ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:১৬ পিএম
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:৫১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

দুবাই জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ জনস্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বারোপ

ছবি : সৌজন্য
ছবি : সৌজন্য

জলবায়ু নিয়ে শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৮ এর চতুর্থ দিনে জনস্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে স্থূলতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও অপুষ্টিজনিত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার, গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে।

ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা (এমইএনএ) অঞ্চলে প্রমাণভিত্তিক প্রতিরোধ, চিকিৎসা এবং স্থূলতার ব্যবস্থাপনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবী এবং আইনজীবীদের একটি জোট গঠন করা হয়েছে। সম্মিলিত পদক্ষেপের জরুরি প্রয়োজনের ওপর জোর দিয়ে, এমইএনএ সংস্থাগুলো এই অঞ্চলের স্থূলতার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য ২০২৪ সালের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ ওবেসিটি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফেডারেশন ভবিষ্যদ্বাণী করে যে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় চার শিশুর মধ্যে একজন (৬৪ মিলিয়ন শিশু) এবং তিনজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন (২১২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক) ২০৩৫ সাল নাগাদ স্থূলতার সাথে বসবাস করবে। এমইএনএ জোট ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে অতিবিলম্বে সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানানো হবে।

পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতার ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি, ২০২০ সালে আনুমানিক ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০৩৫ সালের মধ্যে দ্বিগুণ থেকে ১৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দ্বারা অনুমোদিত স্থূলতা নীতি এবং সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয় এই জোট। কপ-২৮-এ এমইএনএ জোটটি বিশ্ব নেতাকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য অর্থায়নের একটি বৃহত্তর অংশ বরাদ্দ করার আহ্বান জানায়।

সম্মেলনে ১১৫টিরও বেশি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষমতা তিনগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে - যদিও চীন এবং ভারত এখনও এই ব্যাপারে কোনো মতামত প্রকাশ করেনি। অস্ট্রেলিয়া ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী শক্তির ক্ষমতা তিনগুণ করার প্রতিশ্রুতিকে সমর্থন করেছে। কিন্তু জলবায়ুমন্ত্রী ক্রিস বোয়েন কপ-২৮ এর গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বলেন, কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে চাপ প্রয়োগ করবে কি না তা জানাতে অস্বীকার করেন। অস্ট্রেলিয়া আশাবাদী যে বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি হবে, কিন্তু দেশটিকে এখনও একটি আন্তর্জাতিক পিছিয়ে পড়া হিসেবে দেখা হয়। অস্ট্রেলিয়া কপ-৩১ আয়োজনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তবে কখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা জানা যায়নি।

চীন ও ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেল ও গ্যাস উৎপাদনের জন্য ২০১৫ সালের পর থেকে বিশ্বব্যাপী গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনে সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ করছে। অথচ তারা প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছিল। ক্লাইমেট ট্রেস প্রকল্পের তথ্য অনুসারে, ১০০ টিরও বেশি দেশ গ্রিন হাউস গ্যাস কমানোর প্রতিশ্রুতিতে স্বাক্ষর করা সত্ত্বেও কার্বন-ডাই অক্সাইডের চেয়ে ৮০ গুণ বেশি শক্তিশালী গ্রিন হাউস গ্যাস মিথেনের নির্গমন বেড়েছে। প্যারিস চুক্তির অধীনে বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও দেশগুলো এবং এদের অন্তর্ভুক্ত সংস্থাগুলো তাদের নির্গমনের সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ১.৫ ডিগ্রি সে. এর ওপরে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমাবদ্ধ করার লক্ষ্য অর্জনের জন্য ১৯০টিরও বেশি দেশ কপ-২৮ আলোচনা করছেন।

এ ছাড়াও বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উচ্চ তাপমাত্রার সবচেয়ে খারাপ প্রভাব থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো মিথেনের নিঃসরণ হ্রাস করা। গবেষণার অনুসারে, মিথেন এবং অন্যান্য স্বল্পস্থায়ী দূষণকারীর হ্রাস বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি ০.৩ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত কমাতে পারে। নতুন তথ্য দেখা যায়, ২০২১ এবং ২০২২ সালের মধ্যে মিথেন নির্গমন বৃদ্ধির একটি বড় অংশের জন্য দায়ী চীনের কয়লা খনি। চীন প্রথমবারের মতো তার জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনায় মিথেন অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি নতুন প্রতিশ্রুতি স্বাক্ষর করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মিথেন কমানোর উপায় নির্ধারণে সহযোগিতা করছে। কপ-২৮ এ ৫০টিরও বেশি তেল ও গ্যাস কোম্পানি একটি ‘ডিকার্বনাইজেশন এক্সিলারেটর’-এ সাইন আপ করেছে যার মাধ্যমে তারা তাদের কার্যকলাপের ফলে জলবায়ুর ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ে সেটি কমিয়ে দেবে, যদিও তারা তাদের উৎপাদন কমানোর প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

এইদিকে, কপ-২৮ এর সভাপতি সুলতান আল জাবের এক বক্তব্যে, দাবি করেছেন যে কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই যা ইঙ্গিত করে যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করলেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সে. এ সীমাবদ্ধ করা যাবে। কয়লা, তেল এবং গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করলে বিশ্ব গুহায় বসবাসকারী মানব সভ্যতায় ফিরে যাবে।

সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরাসহ সব শ্রেণির প্রতিনিধি বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন এবং নিজ দেশসহ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার : বিভাগীয় প্রধান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, যুগ্ম-সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং চেয়ারম্যান, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গয়না খুলে কয়েদির পোশাকে মাধুরী!

আজ থেকে নতুন দামে স্বর্ণ বিক্রি শুরু, ভরি কত

হিমেল বাতাসে ১৩ ডিগ্রির ঘরে তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা

নিরাপদ থাকতে ব্রাউজারে যা ব্যবহার করবেন

তোপের মুখে রাম চরণের স্ত্রী

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল

মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে হাইড্রোলিয়া জেইলানিকা ফুল

শততম টেস্টে শতক হাঁকিয়ে ইতিহাস গড়লেন মুশফিক

বিশ্বকাপের সূচি প্রকাশ, বাংলাদেশের ম্যাচ কবে কার বিপক্ষে

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চায়ের দোকানে থাকা ৪ জন দগ্ধ

১০

চালু হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

১১

৩৬ ঘণ্টার হরতাল চলছে

১২

নাশতার জন্য সেরা ১২ খাবার

১৩

কেমন থাকবে আজ ঢাকার আবহাওয়া

১৪

৩৩২ কোটি টাকায় ‘রোজ গার্ডেন’ কিনে রাষ্ট্রের ক্ষতি, অনুসন্ধানে দুদক

১৫

ক্যানটিন থেকে তুলে নিয়ে রাবির ২ শিক্ষার্থীর ওপর হামলা

১৬

আজ ঢাকায় আসছেন কমনওয়েলথ মহাসচিব

১৭

নারীর হাতে মার খেয়ে অস্ত্র ফেলে পালাল ৩ ছিনতাইকারী

১৮

সেলস অ্যাডমিন বিভাগে নিয়োগ দিচ্ছে স্কয়ার গ্রুপ

১৯

যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত ২৫

২০
X