক্তারা। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর জোরালো করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। ভূমি সুশাসন, ভূমি সংস্কার এবং ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকারকে জলবায়ু সহনশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে নিশ্চিত করতে হবে। ভূমির সুরক্ষিত মেয়াদ গ্রামীণ দরিদ্রদের মধ্যে জমি টেকসইভাবে ব্যবহার করার সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
১১ অক্টোবর, ২০২৩

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
শেষ হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হওয়া তিনদিনব্যাপী আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩। ৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকার হোটেল শেরাটনে শুরু হওয়া এ সম্মেলন গতকাল রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) শেষ হয়।  ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ, দ্য আর্থ সোসাইটি, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ)  ও ক্লাইমেট পার্লামেন্ট এর যৌথ আয়োজনে এই ‘আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩’ অনুষ্ঠিত হয়।  তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্যবৃন্দ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকগণ, কর্পোরেট সেক্টর, উন্নয়ন সহযোগী দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক সংস্থা সহ বিভিন্ন সেক্টরের ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে ৪ টি থিমেটিক সেগমেন্ট ও ১৯ টি সেশনে আলোচক (প্যানেলিস্ট) হিসেবে অংশগ্রহণ করেন ১২০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।  তিনদিনের এই আঞ্চলিক সম্মেলনে দেশ ও দেশের বাইরের প্রায় ৬০০ জন প্রতিনিধি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।  আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একে এম এনামুল হক শামীম এমপি। এসময় উপমন্ত্রী বলেন, এই ধরণের আলোচনায় আঞ্চলিক সহযোগিতা ও পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো আগামীতেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একসাথে কাজ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।  সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক ও জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব কান্নি উইগনারাজা। কান্নি উইগনারাজা তার বক্তব্যে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। ইউএনডিপি সবসময় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পাশে আছে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সবার জন্য টেকসই ভবিষ্যত গড়ে তোলা সম্ভব।   সমাপনী অনুষ্ঠানে এম্বাসেডর রিফলেকশনে বিশেষ বক্তব্য প্রদান করেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, ঢাকায় নিযুক্ত  নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ডেপুটি হেড অফ কো-অপারেশন থিজস ওয়ডস্ট্রা, ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাই কমিশনার ও ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর মার্ট ক্যানেল এবং  সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অফ কো-অপারেশন করিন হেনচোজ পিগনানি।   বোট অব থ্যাংকস প্রদান করেন, ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারপারসন তানভির শাকিল জয় এমপি ও সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি।  এই আয়োজনের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ঠ ছিলেন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, জাতীয় ও আন্তজার্তিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা মিলিয়ে মোট ২২টি প্রতিষ্ঠান।  সমাপনী দিনে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তিনটি পৃথক হল রুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম অধিবেশনে আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য আঞ্চলিক সংসদীয় ফোরাম: বাংলাদেশ কনসালটেশন দক্ষিণ এশিয়া পার্লামেন্টারিয়ানদের গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু বিষক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ইউএসএআইডি'র সিনিয়র কর্মকতা শায়ান শাফী।  মডারেটর এর দায়িত্ব পালন করেন জলবায়ু সংসদের পরিচালক ডা. মুকুল শর্মা। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ সরকারের পাওয়ার সেল বিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন, সাউথ এশিয়া জেনারেল ও ডেপুটি চিফ অব পার্টি নম্রতা মুখোপাধ্যায়। এনার্জি পার্টনারশিপ এন্ড পাওয়ার মার্কেট স্পেশালিস রাজীব রত্মা পান্ডা। আরপিএফ হিসেবে ছিলেন ক্লাইমেট পার্লামেন্ট ভারতের চেয়ারম্যান ডাঃ সঞ্জয় জয়ওয়াল এমপি। আরপিএফ নিয়ে আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ভুটান, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কার এমপিগণ। সেশনটির মূল পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেন ইউএসএআইডি ভারতের আঞ্চলিক শক্তি ও পরিচ্ছন্ন শক্তি বিশেষজ্ঞ এবং মিশন মোনালি জিয়া হাজরা। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন দ্যা আর্থ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন মিয়া। এরপর প্রকৃতির সাথে সম্প্রীতি: উন্নয়ন এবং বাস্তুতন্ত্র পরিচালনার ভারসাম্য সেশনের কি-নোটে উপস্থাপন করেন জেমস জে শোয়ার, পিএইচডি, পিই, এমবিএ, মার্কিন বিজ্ঞান দূত ও মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের অধ্যাপক পিটারসন-র্যাডার-হাওন,  অধ্যাপক উইলিয়াম সি বয়েল উইসকনসিন, ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। মার্কিন দূতাবাস বাংলাদেশের  চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফাভে, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)'র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বাংলাদেশ  আইসিডিডিআর'বি এর জনসংখ্যা অধ্যয়ন বিভাগের  প্রকল্প সমন্বয়কারী পরিবেশগত স্বাস্থ্য এবং ওয়াশ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ডা. মো. মাহবুবুর রহমান। প্রকৃতি সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা: পিএইচডি, নির্বাহী পরিচালক, এস এম মনজুরুল হান্নান খান।  বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র আরবান ট্রান্সপোর্ট স্পেশালিস্ট উশাচা, সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ড্যানিয়েল নোভাক। এই সেশনটির মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শক্তি ফাউন্ডেশনের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ইমরান আহমেদ।  গ্রিন সিটি, স্মার্ট সিটি সেশনে ‘জলবায়ু-প্রতিক্রিয়াশীল নগর উন্নয়নের জন্য সবুজ অবকাঠামো এবং স্মার্ট সমাধানগুলি একীভূত করা’ বিষয়ক সেশনে কি নোট উপস্থাপন করেন গ্রামীণফোনের চিফ বিজনেস অফিসার (সিবিও) ড. আসিফ নাঈমুর রশীদ, সেশন চেয়ার ছিলেন সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি৷ স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি); সহকারী অধ্যাপক স্থাপত্য বিভাগ শাফিনাজ শামীম।  বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সদস্যের প্রাক্কলন সম্পর্কিত কমিটির সদস্য আহসান আদেলুর রহমান এমপি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ অতিরিক্ত সচিব(পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, দ্য প্রিন্স ফাউন্ডেশন এর সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার   ভিক্টোরিয়া হবডে.। সেশনটির মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন। সবুজ উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য জলবায়ু নীতি সিকোয়েন্সিং সেশনের মূল প্রবন্ধে ছিলেন, এলএসই'র গ্রান্থাম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং ফেলো পরিবেশ অর্থনীতিবিদ কিংস্টন ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির সিনিয়র লেকচারার  শেখ ইস্কান্দার। স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন  সংসদ সদস্য, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি। স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এর সিইও সামি আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংক এর ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, জাহাজি লিমিটেড এর সিইও  সহ-প্রতিষ্ঠাতা কাজল আবদুল্লাহ, মডারেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন  আইসিটি ডিভিশনের আইডিয়া  অপারেশন টিম লিড সিদ্ধার্থ গোস্বামী।  "টেকসই শক্তির জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা: আঞ্চলিক শক্তি শাসনের জন্য নতুন স্থাপত্য" অধিবেশনের মূল কি-নোট উপস্থাপন করেন  বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূ চার্লস হোয়াইটলি.।  স্পীকার হিসেবে ছিলেন সংসদ সদস্য ভিনসেন্ট পালা এমপি। জাতীয় অর্থনীতি ও ভৌত পরিকল্পনা সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ইরান বিক্রমারত্নে এমপি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি (ভুটান) ও  চেয়ারপার্সন গাইম দর্জি এমপি। নেপালের সংসদ সদস্য মাধব সাপকোটা এমপি। মডারেটর হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি।  সার্কুলার ইকোনমি কৌশল: প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সার্কুলার সম্প্রসারণ সেশনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ শিল্প মন্ত্রণালয় এর অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) শেখ ফয়জুল আমিন, স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সদস্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সদস্য মীর মুশতাক আহমেদ রবি এমপি। কোকা-কোলা বেভারেজেস লিমিটেডের এমডি মায়াঙ্ক অরোরা।  কর্ডএইড বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিস, হেড অব প্রোগ্রাম মোঃ আবুল কালাম আজাদ। ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড এর পরিচালক- কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপ অ্যান্ড কমিউনিকেশনস শামীমা আক্তার। আমাল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ইসরাত করিম। মডারেটর হিসেবে ছিলেন গায়ক, গীতিকার - চিরকুট, যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ-সল্ট ক্রিয়েটিভস, জলবায়ু যত্ন কর্মী, শারমিন সুলতানা। জলবায়ু পরিবর্তনের উপর বায়ু পরিষ্কার করা: কীভাবে বায়ু মানের সহ-সুবিধাগুলি জলবায়ু পদক্ষেপ চালাতে সহায়তা করতে পারে" সেশনটির মূল প্রবন্ধে ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাঃ ফারহিনা আহমেদ।  স্পীকারের দায়িত্ব পালন করেন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য উগেন শেরিং এমপি ৷ বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (সিএপিএস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। সেন্টার অব পিস অ্যান্ড জাস্টিস এর রিসার্চ এসোসিয়েট, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ও ক্লাইমেট অ্যাকশন চ্যাম্পিয়নস নেটওয়ার্ক (CACN), তাসনিয়া খন্দকার প্রভা।  মডারেটর হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার দিকে: আমাদের সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগানো" সেশনটির মূল প্রবন্ধে উপস্থাপন করেন  ফারজানা ফারুক ঝুমু,  ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের  সদস্য ও সংসদ সদস্য রুমানা আলী এমপি, ইনস্পিরেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন  সুইজারল্যান্ড দূতাবাস এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার শিরিন লিরা।  দুটি ভাগে অনুষ্ঠিত সেশনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সোহানুর রহমান, মহিউদ্দিন সৌরভ, সাদিয়া আফরোজ এশা, আরুবা ফারুক, এস কে রেজওয়ানা কাদির রাইসা, রুবাইতা ইউনুস। এই সেশনে মডারেটর হিসেবে ছিলেন নিশাত উনজুম।  স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মো. ওমর ফারুক জয়, বোট অব থ্যাংকস প্রদান করেন জুহাইর আহমেদ কৌশিক।  সম্মেলনের স্ট্র‍্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে আছেন  গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ। 
১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
X