পথচারীদের মধ্যে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ করল জাতীয় পার্টি
তীব্র দাবদাহে সর্বসাধারণের পাশে দাঁড়াতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তৃতীয় দিনের মতো রাজধানী বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেছে জাতীয় পার্টি।  সোমবার (২৯ এপ্রিল) নগরীর শাহজাদপুর বাসস্ট্যান্ডে পথচারী ও অফিসগামী জনসাধারণের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেন দলটির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ। পরে তিনি রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের সামনে ও ধোলাইখাল এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেন।  এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ খান, মো. সারফুদ্দীন আহমেদ শিপু, যুগ্ম-মহাসচিব শেখ মাসুক রহমান, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল আরেফিন মাসুম, প্রাদেশিকবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, যুগ্ম কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মেহবুব হাসান, যুগ্ম সাহিত্য ও কৃষ্টিবিষয়ক সম্পাদক আফতাব গনি, নির্বাহী সদস্য নাসির নেওয়াজ, কাদের মুন্সীসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।  এদিকে জাতীয় ছাত্রসমাজ কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির উদ্যোগে সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হলের সামনে পথচারীদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ করা হয়। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সেন্টু এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।  এ সময় দলের কো-চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন, প্রেসিডিয়াম সদস্য রফিকুল হক হাফিজ, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, ভাইস-চেয়ারম্যান হাজি নাসির সরকার, আবু নাঈম মো. মোস্তাফিজুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব এস এম হাসেম, যুগ্ম সমবায়বিষয়ক সম্পাদক চিশতী খায়রুল আবরার শিশির, জাতীয় ছাত্রসমাজের আহ্বায়ক নকিবুল হাসান নিলয় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 
২৯ এপ্রিল, ২০২৪

কী চাপ ছিল পরিষ্কার করুক জাতীয় পার্টি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো বিদেশি শক্তির প্রভাব ছিল না—মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় পার্টি কোন চাপে নির্বাচনে এসেছে, তা দলটিকে পরিষ্কার করতে হবে। গতকাল রোববার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুত্র লেফটেন্যান্ট শেখ জামালের ৭১তম জন্মদিনে বনানীতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। জাতীয় পার্টিকে হুমকি দিয়ে নির্বাচনে নিয়ে আসা হয়েছে, এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, কে কাকে হুমকি দিয়েছে? তাদের জন্ম তো বন্দুকের নলে। তারা গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে আসেনি। গত নির্বাচনে বাংলাদেশের ৪২ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। ভোটের দিন কোনো খুনখারাবি হয়নি। এখানে আমরা কোনো চাপ অনুভব করিনি। বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, কালো চশমা পরা বিএনপি নেতারা দেশের উন্নয়ন দেখতে পান না। বাংলাদেশকে নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপির লজ্জা পাওয়া উচিত। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতেই ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড। খুনিদের মদদ দিয়েছে জিয়া-মোশতাক চক্র। এর মধ্য দিয়ে দেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বন্ধ করে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা সূচিত করেন। বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতায় স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ওবায়দুল কাদের শহীদ শেখ জামালের কবরে শ্রদ্ধা জানান। পরে নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান তিনি। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, দীপু মনি ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আফজাল হোসেন ও সুজিত রায় নন্দী, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
২৯ এপ্রিল, ২০২৪

সাতবার ভাঙল জাতীয় পার্টি
