ব্যারিস্টার খোকনকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে অব্যাহতি
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। রোববার (২১ এপ্রিল) জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের দপ্তর সম্পাদক মো. জিয়াউর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ৬ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি/সম্পাদকদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আপনার (ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন) এমন কার্যক্রমকে দলীয় চরম শৃঙ্খলা পরিপন্থি হিসেবে গণ্য করে সর্বসম্মত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহসভাপতির পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। গত ৪ এপ্রিল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিদ্ধান্ত অমান্য করে  সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ মেয়াদের নির্বাচনে বিএনপির প্যানেল থেকে বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন দায়িত্ব গ্রহণ করেন।  সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে বিএনপির প্যানেল থেকে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচিত তিনজন দায়িত্ব গ্রহণের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কোনো পদধারী নেতা দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। শুধু ব্যারিস্টার খোকনের অনুসারী বিএনপিপন্থি আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ২৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ মেয়াদের নির্বাচনে বিএনপির প্যানেল থেকে বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারজনকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে চিঠি দেয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি/সম্পাদকদের এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিগত ৬ ও ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের পর গত ১০ মার্চ ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে ন্যায়সংগত যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, আপনাকে/আপনাদের এই মর্মে জানানো যাচ্ছে যে, আপনি/ আপনারা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ মেয়াদকালের দায়িত্বগ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। আপনি/আপনারা দলের দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে দলীয় এই সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করবেন।’
২১ এপ্রিল, ২০২৪

বিচারব্যবস্থা সরকারের অশুভ পদক্ষেপের সবচেয়ে বড় শিকার : জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম
‘পুলিশ এতদিন গায়েবি মামলা করতো। এখন দুঃখজনকভাবে নিম্ন আদালতের কিছু কিছু কোর্ট মনে হচ্ছে গায়েবী রায় দিচ্ছে।’ আজ মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপি’র আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘বর্তমান অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে একের পর এক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। সরকারের অশুভ পদক্ষেপের সবচেয়ে বড় শিকার বিচার ব্যবস্থা। বিশেষ করে নিম্ন আদালতসমূহ। এই সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে বেছে বেছে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দকে একের পর এক আদালত কর্তৃক সাজা প্রদান করা হচ্ছে। এটি শুধুমাত্র বিচারের নামে অবিচার বা প্রহসনই নয়, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনও বটে।’ ‘মিথ্যা ও সাজানো রাজনৈতিক মামলায় বিএনপির মৃত ও গুম হওয়া নেতাসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক উদ্দেশ্যমূলক রায় ও সাজা প্রদান’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সুপ্রিম কোর্টের দক্ষিণ হলে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা মামলায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সাজা প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকদের বিচারিক ক্ষমতা থেকে অব্যাহতি প্রদান করে এসব রায় বাতিলের দাবি জানান তারা। লিখিত বক্তব্যে কায়সার কামাল আরও বলেন, ‘২০ নভেম্বর ঢাকার দুটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চারটি মামলায় ৪ বছর আগে মারা যাওয়া বিএনপি নেতা আবু তাহের দাইয়া, ১০ বছর আগে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমন এবং ৮ বছর আগে গুম হওয়া আমিনুল ইসলাম জাকির, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব জনাব হাবিব উন-নবী খান সোহেল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলীসহ ৫৪ নেতাকর্মীকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ২ মাসে ঢাকার আদালতে ২১ মামলায় বিএনপির ২৭১ জনক কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর গত ১ বছরে ২৯ মামলায় ৩০৪ জনকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে কোনোরূপ অপরাধের সংশ্লিষ্টতা নেই।’ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এই মহাসচিব বলেন, ‘ফৌজদারি অপরাধ প্রমাণ করতে হয় সাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারা। অধিকাংশ মামলায় সাক্ষী হিসেবে শুধু পুলিশ সদস্যকে হাজির করিয়ে সাজা প্রদান করা হয়েছে। কোনো নিরপেক্ষ সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি ফৌজদারি কার্যবিধিতে বর্ণিত বিচারিক স্তরসমূহও অনুসরণ করা হয়নি। বিএনপি নেতাদের একের পর এক সাজা প্রদানের মাধ্যমে বিচারিক আদালতের প্রতি সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপের যে অভিযোগ আমরা বারংবার করে আসছিলাম তাই প্রমাণ হলো।’ লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘বিচারের নামে বিরোধী দল নিধনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে এ রায়গুলো ইতিহাসে স্থান করে নিল। আমাদের বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার চরম বহিঃপ্রকাশ এ রায়গুলো। আইনজীবী হিসেবে আমরা লজ্জাবোধ করছি। এ রায়গুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে যে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল তার সত্যতা প্রমাণিত হলো। যে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘদিন আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করে এসেছি, তারাই আজ এ অনির্বাচিত সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের একের পর এক সাজা প্রদান করছেন। জাতির জন্য এ এক অশনিসংকেত। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মানদণ্ডে আমাদের বিচার ব্যবস্থার সূচক নিম্নগামী।’ এ সময় ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের কো-কনভেনর সুব্রত চৌধুরীসহ কয়েকশ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল।
২১ নভেম্বর, ২০২৩
X