জেরুজালেম লিখলেই ফিলিস্তিনের পতাকা আসছে
এ্যাপল ডিভাইসে জেরুজালেম লিখলে সামনে আসছে ফিলিস্তিনের পতাকা। এতে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন  কিছু লোক। তবে এ্যাপল দাবি করেছে, জেরুজালেম লিখলে ফিলিস্তিনের পতাকা দেখানোর বিষয়টি ইচ্ছাকৃত নয় বরং কীবোর্ড বাগের কারণে এমনটি ঘটেছে।  এক বিবৃতিতে এ্যাপল জানিয়েছে, সাধারণত, আইফোন ব্যবহারকারীরা যখন কি-বোর্ডে একটি দেশের নাম লেখেন, তখন এটি সেই জাতির প্রতিনিধিত্বকারী একটি ইমোজি পতাকার প্রদর্শন করে। তবে শহরের নামের ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্যটি প্রযোজ্য নয়।  জেরুজালেম লিখলে ফিলিস্তিনের পতাকা সামনে আসায় সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভের প্রেক্ষিতে এ্যাপল বলছে, তারা অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করে এটি সংশোধন করবেন।  ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরসহ পুরো জেরুজালেম শহরটিকে তার রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দেখেন।  ব্রিটিশ টেলিভিশন উপস্থাপক র‌্যাচেল রিলি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ইসরায়েলের প্রতি দ্বৈত মান প্রদর্শন করা একধরনের ইহুদি-বিরোধিতা। এটি ইহুদি জনগণের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের একটি রূপ। এ্যাপল এটি ইচ্ছে করে করেছে কিনা তা ব্যাখ্যা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।  তিনি যোগ করেন, আমার মতে অ্যাপলের মতো একটি বহুজাতিক কোম্পানি প্রকাশ্যে স্বীকার করতে চাইবে না যে এটি একজন কর্মচারী ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে। আমি আশা করি, এটি যারা করেছে তাদের চাকরি থেকে সরিয়ে দেবে এ্যাপল।   
১৩ এপ্রিল, ২০২৪

নেতানিয়াহুবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল জেরুজালেম
ইসরায়েলে গভীর রাজনৈতিক বিভাজন আবারও প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। গত ৭ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর এই বিরোধ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকলেও এখন ইসরায়েলের রাস্তায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী নেমে এসেছে। ইসরায়েলের দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিক্ষোভকারীরা এক ধরনের অনড় অবস্থান নিয়েছে। নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে জেরুজালেমের রাস্তায় গত রোববার স্মরণকালের বৃহৎ এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। খবর বিবিসির বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে এ সময় পুলিশকে জল কামান থেকে গুলি ও স্প্রে করতে দেখা যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা সরকারবিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছিল। গাজায় বন্দি ১৩৪ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করতে চুক্তি করার জন্যও তারা আহ্বান জানায়। যদিও তাদের মধ্যে অজ্ঞাত সংখ্যক এরই মধ্যে মারা গেছে। তাদের বন্ধু ও পরিবারগুলোর আশঙ্কা হচ্ছে, চুক্তি ছাড়া এই যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে বন্দিরা তত বেশি মারা যাবে। রোববার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি পার্লামেন্টের চারপাশে হাজার হাজার মানুষকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। যার মধ্যে একজন ছিলেন কাতিয়া অ্যামোরজা। তার ছেলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন এবং এখন গাজায় দায়িত্ব পালন করছেন। এই বিক্ষোভের সময় তিনি হ্যান্ড মাইকে বলেন, ‘আজ সকাল ৮টার পর থেকে আমি এখানে রয়েছি। আমি নেতানিয়াহুকে বলতে চাই, দেশ ছাড়ার জন্য আমি তোমাকে একটি প্রথম শ্রেণির টিকিট দিতে পারলে খুশি হবো। তুমি চলে যাও, আর এদেশে ফিরো না এবং আমি তোমাকে এটিও বলছি যে, সেই সমস্ত লোকদের সঙ্গে নিয়ে যাও, যাদের তুমি সরকারে বসিয়েছ। তারা আমাদের সমাজের সবচেয়ে খারাপ মানুষ।’ কাতিয়া যখন মাইকে কথাগুলো বলছিলেন, তখন তার পাশ থেকে ইয়েহুদাহ গ্লিক নামের একজন ইসরায়েলি ধর্মযাজক যাচ্ছিলেন। যিনি ইসরায়েলি টেম্পল মাউন্টে ধর্ম প্রচার করে থাকেন। জেরুজালেমের এই টেম্পল মাউন্ট মুসলমানদের কাছে পরিচিত আল আকসা নামে। যেটি ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্র স্থান। এই ধর্মযাজক তখন বলেন, ‘আমি মনে করি নেতানিয়াহু খুব জনপ্রিয়। এটিই মনে হয় বিক্ষোভকারীদের সবচেয়ে বড় ভয়। আমি মনে করি এই বিক্ষোভকারীরা এতদিন তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে আসছে, হয়তো নেতানিয়াহু এতদিন ধরে ক্ষমতায় আছে এই সত্য তারা মানতে চান না।’ বিক্ষোভকারীরা এবং অন্য দেশের যারা নেতানিয়াহুর সমালোচক তারা মনে করেন, গণতন্ত্রের শত্রুরা নেতানিয়াহুর সরকারেই আছে। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিকের ধর্মীয় জায়োনিজম পার্টিও রয়েছে। তাদের দলের একজন সংসদ সদস্য ওহাদ তাল বলেন, ‘হামাসের ওপর সামরিক চাপ ছাড়া তারা কখনো বন্দিদের মুক্তি দেবে না। আপনি মনে করেন না যে, হামাস একটি চুক্তিতে এত সহজে জিম্মিদের ফিরিয়ে দেবে, সবাইকে মুক্তি দেবে—এটা এত সহজ নয়।’ তিনি বলছিলেন, ‘আপনার হাতে যদি একটি বোতাম থাকত এবং এটি আপনি টিপ দিলেই সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা যেত, তাহলে ইসরায়েল সেই বোতামই টিপতো। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা যত সহজ ভাবা হচ্ছে, তত সহজ নয়।’ অনেক ইসরায়েলি বিশ্বাস করেন, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুই একমাত্র ব্যক্তি—যে তার দেশকে নিরাপদ রাখতে পারেন।
০২ এপ্রিল, ২০২৪

খলিফা ওমর (রা.)-এর জেরুজালেম ভ্রমণ
ইহুদি খ্রিষ্টান ও মুসলিম—তিন ধর্মের মানুষের কাছে পবিত্র শহর জেরুজালেম। সবার কাছেই এটি আবেগের ভূমি। অসংখ্য নবী-রাসুলের পুণ্যভূমি। এই শহরে বিচরণ করেছেন নবী ইবরাহীম, ইসহাক, ইয়াকুব, দাউদ, সুলাইমান, ঈসা (আ.) প্রমুখ নবী-রাসুলগণ। আর সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এখানে সমস্ত নবীকে নিয়ে নামাজের ইমামতি করেছেন মিরাজের রাতে। তবে তার জীবদ্দশায় জেরুজালেম কখনো মুসলিমদের অধীনে আসেনি। মুসলমানদের অধীনে আসে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ইবন খাত্তাব (রা.)-এর সময়। ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে তাবুক অভিযানে নবীজি (সা.)-এর নেতৃত্বে প্রায় ৩০,০০০ সৈন্য বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সীমানা অভিমুখে যাত্রা করে। যদিও কোনো বাইজেন্টাইন সৈন্য যুদ্ধের জন্য মুসলিমদের মুখোমুখি হয়নি, কিন্তু এ অভিযানটি মুসলিম-বাইজেন্টাইন যুদ্ধের সূচনা হিসেবে পরিচিতি পায় এবং এর ফলে মুসলমানদের হাতে আসে বাইতুল মাকদিস। ৬৩২ থেকে ৬৩৪ সাল পর্যন্ত খলিফা আবু বকর (রা.)-এর সময় বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে কোনো বড় ধরনের অভিযান পরিচালিত হয়নি। হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর সময় মুসলিমরা উত্তরদিকে বাইজেন্টাইন অঞ্চলে খিলাফত সম্প্রসারণ শুরু করে। তিনি খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) এবং আমর ইবনে আস (রা.) সহ বেশ কয়েকজন বিচক্ষণ মুসলিম সেনাপতিকে বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠান। ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ইয়ারমুক এ সংঘটিত চূড়ান্ত-নিষ্পত্তিমূলক যুদ্ধে দামেস্কসহ সিরিয়া অঞ্চলের অনেক নগরীর পতন হয়। এটি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের জন্য বড় একটি আঘাত ছিল। ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মুসলিম সৈন্যরা জেরুজালেমের কাছাকাছি চলে আসে। তখন জেরুজালেমের দায়িত্ব ছিলেন বাইজেন্টাইন সরকারের প্রতিনিধি ও স্থানীয় খ্রিষ্টান গির্জার প্রধান যাজক সোফ্রোনিয়াস। খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) এবং আমর ইবনে আস (রা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী শহর পরিবেষ্টন করা শুরু করলেও ওমর (রা.) নিজে এসে আত্মসমর্পণ গ্রহণ না করলে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানান যাজক সোফ্রোনিয়াস। এমন পরিস্থিতির খবর পেয়ে ওমর (রা.) একাই একটি গাধা এবং এক চাকরকে নিয়ে মদিনা থেকে জেরুজালেমের উদ্দেশে যাত্রা করেন। জেরুজালেমে সোফ্রোনিয়াস তাকে স্বাগত জানান। মুসলিমদের খলিফা, তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি ওমর (রা.) ছিলেন খুব সাধারণ বুননের পোশাকে। তাকে ও ভৃত্যের মধ্যে কে খলিফা ওমর তা আলাদা করা যাচ্ছিল না। এ অবস্থা দেখে সোফ্রোনিয়াস খুবই বিস্মিত হন। ওমর (রা.)-কে পবিত্র সমাধির গির্জাসহ পুরো শহর ঘুরিয়ে দেখানো হয়। নামাজের সময় হলে সোফ্রোনিয়াস তাকে গির্জার ভেতর নামাজ আদায় করার আমন্ত্রণ জানান, কিন্তু ওমর (রা.) তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, যদি তিনি সেখানে নামাজ আদায় করেন, তাহলে পরবর্তী সময়ে মুসলিমরা এ অজুহাত দেখিয়ে গির্জাকে মসজিদে রূপান্তরিত করবে, যা খ্রিষ্টান সমাজকে তাদের একটি পবিত্র স্থান থেকে বঞ্চিত করবে। বরং ওমর (রা.) গির্জার বাইরে নামাজ আদায় করেন যেখানে পরবর্তী সময়ে একটি মসজিদ নির্মিত হয়, যা বর্তমানে ‘মসজিদে ওমর’ নামে পরিচিত। এর আগে জয় করা শহরগুলোর মতো জেরুজালেমেও মুসলিমদের একটি চুক্তিনামা লিখতে হয়। চুক্তিনামাটি ছিল জেরুজালেমের সাধারণ জনগণ এবং মুসলিমদের নাগরিক অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা নিয়ে। চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন ওমর (রা.) ও যাজক সোফ্রোনিয়াস, এবং মুসলিম বাহিনীর কতিপয় সেনাপতি। চুক্তিনামায় লিখিত ছিল, ‘পরম দয়ালু এবং করুণাময় আল্লাহর নামে। এতদ্বারা ঘোষণা করা হচ্ছে যে, আল্লাহর বান্দা, ইমানদারদের সেনাপতি ওমর, জেরুজালেমের জনগণের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করছে। নিশ্চয়তা দিচ্ছে তাদের জানমাল, গির্জা, ক্রুশ, শহরের সুস্থ-অসুস্থ এবং তাদের সব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানাদির। মুসলিমরা তাদের গির্জা দখল করবে না এবং ধ্বংসও করবে না। তাদের জীবন, কিংবা যে ভূমিতে তারা বসবাস করছে, কিংবা তাদের ক্রুশ, কিংবা তাদের সম্পদ—কোনো কিছুই ধ্বংস করা হবে না। তাদের জোর করে ধর্মান্তরিত করা হবে না। কোনো ইহুদি তাদের সঙ্গে জেরুজালেমে বসবাস করবে না। জেরুজালেমের অধিবাসীদের অন্যান্য শহরের মানুষের মতোই কর (ট্যাক্স) প্রদান করতে হবে এবং অবশ্যই বাইজেন্টাইনদের ও লুটেরাদের বিতাড়িত করতে হবে। জেরুজালেমের যেসব অধিবাসী বাইজেন্টাইনদের সঙ্গে চলে যেতে ইচ্ছুক, গির্জা ও ক্রুশ ছেড়ে নিজেদের সম্পত্তি নিয়ে চলে যেতে ইচ্ছুক, তাদের আশ্রয়স্থলে পৌঁছানো পর্যন্ত তারা নিরাপত্তা পাবে। ওমর (রা.) অবিলম্বে শহরটিকে মুসলিমদের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনে পরিণত করায় মনোনিবেশ করেন। তিনি টেম্পল মাউন্টের এলাকাটি পরিষ্কার করেন, যেখান থেকে মহানবী (সা.) আসমানে আরোহণ করেছিলেন। খ্রিষ্টানরা ইহুদিদের অসন্তুষ্ট করার জন্য এলাকাটিকে আবর্জনা ফেলার ভাগাড় হিসেবে ব্যবহার করত। ওমর (রা.) এবং মুসলিম বাহিনী (এবং সঙ্গে থাকা কিছু ইহুদি) ব্যক্তিগত উদ্যোগে এলাকাটি পরিষ্কার করে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা ‘মসজিদুল আকসা’ নামে পরিচিত। ওমর (রা.)-এর খিলাফতের বাদ বাকি সময়ে এবং এরপর উমাইয়াদের সময় জেরুজালেম ধর্মীয় তীর্থযাত্রা এবং বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠে। মসজিদ আকসাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে ৬৯১ সনে যোগ করা হয় ‘ডোম অব রক।’ (কুব্বাত আস সাখরা)। শিগগির গোটা শহরজুড়ে আরও অনেক মসজিদ ও সরকারি কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
২৪ নভেম্বর, ২০২৩
X