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৪টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দলের নামের সঙ্গে আছে ‘জাতীয় পার্টি’। পাশে ব্র্যাকেটে নানা শব্দ যুক্ত করে নিবন্ধন নিয়েছে এসব দল। এর কারণ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ভাঙনের মুখে পড়েছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত দল জাতীয় পার্টি। ১৯৮৬ সালের এক জানুয়ারি দলটির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দলটিতে ভাঙাগড়া যেন লেগেই আছে। নেতৃত্বের কোন্দলে বারবার টুকরো টুকরো হয়েছে দলটি। সর্বশেষ গতকাল শনিবার এরশাদপত্নী রওশনের নেতৃত্বে নতুন করে ভাঙল জাতীয় পার্টি। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাতবার ভাঙল দলটি। এরশাদ পরিবার ঘিরেই জাতীয় পার্টির মূলধারা বিবেচনা করা হয়। তার মৃত্যুর পর স্ত্রী রওশন ও ভাই জি এম কাদেরের মধ্যে নেতৃত্বের বিরোধ তুঙ্গে উঠে, যা ভাঙন পর্যন্ত গড়াল। যদিও উভয় অংশের নেতারা এজন্য একে অপরকে দোষারোপ করছেন। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কালবেলাকে বলেন, ‘শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে আমরা কিছু নেতাকে বহিষ্কার করেছি; কিন্তু দল ভেঙে যাক চাইনি। এজন্য সবাইকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে; কিন্তু দল গঠন বা রাজনীতি করার অধিকার তো সবার আছে। তবে মূল ধারার জাতীয় পার্টি হলো জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন দল।’ আর রওশন অংশের অন্যতম নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ কালবেলাকে বলেছেন, ‘দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে অনেক চেষ্টা করেছি। স্বেচ্ছাচারী হয়ে পার্টি পরিচালনা করলে ঐক্য ধরে রাখা যায় না। পার্টির সর্বশেষ ভাঙনের জন্য কারা দায়ী তা হয়তো এক সময় মূল্যায়নের সুযোগ আসবে।’ দলটির বর্তমান ও সাবেক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় পার্টিতে ভাঙনের ইতিহাস নতুন নয়। সব সময় কোনো না কোনো ইস্যুতে দলে অস্থিরতা লেগেই থাকে। এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শাসক এরশাদও দলে বিবাদ বা ভাঙন ঠেকাতে পারেননি। জাপার ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক নূরুল আমিন ব্যাপারী কালবেলাকে বলেন, ‘এই দলের রাজনৈতিক কোনো ভবিষ্যৎ আমি দেখি না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনেক দলের মতো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক দলে পরিণত হবে জাতীয় পার্টি।’ তিনি বলেন, ‘এরশাদ ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ‘বি’ টিম হিসেবে কাজ করছে। মূলত আওয়ামী লীগকে সাপোর্ট দিতে গিয়ে আঞ্চলিকভাবে এক সময়ের জনপ্রিয় জাপা এখন গৃহপালিত দলে পরিণত হয়েছে। তাই এই দল নিয়ে এখন আর আশার কিছু নেই।’ ১৯৮২ সালে সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি তিনি জাতীয় পার্টি গঠন করে রাজনীতিতে নামেন। ১৯৯০ সালে তার পতনের পর থেকে ক্রমেই শক্তি হারাতে থাকে দলটি। এর মূল কারণ হিসেবে বারবার ভাঙনকে দায়ী করছেন পার্টির অনেকেই। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত দলটি সাতবার ভাঙনের মুখে পড়েছে। এরশাদের জীবদ্দশায় পাঁচবার এবং তার মৃত্যুর দুই বছর পর দুবার ভাঙে দলটি। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে দলটি ৩৫টি আসন পায়। ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে জাপার আসন কমে হয় ৩২টি। এরপর এরশাদের দলে ভাঙন ধরে। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আলাদা হয়ে যান। ২০০১ সালের নির্বাচনে আগে বড় ভাঙনের শিকার হয় দলটি। নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) নামে দল গঠন করে। এই অংশটির নেতৃত্বে এখন রয়েছেন আন্দালিব রহমান পার্থ। অবশ্য এই বিজেপিই আবার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এম এ মতিন গঠন করেন আলাদা জাতীয় পার্টি। সর্বশেষ এরশাদের পুরোনো রাজনৈতিক সহকর্মী কাজী জাফর আহমেদ দল ভেঙে আলাদা হন। এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টি পুনর্গঠনের ঘোষণা দেন তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। জাতীয় পার্টি হিসেবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধন রয়েছে চারটি দলের। যারা বিভিন্ন সময় ভাঙনের পর পৃথক দল গঠন করেন। এরশাদের নেতৃত্বাধীন মূল অংশটি লাঙল প্রতীকে ইসিতে নিবন্ধিত। এ ছাড়া আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপি নিবন্ধিত বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে। নাজিউর রহমান মঞ্জু প্রতিষ্ঠিত বিজেপি নিবন্ধিত গরুর গাড়ি প্রতীকে। আর ডা. এম এ মুকিতের নেতৃত্বাধীন একটি অংশের প্রতীক কাঁঠাল। এ ছাড়া কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ও বিদিশার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিসহ আরেকটি অংশের নিবন্ধন নেই। এই তালিকায় সর্বশেষ নাম লেখালো রওশনপন্থি জাতীয় পার্টি।
