টেকনাফ বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কমেছে ৮০ ভাগ
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি এবং জান্তা বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাতের ফলে টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে নেমেছে স্থবিরতা। বাণিজ্য বন্ধ থাকায় কমেছে সরকারের রাজস্ব আয়। ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছে, টেকনাফ বন্দরে এখন আমদানি-রপ্তানি কমেছে ৮০ শতাংশ। ফলে মিয়ানমারে বিনিয়োগ করা প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি আটকে আছে বলে দাবি তাদের। পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়ছে শ্রমিক। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে মূলত বন্ধ রয়েছে আমদানি-রপ্তানি।
টেকনাফ বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, গেল বছরের ডিসেম্বরে আমদানি ছিল ২০ হাজার ৫০০ টন পণ্য। জানুয়ারিতে এসে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩১৮ টনে। আর ফেব্রুয়ারিতে তা অনেকটা শূণ্যের কোটায়।
রাজস্ব বিভাগ বলছে, টেকনাফ স্থলবন্দরের ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ২১৯ টন, রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৫২৩ টন আর রাজস্ব আয় হয়েছে ৭ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৪০২ টন, রপ্তানি হয়েছে ১১ হাজার ৪ টন আর রাজস্ব আয় হয়েছে ৯ দশমিক ২৩ কোটি টাকা।
ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য মতে, টেকনাফ বন্দরে প্রায় ১০০ জন আমদানিকারক রয়েছে। টেকনাফ বন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে কাঠ, সুপারি, মাছ, আদা, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, শুঁটকি, ছোলা, ডাল, চাল, আচার আমদানি করা হয়। আর রপ্তানি করা হয় প্লাস্টিকসামগ্রী, তৈরি পোশাক, চিপস, অ্যালুমিনিয়ামসামগ্রী, ওষুধ, প্রসাধনী ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী। এখন মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি করতে না পারলে ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়বে। পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ থাকায় বেকার হয়েছে প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক।
স্থল বন্দরের শ্রমিকদের দলনেতা আজগর মাঝি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে বন্দরে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি ট্রাক লোড-আনলোড হয়। কিন্তু মিয়ানমারে ওপারে সংঘাতের কারণে এক মাসে চার-পাঁচটির বেশি ট্রাক বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে না।
বন্দর ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক আব্দু শুক্কুর সিআইপি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে আমাদের ব্যবসা প্রায় ৮০ ভাগ কমেছে। ব্যবসায়ীদের প্রায়ক দশ থেকে পনের হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ মিয়ানমারে আটকে আছে। আকিয়াব বন্দরে কিনে রাখা শত শত টন আদা, নারকেল, মাছ ও সুপারি মজুত আছে। এগুলো না আনতে না পারলে ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হবে।
বন্দরের সিএনএফ সভাপতি আব্দুল আমিন বলেন, ঝুঁকি নিয়ে দুএকটি জাহাজ মিয়ানমার থেকে আদা, নারকেল এবং শুঁটকি মাছ এসেছে। এর বাইরে গেল প্রায় আড়ই মাস ধরে ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। এতে আমরা যেমন ক্ষতির মুখে পড়ছি তেমনি সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। আর শ্রমিকও বেকার জীবনযাপন করছে। তবে আমরা আশা করছি দ্রুত সময়ে ইয়াংগুন থেকে ব্যবসা শুরু হবে।
টেকনাফ স্থল বন্দর পরিচালক জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম একপ্রকার স্থবিরই বলা চলে। অথচ আগে প্রতি মাসে দেড়শ থেকে দুইশ ইঞ্জিনচালিত বড় বোট পণ্য আনা-নেওয়া করত।
টেকনাফ রাজস্ব কর্মকর্তাস আব্দুল্লাহ মাসুম বলেন, বন্দরে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক থাকলে দৈনিক তিন কোটির টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব। সে হিসেবে যদি পণ্য আনা-নেওয়া নিয়মিত থাকে তাহলে প্রতিমাসে অন্তত ৬০-৭০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।
তিনি বলেন, মিয়ামানেরর মংডু এবং আকিয়াব কর্মাশিয়াল ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা চুক্তি ছিল। কিন্তু মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি ব্যাংকে হামলা চালালে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের শাখা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ব্যাংক ড্রাফটও বন্ধ রয়েছে। যার কারণে বন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এটি সুরাহা করতে হবে।
১২ মার্চ, ২০২৪