কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া। এপারে প্যারাবনের পর নাফনদের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে টেকনাফ সীমান্তে রাখাইন রাজ্যে গত তিন দিন থেমে থেমে গোলাগুলি চললেও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটেনি। তবে রোববার (১৭ মার্চ) রাত ৯টা ২৫ মিনিট থেকে ৯টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত ৩৩ মিনিটে ২১টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে এপারের টেকনাফ সীমান্তের কয়েকটি গ্রাম।
রাখাইন রাজ্যের জেলা শহর মংডু টাউনশিপের কিছুটা উত্তরে নাকপুরা এলাকায় হঠাৎ রাতে মর্টার শেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে রোববার রাত ১০টার পর থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত আর বিস্ফোরণের শব্দ এপারের লোকজন শুনতে পাননি।
নাগপুরা এলাকার বিপরীতে (নাফনদের এপারে) টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রাখাইনপল্লি চৌধুরীপাড়া ও ফুলের ডেইল গ্রাম। রাতে ৩৩ মিনিটে ২১টি মর্টার শেলের বিকট শব্দ এপারের লোকজনের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে জানিয়ে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, দেড় মাসের বেশি সময় ধরে রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। এতদিন রাত ও দিনে দুপক্ষের মধ্যে লড়াই চলেছে। উভয়পক্ষ থেকে গোলাগুলি, মর্টার শেল, গ্রেনেড বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। তাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে মংডু টাউনশিপের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা।
টেকনাফ হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, গত ছয় দিন মংডুর আশপাশের গ্রামগুলোতে দিনের বেলায় গোলাগুলি-মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেনি। তবে রাতের বেলায় কয়েকটি গ্রামে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যেত। কিন্তু গতকাল রাতে হঠাৎ একসঙ্গে ২১টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণ এপারের লোকজনকে ভাবিয়ে তুলেছে।
সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, গতকাল সন্ধ্যায় আরাকান আর্মি স্থলপথে নাকপুরা এলাকার বিজিপি সেক্টর ঘিরে ফেলে এবং হামলা চালায়। এরপর বিজিপি সদস্যরাও পাল্টা জবাব দেয়। তখন রাত ৯টা ২৫ মিনিট থেকে টানা ৩৩ মিনিট মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, আরাকান আর্মির অবস্থানের ওপর মর্টার শেলগুলো নিক্ষেপ করে সরকারি বাহিনী।
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র হাফেজ এনামুল হাসান বলেন, রাতের বেলায় বিকট শব্দের মর্টার শেলের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, কুলালপাড়া, ডেইলপাড়া, হাঙ্গারডেইলসহ অন্তত ১৩টি গ্রাম।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তে গত তিন চার দিন শান্ত থাকার পর হঠাৎ করে রবিবার রাতে গুলাগুলি বিস্ফোরণের ঘটনা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, তবে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তেমন গোলাগুলি শব্দ শোনা যায়নি। অনেকটা স্বাভাবিকতা বিরাজ করছে সীমান্তে। সংঘাতের বিষয়টি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। তবে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে যাতে এখানে কোনো সমস্যা না হয়, এ জন্য বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সেখানকার কাউকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ সীমান্তে কঠোর অবস্থানে বিজিবি।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ছোট ছোট দলে আসা এসব রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা ইতোমধ্যে রুখে দিয়েছে বিজিবি।
মন্তব্য করুন