১০ মার্চ, ২০২৪

নতুন কমিটি ঘোষণা / জাপায় সবচেয়ে বড় ভাঙন
শেষ পর্যন্ত ভেঙেই গেল টানা তিনটি সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। গতকাল শনিবার সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ। নতুন এই দলের চেয়ারম্যান হয়েছেন রওশন এরশাদ নিজেই। মহাসচিব করা হয়েছে কাজী মামুনুর রশীদকে। কমিটিতে জায়গা পাওয়াদের প্রায় সবাই মূল দল থেকে বহিষ্কৃত কিংবা উপেক্ষিত। এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার তালিকা থেকে বাদ পড়া কিংবা মনোনয়নবঞ্চিতরাও ভিড়েছেন রওশনের দলে। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি জাতীয় পার্টির সবচেয়ে বড় ভাঙন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এই সম্মেলনকে গঠনতন্ত্রবিরোধী উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তারা নতুন একটি দল গঠন করলেও জি এম কাদেরের নেতৃত্বে আমরাই মূল ধারার জাতীয় পার্টি।’ গতকাল শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের বাইরে সম্মেলনের আয়োজন করে রওশন এরশাদের অনুসারীরা। এতে রাজধানী ও আশপাশের এলাকার নেতাকর্মীদের সমাগম বেশি ছিল। জেলা পর্যায় থেকে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রংপুরের কেউ আসেননি সম্মেলনে। পুরো উত্তরাঞ্চল থেকেই নামমাত্র প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনে জি এম কাদেরের সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা যোগ দেবেন—গত কিছুদিন ধরে এমন প্রচার চালানো হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত বহিষ্কৃতদের বাইরে সহিদুর রহমান টেপা ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি। ১৪ এমপির মধ্যে কেউ আসেননি। এমনকি রওশনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মসিউর রহমান রাঙ্গা, গোলাম মসিহ, এস এম আলম, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনও সম্মেলনে যোগ দেননি। সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে রওশন এরশাদ বলেন, ‘আজ যদি এই সম্মেলন না হতো, তাহলে জাতীয় পার্টি হারিয়ে যেত। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আমরা হারিয়ে ফেলতাম। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত।’ তিনি বলেন, ‘দলে কোনো বিভেদ নেই। আমরা এক আছি। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দল গোছাতে হবে।’ ১২ হাজারের বেশি কাউন্সিলর এবং ডেলিগেট উপস্থিত থাকার দাবি করেছেন আয়োজকরা। সম্মেলনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম এ মতিন ও বিএলডিপি চেয়ারম্যান এম নাজিম উদ্দীন আল আজাদ প্রমুখ। ১৪ দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাদের কাউকে দেখা যায়নি। রওশনের কমিটিতে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ, গোলাম সারোয়ার মিলন ও সুনীল শুভ রায়কে কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে। দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর কমিটির এসব সিনিয়র নেতার নাম ঘোষণা করেন। পরে মহাসচিব হিসেবে কাজী মামুনুর রশীদের নাম ঘোষণা করেন গোলাম সারোয়ার মিলন। সম্মেলনে কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম সারোয়ার মিলন, সুনীল শুভ রায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, শাদ এরশাদ, নুরুল ইসলাম নুরু, রফিকুল হক হাফিজ, এম এ গোফরান, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরী, শেখ আলমগীর হোসেন, নুরুল ইসলাম নুরু, নিগার সুলতানা রানী, এমএ কুদ্দুস খান, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, শফিকুল ইসলাম শফিক, আমানত হোসেন, ফখরুল আহসান শাহাজাদা, হাজী তুহিনুর রহমান, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, হাজী নাসির, মাসুকুর রহমান, মাহমুদুর রহমান মুন্নি, সাহিনা সুলতানা রিমা, শাহনাজ পারভিন ও শেখ রুনা উপস্থিত ছিলেন। রওশনপন্থিদের এ সম্মেলন সম্পর্কে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কালবেলাকে বলেন, ‘আরেকটি ব্রাকেটবন্দি দল হতে পারে। কিন্তু জি এম কাদেরের নেতৃত্বে আমরাই মূল জাতীয় পার্টি।’ তিনি বলেন, ‘নতুন ভাগের দলকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।’ তবে নিজেদের জাতীয় পার্টির মূলধারা দাবি করে রওশনপন্থি নেতারা বলছেন, জাতীয় পার্টির নিবন্ধন ও প্রতীক তাদের নামে দেওয়ার আইনি লড়াই চলবে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা হলেও তা নাকচ হয়েছে। তারা আদালতের শরণাপন্ন হবেন। লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টি নামে দল পরিচালনায় আইনি লড়াইয়ে সফল হতে চান রওশনপন্থিরা।
১০ মার্চ, ২০২৪

জাতীয় পার্টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে : জি এম কাদের
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ১৯৯০ সালের পর জাতীয় পার্টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ক্ষমতার বাইরে থাকলে আমাদের দেশের দলগুলো টিকতে পারে না। ক্ষমতাসীনরা জুলুম-নির্যাতন করে আমাদের রাজনীতি করতে দেয়নি।  শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে নিজ জন্মদিনের আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  তিনি বলেন, যারা ক্ষমতাসীন দল করতে এসেছিল তারা নব্বই সালের পর দল ছেড়ে চলে গেছে। তারা দল বা দেশের স্বার্থ দেখেনি। ২০০৮ সালে যখন আমরা মহাজোট করেছি, তখন অনেকেই বলেছে, আমরা পরজীবী হয়ে গেছি।  তিনি আরও বলেন, আমাদের বলা হয় গৃহপালিত রাজনৈতিক দল। আমাদের দলের মধ্যে সরকারি দলের এজেন্ট ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা আমাদের দল করে কিন্তু রাজনীতি করে অন্য দলের। আমাদের দল করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নেয় কিন্তু রাজনীতি করার সময় তারা সরকারি দলের রাজনীতি করে। যখনই আমরা সঠিক রাজনীতি করতে চাই, তখনই আমাদের দলকে ভেঙে আরেকটি দল সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। এটা সরকারই করে, যাতে আমরা স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে না পারি। আগে আমরা পরজীবী হলেও আমাদের একটা পছন্দ ছিল, আমরা যে কোনো পক্ষে যেতে পারি, আমাদের বার্গেনিং পয়েন্ট ছিল। এখন আমরা বন্দি হয়ে গেছি, একজনের কাছেই যেতে হবে।  তিনি বলেন, দেশ ও জাতির কাছে গৃহপালিত বিরোধীদলের প্রয়োজনীয়তা নেই। আমরা একটি দলের কাছে বন্দি হয়ে গেলে জনগণের কাছে আমাদের প্রয়োজন থাকবে না। আর জনগণ কেন এমন দলকে ভোট দেবে? দলকে বাঁচাতে হলে গৃহপালিত অপবাদ থেকে বের হতে হবে। যারা গৃহপালিত হওয়ার জন্য দায়ী তাদের বর্জন করতে হবে। আমাদের দলে থেকে অন্য দলের রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। সরকারকে অনুরোধ করব দেশের রাজনীতি শেষ করবেন না। রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করতে দেন। সবাইকে ধ্বংস করে সরকার একক রাজনীতি করবে এটা দেশ ও জাতির জন্য ভালো হবে না।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

জাতীয় পার্টি গৃহপালিত দল হয়ে গেছে : জিএম কাদের
জাতীয় পার্টি গৃহপালিত রাজনৈতিক দল হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তিনি বলেন, আমরা পরজীবী হতে চাই, গৃহপালিত রাজনৈতিক দল নয়। ধারাবাহিকভাবে পরজীবী থেকে স্বনির্ভরতার দিকে যাব। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি। জিএম কাদের বলেন, পরজীবী হয়ে আমরা অনেক কিছু করেছি। আমাদের একটা বড় দেনদরবার করার শক্তি ছিল। ২০১৪ সালের পর থেকে আমরা সেই শক্তি হারিয়েছি। আমরা এখন হয়ে গেছি গৃহপালিত রাজনৈতিক দল। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনকে একটি বড় পরীক্ষা বলে মনে করছেন জিএম কাদের। এখন অনেকেই নানা কথা বলছেন নানাভাবে মূল্যায়ন করছেন। কিন্তু মূল্যায়নের জন্য এখনো সঠিক সময় আসেনি। অচিরেই মানুষ বুঝতে পারবে কেন এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ। তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচনে দেখেছি রাজনীতি কতটা নোংরা হতে পারে। বৈষম্যকে দূর করতেই হয়েছিল ভাষা আন্দোলন কিন্তু বৈষম্য দিনকে দিন বেড়েই চলছে। বৈষম্যের অন্যায় এখনো হচ্ছে। বর্তমান সরকার বৈষম্য তৈরি করেছে আরও বেশি। একুশের চেতনা নিয়ে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধে নয় স্বাধীনতাযুদ্ধে জয়লাভ করেছি। জিএম কাদের বলেন, আমরা যখনই স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে যাই তখন আমাদের মধ্যে ভাঙন তৈরি হয়। সরকারই এমন করে। এর জন্য দায়ী আমাদের লোভ-লালসা। সমস্ত দলের নেতাদের জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতে হবে, সরকারি দলের নয়। যারা জাতীয় পার্টিতে থেকে অন্য দলের রাজনীতি করে তাদের বের করে দিতে হবে।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

জাতীয় পার্টি এখন চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে : রওশন এরশাদ
জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেছেন, আমাদের প্রিয় সংগঠন জাতীয় পার্টি এখন চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এবং পার্টিকে আবার সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে দায়িত্ব গ্রহণ করে আগামী ৯ মার্চ পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছি।  রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) গুলশানস্থ নিজ বাসভবেন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আজ কথা বলার সময় আমার দুপাশে যারা রয়েছেন- তারা বাংলাদেশের রাজনীতির দুই দিকপাল। কাজী ফিরোজ রশীদ এবং সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা- জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান। এই দুই নেতা জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার জন্য অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। জাতীয় পার্টির জন্য তারা জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন। আমাদের সবার প্রাণপ্রিয় নেতা পার্টির প্রতিষ্ঠাতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং আমার পাশে তারা সব সময়ই ছিলেন এবং এখনো আছেন। পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সহযোগীদরে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কাজী ফিরোজ রশীদ এবং সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ পার্টির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতারা এবং এরশাদ-ভক্ত সর্বস্তরের অগনিত নেতাকর্মী আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা সবাই মিলে সুন্দর একটি জাতীয় সম্মেলন উপহার দিয়ে জাতীয় পার্টিতে আবার প্রাণ শক্তি ফিরিয়ে আনতে চাই। কারণ দেশ ও জাতির জন্য রাজনীতির অঙ্গনে জাতীয় পার্টির প্রয়োজনীয়তা এখন অপরিহার্য। তিনি বলেন, আমরা দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক ভীত শক্তিশালী করার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি। একটি রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র চর্চার প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে- সময়মতো পার্টির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠান। জাতীয় পার্টির সম্মেলন আয়োজনের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন আমরা জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের যে ঘোষণা দিয়েছি- সেই সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমি একটি সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেছি।  আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত কার্যকর- জাতীয় পার্টির সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কাজী ফিরোজ রশীদ, কো-আহ্বায়ক থাকবেন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, যুগ্ম-আহ্বায়ক থাকবেন গোলাম সরোয়ার মিলন, সদস্য সচিব থাকবেন সফিকুল ইসলাম সেন্টু এবং কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব, প্রেসিডিয়াম সদস্য, উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান, যগ্ম-মহাসচিব, সম্পাদকমণ্ডলী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা এবং জেলা কমিটির সভাপতি-আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক, সদস্য-সচিব- ক্রমানুসারে সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।  
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

জাতীয় পার্টি কি সত্যিই বিরোধী দল
সংসদীয় গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে শক্তিশালী বিরোধী দল। সংসদকে কার্যকর করতে, সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে এবং সরকারের যেকোনো অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের বিশেষ করে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয় সেগুলোর বিরুদ্ধে সংসদের ভেতরে-বাইরে জোরালো ভূমিকা রাখতে হয় বিরোধী দলকেই। সাধারণ মানুষের নানা বিষয়ে সংসদের বিরোধী দলকে শক্তিশালী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। বিশেষ করে বিরোধী দলকে ছায়া সরকারের কাজটা করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে শক্তিশালী বিরোধী দলে খুব একটা দেখেনি দেশবাসী। সবসময় সব সংসদের বিরোধী দলই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে বেশিরভাগ সময়। জনবান্ধব বিষয়ে সংসদের বিরোধী দলের ভূমিকা খুব একটা দেখা যায়নি নিকট অতীতে দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া। বিশেষ করে গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংসদের বিরোধী দলের ভূমিকায় আছে জাতীয় পার্টি। সামরিক শাসক প্রয়াত জেনারেল এ এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে জন্ম নেওয়া জাতীয় পার্টি দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলে থেকেও তারা সরকারের কোনো গঠনমূলক সমালোচনা করেনি বা করতেও দেখা যায়নি। সংসদে তাদের আসন সংখ্যা যথেষ্ট থাকার পরও দলটি কখনোই সরকারের কঠোর সমালোচনা তো দূরের কথা, ন্যূনতম সমালোচনা পর্যন্ত করেনি। এ অবস্থায় দ্বাদশ সংসদে মাত্র ১১ জন সংসদ সদস্য নিয়ে জাতীয় পার্টি কতটা শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যথেষ্ট সন্দিহান। এর কারণও আছে, দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টি সরকারের সঙ্গে প্রায় একীভূত হয়ে যাওয়ায় দলটি তাদের রাজনৈতিক স্বকীয়তা প্রায় হারিয়ে ফেলেছে। যার ফলে সাধারণ মানুষ জাতীয় পার্টি ও তাদের নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি। দেশের গভীর সংকটময় মুহূর্তেও জাতীয় পার্টি নিজেদের হাত-পা গুটিয়ে বসেছিল। এবার জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে সেই খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে চায় দলটি। কিন্তু সেটা কি আদৌও সম্ভব? নাকি আগের মতোই একই বৃত্তের মধ্যে ঘুরপাক খাবে স্বৈরশাসক এরশাদের গড়া দলটি। জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান জি এম কাদের গত শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের বলেছেন, জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার কিছু কিছু আংশিক সত্য। নেতাকর্মীর উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘সবার স্মরণ রাখা উচিত, আমাদের দলের ব্যাপারে মানুষের পারসেপশন খুব একটা ভালো নয়।’ প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকবেন দাবি করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সংসদে সংখ্যা কোনো ব্যাপার না। ছয়জন কাঁপিয়ে দিয়েছিল গত সংসদ। দু-তিনজন থাকলেই কাঁপিয়ে দেওয়া যায়। তার এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এটা পরিষ্কার যে, জাপা নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছে তাদের দলের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তো এটি আরও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনসহ জাতীয় পার্টির মোট আসন সংখ্যা ছিল ২৬টি। দ্বাদশ সংসদে এসে এই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। তারা জিতেছে ১১টি আসনে। আর এখন আরও দুটি নারী আসন যুক্ত হলে হবে ১৩টি। জাতীয় পার্টির এ বিপর্যয়ে প্রধান কারণ হচ্ছে সংসদের প্রধান বিরোধী দল হয়েও তারা বিগত দিনে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারেনি। বরং সরকারের সব কাজে হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়েছে। জাতীয় পার্টির জি এম কাদের অংশের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু শনিবার আরেক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিরোধী দল কাকে বলে এবার সংসদে তারা সেটি দেখিয়ে দেবেন। সত্যিকার বিরোধী দল হিসেবেই জাতীয় পার্টি ভূমিকা রাখবে। যদিও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের গত ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, বিরোধী দল হিসেবে তারা খুবই দুর্বল। সরকারি দলের অনুপাতে বিরোধী দলের সদস্য সংখ্যা খুবই কম, যা সংসদে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে না। তিনি স্পিকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, তাদের যেন কথা বলতে দেওয়া হয়। মাইক যেন বন্ধ করে দেওয়া না হয়। এটা সত্য যে, সংসদে বিরোধী দল হিসেবে সংখ্যানুপাতে জাতীয় পার্টি একেবারেই দুর্বল। কিন্তু যদি দলটির সংসদীয় নেতা এবং অন্য সদস্যরা সদিচ্ছা রাখেন যে, তারা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। সরকারের ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন, সাধারণ মানুষের কথা বলবেন, দুর্নীতি, অনিয়ম, ব্যাংক লুটের বিরুদ্ধে কথা বলবেন তাহলে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, এসব ক্ষেত্রে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের ভাবমূর্তি দিনে দিনে বাড়বে বৈ কমবে না। সংসদে বিরোধী দলে কয়জন সদস্য আছেন সেটা বড় বিষয় নয়, যারা বা যে কয়জন আছেন, তারা কথা বলতে পারলেন কি না, সেটাই হচ্ছে বিষয়। আর সরকারি দলের সদস্যরা যদি বিরোধী দলকে কথা বলতে বাধা দেন বা স্পিকার মাইক বন্ধ করে দেন তাহলে সেটাও সাধারণ মানুষ দেখবে। তখন মানুষ বিচার করতে পারবে। কিন্তু জাতীয় পার্টির সদস্যরা যদি কথা না বলে, সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা না করে শুধু এই করব, সেই করব বলে গর্জে যান, তাহলে সেটা শুধু দেশের জন্য তাদের দলের জন্যও কাল হয়ে দাঁড়াবে। ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টি থাকবে কি না, সেটি নির্ভর করবে দ্বাদশ সংসদে দলটির কার্যক্রম ও ভূমিকার ওপর। একাদশ সংসদে বিএনপির মাত্র সাতজন সদস্য ছিলেন। তারা কিন্তু সংসদকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে হারুন-উর রশীদ ও রুমিন ফারহানা তো সংসদে ঝড় তুলেছিলেন। বিএনপি যদি মাত্র সাত সদস্য নিয়ে সংসদে উত্তাপ ছড়াতে পারে, তাহলে জাতীয় পার্টি কেন ১৩ জন সদস্য নিয়ে কথা বলতে পারবে না? তা ছাড়া বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের একজন ভালো বক্তা হিসেবে পরিচিত। দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি দেশবাসীর মনোযোগ কেড়েছে। তার সঙ্গে রয়েছেন বিরোধীদলীয় উপনেতা ও প্রবীণ রাজনীতিক আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। আছেন প্রধান হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু। তারা প্রত্যেকেই ভালো বক্তা। তারা চাইলে সংসদ প্রাণবন্ত করতে পারেন। দ্বাদশ সংসদকে একটি কার্যকর সংসদে পরিণত করতে পারেন। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি দেশের মানুষের কাছে পৌঁছার পাশাপাশি নিজেদেরও সংসদীয় গণতন্ত্রে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। যার মধ্য দিয়ে দ্বাদশ সংসদ নিয়ে দেশি-বিদেশি যারা নানান প্রশ্ন তুলেছেন বা তোলার চেষ্টা করেছেন, তাদের একটা মোক্ষম জবাবও দেওয়া যাবে। পুরো দেশবাসী কিন্তু এখন জাতীয় পার্টির দিকেই তাকিয়ে। দ্বাদশ সংসদে তাদের ভূমিকা কী হয়, তারা কি প্রকৃত বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে—সেটাই এখন দেখার বিষয়। লেখক: সাংবাদিক ও লেখক
০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

জাতীয় পার্টি ও দলের চেয়ারম্যানকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা চলছে : জাপা 
ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জাতীয় পার্টি ও দলের চেয়ারম্যানকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা চলছে বলে দাবি করা হয়েছে। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়।  বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি, বেশকিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও টক-শোতে বলা হচ্ছে, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের পার্টির কোনো সমাবেশ ও সম্মেলনে যোগ দেননি। আসলে হীন স্বার্থে উদ্দেশ্যমূলকভাবেই মিথ্যে প্রচার চালাচ্ছে একটি মহল। এর আগে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর একটি সফল কাউন্সিলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন গোলাম মোহাম্মদ কাদের। ওই বছর ৫ মে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবদ্দশায় গোলাম মোাম্মদ কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৪ জুলাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে জাতীয় পার্টিকে সংগঠিত ও একটি জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের জন্য কাজ করেন তিনি।  প্রাণঘাতী রোগ করোনার সময়ে দলের কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ২০২০ ও ২১ সালে মহামারি করোনার কারণে যখন স্বাভাবিক জীবন অনিশ্চিত ছিল, তখনো জি এম কাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়েছেন। রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। এ সময় দুইবার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। কিন্তু করোনাকালেও তার কর্মকাণ্ড থেমে থাকেনি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই তিনি সংগঠনকে আরও গতিশীল করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সফর করেন উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সম্মেলন ও সমাবেশ করেছেন রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালী, টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, কক্সবাজার, খুলনা এবং ঢাকা জেলায়।  এছাড়া রাজধানীতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় পার্টি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেছেন দলের চেয়ারম্যান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ে রংপুর অঞ্চলের বেশ কয়েকটি আসনে নিজ দলের প্রার্থীদের পক্ষে পথসভা ও জনসভায় লাঙ্গলের পক্ষে ভোট চেয়েছেন পার্টিপ্রধান। গেল বছরগুলোতে চাল, ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ও কাকরাইলস্থ জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে একাধিক সমাবেশ করেছে জাপা।  আমরা মনে করছি, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই জাতীয় পার্টি ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা চলছে। এমন বাস্তবতায়, সবাইকে সচেতন থাকতে অনুরোধ করা যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়। 
০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
X